সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪

এক সপ্তাহে মারা গেছে ডলফিনসহ ৭ মা মাছ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত
চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশিত : ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১১

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আরও একটি বিপন্ন প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন এবং একটি প্রজননক্ষম মা (ব্রুড) মাছের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় মৃত ডলফিন এবং মা মাছটি দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে হালদা নদীতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় একটি মৃত ডলফিন ও একটি ব্রুড মাছ ভেসে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে আমাকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে।’

এ নিয়ে গত সাত বছরে (২০১৭ সাল থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত) হালদা নদী থেকে ৪২টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হলো জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর মৃত ব্রুড (প্রজননক্ষম) মাছ উদ্ধার করা হয়েছে মোট ছয়টি।’

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে হালদা নদীতে ছয়টি ব্রুড মাছ (একটি রুই এবং পাঁচটি কাতলা) ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অশনিসংকেত। স্থানীয়দের কাছে পাওয়া তথ্য অনুসারে ওই ল্যাবরেটরির একজন গবেষণা কর্মকর্তা জানান, সোমবার (১ জুলাই) রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মৃত কাতলা ও একটি ডলফিন জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এর আগে রোববার দুপুর ১টার দিকে আজিমের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের (দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার) আরও একটি মৃত কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকা থেকে দুটি কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ওজন ১০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৫৮ সেন্টিমিটার, অপরটির ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম দৈর্ঘ্য ৯৮ সেন্টিমিটার।

গত ২৬ জুন রাউজান উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার কয়েক দিন আগেও ১২ কেজি ওজনের একটি মা কাতলা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।

ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে দুই বছর পরে এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরও একটি হতাশাজনক বিষয়, ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর মাছেরা সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে, যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। ইতোমধ্যে প্রজনন মৌসুমের ছয়টি জো শেষ হওয়ার মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে মাছের ডিম ছাড়ার কোনো রেকর্ড নেই। হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের এত হতাশার মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং দুটি ডলফিনের মৃত্যু এই নদীর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এই ব্রুড মাছের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে শাখা খালগুলোর দূষণ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করি। তবে হালদা নদী তথা বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ রক্ষার জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদ্ঘাটনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে, হালদা নদীর গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় রয়েছে।


নরসিংদীতে ট্রেনে কাটা পড়ে ৫ জনের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

নরসিংদীর রায়পুরায় ট্রেনে কাটা পড়ে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আজ সোমবার (৮ জুলাই) ভোর পৌনে ৬টার দিকে উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুরে চিটাগাং মেইল ট্রেনে কাটা পড়ে তাদের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেথিকান্দা স্টেশনের স্টেশনমাস্টার আশরাত আলী।

স্থানীয়রা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রেললাইনের পাশে পাঁচটি মরদেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দেখতে পান তারা। পরে খবর দিলে পুলিশ সকাল ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। মরদেহ শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত সকলেই পুরুষ এবং তাদের বয়স ২০-৩২ এর মধ্যে।

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ (উপ-পরিদর্শক) মো. শহিদুল্লা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, নিহতেরা ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়েছে নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়পুরা সার্কেল আফসান আল আলম বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পাঁচজনের মরদেহ দেখতে পাই। তাদের প্রত্যেকের বয়স ২০-৩২ এর মধ্যে। তাদের পরিচয় শনাক্তে আমরা কাজ করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।


বগুড়ায় রথযাত্রায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নিহত ৫

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়ায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের রথযাত্রার উৎসবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ রোববার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হওয়ার পর ১০০ গজ দূরে বগুড়া শহরের সেউজগাড়ি আমতলা মোড় এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান হাসপাতালে যান এবং সবার চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেন।

নিহতরা হলেন শাজাহানপুর উপজেলার গোহাইল গ্রামের রঞ্জিতা (৬০), আদমদিঘী উপজেলার কুন্ডু গ্রামের নরেশ মহন্ত (৬০), সদর উপজেলার তিনমাথা রেলগেটের লঙ্কেশ্বরের স্ত্রী আতসী রানী (৪০) ও শিবগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের অলক কুমার (৪২)। তবে এক নারীর (৪০) নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

