শনিবার, ৬ জুলাই ২০২৪

পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’

দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতু ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। ছবি: সংগৃহীত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ১১ মে, ২০২৪ ১৪:৩৩

যমুনা নদীর বুকে অবশেষে দৃশ্যমান হলো ‘বঙ্গবন্ধু রেলসেতু’। সর্বশেষ ৪৯ নম্বর স্প্যানটির স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার মাধ্য দিয়ে এখন পুরোপুরি দৃশ্যমার দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে সেতুর অবয়ব। সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশের যমুনা নদীর দু’প্রান্তে দুটি প্যাকেজে নির্মিত হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

আজ শনিবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান বলেন, রেলওয়ে সেতুর ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যান বসিয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সুপার স্ট্রাকচার এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৮৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১৬ শতাংশ কাজ দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। বাকি কাজের মধ্যে এখন সেতুর ওপর ডুয়েল গেজ রেললাইন বসানোর কাজ চলছে।

তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ রেললাইন বসানোর কাজও সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্ট বাকি রয়েছে। অ্যালাইনমেন্ট ও লেভেল ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ড্রেনের কাজ ও কালভার্টগুলোর কাজ শেষ হয়ে গেছে। দুই পাশের স্টেশন বিল্ডিংয়ের কাজ, প্ল্যাটফর্ম স্থাপনের কাজ ও ট্র্যাকের কাজ চলছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। তবে আশা করা যায় ডিসেম্বরের শেষদিকে উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে সেতুটি। এর নির্মাণ ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটি নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। ডব্লিউডি-১ ও ডব্লিউডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ করপোরেশন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার।

ডব্লিউডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। এ ছাড়া সেতুর উভয় প্রান্তের দুই স্টেশনে সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনে ডব্লিউডি-৩ নামে অপর একটি প্যাকেজের কাজও চলছে। সেতুটি নির্মাণে জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের কর্মীরা নিয়োজিত রয়েছেন। ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের ৯৬ দশমিক ১৫ শতাংশ, ডব্লিউডি-২ প্যাকেজের ৯০ শতাংশ ও ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ওপরে রেললাইন স্থাপন শেষ হয়েছে ২ দশমিক ২৫ কিলোমিটার। প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের সেতুটির নির্মাণকাজ ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন মাত্র ৩৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হওয়ার পর ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। কারণ এটি ডবল লাইনের হওয়ায় একইসঙ্গে একাধিক ট্রেন চলতে পারবে। এতে এ অঞ্চলে ব্যবসার প্রসার ঘটবে।

বিষয়:

বন্যায় সিলেটের পাঁচশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

সিলেট নগরের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের তালুকদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৬ জুলাই, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

চলতি বছরে টানা তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট। বন্যার কারণে সড়ক, কৃষি, মৎস্য, অবকাঠামোসহ নানা খাতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের উত্তরপূর্বের এই জেলা। ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষাখাতেও। বন্যার ফলে জেলার প্রায় পাঁচশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে আর বাকিগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঈদের ছুটির পর পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান।

শিখন ঘাটতি কমাতে ঈদ ও গ্রীস্মের ছুটি কমিয়ে ২ জুলাইয়ের পরিবর্তে ২৬ জুন থেকে দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু হয়। তবে সিলেটের অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদের পর আর পাঠদান শুরু হয়নি। একই অবস্থা প্রাথমিক বিদ্যলয়গুলোরও। ঈদের ছুটির পর ৩ জুলাই থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও বন্যার কারণে সিলেটে তা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে জানা গেছে, বন্যার কারণে সিলেট জেলায় ৩৯৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে ৭৮টি। আর ১৫টির মতো কলেজে পানি উঠে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

সিলেটে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৯ মে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় সিলেটের সীমান্তবর্তী ৬ উপজেলা। ৮ জুনের পর থেকে এই বন্যার পানি কিছুটা কমে আসে। তবে ১৬ জুন থেকে আবার বন্যা শুরু হয়। এতে সিলেট নগরসহ জেলার ১৩টি উপজেলায়ই বন্যা দেখা যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়েন প্রায় ১২ লাখ মানুষ। ২৫ জুন থেকে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি কমা শুরু হয়। ১ জুলাই থেকে ফের অতিবৃষ্টি ও ঢল নামা শুরু হলে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। উপর্যুপরি বন্যার ধাক্কা লেগেছে শিক্ষাখাতেও।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মোট ১ হাজার ৪৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯৮টি বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৩৭টি, বিশ্বনাথে ২, বালাগঞ্জে ৫৫ টি, ফেঞ্চুগঞ্জে ৩২ টি, গোলাপগঞ্জে ২৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫৪টি, জকিগঞ্জে ২৩টি, কানাইঘাটে ৪টি, জৈন্তাপুরে ৩টি, গোয়াইনঘাটে ২টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬৫টি, দক্ষিণ সুরমায় ২২ টি ও ওসমানীনগরে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশাদ বলেন, ৩৯৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৬৭ টি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আর বাকীগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নগরের ৪০ নং ওয়ার্ডের জান আলী শাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দেব বলেন, ঈদের পরদিন থেকে আমাদের বিদ্যালয়ে বন্যা কবলিত কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। এ কারণে ৩ জুলাই সব প্রাথমিক বিদ্যালয় খুললেও আমাদের এখানে পাঠদান শুরু করা যায়নি। তাছাড়া এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় এখন বিদ্যালয় খুললেও শিক্ষার্থী উপস্থিতি খুব কম হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যার কারণে জেলায় ৭৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয় রয়েছে ওসমানীনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায়। কুশিয়ারা অবহাহিকার এসব এলাকায় বন্যার পানি কমছেই না।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। পানি কমলে বাড়তি ক্লাসের মাধ্যমে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

