বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

ফের সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা

ফাইল ছবি
সারা বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
সারা বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০২৪ ২০:২৩

সিলেটে আবারও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলো দ্বিতীয় দফায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৮ জুন) দুপুরে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।

জানা গেছে, এর আগে গত ৩০ মে বন্যা পরিস্থিতির কারণে প্রথম দফায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়করা। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে ফের বন্যা দেখা দেওয়ায় দ্বিতীয় দফায় পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধের ঘোষণা এলো।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া না পর্যন্ত সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে তলিয়ে গেছে সাদাপাথর, জাফলং, বিছানাকান্দিসহ প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।

এ বিষয়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, বন্যা পরিস্থিতির জন্য সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সেগুলো কার্যকর করা হয়েছে।

বিষয়:

সিলেটে বন্যায় কেবল সড়কেই ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমে উন্নতি হচ্ছে। জেলার বেশির ভাগ এলাকার রাস্তাঘাট থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। নদীর পানিও কমছে। এদিকে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সড়কের। ঢল ও পানিতে ভেঙে গেছে সড়ক। অনেক স্থানে সেতুও ভেঙে গেছে ঢলের তোড়ে। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট নগর, এলজিইডি এবং সড়ক ও সেতু বিভাগের আওতাধীন সড়কগুলোতে পানি উঠে প্রায় ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য ও কৃষি খাতে ক্ষতি তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। তবে পানি এখনো পুরোপুরি না নামায় ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র এখনই পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গতকাল বুধবার পর্যন্ত সিলেট জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ৭ লাখ ৮৪ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১২ হাজার ৪২৩ জন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় নগরের ২৫০ কিলোমিটার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, এখনো কিছু সড়কে পানি রয়ে গেছে। পানি পুরো নামলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বৃষ্টি মৌসুম শেষ হলেই জরুরি ভিত্তিতে এসব সড়ক সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা।

আর সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্য মতে, বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কে পানি উঠে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি।

সড়ক ও সেতু বিভাগের সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন বলেন, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাট উপজেলার সড়কের। এ উপজেলার দুটি সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হলে দ্রুত সংস্কার কাজ করে যান চলাচলের উপযোগী করা হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম ফারুক হোসেন বলেন, বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে গোয়াইনঘাট, সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলায়। যেসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সংস্কারের জন্য ডিপিপি চূড়ান্ত করে পাঠানো হবে।

এদিকে, চলতি বন্যায় সিলেটের ১৩ উপজেলার ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। জেলায় এবার আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ২০ হাজার ৪৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছিল।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, বন্যায় মোট ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে আমন ধান চাষিদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। অন্যদেরও প্রণোদনা দেওয়া হবে।

সিলেট জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দিঘি-খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রাণী বিশ্বাস বলেন, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জকিগঞ্জে। এ উপজেলার ছয় হাজার ৭৫৫টি পুকুর-দীঘি-খামারের মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে, গতকাল বুধবার সিলেটে নদ-নদীর পানি সমতল আরও কমেছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানি অমলসিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত মঙ্গলবারের তুলনায় প্রত্যেকটি পয়েন্টে পানি ৩ থেকে ১২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত কমেছে। আর ভারী বৃষ্টিপাত না হলে এসব নদীর পানি সমতল আগামী কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপর দিনভর আর বৃষ্টি হয়নি।

বিষয়:

ফেঞ্চুগঞ্জে পাহাড়িকা ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত

লাইনচ্যুত হওয়া বগি। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সিলেট ব্যুরো

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

আজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ফেঞ্চুগঞ্জের মাইজগাঁও-মোগলাবাজার সেকশনের কটালপুরে এ বগি লাইনচ্যুতর ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটির দুটি বগি রেললাইন থেকে পড়ে যায়। এসময় আতংকে ট্রেনের কয়েকজন যাত্রী লাফ দিয়ে পাশের খালে দিয়ে পড়েন। এতে কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন।

রাত সোয়া আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত লাইনচ্যুত বগি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটির যাত্রীরা।

দুর্ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম জানান, পাহাড়িকার দুর্ঘটনাকবলিত বগিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।


সীমান্তে আবারও বাংলাদেশি নিহত

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে নূরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার (২৬ জুন) ভোরে কালিগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি সীমান্তের ৯১৯নং মেইন পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত নুরুল ইসলাম জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচির দুলালী গ্রামের মৃত মইনুদ্দিনের ছেলে।

বিজিবি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার গভীর রাতে ৪-৫ জনের একদল বাংলাদেশি গরু পারাপারকারী জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার লোহাকুচি সীমান্তের ৯১৯নং সীমানা পিলার দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এ সময় ভারতের কোচবিহার জেলার সিতাই থানার ৭৮ বিএসএফের ওয়েস্ট চামটা ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নুরুল ইসলাম (৫৫)। এ সময় তার সহযোগীরা মরদেহ উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

খবর পেয়ে কালিগঞ্জ উপজেলার গোড়ল তদন্ত পুলিশ ফাঁড়ি মরদেহ উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসেন।

গোড়ল তদন্ত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল কাদের বলেন, খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।

লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি অধিনায়ক লে.কর্নেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। এই ঘটনায় বেলা ১১টায় ব্যাটলিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে প্রতিবাদ জানানো হবে।


যমুনা ঘাটে যত্রতত্র দোকান বিড়ম্বনার শিকার দর্শনার্থীরা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৬ জুন, ২০২৪ ১০:১৬
তাজুল ইসলাম, সারিয়াকান্দি (বগুড়া)

যমুনা নদীকে ঘিরে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এখানে কালীতলা গ্রোয়েন বাঁধ, প্রেম যমুনার ঘাট, ফিসপাস, হাসনাপাড়া গ্রোয়েন বাঁধসহ কুতুবপুর স্পার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ও পালা পার্বনে এসব পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনার্থীরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে আসেন। সম্প্রতি কালীতলা ঘাটে ‘আই লাভ সারিয়াকান্দি’ নামের আইকনটি দর্শনার্থীদের নজর কেড়েছে।