আহতরা হলেন, রীপা (৫০), তুর্ণ (২), কৃষ্ণা (৪৬), প্রীতিলতা (১৮), চুমকী (৪৪), পুজা (২৯), ডলি (৩০), শিউলি (৫৫), নীপা (৩২), রীমা (২৩), রত্না (৫৫), পুতুল (৫০), শান্তি (৪০). স্বরস্বতি (৩), মোহনা (১২), ঝর্ণা (১২), চুমকী (৪০), গীতা (৪৫), ফুলকীসহ (৮) ৪০ জন। আহতরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

যেভাবে ঘটে দুর্ঘটনা

বগুড়া মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুর রহমান জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সেউজগাড়ি ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। পরে ১০০ গজ আসতেই রাস্তার পাশে ১১ হাজার ভোল্টেজ বিদ্যুতের তারের সঙ্গে রথযাত্রার গম্বুজের ধাক্কা লাগে। এ সময় লোহার তৈরি পুরো রথ বিদ্যুতায়িত হলে ঘটনাস্থলে দুইজন পরে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অন্তত ৪০ জন। বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. স্নিগ্ধ আখতারও এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রীশ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে আজ। হিন্দু রীতি অনুযায়ী, প্রতি বছর চন্দ্র আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।


মুন্সীগঞ্জে প্রকাশ্যে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন হাওলাদারকে (৪৭) গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে। তারা হলেন কাওসার হাওলাদার (৪৭), শেকুনুর হাওলাদার (৫৫) ও নুর হোসেন (৫০)।

পাঁচগাঁও আলহাজ্ ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার আসলাম খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

কী ঘটেছিল

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন ছিল। নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী দেওয়ান মনিরুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন নিহত সুমন। এতে পরাজিত প্রার্থী ইউনিয়নটির সাবেক চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান মিলন হাওলাদার সমর্থক নুর মোহাম্মদ হাওলাদার ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয় মাঠে অবস্থানরত ইউপি চেয়ারম্যান সুমনের সঙ্গে প্রথমে হাতাহাতি ও পরে বুকে গুলি করেন। এ সময় দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলেও ঢলে পড়ে যান তিনি। পরে সুমনকে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে দুপুর দেড়টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রণয় মান্না দাস বলেন, ‘দুপুর পৌনে ২টার দিকে মৃত অবস্থায় ইউপি চেয়ারম্যানকে হাসপাতালে আনা হয়। তার বুকের ডান পাশের নিচে গুলির চিহ্ন রয়েছে।’

মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।


দুদকের মামলায় বাগেরহাট পৌরসভার ১৫ সাবেক কর্মচারী কারাগারে

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাগেরহাট প্রতিনিধি

২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর বাগেরহাট পৌরসভায় ১৭ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক ১৫ কর্মচারীর জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

আজ রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৌরসভার সাবেক ১৫ কর্মচারী জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক মো. আশরাফুল ইসলাম তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এসময় মামলায় অপর দুই আসামি আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন এবং পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান জামিনে রয়েছেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর দুদকের খুলনা কার্যালয় বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমানের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর বাগেরহাট পৌরসভায় মেয়র খান হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৭ জনকে অবৈধভাবে নিয়োগ দিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়। এছাড়া বাগেরহাটে আবাহনী ক্লাবের ট্রেইনিং সেন্টার ও বাগেরহাট ডায়াবেটিক হাসপাতাল কমপ্লেক্সের জন্য বরাদ্দ দেওয়া (১ কোটি) টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মেয়র খান হাবিবুর রহমান ও বাগেরহাট পৌরসভার সাবেক সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে অপর একটি মামলা হয়েছে।


দুদিনে বাংলাদেশ সীমান্তে সাড়ে ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার বিএসএফের

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:১৬
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে গত দুদিনে পাচার হওয়া সাড়ে ১৪ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এ সময় ৮ চোরা কারবারিকে আটক করেছে তারা। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার এসব অভিযান চালানো হয়। বিএসএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) এক বিবৃতিতে বিএসএফ জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফের ৮ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গে নদিয়া জেলার পুট্টিখালীর সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকার মথুরাপুর গ্রামে তল্লাশি চালান। এ সময় মথুর দাস নামে এক সন্দেহভাজনকে চ্যালেঞ্জ করে তল্লাশি করলে তার কাছ থেকে ২০টি সোনার বার ও দুটি সোনার ইট উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার করা সোনার ওজন প্রায় ৪ দশমিক ৭ কেজি। এর ভারতীয় বাজারমূল্য ৩ দশমিক ৩ কোটি রুপির বেশি। বিএসএফের দাবি, উদ্ধার করা সোনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করা হয়েছে।

