রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে গত ৭ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পরই সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাঁটানো পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড সরিয়ে নেয়ার কথা। কিন্তু গতকাল বুধবার রাত পর্যন্তও তা করা হয়নি। সেগুলো শোভা পাচ্ছে নগরজুড়ে।
তবে নগরীর কয়েকটি স্থানে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমানের লাগানো বিলবোর্ড ও ফেস্টুন তার লোকদের সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, ডিসির মোড়, জিলা স্কুল মোড়, কাচারবাজার, মেডিকেল মোড়, সিওবাজার, শাপলা চত্বর, সাতমাথা, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও পার্ক মোড়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বড় বড় বিলবোর্ড ঝুলছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লাসহ বিদ্যুতের খুঁটিতে সাঁটানো আছে ছোট ছোট ফেস্টুন। দেয়ালে ছেয়ে আছে রঙিন পোস্টার।
নিয়ম অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর এবং প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত কোনো প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। একাধিক প্রার্থী জানিয়েছেন, শিগগিরই এসব পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলবেন তারা।
তফসিল অনুযায়ী, রংপুর সিটিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৯ নভেম্বর, বাছাই ১ ডিসেম্বর, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৮ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ৯ ডিসেম্বর এবং ভোট গ্রহণ করা হবে ২৭ ডিসেম্বর।
রংপুর সিটি মেয়র ও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ইতিমধ্যে নেতা-কর্মীদের বিলবোর্ড ও তোরণ সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দু-এক দিনের মধ্যে সবই অপসারণ করা হবে।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, তার ফেস্টুন, তোরণগুলো এখনো আছে। সেগুলো সরানো হয়নি। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই সরানো হবে।
মেরাদিয়া বাজারের পূর্ব পার্শ্বে খালপাড়ের খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর ইজারা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট।
সেই সঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তি কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছে উচ্চ আদালত।
এ সংক্রান্ত এক রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ আজ এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী লিটন আহমেদ। তাকে সহায়তা করেন আইনজীবী জহিরুল ইসললাম।
আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান রিটকারী পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খুররাম শাহ মুরাদ। তিনি বলেন, ‘যে স্থানকে চিহ্নিত করে এই হাট বসানোর বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে তা একেবারেই অনভিপ্রেত। কারণ ওই স্থানে হাট বসানোর কোন পর্যাপ্ত খালি জায়গা নেই। এই হাট বসানোর ইজারা গৃহীত হলে ঈদ-উল আযহার সময় আবাসিক এলাকার মানুষের বাসা-বাড়ির গেটের সামনে পশুর হাট বসে যায়। ফলে জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়। এছাড়া পশুর হাট বসানো হলে আবাসিক এলাকার কোন মানুষ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। সবকিছু বিবেচনা করে হাইকোর্ট মেরাদিয়ায় পশুর হাট বসানোর ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে।’
গত ২১ এপ্রিল ১১টি স্থানকে চিহ্নিত করে অস্থায়ী পশুর হাট বসানোর লক্ষ্যে ইজারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন লিগ্যাল রাইটস এর পক্ষে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দা শাহাবুদ্দিন সিকদার।
ফেনীর পরশুরামে মুহুরি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা মিরু চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে এবং নাগরিক কমিটির সংগঠক ইমাম হোসেন সজীবসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে অজ্ঞাত আরও ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়।
পরশুরাম পৌর ভ‚মি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মো. ইয়াছিন বাদী হয়ে সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাতে মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ (সংশোধিত) ৪/৫/১১/১৫ ধারায় এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজহারে বলা হয়, মুহুরী নদীর বিলোনীয়া খেয়াঘাটের ১০০ গজ দক্ষিণ থেকে বাউরখুমা মৌজার দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত মুহুরি নদীর বালুমহাল (প্রথম অংশ) ১৪৩০ বাংলা সনে পূর্ণ মেয়াদে শাপলা টেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মিরু চৌধুরীর নামে ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইজারাদারদেরকে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশগত ও অবস্থানগত ছাড়পত্র জমা দেবেন এই শর্তে মিরু চৌধুরীকে ইজারা চুক্তি সম্পাদন করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে মিরু চৌধুরী ছাড়পত্র জমা না দেওয়ায় তাকে ওই বালুমহালের কার্যাদেশ ও দখল দেয়নি জেলা প্রশাসক। এরপর ১৪৩২ বাংলা সনে ইজারার লক্ষ্যে দরপত্র আহ্বান করা হলেও অদ্যাবধি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ১৪৩১ বাংলা সনের শুরু হতে অদ্যাবধি ওই বালুমহাল ইজারাবিহীন অবস্থায় আছে।