এদিকে পর্যটকদের কেন্দ্র করে এখানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিছু ভালো মানের হোটেলের পাশাপাশি নিয়ম-কানুন না মেনে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে দোকানপাট। ফলে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় দর্শনার্থীদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রভাবশালীরা রাস্তার দুই পাশ দিয়ে পাকা ও আধা পাকা বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছেন। এতে রাস্তাটি সংকুচিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন যানবাহন রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকায় যাতায়াতের পথ প্রায় সময়ই বন্ধ হয়ে থাকে।

এ ছাড়া স্পারের দুই পাশে কিছু অস্থায়ী দোকান গড়ে ওঠার কারণে দুই পাশ দিয়ে নদী দেখার কোনো উপায় নেই। স্বস্তির সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে পারেন না দর্শনার্থীরা। নিচে নেমে গিয়ে ব্লকের ওপর দাঁড়ালে নদীর সৌন্দর্য কিছুটা উপভোগ করতে পারেন।

বগুড়ার নারুলী এলাকার আতাউর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘সারা সপ্তাহ কর্ম-ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারিনি। তাই ছুটির দিন বেড়াতে এসেছি। কিন্তু বাঁধে উঠতে অনেক দোকান ও হোটেল রাস্তার দুই পাশ দিয়ে গড়ে উঠেছে। বাঁধের একেবারে এ মাথায় যে অস্থায়ী দোকানগুলো আছে, সেগুলোর চারপাশে এক দমবন্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।’

আরেক দর্শনার্থী কবির হোসেন ঢাকা থেকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। কালীতলা ঘাটের কথা শুনে দেখতে এসেছেন। অভিযোগ করে বললেন, এসেছিলেন প্রাকৃতিক পরিবেশে একটু সময় কাটাবেন, নদীতে পাল তোলা নৌকা দেখবেন, নৌকায় ভ্রমণ করবেন এই আশায়। কিন্তু প্রাকৃতিক পরিবেশ আর কোথায়? চারিদিকে শুধু দোকান আর দোকান। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে।

সারিয়াকান্দি উপজেলার স্থানীয় এক মাস্টার বলেন, আগে সকালে হাঁটতে বের হয়ে কালীতলায় আসতেন। এখন আর আসা হয় না। কারণ এখনকার পরিবেশ আর আগের মতো নেই। সারা দিন দোকানের ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখে দোকানিরা। সেগুলোর গন্ধে টেকা যায় না। তিনি চান, এ জায়গাটা আবার আগের মতো হোক। সবাই যেন এখানে এসে বুকভরে নিশ্বাস নিতে পারে।

কালীতলা ঘাটের এক অস্থায়ী দোকানির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখানে দোকান করলে দিনে ৫০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। জহুরুল নামের এক লোক এ টাকা তোলেন। টাকা না দিলে এখানে দোকান করতে দেবেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির বলেন, ওখানে অবস্থিত সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যদি তারা নিজের থেকে এসব দোকান না সরিয়ে নেয়। তাহলে সরকারিভাবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ফেলা হবে। আরও আগেই উচ্ছেদ করা হতো। ঈদের ছুটির কারণে একটু বিলম্ব হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, এ জায়গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের, তারা যদি উপজেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চায় তাহলে সহযোগিতা করা হবে।


রৌমারীতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুর্ভোগ

রৌমারীতে পানি বাহিত রোগে হাসপাতালে ভর্তি শিশু ও বৃদ্ধরা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৫ জুন, ২০২৪ ১৭:৩৬
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। বন্যায় কাঁচাপাকা রাস্তা ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। গতকাল সোমবার বন্যাকবলিত এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এসব চিত্র।

জানা গেছে, ভারতের আসাম প্রদেশে হাটশিংগিমারী জেলার মানকারচর থানা এলাকা দিয়ে বয়ে এসেছে কালো নদী। ভারতের পাহাড়ি ঢলে এ কালো নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেশের কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার পূর্বাঞ্চলে জিঞ্জিরাম নদীতে মিলিত হয়। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়েও ভারতীয় পাহাড়ি ঢল নেমে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।

গত সপ্তাহে টানা বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলে বন্যা হয়। বন্যার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

গত তিন দিন ধরে বন্যার পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে জনদুর্ভোগ। বন্যার পানির স্রোতের কারণে অধিকাংশ কাঁচাপাকা রাস্তা ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশাশাশি যানবাহন চলাচলে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যেতে পারছে না স্কুলে। বন্যার পানিতে তলিয়ে পাট, আউশ ধান, তিল, শাক-সবজি ও মরিচ নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।

অন্যদিকে পানি কমতে থাকায় তীব্র স্রোতের কারণে প্রায় ১২০টি পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধির শুরুতেই কয়েকটি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়। বর্তমানে ওই পরিবারগুলো অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ-সহায়তা দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। এদিকে বালিয়ামারী বর্ডার হাট ও চর নতুন বন্দর স্থলবন্দরের পানি নিচে নেমে গেলেও সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বন্যার পানিতে বেশ কিছু পুকুর তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উপজেলা মৎস্য অফিসের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

নদীভাঙন এলাকাগুলো হচ্ছে- উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের জিঞ্জিরাম নদীভাঙনের শিকার বকবান্দা বেপারিপাড়া ও খেওয়ারচর, রৌমারী সদর ইউনিয়নের চুলিয়ারচর ও বড়াইবাড়ী, চরশৌলমারী ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদের সোনাপুর, চরগেন্দার আলগা, ঘুঘুমারীসহ কয়েকটি গ্রাম। এসব এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি তারা রিলিফ চায় না, চায় নদীশাসন। পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি ও কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধরা।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ‘হঠাৎ বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। এ নিয়ে জেলা মিটিংয়ে কথা বলব।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন পুকুরের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পানেননি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান খান বলেন, পানিবাহিত রোগ শুরু হয়েছে। প্রতিদিন শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। খাবার স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধ মুজত রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে, কয়েক দিনের মধ্যেই পানি শুকিয়ে যাবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে এবং তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান বলেন, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সরেজমিনে গিয়েছি এবং এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।