এদিকে, গতকালও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি প্রায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি খুব একটা কমেনি। বরং কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি কিছুটা বেড়েছে।

জেলা প্রশাসন থেকে প্রাপ্ত তথ্য সতে, ২৪ ঘন্টায় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ৯ হাজার ২৩৪ জন।

সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের ১৩টি উপজেলার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ নেই কেবল সিলেট সদর, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। আর ওসমানী নগর, বালাগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বিয়ানীবাজারের শেওলা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জকিগঞ্জের অমলসিদ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫৪ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, উজানের উপজেলাগুলো থেকে ঢলের পানি নামতে থাকায় ভাটির উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির কোথাও কোথাও অবনতি হচ্ছে। তবে আশা করছি খুব বেশি অবনতি হবে না।


চার জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৫

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। দিনাজপুর, পাবনার ঈশ্বরদী, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী ও ফরিদপুরের ভাঙ্গায় শুক্রবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দিনাজপুরে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ জন, পাবনার ঈশ্বরদীতে প্রাইভেট কার উল্টে ৫ তরুণ, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দুই ভাই-বোন এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস-ভ্যান সংঘর্ষে আরও দুজন নিহত হন।

দিনাজপুরে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬

দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে নাবিল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা আম বোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ২৬ জন। এ ছাড়া পৃথক ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় আরও একজন ভ্যানচালক নিহত হয়েছেন।

আহতদের দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ভ্যানচালকের নাম স্বদেশ রায় (২৩)।

চকরামপুর গ্রামে দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বাংলা বাজার এলাকার মমিনুল হকের চার মাস বয়সী মেয়ে সায়মা মেহনাজ, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ এলাকার সুরা আলীর ছেলে ট্রাকচালক হাসু (২৮), পীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদ আলী (৫৮), দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার জাহিদের মেয়ে বিভা (১০) ও নাবিল বাসের সুপারভাইজার রাজেশ বাহাদুর (৩০)।

তিনি জানান, ভোরে চকরামপুর গ্রামে ঢাকা থেকে রানীশংকৈলগামী নাবিল পরিবহনের একটি বাস ও বিপরীত দিক থেকে আসা আম বোঝাই একটি ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চালক হাসু (৪০) ও নাবিল কোচের হেলপার নিহত হন। এতে আহত হন ৩০ জন। পরে আহত ৩০ জনকে উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুসহ আরও চারজন মারা যান। হাসপাতালে ২৬ জন আহত ভর্তি রয়েছেন।

তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনা কবলিত বাস ও ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। দুর্ঘটনার পর কিছুক্ষণ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে ওই সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

পৃথক ঘটনায় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ভ্যানচালকের নাম জানা যায়নি।

ঈশ্বরদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ বন্ধু নিহত, আহত ২

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ বন্ধু নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ২ বন্ধুকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাত পৌনে নয়টার দিকে (পাবনা-ঈশ্বরদী) মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যরা নিহতসহ আহতদের উদ্ধার করেন।

নিহতরা হলেন উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের আজমনগর গ্রামের রেজাউল হোসেনের ছেলে জিহাদ, কবির আনোয়ারের ছেলে বিজয়, ইলিয়াস হোসেনের ছেলে শিশির, মাসুম হোসেনের ছেলে সিফাত ও ভাড়ইমারী গ্রামের ওয়াজ আলীর ছেলে শাওন। আহতরা হলেন, একই গ্রামের জেটুর ছেলে শাহেদ ও সুমন আলীর ছেলে নাঈম।

নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, নিহতের মধ্যে বিজয় হোসেন ঢাকার একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির প্রাইভেটকার চালাতেন। ছুটিতে নিজ গ্রামের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে এসে সেই গাড়িতে আরও ছয় বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। উল্লেখিত সময়ে দাশুড়িয়া-পাবনা মহাসড়কের পাবনা সুগার মিলের সামনে পৌঁছালে প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এ সময় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে মুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই গাড়িতে থাকা জিহাদ, বিজয় ও শিশির নামে তিন বন্ধু নিহত হন।

এ সময় আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিফাত ও শাওনের মৃত্যু হয়। শাহেদ ও নাঈম নামে আরও দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান।

পাকশী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ বেলাল হোসেন ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ও ডিফেন্স স্টেশনের সদস্যদের সহযোগিতায় ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আহত অবস্থায় চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠালে তাদের মধ্যে আরও দুইজন মারা যায়।

ভাঙ্গায় বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১০

ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার ভাঙ্গায় একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন যাত্রী।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া যদুরদিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ চালায়।

দুর্ঘটনায় পিকআপের হেলপার এবং ড্রাইভার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। নিহত ও আহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ মো. খায়রুল আনাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে ফরিদপুরগামী পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ভাঙ্গা অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। নিহতদের পরিচয় এখনও পাওয়া যায়নি। পরিচয় শনাক্তে চেষ্টা চলছে।

সোনাইমুড়ীতে কাভার্ড ভ্যান চাপায় ভাই-বোন নিহত

নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি কাভার্ড ভ্যান ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে চাপা দিলে এর আরোহী ভাই-বোন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ সংলগ্ন মদিনা মসজিদের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হচ্ছেন মো. ইয়াছিন (১৭) ও বিউটি আক্তার (২৪)। তারা উপজেলার বজরা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বগাদিয়া গ্রামের নতুন বাড়ির মৃত বশির উল্যার সন্তান।

চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

স্থানীয়দের বরাতে তিনি বলেন, ‘দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা বিউটি ছোট ভাই ইয়াছিনকে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সোনাইমুড়ী বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথে অটোরিকশাটি বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের বগাদিয়া উত্তর ব্রিজ সংলগ্ন স্থানে পৌঁছলে সেখানে বেগমগঞ্জগামী বেপরোয়া গতির একটি কাভার্ভ ভ্যান তাদের চাপা দিলেই ঘটনাস্থলে ভাই-বোন নিহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ঘাতক কাভার্ড ভ্যানটি পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে হাইওয়ে পুলিশ কাভার্ড ভ্যান ও অটোরিকশা জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।’


ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

প্রতীকী ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে রাজু মিয়া (২৮) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে গুলিতে প্রাণ হারানো রাজু বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী ইউনিয়নের গড়িয়ালী গ্রামের হবিবর আলীর ছেলে।

বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ঠাকুরগাঁও ৫০ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নগরভিটা সীমান্তের পিলার নম্বর ৩৭৬/৫ এস এলাকায় গতকাল রাত আনুমানিক একটার দিকে চোরাই পথে গরু আনতে ভারতে যান রাজু। ওই সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন তিনি। রাজুর মরদেহ বিএসএফের কাছে আছে।

ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজীর আহম্মদ বলেন, ‘আমরাও ঘটনাটা শুনেছি, তবে সে বাংলাদেশি নাকি ইন্ডিয়ান এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা পতাকা বৈঠকের জন্য তাদের আহ্বান করেছি। পতাকা বৈঠকের পরে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’


রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবেশীর দেয়াল নির্মাণ

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ জুলাই, ২০২৪ ১০:৩০
শামসুল ইসলাম সনেট, কেরানীগঞ্জ

ঢাকার কেরানীগঞ্জে চার দেয়ালে বন্দি ৫ পরিবারের অর্ধশত লোক। বাড়ি নির্মাণকালে রাস্তা থাকলেও হঠাৎ ২০ বছরের পুরোনো রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো।

পরিবারগুলোর অভিযোগ- তাদের দীর্ঘদিনের পুরোনো রাস্তায় ৮ ফুট উঁচু দেয়াল নির্মাণ করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়েছে এলাকার প্রভাবশালী একটি পরিবার। আর টাকা নেওয়ার পরও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে তাদের স্যুয়ারেজ লাইন। তাই কষ্টের টাকায় তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজ বাড়িই যেন এখন জেলখানা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কেরানীগঞ্জের বোরহানিবাগ-মুসলিমবাগ এলাকায় সরু একটি রাস্তার মাথায় উঁচু দেয়াল। মই বেয়ে সেই উঁচু দেয়াল পার হয়ে বাড়িতে আসা-যাওয়া করছেন পাঁচ বাড়ির বাসিন্দারা। এভাবে দেয়াল টপকে, মই বেয়ে পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই হয়েছেন আহত। শিশু থেকে বৃদ্ধা- বাড়ির বাইরে বের হতে হলেই দেয়াল টপকানো ছাড়া কোনো পথ নেই।

