বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

মৌলভীবাজারের জুড়ীতে ভয়াবহ বন্যা, আশ্রয়কেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে

ছবি: দৈনিক বাংলা
জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশিত
জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৯ জুন, ২০২৪ ১৫:৪০

টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ঢলের পানিতে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জুড়ী শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন।

ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকার সড়ক। সেই সঙ্গে তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়ন।

ঢলের পানি উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই অঞ্চলের মানুষজন। অনেকেই তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা উঁচু এলাকায় আত্মীয় স্বজনদের বাসায় ছুটছেন। নিম্নাঞ্চলের মানুষদের অনেকেই জানিয়েছেন, ঢলের পানিতে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এখন নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়কমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন (এমপি) জায়ফরনগর ও পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি জুড়ী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র ও মক্তদীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরিবারের খোঁজখবর নেন। তাদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করেন।

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাইন উদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য বদরুল ইসলাম, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রিংকু রঞ্জন দাস, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম হেলাল উদ্দিন, জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুম রেজা।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনির উদ্যোগে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনফর আলী, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম সহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান আজ বুধবার সকালে জানান, ‘বন্যায় ইতিমধ্যে উপজেলার ৬৫ টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জুড়ীতে ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোর রায় চৌধুরী মনি মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি এখন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছি। ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৬০ টি পরিবারের প্রায় ৫০০ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এই সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সেঙ্গ বাড়ছে। আমরা শুকনো খাবার বিতরণ করছি। গতরাতে জায়ফরনগর ইউনিয়নের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

বিষয়:

কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৪৩
বিজয় ধর, রাঙামাটি

টানা ভারী বর্ষণের ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (কপাবিকে) বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের জানিয়েছেন, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩নং ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। ১ ও ২নং ইউনিট থেকে ৪২ মেগাওয়াট করে ৮৪ মেগাওয়াট এবং ৪ ও ৫নং ইউনিট থেকে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াটসহ সর্বমোট ১৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যেটি চলতি বছরে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বাধিক উৎপাদন। পানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা জানান, বছরের এ সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৪ দশমিক ১৬ ফুট এমএসএল থাকার কথা থাকলেও গতকাল কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রয়েছে রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৩ দশমিক ৬৯ ফুট মিন সি লেভেল, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পানির লেভেল। এ হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট মিন সি লেভেল।

তবে পানি বাড়লেও পরিকল্পিতভাবে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের ভেতরে পলি জমেছে। ফলে এর ড্রেজিং করা জরুরি বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, কাপ্তাইয়ে অবস্থিত দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে সর্বমোট ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।


এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট

ব্রহ্মপুত্র তীরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা
সিলেটের জৈন্তাপুরে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৫৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর একনাগাড়ে বৃষ্টিতে এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট অঞ্চল। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, একই কারণে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল এবং তিস্তা ও ধরলায় নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট ব্যুরো থেকে দেবাশীষ দেবু জানান, সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোর থেকে অতিভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশির ভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি।

তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগে গত সোমবার থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিনদফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে ০.৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

তিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদনদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টিতে ঢলের পানি নামতে পারছে না। এ কারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারী বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।

এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে রাতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল নগরের অন্তত ২৫টি এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে দুপুরে বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। তবে বৃষ্টির থামার পর পানি নেমে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে, সে জন্য কাজ করছেন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সদরের যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বাড়ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি।

এ অবস্থায় এসব নদ-নদীর নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রমের পথে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার অববাহিকার পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে চলছে তীব্র ভাঙন। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মুসার চর, ব্যাপারীপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চরের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বাধ্য হয়ে এসব পরিবারের অনেকে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মোল্লাহাট বাজার এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বাজার রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে যাত্রাপুরের রলাকাটা চরে একের পর এক বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। চরের উত্তর দিকে অব্যাহত ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বেলাল বলেন, ‘বন্যার পানি এখনও বাড়িঘরে প্রবেশ করে নাই। তবে ভাঙনে এলাকার মানুষ দিশেহারা। রলাকাটার পশ্চিমে মাঝের চর ও চিড়াখাওয়ার চরের আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িঘরে ঢুকবে।’

