নিয়োগ পরীক্ষায় মোছা. জেসমিন আক্তার নম্বর পেয়েছিলেন ১৯। তার এই নম্বরকে উল্টে ৯১ করে দেয়া হয়। আর তাতেই তিনি নিয়োগ পান খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে। বর্তমানে কর্মরত আছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে।
তাজুল ইসলাম নিয়োগ লিখিত পরীক্ষায় ৫৫ নম্বর পেলেও চাকরি দেয়ার জন্য তাকে দেয়া হয় ৮৯। তিনি এখন শরীয়তপুর উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক।
পরীক্ষার নম্বর জালিয়াতি করে এরকমভাবে ৪৪ জনকে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন চাকরিতে যোগ দেননি। অন্যরা গত এক দশক ধরে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে চাকরি করে আসছেন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়।
ওই নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে ৫৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মো. মনিরুল হক। কয়েক হাত ঘুরে মামলার শেষ তদন্ত করেন আরেক উপপরিচালক আলী আকবর। তার তদন্তে তিনি তিনজনকে অব্যাহতি দিয়ে ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে আসামি করেন।
গতকাল সোমবার আলী আকবর ওই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে যাদের নাম নিশ্চিতভাবে অপরাধী হিসেবে শনাক্ত হয়েছে, তাদের অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে।
দুদক সূত্র জানায়, নিয়োগ পরীক্ষার জন্য গঠিত বাছাই কমিটির কয়েকজন সদস্য ও পরীক্ষা নেয়ার সময় তথ্য প্রযুক্তি সহায়তা দেয়া ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের কর্মকর্তারা সরাসরি নিয়োগ জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে আছেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ) ইলাহী দাদ খান, কমিটির সদস্য ও খাদ্য বিভাগের সাবেক উপসচিব (বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব) নাসিমা বেগম, খাদ্য অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক ইফতেখার আহমেদ, এবং ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানার্স অ্যান্ড কনসালটেন্টসের ম্যানেজার মো. আইউব আলী, সাবেক সিস্টেম এনালিস্ট ও টেকনিক্যাল ম্যানেজার আসাদুর রহমান, সাবেক হার্ডওয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. আরিফ হোসেন এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাটাবেজ অ্যাডমিন মো. আবুল কাসেম।
এ ছাড়া খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ৪৩ খাদ্য পরিদর্শক চার্জশিটে আসামি হয়েছেন। এরা হলেন- শরীয়তপুর উপজেলার মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মো. জহিরুল ইসলাম, সিলেট সদরের অপূর্ব কুমার রায়, সাভার উপজেলার আবু জাকির মোহাম্মদ রিজওয়ানুর রহমান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার আসমা রহমান, মানিকগঞ্জ হরিরামপুরের আসমা ইসলাম, সিলেটের বিয়ানীবাজারের জাহানারা জলি, শেরপুর নয়াবিল টিপিসির অলিউর রহমান, জামালপুর সদর উপজেলার সানজিদা সুলতানা, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার উম্মে হানী, সিলেট বিশ্বনাথ উপজেলার মোহাম্মদ মোহাইমিনুল ইসলাম ভূঞা, হবিগঞ্জ আজমিরীগঞ্জের প্রতাপ কুমার সরকার, পাবনার চাটমোহরের কোহিনুর আক্তার, সুনামগঞ্জ ধর্মপাশার মির আরিফুর রহমান, নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, ময়মনসিংহ গয়েশপুরের এলএসডির মো. সাজ্জাদ হোসেন খান পাঠান, নেত্রকোনা সদর উপজেলার হিমেল চন্দ্র সরকার, ঢাকা সিএসডির মোহাম্মদ রইছ উদ্দিন, শেরপুর সদর উপজেলার সালমা আক্তার, জামালপুর এলএসডির শামছুন নাহার, টাঙ্গাইল ঘাটাইলের ইয়াসির আরাফাত, টাঙ্গাইল নাগরপুর উপজেলার মো. এদিব মাহমুদ, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার হালিমা আহমেদ, ঝালকাঠি সদর উপজেলার রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার মোহাম্মদ তৈয়ব উল্যাহ খান, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার শেখ মো. জাকারিয়া হাসান, নওগাঁর বদলগাছীর মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, নওগাঁর পোরশা উপজেলার মো. আতিকুর রহমান, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোছা. মমতাজ বেগম, জামালগঞ্জ এলএসডির কানিজ শারমিন, পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মো. জুনায়েদ কবীর, মানিকগঞ্জ সিংগাইর উপজেলার সেলিনা আক্তার, সিরাজগঞ্জ কাজীপুর উপজেলার মোহাম্মদ আলী মিঞা, রংপুর মিঠাপুকুরের মোছা. জাকিয়া সুলতানা, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার অনিমেষ কুমার সরকার, নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মোছা. জেসমিন আক্তার, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার মো. রায়হান কবির, রংপুর পীরগঞ্জ মিঠাপুকুর টিপিসির মো. শরিফুল ইসলাম, সাতক্ষীরা দেবহাটার বিল্লাল হোসেন, বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মো. আবুল হাশেম, পটুয়াখালী কাঁঠালতলি উপজেলার ইসরাত জাহান মনা, বরগুনা সদর উপজেলার আরিফা সুলতানা এবং সুনামগঞ্জ দিরাই উপজেলার খাদ্য পরিদর্শক আশীষ কুমার রায়।