নানা অসুবিধায় বাধ্য হয়ে ইতোমধ্যে বাড়ি বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছে দুটি পরিবার। বাকি তিন পরিবারের দুজন বাড়িতে তালা মেরে থাকছেন ভাড়া বাড়িতে। বিকল্প উপায় না থাকায় অবরুদ্ধ বাড়িতে বসবাস করছে তিনটি পরিবার।

ভুক্তভোগী আনিস জানান, এলাকায় স্যুয়ারেজ লাইন ও রাস্তা তৈরি বাবদ শতাংশপ্রতি ১৩ হাজার টাকা করে ১৬০টি পরিবারের কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা তুলে নেন ছাত্রলীগ নেতা শিমুল। এদিকে রাস্তা ও স্যুয়ারেজ লাইনের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় রাস্তার অন্য পাশের প্লটটি ভাতিজির কাছ থেকে ক্রয় করে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন শিমুলের শ্বশুর সামিউল। জামাতার প্রভাব খাটিয়ে রাস্তায় ৮ ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। টাকা দিয়ে স্যুয়ারেজ লাইন করলেও তা ভেঙে দেওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে বন্দি পরিবারগুলো।

চিরকুমারী ফাতেমা বেগম ছোট ভাইদের প্রতিষ্ঠিত করতে বিয়ে না করেই কাটিয়েছেন প্রায় অর্ধশত বছর। প্রবাসী ভাইদের বিদেশি টাকায় করেছেন বহুতল ভবন। মা আর তিন ভাইয়ের পরিবার নিয়ে সুখের সংসার ছিল। তবে সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি। কারণ বহু কষ্টে গড়া বাড়ি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রতিবেশীর উঁচু দেয়ালে।

প্রতিবেশী রনি আহমেদ বলেন, রাস্তাঘাট প্রতিটি মানুষের নাগরিক অধিকার। পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছে। হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায় কাজ। আমরা চাই তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

এদিকে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া সামিউল্লাহ বলেন, ‘নিজ জমির বুক চিরে রাস্তা দেওয়া যাবে না। তারা বিকল্প ব্যবস্থা করুক। তাদের রাস্তা দেওয়া আমার দায়িত্ব না।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা শিমুল বলেন, ‘অভিযোগকারীরা নিজেরাই নিজেদের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। অন্যের ব্যক্তিগত জায়গা দিয়ে রাস্তা বানানোর চক্রান্ত এটি। এতদিন খালি ছিল, তাই রাস্তা ছিল। এখন প্রয়োজনে দেয়াল করা হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ জানান, ‘ব্যাপারটি শুনে উভয়পক্ষকে জানানো হয়েছে। আমি ব্যাপারটি দেখছি।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে কেউ কারও প্রতি অন্যায় জুলুম করার কোনো সুযোগ নেই।’


কুলাউড়ায় ২০ দিন ধরে পানির নিচে সরকারি অফিস ও হাসপাতাল

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৫ জুলাই, ২০২৪ ১০:৩১
এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার)

ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ২০ দিন ধরে পানিবন্দি লক্ষাধিক পরিবার। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন সরকারি অফিস। ঢলের স্রোতে ভেঙে গেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিস, নির্বাচন অফিস, মহিলবিষয়ক অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, সমবায়, জনস্বাস্থ্য এবং পল্লী উন্নয়নসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় পানিবন্দি। এখানকার আবাসিক এলাকার রাস্তায়ও হাঁটু সমান পানি। কেউ কোনো যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে পারছে না। কর্মকর্তারা ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় মানুষেরও ভিড় নেই।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণসহ আশপাশের আবাসিক এলাকা নিমজ্জিত থাকায় স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি দাপ্তরিক কার্যক্রমে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। পানিবন্দি থেকে চিকিৎসাসেবা ও উপজেলা প্রশাসনিক কাজকর্ম করছেন বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। এতে সরকারি অফিস ও হাসপাতালের সেবাগ্রহীতাদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।

এদিকে হাসপাতালের সেবাগ্রহীতা ও চিকিৎসকদের কথা চিন্তা করে গত ২৫ জুন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশমুখে যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি ভাসমান অস্থায়ী সেতু তৈরি করেন ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সুমন ও আব্দুল কাইয়ুম।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ২০ দিন ধরে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সড়কপথ পানির নিচে ডুবে আছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। বন্যার্তদের জন্য ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এতে আড়াইহাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, ‘আমাদের তো অফিসে আসতে হবে। বৃষ্টির পানি মাড়িয়ে ঘর থেকে বের হওয়া, আবার জমে থাকা পানি দিয়ে হেঁটে হেঁটে অফিসে ঢুকা অত্যন্ত কষ্টকর।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শিমুল আলী বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিদিন ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, বন্যা শুরুর পর থেকেই উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বন্যার্তদের পাশে রয়েছেন। বন্যার মধ্যে প্রশাসনিক কাজ অব্যাহত আছে। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, বন্যা থেকে বাঁচতে হলে নদী, হাওর ও খাল খনন করতে হবে। পানি নামার পথে যেখানে যেসব প্রতিবন্ধক রয়েছে, সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে তা অপসারণ করা জরুরি।


