মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যায় শুধু সড়কেই ক্ষতি ২২০ কোটি টাকা

ছবি: ইউএনবি
ইউএনবি
প্রকাশিত
ইউএনবি
প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২৪ ২১:৪৩

গত এক সপ্তাহ সুনামগঞ্জের ছাতকে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ছিল। এখনো নিম্নাঞ্চলের অনেক বসতঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি রয়ে গেছে। বন্যায় এ অঞ্চলের অনেক কাঁচা ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন এসব এলাকায় বসবাসকারীরা।

উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক ও সেতু-কার্লভার্টের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব রাস্তায় বন্যার পানি কমে যাওয়ায় ক্ষত-বিক্ষতের বেশকিছু চিত্র এখন ফুটে উঠছে বলে জানা গেছে। সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে অনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামীণ অনেক সড়ক ভেঙে প্রবলবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ছাতক-আমবাড়িবাজার ভায়া সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় পাকা সড়ক ভেঙে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত পরিবারের জন্য ছাতক পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়নে সরকারিভাবে ১৫০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাতকে সুরমা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় সড়কের নিচের মাটি সরে যাওয়ায় যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ কারণে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ লাল পতাকা টানিয়ে রেখেছে। একই সঙ্গে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জরুরি মেরামত কাজও চলছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় মতে, বন্যায় উপজেলার কৈতক-সিরাজগঞ্জ সড়ক, কালিপুর হায়দরপুর সাতগাঁও সড়ক, মঈনপুর-সিরাজগঞ্জ, জালালপুর-দোলারবাজার ভায়া রসুলগঞ্জ সড়ক, জাউয়া লক্ষমসোম-জিয়াপুর-ভাতগাঁও ভমভমী বাজার সড়ক, ধারণ-আমেরতল বাজার সড়ক, নোয়ারাই ইউনিয়নের মৌলা-চৌমহনী বাজার সড়ক, ছাতক-আন্ধারীগাঁও ভায়া জাউয়াবাজার সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নের তাজপুর-জামুড়াইল ভায়া নুরুল্লাপুর সড়ক, কালারুকা-রামপুর সড়ক, ফকিরটিলা-হাদা, নোয়ারাই-নরসিংপুরবাজার সড়ক, জোড়াপানি-চৌমোহনী বাজার সড়ক, গোবিন্দগঞ্জ-লাকেশ্বর, বড়কাপন- শ্রীপুরবাজার সড়কসহ উপজেলার আরও কয়েকটি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

নোয়ারাই ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দেওয়ান পীর আব্দুল খালিক রাজা, উত্তর খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল আহমদ, দক্ষিণ খুরমা ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক, সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ শাহেল, জাউয়া বাজার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হক, কালারুকা ইউপি চেয়ারম্যান অদুদ আলম, ছৈলা-আফজলাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ ও ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সুফি আলম সোহেল জানিয়েছেন, বন্যায় তাদের ইউনিয়নের রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, সবজি বাগান, চাষকৃত ঘাসের চারা, গো-খাদ্যসহ কৃষি, মৎস্য গবাদিপশুর খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে এম মাহবুব রহমান বলেন, উপজেলার মধ্যে অনেক গ্রামীণ কাঁচা সড়ক বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে। এতে অনুমানিক প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সব ইউপি চেয়ারম্যানকে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে অবহিত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ছাতক উপজেলা প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ বলেন, বন্যায় বিভিন্ন এলাকার পাকা সড়ক ভেঙে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম কিরণ বলেন, চলতি বন্যায় এখানের রাস্তাঘাট ও কাঁচা ঘর-বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ইতোমধ্যে সরকার বন্যার্ত এলাকার লোকজনের জন্য পর্যাপ্ত চাল বরাদ্দ দিয়েছে। বন্যায় এখানের রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


সিদ্ধিরগঞ্জে তিন চাকার নিষিদ্ধ যানের দখলে মহাসড়ক

মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি
আপডেটেড ১ জুলাই, ২০২৪ ১১:১৮
মো. লতিফ আহম্মেদ আকাশ, সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

তিন চাকার সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক, নসিমন-করিমন, চার্জচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের অবৈধ যানবাহন দেদার চলছে সিদ্ধিরগঞ্জ, সিমরাইল ও আশপাশের মহাসড়কে। আইনের তোয়াক্কা না করে এবং হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চালানো হচ্ছে এসব অবৈধ যানবাহন।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর মধ্যে একটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এসব নিষিদ্ধ যানবাহনের ছড়াছড়ি।