কালুরঘাট সেতুতে চালু হলো দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে

কালুরঘাট সেতুতে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২৫ জুন, ২০২৪ ১০:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতুতে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে পথচারীদের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে চলাচলকারী মানুষ নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি নদীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আসা-যাওয়া করতে পারবেন।

সড়ক পথের কাজও শেষের পথে, তাই এ নিয়েও আর বেশি দিন অপেক্ষায় থাকতে হবে না। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘আমরা বুয়েটের পরামর্শে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজটি শেষ করেছি। সেতুর দক্ষিণ পাশ দিয়ে বিশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত ছয় ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে দিয়ে উভয় দিক থেকে পথচারীরা চলাচল করতে পারবেন।’

প্রধান প্রকৌশলী জানান, আগামী জুলাই মাসে সড়ক পথটিও খুলে দেওয়া হতে পারে। রেললাইনের মধ্যে কার্পেটিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, সেতুর উভয় অংশে আট ফুট উচ্চতার ব্যারিয়ার দেওয়া হবে। আগে সেতুর ওপর কার্পেটিং থাকলেও সেতুর পাটাতন নষ্ট হয়ে যেত। সেতুতে পানি জমে থাকত বলে সেতুর লোহার উপকরণগুলোতে মরিচা ধরে যেত। এবার আর তেমন হবে না। রেললাইনের ফাঁকের নিচে একটি প্লাস্টিকের পাইপ রেখেছি। পানি এ পাইপ দিয়ে নদীতে চলে যাবে।

অন্যদিকে রেললাইন অংশে সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার রেলিং রয়েছে। এতে ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় রেললাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে কিন্তু পথচারীদের চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। সাইকেল বা মোটরবাইক নিয়ে যাতে মানুষ ওয়াকওয়েতে যেতে না পারে, সে জন্য সেতুর উভয় দিকে তিনটি করে সিঁড়ি দেওয়া হয়েছে। তবে সাইকেল নিয়ে ওয়াকওয়ে পার হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে বলে জানায় সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এই রেললাইন। ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতুটি ২০০১ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুতে বড় ধরনের সংস্কারকাজ করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করেছিল রেলওয়ে। কিন্তু সেতুটি পুনরায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে।

এতে সেতুটির ওপর দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়াগামী গাড়িও চলাচল করত। সেতুটি ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর ১ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বরে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে বিশেষজ্ঞ পরাপর্শ দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। সংস্কারকাজের পর গত ডিসেম্বরে প্রথম ধাপের সংস্কারের পর সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়।


বন কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়

এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৫ জুন, ২০২৪ ০৫:২৫
খোরশেদ আলম, বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী)

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদ। ঘুরেফিরে নিজ জেলায় চাকরি করছেন ৩৫ বছর ধরে। উপজেলা বন কর্মকর্তা হয়ে কিনেছেন কয়েক কোটি টাকার জমি ও প্লট, তুলছেন ভবন, করেছেন সরকারি খাল দখল। নিজের নানা অপকর্ম চাপা রাখতে সামাজিক বনায়নের কমিটিতে রেখেছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিদের। বনায়নের উপকারভোগীদের অর্থ বিতরণের ক্ষেত্রেও করেন নয়-ছয়। নিজের মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইকে উপজেলা বন অফিসের নৌকাচালক হিসেবে চাকরি দিয়ে বেতন তুলছেন নিজেই। এ ছাড়া নিজ এলাকার সংখালঘু সম্প্রদায়ের জমি জোর করে রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার কালিকাপুর বাজার এলাকায় পৈতৃক ভিটা সামছুদ্দিনের। এলাকায় তাকে সবাই চেনে ‘বন সামছু’ নামেই। ১৯৯০ সাল থেকে কর্মরত আছেন নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার বন কর্মকর্তা হিসেবে। বর্তমানে তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার বন কর্মকর্তার পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে রয়েছেন সোনাইমুড়ী ও সেনবাগের বন কর্মকর্তার দায়িত্বে। দীর্ঘ চাকরি জীবনে কখনো সোনাইমুড়ী, কখনো সেনবাগ, কখনো বেগমগঞ্জ উপজেলার বন কর্মকর্তা হিসেবে সময় পার করেছেন। সাধারণত সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ জেলায় চাকরির সুযোগ না থাকলেও সামছুদ্দিনের বেলায় যেন ভিন্ন নিয়ম।

অনুসন্ধানে জানা যায়, একজন উপজেলা বন কর্মকর্তার মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে তা দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার। এই বেতনেই সামছুদ্দিন নিজ এলাকা কালিকাপুরে কিনেছেন ২২ ডিসিম জমি। বগাদিয়া-কালিকাপুর বাজার-সংলগ্ন সড়কের পাশে কিনেছেন প্রায় ৩০ ডিসিম জমি, যার বর্তমান মূল্য কয়েক কোটি টাকা। সেই জমির রাস্তা তৈরি করতে করেছেন সরকারি খাল দখল। কালিকাপুরের পৈতৃক জমিতে তুলছেন আলিশান দ্বিতল ভবন। বসবাস করছেন মাইজদী শহরের দীঘিরপাড় আবাসিক এলাকার বিলাসবহুল আপন নিবাস নামে একটি ফ্ল্যাটে। আর সেই ফ্ল্যাটের পাশেই কিনেছেন কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্লট। তবে ওই জমিতে ব্যবহার করেছেন নিজের শ্বশুরের নামে ব্যানার।

উপজেলার বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের একটি মানসিক প্রতিবন্ধী ভাই রয়েছে যার নাম মো. মহিন উদ্দিন। তিনি গত ২০ বছর থেকে কাগজে-কলমে বেগমগঞ্জ উপজেলা বন অফিসের নৌকাচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তবে তাকে কখনো অফিসে আসতে দেখেননি ওই উপজেলা বন অফিসের অন্য কর্মচারীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানসিক প্রতিবন্ধী বড় ভাই মহিন উদ্দিন অধিকাংশ সময় সামছুদ্দিন আহমেদের বেগমগঞ্জের ভাড়া বাসাতেই থাকেন। আর প্রতি মাসে তার বেতন তোলেন সামছুদ্দিন নিজেই।

সামছুদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, নিয়ম-বহির্ভূতভাবে সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ, মামলার ভয় দেখিয়ে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।

জানা যায়, গত বছরের মে মাসে সোনাইমুড়ীর বজরা ইউনিয়নের ছনগাঁও এলাকার আব্দুল মতিনের ছেলে নূর নবী শিপন ও আব্দুল গফুরের ছেলে শাহ আলম সামাজিক বনায়নের প্রায় ২০টি গাছ কেটে ফেলেন। অবৈধভাবে গাছ কাটার বিষয়টি বনপ্রহরী সাইফুল ইসলাম ও শরিফকে জানায় ওই এলাকার সামাজিক বনায়নের সভাপতি আবুল কাশেম। ঘটনাটি জানার পর সোনাইমুড়ীর ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি অবৈধভাবে গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেন।

এ ঘটনার বিষয়ে বনপ্রহরী লিপন বলেন, যে দিন গাছ কাটে ওই দিন সন্ধ্যায় সামাজিক বনায়নের সভাপতি কাশেমের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। ওখানে প্রায় ২০টি গাছ কাটা হয়। তবে ঘটনাস্থলে ছিল মাত্র দুই-তিনটি গাছের অংশ ও কিছু ডালপালা। পরের দিন সামছুদ্দিন স্যার আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে শিপনকে বকাবকি করেন, মামলার ভয় দেন। পরে বদলকোটের বাহারসহ (নোয়াখালী-২ আসনের এমপি মোরশেদ আলমের শালা) অন্য নেতাদের ধরে সবকিছু ধামাচাপা দেওয়া হয়। স্যার প্রথমে মামলার ভয় দেয় পরে ম্যানেজ হয়ে যান।

জানা যায়, গত বছরের আগস্ট মাসে সেনবাগের কাদরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়ার নির্দেশে হিজলী গ্রামের সামাজিক বনায়নের প্রায় ৫০টি গাছ কেটে ফেলেন ইউপি মেম্বার পলাশ। বিষয়টি জানতে পেরে সেনবাগ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও গাছ কর্তনকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে অভিযুক্তদের জিম্মায় গাছ দিয়ে এসেছেন।

এ ঘটনা স্বীকার করেছেন সেনবাগ উপজেলার বনপ্রহরী মো. আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, ‘উনি অফিসে আসেন মাসে একবার। কখনো দুই মাসে একবার আসেন। দুষ্কৃতকারীরা ৫০টি গাছ কেছে ফেলেছিল। সামসুদ্দিন স্যার এসে গাছ জব্দ করেন। পরে মামলা না দিয়ে যে গাছ কেটেছে তার জিম্মায় গাছ দিয়ে এসেছেন।’

এ ছাড়া সোনাইমুড়ী সতের মাইল এলাকায় গত দুই বছরে সামাজিক বনায়নের প্রায় ১৫টি গাছ উধাও হয়ে গেছে। পৌরসভার বর্জ্যের আগুনে জীবন্ত গাছগুলি পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তবে সেসবে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বন কর্মকর্তা সামসুদ্দিন। উল্টো ওই ঘটনায় নোয়াখালীর একটি স্থানীয় পত্রিকায় ‘সামাজিক বনায়নের গাছ উধাও, জানে না বন কর্মকর্তা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে ওই সাংবাদিককে নানাভাবে হেনস্তা করেন সামসু।

উপজেলার বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের দায়িত্বে থাকা সোনাইমুড়ী-সেনবাগ-বেগমগঞ্জ উপজেলার সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। লভ্যাংশ বণ্টনেও ঘটেছে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের অর্থনৈতিক, বাস্তুসংস্থানিক ও সামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সামাজিক বনায়নের কর্মসূচি হাতে নিলেও সেই সুফল পাচ্ছে না এই তিন উপজেলার অসহায় মানুষ।

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি নিজ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্বপালনের বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রতিবন্ধী ভাই বন বিভাগে কর্মরত এবং তিনি যে ডিউটি করেন না সে বিষয়টিও স্বীকার করেন সামছুদ্দিন। অন্যান্য অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে অনেক শত্রু রয়েছে। শত্রুরা প্রতিবেদককে ভুল তথ্য দিচ্ছে।

এ বিষয়ে নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। বন কর্মকর্তা এ এস এম সামছুদ্দিন আহমেদের দীর্ঘদিন নোয়াখালী জেলায় চাকরির বিষয়টি তিনি স্বীকার করেছেন। তবে সামছুদ্দিনের ভাই মহিন উদ্দিন নৌকাচালক পদে যে চাকরি করছেন, সে তথ্য জানা নেই বিভাগীয় বন কর্মকর্তার। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীর কমিটি গঠনে অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন বলেও জানান তিনি।


বুড়িচংয়ে ফকির আব্দুস সালামের (রহ:) ৪৮তম বার্ষিক ওরুছ-মাহফিল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার আনন্দপুরে অবস্থিত হজরত শাহসূফী ফকির আব্দুস সালামের (রহ:) ৪৮তম বার্ষিক ওরুছ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুনবার (২২ জুন) দিবাগত রাতে মাজার মসজিদ প্রাঙ্গণে ওরুছ-মাহফিলটি সম্পন্ন হয়।

মাজার ও খানকা শরীফ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওরুছ মাহফিলে প্রধান আকর্ষণ ছিলেন, কুমিল্লা শাহপুর দরবার শরীফের পীর হজরত শেখ শাহজাদা গোলাম মো. আব্দুল কাদের কাওকাব।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আখলাক হায়দার, আব্দুল করিম চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী নজির আহমদ,হাজী জালাল উদ্দিন, তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মো. আমজাদ হোসেন।

