আহমেদ দীপ্ত
বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকারের ১৩ লাখ তালগাছ লাগানোর প্রকল্পটি ব্যর্থ হওয়ার পর নতুন করে আরও দুটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বজ্রনিরোধক দণ্ড (লাইটনিং অ্যারেস্টার) বসানো হবে। প্রাথমিক ও পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জেলায় এই দণ্ড বসানো হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১৮ দিনে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন অন্তত ১৯ জন।
গত ১২ বছরে দেশে বজ্রপাতে মারা গেছেন ২ হাজার ৮৫৪ জন। আর চলতি বছরের সাড়ে ৯ মাসে মারা গেছেন ২৬৪ জন। এই প্রেক্ষাপটে বজ্রপাত ঠেকাতে সরকারের করণীয় কী, তা আবারও আলোচনায় এসেছে।
বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল ২০১৬ সাল। ওই বছর প্রায় ৪৩ লাখ বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৬৩ জন মানুষ। সে বছর বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।
বজ্রপাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এর এক বছর পর সারাদেশে প্রথমে ১৩ লাখ তালগাছ রোপণের উদ্যোগ নেয় সরকার। তখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তালগাছ ও নারকেল গাছ রোপণ করা হলে সেগুলো বজ্রনিরোধক দণ্ড হিসেবে কাজ করবে। অবশ্য এই প্রকল্প নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় ।
চলতি বছরের ১১ মে সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে তালগাছ লাগিয়ে বজ্রপাত মোকাবিলার কৌশলে ইতি টানার কথা সাংবাদিকদের জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। এনামুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, তখন তালগাছ লাগানোর পরে দেখা গেল, যত্নের অভাবে সেগুলো মারা যাচ্ছে। তাই শেষ পর্যন্ত এটি বাতিল করা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের কোন কোন অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয় (হটস্পট), তা বের করতে অধিদপ্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটির আলোকে বজ্রপাতের হটস্পটগুলোতে বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানোর প্রকল্প নেয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে (পাইলট প্রকল্প) ১৫টি জেলায় ৩২০টি বজ্রনিরোধক দণ্ড বসানো হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়ার পরিস্থিতি বুঝে সতর্ক সংকেত (আর্লি ওয়ার্নিং) দেয়ার কথাও ভাবছে অধিদপ্তর।
রোপণ করা তালগাছগুলো কী ভূমিকা রেখেছে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক বলেন, ২০১৭ সালে রাস্তার দুই পাশে তালগাছ রোপণ করা হয়েছিল। তালগাছ বড় হতে অনেক সময় নেয়, ৩০ থেকে ৪০ বছর লাগে। তাই, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সম্ভব ছিল না। তাঁর মতে, বজ্রনিরোধক দণ্ড বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত।
দুই মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্প
বজ্রপাতের কারণে হতাহতের সংখ্যা কমাতে সরকারের দুই মন্ত্রণালয় দুটি আলাদা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের হাওরাঞ্চলের বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের খরচ ৩০০ কোটি টাকা। একেকটি ছাউনি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এসব ছাউনিতেও বজ্র নিরোধক দণ্ড বসানো হচ্ছে।
অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ‘হাওরাঞ্চলে কৃষকদের জীবনের সুরক্ষায় বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পে ব্যয় ২৩১ কোটি টাকা। এর আওতায় হাওরাঞ্চলের সাতটি জেলার ৫৮টি উপজেলায় ১০০ থেকে ১২০ বর্গমিটার ব্যাসার্ধের ১৬টি আর্লি স্টিমার ইমিটার (ইএসই) নামে বজ্রনিরোধক যন্ত্র বসানো হচ্ছে। পাশাপাশি ‘আর্থ নেটওয়ার্কস লাইটিং অ্যান্ড সিভিয়ার ওয়েদার আর্লি ওয়ার্নিং সল্যুশন’-এর মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপ, ভয়েস ও খুদেবার্তার আকারে স্থানীয়দের সতর্কবার্তা দেয়া হবে।
বাংলাদেশের বজ্রপাত নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্লানেটারি সায়েন্সেসের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আশরাফ দেওয়ান। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে এখন অ্যারেস্টার, ছাউনি এবং আর্লি ওয়ার্নিং পদ্ধতির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। অ্যারেস্টারের গুণগত মান ও ব্যবহারের আগে কার্যকারিতার সম্ভাব্যতা যাচাই অপরিহার্য। সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে এগুলো মৃত্যু কমানোর বিপরীতে বাড়াতে পারে।