জানা যায়, সিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের টিআই প্রশাসন শরফুদ্দিনের ছত্রছায়ায় স্থানীয় দালাল চক্র ইসমাইল, হারুন, জসিমের মাধ্যমে চলছে এসব নিষিদ্ধ যান। ১ থেকে দেড় হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২ থেকে ৩ হাজার অটোরিকশা চলছে মাসহারার বিনিময়ে। প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই হিসাবে প্রায় কোটি টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রতি মাসে। এই চক্র হাইকোর্টের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে এসব যানবাহন সচল রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অটোরিকশার চালকরা বলেন, ‘পেটের দায়ে আমরা এসব গাড়ি চালাই। প্রতিটি সিএনজি-অটোরিকশা থেকে মাসে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ইজিবাইক থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং চার্জচালিত রিকশা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা নেয় এই চক্র। গাড়ি চালাই তাই চাঁদা দিতে হয়, না দিলে পুলিশ এসে গাড়ি ধরে, তখন র‌্যাকার বিল ১ হাজার ৭০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। তা না হলে গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দেয়, সে জন্য বাধ্য হয়ে মাসিক ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে শান্তিমতো গাড়ি চালাই।’

নসিমনসহ তিন চাকার নিষিদ্ধ যানবাহনের দুর্ঘটনায় অনেকের প্রাণহানি ঘটছে। আরও অনেকে গুরুতর আহত হচ্ছে। উল্টো পথে সিএনজি-অটোরিকশার চলাচলের কারণে কয়েক দিন পরপর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত উল্টো পথে অটোরিকশা চলাচল, চিটাগাং রোড থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত যানবাহন চলাচল করছে উল্টো পথে। মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি না করতে সরকার সচেষ্ট থাকলেও এমন কর্মকাণ্ডের কারণে মহাসড়ক যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিমরাইল হাইওয়ে পুলিশের (টিআই) প্রশাসন এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, ‘আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে পুলিশ-সংকটের কারণে সব জায়গায় অভিযান চালাতে পারি না। আর চাঁদাবাজির বিষয়ে আমার জানা নেই।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর জোনের নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহিদুর রহমান চৌধুরীর সরকারি ফোনে একাধিকবার ফোন দেওয়া হয়। তবে ফোন না ধরায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।


শিবগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দু’জন নিহত

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুসহ দু’জন নিহত হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরের দিকে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় অটোরিকসার ধাক্কায় বর্ষা খাতুন নামে এক শিশু গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেল চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ মহাসড়কের ধোপপুকুর এলাকার আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থলবন্দর থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকের চাকায় পিষ্ঠ হয়ে এক অজ্ঞাত পরিচয়ের একজন মানসিক ভারসাম্যহীন লোকের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন সড়ক দুর্ঘটনা দুটিতে দু’জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত একজনের পরিচয় হলো, তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের বাখের আলী বিশ্বনাথপুর গ্রামের আব্দুল রশিদের মেয়ে বর্ষা খাতুন।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বাখের আলী বিশ্বনাথপুর এলাকায় আজ রোববার দুপুরে রাস্তা পারাপারের সময় অটোরিকসার ধাক্কায় বর্ষা খাতুন নামে এক শিশু গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


সিলেট বোর্ডের স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো আগামী ১১ আগস্টের পর থেকে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।

আজ রোবাবার গণমাধ্যমকে তপন কুমার সরকার বলেন, ‘বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ আগস্টের পর থেকে শুরু হবে।’ এর আগে বন্যার কারণে সিলেট বিভাগের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হয়।

তখন বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিলেট অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সিলেট বিভাগের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট; বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন আগামী ৩০ জুন থেকে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।

প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী ৯ জুলাই থেকে সিলেট বিভাগে যে পরীক্ষাগুলো হওয়ার কথা ছিল সেগুলো যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি।


