শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

সিলেটে বন্যায় কেবল সড়কেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড
২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট
প্রকাশিত
দেবাশীষ দেবু, সিলেট
প্রকাশিত : ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০১

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। জেলার বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। নদীর পানিও কমছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। ঢল ও পানিতে ভেঙে গেছে সড়ক। অনেক স্থানে সেতুও ভেঙে গেছে ঢলের তোড়ে। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট নগর, এলজিইডি এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের আওতাধীন সড়কগুলোতে পানি উঠে প্রায় ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতি তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে পানি এখনো পুরোপুরি না নামায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১২ হাজার ৪২৩ জন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় নগরের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, এখনো কিছু সড়কে পানি রয়ে গেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলেই জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।

আর সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কে পানি উঠে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি।

সড়ক ও সেতু বিভাগের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার সড়কের। এ উপজেলার দুটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হলে দ্রুত সংস্কার কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন বলেন, বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সংস্কারের জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে।

এদিকে, চলতি বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। জেলায় এবার আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিল।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যায় মোট ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আমন ধান চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘি-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। এ উপজেলার ছয় হাজার ৭৫৫টি পুকুর-দীঘি-খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, গতকাল বুধবার সিলেটে নদ-নদীর পানি সমতল আরও কমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে পানি ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কমেছে। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এসব নদীর পানি সমতল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর দিনভর আর বৃষ্টি হয়নি।

বিষয়:

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে দিশাহারা এলাকাবাসি

রৌমারীতে হুমকির মুখে রয়েছে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি হাইস্কুল, ৩টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, ৯টি মসজিদ ও ৫টি হাটবাজার
ব্রহ্মপুত্র নদে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদের ভাঙ্গন। গেন্দার আলগা থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা  
আপডেটেড ২৯ জুন, ২০২৪ ১১:৫৫
মাসুদ রানা, রৌমারী (কুড়িগ্রাম)

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র আকার ধারণ করেছে নদীভাঙন। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগেন্দার আলগা, ঘুঘুমারী ও সুখেরবাতি এলাকা ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। এখন পর্যন্ত ভাঙন-কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বা জনপ্রতিনিধি। ভাঙন-কবলিত মানুষজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদের পাশে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জানা যায়, উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের সোনাপুর ও চরগেন্দার আলগা গ্রামে নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১ মাসে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে বিলীন হয়েছে একশটি বাড়ি ও কয়েকশ একর ফসলি জমি। হুমকির মুখে রয়েছে ৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি হাইস্কুল, ৩টি মাদ্রাসা, ২টি কলেজ, ৯টি মসজিদ ও ৫টি হাটবাজার। এই ভাঙনের কবলে পড়ে দিশাহারা সেনাপুর ও চরগেন্দার আলগার মানুষ। এলাকাবাসীর অভিযোগ- ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার প্রকল্প থাকলেও কাজ করছে না কেউ। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙনরোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

চরগেন্দার আলগা গ্রামের মো. মজিদ রানা বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমতে থাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করে মাটি নিচের দিকে দেবে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষজন রাতে অনেক আতঙ্কে থাকে কখন কার বাড়ি নদীতে চলে যায়। এতে করে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি তিনি যেন কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের বাম তীরে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেন।

সোনাপুর গ্রামের আমিনা বেগম বুকভরা বেদনা নিয়ে বলেন, ‘আমরা ত্রাণ চাই না, আমরা নদীশাসন চাই। কত এমপি-মন্ত্রী এল ভাঙন দেইখা আশা দিয়া গেল, যে নদী আর ভাঙবো না। কিন্তু তারা যাওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই নদীতে সর্বনাশা ভাঙন দেখা দেয়। আমাগরে দুঃখ-কষ্ট কেউ বুঝলো না। আমরাও একসময় ধনী ছিলাম, নদীতে ভেঙে আমরা এহন পথের ফকির হয়ে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাগরে এলাকায় কত এমপি-মন্ত্রী ছিল, কেউ আমাগরে দেখতে আসে নাই। এবার নির্বাচনে পলাশ এমপি হওয়ায় আমাগরে কপাল খুলেছে। সে কিছু দিক না দিক, কয় দিন পরপর আমাগরে দেখতে আসেন। আগের কোনো এমপি আসত না।’

সোনাপুর গ্রামের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সংশের আলী মাদার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সোনাপুর ও চরগেন্দার আলগা গ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ১ মাসে ১০০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। যেভাবে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে, নদের ভাঙন দেখে এলাকার মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

বীব মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন হিরো বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে জায়গা-জমি হারিয়ে অনেক পরিবার পথে দাঁড়াবে। পাশাপাশি নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে রৌমারীর মানচিত্র থেকে চরশৌলমারী ইউনিয়ন হারিয়ে যাবে। তিনি স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে নদীভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানান।

চরশৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান কে এইচ এম সাইদুর রহমান দুলাল বলেন, ‘আমি বিপ্লব হাসান পলাশ এমপি মোহদয়ের নির্দেশনায় ভাঙন-কবলিত এলাকা ঘুরে দেখেছি। আপাদত তাদের জিআর-এর চাউল বিতরণ করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বিলীন হওয়া পরিবারের তালিকা করছি।’

কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. বিপ্লব হাসান পলাশ বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদ আমাদের এই অঞ্চলের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছর নদের ভাঙনে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিছুদিন আগে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক এমপিকে নিয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। আশা করি, দ্রুত স্থায়ী সমাধান আসবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘কয়েক দিন থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে ইতোমধ্যে উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ১০০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। পরিবারগুলোকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে জিআর চাউল বিতরণ অব্যাহত আছে এবং আরও বরাদ্দর জন্য কথা বলা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই পাব।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙন-কবলিত এলাকাগুলোতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।


২০০৮ সালে নির্মিত লোহার সেতুগুলো ভেঙেই ঘটছে দুর্ঘটনা

বরগুনার আমতলী উপজেলায় জরাজীর্ণ একটি লোহার সেতু। অভিযোগ রয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এই লোহার সেতুটিসহ উপজেলায় নির্মিত মোট ২০টির সবই একই দশা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৯ জুন, ২০২৪ ১০:৩০
বরগুনা প্রতিনিধি

সম্প্রতি বৌভাত অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে বরগুনার হলদিয়া হাট লোহার সেতু ভেঙে ১০ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী, বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। তাদের খোঁজখবরে বেরিয়ে আসে এই জেলায় যত লোহার সেতু নির্মিত হয়েছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই অবস্থা বেশ খারাপ। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই এলাকায় ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যতগুলো লোহার সেতু নির্মিত হয়েছে সেগুলোই ভেঙে পড়ছে এবং ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরগুনায় লোহার সেতু ভেঙে ৯ জন নিহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার আগে এ সেতুগুলো মেরামত তো দূরের কথা, এ বিষয়ে কোনো খোঁজখবরই নেয়নি সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

স্থানীয়রা একাধিক উদাহরণ দেখিয়ে বলছেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যে ২০টি লোহার সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, সেই সেতুগুলোই ভেঙে পড়ছে। কেন ওই অর্থবছরে নির্মিত লোহার সেতুগুলোই শুধু ভেঙে পড়ছে সে তথ্য উদঘাটনের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। তাদের ধারণা, সে বছর যারা এসব সেতু নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেই ঠিকাদার, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির কারণেই সেতুগুলোর স্থায়িত্ব কম, অথচ লোহার পাত দিয়ে নির্মাণ করা একেকটা সেতু টেকার কথা ৬০-৭০ থেকে ১০০ বছর। তাই, বিষয়টিকে আমলে নিয়ে এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করে দোষীদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, বরগুনার আমতলী উপজেলার ৬০টি লোহার সেতু রয়েছে। ওই সেতুগুলোর মধ্যে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে ২০টি লোহার সেতু নির্মাণ করে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ওই সেতুগুলো নির্মাণে অনিয়ম ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সেতুগুলোতে রেলপাতের রিম বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদাররা সাধারণ ভিম বসিয়ে সেতুগুলো নির্মাণ করেছেন। ওই সেতুগুলোর ঠিকাদার ছিলেন হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম মৃধাসহ বেশ কয়েকজন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় তারা প্রভাব খাটিয়ে দায়সারা সেতু নির্মাণ করে টাকা তুলে নেয়। ফলে মাত্র ১৬ বছরের ব্যবধানে এসব সেতুর লোহার বিম অকেজো হয়ে সেতুগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বরগুনার আমতলী উপজেলায় প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন আতিয়ার রহমান নামের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, একজন সাবেক ঠিকাদার অভিযোগ করেন, সে সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামল চলছিল। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনেক কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করলেও সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে আতিয়ার রহমানের মতো উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলীরা ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ নেন। ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিম্নমানের দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে সে সময় নির্মাণ করা হয় ২০টি লোহার সেতু। এসব দেখেও না দেখার ভান করেন তিনি। আর সরকারি তহবিল থেকে সেতু নির্মাণের পুরো টাকা উঠিয়ে নিজের বখরা নিয়ে ঠিকাদারদের বিল পুরো পরিশোধ করেন প্রকৌশলী আতিয়ার। এই অনিয়মের কারণেই সেতুগুলো অল্প দিনেই অকেজো হয়ে যায়। এর মধ্যে হলদিয়া ও আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নেরই সেতু ভেঙেছে সবচেয়ে বেশি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হলদিয়া ইউনিয়নের উত্তর তক্তাবুনিয়া খালে নির্মিত তক্তাবুনিয়া সেতু, মল্লিকবাড়ি সেতু, কাঁঠালিয়া সেতু, উত্তর টেপুড়া সেতু, হলদিয়া হাট সেতু, বড় মোল্লাবাড়ি সংলগ্ন সেতু, রাঢ়ীবাড়ি সেতু, সোনাগজা বাঁশবাড়িয়া সেতু এবং আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের গাজীপুর সেতু, উত্তর সোনাখালী সেতু, মুসুল্লিবাড়ি সেতু ও চাউলা সেতু ভেঙে গেছে। অটোরিকশা উঠলেই সেতু দোলে। গত ১৬ বছরে এ সেতুগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেয়নি উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এদিকে একেকটি সেতুর একেক রকম সমস্যা রয়েছে বলে দেখা গেছে। সোনাখালী খালে নির্মিত উত্তর সোনাখালী স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন সেতু, গাজীপুর খালে মুসুল্লিবাড়ি সেতু গত পাঁচ বছর আগে ভেঙে গেছে। উত্তর সোনাখালী সেতুতে মানুষ কাঠের পাটাতন দিয়ে চলাচল করছে। মুসুল্লিবাড়ির সেতু মাঝখানে ভেঙে যাওয়ায় চলাচল একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হলদিয়া ইউনিয়নে কাঁঠালিয়া সেতুটিও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, সেতুর একাংশ দেবে গেছে। মল্লিকবাড়ির সেতুর লোহার বিম ভেঙে গেছে। উত্তর টেপুরা সেতুর লোহার ভিম একেবারে ভেঙে গেছে। স্থানীয়রা সেতুর পাশে কাঠের সেতু নির্মাণ করে চলাফেরা করছে। একই ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া খালে তক্তাবুনিয়া সেতু গত তিন বছর আগে মাঝখান দিয়ে ভেঙে গেছে। ওই সেতু দিয়ে চলাচল বিচ্ছিন্ন রয়েছে। স্থানীয়রা নিজেদের খরচায় পাশেই বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো বানিয়ে তার ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। এ ছাড়া ওই অর্থবছরে নির্মিত বাকি সেতুগুলোর বেশির ভাগই এখন চলাচলের অনুপযোগী। যে কয়টি সচল আছে সেগুলোতে মানুষ উঠছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী যতগুলো লোহার সেতু নির্মাণ করেছেন, তার অধিকাংশই ভেঙে গেছে। ওই সেতুগুলোতে রেলপাটির ভিম দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা দেয়নি। তারা উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগসাজশে দায়সারাভাবে সেতু নির্মাণ করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙে গেছে। অনুসন্ধান করে এ সেতুগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণ চিহ্নিতের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