যাত্রাপুরের কালির আলগা ও গোয়াইলপুরির চরে গত দুই দিনে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেশির ভাগ পরিবারের বসতবাড়ির চারপাশে পানি।

গোয়াইলপুরির চরের বাসিন্দা মাহবুব বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ। বন্যার কবলে পইড়া গেছি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতাছে। আইজ-কাইলের মধ্যে সব ঘরবাড়িতে পানি ঢুইকা পড়ব।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলাজুড়ে চার শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবারও পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে আমরা সেদিকে বাড়তি নজর রাখছি।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় লোকজন স্থানীয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

হঠাৎ করে পানি উঠায় লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে এসেছেন। পানি বৃদ্ধিতে শহরের একমাত্র পৌর বাস টার্মিনালটি পানিতে ডুবে যায়। যানবাহনগুলোকে উঁচু রাস্তায় সুরক্ষায় রাখা হয়েছে।

একইভাবে দীঘিনালার ১০টি গ্রাম পানির নিচে রয়েছে। এখানকার মেরুংবাজারটি পানির নিচে।

সাজেকে আটকা শতাধিক পর্যটক

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচাংল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাজেকের মাচালং বাজার, বাঘাইহাট এবং পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সাজেকে শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে।

এদিকে, সাজেকের কুঁড়েঘর রিসোর্টের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে কাচালং নদীতে পানি বৃদ্ধি হয়ে মাচালং ও বাঘাইহাটে রাস্তার ওপর পানি উঠে যাওয়ায় সাজেকের কয়েকশ পর্যটক আটকা পড়েছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড়ি ঢলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সাজেকের আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে সাজেক থেকে পর্যটকবাহী যানগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি।


যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৩:২১
মোস্তাক আহমেদ মনির, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে একটি গ্রাম। গৃহহীন হয়ে পড়েছে নদীর পাড়ে বাস করা প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। পায়নি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা।

সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন একটি নদীভাঙন কবলিত ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান যমুনা নদীর করাল গ্রাসে প্রতি বছর শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন অজানা গন্তব্যে। যমুনা নদী যেন এদের পিছু ছাড়ছেই না। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ নলসন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রতি বছর নদীভাঙনের ফলে অধিকাংশ চরাঞ্চলের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে গিয়েছে। বেঁচে ছিল মিরকুটিয়া গ্রামের একাংশ কাঁঠাল তলা এলাকা। সেটিও আজ ভাঙনের কবলে। কয়েক দিনের টানা ভাঙনের ফলে নদীর বুকে বিলীন হয়েছে এ এলাকার প্রায় ২০টি বসতবাড়ি।

স্থানীয় বানিছা বেওয়া, বিলকিস বেগম, আশরাফুল, মোখলেসসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, প্রতি বছর এখানে নদীভাঙনের ফলে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে যায়। এর আগে এখানে অনেক বাড়ি-ঘর ছিল। সব নদীতে ভেঙে গেছে। এবারও তাদের অনেকের রান্না ঘর, বসত ঘর, টিউবওয়েলসহ নানা স্থাপনা এক রাতের মধ্যে ভেঙে নদীতে চলে গেছে। একাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে থাকায় ভেঙে খোলা মাঠে রেখে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বলে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে ও অসহায়দের শেষ সম্বল বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পিংনা ইউনিয়নের যমুনার নদীভাঙন এলাকা সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অতি দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ এমপি বলেন, ‘ভাঙনের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভাঙন এলাকায় ইউএনওর মাধ্যমে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’


টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে পাহাড়ধস, আশঙ্কা চট্টগ্রামেও

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০৮:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

একনাগাড়ে চার দিন ধরে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিতে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মতো জনদুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। এর মধ্যে চেঙ্গি-মাইনি-কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উভয় জেলার দুর্গম এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করছে আবহাওয়া অফিস।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারায় পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। এতে ভোর থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিকরা মাটি সরালে তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকাল ৯টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে যানবাহন ছেড়ে যায়।

এ ছাড়া জেলা সদরের শালবাগান, সবুজবাগ এলাকায় পাহাড় ধসে বাসাবাড়িতে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়িসহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। শালবাগান এলাকার হরিনাথপাড়া, রসুলপুর, পূর্ব শালবাগানে গভীর রাতে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও আসবাবপত্র। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

হরিনাথপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসের পাশাপাশি নিরাপত্তাপ্রাচীর হেলে পড়ে একটি টিনের ঘরের ওপর। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রশাসন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম তূর্য জানান, দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘চেঙ্গী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতেই শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পাহাড়ধসের শঙ্কা আছে এমন এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলায় ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।’ দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, জেলায় টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ি-লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সকালে বাঘাইছড়ি থেকে লংগদু সড়কের বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম এলাকা ও বটতলী হেডম্যান পাড়ায় পৃথক পৃথক মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পরপরই সড়কটি সচল করতে বাঘাইছড়ি থানার পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় যুবকরা একসঙ্গে কাজ করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ জানান, সকালে বাঘাইছড়ি-লংগদু সড়কের দুটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা সড়কটি সচলের কাজ শুরু করে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এখানে আবারও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, কমার্স কলেজসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

গত চার দিন ধরে (শনিবার থেকে) কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী লোকজনকে। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভীষণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্ষার সময় পরীক্ষা না নিয়ে শুষ্ক সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

চাকতাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা না হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আসতে পারছেন না। বেচাকেনা অত্যন্ত কম। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।


এক সপ্তাহে মারা গেছে ডলফিনসহ ৭ মা মাছ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আরও একটি বিপন্ন প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন এবং একটি প্রজননক্ষম মা (ব্রুড) মাছের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় মৃত ডলফিন এবং মা মাছটি দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে হালদা নদীতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় একটি মৃত ডলফিন ও একটি ব্রুড মাছ ভেসে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে আমাকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে।’

এ নিয়ে গত সাত বছরে (২০১৭ সাল থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত) হালদা নদী থেকে ৪২টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হলো জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর মৃত ব্রুড (প্রজননক্ষম) মাছ উদ্ধার করা হয়েছে মোট ছয়টি।’

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে হালদা নদীতে ছয়টি ব্রুড মাছ (একটি রুই এবং পাঁচটি কাতলা) ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অশনিসংকেত। স্থানীয়দের কাছে পাওয়া তথ্য অনুসারে ওই ল্যাবরেটরির একজন গবেষণা কর্মকর্তা জানান, সোমবার (১ জুলাই) রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মৃত কাতলা ও একটি ডলফিন জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এর আগে রোববার দুপুর ১টার দিকে আজিমের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের (দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার) আরও একটি মৃত কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকা থেকে দুটি কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ওজন ১০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৫৮ সেন্টিমিটার, অপরটির ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম দৈর্ঘ্য ৯৮ সেন্টিমিটার।

গত ২৬ জুন রাউজান উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার কয়েক দিন আগেও ১২ কেজি ওজনের একটি মা কাতলা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।

ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে দুই বছর পরে এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরও একটি হতাশাজনক বিষয়, ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর মাছেরা সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে, যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। ইতোমধ্যে প্রজনন মৌসুমের ছয়টি জো শেষ হওয়ার মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে মাছের ডিম ছাড়ার কোনো রেকর্ড নেই। হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের এত হতাশার মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং দুটি ডলফিনের মৃত্যু এই নদীর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এই ব্রুড মাছের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে শাখা খালগুলোর দূষণ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করি। তবে হালদা নদী তথা বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ রক্ষার জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদ্ঘাটনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে, হালদা নদীর গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় রয়েছে।


ফরিদপুরে বাস-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বোয়ালমারিতে লোকালবাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চতুল ইউনিয়নের বাইখির মিলঘর এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে হুসাইন মিয়া (২২) এবং একই উপজেলার ধলেরচর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রাজু শেখ (২১)। সম্পর্কে তারা মামাতো ফুফাতো ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামি লোকাল বাস মালঞ্চ পরিবহনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বোয়ালমারি আলফাডাঙ্গাগামি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল চালক হুসাইন মিয়া (২২) বাসের চাকায় পিষ্ট হয় এবং মোটরসাইকেলের অপর আরোহী মো. রাজু শেখ (২১) সড়কে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় মোটরসাইকেলটি বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। নিহতদের লাশ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর বাসের চালকসহ স্টাফরা পালিয়ে গেলেও বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ।