সাতক্ষীরায় গ্রাহকের শত কোটি টাকা লোপাট

পালিয়েও রক্ষা হলো না প্রাণনাথের
আপডেটেড ৩০ জুন, ২০২৪ ১০:৩৬
আবু সাঈদ, সাতক্ষীরা

গ্রাহকদের শতকোটি টাকা প্রতারণা করে সপরিবারে পালিয়ে যাওয়া সাতক্ষীরার প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক প্রাণনাথ দাসকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভোরে সাতক্ষীরা সদরের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।

প্রাণনাথ দাস (৪৬) সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার টিকেট গ্রামের মৃত জুড়ন দাসের ছেলে ও বর্তমানে পুরাতন সাতক্ষীরার বাসিন্দা।

এর আগে গ্রাহকের শত কোটি টাকা লোপাট করে পালানোর সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশের (এসডিএফ) হাতে আটক হন প্রাণনাথ দাস।

ভারতে দীর্ঘ তিন মাস জেল খাটার পর গত কয়েক দিন আগে দেশে ফেরেন তিনি। প্রাণনাথ দাসকে আটকের খবর পেয়ে শত শত গ্রাহক থানা চত্বরে ভিড় করে।

জানা যায়, প্রাণনাথ দাস ২০০২ সালে রুপালী লাইফ ইনসিওরেন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জেলা ও জেলার বাইরে বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে বহু টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১২ সালে ১২১ নং সমবায় রেজিস্ট্রেশন মূলে প্রগতি সঞ্চয় ও ঋণদান কো-অপারেটিভ সোসাইটি খোলেন প্রাণনাথ দাশ। সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের স্ত্রী ইতি রানী বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বড় ভাই বিশ্বনাথ দাশকে নিযুক্ত করে গত ১০ বছরে ডিপিএস ও ফিক্সড ডিপোজিটের মাধ্যমে শত শত গ্রাহকের কাছ থেকে শত কোটি টাকা প্রতারণা করেন।

প্রতারণার টাকা দিয়ে তিনি পুরাতন সাতক্ষীরায় বাড়িসহ গাভায় চার বিঘা জমি, সদুরডাঙিতে দুটি বাড়ি, বুধহাটায় দুটি অফিস, মুন্সিপাড়ায় চার শতক জমি ও পুরাতন সাতক্ষীরায় দুটি শোরুম খোলেন। জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে প্রাণনাথ সাতক্ষীরা মন্দির সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক, বাস মলিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন সংগঠনের ভালো ভালো পদ অলংকৃত করেন। কুলিয়া ইউপি নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. মুহিদুল ইসলাম আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘গ্রাহকের শত কোটি টাকা নিয়ে পলাতক প্রাণনাথকে আটক করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


রাজস্বের ফয়সালের শ্বশুর-শাশুড়ির নামে ১৮ ব্যাংক হিসাব

১৯ কোটি টাকার লেনদেন
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
খুলনা ব্যুরো

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের শ্বশুর ও শাশুড়ির নামে পাওয়া গেছে ১৮টি ব্যাংক হিসাব। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, এসব ব্যাংক হিসাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা জমা হওয়া এবং পরে তার বড় অংশ উত্তোলনের তথ্য রয়েছে। আদালতে জমা দেওয়া দুদকের নথি থেকে জানা গেছে, এনবিআর কর্মকর্তা ফয়সালের শ্বশুর আহম্মেদ আলী একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। তার শাশুড়ি মমতাজ বেগম পেশায় গৃহিণী। দুদকের দাবি, ফয়সাল তার অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ শুধু নিজের ও স্ত্রীর নামেই রাখেননি, পাশাপাশি স্বজনদের নামেও রেখেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের দাবি, শ্বশুর ও শাশুড়ির নামের ব্যাংক হিসাবে যে অর্থ লেনদেন হয়েছে, তা ফয়সালেরই অপরাধলব্ধ আয়।

দুদকের নথি অনুযায়ী, ফয়সাল ও তার ১১ স্বজনের নামে ১৯টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮৭টি হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে তার শ্বশুর-শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে। দুদক আদালতে জানিয়েছে, ফয়সাল তার অপরাধলব্ধ আয় লুকানোর জন্য স্বজনদের নামে ৭০০টির মতো ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। এর মধ্যে দুদক ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে।

