বৃহস্পতিবার, ৪ জুলাই ২০২৪

কমলগঞ্জে কালবৈশাখীতে বিধ্বস্ত বাড়িঘর

ছবি: দৈনিক বাংলা
সালাহউদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত
সালাহউদ্দিন শুভ, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত : ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ১৩:১২

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ওপর বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে উপজেলার আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, পতনউষার ও মাধবপুর ইউনিয়নের কয়েকশ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজারো গাছপালা। ১১ কেভির প্রায় ৪টি খুঁটি ভেঙে ১০০ স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় প্রচণ্ড কালবৈশাখীর সঙ্গে বজ্রপাতের শব্দে এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পড়ে।

রাতে ১২টা দিকে ঝড়ে কমলগঞ্জ-আদমপুর সড়কে গাছ পড়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে যোগাযোগ চালু হয়। বিদ্যুৎ লাইন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার কারণে রাত থেকে এখনো পর্যন্ত ৪টি ইউনিয়নের কয়েকে হাজার মানুষ, এখনো অন্ধকারে নিমজ্জিতে আছে। কালবৈশাখী, ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ও আংশিক শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড, চা বাগানে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত, ১০-১২ হেক্টর জমির বোরো ফসল ও সবজি খেত বিনষ্ট হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত এ উপজেলার আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, পতনঊষার ও মাধবপুর ইউনিয়নের তিলকপুর, জামিরকোনা, রানীবাজার ও ভাসানিগাঁও সহ ৪টা গ্রামের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, পতনঊষার ও মাধবপুর ইউনিয়নের তিলকপুর, জামিরকোনা, রানীবাজার ও ভাসানিগাঁওসহ ৪টি গ্রামে ব্যাপক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তার পাশে থাকা গাছপালা উপড়ে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে।

এ ছাড়া জামিরকোনা গ্রামের জমির মিয়া, শাহজাহান, মাহমুদ আলী, হবিব, ময়না বেগম, খলিল মিয়া, বশির মিয়া, আয়ুব, আলফা, শফিক, জলিল, করিম, মিলাদ, সিরাজুল ইসলামের ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।

কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের জামিরকোনা গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া জানান, ‘আমার ৪ কিয়ার (১২০শতক) জায়গায় টমেটো, লাউ, সিম, রামাই, জিঙ্গা ও করলা চাষ করেছিলাম। কিন্তু রাতে ঝড় ও ভারী বর্ষণে কারনে আমার সব শেষ হয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

ঘর ভেঙে যাওয়া জমির মিয়া জানান, ‘রাতে বৌ বাচ্চা নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ১২টার দিকে ঝড় তুফান আসে। মুহূর্তে আমার ঘরটি মুরচা মেরে ভেঙে উপড়ে পড়ে যায়। আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাহিরে চলে আসি। তাদের কারো ক্ষতি হয়নি; কিন্তু এখন থাকব কোথায়। আমি প্রসাশনের কাছে সহযোগিতা চাইছি’

কমলগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান জানান, ‘কালবৈশাখী ঝড় ও ভারী বর্ষণে কারনে আমার ইউনিয়নের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমি এসব বিষয় স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করেছি।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘আমরা সকাল থেকে অফিসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দেখার জন্য বের হয়। কৃষকদের প্রায় ১০-১২ হেক্টর কৃষি জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সেসব কৃষকদের নামগুলো তালিকা করছি। তাদের সহযোগিতা করা হবে।’

মৌলভীবাজার পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম গোলাম ফারুক মীর জানান, ‘ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রায় ৪টি খুঁটি ও ১ শতাধিক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এসব জায়গায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা দেওয়ার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।’

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের খুঁজ খবর নিয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের বলেছি তালিকা করে দিতে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহযোগিতা করা হবে।’

বিষয়:

সিলেটে যেসব কারণে বারবার বন্যা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৪ জুলাই, ২০২৪ ০০:০২
দেবাশীষ দেবু, সিলেট

একমাসের মধ্যে টানা তিন দফা বন্যার কবলে সিলেট। গত ২৭ মে প্রথম দফা, ১৭ জুন দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দেয়। এ দুই দফা বন্যার রেশ না কাটতেই ১ জুলাই থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপর্যুপরী বন্যায় দিশেহারা অবস্থা সিলেটের মানুষের।

এর আগে ২০২২ সালে অন্তত তিন দফা বন্যা হয় সিলেটে। এরমধ্যে ২০২২ সালের জুনে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেট জেলার অন্তত ৮৫ শতাংশ এলাকা তলিয়ে যায়। আর পুরো বিভাগে তলিয়ে যায় প্রায় ৭৫ ভাগ এলাকা।

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সিলেটে সব সময়ই ভারী বৃষ্টিপাত হয়। আর সিলেটের উজানেই অবস্থান এশিয়ার সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির। সেখানেও সারা বছরই বৃষ্টি লেগেই থাকে। অতিবৃষ্টি সত্ত্বেও আগে সিলেটে এমন ঘন ঘন বন্যা হয়নি। ফলে ইদানিংকালে সিলেটে বারবার বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনকার বন্যা তীব্র আকারও ধারণ করছে।

এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সিলেটে প্রধান নদীগুলোর বিশেষত সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, সিলেট নগর ও নগরের আশপাশের এলাকার পুকুর দিঘি, হাওর ভরাট ও দখল করে ফেলা, হাওর এলাকায় অপরিকল্পিত স্থাপনা এবং সিলেটের উজানে মেঘালয়ে অল্প সময়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণেই সিলেটে ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে।