দুদক সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদপ্তরের ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৫৫২টি শূন্য পদ পূরণের জন্য খাদ্য অধিদপ্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর পরই খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ইলাহী দাদ খানকে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়।
২০১১ সালের ২৩ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মৌখিক পরীক্ষা শেষে ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি উত্তীর্ণদের নাম ঘোষণা করা হয়।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে যে, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, ফেনী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিত অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীর বাঘাবাড়ীতে ৩৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোর ৬ টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১ মিলিমিটার।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৩ শতাংশ। ঢাকায় বাতাসের গতি পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সম্মতি জানিয়েছে গত শুক্রবার। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনের বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এ তথ্য জানানোর পর থেকে এ বিষয়ে আলোচনা-সমোলোচনা চলছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ এলাকা এখনও দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির দখলে থাকায়, দেশটির জান্তা সরকার তাদের গ্রামে ফিরিয়ে নিতে পারবে কি করে এমন প্রশ্ন তুলেছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ২০২৪ সালে রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের গ্রাম থেকে পালিয়ে এপারে আসা রোহিঙ্গারা আমির হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির দখলে। রাখাইন রাজ্যে আমাদের ভিটা বাড়ি ছিল। আমাদের আরকান রাজ্যে এখন কোন সরকার নেই। আমাদের আরকানের জিম্মাদার এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্য জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ করে দখল করে রেখেছে আরকান আর্মি। যখন জান্তার দখলে ছিল তখন আমাদের নির্যাতন করে রাখাইন থেকে বিতাড়িত করেছে। আরাকানে দুটি এলাকায় এখনও রোহিঙ্গা আছে। তাদের ওপরেও নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে তারা (মিয়ানমারের জান্তা সরকার) এক লাখ রোহিঙ্গা কোথায় নিয়ে যাবে? জান্তা সরকার আমাদের জায়গায় আরকান আর্মিকে দখলে দিয়ে দিয়েছে। সেখানে আমাদের নিয়ে কোথায় রাখবে, এটিও স্পষ্ট করেনি দেশটির জান্তা সরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের (জান্তা সরকার) এর নতুন কৌশল কিনা সেটি চিন্তা করা দরকার। কেননা সেময় তাদের দখলে থাকা রাখাইন থেকে আমাদের রোহিঙ্গাদের) বিতাড়িত করেছিল। এখনো সেখানে (রাখাইনে) আরকান আর্মির সাথে জান্তা সরকারের যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য কিভাবে আমাদের তারা (জান্তা) সেখানে নিয়ে যাবেন।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী আরেকজন মো. আলম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরার আগে আমাদের কিছু শর্ত আছে। আমারা যেখানে বসবাস করছি সেখানে এখন আরকান আর্মির রাজত্ব। আমরা সেখানে ফিরব না। আর কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে এটা আগে পরিষ্কার হতে হবে। মিয়ানমার সরকার নিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের শর্ত, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড দিতে হবে। এগুলো সমাধান করে মিয়ানমার নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব জমি জমা সম্পত্তি যা ছিল সেগুলো আমাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যেভাবে মিয়ানমার বিভিন্ন গোষ্ঠী চলাফেরা করছে সেভাবে চলাফেরা করার সুযোগ করে দিতে হবে। এ শর্ত গুলো যদি মিয়ানমার সরকার পূর্ণ করে তাহলে আমরা ফিরব।’
টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের মাঝি নুর মোহাম্মদ জানান, আগেও জান্তা সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু এত বছর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা ফিরিয়ে নেননি। হঠাৎ কেন তারা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতেছে এটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।