এদিকে খুলনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের পরিবারের দুটি বাড়ি ও প্লটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাড়ির গ্যারেজে একটি টয়েটো ‘হ্যারিয়ার’ গাড়ি দেখা গেছে। তার স্ত্রী একটি হ্যারিয়ার গাড়িতে করে প্রায় খুলনায় ঘোরাফেরা করতেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বাড়ি খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নী এলাকায়। তার বাবার নাম কাজী আবদুল হান্নান। তবে স্থানীয়রা তাকে ফিরু কাজী হিসেবে চেনে।

খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নী আবাসিক এলাকায় প্রায় দুই বিঘার জমির একটি প্লট রয়েছে। মুজগুন্নী এলাকায় গিয়ে প্লটে ফিরু গাজীর নাম সাইনবোর্ডে ঝুলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া যশোর রোডের নেছারিয়া মাদ্রাসার পাশে প্রায় দুই বিঘার জমির উপর আলিশান তিনতলা বাড়ি রয়েছে। গ্যারেজে একটি হ্যারিয়ার গাড়ি দেখা গেছে। ওই বাড়িতে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বাবা-মা বসবাস করতেন। ওই বাড়িতে গেলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কেউ কথা বলতে চাননি। খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী মাহফুজুর রহমান লিটন জানান, তাদের সম্পদশালী হিসেবেই এলাকার মানুষ জানে। কাজী ফয়সাল এলাকায় কম আসতেন। তবে তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন কয়েক দফা তার কাছে সনদ দিতে এসেছেন। এ ছাড়া প্রায় তিনি টয়েটা ‘হ্যারিয়ার’ গাড়িতে ঘোরাফেরা করতেন।

গত বৃহস্পতিবার কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন। জব্দের আদেশ হওয়া সম্পদের মধ্যে আছে- কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের ঢাকার একটি ফ্ল্যাট ও ১০ কাঠার দুটি প্লট। এ ছাড়া তার ও তার স্ত্রীসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মূল্যের সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধ করেছেন আদালত।

দুদকের সরকারি কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে।

প্রাথমিকভাবে দুদকের অনুসন্ধান দল ঢাকায় তার ফ্ল্যাট, দুটি প্লট, সঞ্চয়পত্রসহ ১৬ কোটি টাকা মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পেয়েছে। এসব সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার জন্য আজ দুদকের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করেছেন। দুদক লিখিতভাবে আদালতকে জানিয়েছে, আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন করেছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের জন্য নিজের নামসহ তার আত্মীয়স্বজনের নামে ৭০০টির বেশি হিসাব খোলেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন করা। দুদকের পক্ষ থেকে আবু মাহমুদ ফয়সালের সম্পদের বিস্তারিত বিবরণ আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। এর আগে এনবিআর কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৬৫ বিঘা (২ হাজার ১৪৫ শতাংশ) জমি, ৮টি ফ্ল্যাট, ২টি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং ২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি তার প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের নামে। তার নামে প্রায় ২৮ বিঘা জমি ও ৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে; এর মধ্যে ঢাকার মিরপুরে একটি ভবনেই রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। সাবেক কলেজশিক্ষক লায়লা কানিজ বর্তমানে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।


ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশাহারা এলাকাবাসি

রৌমারীতে হুমকির মুখে রয়েছে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি হাইস্কুল, ৩টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, ৯টি মসজিদ ও ৫টি হাটবাজার
ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদের ভাঙ্গন। গেন্দার আলগা থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা  
আপডেটেড ২৯ জুন, ২০২৪ ১১:৫৫
মাসুদ রানা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী ও সুখেরবাতি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। এখন পর্যন্ত ভাঙন-কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা জনপ্রতিনিধি। ভাঙন-কবলিত মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদের পাশে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা যায়, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর ও চরগেন্দার আলগা গ্রামে নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১ মাসে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে একশটি বাড়ি ও কয়েকশ একর ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি হাইস্কুল, ৩টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, ৯টি মসজিদ ও ৫টি হাটবাজার। এই ভাঙনের কবলে পড়ে দিশাহারা সেনাপুর ও চরগেন্দার আলগার মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ- ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার প্রকল্প থাকলেও কাজ করছে না কেউ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

চরগেন্দার আলগা গ্রামের মো. মজিদ রানা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে মাটি নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষজন রাতে অনেক আতঙ্কে থাকে কখন কার বাড়ি নদীতে চলে যায়। এতে করে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি তিনি যেন কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেন।