মো. গোলাম হাসান আল কাদরী ও মো. শাহজাহান এর উপস্থাপনায় উক্ত ওরুছ মাহফিলে প্রধান বক্তা ছিলেন, বুড়িচং নজরুলিয়া দরবার শরীফের বড় সাহেবজাদা মাও. মো. শেখ সাদী আবদুল্লাহ সাদকপুরী।

বিশেষ বক্তা ছিলেন, মাও. মো. আবু সাঈদ নঈমী আত্ম তাহেরী,বরুড়া। তাকরির পেশ করেন, আলহাজ্ব মাওলানা মো. মিজানুর রহমান, মাও. কাজী মো. আল ইমরান, মাও. মো. মুমিনুল ইসলাম, মাও. মো. এমদাদুল হক ফারুকী, মাও. মুফতি এম ফাহাদ হোসাইন, হাফেজ শওকত আহমদ, মাও. কাজী মো. নজরুল ইসলামসহ আরও অনেকে।

উক্ত ওরুছ মাহফিলটি ২২জুন, শনিবার বাদ আছর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলে। পরে মিলাদ কিয়াম, মোনাজাত ও তাবারুক বিতরণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় ।


বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে নিহত ৯, নিখোঁজ ১

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২২ জুন, ২০২৪ ১৯:০৮
বরগুনা প্রতিনিধি

বরগুনার আমতলীতে বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাস সেতু ভেঙে খালে পড়ে ডুবে গেছে। এ ঘটনায় উদ্ধারকৃত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯ জন হয়েছে এবং এখনও ১ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

আজ শনিবার (২২ জুন) দুপুর ২টার দিকে হলদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু।

জানা যায়, দুপুরে হলদিয়া ইউনিয়নের ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে একটি বরযাত্রীবাহি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পার হওয়ার সময় ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে যায়। এ সময় অটোরিকশার যাত্রীরা বের হয়ে এলেও মাইক্রোবাসের যাত্রীরা বের হতে পারেনি। এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া চারজনকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

স্থানীয় হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক জানান, আমতলী পৌর শহরে হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের মনির হাওলাদারের মেয়ের বিয়ে। দুপুরে মনির হাওলাদারের নিকট আত্মীয়রা একটি মাইক্রোবাস ও একটি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইককে চেপে মেয়ের জামাই বাড়ি বৌভাতে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্রীজ নির্মাণ যে ঠিকাদার অনিয়ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরগুনা-১ আসনের সাংসদ গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, নিহতের স্বজনদের হাসপাতালে সমবেদনা জানিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনাস্থলে বিক্ষুদ্ধ মানুষকে শান্ত করেছি।

তিনি আরও বলেন, ব্রীজ নির্মাণে অনিয়মের কারনে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিহতের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করা হবে।

আমতলী থানার ওসি কাজী শাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, নিহতদের মধ্যে ৯ জনকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন নারী ও দুইজন শিশু। গাড়িটিতে আরও দুইজন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে একজনের লাশ পাওয়া গেছে। বাকিদের নিখোঁজের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে।

ঘটনাস্থলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য উপস্থিত হয়েছেন।


সিলেটে নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি, তীব্র ভাঙন যমুনার দুই পাড়ে

বন্যায় প্লাবিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২২ জুন, ২০২৪ ১৩:৪৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

৫ দিন পর সিলেটের আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। গতকাল সকালে রোদের দেখা পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার বানভাসি মানুষ। বৃষ্টি না হওয়ায় এবং উজানের ঢল না নামায় গতকাল সিলেট অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। তবে নদীগুলো এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি কমছে ধীরে। তবে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। গতকাল শুক্রবার পানিবন্দি মানুষের তথ্য নিশ্চিত করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন জানায়, দ্বিতীয় দফার বন্যায় সিলেটে ১০ লাখ ৪৩ হাজার ১৬১ জন মানুষ পানিবন্দি। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৯টি ওয়ার্ডে বন্যাদুর্গত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ৭১৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন ২৮ হাজার ৯২৫ জন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যে আরও জানা যায়, জেলার ১৫৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৩৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০২টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর উপজেলা।

গতকাল শুক্রবার বেলা ১২টা পর্যন্ত সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দেওয়া তথ্যমতে, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও আগে থেকে অনেকটা কমেছে পানি।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। একইভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও কোনো বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া যায়নি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, শুক্রবার দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে ৫৫ সেন্টিমিটার ও শেওলা পয়েন্টে পানি ৫ সেন্টিমিটার এবং একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০৩ ও শেরপুর পয়েন্টে ২০ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, নতুন করে বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢল না হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।

তবে অনেকে অভিযোগ করছেন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ সহায়তা মিলছে না। পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কাও বাড়ছে। এছাড়া দেখা দিয়েছে সাপের উপদ্রব।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ৬০০ মেট্রিক টন চাল দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতাও চলমান।

হবিগঞ্জে রাস্তা ভেঙে ঢুকছে পানি, ভেসেছে ১০ সড়ক

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে হবিগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে নবীগঞ্জ, মাধবপুর, লাখাই ও আজমিরীগঞ্জের বেশ কিছু গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খোয়াই নদীর পানি কমতে শুরু করায় হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। অন্যদিকে নবীগঞ্জ উপজেলায় কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ১০টি পাকা সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক। নতুন করে দক্ষিণ কসবা গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা জানায়, খোয়াই নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে কুশিয়ারা নদীর পানি। কুশিয়ারার পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২১, বানিয়াচংয়ের মার্কুলি পয়েন্টে ৩৩ ও আজমিরীগঞ্জে ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরে উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচে নবীগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করতে থাকে। এতে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনগর, উমরপুর, মোস্তফাপুর, দক্ষিণগ্রাম, পাঠানহাটি, মনসুরপুর, দরবেশপুর, দিঘীরপাড়, নোয়াগাঁও, চন্ডিপুর, প্রজাতপুর, লামলীপাড়, দীঘলবাক ইউনিয়নের রাধাপুর, ফাদুল্লাহ, দুর্গাপুর, মথুরাপুর, হোসেনপুর, মাধবপুর, পশ্চিম মাধবপুর, গালিমপুর, আউশকান্দি ইউনিয়নের পাহাড়পুর, পারকুল, উমরপুর, দীঘর ব্রাহ্মণগ্রাম, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর, চরগাঁও, বড় ভাকৈর (পূর্ব), করগাঁও, কালিয়াভাঙ্গা, দেবপাড়া ও কুর্শি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ১০টি পাকা সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে পানি। ফলে মানবেতর অবস্থায় জীবনযাপন করছে সাধারণ মানুষ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এমন অবস্থায় বন্যাকবলিতরা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছে। ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতে প্রায় ৩০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি খাদ্য সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর দীঘলবাক ইউনিয়নের দক্ষিণ কসবা গ্রামের পাকা সড়ক ভেঙে দ্রুতগতিতে বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। এতে মানুষ আতঙ্কে উৎকণ্ঠায় জীবনযাপন করছে।

বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ইনাতগঞ্জে অবস্থিত শেভরন পরিচালিত এশিয়া মহাদেশের অন্যতম গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানা ও পারকুলে অবস্থিত কুশিয়ারা নদী ঘেঁষা বিবিয়ানা ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে। বিবিয়ানা গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ৪-৫ ফুট নিচে বর্তমানে পানি রয়েছে। তবে দ্রুতহারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসক্ষেত্রে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

যমুনার পানিতে তলাচ্ছে ফসলি জমি, ভাঙছে ঘরবাড়ি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনাসহ সব কটি নদীতে পানি বাড়ছে। ফলে শুরু হয়েছে নদীপাড়ে ভাঙন। বিগত ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল সেটিও হারানোর আশঙ্কায় চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন নদীপাড়ের শত শত ভাঙনকবলিত মানুষ।

ইতোমধ্যে চর ও নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুতগতিতে পানি বাড়ার কারণে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। একদিকে ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার পাশাপাশি বন্যা আতঙ্ক বিরাজ করছে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে।

গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭১ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ২৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ দশমিক ৯ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকভাবে পানি বাড়ায় শাহজাদপুরের জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। কয়েক দিনের ব্যবধানে দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাঙনকবলিতরা।

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, শাহজাদপুরের জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা ভয়াবহ ভাঙনে হাজার হাজার মানুষ ঘরবাড়ি-জমি হারিয়েছেন। অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, রাস্তাঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন ও প্রতীক্ষার পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে দ্রুত কাজ সম্পন্ন হচ্ছে না। ফলে আবার ভাঙনের কবলেই পড়েছে এসব অঞ্চল। চলতি মৌসুমে জালালপুর ও কৈজুরী ইউনিয়নের শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। নদীতে সব কিছু হারিয়ে বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত এসব মানুষ।

একই উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামের কৃষক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘চরের জমিতে চাষাবাদ করে সারা বছর চলতে হয়। প্রত্যেক বছর বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। এক বিঘা জমিতে তিলের আবাদ করেছি। এখন দেখি পানি বাড়ছে। এভাবে পানি বাড়লে ৪-৫ দিনের মধ্যে জমি তলিয়ে যাবে।’

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘এই মুহূর্তে চরের জমিতে তিল ও পাট চাষ করা রয়েছে। কয়েক দিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সব সময় খোঁজখবর রাখছি। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডান তীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণকাজ চলছে। কাজের মেয়াদ যদিও চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। তবে কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’

বিষয়:

বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে চাপ বেড়েছে ঢাকাগামী যানবাহনের

ঈদের ছুটি শেষে স্বস্তিতে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ
ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। ছবিটি গতকাল বিকেলে মহাসড়কের সরাতৈল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২২ জুন, ২০২৪ ১২:২৯
ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)

স্বজনদের সঙ্গে ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে ফের কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গের মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহনের চাপ। বাড়ি যাওয়ার পথে কখনো যানজট, কখনো ভোগান্তি, আবার কখনো স্বস্তিও ছিল। তবে ফেরার সময় ব্যাপক স্বস্তি অনুভব করেছেন কর্মজীবীরা।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেলস্টেশন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব টোলপ্লাজা থেকে হাতিয়া পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ছিল। তবে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করছে। কোথাও যানবাহনের যানজট ছিল না। অন্যদিকে অসংখ্য ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল চলাচল করছে।

কর্মস্থলে যাওয়ার পথ স্বস্তিদায়ক হলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার দিকে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এলাকাভিত্তিক চলাচলকারী তিন চাকার পরিবহনগুলো। বিশেষ করে ভাড়ায়চালিত সিএনজি চালকরা কয়েক গুণ ভাড়া আদায় করছে। এতে করে হয়রানি ও অস্বস্তি প্রকাশ করেন কর্মজীবীরা।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ভূঞাপুরের মোতালেব মিয়া। তিনি বলেন, ছুটি শেষ, শনিবার সকাল থেকে অফিস। তাই আজই চলে যেতে হচ্ছে। কিন্তু সেতু পূর্ব থেকে গাজীপুর চন্দ্রা পর্যন্ত ভাড়া চাচ্ছে ৫০০ টাকা। কী আর করার, যেতে হবেই। স্বাভাবিকের তুলনায় ৩০০ টাকা বেশি। তবে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও কোনো যানজট দেখতে পাচ্ছি না।

কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী দেশ ট্রাভেলের চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ছুটছে মানুষ। ঈদের আগে মহাসড়কের সেতু পূর্ব থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলমান থাকায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় ফিরতে পথে এই অংশে কোনো ধরনের যানজট নেই। তবে মহাসড়কে কিছু কিছু এলাকায় ধীরগতিতে চলাচল করতে হচ্ছে। তা ছাড়া স্বস্তিতেই গাড়ি চালাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ছুটছে মানুষ। মহাসড়কে ঢাকা ও উত্তরবঙ্গগামী সব যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলছে। এ ছাড়া মহাসড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিকভাবে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল জানান, দুপুরের পর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঢাকামুখী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সেতু পূর্ব ও পশ্চিমে ২৪ হাজার ৯৭৩টি যানবাহন পারাপার হয়েছে এবং বিপরীতে ১ কোটি ৭১ লাখ ২৭ হাজার ৬৫০ টাকা টোল আদায় করা হয়।