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুরগামি লোকাল বাসের (মালঞ্চ পরিবহন) মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটিকে আটক করতে পারলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।


রমেক ডরমেটরি থেকে চিকিৎসকের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) শেখ রাসেল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডরমেটরি ভবন থেকে আক্তারুজ্জামান (৫০) নামে একজন চিকিৎসকের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই চিকিৎসকের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী।

আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজের শেখ রাসেল ডরমেটরি ভবনের ৫ম তলার ৬নং কক্ষ থেকে দরজা ভেঙে তার রক্তাক্ত নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আক্তারুজ্জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (পিজি) নিউরোসার্জারি বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে একই মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্র ছিলেন। আগামী ৬ জুলাই তার পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে তিন দিন আগে তিনি রমেকে আসেন।

পুলিশ ও অন্যান্য শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজের শেখ রাসেল ডরমেটরি ভবনের ৫ম তলার ৬নং কক্ষ থেকে পচা গন্ধ বের হয় এবং দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে দরজার তালা ভেঙে চিকিৎসক আক্তারুজ্জামানের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, আক্তারুজ্জামান ইতোপূর্বে ৮ বার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে কোনোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পারছিলেন না। তা ছাড়া তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে কেউ কেউ দাবি করেন।

ডা. আক্তারুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনুর আক্তার জানান, আক্তারুজ্জামান পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রংপুরে এসেছিলেন। তিনি লিভার ও পায়ের ব্যথাসহ কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আরিফুজ্জামান জানান, খবর পেয়েএকজন চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, ডা. আক্তারুজ্জামান পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। সকালে ডরমেটরি থেকে জানানো হয়, আক্তারুজ্জামানের রুম থেকে গন্ধ আর রক্ত আসছিল। পরে বিষয়টি আমরা পুলিশ ও জেলা প্রশাসককে জানাই। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করে কিছু বলা যাচ্ছে না।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবার নৈশপ্রহরী নিহত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘আধিপত্য বিস্তারের জেরে’ সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলিতে এক নৈশপ্রহরী নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার পালংখালি ইউনিয়নের হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মো. আমির জাফর।

নিহত মো. সলিম (৩০) উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের মো. মকবুলের ছেলে। আহতরা হলেন একই ক্যাম্পের মো. আলমের ছেলে মো. ইউনুস এবং আরিফ উল্লাহর ছেলে সবি উল্লাহ। হতাহত তিনজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

স্থানীয়দের বরাতে মো. আমির জাফর বলেন, সোমবার মধ্যরাতে উখিয়ার হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের বালুর মাঠ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে এপিবিএন পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে মৃত এবং দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

আহতদের উদ্ধার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান এডিআইজি।

আমির জাফর জানান, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, আধিপত্য বিস্তারের জেরে রোহিঙ্গাদের দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যে সংঘর্ষে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।


রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, ৩টি বোমা উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৪ ২০:১৮
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাব পৌরসভার আড়িয়াবো এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশের এন্টি টেরোরিজমের একটি ইউনিট বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম টিম অভিযান চালায়।

এ সময় বাড়ির ভেতর থেকে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। তিন দফায় বোমা ডিসপোজাল টিম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

স্থানীয়রা বলেন, বাড়িটি আট বছর আগে সৌদি আরব প্রবাসী জাকির হোসেন নির্মাণ করেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাড়িটি দেখভাল করতেন মোহাম্মদ সুন্নত মিয়া। বাড়ির নিচের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন শাহনেওয়াজ মিয়া। গত এক সপ্তাহ আগে তিন তলার ভাড়াটিয়া হুজুর (নাম অজানা) নিচে ময়লা ফেলতে আসেন। ওই সময় তিনি তার বাড়ির ও নাম কী জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু হুজুর নাম ঠিকানা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

শাহনেওয়াজ মিয়া বলেন, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে কোথাও চাকরি করেন বলেছেন। বয়স ছিল অল্প। এর বাইরে কোনো ঠিকানা বলেননি। তার বাসায় একজন নারী, ওই হুজুর ও দুই বাচ্চা ছিল। গত তিন দিন (ঘটনার দিন থেকে তিন দিন আগে) বাসায় তালা ঝুলিয়ে তারা চলে যান।