বালু মহালের কার্যাদেশ ও দখল প্রদান না করা সত্ত্বেও আইন অমান্য করে মিরু চৌধুরী ইমাম হোসেন সজিবের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে বালুমহাল সাবলীজ দেয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এরপর সজিবের নেতৃত্বে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুহুরি নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বেআইনিভাবে দুই কোটি পচিশ লাখ টাকার নয় লাখ ঘনফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে নদীর উভয় পাড়ে বিক্রির উদ্দেশে স্তুপ করে রাখে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর তলদেশ থেকে মাটি সরে গিয়ে নদীর পাড় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এবং নদীর পাড়ের জমি ও বসতঘর ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা মীর আহমেদ চৌধুরী (৬০), মো. ইমাম হোসেন সজীব (৩৫), হাবিব উল্যা (৫০), পিংকু ভুঞা (৩৮), মো. হারুন ভুঞা (৩৫), ছায়দুল হক হাজারী (৩৫), আলী হোসেন (৪০), আবদুল মুনাফ (৪৮), আবদুল কাদের (৩৭) আবদুস সামাদ (৩৪), মো. মোস্তফা আবদুল হামিদ (৩৩), মো. রিপন (৪০), মো. এমরান (৪২), স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনসুর (২৮), মির্জানগর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মো. ফারুক (২৭), মো. শিশু (৩৮), মির্জানগর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক মো. শাহজালাল (৩৩), মো. ছিদ্দিক (৩৫), মো. আলম (২৯), মোহাম্মদ বাবুল (২৯), মনছুর আলী (৫০), মাহবুল হক (৫১), উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাহার সর্দার (৪৫), বাবুল মিয়া (৩৯), আবদুর রহিম (৪০), হারেছ মিয়া (৩৮), জাহিদুল করিম (৩৯), মোহাম্মদ বাবু (২৫), মোহাম্মদ কাইয়ুম (৩৬), নুরুন্নবী (হোনা মিয়া) (৪৫), আমির হোসেন (৪২), জাকির হোসেন (৪০),
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো, নুরুল হাকিম মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কর্তৃক বাংলাদেশে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্প বিশেষ করে ফসিল ফুয়েল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) প্রকল্পে বিনিয়োগের বিরোধিতা করেছে পরিবেশ সচেতন নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন।
এডিবির ৫৮তম বার্ষিক সভার পূর্বে জ্বীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ না করার দাবিতে যৌথভাবে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালিয়েছে চট্টগ্রামের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন আইএসডিই বাংলাদেশ, ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক) এবং বিডাব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট)।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নগরীর কর্নফুলীর মইজ্যাটেকে আয়োজিত প্রতিবাদ সভা থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
প্রতিবাদ সমাবেশে ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘এডিবি এখন পর্যন্ত ২৮৮৪.৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৪০০ কোটি ৮৮ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক প্রকল্পে। মাত্র ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ সৌরবিদ্যুতে, এবং বায়ুশক্তিতে কোনো বিনিয়োগই করা হয়নি। জীবাশ্মভিত্তিক প্রকল্পে প্রতি মেগাওয়াটে ২০ লাখ ৪ হাজার ডলার বিনিয়োগ হলেও, সৌরবিদ্যুতে তা মাত্র ৫ লাখ ১০ হাজার ডলার।’
চট্টগ্রাম ফোরাম অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সদস্য ও অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর বলেন, এডিবি খুলনার ১৫০ মেগাওয়াটের একটি গ্যাস টারবাইন বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ২২৫ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল প্ল্যান্টে উন্নীত করতে অতিরিক্ত ১০ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছে। অথচ গত ১১ বছরে এই প্রকল্পের পেছনে সরকারকে ১ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। তবুও গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় প্রকল্পটি ঝুঁকির মুখে রয়েছে। একইভাবে, খুলনায় রূপসার মতো ৮০০ মেগাওয়াটের এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলেও, এখনও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হয়নি, ফলে এই প্রকল্পগুলো অচল সম্পদে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। যার ফলে সরকারকে বিপুল অঙ্কের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হতে পারে।