বিএসএফ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি ঠাকুরী গ্রাম থেকে একটি স্কুটিতে করে মথুরাপুর গ্রামের দিকে আসছে। পথেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করা হয়। পরে তাকে সীমান্ত ফাঁড়িতে এনে তল্লাশি চালিয়ে স্কুটির সিটের নিচে রাখা প্যাকেট থেকে ২০টি সোনার বার ও দুটি সোনার ইট উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে ৪ দশমিক ৭ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফ। আটক মথুর দাস পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে, মথুর স্বীকার করেছেন, সোনার চালানটি তিনি বনগাঁয় পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন এ কাজ করে ভালো অর্থ উপার্জন করেছেন বলেও জিজ্ঞসাবাদে স্বীকার করেছেন মথুর। আটক ব্যক্তি এবং উদ্ধার করা সোনা পরবর্তী আইনি ব্যবস্থার জন্য রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই) কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এর আগে, গত শুক্রবার ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার সীমানগরের ১১ নম্বর রাজ্য সড়কে পর পর ৪টি অনুসন্ধান চালিয়ে ১০ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে বিএসএফের ৬৮ ব্যাটালিয়ন এবং কলকাতার রাজস্ব গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিআরআই)। এ সময় ৭ জন চোরাকারবারি গ্রেপ্তার হয়েছে। সেদিন উদ্ধার করা সোনার মধ্যে রয়েছে ১টি সোনার ইট এবং সাড়ে ৯ কেজির বেশি ওজনের সোনার বিস্কুট। জব্দকৃত সোনার দাম পৌনে সাত কোটি রুপির বেশি। একই সঙ্গে জব্দ করা হয়েছে ১১ লাখ ৫৮ হাজর ৫০০ রুপি নগদ এবং সোনা ডেলিভারিতে ব্যবহৃত একটি মারুতি ইকো গাড়ি। দেশটির যৌথ বাহিনী দাবি করেছে, এসব সোনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে আনা হয়েছিল। সংস্থাটি জানায়, বৃহস্পতিবার সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিএসএফের ৬৮ ব্যাটালিয়ন এবং ডিআরআই-এর একটি যৌথ দল সীমানগর এলাকায় ১১ নম্বর রাজ্য সড়কে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ বাহিনীর সদস্যরা একটি সন্দেহজনক মারুতি ইকো গাড়ি থামায়। সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার পর তল্লাশির সময় ৪ দশমিক ৮ কেজি সোনাসহ দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়।

একইভাবে ওই সড়কে সকাল ৭টা নাগাদ একটি বাস থামিয়ে তল্লাশিকালে ১ দশমিক ২ কেজি সোনাসহ একজনকে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ আরেকটি বাস থামিয়ে তল্লাশিকালে ৩ দশমিক ৬২ কেজি সোনাসহ তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি অভিযানে ওই জেলার করিমপুরের রামনগর গ্রামে একটি সন্দেহজনক বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১টি সোনার বিস্কুট ও সাড়ে ১১ লাখ অবৈধ নগদ টাকাসহ একজনকে আটক করা হয়।

গ্রেপ্তার প্রধান পাচারকারীর নাম রফিক মণ্ডল, নদীয়া জেলার টেপুরের বাসিন্দা তিনি। এ ছাড়া লাল, রবি, প্রদীপ, দাউদ, সীমান্ত ও বিট্টু নামের পাচারকারীরা সবাই নদীয়া (পশ্চিমবঙ্গ) জেলার বাসিন্দা। জিজ্ঞাসাবাদে রফিক মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে সোনা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত এবং এবার তিনি কৃষ্ণনগরে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে সোনার চালান পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। এ ছাড়া অন্যান্য পাচারকারী জানিয়েছে যে, তারা করিমপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে সোনা নিয়ে কলকাতার দমদম রেলস্টেশনে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। গ্রেপ্তার চোরাকারবারিদের সোনাসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিআরআই, কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিএসএফ বাংলাদেশ থেকে এসব সোনা পাচার হয়েছে বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।