হুজুরের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন ইমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ওনি হুজুর ছিল। আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকতো। আসা-যাওয়া করতো অনেকে। কিন্তু তারা কারা আমরা চিনি না, জানিও না।’

এদিকে, জঙ্গি আস্তানা ঘেরাওয়ের খবরে পুরো বরপা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাড়িটি দেখতে স্থানীয় ও আশপাশের লোকজন ও উৎসুক জনতার ভিড় জমায়। বোমা বিস্ফারণের পর আতঙ্ক আরও বাড়ে।

শাহ আলম নামে স্থানীয় একজন বলেন, এলাকার ভেতরে জঙ্গি আস্তানা, একটুতো ভয় আছেই। তবে সবার উচিত সব পরিচয় নিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া।

আড়িয়াবো এলাকায় ভাড়া থাকেন আব্দুর রাজ্জাক। গার্মেন্টে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘খবরটা হুনার (শোনার) পর ডরে (ভয়ে) আছি। কেডা (কে) যে কি এইডাতো (এটাই তো) কওয়া যায় না। এত বড় কিছু এলাকায় অথচ কেউ বুঝবার পারল না।’

পুলিশ জানায়, বোমা তিনটি উদ্ধারের পর বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে একটি, বিকেল ৪টায় একটি ও বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ত্রিয় করে বোমা ডিসপোজেবল টিম।

এন্টি টেরোরিজমের এসপি (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল কক্সবাজার থেকে একজন নারী জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করি। তার দেওয়া তথ্যমতে, আমরা জানতে পারি ঢাকার আশপাশে রূপগঞ্জে কোথাও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে। গতকাল থেকে আড়িয়াবো এলাকায় টিম কাজ করে। পরে নিশ্চিত হই কোন বিল্ডিংয়ে জঙ্গিরা অবস্থান করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের টিম বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। পরে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযান শেষে আনসারুল্লা বাহিনীর ব্যবহৃত চাপাতি ও ছুরি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া বোমা বানানোর বিভিন্ন আইটি সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে।’

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, ওই বাড়িতে ২০ কক্ষ রয়েছে। সবগুলো রুমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। তালা ভেঙে অভিযান চালিয়ে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বোমাগুলো রুমেই তৈরি করা হয়েছিল। দূর থেকে এগুলো বহন করা সম্ভব না। এখানে দু’জন জঙ্গি সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষক ছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, জঙ্গিরা নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করে। হয়ত তাদের বড় কোনো পরিকল্পনা ছিল।


নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা ভবনে অভিযান শুরু

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৪ ১৫:৩৭
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি চারতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে অভিযান শুরু করে এটিইউ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এর আগে, রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় সকাল থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে এটিইউ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযান শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সকাল থেকে জঙ্গি সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। দুপুরে বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো কাউকে আটক করার তথ্য আমরা পাইনি। অভিযান শেষে বিস্তারিত করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ঘিরে রাখা জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা ওই বাড়িটি সৌদি আরব প্রবাসী জাকির মিয়ার।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে এটিইউর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা এই বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।


নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে বাড়ি ঘেরাও

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা একটি বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। গোয়েন্দা অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বাড়িটি ঘেরাও করে এটিইউ এর একটি দল।

বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মাহফুজুল আলম রাসেল গণমাধ্যমকে জানান, এটিইউর এটি একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা একটি বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

এদিকে, এটিইউ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলায় অভিযানের পর এক নারীকে গতকাল কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যেই এই অভিযান। এটিইউর ধারণা, নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসার-আল ইসলামের ৩-৪ জন সদস্য ভবনের তিনতলায় অবস্থান করছে।


বৈরী আবহাওয়ায় সাজেকে আটকে পড়লেন ৬ শতাধিক পর্যটক

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সারা বাংলা ডেস্ক

টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ির সাজেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এই ভ্যালিটিতে প্রায় ৬ শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে বাঘাইহাট বাজারে পাহাড়ি ঢলের পানি বাড়ায় সড়ক এবং বেইলি ব্রিজ তলিয়ে সাজেকের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকালে বাঘাইহাট থেকে কোনো গাড়ি সাজেকের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়নি এবং সাজেক থেকেও পর্যটকবাহী স্কট ছেড়ে আসেনি।