সিলেটে যেসব কারণে বারবার বন্যা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

একমাসের মধ্যে টানা তিন দফা বন্যার কবলে সিলেট। গত ২৭ মে প্রথম দফা, ১৭ জুন দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এ দুই দফা বন্যার রেশ না কাটতেই ১ জুলাই থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপর্যুপরী বন্যায় দিশেহারা অবস্থা সিলেটের মানুষের।

এর আগে ২০২২ সালে অন্তত তিন দফা বন্যা হয় সিলেটে। এরমধ্যে ২০২২ সালের জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার অন্তত ৮৫ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। আর পুরো বিভাগে তলিয়ে যায় প্রায় ৭৫ ভাগ এলাকা।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সিলেটে সব সময়ই ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর সিলেটের উজানেই অবস্থান এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির। সেখানেও সারা বছরই বৃষ্টি লেগেই থাকে। অতিবৃষ্টি সত্ত্বেও আগে সিলেটে এমন ঘন ঘন বন্যা হয়নি। ফলে ইদানিংকালে সিলেটে বারবার বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনকার বন্যা তীব্র আকারও ধারণ করছে।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিলেটে প্রধান নদীগুলোর বিশেষত সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, সিলেট নগর ও নগরের আশপাশের এলাকার পুকুর দিঘি, হাওর ভরাট ও দখল করে ফেলা, হাওর এলাকায় অপরিকল্পিত স্থাপনা এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে অল্প সময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই সিলেটে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেনও এসব কারণকেই সাম্প্রতিককালের বন্যার জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, সিলেটে এ মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ও এমনটি দেখেছি; কিন্তু তখন পানি আটকে থাকত না। চলে যেত। কারণ আমাদের শহরে অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর, দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।

নদীর তলদেশ ভরাট

সিলেটের প্রধানতম নদী সুরমার দুই রূপ। বর্ষায় দুকূল উপচে ডুবিয়ে দেয় জনবসতি। আর গ্রীষ্মে পানি শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে। জেগে ওঠে চর। প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী। ভারতের বরাক নদী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে এ নদী। দীর্ঘ হলেও এ নদী বছরের বেশির ভাগ সময় থাকে পানিহীন, মৃতপ্রায়।

এর কারণ, পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর তলদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা হয়ে পড়ে বালুভূমি। অন্যদিকে, অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল।

জানা যায়, ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর উৎসমুখও। নদীর উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর। দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যৌথ নদী কমিশনে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আটকে আছে উৎসমুখ খননও।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর উৎসমুখ খননে ২০১২ সালে সিলেট থেকে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেওয়ার কথা সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এরপর এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়; কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এরপর ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে বিশ্বনাথের দশগ্রাম পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়। এ ১৫ কিলোমিটারের খনন কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে নদী উপচে পড়ে পানি। ভরাট হয়ে গেছে সিলেটের অন্য প্রধানতম নদী কুশিয়ারাও। এ দুই নদী খনন ছাড়া বন্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। এ ছাড়া নাগরিক বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য সুরমা নদীর তলদেশে শক্তভাবে বসে আছে। এ কারণে নদী পানি ধারণ করতে পারছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, চলমান প্রকল্পটির অন্তত ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পানি কমলে বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে। তিনি বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ নদীই নাব্য হারিয়েছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন।

নগরের জলাশয় ভরাট ও দখল

সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়, রামেরদিঘির পাড়- সিলেট নগরীর অন্তত ২০-২৫টি এলাকার নাম এরকম। দিঘির নামে এলাকার নাম ঠিকই আছে; কিন্তু দিঘিগুলো নেই। ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে নগরীর অর্ধশতাধিক দিঘি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসেবে, ১৫-২০ বছর আগেও সিলেট নগরে অর্ধশতাধিক বৃহৎ দিঘি ছিল। অথচ এখন টিকে আছে ১০-১১টি। বাকিগুলো ভরাট হয়ে গেছে।

আর বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হিসেবে, সিলেট নগরে পুকুর, দিঘি মিলিয়ে তিন শতাধিক জলাশয় ছিল। এর দুই-তৃতীয়াংশই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক জলাশয় ভরাট করে সরকারি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

এ ছাড়া সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল। যা ছড়া নামে পরিচিত। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াগুলো গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এসব ছড়া দিয়েই বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। এখন অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ছড়াগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি বড় ছড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ছড়ার দুই পাশ দখল করে রেখেছে স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা।