কুড়িগ্রামে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

আপডেটেড ২২ জুন, ২০২৪ ১০:৪৩
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

কুড়িগ্রামে তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীসহ ১৬ নদীর পানি প্রতিদিনই বেড়ে চলছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। শুক্রবার তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার এবং ধরলার পানি ফুলবাড়ির শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

শুক্রবার কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রাফসান জানি জানান, বিকাল ৩টায় দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে পানি সামান্য কমে এখন বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি ২৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি ফুলবাড়ি উপজেলার শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে অন্য সব নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে নদীর পানি বাড়ার কারণে তিস্তা ও ধরলা নদীসহ অন্যান্য নদনদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন কাঁচা সড়ক। অনেকেই নৌকা এবং কলাগাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করছে।

ডুবে গেছে বাদাম, পাটক্ষেত, ভুট্টা, মরিচ ও শাক-সবজি ক্ষেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল। এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষ পড়েছেন বিপাকে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, দুর্যোগ কবলিত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। পানিবন্দি প্রায় ২০ হাজার মানুষ। একই সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলাপর্যায়ে ১৪৪ মে. টন জিআর চাল এবং নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তা বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে ঢাকা থেকে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ১০ লাখ টাকা, ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং ৫০০ মে. টন চাল।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ওয়েস্ট রিজিওন) এ কে এম তাহমিদুল ইসলাম উলিপুরের বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেন, ‘একদিকে বন্যা আবার আর একদিকে নদীভাঙন এ জেলার জন্য দুর্ভাগ্য। এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদীর সবই ভাঙনপ্রবন। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার বিধ্বংসী ভাঙনপ্রবন। নদীভাঙন প্রতিরোধে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিরসনে কি কি উদ্যোগ নেওয়া যায় তা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিবেচনা করবে।’


আতঙ্ক ছড়াচ্ছে রাসেলস ভাইপার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২২ জুন, ২০২৪ ০৮:০৮
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় রাসেলস ভাইপার সাপ যেন এক নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাস ধরে এই বিষধর সাপটি নিয়ে ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে নেতিবাচক খবর দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও এই সাপের কারণে মানুষ মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। যে সাপ চরাঞ্চলসহ জনমানবহীন এলাকায় থাকার কথা, সেই সাপ লোকালয়ে বেশি দেখা যাওয়ার খবরে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে বলে অনেকেই উল্লেখ করেছেন। কয়েক দিন আগে ভোলার এক বাড়িতে রাসেলস ভাইপারের বসবাস করার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থচ্যানেলের দুর্গম চরে বিষধর রাসেলস ভাইপার সাপের কামড়ে একজন কৃষকের মৃত্যর খবর পাওয়া গেছে। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া কৃষকের নাম হোসেন বেপারী (৫১)। তিনি সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পরেশউল্লা ব্যাপারীর ছেলে।

এদিকে জেলার পার্শ্ববর্তী ডিক্রিরচর ইউনিয়নে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুদিনে দুটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পেয়ে সেগুলো পিটিয়ে মেরেছে গ্রামবাসী।

শুক্রবার সকালে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের আইজউদ্দীন মাতুব্বরের ডাঙ্গি গ্রামে ক্ষেতে কাজ করার সময় একটি রাসেলস ভাইপার সাপ দেখতে পান ওই গ্রামের তোতা মোল্লার ছেলে মুরাদ মোল্লা (৪৫)। মুরাদ মোল্লা বলেন, সকালে বাদামের জমিতে কাজ করার সময় সাপটি নজরে পড়ে। এরপর লাঠি এনে তিন-চারটি বাড়ি মেরে সাপটি মেরে ফেলি।

এর আগের দিন (বৃহস্পতিবার) ওই গ্রামের হারুন শেখের ছেলে ইউসুফ আরও একটি রাসেলস ভাইপার সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলেন বলে জানান।

সম্প্রতি বিষাক্ত সাপ রাসেলস ভাইপারকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, এসব নাকি গুজব। কেউ আবার এই সাপ মারতে পারলে পুরস্কারও ঘোষণা করেছেন। সব মিলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ মারতে পারলে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে শহরের রাসেল স্কয়ারে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ইশতিয়াক আরিফ তার বক্তব্যের একপর্যায়ে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) সাপ নিয়ে বলেন, ফরিদপুর কোতোয়ালি এলাকায় কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ মারতে পারেন তাহলে তাকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া জানান, যেকোনো বন্যপ্রাণী নিধন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। রাসেলস ভাইপার এ দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পরে ২০১৪ সাল থেকে আবার সাপটির দেখা যাচ্ছে। এ সাপের বংশবৃদ্ধির হার বেশি। একবারে একটি মা সাপ ৬০-৭০টি বাচ্চা দেয় এবং প্রায় সবকটি বাচ্চা বেঁচে যায়। এ সাপ সাধারণত চর এলাকায় থাকে। এদের খাবার ব্যাঙ ও ইঁদুর।

তিনি আরও বলেন, ‘পুরস্কারের এ ঘোষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কেউ যদি রাসেলস ভাইপার সাপ ধরতে অথবা মারতে গিয়ে সাপের কামড়ে মারা যান, তাহলে এর দায় কে নেবে?’

জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বেড়ে যাওয়া মারাত্মক বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারের উপদ্রবে ও দংশনে বাড়ছে মৃত্যুও। বিশেষ করে ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহীসহ পদ্মা নদী-তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।

পদ্মা-তীরবর্তী মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা। এই এলাকার মূল ভূখণ্ড থেকে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে যেতে হয় নৌকায়, সময় লাগে ১ ঘণ্টা। এই চরেই জেঁকে বসেছে রাসেলস ভাইপারের আতঙ্ক। কেননা গত ৩ মাসে এই সাপের কামড়ে মারা গেছেন ৫ জন। স্থানীয়রা পিটিয়ে মেরেছেন অন্তত ৩৫ থেকে ৪০টি সাপ।

ভুক্তভোগীর একজন স্বজন জানান, তার বোনজামাই ভুট্টা আনতে গিয়ে সাপের কামড় খান। সেই সাপটি রাসেলস ভাইপার ছিল। পরে তার বোন জামাইকে ফরিদপুর মেডিকেলে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ১০টি ভ্যাকসিন দিলে বিষ নামেনি। পরে ঢাকায় আনার পথে তার বোন জামাইয়ের মৃত্যু হয়।

শুধু মানিকগঞ্জ নয়, ফরিদপুর জেলার পদ্মা তীরবর্তী চরাঞ্চলেও দেখা মিলছে রাসেলস ভাইপারের। ফলে আতঙ্কে চরে কৃষি কাজ করতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

কৃষকরা জানান, এই সাপের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ কৃষকরা আতঙ্কে জমিতে কাজ করতে পারছেন না। সব সময় তাদের ভয়ের মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। যাকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও পদ্মা-তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় আবারও দেখা মিলছে বিষধর এই সাপের। গবেষকরা বলছে, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে স্বভাব পরিবর্তন করছে রাসেলস ভাইপার।

সাপ ও সরীসৃপ গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন বলেন, সঠিক সার্ভে না করেই বাংলাদেশ থেকে রাসেলস ভাইপার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সাপটি টিকে ছিল। পরবর্তীতে গঙ্গা হয়ে পদ্মা দিয়ে ২০০৯-১০ সালে ভেসে এসে পদ্মার চরাঞ্চলে অবস্থান নেয়। তারা বংশ বিস্তার করে এবং বন্যায় এগুলো বিভিন্ন জেলায় ভেসে যায়। বর্তমানে এই সাপ দেশের ২৮টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য সাপ যেমন পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে সেখানে এই সাপগুলো এটা করে না। এ ধরনের সাপগুলোর কাছাকাছি যখন মানুষ চলে আসে তারা শব্দ করতে থাকে আবার যখন তার রেঞ্জে মানুষ চলে যায় তখনই আতঙ্কিত হয়ে কামড় দিয়ে বসে।

চন্দ্রবোড়া সাপের দেখা মিলছে যেসব এলাকায়, সেখানকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানালেন, সংকট আছে অ্যান্টি ভেনমের। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যান্টি ভেনেমের কোনো সংকট নেই।

স্বাস্থ্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই সাপগুলোর প্রভাব আগে ছিল না। ভারত থেকে এসেছে বলেই এটি বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের কাছে রাসেলস ভাইপারের যে ন্যাচারাল ক্যারেক্টার আছে এখন এই ক্যারেক্টার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। ফলে যে অ্যান্টি ভেনম আমরা পুশ করি, সেটি এখন কার্যকর হচ্ছে না।

ছোবল দিলে কী করতে হবে

প্রায় ৪০০০-এর বেশি সর্প দংশনের রোগীর চিকিৎসা দেওয়া ডা. ফরহাদ উদ্দীন হাসান চৌধুরী। এই সাপে ছোবল দিলে কী করতে হবে তা তিনি তার এক পোস্টে লেখেন-

বাংলাদেশের প্রধান ৩টি বিষাক্ত সাপ হলো গোখরা (কোবরা), কেউটে (ক্রেইট) এবং রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া। রাসেলস ভাইপার অপেক্ষাকৃত বেশি বিষধর। অতিসম্প্রতি এই সাপটির প্রকোপ বেড়ে গেছে। তবে এই সাপটি নিজ থেকে তাঁড়া করে কাউকে দংশন করে না। মূলত অসাবধানতাবশত কেউ এই সাপের গায়ে পাড়া দিলে এই সাপটি ছোবল দেয়।

তিনি বলেন, এই সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মূলত শরীরের রক্ত পাতলা হয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বতঃস্ফূর্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে, কিডনি বিকল হতে পারে, স্নায়ু অবশ হয়ে ফুসফুসের কার্যকারিতা হারিয়ে যেতে পারে এমনকি হার্ট অ্যাটাকও হতে পারে। বাংলাদেশে সর্প দংশন প্রতিরোধী যে অ্যান্টিভেনম রয়েছে সেগুলো কোবরা এবং ক্রেইটের বিপরীতে ভালোভাবে কাজ করলেও রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে ভালোমতো কাজ করে না। এই এন্টিভেনমটিতে ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে উপাদান রয়েছে। ভারতীয় রাসেলস ভাইপারের বিষ এবং বাংলাদেশের রাসেলস ভাইপারের বিষের ভেতরে উপাদানগত বৈসাদৃশ্য বেশি হওয়ায় এটি পুরাপুরি কাজ করে না।

ডা. ফরহাদ বলেন, আমাদের দেশের এই সাপটির বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী অ্যান্টিভেনম তৈরি করার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা বিজ্ঞানী অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষের নেতৃত্বে একদল গবেষক বিগত প্রায় ৪-৫ বছর নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। আশা করি আমরা অদূর ভবিষ্যতে রাসেলস ভাইপারের বিরুদ্ধে কার্যকরী দেশীয় একটি অ্যান্টিভেনম পেতে পারি। বিষাক্ত আর অবিষাক্ত মিলিয়ে আমি জীবনে ৩০০০-৪০০০ এর বেশি সর্প দংশনের রোগী নিজেই চিকিৎসা করেছি। কোবরা, ক্রেইট, রাসেলস ভাইপার সব ধরনের সাপের কামড়ের চিকিৎসা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে ৫০%-এর বেশি রোগীকে বাঁচাতে পারিনি। তবে আক্রান্ত হওয়ার পরপরই দ্রুততম সময়ে হাসপাতালে এলে অতিদ্রুত অ্যান্টিভেনম শুরু করলে ও সাপোর্টিভ চিকিৎসা যেমন ডায়ালাইসি, ভেন্টিলেশন ইত্যাদি দিলে রোগী বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করি।


banner close