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেনও এসব কারণকেই সাম্প্রতিককালের বন্যার জন্য দায়ী করেন। তিনি বলেন, সিলেটে এ মৌসুমে সব সময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ও এমনটি দেখেছি; কিন্তু তখন পানি আটকে থাকত না। চলে যেত। কারণ আমাদের শহরে অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর, দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এ ছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না। যেকোনো দুর্যোগেই সিলেটের জন্য এটা একটা ভয়ের কারণ।

নদীর তলদেশ ভরাট

সিলেটের প্রধানতম নদী সুরমার দুই রূপ। বর্ষায় দুকূল উপচে ডুবিয়ে দেয় জনবসতি। আর গ্রীষ্মে পানি শুকিয়ে পরিণত হয় মরা গাঙে। জেগে ওঠে চর। প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সুরমা দেশের অন্যতম দীর্ঘ নদী। ভারতের বরাক নদী থেকে সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মেঘনায় মিলিত হয়েছে এ নদী। দীর্ঘ হলেও এ নদী বছরের বেশির ভাগ সময় থাকে পানিহীন, মৃতপ্রায়।

এর কারণ, পলি জমে ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর তলদেশ। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সুরমা হয়ে পড়ে বালুভূমি। অন্যদিকে, অল্প বৃষ্টিতেই নদী উপচে নদী তীরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় বন্যা। বৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে তলিয়ে যায় হাওরের ফসল।

জানা যায়, ভরাট হয়ে পড়েছে এ নদীর উৎসমুখও। নদীর উৎসমুখের ৩২ কিলোমিটারে জেগেছে ৩৫টি চর। দুই দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যৌথ নদী কমিশনে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আটকে আছে উৎসমুখ খননও।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুরমা নদীর উৎসমুখ খননে ২০১২ সালে সিলেট থেকে একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর নদী খননে সমীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষার পর নদী খননে উদ্যোগ নেওয়ার কথা সে সময় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তবে এরপর এ ব্যাপারে আর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অবশ্য ২০১৮ সালে সিলেট সদর উপজেলার কানিশাইলে ৬০০ মিটার সুরমা নদী খনন করা হয়। এ সময় সিলেট সদর উপজেলা এবং কানাইঘাট উপজেলার কয়েকটি অংশে নদী খননের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়; কিন্তু তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এরপর ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরীর কুশিঘাট থেকে বিশ্বনাথের দশগ্রাম পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু হয়। এ ১৫ কিলোমিটারের খনন কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি।

তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে নদী উপচে পড়ে পানি। ভরাট হয়ে গেছে সিলেটের অন্য প্রধানতম নদী কুশিয়ারাও। এ দুই নদী খনন ছাড়া বন্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে আছে। এ ছাড়া নাগরিক বর্জ্য, বিশেষ করে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য সুরমা নদীর তলদেশে শক্তভাবে বসে আছে। এ কারণে নদী পানি ধারণ করতে পারছে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, চলমান প্রকল্পটির অন্তত ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। পানি কমলে বাকি কাজ দ্রুত শেষ হবে। তিনি বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ নদীই নাব্য হারিয়েছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন।

নগরের জলাশয় ভরাট ও দখল

সাগরদিঘির পাড়, লালদিঘির পাড়, রামেরদিঘির পাড়- সিলেট নগরীর অন্তত ২০-২৫টি এলাকার নাম এরকম। দিঘির নামে এলাকার নাম ঠিকই আছে; কিন্তু দিঘিগুলো নেই। ভরাট হয়ে গেছে অনেক আগেই। গত তিন দশকে ভরাট হয়ে গেছে নগরীর অর্ধশতাধিক দিঘি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) হিসেবে, ১৫-২০ বছর আগেও সিলেট নগরে অর্ধশতাধিক বৃহৎ দিঘি ছিল। অথচ এখন টিকে আছে ১০-১১টি। বাকিগুলো ভরাট হয়ে গেছে।

আর বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হিসেবে, সিলেট নগরে পুকুর, দিঘি মিলিয়ে তিন শতাধিক জলাশয় ছিল। এর দুই-তৃতীয়াংশই ভরাট হয়ে গেছে। অনেক জলাশয় ভরাট করে সরকারি প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে।

এ ছাড়া সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে ছোট-বড় প্রায় ২৫টি প্রাকৃতিক খাল। যা ছড়া নামে পরিচিত। পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে উৎপত্তি হয়ে ছড়াগুলো গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এসব ছড়া দিয়েই বর্ষায় পানি নিষ্কাশন হতো। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো না। এখন অনেক স্থানে এসব ছড়ার অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। ছড়াগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৩টি বড় ছড়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৩ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন ধরেই এসব ছড়ার দুই পাশ দখল করে রেখেছে স্থাপনা নির্মাণ করেছে অবৈধ দখলদাররা।

এ ছাড়া নগরের উপশহর এলাকার হাওর ভরাট করে গড়ে উঠেছে আবাসিক এলাকা। বাঘা এলাকার হাওর ভরাট করে হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট।

জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় নগরের পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে জানিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখন বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর ঢল নামলে বন্যা হয়ে যায়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার ছড়া উদ্ধার করেছি। এতে নগরীতে আগের মতো আর জলাবদ্ধতা হয় না। অধিক বৃষ্টিতে নগরীতে কিছু এলাকায় পানি জমলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা নেমে যায়।

তিনি বলেন, আমরা নগরের জলাশয়গুলো রক্ষায়ও বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আর কোনো জলাশয় ভরাট করতে দেওয়া হচ্ছে না।