এ ছাড়া নগরের উপশহর এলাকার হাওর ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। বাঘা এলাকার হাওর ভরাট করে হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট।

জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরের পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর ঢল নামলে বন্যা হয়ে যায়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার ছড়া উদ্ধার করেছি। এতে নগরীতে আগের মতো আর জলাবদ্ধতা হয় না। অধিক বৃষ্টিতে নগরীতে কিছু এলাকায় পানি জমলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা নেমে যায়।

তিনি বলেন, আমরা নগরের জলাশয়গুলো রক্ষায়ও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আর কোনো জলাশয় ভরাট করতে দেওয়া হচ্ছে না।

উজানে অতিবৃষ্টি

সিলেটে বর্ষাকাল সবসময়ই দীর্ঘ হয়। এ সময়কালে বৃষ্টি লেগে থাকে। আর সিলেটের উজানেই অবস্থান সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির। সম্প্রতি উজানে এক দিনে অতিভারী বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ভারতের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি এবং বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় বলা হয়, গত চার দশকে ভারতের মেঘালয়-আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে থাকলেও এক দিনে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা চারগুণ বেড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টাচ্ছে, যা সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।


কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৪৩
বিজয় ধর, রাঙামাটি

টানা ভারী বর্ষণের ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (কপাবিকে) বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের জানিয়েছেন, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩নং ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। ১ ও ২নং ইউনিট থেকে ৪২ মেগাওয়াট করে ৮৪ মেগাওয়াট এবং ৪ ও ৫নং ইউনিট থেকে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াটসহ সর্বমোট ১৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যেটি চলতি বছরে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বাধিক উৎপাদন। পানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা জানান, বছরের এ সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৪ দশমিক ১৬ ফুট এমএসএল থাকার কথা থাকলেও গতকাল কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রয়েছে রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৩ দশমিক ৬৯ ফুট মিন সি লেভেল, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পানির লেভেল। এ হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট মিন সি লেভেল।

তবে পানি বাড়লেও পরিকল্পিতভাবে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের ভেতরে পলি জমেছে। ফলে এর ড্রেজিং করা জরুরি বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, কাপ্তাইয়ে অবস্থিত দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে সর্বমোট ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।


এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট

ব্রহ্মপুত্র তীরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা
সিলেটের জৈন্তাপুরে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৫৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর একনাগাড়ে বৃষ্টিতে এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট অঞ্চল। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, একই কারণে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল এবং তিস্তা ও ধরলায় নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট ব্যুরো থেকে দেবাশীষ দেবু জানান, সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোর থেকে অতিভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশির ভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি।

তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগে গত সোমবার থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিনদফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে ০.৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

তিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদনদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টিতে ঢলের পানি নামতে পারছে না। এ কারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারী বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।

এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে রাতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল নগরের অন্তত ২৫টি এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে দুপুরে বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। তবে বৃষ্টির থামার পর পানি নেমে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে, সে জন্য কাজ করছেন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সদরের যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বাড়ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি।

এ অবস্থায় এসব নদ-নদীর নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রমের পথে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার অববাহিকার পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে চলছে তীব্র ভাঙন। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মুসার চর, ব্যাপারীপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চরের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বাধ্য হয়ে এসব পরিবারের অনেকে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মোল্লাহাট বাজার এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বাজার রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে যাত্রাপুরের রলাকাটা চরে একের পর এক বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। চরের উত্তর দিকে অব্যাহত ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বেলাল বলেন, ‘বন্যার পানি এখনও বাড়িঘরে প্রবেশ করে নাই। তবে ভাঙনে এলাকার মানুষ দিশেহারা। রলাকাটার পশ্চিমে মাঝের চর ও চিড়াখাওয়ার চরের আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িঘরে ঢুকবে।’

যাত্রাপুরের কালির আলগা ও গোয়াইলপুরির চরে গত দুই দিনে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেশির ভাগ পরিবারের বসতবাড়ির চারপাশে পানি।

গোয়াইলপুরির চরের বাসিন্দা মাহবুব বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ। বন্যার কবলে পইড়া গেছি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতাছে। আইজ-কাইলের মধ্যে সব ঘরবাড়িতে পানি ঢুইকা পড়ব।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলাজুড়ে চার শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবারও পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে আমরা সেদিকে বাড়তি নজর রাখছি।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় লোকজন স্থানীয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

হঠাৎ করে পানি উঠায় লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে এসেছেন। পানি বৃদ্ধিতে শহরের একমাত্র পৌর বাস টার্মিনালটি পানিতে ডুবে যায়। যানবাহনগুলোকে উঁচু রাস্তায় সুরক্ষায় রাখা হয়েছে।