বালুখালীর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা রফিক বলেন, মিয়ানমার সরকার রাজি হলেও এখন প্রত্যাবাসনের আগে আরও কাজ আছে। আগে রাখাইনে দখলে রাখা আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারে সরকারের সঙ্গে বসতে হবে। না হলে তারা যাওয়ার কথা বললেও যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দিয়েই ফেরাতে হবে। এই দাবি শুরু থেকে করে আসছি আমরা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘আট বছরের মধ্য মিয়ানমার জান্তা সরকার শুধু ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, এটি আসলে চিন্তার বিষয়। এত দিন পর কেন তারা ছোট একটি দল নিতে চাইছে এটা আমরা পরিষ্কার না। এখানে অনেক সংশয় রয়েছে।’
নতুন পুরোনো আর বাংলাদেশে এসে জন্ম নেওয়া মোট ১৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে। এ সংখ্যা আরো কম-বেশি হতে পারে জানিয়ে এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘এভাবে নিয়ে গেলে ৫২ বছরের বেশি সময় লাগবে বাংলাদেশ সব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন করতে। তাছাড়া আমাদের কোথায় নিয়ে রাখা হবে, বিষয়টি কেউ পরিষ্কার করেনি।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া রয়েছে। এর আগে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করা হলেও বাস্তবে প্রত্যাবাসন বারবার ভণ্ডুল হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর মধ্য হালিশহর এলাকার সড়কে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নগরীর বন্দর থানাধীন মধ্য হালিশহর-সংলগ্ন বাকের আলী টেকের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত পোশাককর্মীর নাম চাঁদনী বেগম (২২)। তিনি খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন খাজুরিয়া গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে। তিনি নগরীর ইপিজেড এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
বন্দর থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ওই নারী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এক লোক শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত ওই নারীকে স্থানীয় লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ছুরিকাঘাত করা ব্যক্তি ওই নারীর স্বামী হতে পারে বলে স্থানীয়রা বলেছেন। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি।’
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ঘটনাটি শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় সংঘটিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকালে দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। অনেককে হাতে বালতি নিয়ে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। তারা বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করছেন, যা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। হঠাৎ করে দুপক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বোমার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠছিল। আমরা ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারিনি।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমির স্নান শুরু হয়েছে। অষ্টমি স্নানের লগ্ন ভোর ৪টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই স্নানকে ঘিরে লাখো পুণ্যার্থীর ভিড় জমেছে।
চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচনের জন্য প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদে পূণ্যস্নান করে থাকেন।
আয়োজকরা জানান, এবার পুণ্যস্নান প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের রমনা বন্দর এলাকা থেকে পুটিকাটা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্নান উৎসবে রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুণ্যার্থীরা একদিন আগেই চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।
আগত পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য উপজেলার প্রায় ২২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুণ্যার্থীদের স্নান পরবর্তী পোশাক পরিবর্তনের জন্য এবং রাত্রী যাপনের জন্য ৪৪টি অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের পূজাপর্বের জন্য প্রায় দুই শতাধিক ব্রাহ্মণ পূজারি দায়িত্ব পালন করেন।
অষ্টমী স্নান নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের বিভিন্ন পদে ১৮১ জন সদস্য ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