রামপাল পাওয়ার ঘিরে তৈরি হচ্ছে গ্রিন বেল্ট

থাকবে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য
আপডেটেড ৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:১৫
খুলনা ব্যুরো

বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) রামপাল পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে গ্রিন বেল্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলতে প্লান্ট চত্বর ও সংলগ্ন অঞ্চলে মোট ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাখিদের জন্য অভয়ারণ্যও গড়ে তোলা হবে। বন বিভাগের সঙ্গে পাওয়ার প্লান্টের যৌথ উদ্যোগে এই কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ‘বৃক্ষ দিয়ে সাজাই দেশ, সমৃদ্ধ করি বাংলাদেশ’ স্লোগানে প্লান্ট এলাকার সামনে গতকাল শনিবার বর্ষাকালীন বৃক্ষ রোপণ অভিযান-২০২৪ শুরু হয়েছে।

বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি শুরুর আগে এক উদ্বোধনী সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে বক্তারা বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য গড়ে তোলার ওপর আলোকপাত করেন।

সেখানে জানানো হয়, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের চারপাশে কয়েক ধাপে মোট ৫ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৮৭ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে আরও ১ লাখ ১৩ হাজার বৃক্ষ রোপণ করা হবে। পরবর্তীতে বন বিভাগের সঙ্গে আবারও সমন্বয় করে ধারাবাহিকভাবে অবশিষ্ট ৩ লাখ বৃক্ষ রোপণ করা হবে।

এ সময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বন বিভাগের উপপ্রধান বন সংরক্ষক ড. মো. জগলুল হোসেন বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের উৎপন্ন কার্বন শোষণ করানোর জন্য বিশাল গ্রিন বেল্ট তৈরি করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে ভবিষ্যতে একবিন্দু জায়গা ফাঁকা থাকবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের সিপিও মো. জিয়াউর রহমান বলেন, রামপাল পাওয়ার প্লান্টের সুবিধা সারা দেশই পাচ্ছে। সুতরাং দেশবাসীর কাছে অনুরোধ থাকবে প্রত্যেকে যেন নিজের উদ্যোগেও বনায়ন সৃষ্টি করেন। এর ফলে আমরা সুন্দর প্রকৃতি ধরে রাখতে পারব।

এ সময় রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সেখ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এক সময়ে মানুষের মধ্যে ধারণা ছিল রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন হলে এর ১০ থেকে ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গাছ থাকবে না। তখন অনেক পরিবেশকর্মী সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছিলেন। তাদের সেই অবাস্তব ধারণা আমরা ভুল প্রমাণিত করতে পেরেছি। এই প্লান্ট নিজস্ব ব্যবস্থায় প্রচুর গাছ লাগিয়েছে। আমরাও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে এই অঞ্চলের প্রচুর গাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই- জীবন বাঁচাতে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।

সামাজিক বন বিভাগের খুলনা-বাগেরহাট-পিরোজপুর অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জি এম রফিক আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালে রামপাল পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে বন বিভাগের একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তির আলোকে ২০১৮ সাল থেকে বনায়নের কাজ শুরু করেছি। এ পর্যন্ত প্লান্টের চার পাশে আমরা ৮৭ হাজার গাছ লাগিয়েছি। এই বর্ষা মৌসুমে আমরা বাকি ১ লাখ ১৩ হাজার গাছ লাগাব। এ ছাড়া পরে চুক্তি বাড়লে আরও গাছ লাগানো হবে।’

প্লান্টের পাশে গাছ টেকসই করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানের মাটি লবণাক্ত ও বালুযুক্ত। তাই গাছ টিকিয়ে রাখতে আমরা বাইরে থেকে মাটি এনে গাছ লাগিয়েছি। পাশাপাশি নদীর পাড়ে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ লাগিয়েছি।’

রামপাল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফতাব আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তার জন্য উন্নত দেশগুলো বেশি দায়ী। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আমাদের বেশি পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে।

যশোর সামাজিক বনাঞ্চলের বন সংরক্ষক এ এস এম জহির উদ্দিন আকন বলেন, বাংলাদেশ সরকার যখন রামপাল পাওয়ার পয়েন্ট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল, তখন বিজ্ঞানীরা নানা রকম মত দিয়েছিল। তখন আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, তবে বাস্তবে তা হয়নি। এ পাওয়ার প্ল্যান্টের আশপাশে চমৎকার বনান সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। এই বনায়নে এখন পশু-পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইএফপিসিএলের জেনারেল ম্যানেজার দেবাশীষ সাহা। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