সোনাপুর গ্রামের আমিনা বেগম বুকভরা বেদনা নিয়ে বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা নদীশাসন চাই। কত এমপি-মন্ত্রী এল ভাঙন দেইখা আশা দিয়া গেল, যে নদী আর ভাঙবো না। কিন্তু তারা যাওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই নদীতে সর্বনাশা ভাঙন দেখা দেয়। আমাগরে দুঃখ-কষ্ট কেউ বুঝলো না। আমরাও একসময় ধনী ছিলাম, নদীতে ভেঙে আমরা এহন পথের ফকির হয়ে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাগরে এলাকায় কত এমপি-মন্ত্রী ছিল, কেউ আমাগরে দেখতে আসে নাই। এবার নির্বাচনে পলাশ এমপি হওয়ায় আমাগরে কপাল খুলেছে। সে কিছু দিক না দিক, কয় দিন পরপর আমাগরে দেখতে আসেন। আগের কোনো এমপি আসত না।’

সোনাপুর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সংশের আলী মাদার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সোনাপুর ও চরগেন্দার আলগা গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১ মাসে ১০০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। যেভাবে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, নদের ভাঙন দেখে এলাকার মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

বীব মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন হিরো বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে জায়গা-জমি হারিয়ে অনেক পরিবার পথে দাঁড়াবে। পাশাপাশি নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে রৌমারীর মানচিত্র থেকে চরশৌলমারী ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। তিনি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানান।

চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান কে এইচ এম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, ‘আমি বিপ্লব হাসান পলাশ এমপি মোহদয়ের নির্দেশনায় ভাঙন-কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছি। আপাদত তাদের জিআর-এর চাউল বিতরণ করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বিলীন হওয়া পরিবারের তালিকা করছি।’

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. বিপ্লব হাসান পলাশ বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদ আমাদের এই অঞ্চলের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর নদের ভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপিকে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। আশা করি, দ্রুত স্থায়ী সমাধান আসবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ১০০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। পরিবারগুলোকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জিআর চাউল বিতরণ অব্যাহত আছে এবং আরও বরাদ্দর জন্য কথা বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পাব।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙন-কবলিত এলাকাগুলোতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।


২০০৮ সালে নির্মিত লোহার সেতুগুলো ভেঙেই ঘটছে দুর্ঘটনা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় জরাজীর্ণ একটি লোহার সেতু। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই লোহার সেতুটিসহ উপজেলায় নির্মিত মোট ২০টির সবই একই দশা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৯ জুন, ২০২৪ ১০:৩০
বরগুনা প্রতিনিধি