একইভাবে দীঘিনালার ১০টি গ্রাম পানির নিচে রয়েছে। এখানকার মেরুংবাজারটি পানির নিচে।

সাজেকে আটকা শতাধিক পর্যটক

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচাংল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাজেকের মাচালং বাজার, বাঘাইহাট এবং পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সাজেকে শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে।

এদিকে, সাজেকের কুঁড়েঘর রিসোর্টের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে কাচালং নদীতে পানি বৃদ্ধি হয়ে মাচালং ও বাঘাইহাটে রাস্তার ওপর পানি উঠে যাওয়ায় সাজেকের কয়েকশ পর্যটক আটকা পড়েছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড়ি ঢলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সাজেকের আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে সাজেক থেকে পর্যটকবাহী যানগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি।


যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৩:২১
মোস্তাক আহমেদ মনির, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে একটি গ্রাম। গৃহহীন হয়ে পড়েছে নদীর পাড়ে বাস করা প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। পায়নি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা।

সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন একটি নদীভাঙন কবলিত ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান যমুনা নদীর করাল গ্রাসে প্রতি বছর শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন অজানা গন্তব্যে। যমুনা নদী যেন এদের পিছু ছাড়ছেই না। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ নলসন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রতি বছর নদীভাঙনের ফলে অধিকাংশ চরাঞ্চলের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে গিয়েছে। বেঁচে ছিল মিরকুটিয়া গ্রামের একাংশ কাঁঠাল তলা এলাকা। সেটিও আজ ভাঙনের কবলে। কয়েক দিনের টানা ভাঙনের ফলে নদীর বুকে বিলীন হয়েছে এ এলাকার প্রায় ২০টি বসতবাড়ি।

স্থানীয় বানিছা বেওয়া, বিলকিস বেগম, আশরাফুল, মোখলেসসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, প্রতি বছর এখানে নদীভাঙনের ফলে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে যায়। এর আগে এখানে অনেক বাড়ি-ঘর ছিল। সব নদীতে ভেঙে গেছে। এবারও তাদের অনেকের রান্না ঘর, বসত ঘর, টিউবওয়েলসহ নানা স্থাপনা এক রাতের মধ্যে ভেঙে নদীতে চলে গেছে। একাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে থাকায় ভেঙে খোলা মাঠে রেখে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বলে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে ও অসহায়দের শেষ সম্বল বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পিংনা ইউনিয়নের যমুনার নদীভাঙন এলাকা সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অতি দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ এমপি বলেন, ‘ভাঙনের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভাঙন এলাকায় ইউএনওর মাধ্যমে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’


পুলিশের এসআইসহ ৫ জনের ২১ বছরের কারাদণ্ড

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ট্রাকের চালক ও সহকারীকে অপহরণ, চাঁদা দাবি ও ২৫২ বস্তা পেঁয়াজ লুটের মামলায় পুলিশের এসআইসহ পাঁচজনকে পৃথক দুটি ধারায় ২১ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুটি ধারায় প্রত্যেককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামিকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ এম আলী আহমেদ এই রায় দেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুর রহমান ও স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুল হাসান, সলঙ্গা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মতিউর রহমান খান, সলঙ্গা থানার পাটধারী গ্রামের রেজাউল করিম রনি, হাসানপুর গ্রামের সবুজ আলী, বাগুন্দা গ্রামের আনিস ড্রাইভার ও সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়া গ্রামের সাব্বির আলম সবুজ।

তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি মিন্টু ও মনসুর আলীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাব্বির আলম সবুজ ছাড়া অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১০ জুলাই রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর থেকে ২৫২ বস্তা ভারতীয় পেঁয়াজের একটি ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন চালক মো. মোরশেদ আলী ও তার সহকারী রবিউল। ট্রাকটি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার র‍্যাব-১২-এর কার্যালয়ের সামনে সমবায় পেট্রল পাম্পে টয়লেট ব্যবহারের জন্য থামানো হয়। এ সময় পুলিশ সদস্য পরিচয়ে ট্রাকের চালক ও সহকারীকে প্রাইভেটকারে করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে ট্রাকের মালিকের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এ ঘটনায় ট্রাকের মালিক মজিবুর রহমান সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাইনুল হাসান, সলঙ্গা থানার এএসআই মতিউর রহমান খানসহ আটজনকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।


টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে পাহাড়ধস, আশঙ্কা চট্টগ্রামেও

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০৮:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

একনাগাড়ে চার দিন ধরে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিতে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মতো জনদুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। এর মধ্যে চেঙ্গি-মাইনি-কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উভয় জেলার দুর্গম এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করছে আবহাওয়া অফিস।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারায় পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। এতে ভোর থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিকরা মাটি সরালে তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকাল ৯টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে যানবাহন ছেড়ে যায়।

