নুরুজ্জামান লাবু
পেশায় চক্ষু চিকিৎসক হলেও বিভিন্ন বয়সী তরুণ-তরুণীদের নিয়মিতভাবে ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং বা ইসলামি মনস্তাত্ত্বিক পরামর্শ দিতেন ডা. শাকির বিন ওয়ালী। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট (র্যামফিট) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাউন্সিলিংয়ের আড়ালে তিনি ওইসব তরুণ-তরুণীকে লক্ষ্যবস্তু করে উদ্বুদ্ধ করতেন জঙ্গিবাদের ভাষায় ‘জিহাদে’।
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া সাত তরুণের মধ্যে তিনজন শাকিরের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর ছেড়েছেন। আরেকজন ঘর ছাড়ার প্রস্তুতি নিলেও তার আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি ইউনিট আটক করে তাকে। এভাবেই অন্তত ১০ থেকে ১২ জনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বানিয়েছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে এই নতুন কৌশলে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। তারা প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামি আলোচনার নামে তরুণদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যামফিট অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি রীতিমতো শুরা বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে দক্ষতাসম্পন্ন চিকিৎসকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা হলেও এর মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানো হয়।
রাজধানীর মগবাজারের বিশাল সেন্টারের পাশেই ডমইনো ভবনের চতুর্থ তলায় র্যামফিটের কার্যালয়। রিসার্স অ্যাকাডেমি ফর মেডিকেল ফিকাহ অ্যান্ড ইসলামিক ট্রিটমেন্ট নামের এই প্রতিষ্ঠান যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর থেকে গত বছর নিবন্ধন নিয়েছে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে শরিয়াহ হসপিটাল, মেডিকেল ফিকাহর পাশাপাশি অথেনটিক ইসলামিক নলেজ প্রচারসহ বিভিন্ন ফতোয়া কোলাবরেশন করার বিষয়টি উল্লেখ আছে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে। শায়খ আবুল হাসনাত কাশিম নামে একজন এই প্রতিষ্ঠানটির শরিয়াহ বোর্ডের প্রধান। এর শুরা সদস্যদের প্রায় সবাই মুফতি। প্রতিষ্ঠানটি ইসলামি প্রচারণার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান সংগ্রহের জন্যও আহ্বান জানিয়ে থাকে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে জানান, ইতোমধ্যে র্যামফিটের বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন। শাকির এবং র্যামফিটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। তারা জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশ থেকে অনুদানের নামে যে অর্থ সংগ্রহ করে তা জঙ্গিবাদে অর্থায়ন করছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অবশ্য গত শনিবার র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. শরীফুল ইসলাম শিশির এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তারা কোনো রাজনীতি বা জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত নন। শাকির বিন ওয়ালী তাদের প্রতিষ্ঠানে স্বেচ্ছসেবী হিসেবে কাজ করতেন। শাকিরের মতাদর্শকে তারা বিশ্বাস করেন না বলেও দাবি করেন শরীফুল।
তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছাড়া ইসলামিক সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলিং করানোর বিষয়ে র্যামফিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাদের একজন মনোরোগ চিকিৎসক আছেন। ওই চিকিৎসক ছাড়াও আরও কয়েকজন এই বিষয়ে লন্ডনের আল-বালাঘ একাডেমি থেকে অনলাইনে ডিপ্লোমা করেছেন।
তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আল-বালাঘ বিশ্বব্যাপী আল-কায়েদার প্রোপাগান্ডা প্রচারের একটি প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের মিডিয়া শাখা নিয়মিত আল-বালাঘ ম্যাগাজিনের বিভিন্ন কন্টেন্ট বাংলায় অনুবাদের পর নিজেদের ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশ করে। আনসার আল ইসলাম (এএআই) মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। তারা নিজেদের আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট বা একিউআইএস-এর সদস্য হিসেবে মনে করে। এএআই আগে এবিটি বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়েছে। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও ২০১৭ সালের মার্চে আনসার আল ইসলামকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার।
হঠাৎ হিজরত, আশঙ্কা বাড়ছে
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৩ সালে ব্লগার রাজীবকে হত্যার মাধ্যমে আলোচনায় আসা আনসার আল ইসলাম গত কয়েক বছরে শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম বা কর্মী সংগ্রহের দিকে মনোযোগী ছিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলের পর তারা আর কোনো হত্যা মিশনে অংশ নেয়া বা হামলায় অংশ নেয়নি। গত কয়েক বছরে তারা সদস্যদের হিজরত করতেও পাঠিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তারা আবার নতুন কৌশলে তৎপরতা শুরু করেছে। আগের মতো টার্গেটেড কিলিং বা হামলার জন্য সদস্যদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, হঠাৎ করেই কুমিল্লা থেকে একযোগে সাতজনের কথিত হিজরতের নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ওই ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছে, সাম্প্রাতিক সময়ে আরও অন্তত ২০ জন কথিত হিজরতের নামে ঘর ছাড়ে। এদের মধ্যে কয়েকজন নিজেরাই ফিরে আসার পর তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুরো নেটওয়ার্কটি জানার চেষ্টা করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম একটু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে এটা সত্যি। সাম্প্রতিক সময়ে যারা হিজরত করেছে তারা সবাই অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে র্যাডিক্যালাইজড হয়েছে। সাইবার স্পেসে তারা তৎপর আছে। সাম্প্রতিক সময়ে হিজরতের কারণে বড় ধরনের হুমকি আসার আশঙ্কা আছে বলে আমরা মনে করি না, তবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের খুঁজে বের করা এবং আস্তানাসহ পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছি ।’
‘এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট হামলার আশঙ্কা নেই। তবে এই আশঙ্কা আমরা উড়িয়েও দিই না।’- বলেন পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সম্প্রতি অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলো যেকোনো সময় আমাদের ‘সারপ্রাইজ’ দিতে পারে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ‘হঠাৎ করেই তরুণদের ঘরছাড়ার মানে হলো জঙ্গিরা ভেতরে ভেতরে সংগঠিত হচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। তারা কেন এবং কাদের মাধ্যমে ঘর ছেড়েছে তা গভীর তদন্তের মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। একই সঙ্গে সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃতীয় কোনো পক্ষ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
যেভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে এএআই
জঙ্গিবাদী সংগঠনের কার্যক্রম অনুসরণ করেন এমন বেশ কয়েকজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হোলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে নব্য জেএমবির প্রায় সব শীর্ষ নেতারা হয় গ্রেপ্তার হয়েছে অথবা অভিযানে মারা গেছে। কিন্তু আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই এখনো অধরা।
২০১১ সাল থেকে পালিয়ে থাকা সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়া আনসার আল ইসলামের অন্যতম একজন শুরা সদস্য হিসেবে সামরিক শাখার দায়িত্বে আছেন। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকা সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়া আনসার আল ইসলামের সদস্যদের জন্য একটি নিরাপত্তা কৌশল তৈরি করেছেন। কাট আউট ও সিপ্লার সেল পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে এই সংগঠনের কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায় না।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, বহিষ্কৃত মেজর জিয়ার নিরাপত্তা কৌশল অনুযায়ী সংগঠনের একটি তৈয়ফা বা সেলের সদস্যরা একে অন্যকেও চেনে না। প্রাথমিক প্রশিক্ষণেই তাদের কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে প্রশ্ন না করা বা জানতে না চাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। জিয়ার তৈরি করা কৌশলের কারণেই কুমিল্লায় নিখোঁজ হওয়া তরুণদের একজন ফিরে এলেও তার মাধ্যমে অন্যদের অবস্থান শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি বিচ্ছিন্নভাবে আনসার আল ইসলামের মাশসুল পর্যায়ের কিছু সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হলেও শীর্ষনেতাদের শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। আনসার আল ইসলামের সদস্যরা প্রত্যেকেই ‘কোড ল্যাঙ্গুয়েজ’ ব্যবহার করে। কাউকে গ্রেপ্তারের পর তার পিটি আইডি বা অ্যাপস আইডিতে ঢুকে যোগাযোগ করলেও প্রথম কথপোকথনেই শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের বিষয়টি বুঝে যায়।
সম্প্রতি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ও বিইউবিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের তিন শিক্ষার্থী সাজিদুল ইসলাম সাজিদ, সাজ্জাদুর রহমান শাওন ও ইফাজ আহমেদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। এই সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তার তিনজনই আনসার আল ইসলামের মাসুল পর্যায়ের সদস্য। কিন্তু তাদের কাছ থেকে সহযোগী বা সংগঠন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যই পাওয়া যায়নি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফরেনসিক পরীক্ষার পর কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
আনসার আল ইসলামের এই তিন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদকারী সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার আহমেদুল ইসলাম জানান, তারা তাদের মোবাইলে যোগাযোগের অ্যাপসগুলো অন্য নামে রেখেছিল। কারও কারও মোবাইলের সিস্টেম থেকে যোগাযোগের অ্যাপস খুঁজে বের করে কিছু তথ্য বের করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, আনসার আল ইসলামের সদস্য সংগ্রহে নিয়োজিত আছে সংগঠনটির দাওয়াহ বিভাগ। তারা দুই ভাবে সদস্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ইদরাতুল দাওয়াহ ওয়াল নুসরাহ বা আইডিএনের দায়িত্ব হলো সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের টার্গেট করা। আর কিসমাতুল দাওয়াহ নেটওয়ার্কের কাজ হলো মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিজেদের মতাদর্শের দিকে আকৃষ্ট করা।
এখন শীর্ষ নেতৃত্বে কারা?
বাংলাদেশে আল-কায়েদার অনুসারী আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন শায়খ জসিম উদ্দীন রাহমানী। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। এরপর থেকেই এই জঙ্গি সংগঠনটির শীর্ষ নেতা হিসেবে বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে গণ্য করা হয়।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, জসিম উদ্দীন রাহমানীর পর এই সংগঠনের আধ্যাত্মিক নেতা হিসেবে গণ্য করা হতো নরসিংদীর একটি মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ওসমান গণিকে। ২০১৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। জনশ্রুতি আছে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। গত কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির দাওয়াহ শাখার শুরা সদস্য হিসেবে আছেন শাইখ তামিম আল আদনানী, যদিও তার চেহারা সংগঠনের সদস্যরাই দেখেনি। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থা তার সম্পর্কে কিছু তথ্য পেয়েছে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা দৈনিক বাংলাকে বলেন, এই সংগঠনের শুরা পর্যায়ে আছেন এমন অন্তত তিনজনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এরা দেশের নামকরা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়াও আরেকজন গত চার বছর ধরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী ওয়াজারিস্তানে অবস্থান করছে।
জিয়াকে ধরাটাই চ্যালেঞ্জ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সহজে ধরতে পারলেও বহিষ্কৃত মেজর জিয়াকে ধরাই তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাকে না ধরা পর্যন্ত আনসার আল ইসলামকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। আত্মগোপনে থাকা জিয়াকে ধরতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলেও জিয়া নিজের নিরাপত্তা নিয়ে এতটাই সচেতন যে, তার অবস্থান সম্পর্কেই জানা যাচ্ছে না।
অবশ্য জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা অন্তত তিন বার জিয়ার অবস্থান শনাক্তের পর অভিযান চালিয়েছিলেন। এর মধ্যে রাজধানীর বাড্ডায় ১০ মিনিটের জন্য জিয়া তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ২০১৮ সালের পর থেকে তার অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। তবে তাদের ধারণা, জিয়া এখনো দেশেই আছেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থাকার সম্ভাবনা বেশি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম মূলত আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদায় নতুন নেতৃত্ব এসেছে। এজন্য তারা কিছুটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থেকে এসব মোকাবিলা করতে হবে।’