মাছুয়াখালী এলাকার রুবেল গাজী বলেন, তাদের এলাকায় সেতু নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় সেতুর ভিম ভেঙে গেছে। পাটাতন উঠে গেছে। সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলতে পারে না। আমরা ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছি। তদন্ত করে সেতু নির্মাণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নলুয়াবাগী গ্রামের খলিলুর রহমান বেপারী বলেন, ‘মোগো দুঃখ কেউ দ্যাখবে না। গত পাঁচ বচ্ছর ধইর‌্যা মোরা কষ্ট হরি, কেউ মোগো দিকে চায় না। মোরা একটা গার্ডার সেতু চাই।’

তবে নির্দিষ্ট একটা বছরে নির্মিত হওয়া সেতুগুলোই ভেঙে যাচ্ছে- এ দাবি মানতে নারাজ আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, মরিচা ধরে লোহার নাট বল্টু খুলে গেছে বিধায় সেতু ধসে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি চাপিয়ে দিলে আমি কি তা বহন করতে পারব? তেমনি সেতুর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে স্ট্রাকচার বেশি হওয়ায় তা ভেঙে পড়েছে।

দৈনিক বাংলার সঙ্গে কথা হয় তৎকালীন আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী আতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিডিউল অনুসারে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু লবণাক্ততার কারণে সেতুর ভিম নষ্ট হয়ে সেতু ধসে পড়ছে। সেতু রেলপাতের ভিম দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিকমতোই কাজ হয়েছে।

বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, সাঁকোর বিকল্প হিসেবে এই লোহার সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সেতুগুলো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু সেতুগুলো কেন ভেঙে যাচ্ছে তার রহস্য অনুসন্ধান করিনি। তবে লোহার সেতুগুলো তুলে সম্ভাব্যতা যাচাই করে গার্ডার সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


তেলবাহী ট্রলারে আগুন: নিখোঁজ ফখরুদ্দিনের মরদেহ উদ্ধার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বুড়িগঙ্গা নদীতে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফখরুদ্দিন নামে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পাগলা নৌ থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হলো দুইজন। তবে এ ঘটনায় এখন আর কেউ নিখোঁজ রইলো না।

পাগলা নৌ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক ইয়ার আলী আজ শুক্রবার দুপুরে মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার নিখোঁজ একজন ব্যক্তির সন্ধানে বুড়িগঙ্গা নদীতে তল্লাশি চলাকালে রাত ১০টার দিকে দুর্ঘটনাস্থল সংলগ্ন ফতুল্লা লঞ্চঘাট এলাকা থেকে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করি। খবর পেয়ে স্বজনরা এসে ফখরুদ্দিনের মরদেহ বলে শনাক্ত করেন। তবে স্বজনরা বিনাময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের আবেদন জানালে সবার সম্মতিক্রমে মরদেহটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে পাগলা নৌ থানার ইনচার্জ (পুলিশ পরিদর্শক) কামাল হোসেন বলেন, ফখরুদ্দিন নামে উদ্ধারকৃত মরদেহের বিভিন্ন স্থানে আগুনে পোঁড়া চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার পেট থেকে নাড়িভূঁড়িও বের হয়ে ছিল। তবে মুখমণ্ডল ছিল অক্ষত অবস্থায়।

বুধবার (২৬ জুন) দুপুর দেড়টার দিকে আগুনের ঘটনায় এমভি মনপুরা নামে জ্বালানি তেলবাহী ট্রলারটিতে থাকা পাঁচজনের মধ্যে দগ্ধ হয়ে খোকন নামে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। কামাল নামে আরও একজন দগ্ধ অবস্থায় এবং বাকের মাঝি নামে ট্রলারের চালক সুস্থ উদ্ধার হন। পরে দগ্ধ কামালকে তাৎক্ষণিক রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। তবে এ ঘটনায় বাবুল মোল্লা ও ফখরুদ্দিন নামে দুইজন নদীতে ঝাঁপ দিয়ে নিখোঁজ হন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় নিখোঁজ বাবুল মোল্লাকে পাওয়া গেলে তাকে জেলা সদরের নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। ওই রাতেই স্বজনরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। এরপরও ফখরুদ্দিন নামে একজন ব্যক্তি নিখোঁজ ছিলেন।


দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে রোহিঙ্গা যুবক নিহত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৮-নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে মো. সালেক (৩৫) নামে এক রোহিঙ্গা যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার দিকে ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭৬ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সালেক উখিয়ার বালুখালী ৮-ইস্ট নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৭৬ ব্লকের মো. নুর আলমের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন। স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে সালেক নিজ ঘরে ফিরছিলেন। এক পর্যায়ে পথিমধ্যে বোরকা পরিহিত ৩/৪ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত তাকে আটকিয়ে গতিরোধ করে। পরে দুর্বৃত্তরা তাকে মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এসময় স্থানীয়রা তার চিৎকার শুনে এগিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার তাকে উদ্ধার করে কুতুপালংস্থ এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে নেওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘কারা বা কী কারণের এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত নয়। তবে প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় সন্ত্রাসী দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটতে পারে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’

বিষয়:

চট্টগ্রামে রিয়াজউদ্দিন বাজারে আগুন, নিহত ৩

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজন নিহত ও দু’জন আহত হয়েছেন। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে দুজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা এলাকার শামসুল আলমের ছেলে মো. রিদুয়ান (৪৫) ও একই উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের মির্জাখিল বাংলাবাজার এলাকার মো. শাহেদ (১৮)।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে রিয়াজউদ্দিন মোহাম্মদীয়া প্লাজা নামে একটি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। আগুন পার্শ্ববর্তী রেজোয়ান কমপ্লেক্সেও ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের নন্দনকানন, চন্দনপুরা, আগ্রাবাদ ও লামার বাজারসহ মোট ৪টি স্টেশনের ৮টি ইউনিট কাজ করে। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মোট ৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৩ জনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেছেন। বাকি দুজনকে হাসপাতালের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হতাহতরা যে ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ঘটেছে সেটির ওপরে ৫ তলায় থাকতেন। অগ্নিকাণ্ডের কারণে প্রচুর ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। এতে তারা যথাযথভাবে নিশ্বাস নিতে পারেননি।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এমডি আব্দুল মালেক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে।


আবারও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ০০:০২
টেকনাফে (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে হওয়া গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে আবারও কেঁপেছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সীমান্ত এলাকা। গত মঙ্গলবার (২৬ জুন) রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এ সময় পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের হ্নীলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম, টেকনাফ পৌরসভাসহ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ এলাকা থেকে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের হারি পাড়ার রশিদ উল্লাহর বাড়িতে জান্তা সেনাবাহিনীর বিমান হামলায় প্রায় ১০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমার মুন্ডি পাড়ার বাসিন্দা ফয়সাল। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগ নারী ও শিশু বলে জানিয়েছেন ফয়সাল। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে এ বিমান হামলার ঘটনা ঘটে।

মিয়ানমার মংডু মুন্ডি পাড়ার রোহিঙ্গা চুরি করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ইকরাম বলেন, ‘মিয়ানমার মংডু শহরের জান্তা বাহিনীর চৌকির দখলকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে বৃহস্পতিবার ৩টার দিকে মংডু শহরের আশিক্ষা পাড়া, গইন্যা পাড়া ও গর্জনিয়া পাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা বাহিনী। এতে অনেক রোহিঙ্গা নিহত হচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে আসার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা ১৫ জন রোহিঙ্গা ছোট নৌকা নিয়ে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ নাফ নদী দিয়ে এখানে আসি। আমাদের আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আসার জন্য খবর নিচ্ছি।

মঙ্গলবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত রাখাইনের মংডুতে তুমুল সংঘর্ষে কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তজুড়ে কেঁপে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে সেখানকার (মংডুতে) রোহিঙ্গারা টিকতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আবার অনেকে সীমান্ত দিয়ে এপারে প্রবেশের অপেক্ষা করছে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সীমান্ত-নাফনদে বিজিবি-কোস্ট গার্ড সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাতের জের ধরে নাফ নদীর ওপারে মংডু শহরের কয়েকটি এলাকার আশপাশে রোহিঙ্গারা জড়ো হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সীমান্তের লোকজন।

বিস্ফোরণের শব্দে আবারও কাঁপছে সীমান্ত

জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হ্নীলার চৌধুরীপাড়া ও সাবরাংয়ের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে থেমে থেমে গোলাগুলির পাশাপাশি অন্তত ১০০ থেকে ২০০টি মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

সীমান্তে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলেও শুনেছি উল্লেখ করে টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মনির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে থেমে থেমে গোলা চলছে ওপারে। ফলে বিজিবি ও কোস্টগার্ড রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা পুশব্যাক করলেও কিছু রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মো. ইউনুছ জানান, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো পথ নেই। তাই যেকোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে নিষেধ করা হচ্ছে।

বিজিবির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ৩ হাজার ৩৫৪ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের মিয়ানমারে (স্বদেশে) ফেরত পাঠায় বিজিবি। তাদের মধ্যে ৮৪৮ জন নারী, ৭৪৯ শিশু ও ১৭৫৭ জন পুরুষ। আর তিন রোহিঙ্গাকে থানায় দেওয়া হয়।

বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ওপারে সংঘাতের কারণে মাঝে মাঝে এপারে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। তবে রাখাইনের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিজিবি। বিশেষ করে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।


নিজের অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখে খাল খনন ঠিকাদারের

আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ১২:০১
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় নিজের গড়ে তোলা একাধিক অবৈধ স্থাপনা অক্ষত রেখেই কনকসার-নাগেরহাট খাল খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে সাব-ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার কনকসার ইউনিয়নের নাগেরহাট খালের পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে খাল খননকাজ করা হচ্ছে। কিন্তু পূর্ব পাশে খালের জমিতে একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হয়নি।

স্থানীয়রা বলছেন, পূর্ব পাশের খাল খননকাজের সাব-ঠিকাদার শামীম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকায় তিনি ইচ্ছে করেই সেগুলো উচ্ছেদ করেননি। এর পরিবর্তে পশ্চিম পাশের সরকারি সড়ক কেটে বেকায়দায় ফেলেছেন চলাচলকারীদের।

স্থানীয় আব্দুস সালাম মৃধা (৫৫) বলেন, ‘পূর্ব পাশে শামীম মোড়লের একাধিক অবৈধ স্থাপনার মধ্যে একটি প্রায় ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের দোকানঘর রয়েছে। সেটি রক্ষা করতে তিনি পশ্চিম পাশে আমার রেকর্ডীয় জমি কেটে ফেলেছেন। আমি এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও তারা ভ্রুক্ষেপ করেনি।’

স্থানীয় আতাউর রহমান (৬৩) বলেন, ‘১৯৭০-৭২ সালে এই খালে ভরা পানি ছিল। কনকসার ব্রিজের মুখ থেকে ঢাকার সদরঘাট অভিমুখে প্রতিদিন লঞ্চ চলাচল করত। ধীরে ধীরে খালটি ভরাট হয়ে গেছে। অনেকে এখনো খালের জমি দখলে নিতে মরিয়া। এদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া উচিত নয়। প্রশাসনের উচিত অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদ করে খালের জমি পুনরুদ্ধার করা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কনকসার-নাগেরহাট খালের সাড়ে ৩ কিলোমিটার অংশের খনন ও সংস্কারকাজ পান লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মোল্লা। বর্তমানে প্রকল্পটি শেষের পথে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘খালের দুই পাড়েই সরকারি জমি রয়েছে। পশ্চিমপাড়ে যে সরকারি রাস্তার কথা বলা হচ্ছে সেখানেও খালের জমি রয়েছে। আর পূর্ব পাশে যে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া প্রশাসনের কাজ। যার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে সেই শামীম মোড়ল আমার কাজের অংশীদার। তার অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে আমিও বলেছি। অবশ্যই সেগুলো সরাতে হবে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য জিল্লুর রহমান মিঠু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের টাকায় সিংহেরহাটি মাঠ থেকে কনকসার বাজার পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিছুদিন আগে সড়কটি সংস্কারে জেলা পরিষদ থেকে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দও আসে। কিন্তু এর মধ্যেই খাল খননের কাজে ব্যবহৃত ভেকু চলাচলের সুবিধার্থে সড়কটি কেটে ফেলা হয়েছে। অথচ পূর্ব পাশে খালের জায়গায় একাধিক অবৈধ স্থাপনা থাকলেও সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়নি। আমি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা বুধবার সার্ভেয়ার পাঠিয়ে পূর্ব পাশের খালের জমিতে লাল নিশানা টানিয়েছে।’

এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাব-ঠিকাদার শামীম মোড়লের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, পূর্ব পাশে যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, সেগুলোকে ইতোমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।


সিঙ্গাপুরে থেকেও বিদ্যালয়ে হাজিরা দেন শিক্ষিকা

আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ১৪:০১
সাজ্জাদ হোসেন শিমুল, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

সিঙ্গাপুরে অবস্থান করে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাসলিমা আক্তার নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। শুধু সই করেই থেমে যাননি তিনি। বিদেশে থেকেও স্কুলে উপস্থিত দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করে ভোগ করেছেন। তাকে হাজির দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর সুপারিশও করেছেন খোদ সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এর সঠিক ব্যাখ্যা চেয়ে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করতে ওই শিক্ষিকাকে নোটিশ দেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। নোটিসের সময় পার হয়ে সেই শিক্ষা অফিসারের বদলি হয়ে গেলেও এখনো জবাব দেননি ক্ষমতাধর এই শিক্ষিকা।

চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বলীঘর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানা যায়, উপজেলার বলীঘর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা আক্তার তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য শিক্ষা অফিস থেকে গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বিদেশে যান। ছুটি শেষে ১৮ আগস্ট তার কর্মস্থলে যোগদান করার কথা থাকলেও তিনি দেশে ফিরেন ৩ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে একমাস পার করেন তিনি। দেশে ফিরে তিনি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় ১৫ দিনের ছুটি বাদে বাকি ১৫ দিনের হাজিরায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলন করেন।

তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করার জন্য ৫ সেপ্টম্বরে পূর্ববর্তী আগস্ট মাসের ২০ তারিখে (পেছনের তারিখে) বিদ্যালয়ে যোগদানের তথ্য দিয়ে শিক্ষা অফিসে আবেদন জমা দেন। পেছনের তারিখে দেওয়া এই আবেদনে সুপারিশ করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আম্বিয়া খাতুন। জালিয়াতির মাধ্যমে করা এই আবেদনে সহকারী শিক্ষা অফিসারের সুপারিশ করা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