উজানে অতিবৃষ্টি

সিলেটে বর্ষাকাল সবসময়ই দীর্ঘ হয়। এ সময়কালে বৃষ্টি লেগে থাকে। আর সিলেটের উজানেই অবস্থান সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির। সম্প্রতি উজানে এক দিনে অতিভারী বৃষ্টির প্রবণতা বেড়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার, নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ভারতের ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজি এবং বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় বলা হয়, গত চার দশকে ভারতের মেঘালয়-আসাম এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে থাকলেও এক দিনে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা চারগুণ বেড়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টাচ্ছে, যা সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করছে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে।


কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধিতে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৪৩
বিজয় ধর, রাঙামাটি

টানা ভারী বর্ষণের ফলে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপ্তাই কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের (কপাবিকে) বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রের ৫টি ইউনিটের মধ্যে ৪টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬৪ মেগাওয়াট।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের জানিয়েছেন, বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩নং ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। ১ ও ২নং ইউনিট থেকে ৪২ মেগাওয়াট করে ৮৪ মেগাওয়াট এবং ৪ ও ৫নং ইউনিট থেকে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াটসহ সর্বমোট ১৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। যেটি চলতি বছরে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সর্বাধিক উৎপাদন। পানির পরিমাণ বাড়তে থাকলে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা জানান, বছরের এ সময় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৪ দশমিক ১৬ ফুট এমএসএল থাকার কথা থাকলেও গতকাল কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ রয়েছে রুলকার্ভ অনুযায়ী ৮৩ দশমিক ৬৯ ফুট মিন সি লেভেল, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ পানির লেভেল। এ হ্রদের পানির ধারণক্ষমতা ১০৯ ফুট মিন সি লেভেল।

তবে পানি বাড়লেও পরিকল্পিতভাবে কাপ্তাই হ্রদে ড্রেজিং না হওয়ায় হ্রদের ভেতরে পলি জমেছে। ফলে এর ড্রেজিং করা জরুরি বলে দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, কাপ্তাইয়ে অবস্থিত দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে সর্বমোট ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।


এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে সিলেট

ব্রহ্মপুত্র তীরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা
সিলেটের জৈন্তাপুরে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১১:৫৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর একনাগাড়ে বৃষ্টিতে এক মাসের মধ্যে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট অঞ্চল। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরেরও অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, একই কারণে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চল এবং তিস্তা ও ধরলায় নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে লালমনিরহাট-রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

সিলেট ব্যুরো থেকে দেবাশীষ দেবু জানান, সিলেটে গত ২৭ মে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী এ বন্যায় পানিবন্দি ছিলেন ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। প্রথম বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই ১৫ জুন থেকে ফের বন্যা হয় সিলেটে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার দিন ভোর থেকে অতিভারী বর্ষণে তলিয়ে যায় সিলেট নগরসহ জেলার বেশির ভাগ এলাকা। এই বন্যার পানি ক্রমেই বিস্তৃত হয়ে পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে সিলেটের সব উপজেলার অন্তত ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে গত সপ্তাহ থেকে নামতে শুরু করে দ্বিতীয় দফার বন্যার পানি।

তবে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি পুরো নামার আগে গত সোমবার থেকে সিলেটে ফের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঢলে কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা তিনদফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এাকার বাসিন্দারা। তলিয়ে গেছে এসব উপজেলার রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। অনেকের ঘরবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সিলেটে ৫টি নদীর পানি ৬টি স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি আমলশীদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি ২২ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা পয়েন্টে ০.৭ সেন্টিমিটার এবং সারিগোয়াইন নদীর পানি গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মূলত ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টির কারণে সিলেটে আবার বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চেরাপুঞ্জিতে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

তিনি বলেন, আগে থেকেই সিলেটের নদনদী ও হাওর পানিতে ভরাট হয়ে আছে। ফলে নতুন করে বৃষ্টিতে ঢলের পানি নামতে পারছে না। এ কারণে দ্রুত লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

কানাইঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সোমবার সকাল থেকে ঢলে কানাইঘাটে সুরমা ও লোভা নদীর পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ফলে আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকের অন্তত ১৮টি স্থান দিয়ে সুরমা ও লোভা নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার জনপদ ফের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা, দরবস্ত, ফতেপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব এলাকায় অনেকেই নতুন করে আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, তৃতীয় দফায় ভারী বর্ষণে জৈন্তাপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি আগের আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, যেসব ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের সময় নষ্ট না করে এখনই নিরাপদ আশ্রয়ে কিংবা নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে।

এদিকে, সোমবার থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে রাতে সিলেট নগরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জলমগ্ন ছিল নগরের অন্তত ২৫টি এলাকা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তবে দুপুরে বৃষ্টি থামার পর পানি নামতে শুরু করে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় পানি জমেছিল। তবে বৃষ্টির থামার পর পানি নেমে গেছে। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বৃষ্টির পানি যাতে না জমে, সে জন্য কাজ করছেন।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সদরের যাত্রাপুর ও উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বাড়ছে ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি।

এ অবস্থায় এসব নদ-নদীর নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে দুধকুমার, ধরলা ও তিস্তা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েকটি পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রমের পথে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।

পাউবো কুড়িগ্রামের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দুধকুমার অববাহিকার পাটেশ্বরী পয়েন্টে ১৪১ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৪২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ধরলার পানি কুড়িগ্রাম সেতু পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্রে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে এর নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে চলছে তীব্র ভাঙন। উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চর বালাডোবা, বতুয়াতলি মুসার চর, ব্যাপারীপাড়া নতুন চর এবং পূর্ব ও পশ্চিম মশালের চরের অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। বাধ্য হয়ে এসব পরিবারের অনেকে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন। ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী মোল্লাহাট বাজার এলাকায় শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। বাজার রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে পানিবন্দি পরিবারে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’

এদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে যাত্রাপুরের রলাকাটা চরে একের পর এক বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। চরের উত্তর দিকে অব্যাহত ভাঙনে গত এক সপ্তাহে অন্তত ১৫ পরিবার বাস্তুহারা হয়েছে। ওই গ্রামের বাসিন্দা বেলাল বলেন, ‘বন্যার পানি এখনও বাড়িঘরে প্রবেশ করে নাই। তবে ভাঙনে এলাকার মানুষ দিশেহারা। রলাকাটার পশ্চিমে মাঝের চর ও চিড়াখাওয়ার চরের আবাদি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তে থাকলে দু-এক দিনের মধ্যে বাড়িঘরে ঢুকবে।’

যাত্রাপুরের কালির আলগা ও গোয়াইলপুরির চরে গত দুই দিনে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সেখানকার বেশ কিছু পরিবারের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বেশির ভাগ পরিবারের বসতবাড়ির চারপাশে পানি।

গোয়াইলপুরির চরের বাসিন্দা মাহবুব বলেন, ‘পরিস্থিতি খারাপ। বন্যার কবলে পইড়া গেছি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতাছে। আইজ-কাইলের মধ্যে সব ঘরবাড়িতে পানি ঢুইকা পড়ব।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আমরা ত্রাণ সহায়তা বিতরণ অব্যাহত রেখেছি। জেলাজুড়ে চার শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবারও পানি বৃদ্ধির ফলে যেসব এলাকা প্লাবিত হচ্ছে আমরা সেদিকে বাড়তি নজর রাখছি।’

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খরস্রোতা মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে খাগড়াছড়ি সদর ও দীঘিনালায় মিলে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

মাইনি এবং চেঙ্গি নদী পানির বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় লোকজন স্থানীয় স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছেন।

হঠাৎ করে পানি উঠায় লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকেই গরু-ছাগল নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে এসেছেন। পানি বৃদ্ধিতে শহরের একমাত্র পৌর বাস টার্মিনালটি পানিতে ডুবে যায়। যানবাহনগুলোকে উঁচু রাস্তায় সুরক্ষায় রাখা হয়েছে।

একইভাবে দীঘিনালার ১০টি গ্রাম পানির নিচে রয়েছে। এখানকার মেরুংবাজারটি পানির নিচে।

সাজেকে আটকা শতাধিক পর্যটক

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় পাহাড়ি ঢলের কারণে কাচাংল নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাজেকের মাচালং বাজার, বাঘাইহাট এবং পার্শ্ববর্তী খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সাজেকে শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছে।

এদিকে, সাজেকের কুঁড়েঘর রিসোর্টের ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম জানান, রোববার থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে কাচালং নদীতে পানি বৃদ্ধি হয়ে মাচালং ও বাঘাইহাটে রাস্তার ওপর পানি উঠে যাওয়ায় সাজেকের কয়েকশ পর্যটক আটকা পড়েছেন।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পাহাড়ি ঢলে কাচালং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সাজেকের আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে পড়েছে। যে কারণে সাজেক থেকে পর্যটকবাহী যানগুলো ছেড়ে যেতে পারেনি।


যমুনার ভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ১৩:২১
মোস্তাক আহমেদ মনির, সরিষাবাড়ী (জামালপুর)

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে একটি গ্রাম। গৃহহীন হয়ে পড়েছে নদীর পাড়ে বাস করা প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। পায়নি সরকারি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা।

সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা ইউনিয়ন একটি নদীভাঙন কবলিত ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বহমান যমুনা নদীর করাল গ্রাসে প্রতি বছর শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন অজানা গন্তব্যে। যমুনা নদী যেন এদের পিছু ছাড়ছেই না। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ নলসন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্রতি বছর নদীভাঙনের ফলে অধিকাংশ চরাঞ্চলের গ্রামগুলো বিলীন হয়ে গিয়েছে। বেঁচে ছিল মিরকুটিয়া গ্রামের একাংশ কাঁঠাল তলা এলাকা। সেটিও আজ ভাঙনের কবলে। কয়েক দিনের টানা ভাঙনের ফলে নদীর বুকে বিলীন হয়েছে এ এলাকার প্রায় ২০টি বসতবাড়ি।

স্থানীয় বানিছা বেওয়া, বিলকিস বেগম, আশরাফুল, মোখলেসসহ একাধিক ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, প্রতি বছর এখানে নদীভাঙনের ফলে তাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে যায়। এর আগে এখানে অনেক বাড়ি-ঘর ছিল। সব নদীতে ভেঙে গেছে। এবারও তাদের অনেকের রান্না ঘর, বসত ঘর, টিউবওয়েলসহ নানা স্থাপনা এক রাতের মধ্যে ভেঙে নদীতে চলে গেছে। একাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে থাকায় ভেঙে খোলা মাঠে রেখে দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বলে এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ভাঙন রোধে ও অসহায়দের শেষ সম্বল বাঁচাতে প্রয়োজনীয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

এ বিষয়ে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, পিংনা ইউনিয়নের যমুনার নদীভাঙন এলাকা সরেজমিনে তদন্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। অতি দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ এমপি বলেন, ‘ভাঙনের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভাঙন এলাকায় ইউএনওর মাধ্যমে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’