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সালিসে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) নিহতের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে তাদেরকে ময়মনসিংহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফুর (৫০) ও তাঁর ছেলে মেহেদী হাসান (১৫) কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে আজ সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জানাযা শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি বাবা-ছেলেকে দাফন করা হয়।
আবদুল গফুরের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে রোববার রাতেই ফুলবাড়িয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয় বলে জানান থানার ওসি মো. রোকনুজ্জামান। হত্যার ঘটনায় তাৎক্ষনিক পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মৃত সাবান আলীর ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩) আটক করে পুলিশ।
ওসি মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সালিশে না যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বাবা-ছেলেকে হত্যা করা হয়, মামলার এজাহারে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনজন আসামিকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহতের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, তাঁর স্বামীর চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেবের কাছে সাড়ে ৭ কাঠা জমি পাঁচ বছর আগে বন্ধক দিয়েছিলেন। দুই লাখ টাকা জমি বন্ধক দিলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আরও পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা ও জমি কিছুই দিতে চাইছিলেন না আবদুল মোতালেব। পরে তাঁর স্বামী অন্য জায়গায় জমি বন্ধক দিতে চাইলে তাতেও বাধা দেন। ওই অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিসে বসে তিন মাস আগে এক লাখ টাকা দিলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল মোতালেব।
তিনি আরও বলেন, মেহেদী আমার স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে। সে একটু বখাটেপনা করত। চার-পাঁচ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারি থেকে দুটি তেলাপিয়া মাছ ধরায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকাঝকা করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর মধ্যে প্রতিবশি বিদেশফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মুঠোফোন চুরি হওয়ায় এর অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে সালিস বসালে আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে তাদের হত্যা করে।
মাদারীপুরের রাজৈরে বাজি ফাটানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই গ্রামের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে।
পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা যৌথভাবে তৎপরতা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টাব্যাপী রাজৈর উপজেলা সদরের বেপারীপাড়া মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০-১২টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট তাণ্ডব চালানো হয়।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল হক জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুরের পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন আয়োজকরা।
রোববার রাতের দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে অনুষ্ঠানস্থলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাচেষ্টাকারীরা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে দাবি করেছে। হামলাচেষ্টার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
অনেক বছর ধরে ‘সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের’ ব্যানারে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পা রাখতে চলেছে।
পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী টিটু বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ জনের যুবক ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান নিয়ে মঞ্চের দিকে আসেন।
একপর্যায়ে তারা ডেকারেশনের কাপড় ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং মঞ্চের পেছনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলেন।
হামলার পর পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। তবে সোমবার (১৪ই এপ্রিল) অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা আর ছিল না বলে জানান তিনি।
টিটু বলেন, ‘ডিসি অফিসে মিটিংয়ের সময় উপস্থিতদের মধ্যে কয়েকজন হামলার সময়ও ছিলো বলে শুনেছি আমি। মঞ্চের পিছনের ডিজাইন তারাই ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আমরা বাতিল করছি। কারণ রিস্ক নেওয়া যাবে না।’
নববর্ষের দিনও এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকেই এবারের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, নববর্ষের অনুষ্ঠানটি ফ্যাসিস্টের দোসররা আয়োজন করেছে বলে হামলাকারীরা দাবী করেছেন।
হামলাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে উল্লেখ করে আলমগীর হোসেন বলেন, হামলায় কেউ আহত হয়নি, কেবল ব্যানার ছিঁড়েছে। তবে মূল মঞ্চের কিছু হয়নি।
এ ঘটনায় আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পহেলা বৈশাখের সকালে ‘পান্তা-ইলিশ’ ভোজন বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। তবে এখন ‘পান্তা’ভাত থাকলেও নেই ইলিশ নিয়ে মাতামাতি। গত কয়েক বছর ধরে বাঙালির বৈশাখী উৎসবে ইলিশের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ‘ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা’।
‘ইলিশের বাড়ি বরিশালে’ এবারও ‘পান্তা, ডিমভাজা আর মরিচ ভর্তা’ দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশালবাসী। কেননা একদিকে জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা, তার ওপর বাজারে ইলিশের তীব্র আকাল- যা আছে তা চড়া মূল্যে কেনা দুঃসাধ্য।
বরিশাল নগরীর অন্যতম পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পোর্ট রোড মৎস্য আড়ত। যেটি ইলিশের মোকাম হিসেবে পরিচিত। সরেজমিনে শনিবার সকালে ইলিশ মোকামে দেখা যায়, গত বছরের মতোই বৈশাখ উদযাপনে ইলিশ নিয়ে মাতামাতি নেই। মোকাম থেকে ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে না অন্য কোথাও। বিগত বছরগুলোতে যেখানে দাম কোনো বিষয় ছিল না, সেখানে এ বছর আগাম কোনো অর্ডার পাননি আড়তদাররা। সকাল ১০টা বাজার আগেই ইলিশ শূন্য হয়ে যায় পাইকারি বাজার। স্বল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে বসে আছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে দুপুরের পর পরই একেবারে ইলিশ শূন্য হয়ে পড়ে পাইকারি মোকাম।
তবে নগরীর চৌমাথা, বড় বাজার এবং আদালতপাড়া এলাকার খুচরা বাজারে দেখা মেলে ইলিশের। তাও দামে চড়া। খুচরা মৎস্য বিক্রেতারা মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম হাঁকিয়েছেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম তিন থেকে চার হাজারের ওপরে। ফলে নিম্ন আয়ের ক্রেতারা দাম শুনে ঘুরেফিরে দেশি মাছের দিকে ঝুঁকছেন।