ক্যাব কর্নফুলী উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও তরুণ পরিবেশ কর্মী সিদরাতুল মুনতাহা বলেন, ‘যখন বিশ্ব নবায়ণযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন এডিবির এই ধাঁচের বিনিয়োগ জলবায়ু সংকটকে আরও তীব্র করে তুলছে এবং বাংলাদেশের মতো জলবায়ুঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।’
ক্যাব কর্নফুলী উপজেলা কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য নবায়ণযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ জরুরি। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, পরিবেশ ও সমাজকেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তারা এডিবিকে আহ্বান জানান, অবিলম্বে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় নবায়ণযোগ্য ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগের দিকে অগ্রসর হতে।
আয়োজকরা জানান, ৫৮তম এডিবি বার্ষিক সভার প্রাক্কালে এ ধরনের প্রতিবাদী কার্যক্রম বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়বে, যাতে এডিবি ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থাগুলো তাদের বিনিয়োগ নীতিতে জলবায়ু ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেয়।
আলোচনা ও প্রচারাভিযানে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসূচি কর্মকর্তা রইসুল ইসলাম, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট চট্টগ্রামের মেন্টর রাসেল উদ্দীন, যুব ক্যাব কর্নফুলী উপজেলা সভাপতি আরফিন সুমন, যুব গ্রুপের সদস্য জহির উদ্দীন হিমেল, সাজ্জাদ হোসেন রনি, ডলি আক্তার, ইমতিয়াজ হোসেন মিরাজ, সাদিয়া জাহান সিথী, জাহেদুল ইসলাম, মুহিবুল ইসলাম মুহিব প্রমুখ।
নড়াইলের কালিয়ায় প্রতিপক্ষের বাড়ির পেছন থেকে রফিকুল মোল্যা নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের রিকাইল শেখের বাড়ির পেছন থেকে রফিকুলের লাশটি উদ্ধার করে কালিয়া থানা পুলিশ।
নিহত রফিকুল মোল্যা (৩৮) ওই গ্রামের আজিজুল মোল্যার ছেলে।
কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১১ এপ্রিল কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের মিলন মোল্যা ও আফতাব মোল্যা পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে দুপক্ষের সংঘর্ষে আফতাব মোল্যা গ্রুপের ফরিদ মোল্যা (৫৭) নামে একজন নিহত হন। পরে কালিয়া থানায় হত্যা মামলা করা হয়। এ হত্যা মামলায় মিলন মোল্যা পক্ষের রফিকুলকে আসামি করা হয়। তিনি পলাতক ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে প্রতিপক্ষ আফতাব মোল্যা পক্ষের রিকাইল শেখের বাড়ির পেছনে রফিকুলের পা বাধা লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে কালিয়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ হেফাজতে নেয়।
ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছি। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত চলছে।
শীতকালে সরকারের বরাদ্দকৃত কম্বল বিতরণ না করে ফেলে রাখা হয়েছে মৌলভীবাজারের নাজিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদে। এতে শীতকালে শীতবস্ত্র থেকে বঞ্চিত হয়েছেন হতদরিদ্র শীতার্তরা।
জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা থেকে শীতবস্ত্র বিতরনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় কম্বল। শীত চলে গেলেও মৌলভীবাজারের নাজিরাবাদ ইউনিয়নে এখনো পড়ে রয়েছে এসব কম্বল।
অভিযোগ রয়েছে, নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমদ নিজের পছন্দমতো ব্যক্তিদের এসব কম্বল বিতরণ করছেন। তাই নিজের ইউনিয়ন অফিসের একটি কক্ষে সরকারের এসব বরাদ্দকৃত কম্বল ফেলে রেখেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউপি সদস্য বলেন, শীত চলে যাচ্ছে কম্বলগুলো হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করার জন্য আমরা বারবার বলেছি। কিন্তু চেয়ারম্যান শীতার্তদের মাঝে এটি বিতরণ না করে ইউনিয়ন অফিসে স্টক করে রেখেছেন। এটা এক রকমের দায়িত্বে অবহেলা ও খামখেয়ালি। এ বিষয়ে নাজিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমদকে ফোনে পাওয়া যায়নি। তার ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হৃষিকেশ চৌধুরী বলেন, কতটি বরাদ্দ পেয়েছি সঠিক মনে নেই। যা বরাদ্দ ছিলো বিতরণ করা হয়েছে। শীতের বরাদ্দ পাওয়া কিছু কম্বল এখনও রয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্ত মো. তাজউদ্দিন বলেন, এরকম করার কোন সুযোগ নেই, ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জনগণের নেতৃত্বে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনাবিষয়ক জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১৭টি ওয়ার্ডের ১০৬টি স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা সংক্রান্ত জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার লেকশোর হোটেলে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ এবং দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এই উদ্যোগ পরিচালনা করেছে, এই প্রকল্পে সহায়তা করেছে গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশন (জিসিএ) এবং যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)।