পুলিশের এসআইসহ ৫ জনের ২১ বছরের কারাদণ্ড

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় ট্রাকের চালক ও সহকারীকে অপহরণ, চাঁদা দাবি ও ২৫২ বস্তা পেঁয়াজ লুটের মামলায় পুলিশের এসআইসহ পাঁচজনকে পৃথক দুটি ধারায় ২১ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দুটি ধারায় প্রত্যেককে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামিকে দুই বছরের কারাদণ্ড, ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ এম আলী আহমেদ এই রায় দেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুর রহমান ও স্টেনোগ্রাফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুল হাসান, সলঙ্গা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মতিউর রহমান খান, সলঙ্গা থানার পাটধারী গ্রামের রেজাউল করিম রনি, হাসানপুর গ্রামের সবুজ আলী, বাগুন্দা গ্রামের আনিস ড্রাইভার ও সিরাজগঞ্জ সদরের কান্দাপাড়া গ্রামের সাব্বির আলম সবুজ।

তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামি মিন্টু ও মনসুর আলীকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাব্বির আলম সবুজ ছাড়া অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১০ জুলাই রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ বন্দর থেকে ২৫২ বস্তা ভারতীয় পেঁয়াজের একটি ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হন চালক মো. মোরশেদ আলী ও তার সহকারী রবিউল। ট্রাকটি সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার র‍্যাব-১২-এর কার্যালয়ের সামনে সমবায় পেট্রল পাম্পে টয়লেট ব্যবহারের জন্য থামানো হয়। এ সময় পুলিশ সদস্য পরিচয়ে ট্রাকের চালক ও সহকারীকে প্রাইভেটকারে করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রেখে ট্রাকের মালিকের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।

এ ঘটনায় ট্রাকের মালিক মজিবুর রহমান সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার নাটুপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাইনুল হাসান, সলঙ্গা থানার এএসআই মতিউর রহমান খানসহ আটজনকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।


টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে পাহাড়ধস, আশঙ্কা চট্টগ্রামেও

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০৮:৫৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

একনাগাড়ে চার দিন ধরে ভারী ও অতি ভারী বৃষ্টিতে দেশের অন্য এলাকাগুলোর মতো জনদুর্ভোগে পড়েছেন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। এর মধ্যে চেঙ্গি-মাইনি-কাচালং নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উভয় জেলার দুর্গম এলাকায় পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটেছে। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। জেলায় পাহাড়ধসের আশঙ্কাও করছে আবহাওয়া অফিস।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, খাগড়াছড়িতে টানা বৃষ্টিপাতে বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারায় পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। এতে ভোর থেকে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের শ্রমিকরা মাটি সরালে তিন ঘণ্টা পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সকাল ৯টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে যানবাহন ছেড়ে যায়।

এ ছাড়া জেলা সদরের শালবাগান, সবুজবাগ এলাকায় পাহাড় ধসে বাসাবাড়িতে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বসতবাড়িসহ ঘরের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। শালবাগান এলাকার হরিনাথপাড়া, রসুলপুর, পূর্ব শালবাগানে গভীর রাতে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে কোনো ধরনের হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও আসবাবপত্র। তবে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

হরিনাথপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসের পাশাপাশি নিরাপত্তাপ্রাচীর হেলে পড়ে একটি টিনের ঘরের ওপর। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রশাসন।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা ইসলাম তূর্য জানান, দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘চেঙ্গী নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ায় অল্প বৃষ্টিতেই শহরের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ছে। পাহাড়ধসের শঙ্কা আছে এমন এলাকার লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জেলায় ১০০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে দুর্যোগ মোকাবিলা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিদুৎ সংযোগ বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে।’ দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, জেলায় টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসে বাঘাইছড়ি-লংগদুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সকালে বাঘাইছড়ি থেকে লংগদু সড়কের বাঘাইছড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের গুচ্ছগ্রাম এলাকা ও বটতলী হেডম্যান পাড়ায় পৃথক পৃথক মাটি ধসের ঘটনা ঘটে। ফলে এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পরপরই সড়কটি সচল করতে বাঘাইছড়ি থানার পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় যুবকরা একসঙ্গে কাজ করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।

বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ জানান, সকালে বাঘাইছড়ি-লংগদু সড়কের দুটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ সদস্য ও স্থানীয়রা সড়কটি সচলের কাজ শুরু করে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে এখানে আবারও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে টানা চার দিনের বৃষ্টিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্যের বাজার চাকতাই-খাতুনগঞ্জ। গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী চব্বিশ ঘণ্টায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

নগরীর নিচু এলাকা চকবাজার, ষোলশহর, আগ্রাবাদ সিডিএ, শুলকবহর, কমার্স কলেজসহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় সড়কের ওপর পানি জমে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে।

গত চার দিন ধরে (শনিবার থেকে) কখনও থেমে থেমে, আবার কখনও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত শনিবার থেকে শুরু হওয়া এ বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এদিকে, মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে চট্টগ্রামে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অফিসগামী লোকজনকে। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা ভীষণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্ষার সময় পরীক্ষা না নিয়ে শুষ্ক সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক।

চাকতাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বৃষ্টিতে চাকতাই-খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতা না হলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টির কারণে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা চাকতাই-খাতুনগঞ্জে আসতে পারছেন না। বেচাকেনা অত্যন্ত কম। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।’

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।


এক সপ্তাহে মারা গেছে ডলফিনসহ ৭ মা মাছ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে আরও একটি বিপন্ন প্রজাতির গাঙ্গেয় ডলফিন এবং একটি প্রজননক্ষম মা (ব্রুড) মাছের মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় মৃত ডলফিন এবং মা মাছটি দেখা যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। তিনি বলেন, ‘সোমবার রাতে হালদা নদীতে আজিমের ঘাট এলাকায় জোয়ারের সময় একটি মৃত ডলফিন ও একটি ব্রুড মাছ ভেসে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে আমাকে ছবি তুলে পাঠিয়েছে।’