ক্রেতা নগরীর সদর রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান বলেন, আগে পরিবার নিয়ে ‘পান্তা-ইলিশ’ দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছি। গত বছরও ইলিশের পরিবর্তে ডিম ভাজা দিয়ে আর মরিচভর্তা দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপন করেছি। এবার তো ইলিশই নাই। তাই এবারও পান্তা আর ডিমভাজা দিয়েই বৈশাখ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশের বাড়ি নাকি বরিশাল। অথচ বরিশালেই ইলিশ নাই। তার ওপর এখন জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই বাজারও ইলিশ শূন্য। ইলিশের দাম এতটাই চড়া যে, এখন স্বাভাবিক দিনগুলোতেও কেনা যাচ্ছে না। তার ওপর বৈশাখ ঘিরে এর দাম দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে এবার ‘পান্তা-ডিমভাজি এবং শুকনা মরিচপোড়া’ দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার। এতে সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় একই সময়ে করা হয়েছে। গত ১৭ মার্চে মৎস্য অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এই হিসাবে পহেলা বৈশাখের পরদিন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে।
এদিকে, পোর্ট রোড আড়তের পাইকাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, সে হিসাবে কেজি দাঁড়ায় তিন হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ দেড় লাখ টাকা। যার কেজি দাঁড়ায় দুই হাজার ৬২৫ টাকা। ৬০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৯৫ হাজার। যার কেজি দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৩৭৫ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৬৫ হাজার, যার কেজি দাঁড়ায় এক হাজার ৬২৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দাম হাঁকানো হচ্ছে।
পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জহির সিকদার বলেন, বিগত বছরগুলোতে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে এপ্রিল মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মোকাম থেকে ইলিশ যেত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এজন্য বড় সাইজের ইলিশের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। দামের কোনো সমস্যা ছিল না। ওই সময় সাগরে নিষেধাজ্ঞা চললেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জেলেদের দিয়ে ইলিশ শিকার করাত। এভাবে চলে আসছিল বছরের পর বছর। আগের বছরগুলোতে ১ এপ্রিল থেকে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫০ মণের বেশি ইলিশ যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু গত বছর থেকে দাম বাড়ায় চাহিদা কমেছে। এবার অর্ডার নেই বললেই চলে।
পোর্ট রোডের মেসার্স আক্তার মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বর্তমানে জাটকা শিকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ বাজারে নেই বললেই চলে। তাই দামে আগুন। আগের বছরগুলোতে এই সময় ৩০০-৪০০ মণ ইলিশ উঠত এই মোকামে। অথচ ঈদের পর থেকে পোর্ট রোড মোকামে ৫০ মণ ইলিশও উঠেনি। তাই এবার বৈশাখে ইলিশ নিয়ে তেমন মাতামাতিও নেই।
পোর্ট রোডের আড়তদার হেমায়েত উদ্দিন ও মো. সাজু মিয়া জানিয়েছেন, জাটকা বড় হলে ইলিশে রূপ নেয়। কিন্তু সেই জাটকা শিকার করছে একশ্রেণির অসাধু জেলে। এ কারণে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন কমছে। জাটকা শিকার বন্ধ করতে পারলে নদী ও সাগরে ইলিশ বেড়ে যাবে। তখন দামও কমে যাবে। সাগরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির প্রয়োজন নেই। অবৈধ জাল উৎপাদন হচ্ছে যেখানে-সেখানে অভিযান চালিয়ে জাল উৎপাদন বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, আগের বছরগুলোর চেয়ে ইলিশের উৎপাদন কমেনি বরং বেড়েছে। এখন জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ চলছে। কঠোরভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলেদের সাগরে নামতে দেখলেই জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এ জন্য মোকামে জাটকা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবার প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে সাগরে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ ইলিশ শিকার করতে পারবে না। অভয়াশ্রম থেকে শুরু করে যেসব এলাকায় ইলিশের প্রজনন বেশি সেসব এলাকায় রাতদিন পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জেলেদের সচেতন করার কাজও চলছে। আশা করছি আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লে দামও কমবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়াসহ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরায় খাসজমি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রশাসনকে নিয়ে জমি উদ্ধার করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফের কাছ থেকে কিছু খাসজমি উদ্ধার করেন এবং সাতক্ষীরার বাকালে সরকারি জায়গার উপর নির্মাণ করা ট্রাক-মালিক সমিতির ভবন গত বৃহস্পতিবার গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা সদরের এসিল্যান্ড, পুলিশ বিভাগসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের বাকবিতণ্ড ঘটে। উপস্থিত সবার সামনে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বাটপার বলে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যেটা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত ৬ এপ্রিল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আব্দুস সবুরের কাছে অবৈধভাবে ভোগদখলে থাকা ১৬ বিঘা জমি উদ্ধার করেন। নিয়মিত এ জমি উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, ঠিক সেই সময় মানুষ জেলা প্রশাসককে বিভিন্নভাবে কথা বলছে। ডিসি ও আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান এবং তার ভাই আব্দুস সবুর প্রসঙ্গে কিছু না কিছু কথা হচ্ছে, যাহা হটকেক বা টক অব দ্য টাউন। কেউ কেউ আবার ফেসবুক থেকে বিভিন্ন বাক্য ভঙ্গিতে আলোচনা-সমালোচনাসহ জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। আবার কেউ কেউ জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাপ্তাহিক মুক্তস্বাধীন পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালামসহ অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন পর সাতক্ষীরার মানুষ খুশি ইত্যাদি। আবার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন জেলা প্রশাসক আপনি যাকে বাটপার বলেছেন তিনি পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলীপুর ইউনিয়ন থেকে এবং তিনি বিএনপি করার কারণে তার একমাত্র সন্তান সেলিম নিখোঁজ হয়েছে ইত্যাদি।
সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সাবেক সমন্বয়ক ও পৌর সাবেক কাউন্সিলর আইনুল ইসলাম নান্টা, রেজাউল ইসলামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি জেলা প্রশাসককে ভর্ৎসনা করেন। সেসব লেখার মধ্যে কয়েকটি লেখা হুবহু দেওয়া হয়েছে; যেমন- পীরে কামেল তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদের ঘুষ বাণিজ্য!।