এই পরিকল্পনা বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পের (সিডাব্লিউএসআইপি) জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত সরবরাহ করবে।
কর্মশালায় স্থানীয় সরকার বিভাগ, ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ ৮০ জনেরও বেশি অংশীজন অংশ নেন। এই সভার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের পরিকল্পনার ফলাফল উপস্থাপন, অংশীজনদের মতামত সংগ্রহ, প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণ এবং পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পরবর্তী পদক্ষেপে ঐকমত্যে পৌঁছানো।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধীনে জলবায়ু ঝুঁকির বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের জুন মাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার অনুমোদনক্রমে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পরিকল্পনাটি স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট চাহিদা ও দুর্বলতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যা ওয়ার্ড ও মহানগর পর্যায়ে ধারাবাহিক পরামর্শের মাধ্যমে যাচাই ও পরিমার্জন করা হয়েছে।
ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বাস্তব চ্যালেঞ্জ। অভিযোজনকে কার্যকর করতে এটিকে জাতীয় পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বিত এবং স্থানীয় প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।’
জিসিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার ড. এম ফয়সাল রহমান বলেন, ‘জনগণের এই পরিকল্পনা সিডাব্লিউএসআইপি প্রকল্পে বাস্তবায়নের পাশাপাশি চট্টগ্রামের নগর কর্তৃপক্ষের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুর রহমান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্রিয় পদক্ষেপ ও মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর জোর দেন। তিনি ওয়াটারএইডকে সব ওয়াসার সঙ্গে এই ফলাফল আদান প্রদানের আহ্বান জানান।
ব্রিটিশ হাইকমিশনের এবিএম ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘এই পরিকল্পনা জলবায়ু সহিষ্ণু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং জাতীয় নগরনীতির জন্য সহায়ক হবে।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এই পরিকল্পনাকে তাদের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুল আলম বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে সকল নাগরিকের জন্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমরা আশাবাদী, তবে ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন।’
তেত্রিশ বছর পেরিয়েও টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ সেন্টমার্টিনের আকাশে-বাতাসে এখনো ভেসে বেড়ায় কান্নার শব্দ। ১৯৯১ সালের ভয়াল ২৯ এপ্রিল রাতে প্রকৃতির নির্মম থাবায় হারিয়ে যায় হাজারো প্রাণ, ভেসে যায় শত শত স্বপ্ন।
টেকনাফের দক্ষিণ প্রান্তে, নাফ নদীর মোহনার ঠিক গা ঘেঁষে থাকা এই ছোট্ট দ্বীপটিতে সেই রাতে সাগরের উন্মত্ত ঢেউ যেন গিলে খেয়েছিল মানবসভ্যতাকে। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে দ্বীপের হাজারো ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে যায়, অগণিত মানুষ হারিয়ে যায় ঢেউয়ের গ্রাসে।
আজ ২৯ এপ্রিল স্মৃতির পাতায় বিভীষিকার রাত
চারপাশে শুধু পানি আর আর্তচিৎকার। শিশুরা মায়ের কোলে চেপে চুপ হয়ে গিয়েছিল। মায়েরা সন্তানকে বাঁচাতে নিজের প্রাণ দিয়েছিল। -চোখের কোণে পানি নিয়ে বলেন শাহপরীর দ্বীপের প্রবীণ বাসিন্দা খালেদ। ওই রাতের তাণ্ডবে হারিয়ে যান তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। এখনো নাফ নদীর পাশে দাঁড়ালে তিনি শুনতে পান সেই রাতের হাহাকার। ভোরের আলো ফুটলেও চারপাশে শুধু লাশ আর লাশ। স্মরণ করেন তিনি।
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া, সাবরাং, হ্নীলা, টেকনাফ সদরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা সেই রাতে পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। পরিবার হারানো মানুষগুলো এখনও চোখের জলে স্মরণ করেন সেই বিভীষিকাময় রাতের কথা।