৬ দিন ধরে কর্মবিরতিতে ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই দফা দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত ১ জুলাই থেকে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিগুলোর প্রতি আরইবির অব্যবস্থাপনা, বৈষম্য, দুর্নীতির মাধ্যমে নিম্নমানের মালামাল ক্রয়পূর্বক ভঙ্গুর বিদ্যুৎ লাইন তৈরি করে গ্রাহক ভোগান্তি, দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা, সমিতি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আরইবি বৈঠকে বসার দপ্তরাদেশ করলেও মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করায় আন্দোলনকারীরা আরইবির সঙ্গে ৫ জুলাইয়ের মিটিং বর্জন করেন।

আন্দোলকারীদের একজন নেতা সাজেদুর রহমান বলেন, ঢাকার আশপাশের কয়েকজন জিএমের সঙ্গে আরইবির নির্বাহী পরিচালক আসাফউদ্দৌলা সভা করেন। সভায় তিনি যেসব সুযোগ-সুবিধা আরইবি দিবে বলে জিএমদের জানায় এবং আমরা জানতে পারি সিনিয়র সচিব মহোদয় সেগুলোই সভায় উপস্থাপন করেন। এতে মনে হয় সিনিয়র সচিব মহোদয় আরইবি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লীবিদ্যুতের একজন জানান, সিনিয়র সচিব মহোদয়ের মেয়ে আরইবিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। বিধায় তিনি আরইবির প্রতি বেশি আন্তরিক এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছেন না।


বেনজীরের রূপগঞ্জের বাংলো বাড়ি ক্রোকের পর সিলগালা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত বেনজীরের বাংলো বাড়িটি আদালতের নির্দেশে ক্রোক করে সিলগালা করা হয়। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত বাংলো বাড়ি আদালতের নির্দেশে ক্রোক করে সিলগালা করা হয়েছে।

শনিবার বিকেলে রূপগঞ্জ দক্ষিণবাগ এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বয়ে গঠিত টিমের নেতৃত্বে বাড়িটি ক্রোক করা হয়।

এ সময় ক্রোক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ২৪ কাঠা জমির ওপরে নির্মিত এই সম্পত্তির মালিক হিসেবে বেনজীর আহমেদের কন্যা মিস ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর লেখা রয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তার এই সম্পত্তিটি ক্রোক করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলমের নেতৃত্বে দুর্নীতি দমন কমিশনের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক মইনুল হাসান রওশানী, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান মাহমুদ রাসেলসহ আরও অনেক কর্মকর্তা উপস্থিত হয়ে বাড়ির চারপাশ ঘুরে দেখেন। তবে বাড়ির মূল ভবনের দরজায় ডিজিটাল লক (তালা) থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে ভবনের মূল ফটকে ক্রোক আদেশ নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শফিকুল আলম বলেন, ‘ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত কর্তৃক রূপগঞ্জ উপজেলাধীন সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য জেলা প্রশাসনকে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে এই সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হলো। আমরা দুই তলা একটি ভবন পেয়েছি। সেই ভবনে পোষা প্রাণী রয়েছে। কুকুর ও পাখি দেখা গেছে। এখনকার দুজন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। তাদের এখানে রাখা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ভবনে ডিজিটাল লক সিস্টেম রয়েছে। এটা খোলার জন্য উপযুক্ত টেকনিশিয়ান ও ইকুইপমেন্ট না থাকায় আমরা ভবনের দরজার তালা খুলতে না পারায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণবাগ এলাকায় আনন্দ হাউজিং সোসাইটিতে লেকের পাশে ২৪ কাঠা জায়গাজুড়ে লাল রঙের আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ির মালিক পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। আট বছর আগে এলাকার প্রয়াত প্রেমানন্দ সরকারের সন্তানদের কাছ থেকে ১ কোটি ৮৩ লাখ টাকায় ৫৫ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। পরে বছরচারেক আগে এই জমিতে ওই বাড়ি করেন তিনি।