এ নিয়ে গত সাত বছরে (২০১৭ সাল থেকে ২৫ জুন ২০২৪ পর্যন্ত) হালদা নদী থেকে ৪২টি মৃত ডলফিন উদ্ধার করা হলো জানিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর মৃত ব্রুড (প্রজননক্ষম) মাছ উদ্ধার করা হয়েছে মোট ছয়টি।’

হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি সূত্র জানিয়েছে, গত ১০ দিনে হালদা নদীতে ছয়টি ব্রুড মাছ (একটি রুই এবং পাঁচটি কাতলা) ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য একটি অশনিসংকেত। স্থানীয়দের কাছে পাওয়া তথ্য অনুসারে ওই ল্যাবরেটরির একজন গবেষণা কর্মকর্তা জানান, সোমবার (১ জুলাই) রাতে আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মৃত কাতলা ও একটি ডলফিন জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এর আগে রোববার দুপুর ১টার দিকে আজিমের ঘাট এলাকা থেকে প্রায় ১৯ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের (দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৮ সেন্টিমিটার) আরও একটি মৃত কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে।

গত ২৮ জুন হাটহাজারী উপজেলার উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের কুমারখালী এলাকা থেকে দুটি কাতলা ব্রুড মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। একটা ওজন ১০ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৫৮ সেন্টিমিটার, অপরটির ওজন ১২ কেজি ৫০০ গ্রাম দৈর্ঘ্য ৯৮ সেন্টিমিটার।

গত ২৬ জুন রাউজান উরকিরচর বাকর আলী চৌধুরী ঘাট এলাকায় ১০ কেজি ওজনের একটি মা রুই মাছ মরে ভেসে উঠেছে। তার কয়েক দিন আগেও ১২ কেজি ওজনের একটি মা কাতলা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল।

ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হালদা নদীতে দুই বছর পরে এক সপ্তাহের মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং একটি ডলফিনের মৃত্যু হালদার পরিবেশের জন্য একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আরও একটি হতাশাজনক বিষয়, ২০১৬ সালের পর হালদা নদীতে এ বছর মাছেরা সবচেয়ে কম পরিমাণ ডিম দিয়েছে, যা পরিমাণে নমুনা ডিমের চেয়ে একটু বেশি। ইতোমধ্যে প্রজনন মৌসুমের ছয়টি জো শেষ হওয়ার মাধ্যমে ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে মাছের ডিম ছাড়ার কোনো রেকর্ড নেই। হালদার ডিম সংগ্রহকারীদের এত হতাশার মধ্যে ছয়টি ব্রুড মাছ এবং দুটি ডলফিনের মৃত্যু এই নদীর পরিবেশগত বিপর্যয়ের ইঙ্গিত বহন করে। এই ব্রুড মাছের মৃত্যুর জন্য প্রাথমিকভাবে শাখা খালগুলোর দূষণ এবং বিষ প্রয়োগে মাছ মারার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করি। তবে হালদা নদী তথা বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ রক্ষার জন্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারণ উদ্ঘাটনের জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে, হালদা নদীর গাঙ্গেয় প্রজাতির ডলফিনটি বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকায় রয়েছে।


ফরিদপুরে বাস-মোটরসাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের বোয়ালমারিতে লোকালবাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে মাঝকান্দি-বোয়ালমারী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের চতুল ইউনিয়নের বাইখির মিলঘর এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার নওপাড়া গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে হুসাইন মিয়া (২২) এবং একই উপজেলার ধলেরচর গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. রাজু শেখ (২১)। সম্পর্কে তারা মামাতো ফুফাতো ভাই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আলফাডাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা ফরিদপুরগামি লোকাল বাস মালঞ্চ পরিবহনের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বোয়ালমারি আলফাডাঙ্গাগামি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোটরসাইকেল চালক হুসাইন মিয়া (২২) বাসের চাকায় পিষ্ট হয় এবং মোটরসাইকেলের অপর আরোহী মো. রাজু শেখ (২১) সড়কে পড়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হলে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় মোটরসাইকেলটি বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছিল বলে স্থানীয়রা জানান। নিহতদের লাশ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে থানায় নিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার পর বাসের চালকসহ স্টাফরা পালিয়ে গেলেও বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ।

বোয়ালমারী থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুরগামি লোকাল বাসের (মালঞ্চ পরিবহন) মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেলের দুই আরোহী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এ ঘটনায় ঘাতক বাসটিকে আটক করতে পারলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।’ এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।


রমেক ডরমেটরি থেকে চিকিৎসকের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর মেডিকেল কলেজের (রমেক) শেখ রাসেল পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডরমেটরি ভবন থেকে আক্তারুজ্জামান (৫০) নামে একজন চিকিৎসকের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই চিকিৎসকের গ্রামের বাড়ি নীলফামারী।

আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজের শেখ রাসেল ডরমেটরি ভবনের ৫ম তলার ৬নং কক্ষ থেকে দরজা ভেঙে তার রক্তাক্ত নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

আক্তারুজ্জামান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (পিজি) নিউরোসার্জারি বিভাগে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে একই মেডিকেল কলেজে পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের ছাত্র ছিলেন। আগামী ৬ জুলাই তার পরীক্ষা ছিল। ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে তিন দিন আগে তিনি রমেকে আসেন।