স্থানীয় প্রবীণ আব্দুল আজিজ (৬৫) বলেন, ‘রাতে হঠাৎ দেখি পানি আমাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চারদিক অন্ধকার আর পানির তোড়ে ভেসে যায় সব কিছু। অনেক মানুষ সাহায্যের জন্য চিৎকার করছিল, কিন্তু কেউ কাউকে বাঁচাতে পারেনি।’
ক্ষয়ক্ষতি আর হারানোর হিসাব
সরকারি হিসাবে, পুরো কক্সবাজার জেলায় মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল ১ লাখ ৩৮ হাজার। শুধু শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনেই দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে, যদিও স্থানীয়দের মতে প্রকৃত সংখ্যা ছিল তার চেয়েও বেশি। গোটা দ্বীপজুড়ে দেখা গিয়েছিল লাশের স্তূপ, উধাও হয়েছিল পানির নিচে ফসল, গবাদি পশু, জীবন-জীবিকা।
দুর্যোগের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বীপটি ছিল বিচ্ছিন্ন; খাবার, পানি, চিকিৎসা কিছুই পৌঁছাতে পারেনি। বহু পরিবার বাধ্য হয়েছিল ঘরছাড়া হতে। কেউ কেউ জীবিকার আশায় ভিন্ন জায়গায় চলে যেতে বাধ্য হয়।
বর্তমানের চ্যালেঞ্জ
তিন দশক পেরিয়ে গেলেও শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন এখনো ঝুঁকির মধ্যে। সামুদ্রিক ভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শাহপরীর দ্বীপের আয়তন দিনদিন ছোট হচ্ছে। কয়েকটি বাঁধ ও সাইক্লোন শেল্টার তৈরি হলেও তা এখনো পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
‘বাঁধ ভেঙে গেলে আমরা আবারও সেই দিনের মতো হারিয়ে যাব। আজ ২৯ এপ্রিল আমাদের শুধু ইতিহাস নয়, সতর্কবার্তাও।’- বলেন স্থানীয় শিক্ষক কলিম উল্লাহ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল বলেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তোলার ওপর জোর দিতে হবে এখনই, নইলে ভবিষ্যতের ঘূর্ণিঝড় আবার নতুন করে বেদনার ইতিহাস লিখবে।
ভবিষ্যতের দিক নির্দেশনা
পরিবেশবিদদের মতে, শাহপরীর দ্বীপসহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া ভবিষ্যতের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়। সচেতনতা, টেকসই অবকাঠামো ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নই হতে পারে আগামী দিনের প্রতিরক্ষাকবচ।
এদিকে জলবায়ুর প্রভাবে বদলে যাচ্ছে শাহপরীর দ্বীপ উপকূলবর্তী মানুষের জীবনযাত্রা। নাফ-সাগরের এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে, কিন্তু জীবনযুদ্ধে উপকূলের মানুষের দুঃখ শেষ হয় না জালিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের। ভাঙাগড়ার যুদ্ধে মানুষ চিন্তিত তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রতি বছরই নাফ নদ-সাগর ভাঙনে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তবুও অসহায় এসব মানুষ নাফের পাড়ে থাকার সংগ্রাম করছেন। শাহপরীর দ্বীপ নাফের পাড়ে জালিয়াপাড়া ও গোলারপাড়া। সেখানে এখনও ১ শ পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই বলে নাফের ধারেই আশ্রয় নিয়ে বাঁচার যুদ্ধ করছেন তারা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘নদী ভাঙনে যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে। তাদের সরকারি সহযোগিতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আর বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে দ্রুত।’
দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ২৪ ঘণ্টায় বজ্রপাতে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লার মুরাদনগর ও বরুড়া উপজেলায় চারজন এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে তিনজন মারা গেছেন। এসব জায়গায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত তিনজন।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কুমিল্লার মুরাদনগরের কোরবানপুর পূর্বপাড়ার একটি মাঠে কৃষক নিখিল দেবনাথ ও জুয়েল ভূঁইয়া পাশাপাশি জমিতে ধান কাটছিলেন। এ সময় বজ্রপাত শুরু হলে এর আঘাতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হন আরেক কৃষক নাজির।
একই সময় খোশবাস ইউনিয়নের পয়ালগচ্ছ গ্রামের কয়েকজন শিশু মাঠে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। এ সময় হঠাৎ বজ্রপাত হলে এর আঘাতে ফাহাদ, জিহাদ ও আবু সুফিয়ান নামে তিনজন মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিলে ফাহাদ ও জিহাদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, হাওরে ধান কাটতে গিয়ে বজ্রাঘাতে কিশোরগঞ্জের হালালপুর গ্রামে ইন্দ্রজিৎ দাস নামে একজন মারা গেছেন। এ ছাড়া রানীগঞ্জ গ্রামে ধানের খড় ঢাকতে গিয়ে বজ্রাঘাতে ফুলেছা বেগম এবং খয়েরপুর হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে স্বাধীন মিয়া নামে এক যুবক বজ্রাঘাতে মারা গেছেন।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার বুড়িগাঙ্গাল হাওরে সকালে গরুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান কলেজ শিক্ষার্থী রিমন তালুকদার। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হলে এর আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অন্যদিকে জমি থেকে খড় আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে নিহত হয়েছেন বিশাখা সরকার নামে এক নারী।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোণার মদনে আজ মাদরাসায় যাওয়ার পথে বজ্রাঘাতে আরাফাত মিয়া নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে রোববার রাতে বজ্রাঘাতে মারা যান মাদ্রাসা শিক্ষক দিদারুল। মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অলিদুজ্জামান জানান, আরাফাত নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর বজ্রাঘাতে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, সোমবার দুপুরে কালবৈশাখী ঝড় হয় চাঁদপুরের কচুয়ায়। ঝড়ের সময় বজ্রপাতের বিকট শব্দে হার্ট অ্যাটাক করে বিশকা রানী সরকার (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার উত্তর কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের নাহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত বিশকা রানী নাহারা গ্রামের পূর্বপাড়া মন্দির ওয়ালা বাড়ির হরিপদ সরকারের স্ত্রী।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের বেপারীকান্দি এলাকায় বজ্রাঘাতে এক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তার নারীর নাম শেফালী বেগম (৩৫)। তিনি ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক ছোরহাব বেপারীর স্ত্রী।
নিহতের পরিবার জানায়, দুপুরে তিনি ও তার স্বামী গরুর জন্য ঘাস আনতে বিলে যান। ফেরার সময় বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। সেখানে বজ্রাঘাতে শেফালী আহত হন। তার স্বামী দ্রুত ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শেফালীকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজধানী ঢাকাসহ রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও পটুয়াখালী জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা প্রশমিত হতে পারে।
সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রাও সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যৌথভাবে রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর, সৈয়দপুর ও রাজারহাটে ১৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত যৌথভাবে রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর ও তেঁতুলিয়ায় ৪১ মিলিমিটার বা মিমি।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ২৬ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ২৬ মিনিটে।
বরগুনায় এক নারীকে ধর্ষণের চেষ্টাকালে দুই শিশুসন্তান বাধা দেওয়ায় তাদের হত্যা মামলায় ইলিয়াস পহলান নামে এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
মো. ইলিয়াস পহলান (৩৪) বরগুনা সদর উপজেলার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে।
মামলা পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রঞ্জু আরা শিপু, আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন আহসান হাবীব স্বপন। আইনজীবী রঞ্জু আরা শিপু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট রাতে বরগুনা সদর উপজেলার ওই নারী তার মেয়ে তাইফা (৩) ও ছেলে হাফিজুলকে (১০) নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে বাধা দেন ওই নারী। এ সময় তাইফা ও হাফিজুলের ঘুম ভেঙে গেলে ইলিয়াস ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিনজনকেই কুপিয়ে আহত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় হাফিজুল নিহত হয়, আর বরিশালে নেওয়ার পথে মারা যায় শিশু তাইফা।
তবে গুরুতর আহত ওই নারী দীর্ঘ চিকিৎসার পর প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার পরই ইলিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়।
তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করলে বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাব্যুনাল সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে ইলয়াস পহলানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত দোষী তাকে সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে দুই লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত।
এ ছাড়াও ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১০ বছর করে আরও ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চালু হচ্ছে কার্গো ফ্লাইট। রোববার সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট উড়াল দেবে স্পেনের উদ্দেশে। এর মাধ্যমে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই বিমানবন্দর থেকে প্রথমবারের মতো শুরু হবে পণ্য পরিবহন।