পীরের খবর:পীরে কামেল শেখ মুজিবের কবর জিয়ারতকারী তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদের ঘুষ-বাণিজ্যে হতবাক জেলাবাসী। তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তাবলিগের আওয়ামীপন্থি সাদ গ্রুপের লোক হিসেবে বেশ পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা মিটিংসহ সব জায়গায় নিজেকে সৎ পীরে কামেল হিসেবে দাবিদার আওয়ামী মোস্তাক আহমেদ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের কাছে কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন। ইতোমধ্যে রেজাউল ইসলাম সেই ঘুষের টাকা ২ দফায় ৩০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি ও জেলা জামায়াত ইসলামের নেতারাও অবগত আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দাবিকৃত ঘুষের টাকা এলআর ফান্ডের নাম করে ১ম দফায় ২০ লাখ ও ২য় দফায় ১০ লাখসহ মোট ৩০ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের এডিএম রিপন বিশ্বাসের কাছে দিয়েছেন রেজাউল ইসলাম। এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকার ২ শতাংশ পীরে কামেল তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদকে তার নাজিরের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক দিতে হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে শহরের খড়িবিলার ৫৮০ বিঘা জমি একটি গোষ্ঠী বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকা করে হারি নিয়ে ব্যবসা করে আসছে মোস্তাক আহমেদের যোগসাজশে। যার বিঘাপ্রতি ৬ হাজার মোস্তাক আহমেদের পকেটে চলে যায়। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের ভাতের হোটেল মালিক ডিবি হারুন স্টাইলে ট্রাক-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নাজিরের রুমে আটকে রেখে মিথ্যা জবানবন্দি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষ জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আরও দেখা যায় জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ফটোসেশন করেছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতার সঙ্গে মাজারে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন, যা নিয়ে সাতক্ষীরা বিভিন্ন প্রান্তে সমালোচনার খোরাক হয়েছে। টাকা নেওয়া-সংক্রান্ত বিষয়ে এডিএম রিপন বিশ্বাস গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন, যিনি দিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করেন।
সাতক্ষীরা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি মোবাইলে কোনো কথা বলব না, এ কথা বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরায় সাত মাস আসছি আমি কোনো দিন কারও সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছে সব মিথ্যা। সাতক্ষীরার সব খাসজমি উদ্ধার করা হবে এতে করে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগবে তাতে আমার কি?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নেইনি এবং টাকা কে কার কাছে দিয়েছে তাও আমি জানি না।’
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনে ২০টি বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, দোকানপাটসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সোনাপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব চিত্র। এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়সহ নদের তীরবর্তী এলাকার ২০০টি ঘরবাড়ি।
এ ছাড়া অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে সোনাপুর, চরসোনাপুর, ঘুঘুমারী, চরগেন্দার আলগা, গুচ্ছগ্রাম, সুখেরবাতি, খেরুয়ারচর, দক্ষিণ নামাজের চরসহ ১০টি গ্রাম।
ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের ফলে গ্রামের পর গ্রামে ঘরবাড়ি ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। এতে করে হাজারও মানুষ তাদের বাব-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে পরিণত হচ্ছে ভূমিহীনে। এসব পরিবার সবকিছু হারিয়ে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশ ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
চরসোনাপুর গ্রামের লিচু মিয়া, আবু সাইদ ও ফারুক মিয়া বলেন, ‘আমাগো আবাদি জমি নেই, যে টুকু ছিল সেটাও নদীতে ভাঙ্গয়া গেছে, ঘাটপাড়ে দোকান করে খাইছি তাও নদীতে ভাঙ্গিতেছে। আমরা রিলিপ চাই না, নিজে জমিতে ঘর তুইলা শান্তিকে পোলাপান নিয়া থাকবার চাই।’
সোনাপুর গ্রামের সুরুতজামান, মামদ আলী, রাজ্জাক, জহির, বুদ্দি মিয়া ও ময়াজ বলেন, ‘এক বছরে আমরা চারবার বাড়ি টান দিছি, নিজে বাড়ি নেওয়ার জমি নাই, অন্যের জমি বন্ধক নেওয়ার ক্ষমতাও আমাগরে নাই। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাগো একটাই দাবি নদীটা যেন এই সরকার তাড়াতাড়ি বাঁইনধা দেয়।’
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মণ্ডল বলেন, চরশৌলমারী ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তায়ে ভাঙনে ২০টি বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, দোকানপাটসহ ফসলীয় জমি নদে বিলীন হয়েছে। দ্রুত এ ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে মুক্তিযোদ্ধের প্রশিক্ষণের কেন্দ্র সোনাপুর হাইস্কুল, ফসলি জমিসহ নদের তীরবর্তী ২০০টি বসতবাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিচ্ছি ভাঙন-কবলিত সব পরিবারকে আমার উপজেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবে মাতোয়ারা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল।
শনিবার সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আয়োজন। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৯ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর জলকেলি’র মাধ্যমে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।
২৯ চৈত্র ১২ এপ্রিল শনিবার সকালে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে দিনটি উদযাপন করে থাকে। তবে এটি ‘ফুল বিজু’ নামে বেশি পরিচিত। রাঙামাটির শহরের গর্জনতলী মধ্যম দ্বীপে কাপ্তাই হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার।
পূর্ণময় এই দিনে দেশ ও দশের মঙ্গল কামনা করছেন পাহাড়িরা। সবেমাত্র পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে সূর্য। তার লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে হ্রদের বুকে। সেই ভোরে নানা বয়সি মানুষ ফুল নিয়ে জড়ো হতে থাকে ঘাটে। ডালায় থাকা রক্তজবা, রঙ্গণ গাদাসহ নাম না জানা বুনো ফুল কলা পাতায় সাজাতে ব্যস্ত সবাই। উদ্দেশ্য গঙ্গা দেবীর আরাধনার হ্রদের জলে ফুল নিবেদন। এ উৎসবে নারীরা পরিধান করেছে বাহারি রঙের পিনোন হাদি আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া। দেখে মনে হবে হ্রদের পাড়ে বসেছে রঙের মেলা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই সামাজিক উৎসবে ব্যস্ত প্রতিটি পল্লী। বাংলাবর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু- এভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপন করে। যা বৈসাবি নামে বেশি পরিচিত। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পুরানো বছরের সব গ্লানি, হিংসা, বিভেদ নদীর জলে ভেসে যাবে। আর নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি- এমন প্রত্যাশায় রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী, রাজবিহার ঘাট, কেরানী পাহাড়ঘাট সহ, বিভিন্ন এলাকায় ভাসানো হয় বিজুর ফুল।