এ ছাড়া জেলা সদরের শালবাগান, সবুজবাগ এলাকায় পাহাড় ধসে বাসাবাড়িতে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়িসহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। শালবাগান এলাকার হরিনাথপাড়া, রসুলপুর, পূর্ব শালবাগানে গভীর রাতে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও আসবাবপত্র। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

হরিনাথপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসের পাশাপাশি নিরাপত্তাপ্রাচীর হেলে পড়ে একটি টিনের ঘরের ওপর। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রশাসন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম তূর্য জানান, দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘চেঙ্গী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতেই শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পাহাড়ধসের শঙ্কা আছে এমন এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলায় ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।’ দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, জেলায় টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ি-লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সকালে বাঘাইছড়ি থেকে লংগদু সড়কের বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম এলাকা ও বটতলী হেডম্যান পাড়ায় পৃথক পৃথক মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পরপরই সড়কটি সচল করতে বাঘাইছড়ি থানার পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় যুবকরা একসঙ্গে কাজ করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ জানান, সকালে বাঘাইছড়ি-লংগদু সড়কের দুটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা সড়কটি সচলের কাজ শুরু করে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এখানে আবারও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, কমার্স কলেজসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

গত চার দিন ধরে (শনিবার থেকে) কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী লোকজনকে। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভীষণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্ষার সময় পরীক্ষা না নিয়ে শুষ্ক সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

চাকতাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা না হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আসতে পারছেন না। বেচাকেনা অত্যন্ত কম। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।


এক সপ্তাহে মারা গেছে ডলফিনসহ ৭ মা মাছ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আরও একটি বিপন্ন প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন এবং একটি প্রজননক্ষম মা (ব্রুড) মাছের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় মৃত ডলফিন এবং মা মাছটি দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে হালদা নদীতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় একটি মৃত ডলফিন ও একটি ব্রুড মাছ ভেসে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে আমাকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে।’

এ নিয়ে গত সাত বছরে (২০১৭ সাল থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত) হালদা নদী থেকে ৪২টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হলো জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর মৃত ব্রুড (প্রজননক্ষম) মাছ উদ্ধার করা হয়েছে মোট ছয়টি।’

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে হালদা নদীতে ছয়টি ব্রুড মাছ (একটি রুই এবং পাঁচটি কাতলা) ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অশনিসংকেত। স্থানীয়দের কাছে পাওয়া তথ্য অনুসারে ওই ল্যাবরেটরির একজন গবেষণা কর্মকর্তা জানান, সোমবার (১ জুলাই) রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মৃত কাতলা ও একটি ডলফিন জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এর আগে রোববার দুপুর ১টার দিকে আজিমের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের (দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার) আরও একটি মৃত কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকা থেকে দুটি কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ওজন ১০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৫৮ সেন্টিমিটার, অপরটির ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম দৈর্ঘ্য ৯৮ সেন্টিমিটার।

গত ২৬ জুন রাউজান উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার কয়েক দিন আগেও ১২ কেজি ওজনের একটি মা কাতলা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।

ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে দুই বছর পরে এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরও একটি হতাশাজনক বিষয়, ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর মাছেরা সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে, যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। ইতোমধ্যে প্রজনন মৌসুমের ছয়টি জো শেষ হওয়ার মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে মাছের ডিম ছাড়ার কোনো রেকর্ড নেই। হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের এত হতাশার মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং দুটি ডলফিনের মৃত্যু এই নদীর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এই ব্রুড মাছের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে শাখা খালগুলোর দূষণ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করি। তবে হালদা নদী তথা বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ রক্ষার জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদ্ঘাটনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে, হালদা নদীর গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় রয়েছে।


ফরিদপুরে বাস-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বোয়ালমারিতে লোকালবাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চতুল ইউনিয়নের বাইখির মিলঘর এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে হুসাইন মিয়া (২২) এবং একই উপজেলার ধলেরচর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রাজু শেখ (২১)। সম্পর্কে তারা মামাতো ফুফাতো ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামি লোকাল বাস মালঞ্চ পরিবহনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বোয়ালমারি আলফাডাঙ্গাগামি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল চালক হুসাইন মিয়া (২২) বাসের চাকায় পিষ্ট হয় এবং মোটরসাইকেলের অপর আরোহী মো. রাজু শেখ (২১) সড়কে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় মোটরসাইকেলটি বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। নিহতদের লাশ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর বাসের চালকসহ স্টাফরা পালিয়ে গেলেও বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ।

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুরগামি লোকাল বাসের (মালঞ্চ পরিবহন) মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটিকে আটক করতে পারলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।


banner close