সিলেট থেকে বিভিন্ন পণ্য ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে এখানকার বিমানবন্দরে কার্গো টার্মিনাল না থাকায় ঢাকা থেকে পণ্য রপ্তানি করতে হতো ব্যবসায়ীদের। তাই সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে কার্গো টার্মিনাল স্থাপন ও ফ্লাইট চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হওয়ার সুযোগে সিলেটের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের এই দাবিটি পূরণ হতে যাচ্ছে।
সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট শুরু হওয়াকে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যাওয়া হিসেবে দেখছেন এখানকার রপ্তানিকারকরা। তবে ফ্লাইট চালু হলেও প্যাংকিং হাউস না থাকায় এখনই ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সিলেটে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
ওসমানী বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্সের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে ও বসানো হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বাজারের জন্য আধুনিক মানসম্পন্ন যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইউডিএস) যুক্ত রয়েছে এতে। ১০০ টন ধারণক্ষমতার ওসমানীর কার্গো টার্মিনালের ২০২২ সাল থেকেই পণ্য পরিবহনের জন্য প্রস্তুত ছিল, তবে নানা কারণে এতদিন তা চালু হয়নি। অবশেষে রোববার স্পেনের ইনডিটেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে ওসমানী থেকে কার্গো ফ্লাইট চালু হবে।
গ্যালিস্টার ইনফিনিট অ্যাভিয়েশনের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির পুরো বিষয় তত্ত্বাবধান করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। সংশ্লিষ্টরা জানান, কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা কার্যক্রমের নিরাপত্তা দেবে বেবিচক। আর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বে থাকবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এতদিন ভারতের পেট্রাপোল ও গেদে স্থলবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির (ট্রান্সশিপমেন্ট) যে সুবিধা বাংলাদেশ পেত, গত ৮ এপ্রিল তা বাতিল করে দিল্লি। এরপর সড়কপথে দিল্লি বিমনবন্দর হয়ে আকাশপথে কার্গো পরিবহনের বিকল্প হিসেবে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জালালাবাদ ভেজিটেবল অ্যান্ড ফিশ এক্সপোর্ট গ্রুপের সাবেক সভাপতি হিজকিল গুলজার বলেন, ওসমানী থেকে কার্গো ফ্লাইট এ অঞ্চলের রপ্তানিকারকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। আমরা দীর্ঘদিন থেকে এ দাবি জানিয়ে আসছি। এটি চালুর মাধ্যমে সিলেটের রপ্তানিকারকদের নতুন সম্ভাবনাও দেখা দিয়েছে। এর ফলে সিলেটের পান, সাতকরা, লেবু, মাছসহ কিছু পণ্য রপ্তানি আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা গেলে কেবল দেশের ব্যবসায়ীরা নয়, ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ব্যবসায়ীরাও এই বিমানবন্দর থেকে সুবিধা নিতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমেদ জানান, ঢাকার পর ওসমানীতে দ্বিতীয় কার্গো স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। শুরুতে ইউরোপের কয়েকটি দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে।
অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় সুবিধা যোগ হলে সিলেট থেকেই স্থানীয় পণ্য রপ্তানিও সম্ভব হবে উল্লেখ করে হাফিজ আহমদ বলেন, তবে এখনই তা সম্ভব নয়। কারণ সিলেটের প্রধান রপ্তানি পণ্য শাক-সবজি, যা দ্রুত পচনশীল। এ ধরনের পণ্য রপ্তানিতে আরএ-থ্রি প্রটোকল ছাড়াও প্রয়োজন আধুনিক প্যাকিং হাউস।
জানা যায়, রোববার ওসমানী থেকে কার্গো ফ্লাইট উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, সচিব নাসরীন জাহান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া এবং মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী।
কবি রজনীকান্ত সেনের ভাষায়, ‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই কুঁড়েঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে।’ স্থপতি বাবুই পাখিটি জানে, নিজের যতই কষ্ট হোক, তালগাছের পাতায় শ্রমে-আনন্দে তৈরি নিজের ঘরেই সুখ।
বর্তমানে তালগাছ অনেকটা কমে গেলেও গ্রাম থেকে একেবারে হারিয়ে যায়নি। এখনো গ্রামের কোনো পুকুর বা দীঘিরপাড়ে, পথের পাশে দু-একটা তালগাছ দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক বছর ধরে স্থপতি বাবুই পাখির আবাসস্থল হয়ে আছে তালগাছ।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে এ রকম একটি তালগাছে বাবুই পাখির বাসা গড়ে উঠেছে, যা আলাদাভাবে অনেকের নজর কাড়ছে।
সম্প্রতি গয়ঘর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাড়ির পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ। গাছের বিভিন্ন পাতায় বাসা বুনেছে স্থপতি পাখি বাবুই। এক দুটি নয়, বাসা হবে প্রায় শখানেক। কোনো বাসা বোনার কাজ শেষ, কোনোটিতে চলছে বুনন। তখন বিকেল। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়েছে, মেঘলা আকাশ। একটু পর সন্ধ্যা হবে। পাখিদের ফেরার সময় হয়েছে।