গর্জনতলী ঘাটে ফুল ভাসাতে আসা অমিয় ত্রিপুরা বলেন, ‘সকালে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুোনো বছরের দুঃখ বেদনা গ্লানি পানিতে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন সুন্দর হয়।’
রাজ বনবিহার ঘাটে ফুল ভাসিয়ে শ্রাবণী চাকমা বলেন, এটি পার্বত্য অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। হ্রদে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি, ‘আগামী বছরটা যেন আরও সুখশান্তিতে কাটাতে পারি। পার্বত্য এলাকাসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক’।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিনে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি। আমরা যাতে সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে সকল জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করতে পারি।’
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সবার মাঝে সম্প্রীতি অটুট থাকুক। আর আগামী দিনগুলোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ, এটাই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা। এসময় অন্যান্যর মধ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ,ত্রিপুড়ার কল্যান ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কান্তি ত্রিপুড়া, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শংকর ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজ বনবিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের জলে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল বাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটির সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। তিনি বলেছেন, পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ এদিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ফুল ভাসানোটা এখন সম্প্রীতির উৎসবে রুপ নিয়েছে। সবাই একসঙ্গে একত্রিত হয়ে ফুল নিবেদন করে প্রার্থনা করে। আজকের দিনে আমাদের চাওয়া হলো, আগামী দিনেগুলোতে যাতে সবাই মিলেমিশে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।
এসময় অন্যান্যর মধ্যে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৫ উদযাপন কমিটির সভাপতি সাবেক উপ সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈসাবীর আমেজ পুরো জেলা জুড়ে সাজ সাজ রব।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১১টি লোহার দানবাক্স থেকে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এবার ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ১১টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়।
এ সময় মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ প্রায় ৪০০ জনের একটি দল টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত আছেন।
টাকা গণনায় তদারকি করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ আলী হারেছিসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বরে মসজিদের দশটি দানবাক্স ও একটি ট্যাংক খোলা হয়েছিল, তখন ৩ মাস ১৪ দিনে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এবার ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দোতালায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে।
‘তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার ৪ মাস ১২ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। আমাদের পাগলা মসজিদের একাউন্টে জমা আছে ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা আছে,’ বলেন তিনি।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আছিয়া মার্কেট সংলগ্ন চরআফজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে ৭ বছর ধরে ভাড়া তুলছেন সাইফুল আলম বিপ্লব নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা। রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং চরগাজী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহফুজুল হক শের আলীর ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, স্কুলটি বিপ্লবদের বাড়ির দরজায় হওয়ায় তিনি প্রভাব বিস্তার করে স্কুলের জায়গায় ৬টি দোকান নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে ৪ হাজার করে প্রতিমাসে ২৪ হাজার টাকা ভাড়া তুলছেন বিপ্লব। ৭ বছরে ২০ লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া ভোগ করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
আছিয়া মার্কেট এলাকার তিনজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৮ সালের দিকে দলের প্রভাব খাটিয়ে স্কুলের এ জায়গা দখল করে ৬ রুম বিশিষ্ট মার্কেট নির্মাণ করেন বিপ্লব ও তার ভাই মাহবুবুল আলম রাসেল।
এদিকে বিপ্লব ও রাসেল প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরাসহ এলাকাবাসী।
অন্যদিকে বিপ্লবের আরেক ভাই মো. সোহেল ওই স্কুলের পাশেই জারিরদোনা শাখা খাল দখল করে তিনটি দোকানঘর নির্মাণ করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে সোহেল তার অন্য ভাইদের নিয়ে প্রতিবাদকারীদের অপমান অপদস্থ করার চেষ্টা করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল আলম বিপ্লব বলেন, ‘স্কুলের সব জায়গা আমরা দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও দিব। এটা নিয়ে এত হৈচৈ করার কি আছে?’
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুবির চন্দ্র দে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু ইউছুফ বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন তিনি।
বাঁশি তৈরিতে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার শ্রীমদ্দী গ্রামের ঐতিহ্য ২০০ বছরের পুরোনো। এক সময় গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের পেশা ছিল বাঁশি তৈরি। সারা দেশে শ্রীমদ্দী বাঁশির গ্রাম নামেই সমধিক পরিচিত। শ্রীমদ্দী গ্রামে সারা বছরই তৈরি হয় বাঁশি। তবে বিক্রির প্রধান আয়োজন থাকে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে। তাই বাংলা নতুন বছরের আগমনীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ শিল্পের কারিগররা।