গত ৩১ মার্চ ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ৩ এপ্রিল ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এতে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে। অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের জব্দ জমি বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধে আদালতের আদেশের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে। জমি অন্য কারোর নামে যাতে নামজারি না করা হয় সেজন্য আদালতের রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট এসিল্যান্ড অফিসে পাঠানো হয়। এ ছাড়া কোম্পানির মালিকানা হস্তান্তর বন্ধে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে আদালতের ওই আদেশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকে জমা থাকা টাকা উত্তোলন বন্ধে অবরুদ্ধের আদেশ সোনালী ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

গত ২৩ মে আদালতের আদেশে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদিকে গত ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানে ৪টি ফ্লাট জব্দের আদেশ দেন। গত ২৩ মে তাদের নামীয় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৩টি হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ৬২৭ বিঘা জমি ক্রোক করা হয়েছে।

এরই ধারবাহিকতায় পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ কার্যকর চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে।

দুদক গত ২২ এপ্রিল বেনজীর, তার স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের আইজি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‌্যাব এবং র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাদের মধ্যে বেনজীরও ছিলেন বলে জানা গেছে।


তিস্তার পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। বিভিন্ন অঞ্চলের পানি নেমে যাচ্ছে। তবে নীলফামারীতে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি। এতে তিস্তাপাড়ের নিমাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার বেলা ১২টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের সব গেট (৪৪টি) খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকাল ৯টায় পানি বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এরপর বেলা ৩টার দিকে ২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকাল ৩টায় ওই পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। সেখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার।

নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। এমনই একটি গ্রাম ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর। ভারত থেকে তিস্তার প্রায় প্রবেশমুখে গ্রামটির অবস্থান।

জানা গেছে, তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করায় লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। পাশাপাশি গবাদিপশু হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপদে আছেন নদীপাড়ে বাসিন্দারা।

তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, নিজ গড্ডিমারী, সানিয়াজান ইউনিয়নের শেখসুন্দর, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, কালমাটি, রাজপুর ও গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় আবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে সকালে আমার ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্বছাতনাই মৌজায় পানি প্রবেশ করে। এতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবার পানিবন্দি হয়। দুপুরের পর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ফের পানি বাড়ার শঙ্কায় রয়েছে এলাকার মানুষ।’

একই উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পানির কারণে ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার বিধ্বস্ত হয়েছে। সেটি স্থানীয় উদ্যোগে বাঁশের পাইলিং ও বালির বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ চলছে। তবে এখনো কোনো বাড়িঘরে পানি ওঠেনি।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদ্দৌলা বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কয়েক দিনের তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১২টায় বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) গেট খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’


শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা

চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে চারপাশের সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।

আজ শনিবার বিকেল চারটা চল্লিশ মিনিটে শিক্ষার্থীরা এই মোড় অবরোধ করেন। এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেল তিনটা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেওয়া শুরু করে আন্দোলনকারীরা।

পরে তাদের এই অবস্থানে মিছিল সহকারে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও ঢাকার আশেপাশের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।

এরপর শিক্ষার্থীদের এই মিছিল কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হল, ভিসি চত্বর, টিএসসি, জগন্নাথ হলের মোড় হয়ে বকশিবাজার, বুয়েট, পলাশী, আজিমপুর হয়ে ইডেন কলেজ, হোম ইকোনোমিক্স কলেজ হয়ে ফের নীলক্ষেত রাজু ভাষ্কর্য হয়ে শাহবাগে গিয়ে মোড় অবরোধ করেন। এই প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলমান রয়েছে।


টাঙ্গাইলে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ 

বিপৎসীমার ওপরে যমুনা ও ঝিনাইয়ের পানি
আপডেটেড ৬ জুলাই, ২০২৪ ১০:২৭
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে লোকালয়ের নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি কালিহাতীর জোকারচর পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ভূঞাপুর, গোপালপুর, টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে লোকায়গুলো পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে খালে আংশিক কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে এবং চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘরবাড়িতে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের বাড়িতে দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেকে আবার পলিথিন কাগজের ছাউনি তুলে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং অনেকে তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।

এ ছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে চিতুলিয়াপাড়া, মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ী, জয়পুর, রেহাইগাবসারা, ভদ্রশিমুল, চর শুশুয়া, বাসুদেবকোল, রুলীপাড়া, রাজাপুরসহ আরও বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা এলাকায় ১০ থেকে ১৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে এবং ভাঙন অব্যাহত থাকায় আরও অনেকের বসতভিটা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।