সম্প্রতি বৌভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বরগুনার হলদিয়া হাট লোহার সেতু ভেঙে ১০ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী, বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। তাদের খোঁজখবরে বেরিয়ে আসে এই জেলায় যত লোহার সেতু নির্মিত হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই অবস্থা বেশ খারাপ। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই এলাকায় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যতগুলো লোহার সেতু নির্মিত হয়েছে সেগুলোই ভেঙে পড়ছে এবং ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনায় লোহার সেতু ভেঙে ৯ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার আগে এ সেতুগুলো মেরামত তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবরই নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয়রা একাধিক উদাহরণ দেখিয়ে বলছেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যে ২০টি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সেই সেতুগুলোই ভেঙে পড়ছে। কেন ওই অর্থবছরে নির্মিত লোহার সেতুগুলোই শুধু ভেঙে পড়ছে সে তথ্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। তাদের ধারণা, সে বছর যারা এসব সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেই ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির কারণেই সেতুগুলোর স্থায়িত্ব কম, অথচ লোহার পাত দিয়ে নির্মাণ করা একেকটা সেতু টেকার কথা ৬০-৭০ থেকে ১০০ বছর। তাই, বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার ৬০টি লোহার সেতু রয়েছে। ওই সেতুগুলোর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ২০টি লোহার সেতু নির্মাণ করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই সেতুগুলো নির্মাণে অনিয়ম ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সেতুগুলোতে রেলপাতের রিম বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদাররা সাধারণ ভিম বসিয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করেছেন। ওই সেতুগুলোর ঠিকাদার ছিলেন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধাসহ বেশ কয়েকজন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় তারা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা সেতু নির্মাণ করে টাকা তুলে নেয়। ফলে মাত্র ১৬ বছরের ব্যবধানে এসব সেতুর লোহার বিম অকেজো হয়ে সেতুগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বরগুনার আমতলী উপজেলায় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন আতিয়ার রহমান নামের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একজন সাবেক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সে সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামল চলছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে আতিয়ার রহমানের মতো উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীরা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে সে সময় নির্মাণ করা হয় ২০টি লোহার সেতু। এসব দেখেও না দেখার ভান করেন তিনি। আর সরকারি তহবিল থেকে সেতু নির্মাণের পুরো টাকা উঠিয়ে নিজের বখরা নিয়ে ঠিকাদারদের বিল পুরো পরিশোধ করেন প্রকৌশলী আতিয়ার। এই অনিয়মের কারণেই সেতুগুলো অল্প দিনেই অকেজো হয়ে যায়। এর মধ্যে হলদিয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নেরই সেতু ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া খালে নির্মিত তক্তাবুনিয়া সেতু, মল্লিকবাড়ি সেতু, কাঁঠালিয়া সেতু, উত্তর টেপুড়া সেতু, হলদিয়া হাট সেতু, বড় মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন সেতু, রাঢ়ীবাড়ি সেতু, সোনাগজা বাঁশবাড়িয়া সেতু এবং আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর সেতু, উত্তর সোনাখালী সেতু, মুসুল্লিবাড়ি সেতু ও চাউলা সেতু ভেঙে গেছে। অটোরিকশা উঠলেই সেতু দোলে। গত ১৬ বছরে এ সেতুগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এদিকে একেকটি সেতুর একেক রকম সমস্যা রয়েছে বলে দেখা গেছে। সোনাখালী খালে নির্মিত উত্তর সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন সেতু, গাজীপুর খালে মুসুল্লিবাড়ি সেতু গত পাঁচ বছর আগে ভেঙে গেছে। উত্তর সোনাখালী সেতুতে মানুষ কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছে। মুসুল্লিবাড়ির সেতু মাঝখানে ভেঙে যাওয়ায় চলাচল একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নে কাঁঠালিয়া সেতুটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সেতুর একাংশ দেবে গেছে। মল্লিকবাড়ির সেতুর লোহার বিম ভেঙে গেছে। উত্তর টেপুরা সেতুর লোহার ভিম একেবারে ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা সেতুর পাশে কাঠের সেতু নির্মাণ করে চলাফেরা করছে। একই ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া খালে তক্তাবুনিয়া সেতু গত তিন বছর আগে মাঝখান দিয়ে ভেঙে গেছে। ওই সেতু দিয়ে চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের খরচায় পাশেই বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো বানিয়ে তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া ওই অর্থবছরে নির্মিত বাকি সেতুগুলোর বেশির ভাগই এখন চলাচলের অনুপযোগী। যে কয়টি সচল আছে সেগুলোতে মানুষ উঠছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী যতগুলো লোহার সেতু নির্মাণ করেছেন, তার অধিকাংশই ভেঙে গেছে। ওই সেতুগুলোতে রেলপাটির ভিম দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা দেয়নি। তারা উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশে দায়সারাভাবে সেতু নির্মাণ করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙে গেছে। অনুসন্ধান করে এ সেতুগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণ চিহ্নিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মাছুয়াখালী এলাকার রুবেল গাজী বলেন, তাদের এলাকায় সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর ভিম ভেঙে গেছে। পাটাতন উঠে গেছে। সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে পারে না। আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছি। তদন্ত করে সেতু নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নলুয়াবাগী গ্রামের খলিলুর রহমান বেপারী বলেন, ‘মোগো দুঃখ কেউ দ্যাখবে না। গত পাঁচ বচ্ছর ধইর‌্যা মোরা কষ্ট হরি, কেউ মোগো দিকে চায় না। মোরা একটা গার্ডার সেতু চাই।’

তবে নির্দিষ্ট একটা বছরে নির্মিত হওয়া সেতুগুলোই ভেঙে যাচ্ছে- এ দাবি মানতে নারাজ আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, মরিচা ধরে লোহার নাট বল্টু খুলে গেছে বিধায় সেতু ধসে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপিয়ে দিলে আমি কি তা বহন করতে পারব? তেমনি সেতুর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে স্ট্রাকচার বেশি হওয়ায় তা ভেঙে পড়েছে।

দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা হয় তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিডিউল অনুসারে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু লবণাক্ততার কারণে সেতুর ভিম নষ্ট হয়ে সেতু ধসে পড়ছে। সেতু রেলপাতের ভিম দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিকমতোই কাজ হয়েছে।

বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, সাঁকোর বিকল্প হিসেবে এই লোহার সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সেতুগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু সেতুগুলো কেন ভেঙে যাচ্ছে তার রহস্য অনুসন্ধান করিনি। তবে লোহার সেতুগুলো তুলে সম্ভাব্যতা যাচাই করে গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তেলবাহী ট্রলারে আগুন: নিখোঁজ ফখরুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফখরুদ্দিন নামে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পাগলা নৌ থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হলো দুইজন। তবে এ ঘটনায় এখন আর কেউ নিখোঁজ রইলো না।

পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইয়ার আলী আজ শুক্রবার দুপুরে মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার নিখোঁজ একজন ব্যক্তির সন্ধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে তল্লাশি চলাকালে রাত ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন ফতুল্লা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করি। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে ফখরুদ্দিনের মরদেহ বলে শনাক্ত করেন। তবে স্বজনরা বিনাময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের আবেদন জানালে সবার সম্মতিক্রমে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে পাগলা নৌ থানার ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) কামাল হোসেন বলেন, ফখরুদ্দিন নামে উদ্ধারকৃত মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোঁড়া চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পেট থেকে নাড়িভূঁড়িও বের হয়ে ছিল। তবে মুখমণ্ডল ছিল অক্ষত অবস্থায়।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে আগুনের ঘটনায় এমভি মনপুরা নামে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারটিতে থাকা পাঁচজনের মধ্যে দগ্ধ হয়ে খোকন নামে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। কামাল নামে আরও একজন দগ্ধ অবস্থায় এবং বাকের মাঝি নামে ট্রলারের চালক সুস্থ উদ্ধার হন। পরে দগ্ধ কামালকে তাৎক্ষণিক রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনায় বাবুল মোল্লা ও ফখরুদ্দিন নামে দুইজন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিখোঁজ বাবুল মোল্লাকে পাওয়া গেলে তাকে জেলা সদরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। ওই রাতেই স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপরও ফখরুদ্দিন নামে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন।


দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রোহিঙ্গা যুবক নিহত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৮-নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মো. সালেক (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭৬ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সালেক উখিয়ার বালুখালী ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭৬ ব্লকের মো. নুর আলমের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সালেক নিজ ঘরে ফিরছিলেন। এক পর্যায়ে পথিমধ্যে বোরকা পরিহিত ৩/৪ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত তাকে আটকিয়ে গতিরোধ করে। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা তার চিৎকার শুনে এগিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার তাকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘কারা বা কী কারণের এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’

বিষয়:

চট্টগ্রামে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন, নিহত ৩

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার শামসুল আলমের ছেলে মো. রিদুয়ান (৪৫) ও একই উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখিল বাংলাবাজার এলাকার মো. শাহেদ (১৮)।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রিয়াজউদ্দিন মোহাম্মদীয়া প্লাজা নামে একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন পার্শ্ববর্তী রেজোয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন, চন্দনপুরা, আগ্রাবাদ ও লামার বাজারসহ মোট ৪টি স্টেশনের ৮টি ইউনিট কাজ করে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩ জনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। বাকি দুজনকে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হতাহতরা যে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ঘটেছে সেটির ওপরে ৫ তলায় থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। এতে তারা যথাযথভাবে নিশ্বাস নিতে পারেননি।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আব্দুল মালেক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।


আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০২
টেকনাফে (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হওয়া গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আবারও কেঁপেছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকা। গত মঙ্গলবার (২৬ জুন) রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এ সময় পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভাসহ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের হারি পাড়ার রশিদ উল্লাহর বাড়িতে জান্তা সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় প্রায় ১০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমার মুন্ডি পাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু বলে জানিয়েছেন ফয়সাল। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এ বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।