শ্রীমদ্দী গ্রামের বাঁশির সুনাম রয়েছে দেশের বাইরেও। ১৬ ধরনের বাঁশি তৈরি করে এখানকার কারিগররা। কেউ লোহা গরম করে, কেউ লোহা দিয়ে ছিদ্র করে বাঁশির মুখ, আবার কেউ তুলির আঁচড়ে মনোমুগ্ধকর কারুকাজ করে বাঁশির ওপর। নারী-পুরুষ মিলে এভাবেই কাটে তাদের ব্যস্ত সময়। মোহন বাঁশি, নাগিনী বাঁশি, মুখ বাঁশি, আড় বাঁশি---বাঁশির রয়েছে এমনই সব সুন্দর সুন্দর নাম।
নকশা ও গুণাগুণ ভেদে বাঁশিগুলো ৫ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে জাপান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান কারিগররা।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও ভারতীয় সরু বাঁশ সংগ্রহ করে কারিগররা তৈরি করেন বাঁশি। চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেকেই পরিবর্তন করছেন এ পেশা। বেড়েছে বাঁশের দাম ও পরিবহন খরচ। ফলে কমেছে আয়। এতে পরিবারে বেড়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা। অনেকেই পরিবর্তন করছে বাপ-দাদার পেশা।
জজ মিয়া নামে এক কারিগর বলেন, ‘দৈনিক আমরা ১০০ বাঁশি তৈরি করি। ফাল্গুন থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাঁশি তৈরি ও বিক্রি হলেও শ্রীমদ্দী গ্রামের শিল্পীরা সারা বছরই বাঁশি তৈরি করে। দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে এখান থেকে পাইকারি দরে বাঁশি কিনে নিয়ে যায়।
আরেক কারিগর আবুল কাশেম বলেন, ‘দেড় থেকে ২০০ বছর বংশ পরম্পরায় আমরা এ পেশায় জড়িত। সারা বছর ধরে চলে বাঁশি তৈরির কাজ। বর্তমানে পূর্বসূরিদের দেখানো প্রতিটি বাঁশি খুচরা মূল্য ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় থাকে।’
শ্রীমদ্দী গ্রামের যতীন্দ্র বিশ্বাস ও তার স্ত্রী রিনা বিশ্বাস নকশি করা বাঁশি তৈরি করেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলেই নকশি করা বাঁশি তৈরি করে রপ্তানি করেন সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদী আরব, কাতার, ওমান, লন্ডন, জাপান, কানাডা, জার্মান, নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে।
বৈশাখী মেলা ছাড়াও হোমনার মিরাশের মেলা, শ্রীমদ্দী কালীবাড়ির মেলা, দাউদকান্দির আইনুদ্দিন শাহ মেলা, কচুয়ার সাচারের রথমেলা, ধামরাইয়ের রথমেলা, মতলবের বেলতুলীর লেংটার মেলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়া খরমপুরের মেলা, চট্টগ্রামের জব্বারের বলীখেলা, নাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্লান, সাতক্ষীরার পূজার মেলা, কুষ্টিয়ার লালন শাহ মেলা, তিতাসের গাজীপুরে মৌসুমী বাঁশি বিক্রি ছাড়াও প্রায় সারা বছরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শহর, বন্দর, হাট-বাজারে তারা তাদের বাঁশি বিক্রি করে থাকে।
বৈশাখী মেলায় তাদের তৈরি প্রচুর বাঁশের বাঁশি বিক্রি হয়। তবুও যেন বাঁশি শিল্পীদের মনে আনন্দ নেই। বাঁশি শিল্পীরা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে বিদেশে এসব বাঁশি রপ্তানি করে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবেন তারা।
বাঁশির কারিগর অনিল বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সুদমুক্ত কোনো ব্যাংক ঋণ পাই না। প্রতি বছর সাংবাদিকরা এই সময় এসে আমাদের দুর্দশার ছবি তুলে নিয়ে যায়, কিন্তু দুর্দশা আর যায় না।’
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে বস্তাবন্দি এক শিশু ও দুই নারীর খন্ডিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে মিজমিজির পশ্চিমপাড়া এলাকার একটি পুকুরের পাড় থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকার আ. ছামাদের মেয়ে স্বপ্না আক্তার (৩৫) তার ছোট বোন লামিয়া আক্তার (২২) ও লামিয়ার শিশুসন্তান আব্দুল্লাহ (৪)। এ ঘটনায় লামিয়া আক্তারের স্বামী মো. ইয়াসিনকে আটক করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নিহতরা গত ৪ দিন যাবৎ নিখোঁজ ছিলেন। গতকাল দুপুরে নিজ বাড়ি সংলগ্ন পুকুর পাড়ের পাশে স্থানীয়রা লাশের হাত দেখতে পায়। সেখানে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে খবর পেয়ে পুলিশ মাটি খুঁড়ে বস্তাবন্দি অবস্থায় তিনজনের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহগুলো নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
নিহত স্বপ্না ও লামিয়ার বড় খালা শিরিন বেগম বলেন, আমার বোনের মেয়েরা এতিম। তাদের বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন। আমার বোনের ছোট মেয়ে লামিয়া আক্তার প্রেম করে বিয়ে করে। সেই সংসারে তাদের একটি সন্তান রয়েছে। আর লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। ৪ দিন আগে তারা তিন জন নিখোঁজ ছিল। খবর পেয়ে এসে আমার বোনের মেয়েদের মরদেহ দেখতে পাই।
তিনি আরও বলেন, দুই বোনের মধ্যে লামিয়ার স্বামী একজন বখাটে ও মাদকাসক্ত ছিল। তাদের সংসারের প্রায়ই ঝগড়া হতো। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী জানান, স্থানীয়রা খবর দিলে খণ্ডবিখণ্ড তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহত লামিয়া আক্তারের স্বামী মো. ইয়াসিনকে আটক করা হয়েছে। ধারণ করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
স্বজনদের বরাতে তিনি আরও জানান, লামিয়ার স্বামী মো. ইয়াসিন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি কোনও কাজকর্ম করতেন না। প্রায় সময় লামিয়ার সঙ্গে তার কলহ হতো। লামিয়ার স্বামী ইয়াসিনই তাদের হত্যা করেছেন বলে স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোরের লালপুরে গ্রেপ্তার হওয়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল উদ্দিনকে থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওসি নাজমুল হকসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ওই নেতা এবং তার দুই বোন ও এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তীপুরে বিএনপি নেতা আব্দুর রশীদের বাড়িতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরে রুবেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওইদিন বিকেলে ছাত্রদল ও যুবদলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী থানায় উপস্থিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেয়। এ সময় অসম্মতি জানালে একপর্যায়ে হট্টগোল করে থানা থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই বাগাতিপাড়া থানার উপপরিদর্শক মানিক কুমার চৌধুরী বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রুবেলের দুই বোনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ছাত্রদল নেতা রুবেলকেও গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলার অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। লালপুর থানায় সংঘটিত ঘটনার জন্য লালপুর থানার ওসি নাজমুল হক ও দায়িত্বরত একজন উপপরিদর্শক এবং দুজন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়ে আসামি ছিনতাই করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ৮,০৯১ মিটার (২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট) উচ্চতার মাউন্ট অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ করে আবারও নজির সৃষ্টি করলেন পর্বতারোহী বাবর আলী।