নিকরাইলের মাটিকাটা, কোনাবাড়ী ও পাটিতাপাড়া এলাকার ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে এবং থাকার জন্য অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসছে না। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, বন্যার আগে যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাউবো জিও ব্যাগ ফেলতো বা স্থানীয়ভাবে বাঁধ দিত তাহলে এভাবে ভাঙন দেখা দিত না।

নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, নিকরাইলে অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে এবং সারপলশিয়া, মাটিকাটা, পাটিপাতাপাড়া, কোনাবাড়ী ও সিরাজকান্দি গ্রামে পানির স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এসব এলাকায় কিছু কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত এই ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ২০০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষের তালিকা করে ইউএনও বরাবর পাঠানো হবে।

গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার বলেন, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী, স্থলকাশি, চিতুলিয়াপাড়া, কয়েড়া, রুহুলীসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে এবং এসব এলাকায় সাড়ে ৪ শতাধিক পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে গোবিন্দাসী বাজার পানিতে তলিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার জন্য জিও ব্যাগের চাহিদা, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতার জন্য শুক্রবার সকালে ইউএনওর কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

অর্জনা ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন- আমার ইউনিয়নটি পুরোটাই দুর্গম চরাঞ্চল। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত। এ ছাড়া পোকা-মাকড়ের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারের জন্য সহযোগিতার জন্য আবেদন করা হচ্ছে।

গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা আকন্দ বলেন- কালিপুর, মেঘারপটল, রেহাইগাবসারা, চন্ডিপুর, জয়পুর ও রুলীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কৃষকের তিল, পাটসহ অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১০-১৫ টি ঘরবাড়ি বিলীন এবং পানিবন্দি আড়াইশ পরিবারের মানুষ। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পুরো চর পানিবন্দি হয়ে যাবে। এলাকায় নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাগুলো পানি প্রবেশ করেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে তালিকা করা হচ্ছে এবং দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।


বন্যায় সিলেটের পাঁচশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

সিলেট নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

চলতি বছরে টানা তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট। বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের উত্তরপূর্বের এই জেলা। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষাখাতেও। বন্যার ফলে জেলার প্রায় পাঁচশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে আর বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঈদের ছুটির পর পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান।

শিখন ঘাটতি কমাতে ঈদ ও গ্রীস্মের ছুটি কমিয়ে ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৬ জুন থেকে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু হয়। তবে সিলেটের অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পর আর পাঠদান শুরু হয়নি। একই অবস্থা প্রাথমিক বিদ্যলয়গুলোরও। ঈদের ছুটির পর ৩ জুলাই থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও বন্যার কারণে সিলেটে তা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে জানা গেছে, বন্যার কারণে সিলেট জেলায় ৩৯৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে ৭৮টি। আর ১৫টির মতো কলেজে পানি উঠে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

সিলেটে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৯ মে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ৬ উপজেলা। ৮ জুনের পর থেকে এই বন্যার পানি কিছুটা কমে আসে। তবে ১৬ জুন থেকে আবার বন্যা শুরু হয়। এতে সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলায়ই বন্যা দেখা যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ১২ লাখ মানুষ। ২৫ জুন থেকে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি কমা শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে ফের অতিবৃষ্টি ও ঢল নামা শুরু হলে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উপর্যুপরি বন্যার ধাক্কা লেগেছে শিক্ষাখাতেও।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭টি, বিশ্বনাথে ২, বালাগঞ্জে ৫৫ টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২ টি, গোলাপগঞ্জে ২৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫৪টি, জকিগঞ্জে ২৩টি, কানাইঘাটে ৪টি, জৈন্তাপুরে ৩টি, গোয়াইনঘাটে ২টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫টি, দক্ষিণ সুরমায় ২২ টি ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ৩৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭ টি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকীগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নগরের ৪০ নং ওয়ার্ডের জান আলী শাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দেব বলেন, ঈদের পরদিন থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে বন্যা কবলিত কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে ৩ জুলাই সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও আমাদের এখানে পাঠদান শুরু করা যায়নি। তাছাড়া এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুব কম হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারা অবহাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছেই না।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। পানি কমলে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