তাসলিমা আক্তারের ছুটি ও যোগদানপত্র নিয়ে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহের বিল্লাহ তাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে ৩ কার্যদিবস সময় দিয়ে শোকজ করলেও শিক্ষিকা সেই নোটিশের কোনো তোয়াক্কাই করেননি। একজন শিক্ষিকার এমন জালিয়াতিতে এখনো কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নেওয়ায় শিক্ষা অফিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলবেন বলেন জানান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আম্বিয়া খাতুন, শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তারের সিঙ্গাপুরে ১৫ দিনের স্থলে ১ মাস অবস্থান করা এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার বিষয়টি স্বীকার করেন। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বাধ্য হয়ে সুযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী বলেন, ‘এই অনিয়মের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি যে তারিখে আবেদনপত্র পেয়েছি সেই তারিখেই সুপারিশ করেছি।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই বিষয়ে আগের শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেছেন। আমি দুয়েকদিনের মধ্যে তাকে শোকজ করব। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি আমার জানা নেই। উপজেলা থেকে রির্পোট পাঠালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান ঘুরেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৮ জুন, ২০২৪ ১১:০৮
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি

আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বাগান ঘুরে দেখলেন দেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্টদূতরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রদূতদের এ দেশের আম ও আম সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা দিতেই এ ম্যাংগো ট্যুরের আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, স্পেন, সিঙ্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূতরা চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার কান্দবোনা গ্রামে একটি আম বাগান পরিদর্শন করেন।

এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. আব্দুল ওয়াদুদ, কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো. বখতিয়ারসহ অন্যরা।
এ ম্যাংগো ট্যুরের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ম্যাংগো ট্যুরিজম ও দেশের আম রপ্তানীতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম উদ্যোক্তারা।


৭ বছরে তিন লাখ তালগাছ লাগালেন বৃক্ষপ্রেমী বেলাল

মাহমুদুন নবী বেলাল। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ জুন, ২০২৪ ২১:৪৩
মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে/ সব গাছ ছাড়িয়ে/ উঁকি মারে আকাশে/’-রবিঠাকুরের ছোটদের এই কবিতাটি পড়তে পড়তে অনেক শিশুর মনই হারিয়ে যেত দূর গাঁয়ে। যেখানে মাটির রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চলে যায় গরুর পাল। সেই রাস্তার দুধারে আদিগন্ত ধানখেত আর রাস্তার পাশে সারি সারি তালগাছ। তাতে ঝুলছে বাবুই পাখির বাসা।

তবে আজকাল শহরের ছোঁয়া লেগে গ্রামগুলোও যেন আর গ্রাম নেই। নেই সে মেঠো পথ, তালগাছের সারি, সবুজের আবাহন। তবু সেখানকার কিছু মানুষ এখনো গ্রামগুলোকে ছায়া ঢাকা, পাখি ডাকা গ্রামে রূপান্তরের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। হৃদয়ের গহিনে তাদের সবুজের আক্ষেপ, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার আকুলতা।

তাদেরই একজন মাহমুদুন নবী বেলাল। জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মী ও সমাজকর্মী মাহমুদুন নবী বেলাল নিজ উদ্যোগে বিগত ৭ বছরে নওগাঁ ও রাজশাহী জেলায় তিন লাখ তালগাছ রোপণ করেছেন। ৮০ কিলোমিটার সড়কে বর্তমানে শোভা পাচ্ছে বেলালের রোপণ করা তালগাছ। এ ছাড়া আরও প্রায় ৩০ হাজার ফলদ ও ঔষধি গাছও লাগিয়েছেন বেলাল। সেগুলোর পরিচর্যাও করেন প্রতিদিন। বেলালের বাড়ি জেলার মান্দা উপজেলার বৈলশিং পানাতাপা গ্রামে।

বেলাল বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গত ৭ বছর ধরে জেলার বিভিন্ন স্থানে ও রাস্তার পাশে তালবীজ রোপণ করেছি। পাশাপাশি নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়কের নওহাটা মোড় থেকে রানীরপুকুর পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার দুপাশে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী ৩০ হাজার গাছের চারা রোপণ করেছি। এ ছাড়া নওগাঁ আদালত চত্বরের সামনেও বিভিন্ন প্রজাতির দুই শতাধিক গাছের চারা রোপণ করে নিজেই নিয়মিত পরিচর্যা করছি। এ কাজে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

তার এমন উদ্যোগে তাকে সার্বক্ষণিক সাহস জুগিয়েছেন তার বাবা স্বাস্থ্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন ও বেলালের স্ত্রী মৌসুমী খাতুন।

বেলাল জানান, তার ইচ্ছা এই বর্ষায় নওগাঁ সদর উপজেলার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০-১৫টি করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিনা মূল্যে রোপণের জন্য বিতরণ করবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় ৩০ হাজার গাছের চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বেশি বেশি গাছের চারা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবিও জানান এই বৃক্ষপ্রেমী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাহমুদুন নবী বেলাল সত্যিই সুন্দর একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। যত বেশি গাছ লাগানো হবে তত বেশি প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে। দেশের প্রায় সর্বত্রই তালগাছসহ বড় বড় গাছের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এতে বজ্রপাতে মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে। তার এমন মহতি উদ্যোগ সবার জন্য অনুকরণীয় হবে বলে বিশ্বাস করি।’