সাজেক জিপ সমিতির লাইনম্যান ইয়াসিন আরাফাত গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল মধ্যরাত থেকে বাঘাইহাট বাজার এবং মাচালং বাজারে ঢলের পানি বাড়তে শুরু করে। এই মুহূর্তে বাঘাইহাট বাজারে কোমর সমান পানি আছে। তাই সাজেক সড়কে কোনো যানবাহন চলছে না, ফলে গতকাল যে পর্যটকরা সাজেকে এসেছিলেন তারা ফিরতে পারেননি। খাগড়াছড়ি থেকেও কোনো গাড়ি সাজেকের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসেনি।

এবিষয়ে সাজেক মেঘপুঞ্জি রিসোর্টের ব্যবস্থাপক পুষ্প চাকমা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সাজেকে টানা বৃষ্টিপাত চলছে। আজও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টির কারণে খুব বেশি পর্যটক সাজেকে আসেননি। এই মুহূর্তে ৬ শতাধিক পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন। আজ এবং আগামীকাল যাদের অগ্রিম বুকিং ছিল সেগুলো আমরা রিফান্ড করে দিচ্ছি। বৃষ্টির কারণে পর্যটকরা বাইরে বেড়াতে পারছেন না। সবাই রিসোর্টের কটেজেই অবস্থান করছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার বলেন, টানাবৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সড়ক ও বাঘাইছড়ির বাঘাইহাট বাজার পানিতে ডুবে যাওয়ায় ৬ শতাধিক পর্যটক সাজেকে আটকা পড়েছে। তবে পানি নামতে শুরু করলে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের কারণে খাগড়াছড়ি সাজেক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।


সিলেট ও সুনামগঞ্জে আবার বাড়ছে পানি

নিম্নাঞ্চল প্লাবিত
ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৪ ১২:০৩
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার বাড়ছে এই দুই জেলার নদ-নদীর পানি। ইতোমধ্যে কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর এরই মধ্যে আগামী ৭২ ঘণ্টা সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে অতিভারী বৃষ্টির পূর্ভাবাস দিয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢলের কারণে সোমবার সকালেই সুরমা নদীর পানি সিলেটের কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া টানা কয়েক দিন কমার পর শনিবার থেকে কেবল কুশিয়ারা নদী ছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাকি সব নদ-নদীর পানিই বাড়ছে।

এদিকে, পানি বেড়ে সিলেটের গোয়াইনঘাট এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজার উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি উঠে বন্ধ হয়ে গেছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে যান চলাচল। উপর্যোপুরি এ বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার লোকজন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং এলাকার বাসিন্দা রাইসুর ইসলাম বলেন, ‘এক একমাসে ঘরে দুই বার পানি উঠেছে। প্রায় এক সপ্তাহ পরিবার নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলাম। তিন দিন আগেই মাত্র ঘরে ফিরেছি। এখনো সবকিছু গোছাতে পারিনি। এরই মধ্যে গতকাল সোমবার সকালে উঠানে পানি উঠে গেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে রাতের মধ্যেই ঘরে ঢুকে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘পানির কারণে খুব যন্ত্রণার মধ্যে আছি। যাযাবরের লাখান জীবন কাটাইলাম। আর ঘরে পানি ওঠার যে কী যন্ত্রণা তা যার ঘরে ওঠে একমাত্র সেই কইতে পারে।’

সিলেট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মূলত মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির কারণেই এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। চেরাপুঞ্জিতে ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত এ তিন দিনে ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত এ তিন দিনে আরও ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢলে এ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই উপজেলাবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। এ ছাড়া যেসব ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের সময় নষ্ট না করে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, উপজেলায় মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রাখা আছে।

রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, রোববার বিকেল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা সিলেট বিভাগের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া মেঘালয়েও আগামী ৭২ ঘণ্টা অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এর আগে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। রোববার সন্ধ্যায় বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৯০৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলায় ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ২১৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোক উঠেছেন। তবে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন নেই।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৬ মিলিমিটার। এদিকে সারারাত সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হওয়ার কারণে উজানের পানিতে সীমান্তের নিচু সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ছাতক পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া যাদুকাটা নদীর পানি ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।


banner close