পুলিশ ও অন্যান্য শিক্ষার্থী সূত্রে জানা যায়, রংপুর মেডিকেল কলেজের শেখ রাসেল ডরমেটরি ভবনের ৫ম তলার ৬নং কক্ষ থেকে পচা গন্ধ বের হয় এবং দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বের হতে দেখা যায়। পরে পুলিশ খবর পেয়ে দরজার তালা ভেঙে চিকিৎসক আক্তারুজ্জামানের নগ্ন মরদেহ উদ্ধার করে।

বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, আক্তারুজ্জামান ইতোপূর্বে ৮ বার পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে কোনোভাবেই উত্তীর্ণ হতে পারছিলেন না। তা ছাড়া তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন বলে কেউ কেউ দাবি করেন।

ডা. আক্তারুজ্জামানের দ্বিতীয় স্ত্রী কোহিনুর আক্তার জানান, আক্তারুজ্জামান পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রংপুরে এসেছিলেন। তিনি লিভার ও পায়ের ব্যথাসহ কয়েকটি রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) আরিফুজ্জামান জানান, খবর পেয়েএকজন চিকিৎসকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজুর রহমান জানান, ডা. আক্তারুজ্জামান পোস্ট গ্র্যাজুয়েটের শিক্ষার্থী ছিলেন। সকালে ডরমেটরি থেকে জানানো হয়, আক্তারুজ্জামানের রুম থেকে গন্ধ আর রক্ত আসছিল। পরে বিষয়টি আমরা পুলিশ ও জেলা প্রশাসককে জানাই। একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করে কিছু বলা যাচ্ছে না।


রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এবার নৈশপ্রহরী নিহত

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘আধিপত্য বিস্তারের জেরে’ সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলিতে এক নৈশপ্রহরী নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন।

গতকাল সোমবার রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার পালংখালি ইউনিয়নের হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) মো. আমির জাফর।

নিহত মো. সলিম (৩০) উখিয়ার ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের মো. মকবুলের ছেলে। আহতরা হলেন একই ক্যাম্পের মো. আলমের ছেলে মো. ইউনুস এবং আরিফ উল্লাহর ছেলে সবি উল্লাহ। হতাহত তিনজন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নৈশপ্রহরী হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

স্থানীয়দের বরাতে মো. আমির জাফর বলেন, সোমবার মধ্যরাতে উখিয়ার হাকিম পাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-৩ ব্লকের বালুর মাঠ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসওর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে এপিবিএন পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ঘটনাস্থল থেকে একজনকে মৃত এবং দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

আহতদের উদ্ধার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানান এডিআইজি।

আমির জাফর জানান, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, আধিপত্য বিস্তারের জেরে রোহিঙ্গাদের দুই সন্ত্রাসী দলের মধ্যে সংঘর্ষে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

উখিয়া থানার ওসি মো. শামীম হোসেন জানান, ঘটনাস্থল থেকে একজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।


বরিশালে কোল্ডস্টোরেজ থেকে আড়াই লাখ ডিম উদ্ধার

৬ পাইকারকে জরিমানা
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশাল নগরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোল্ডস্টোরেজে ডিম মজুদ করায় ছয় পাইকারকে জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কোল্ডস্টোরেজ কর্তৃপক্ষকেও জরিমানা করা হয়।

বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরের নিউ হাটখোলা এলাকার এ আর খান কোল্ডস্টোরেজে অভিযান চালিয়ে পৃথক দুই আইনে জরিমানাগুলো করা হয় বলে জানিয়েছেন ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইন্দ্রানী দাস।

জরিমানা দেওয়া ডিমের পাইকারি বিক্রেতারা হলেন ফারুক হাওলাদার, ইমাদুল আকন, শহীদুল ইসলাম, মো. মুনসুর ও মো. হাবিব।

ভোক্তা অধিকারের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমি রানী মিত্র জানান, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় এবং বরিশাল জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত যৌথভাবে নগরীর নিউ হাটখোলা এলাকায় এ আর খান কোল্ডস্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করেন। তারা ওই কোল্ডস্টোরেজে দুই থেকে আড়াই লাখ হাঁস ও মুরগির ডিম মজুদ পেয়েছেন। পরে সেখানকার ডিম মজুদকারী পাইকারি বিক্রেতাদের খবর দেওয়া হয়। ডিমের পাইকারি বিক্রেতারা এসে কালোবাজারে বিক্রি কিংবা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির জন্য মজুদ করেননি বলে দাবি করেন। তবে তাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেননি ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ কারণে ভোক্তা অধিকার আইনে ছয় বিক্রেতাকে পাঁচ হাজার করে মোট ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় মজুদ করা হাঁসের ডিম সাত দিনের মধ্যে ও মুরগির ডিম তিন দিনের মধ্যে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। পাইকাররা নির্দেশ মানবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

উল্লেখ্য, বর্তমানে হাঁস-মুরগির খাদ্যের দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে গত দুই মাস থেকে ডিমের দাম সারা দেশে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে মুরগির এক ডজন লাল ডিম ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এজন্য মুরগির খামারি এবং পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের দায়ী করছেন ক্রেতারা। তাদের দাবি, খামারি ও পাইকাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ডিমের বাজার অস্থির করে তুলেছে। আর তাদের দামের ওপর অতিরিক্ত লাভ করতে গিয়ে ডিমের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে, কোল্ড স্টোরেজের লাইসেন্স না থাকায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. শাহরুখ আলম শান্তনু ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কোল্ডস্টোরেজ কর্তৃপক্ষকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন।