জেলা বন অফিস নওগাঁর সহকারী বন সংরক্ষক মো. মেহেদীজ্জামান বলেন, ‘যেভাবে তালগাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনবসতি বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে বড় বড় গাছপালাসহ জঙ্গল কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে তালগাছসহ অনেক জাতের গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মাহমুদুন নবী বেলালের এমন উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। তার কোনো সহায়তার প্রয়োজন হলে আমরা তার পাশে থাকব।’


দখলমুক্ত হচ্ছে কোটালীপাড়ার সরকারি খাল

কোটালীপাড়ার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের তারাইল-সোনাখালী খালের বাঁধ কেটে দখলমুক্ত করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ জুন, ২০২৪ ২১:৪২
মনিরুজ্জামান শেখ জুয়েল, কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ)

দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর প্রভাবশালী মহলের দখলে থাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার খালগুলো দখলমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

গতকাল বুধবার সকালে এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে খালগুলো দখলমুক্ত করতে অভিযানে নামেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুর আক্তার।

উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের তারাইল বিলের সোনাখালী-তারাইল খালের অবৈধ বাঁধ কেটে শুরু হয় খাল উদ্ধার কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে এ খালে নির্মল মাঝি নামে এক ব্যক্তি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে আসছিলেন। প্রথম দিনের অভিযানে চারটি খাল দখলমুক্ত করা হয়। বাঁধ কেটে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ইউপি সদস্য লায়েক শেখ দখলে থাকা সোনাখালী বিলের কুমলাবতী খাল, ইউছুব আলী দাড়িয়ার দখলে থাকা কোনেরবাড়ি কলমামুনিয়া খাল, পরস শিকদারের দখলে থাকা দেওপুরা খাল।

এসব খাল উদ্ধারকালে স্থানীয় উৎসুক জনতা ভিড় জমান। খালগুলো দখলমুক্ত হওয়ায় সবাই আনন্দে উল্লাসিত হয়ে পড়ে।

বছরের পর বছর গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার অর্ধশত ছোট-বড় বিলের প্রায় শতাধিক সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করে আসছিল প্রভাবশালী মহল। যার ফলে বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, পরিবেশ বিপর্যয়, নৌ-চলাচল ব্যাহত ও কৃষি কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। চরম বিপাকে পড়েন মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মৎস্যজীবীরা।

কোটালীপাড়া উপজেলার রামনগরের বিল, রথিয়ারপাড়, মাছপাড়া, কুমুরিয়া, বৈকণ্ঠপুর, লখন্ডা, মুশুরিয়া, পিড়ারবাড়ি, পলোটানা, ধোরাল, চিথলিয়া, পশ্চিম দিঘলিয়া, পূর্বপাড়া, চিত্রাপাড়া-শুয়াগ্রাম, সাতুরিয়া, কান্দি, আশুতিয়া, পোলশাইল, বর্ষাপাড়া, ছত্রকান্দা, দেওপুরা, সোনাখালী, ফুলবাড়ি, কোনেরবাড়ি, বহলতলী, চাটখালি, তারাইল, গোপালপুর, চরগোপালপুর, গৌতমেরা, মাচারতারা, গজালিয়া, তালপুকুরিয়া, হিজলবাড়ি, তারাকান্দর, কুঞ্জবন ও পারকোনা বিলসহ অর্ধশত ছোট বড় বিল রয়েছে। এসব বিলের প্রায় শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালী মহল।

বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ জুন দৈনিক বাংলা পত্রিকার ১১ পৃষ্ঠায় ‘শতাধিক খাল দখল করে মাছ চাষ, প্রশাসন নীরব’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নজরে আসে কোটালীপাড়া উপজেলা প্রশাসনের। ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে পিঞ্জুরী ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলের খাল উদ্ধারে অভিযান শুরু করেন কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিনুর আক্তার। এ সময় খালের ভিতরে অবৈধভাবে দেওয়া বাঁধ কাটায় স্থানীয়রা সহযোগিতা করেন। উদ্ধার অভিযান শুরু করে ইউএনও চলে গেলে পুরো অভিযানের নেতৃত্ব দেন কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি প্রতীক দত্ত।

সোনাখালী-তারাইল খালের অবৈধ বাঁধ কেটে খাল উদ্ধার হওয়ার পর পরই আনন্দ-উল্লাস করে পলো ও ঝাঁকি জাল নিয়ে খালে মাছ ধরতে নেমে পড়েন অনেকেই।

উপজেলার কোনের ভিটা গ্রামের আলম মিয়া বলেন, কয়েক বছর আগেও খাল বিল থেকে সারা বছর দেশীয় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত অনেক দরিদ্র মৎস্যজীবীরা। প্রভাবশালীদের দখলে খাল চলে যাওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় মাছ ধরা। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। অনেকেই আবার বেকার হয়ে পড়ে। এখন এসব খাল উদ্ধার হওয়ায় পুনরায় তারা আবার মাছ ধরার সুযোগ পেল।

উপজেলা দেশীয় মাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম হাজরা মন্নু বলেন, অবৈধভাবে দখলকৃত খাল উদ্ধারে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে শুধু উদ্ধার অভিযান চালালেই হবে না। এসব খাল নজরদারিতে রাখতে হবে, যাতে দখলদাররা পুনরায় বাঁধ দিয়ে খাল দখল করতে না পারে।

কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি প্রতীক দত্ত বলেন, ‘অবৈধভাবে দখলকৃত সরকারি খাল উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চলমান থাকবে। সরকারি খাল দখল করে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। খালে সবাই মাছ ধরতে পারবে। ভবিষ্যতে এসব খাল কেউ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


প্রধান কারারক্ষীসহ তিনজন সাময়িক বরখাস্ত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৭ জুন, ২০২৪ ১৯:২৩
বগুড়া প্রতিনিধি

বগুড়া জেলা কারাগারের কনডেম সেলের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার কয়েদি পালানোর ঘটনায় তিন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই কারারক্ষীর কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ার হোসেন এ তথ্য জানান।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তিন কারারক্ষী হলেন প্রধান কারারক্ষী দুলাল হোসেন, কারারক্ষী আব্দুল মতিন ও কারারক্ষী আরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া কারারক্ষী ফরিদুল ইসলাম ও হোসেনুজ্জামানের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে।

এ ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তর থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমানকে প্রধান করে গঠিত ওই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক স্বাক্ষরিত আদেশে তদন্ত কমিটিকে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে- কয়েদি পলায়ন এবং পূর্বাপর ঘটনা উদ্ঘাটন; কয়েদি পলায়নের ঘটনায় কারা প্রশাসনের দুর্বলতা এবং তা উদ্ঘাটন; অবকাঠামোগত ত্রুটি আছে কি না তা উদ্ঘাটন; দায়ী ব্যক্তিবর্গ চিহ্নিত করা; দায়ী ব্যক্তিবর্গের বিষয়ে বিধিসম্মত মতামত ও সুপারিশ এবং ভবিষ্যতে বন্দি পলায়ন রোধে মতামত ও সুপারিশ।

গত ২৫ জুন রাত ৩টার দিকে বগুড়া জেলা কারাগারের জাফলং নামের কনডেম সেলের ২নং ওয়ার্ডের ছাদ ফুটো করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার বন্দি পালিয়ে যান। অবশ্য এক ঘণ্টার মধ্যেই শহরের চেলোপাড়া চাষী বাজার থেকে পুলিশ তাদের ধরে ফেলে।


মেরামতের উদ্যোগ নেই তিস্তা রেলসেতুর

মেয়াদ শেষ ৯০ বছর আগে
কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেল সেতু থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ জুন, ২০২৪ ১৩:২৯
মীর আনোয়ার আলী, রংপুর

‘বাহে, মোর মাথার কালা চুল সাদা হইলো, ব্রিটিশ আমলের বানা তিস্তা রেলসেতু এল্যাও ভালো করিল না সরকার’… আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কাউনিয়া উপজেলার তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন পাঞ্চরডাঙ্গা গ্রামের ৭৩ বছর বৃদ্ধ জমশের আলী।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার জরাজীর্ণ তিস্তা রেলসেতুর ওপর দিয়ে আন্তনগরসহ ১২টি রুটে প্রতিদিন ২২টি ট্রেন চলাচল করছে। ঢাকা-রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, বগুড়া নাটোর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিসহ আটটি জেলার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিস্তা রেলসেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করলেও রেল কর্তৃপক্ষের মেরামত করার নেই কোনো উদ্যোগ। বর্তমান তিস্তা রেলসেতুটির বয়স ১৯০ বছর।

রেল বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রংপুরের কাউনিয়া তিস্তা নদীর ওপর লম্বা ২ হাজার ১১০ ফুট এবং ১৮৩৪ সালে তা নির্মাণ করা হয় । নির্মাণের সময় যার মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। তবে হিসাব অনুযায়ী ৯০ বছর আগেই এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এর ফলে সেতুটির কাঠের পাতগুলো ভেঙে গেছে, কোথাও নাট খুলে পড়ছে।

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হলেও তখন থেকে সংস্কারের মুখ দেখেনি এ সেতুটি।

তিস্তা রেলসেতু সংলগ্ন চা-বিস্কুট বিক্রেতা ইমান আলী বলেন, এই সেতু দিয়ে ৮ জেলার কয়েক লাখ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। কিন্তু সরকারের উচিত বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এখনই সেতুটি মেরামত করা।

রংপুর রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট শংকর গাঙ্গুলী বলেন, দীর্ঘ বছর আগে মেয়াদ শেষ হওয়া সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এই সেতুর অনেক অংশে কাঠগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, নাটগুলো খারাপ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলাচল করছে ট্রেনগুলো।

শংকর গাঙ্গুলী বলে, ১৯৭১ সালে পাক সেনাদের দ্বারা সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। দেশ স্বাধীনের পর স্প্যান, গার্ডার ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করে তা মেরামত করে সেতুটি পুনরায় চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে ও সওজ বিভাগ যৌথভাবে রেলসেতুতে মিটারগেজ লাইনের পাশে ২৬০টি স্টিলের প্লেট ও কাঠের পাটাতন স্থাপন করে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, এই তিস্তা সেতুতে ১ হাজার ২২১টি কাঠের স্লিপার রয়েছে। এর মধ্যে ৭৫০টি স্লিপার নষ্ট হওয়ার ফলে তা পরিবর্তন করা হয়েছে। বাকি স্লিপারগুলো পরির্বতনের জন্য রেল অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই নষ্ট হওয়া স্লিপারগুলো পরিবর্তন করা হবে।

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘রেলসেতুটির বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত সেতুটি মেরামত করা হবে।’


banner close