এদিকে, গতকালও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি খুব একটা কমেনি। বরং কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি কিছুটা বেড়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য সতে, ২৪ ঘন্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৯ হাজার ২৩৪ জন।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ নেই কেবল সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। আর ওসমানী নগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও কোথাও অবনতি হচ্ছে। তবে আশা করছি খুব বেশি অবনতি হবে না।


চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। দিনাজপুর, পাবনার ঈশ্বরদী, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শুক্রবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দিনাজপুরে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন, পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেট কার উল্টে ৫ তরুণ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দুই ভাই-বোন এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস-ভ্যান সংঘর্ষে আরও দুজন নিহত হন।

দিনাজপুরে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে নাবিল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আম বোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ২৬ জন। এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় আরও একজন ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।

আহতদের দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ভ্যানচালকের নাম স্বদেশ রায় (২৩)।

চকরামপুর গ্রামে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বাংলা বাজার এলাকার মমিনুল হকের চার মাস বয়সী মেয়ে সায়মা মেহনাজ, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ এলাকার সুরা আলীর ছেলে ট্রাকচালক হাসু (২৮), পীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আলী (৫৮), দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদের মেয়ে বিভা (১০) ও নাবিল বাসের সুপারভাইজার রাজেশ বাহাদুর (৩০)।

তিনি জানান, ভোরে চকরামপুর গ্রামে ঢাকা থেকে রানীশংকৈলগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাস ও বিপরীত দিক থেকে আসা আম বোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক হাসু (৪০) ও নাবিল কোচের হেলপার নিহত হন। এতে আহত হন ৩০ জন। পরে আহত ৩০ জনকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুসহ আরও চারজন মারা যান। হাসপাতালে ২৬ জন আহত ভর্তি রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দুর্ঘটনার পর কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

পৃথক ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ভ্যানচালকের নাম জানা যায়নি।

ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বন্ধু নিহত, আহত ২

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বন্ধু নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ২ বন্ধুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাত পৌনে নয়টার দিকে (পাবনা-ঈশ্বরদী) মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যরা নিহতসহ আহতদের উদ্ধার করেন।

নিহতরা হলেন উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের রেজাউল হোসেনের ছেলে জিহাদ, কবির আনোয়ারের ছেলে বিজয়, ইলিয়াস হোসেনের ছেলে শিশির, মাসুম হোসেনের ছেলে সিফাত ও ভাড়ইমারী গ্রামের ওয়াজ আলীর ছেলে শাওন। আহতরা হলেন, একই গ্রামের জেটুর ছেলে শাহেদ ও সুমন আলীর ছেলে নাঈম।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, নিহতের মধ্যে বিজয় হোসেন ঢাকার একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির প্রাইভেটকার চালাতেন। ছুটিতে নিজ গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এসে সেই গাড়িতে আরও ছয় বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। উল্লেখিত সময়ে দাশুড়িয়া-পাবনা মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনে পৌঁছালে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই গাড়িতে থাকা জিহাদ, বিজয় ও শিশির নামে তিন বন্ধু নিহত হন।

এ সময় আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিফাত ও শাওনের মৃত্যু হয়। শাহেদ ও নাঈম নামে আরও দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান।

পাকশী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল হোসেন ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যদের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে তাদের মধ্যে আরও দুইজন মারা যায়।

ভাঙ্গায় বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ভাঙ্গায় একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন যাত্রী।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া যদুরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালায়।

দুর্ঘটনায় পিকআপের হেলপার এবং ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ফরিদপুরগামী পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ভাঙ্গা অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। নিহতদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তে চেষ্টা চলছে।

সোনাইমুড়ীতে কাভার্ড ভ্যান চাপায় ভাই-বোন নিহত

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি কাভার্ড ভ্যান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দিলে এর আরোহী ভাই-বোন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ সংলগ্ন মদিনা মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হচ্ছেন মো. ইয়াছিন (১৭) ও বিউটি আক্তার (২৪)। তারা উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বগাদিয়া গ্রামের নতুন বাড়ির মৃত বশির উল্যার সন্তান।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, ‘দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা বিউটি ছোট ভাই ইয়াছিনকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সোনাইমুড়ী বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথে অটোরিকশাটি বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছলে সেখানে বেগমগঞ্জগামী বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ভ ভ্যান তাদের চাপা দিলেই ঘটনাস্থলে ভাই-বোন নিহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে হাইওয়ে পুলিশ কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।’


banner close