ফরিদপুর পৌরসভার মুন্সিবাজার এলাকার রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী দুই ভাই রঞ্জিত বিশ্বাস ও লিটন বিশ্বাসকে কুপিয়ে যখন করেছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১১টার দিকে গেরদা ইউনিয়নের কাজীবাড়ি মসজিদ মোড় এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতদের বরাত দিয়ে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে গেরদা ইউনিয়নের সাহেব বাড়ী থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় কাজীবাড়ি মসজিদ মোড় এলাকায় পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলে থাকা চার ব্যক্তি পেছন থেকে রঞ্জিত বিশ্বাস নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। এ সময় রঞ্জিত বিশ্বাসের সঙ্গে থাকা তার সহোদর লিটন বিশ্বাস আহত হন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রঞ্জিত বিশ্বাসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। হামলার কারণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আহত রঞ্জিত বিশ্বাসের ভাই লিটন বিশ্বাস বলেন, গেরদা সাহেব বাড়ির পাশে আমার বড় ভাই রাতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল। রাত বেশি হওয়াতে কোন গাড়ি পাচ্ছিল না বাড়ি আসার জন্য। পরে আমাকে ফোন দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই বাড়ির থেকে রঞ্জিতকে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে আসছিলাম। পথেই তিন চার ব্যক্তি দুইটি মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে। পরে আমরা রাস্তায় পড়ে গেলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাকেও (১৮) বাঁচানো গেল না। ফলে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইল না। এর আগে এ দুর্ঘটনায় তাসনিয়ার বাবা-মা ও দুই বোন মারা যান। এ নিয়ে এই সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১১।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাসনিয়া মারা যান।
একই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিশু আরাধ্য বিশ্বাসকে (৮) উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে আজ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাধ্যকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন স্বজনরা। আরাধ্য চমেক হাসপাতালের শিশু আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিল।
এ ছাড়া চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন এ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দুর্জয় কুমার মণ্ডল (১৮)। তিনি শিশু আরাধ্যের স্বজন।
গত বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় বাস-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। এ দুর্ঘটনায় সেদিনই ১০ জন নিহত হন। প্রেমার মৃত্যুতে নিহতের সংখ্যা বাড়াল ১১ জনে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ সংঘর্ষে নিহতরা হচ্ছেন প্রেমার বাবা ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম (৪৮), মা লুৎফুন নাহার (৩৭), দুই বোন আনিশা আক্তার (১৪), লিয়ানা (৮) ও স্বজন তানিফা ইয়াসমিন (১৬)। এ ছাড়া নিহত হন আরাধ্যর বাবা দিলীপ বিশ্বাস ও মা সাধনা মণ্ডল। নিহত অপর তিনজন হলেন ইউছুফ আলী (৫৭), আশীষ মণ্ডল (৫০) ও মোক্তার আহমেদ (৫২)। ইউছুফ গাড়িচালক ছিলেন বলে জানা গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকেই প্রেমা সংজ্ঞাহীন ছিলেন। প্রথম থেকেই তাঁকে চমেকের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল।
চমেক হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ধীমান চৌধুরী জানান, গুরুতর আহত প্রেমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়।
প্রেমার মামি জেসমিন রহমান বলেন, ডাক্তারদের শত চেষ্টায়ও কলেজপড়ুয়া মেয়েটির জ্ঞান ফেরাতে পারেনি। পুরো পরিবারটাই চলে গেল।
দুর্ঘটনাস্থল জাঙ্গালিয়ায় সড়কে বসল গতিরোধক
এদিকে, লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় দুর্ঘটনাস্থলে বসানো হয়েছে ৫-৬টি গতিরোধক (স্পিড ব্রেকার)। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নির্দেশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এসব গতিরোধক বসিয়েছে।
পাশাপাশি সড়কের পাশে বসানো খুঁটিতে উড়ছে লাল নিশানা। ঈদের ছুটিতে তিন দিনে এই এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়, আহত হন অনেকে।
চট্টগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগ দক্ষিণ-এর উপপ্রকৌশলী আবু হানিফ বলেন, দুর্ঘটনা রোধে ৭-৮ ইঞ্চি উচ্চতার এসব গতিরোধক বসানো হয়েছে।
দোহাজারী থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামমুখী সড়কের জাঙ্গালিয়া তুলনামূলক ঢালু এবং ডান দিকে বাঁক আছে। ফলে এখানে দ্রুতগতির গাড়ি বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখার পর গতি কমানোর সুযোগ পায় না। এই গতিরোধকের কারণে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রিত হবে, দুর্ঘটনা কমবে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই এলাকার মহাসড়কের একপাশে চুনতি অভয়ারণ্য, আরেক পাশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। ডাকাতিপ্রবণ এলাকা জাঙ্গালিয়া। এখানে অপরিকল্পিত গতিরোধকের কারণে সমস্যা বাড়তে পারে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইনামুল হাছান বলেন, দোহাজারী থেকে চুনতি পর্যন্ত পুরো সড়কটি সরু। দুই লেনের মহাসড়কটি মাত্র ১৬ ফুট প্রশস্ত। ঈদের আগে দোহাজারী থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ৫ ফুট করে মোট ১০ ফুট প্রশস্ত করা হয়। জাঙ্গালিয়ার ওই অংশে সড়ক উঁচু-নিচু ও আঁকাবাঁকা। মহাসড়কের ওই অংশে কয়েক কিলোমিটার সড়কের বাঁক অপসারণ করে সোজা করা যায় কি-না সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