বাবর আলী চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
পেশায় ডাক্তার এই পর্বতারোহী ২০২৪ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই অভিযানে দুটি আট হাজার মিটারের শৃঙ্গ এভারেস্ট এবং লোৎসে পর্বত এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে ২০২২ সালে অন্যতম টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলামের শীর্ষ স্পর্শের নজির গড়েন। অনেকে ছয় হাজার মিটারের পর্বত বাদেও বাবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের দীর্ঘতম সড়ক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী করেছেন সাইক্লিং, প্রথম বাঙালি হিসেবে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।
প্লাস্টিকের দূষণের বার্তা ছড়াতে তিনি ৬৪ দিনে হেঁটেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা। এ ছাড়া লেখক হিসেবে আছে বাবর আলীর বেশ সুখ্যাতি। তিনি ম্যালরি ও এভারেস্ট, পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা, সাইকেলের সওয়ারি, এভারেস্ট ও লোৎসে শিখরে নামক ৪টি বইয়ের রচয়িতা। বাবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান।
তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের প্রেসিডেন্ট এবং অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান জানান, পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অন্নপূর্ণা-১-এ গতকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান চট্টগ্রামের বাবর আলী। এই অভিযানের আউটফিটার মাকালু অ্যাডভেঞ্চারের স্বত্বাধিকারী মোহন লামসাল তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে বাবরের সাথী ছিলেন ক্লাইম্বিং গাইড ফূর্বা অংগেল শেরপা।
বাবরের সংগঠন এবং এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে বলা হয়, ‘লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন স্রষ্টা। প্রকৃতিমাতা বিমুখ হননি। বঙ্গ সন্তান বাবরকে ক্ষণিকের জন্য নিজের চূড়ায় দাঁড়াতে দিয়েছে অন্নপূর্ণা। বিশ্বের দশম শীর্ষ পর্বত এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ২৬,৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ এর শীর্ষে প্রথমবার উড়লো আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। অন্নপূর্ণা জয় করার পর বাবর আলী সুস্থাবস্থায় ক্যাম্প-৩ তে নেমে এসেছেন।
বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালে যান গত ২৪ মার্চ। প্রস্তুতি শেষ করে ২৬ মার্চ কাঠমান্ডু থেকে বিমানে যান পোখারা। এরপর কিছু পথ গাড়িতে ও বাকি পথ পায়ে হেঁটে ২৮ মার্চ পৌঁছেন বেসক্যাম্পে। এক দিন বিশ্রাম নিয়ে পরদিন পর্বতটিতে আরোহণ শুরু করেন। ৫ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ দুই রাত কাটানোর পর ৫ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ উঠে সেখানেও এক রাত কাটান। এরপর ২ এপ্রিল তিনি ফের বেসক্যাম্পে নেমে এসে ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষার করেন। নেমে এসেই জানতে পারেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ভালো আবহাওয়া থাকবে পরদিন থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম খারাপ অবস্থার জন্য ৭ হাজার৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে আগেই একবার ফিরে আসে। সম্ভাব্য ভালো আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে মাত্র ২৪ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়েই বাবর ৩ এপ্রিল থেকে আবার পর্বত আরোহণ শুরু করেন। ওইদিন ক্যাম্প-১ এ থেমে পরদিন উঠে যান ক্যাম্প-২। এর মাঝেই শুরু হয় বিপত্তি। বিকাল থেকেই হঠাৎ শুরু হয় তুষারঝড়। দীর্ঘ যোগাযোগহীনতার পর স্বস্তির খবর পাওয়া যায় যে ৫ এপ্রিল বাবর পেরিয়ে গেছেন কঠিন অংশ, পৌঁছে গেছেন পর্বতশৃঙ্গটির ৬ হাজার ৫০০ মিটারে অবস্থিত ক্যাম্প-৩ এ। সাধারণত ৭৪০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-৪ তৈরি করে সামিট পুশ শুরু হলেও সিদ্ধান্ত হয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্যাম্প বাদ দিয়ে ক্যাম্প-৩ থেকেই শুরু হবে চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা, অর্থাৎ ওই উচ্চতায় একটানা ১৬০০ মিটার পথ দিতে হবে পাড়ি। চূড়া পর্যন্ত পথ তৈরি এবং আবহাওয়ার উন্নতির জন্য ক্যাম্প-৩ এ অতিরিক্ত এক দিন অপেক্ষা করে ৬ এপ্রিল রাতে ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাবর বেরিয়ে পড়েন। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম সামিট পর্যন্ত পথ তৈরি করতেই ভোরে শীর্ষে উঠে আসেন বাবর আলী। আবহাওয়া বেগতিক দেখে পরবর্তী পরিকল্পনা হয় গতকালই তিনি নেমে আসবেন ক্যাম্প-২ এ। সেখানে রাতটা কাটিয়ে নেমে আসবেন বেসক্যাম্পের নিরাপত্তায়। তার অবরোহণের বিস্তারিত অবশ্য গত রাতে জানা সম্ভব হয়নি।
এ অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘গত বছর এভারেস্ট-লোৎসে সামিটের পর এবার অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাবর আলী বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছেন। তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস অধ্যবসায়ের প্রতিফলন এই সাফল্য। আমরা আশা করি এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমাদের ইচ্ছা ছিল এবার বাবরকে একসঙ্গে তিন পর্বতে পাঠাব। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের একটি পর্বতেই থামতে হয়েছে। বাবরের লক্ষ্য ১৪টি আটহাজারী শৃঙ্গের সবকটিতেই লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো। উল্লেখ্য, এই দুঃসাহসিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার্স লি., ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লি., এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং ব্লু জে।
উল্লেখ্য, নেপালের গন্ডকিতে অবস্থিত অন্নপূর্ণা পর্বত স্থানীয়দের কাছে ফসলের দেবী হিসেবে পূজনীয়। এটি হিমালয়ে অবস্থিত ৫৫ কিলোমিটার লম্বা স্তূপ-পর্বত। এর মূলত চারটি চূড়া আছে। যার মধ্যে শীর্ষ হলো পৃথিবীর দশম শীর্ষ পর্বত ৮,০৯১ মিটার (২৬,৫৪৫ ফুট) উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১। উচ্চতায় দশম হলেও কৌশলগতভাবে অন্যতম কঠিন পর্বত হিসেবে বিবেচিত এই পর্বত। এর সফল সামিটের বিপরীতে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪ শতাংশ, যা ২০১২ সালের আগে ছিল ৩২ শতাংশ! গত মৌসুম পর্যন্ত এই পর্বত সামিট করেছেন ৫১৪ জন পর্বতারোহী। এদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৩ জন। ১৯৫০ সালের ৩ জুন ফ্রান্সের মরিস হেরজগ এবং লুইস লেচেনাল এই পর্বত চূড়া প্রথম স্পর্শ করেন, যা যেকোনো আটহাজারী শৃঙ্গে প্রথম মানব সাফল্য। এই ৭৫ বছরের মধ্যে ২০০৯ সালে অন্নপূর্ণা-৪-এ একবার বাংলাদেশি অভিযান হলেও অন্নপূর্ণা-১ এ এটিই প্রথম অভিযান এবং প্রথমবারেই এল সাফল্য।