মিয়ানমার মংডু মুন্ডি পাড়ার রোহিঙ্গা চুরি করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ইকরাম বলেন, ‘মিয়ানমার মংডু শহরের জান্তা বাহিনীর চৌকির দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে বৃহস্পতিবার ৩টার দিকে মংডু শহরের আশিক্ষা পাড়া, গইন্যা পাড়া ও গর্জনিয়া পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এতে অনেক রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ১৫ জন রোহিঙ্গা ছোট নৌকা নিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদী দিয়ে এখানে আসি। আমাদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আসার জন্য খবর নিচ্ছি।

মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়ে কেঁপে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার (মংডুতে) রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আবার অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের কয়েকটি এলাকার আশপাশে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্তের লোকজন।

বিস্ফোরণের শব্দে আবারও কাঁপছে সীমান্ত

জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হ্নীলার চৌধুরীপাড়া ও সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি অন্তত ১০০ থেকে ২০০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও শুনেছি উল্লেখ করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে গোলা চলছে ওপারে। ফলে বিজিবি ও কোস্টগার্ড রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা পুশব্যাক করলেও কিছু রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মো. ইউনুছ জানান, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো পথ নেই। তাই যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।

বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৩ হাজার ৩৫৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে (স্বদেশে) ফেরত পাঠায় বিজিবি। তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯ শিশু ও ১৭৫৭ জন পুরুষ। আর তিন রোহিঙ্গাকে থানায় দেওয়া হয়।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ওপারে সংঘাতের কারণে মাঝে মাঝে এপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিজিবি। বিশেষ করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।


নিজের অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখে খাল খনন ঠিকাদারের

আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ১২:০১
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নিজের গড়ে তোলা একাধিক অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখেই কনকসার-নাগেরহাট খাল খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে সাব-ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের নাগেরহাট খালের পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে খাল খননকাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পূর্ব পাশে খালের জমিতে একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হয়নি।

স্থানীয়রা বলছেন, পূর্ব পাশের খাল খননকাজের সাব-ঠিকাদার শামীম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকায় তিনি ইচ্ছে করেই সেগুলো উচ্ছেদ করেননি। এর পরিবর্তে পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে বেকায়দায় ফেলেছেন চলাচলকারীদের।

স্থানীয় আব্দুস সালাম মৃধা (৫৫) বলেন, ‘পূর্ব পাশে শামীম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনার মধ্যে একটি প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের দোকানঘর রয়েছে। সেটি রক্ষা করতে তিনি পশ্চিম পাশে আমার রেকর্ডীয় জমি কেটে ফেলেছেন। আমি এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও তারা ভ্রুক্ষেপ করেনি।’

স্থানীয় আতাউর রহমান (৬৩) বলেন, ‘১৯৭০-৭২ সালে এই খালে ভরা পানি ছিল। কনকসার ব্রিজের মুখ থেকে ঢাকার সদরঘাট অভিমুখে প্রতিদিন লঞ্চ চলাচল করত। ধীরে ধীরে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। অনেকে এখনো খালের জমি দখলে নিতে মরিয়া। এদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের উচিত অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদ করে খালের জমি পুনরুদ্ধার করা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কনকসার-নাগেরহাট খালের সাড়ে ৩ কিলোমিটার অংশের খনন ও সংস্কারকাজ পান লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মোল্লা। বর্তমানে প্রকল্পটি শেষের পথে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘খালের দুই পাড়েই সরকারি জমি রয়েছে। পশ্চিমপাড়ে যে সরকারি রাস্তার কথা বলা হচ্ছে সেখানেও খালের জমি রয়েছে। আর পূর্ব পাশে যে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রশাসনের কাজ। যার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই শামীম মোড়ল আমার কাজের অংশীদার। তার অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে আমিও বলেছি। অবশ্যই সেগুলো সরাতে হবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান মিঠু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের টাকায় সিংহেরহাটি মাঠ থেকে কনকসার বাজার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিছুদিন আগে সড়কটি সংস্কারে জেলা পরিষদ থেকে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দও আসে। কিন্তু এর মধ্যেই খাল খননের কাজে ব্যবহৃত ভেকু চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ পূর্ব পাশে খালের জায়গায় একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা বুধবার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে পূর্ব পাশের খালের জমিতে লাল নিশানা টানিয়েছে।’

এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাব-ঠিকাদার শামীম মোড়লের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, পূর্ব পাশে যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, সেগুলোকে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।


banner close