জেলা শহরের পুরাণবাজার এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ১৯টি দোকান।
আজ শুক্রবার ভোররাতে শহরের বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারের সিটি সুপার মার্কেটে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, আজ ভোর সাড়ে ৩টার দিকে সৌরভ হার্ডওয়্যারের দোকান থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়।
মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে মাদারীপুর, কালকিনি ও টেকেরহাট ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় কাপড়, গার্মেন্টস, কসমেটিকস’র অন্তত ১৯টি দোকান।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক এলাকা পুরাণবাজারে পানি সরবরাহ করতে দেরি হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে। স্থানীয় পুকুর ও ডোবাগুলো মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি না পাওয়ার অন্যতম কারণ।
দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাদক, সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে কক্সবাজারের টেকনাফে ডাকাতে আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ নদগ অর্থ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। তবে এ সময় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আইএসপিআর জানায়, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের আলিখালি নামক স্থানের চিহ্নিত হারুন ডাকাতের বাড়িতে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে হারুন ডাকাতের বাড়ি তল্লাশি করে ১টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড তাজা গোলা, ৫টি দেশীয় ধারালো অস্ত্র, নগদ ৩০ লাখের বেশি টাকা, স্বর্ণালংকার, একাধিক চেকবই ও ২০টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত আলামত টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণ টেকনাফ কাস্টমস অফিসে হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অন্যদিকে একই দিন মধ্য রাতে টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ নাফনদীর মোহনায় অভিযান চালিয়ে ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লে.কমান্ডার মো. সিয়াম-উল-হক। তিনি জানান, মিয়ানমার থেকে ইয়াবার একটি চালান পাচারের খবরে নাফনদী র্যাবসহ যৌথ অভিযানে এই ইয়াবা চালান উদ্ধার করা হয়েছে। জলপথে মাদক-সন্ত্রাসীদের বিরোদ্ধে এ অভিযান চলমান থাকবে।'
বান্দরবানের লামায় গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনায় গাড়ি চালক, হেলফারসহ ৩২ জন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের মাদানি নগর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- ডা. ফাহাদ বিন তৈয়ব (৩৪), মালিয়াত জাহান দুলিকা (১২), আব্দুল্লাহ মো. ওমর ফারুক (৫), আওসাফ আহনাফ সিদ্দিকি তাহজিব (১২), ফজল আহমেদ (৫৫), মো. হেলাল (৩১), তাহজীব (১২), দুলিফা (১৫), নেজাম (৪৫), তানভীর (১৫), ওয়াজিফা (১৭), নাহিদা (১৯), তারিন (১৪), শাহাদাত (৩২), মাশফিকা (২৫), শহীদ (২৫), মাশকুরা সিদ্দিকা (২০), গাড়ির হেলফার আমজাদ (৩০), নাজাত সিদ্দিকা (২৩), নিজাম উদ্দিন (৫২) গাড়ি চালক লিটন দাশ (২৬), জাহিদা বেগম (২৬), দিলরুবা সিদ্দিকা (৫০)। এরা সবাই চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ও কলাউজান ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সূত্র জানায়, লোহাগাড়া উপজেলা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে ঈগল পরিবহন যোগে লামা উপজেলার মিরিঞ্জা পাহাড়ের পর্যটনে ঘুরতে যান ফজল আহমদ ও তার পরিবারসহ আত্মীয় স্বজনেরা। গাড়িটি উপজেলার মিরিঞ্জা পর্যটন এলাকায় পৌঁছার পর তেল শেষ হয়ে যায়। পরে চালক তেল নিতে যাত্রীদের নিয়ে লামা উপজেলা শহরের দিকে রওয়ানা হয়। এক পর্যায়ে সড়কের পশ্চিম লাইনঝিরি মাদানিনগর মোড়ে পৌঁছলে গাড়িটির ব্রেক কাজ করছিলনা। চালকের দূরদর্শীতায় গাড়িটি সড়কের পাশের কড়ই গাছের সাথে ধাক্কা খায়। এতে গাড়িটি পাহাড়ি খাদে না পড়ে, গাছের সঙ্গে আটকে গেলেও ৩২ যাত্রী কম বেশি আহত হন। আহতদের দ্রুত উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্থানীরা।