ম্যাজিস্ট্রেট শাহরুখ আলম শান্তনু বলেন, কোল্ডস্টোরেজটি নতুন করা হয়েছে। তাই তারা এখনো লাইসেন্স নেয়নি বলে জানিয়েছে। তবে লাইসেন্স না নিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারে না। এ কারণে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে লাইসেন্স করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, ৩টি বোমা উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৪ ২০:১৮
রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে তারাব পৌরসভার আড়িয়াবো এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে পুলিশের এন্টি টেরোরিজমের একটি ইউনিট বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পরে দুপুর ২টার দিকে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম টিম অভিযান চালায়।

এ সময় বাড়ির ভেতর থেকে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়। তিন দফায় বোমা ডিসপোজাল টিম বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করে।

স্থানীয়রা বলেন, বাড়িটি আট বছর আগে সৌদি আরব প্রবাসী জাকির হোসেন নির্মাণ করেন। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাড়িটি দেখভাল করতেন মোহাম্মদ সুন্নত মিয়া। বাড়ির নিচের ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন শাহনেওয়াজ মিয়া। গত এক সপ্তাহ আগে তিন তলার ভাড়াটিয়া হুজুর (নাম অজানা) নিচে ময়লা ফেলতে আসেন। ওই সময় তিনি তার বাড়ির ও নাম কী জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু হুজুর নাম ঠিকানা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

শাহনেওয়াজ মিয়া বলেন, তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে কোথাও চাকরি করেন বলেছেন। বয়স ছিল অল্প। এর বাইরে কোনো ঠিকানা বলেননি। তার বাসায় একজন নারী, ওই হুজুর ও দুই বাচ্চা ছিল। গত তিন দিন (ঘটনার দিন থেকে তিন দিন আগে) বাসায় তালা ঝুলিয়ে তারা চলে যান।

হুজুরের পাশের ফ্ল্যাটে থাকতেন ইমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘ওনি হুজুর ছিল। আমার পাশের ফ্ল্যাটে থাকতো। আসা-যাওয়া করতো অনেকে। কিন্তু তারা কারা আমরা চিনি না, জানিও না।’

এদিকে, জঙ্গি আস্তানা ঘেরাওয়ের খবরে পুরো বরপা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাড়িটি দেখতে স্থানীয় ও আশপাশের লোকজন ও উৎসুক জনতার ভিড় জমায়। বোমা বিস্ফারণের পর আতঙ্ক আরও বাড়ে।

শাহ আলম নামে স্থানীয় একজন বলেন, এলাকার ভেতরে জঙ্গি আস্তানা, একটুতো ভয় আছেই। তবে সবার উচিত সব পরিচয় নিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া।

আড়িয়াবো এলাকায় ভাড়া থাকেন আব্দুর রাজ্জাক। গার্মেন্টে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘খবরটা হুনার (শোনার) পর ডরে (ভয়ে) আছি। কেডা (কে) যে কি এইডাতো (এটাই তো) কওয়া যায় না। এত বড় কিছু এলাকায় অথচ কেউ বুঝবার পারল না।’

পুলিশ জানায়, বোমা তিনটি উদ্ধারের পর বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে একটি, বিকেল ৪টায় একটি ও বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে একটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিস্ত্রিয় করে বোমা ডিসপোজেবল টিম।

এন্টি টেরোরিজমের এসপি (অপারেশন) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল কক্সবাজার থেকে একজন নারী জঙ্গি সদস্যকে গ্রেপ্তার করি। তার দেওয়া তথ্যমতে, আমরা জানতে পারি ঢাকার আশপাশে রূপগঞ্জে কোথাও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে। গতকাল থেকে আড়িয়াবো এলাকায় টিম কাজ করে। পরে নিশ্চিত হই কোন বিল্ডিংয়ে জঙ্গিরা অবস্থান করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের টিম বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে। পরে আমরা অভিযান পরিচালনা করি। অভিযান শেষে আনসারুল্লা বাহিনীর ব্যবহৃত চাপাতি ও ছুরি জব্দ করা হয়। এ ছাড়া বোমা বানানোর বিভিন্ন আইটি সরঞ্জামাদি পাওয়া গেছে।’

মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, ওই বাড়িতে ২০ কক্ষ রয়েছে। সবগুলো রুমে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে একটি কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। তালা ভেঙে অভিযান চালিয়ে তিনটি শক্তিশালী বোমা উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, বোমাগুলো রুমেই তৈরি করা হয়েছিল। দূর থেকে এগুলো বহন করা সম্ভব না। এখানে দু’জন জঙ্গি সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে একজন প্রশিক্ষক ছিল।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন বলেন, জঙ্গিরা নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েই কাজ করে। হয়ত তাদের বড় কোনো পরিকল্পনা ছিল।


নারায়ণগঞ্জে জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা ভবনে অভিযান শুরু

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ২ জুলাই, ২০২৪ ১৫:৩৭
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি চারতলা বাড়িতে অভিযান শুরু করেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। আজ মঙ্গলবার দুপুর থেকে অভিযান শুরু করে এটিইউ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এর আগে, রূপগঞ্জের বরপা এলাকায় সকাল থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে এটিইউ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযান শুরু হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, সকাল থেকে জঙ্গি সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ)। দুপুরে বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো কাউকে আটক করার তথ্য আমরা পাইনি। অভিযান শেষে বিস্তারিত করা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে ঘিরে রাখা জঙ্গি সন্দেহে ঘিরে রাখা ওই বাড়িটি সৌদি আরব প্রবাসী জাকির মিয়ার।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে কক্সবাজার থেকে এক নারী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ সকালে এটিইউর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার বরপা এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে চারতলা এই বাড়িটি ঘেরাও করে অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন এটিইউর পুলিশ সুপার (অপারেশনস) মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন।


banner close