এ সময় দেখা যায়, কোনো বাবুই বাসার ওপরে বসছে, কেউ বাসার ভেতরে ঢুকেছে। কেউ উড়ে যাচ্ছে। কোনো বাবুই পাতার ওপর বসে চারদিকটা দেখে নিচ্ছে। কেউ তালগাছ ছেড়ে আশপাশের গাছে গিয়ে বসছে, আবার ফিরে আসছে। পাখিদের এমন চঞ্চলতার দৃশ্যে মুগ্ধ হবে যে কেউ।
বাবুই দৃষ্টিনন্দন পাখি। এদের বাসা বোনার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতিও খুব সুন্দর। নিজের ঘর সাজাতে তাদের জুড়ি নেই। গ্রীষ্মকাল হচ্ছে বাবুই পাখির প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ বাবুই তাল, খেজুর, ধান ও ঘাসপাতা থেকে বাসা তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। সুতার মতো দু-তিন ফুট লম্বা পাতার চিকন আঁশ ঠোঁটে চেপে নিয়ে আসে। পছন্দের গাছের ডালে সেটা পেঁচিয়ে গিঁট দিয়ে শুরু করে বাসা বোনা। একটি বাসা তৈরিতে সময় লাগে সপ্তাহখানেক। স্ত্রী বাবুই গড়ে তিনটি ডিম পেড়ে থাকে। ডিম থেকে ছানা ফুটতে ১০ থেকে ১৩ দিন সময় লাগে। ছানারা ১৫ থেকে ১৯ দিনে উড়তে শেখে। বাবুই পাখির আয়ুষ্কাল প্রায় চার বছর।
কথিত আছে- বাবুই পাখি রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করতে জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় গুঁজে রাখে এবং সকাল হলে ছেড়ে দেয়।
গয়ঘর গ্রামের মো. আমির মিয়া বলেন, ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছগুলোতে অনেক বাবুই পাখির বাসা থাকত। কিন্তু এখন তা আর দেখা যায় না। যা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের পুরো এলাকাজুড়ে মাত্র একটি তালগাছে তারা বাসা বেঁধেছে। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সকালবেলা আমাদের ঘুম ভাঙে।’
স্থানীয় পরিবেশকর্মী সোনিয়া মান্নান বলেন, বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশের কারণে অসংখ্য প্রজাতির পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ আমাদের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো বিলুপ্তির পথে। স্থপতি বাবুই পাখিও এখন তেমন একটা দেখা যায় না। তা ছাড়া আবাসন সংকটও একটা বড় কারণ। পরিবেশ বিপর্যয় ও বিলুপ্তির হাত থেকে বাবুই পাখিকে রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।
জেলার হাজী ছালামত স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর জয়েস বলেন, বাবুই পাখির খাবার ও বাসস্থানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তারা ধান, কীটপতঙ্গ, ঘাস, পাতা, ফুলের মধু প্রভৃতি খেয়ে থাকে। সুতরাং কীটনাশক ব্যবহার, নির্বিচারে ঝোপঝাড় উজাড়ের বিষয়ে সচেতনতা দরকার। তালগাছ ছাড়াও নারিকেল, সুপারি, খেজুর প্রভৃতি গাছে বাবুই বাসা বানায়। এসব দিন দিন কমছে। এগুলো রক্ষায় নতুন করে গাছ লাগানোর পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে হবে।
বুননশিল্পী বাবুই পাখি ও বাসার সন্ধানে পাখিপ্রেমীরা ছবি তুলতে, কিচিরমিচির শব্দ শোনার জন্য আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতেন। এখন আর তেমন একটা বাবুই পাখি চোখে পড়ে না। পড়ে না বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে, কোনো পতিত উঁচু ভিটেমাটিতে কিংবা বাড়ির সীমানায় শোভাবর্ধন তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা যেত। তা দেখে পাখিপ্রেমীরা মুগ্ধ হতেন। এখন সেই তালগাছও প্রায় বিপন্ন হতে চলছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
খুলনা অঞ্চলে গ্রিড বিপর্যয়ের ঘটনায় আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হাসিব চৌধুরীকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।
আজ রোববার এক অফিস আদেশে এ কমিটি গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, তদন্ত কমিটি গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ নির্ণয়, গ্রিড বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায় নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি কমিটি প্রয়োজনে এক বা একাধিক সদস্যকে কো-অপ্ট করতে পারবে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে গ্রিড বিপর্যয় পরিহারের লক্ষ্যে সুপারিশ করবে।
কমিটির সদস্যরা হলেন- বুয়েট অধ্যাপক ড. মো. এহসান, খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পিঅ্যান্ডডি) মো. শহীদুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী (পরিচালক) মো. আবদুল মজিদ, বিপিডিবির সিস্টেম প্রটেকশন ও টেস্টিং কমিশনিং সেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান, পিজিসিবি ট্রান্সমিশন-১ এর প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফয়জুল কবির ও বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মাজহারুল ইসলাম।