এ বিষয়ে লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সোলায়মান বলেন, আহতদের সবাইকে প্রাথমিক চিকিৎসাা দেওয়া হয়েছে। তবে শিশু তাহজীব ও গাড়ির হেলফার আমজাদসহ তিন জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তোফাজ্জাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় পতিত বাসটি থানা হেফাজতে আছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুরের শ্রীপুর সাত খামাইর রেল স্টেশনের কাছে জামালপুরগামী মহুয়া এক্সপ্রেস ট্রেনের পাওয়ার কারে আগুন ধরে গেছে।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটে সাময়িকভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। দুর্ঘটনার শিকার ট্রেনটি উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় এখনো হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনটিতে আগুন লাগলে সাত খামাইর স্টেশনের কাছে থামানো হয়। খবর পেয়ে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এই বিষয়ে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার আবুল খায়ের বাসস’কে জানান, আজ সকালে মহুয়া কমিউটার ট্রেনটি জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করেছে। ট্রেনটি ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল রুট দিয়ে শ্রীপুর রেলস্টেশন অতিক্রমের পরপরই সাত খামাইর স্টেশনের কাছে গেলে পাওয়ার কারে আগুন লাগে। এই সময় সাত খামাইর স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সেখানে তাৎক্ষণিক যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে।
এদিকে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, ট্রেনে আগুন লাগার খবর পেয়ে দু’টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মিরপুর মডেল থানার সহ-মুখপাত্র তানিফা আহমেদ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বুধবার (২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উমামা ফাতেমা তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন, তানিফা আহমেদ ছাত্র আন্দোলনের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত ছিলেন এবং তিনি সব সময় নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করতেন।
তিনি আরও লেখেন, সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে তার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তানিফা শুধু আন্দোলনের একজন নেতা ছিলেন না; বরং তিনি বিশ্বাস ও আদর্শের জন্য কাজ করে গেছেন।
উমামা ফাতেমা লেখেন, এই শোকাবহ মুহূর্তে তিনি আল্লাহর কাছে তানিফার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার জন্য জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ মাকাম কামনা করেন, আমিন।
এ দুর্ঘটনায় তানিফার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে এনসিপি ও তার সহকর্মীদের শোকসন্তপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১০ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সহ-মুখপাত্র তানিফা আহমেদ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশে রিলাক্স পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১০ হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।
বুধবার (২ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে উপজেলার চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। উল্লেখ্য, গত তিন দিনে একই এলাকার আধা কিলোমিটার এলাকায় তিনটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন।
তাৎক্ষণিকভাবে নিহত ও আহতদের পরিচয় জানা না গেলেও, তারা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী ছিলেন বলে জানা গেছে। মাইক্রোবাসটি কিশোরগঞ্জ থেকে কক্সবাজারগামী ছিল।
দুর্ঘটনার ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, মাইক্রোবাসটি কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছিল, আর বিপরীত দিক থেকে আসা রিলাক্স পরিবহনের বাসটি চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। চুনতি বনরেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
সংঘর্ষের ফলে ঘটনাস্থলেই মাইক্রোবাসের ৮ যাত্রী মারা যান, আর গুরুতর আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও দুজনের মৃত্যু হয়।
লোহাগাড়া থানার অপারেশন অফিসার মোহাম্মদ জাহিদ দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে এবং গুরুতর আহত ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এর আগে, ঈদের দিন (৩১ মার্চ) সকালে চুনতি এলাকায় বাস ও মিনিবাসের সংঘর্ষে ৫ জনের মৃত্যু হয় এবং ৬ জন আহত হন। এছাড়া, মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) একই স্থানে দুটি মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ৮ জন আহত হন।
স্থানীয়রা জানান, লবণবাহী ট্রাক থেকে পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে পড়ায় এ এলাকায় বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।