বজ্রপাত কমলেও তা শক্তিশালী
দেশে বজ্রপাতের সংখ্যা অবশ্য কমলেও সেটা উদ্বেগ কমানোর মতো নয়। কারণ, এখনও বছরে প্রায় ২৩৮ জন মানুষের মৃত্যু হয় ভূমিতে নেমে আসা বজ্রপাতে। আর মারা যাওয়াদের প্রায় অধিকাংশই কৃষক বা মাঠে কাজ করার সময়।
ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালারের হিসাবে বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ৪০ লাখ বা তার বেশি বজ্রপাত হয়। ২০১৯ সালে তা প্রায় ১০ লাখ কমে যায়। ২০২০ সালে বজ্রপাতের সংখ্যাটি দাঁড়ায় ২৫ লাখের কিছু কম।
ভাইসালারের সাত বছরের তথ্য বলছে, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটে কৃষিকাজ করার সময়। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং গোসল করা ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এই তথ্যের মিল পাওয়া গেল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এক হিসাবে। অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা যাওয়া ২৬৪ জনের মধ্যে ২৬০ জনই পেশায় কৃষক বা মাঠে কাজ করার সময় মারা গেছেন।
২০২১ বজ্রপাতে মৃত্যুর জেলাওয়ারী হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৬ জন। ১৬ থেকে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ জেলায়। ১২ থেকে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, রাজশাহী ও বগুড়ায়।
গবেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে সংখ্যাটা কমলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে হতাহতের সংখ্যা বেশি হতে দেখা যাচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়া, মাঠে উঁচু গাছ না থাকা এবং পানির কাছাকাছি থাকার কারণে বাহক হিসেবে মানুষ বজ্রপাতের শিকার হচ্ছেন। এ ছাড়া মৌসুমী বজ্রপাতের কারণ মূলত মৌসুমী বায়ুর প্রভাব।
গবেষকদের মতে, বাংলাদেশের ভূমিরূপের কারণেও বজ্রঝড় বেশি হয়। প্রাক-মৌসুমে দেশে অন্য মৌসুমের তুলনায় বজ্রপাত বেশি হয়। যার মূল কারণ কৃষিতে সেচকাজ- যা ভূমি ও বায়ুমণ্ডলের এনার্জি এক্সচেঞ্জকে প্রভাবিত করে। গাণিতিক ও আবহাওয়ার মডেল অনুযায়ী, প্রাক-মৌসুমে বজ্রপাত ও ঝড়ের তীব্রতা বাড়ে, অন্য সময়ে কমে। আর প্রাক-মৌসুমে যে বজ্রপাত হয়, তার তীব্রতা অনেক বেশি থাকে। ফলে প্রাণহানির আশঙ্কাও বেশি।
আশরাফ দেওয়ান দৈনিক বাংলাকে বলেন, মূলত বজ্রপাতগুলো বৃহৎ শক্তি (ভোল্টেজ) নিয়ে ভূমিতে আছড়ে পড়ছে। ভূমিতে নামার সময় বজ্রপাত উঁচু বাহক খোঁজে। মাঠে উঁচু গাছ কম এবং ওই পরিবেশে গাছপালাও কমে যাচ্ছে। ফলে বজ্রপাত বাহক হিসেবে বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, হতাহতও বাড়ছে।
উদাহরণ দিতে গিয়ে এই গবেষক বলেন, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর তেলিখাড়ি ঘাটে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬ জন। তাঁরা সবাই ঘাটে পানির কাছাকাছি ছিলেন। আবার এ বছর ৮ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বজ্রপাতে একই পরিবারের ৫ জনসহ ৯ জনের মৃত্যু হয়। তারা সবাই মাঠে কৃষিকাজ করছিলেন। ফলে একসঙ্গে এতগুলো বাহক পেয়ে বজ্রপাত তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে আঘাত হানে।
নাটোরের লালপুরে গ্রেপ্তার হওয়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল উদ্দিনকে থানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওসি নাজমুল হকসহ চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ওই নেতা এবং তার দুই বোন ও এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে পুলিশ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন জানান, গত ১৬ ডিসেম্বর বাগাতিপাড়া উপজেলার জয়ন্তীপুরে বিএনপি নেতা আব্দুর রশীদের বাড়িতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মঙ্গলবার দুপুরে রুবেলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে ওইদিন বিকেলে ছাত্রদল ও যুবদলের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী থানায় উপস্থিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশকে চাপ দেয়। এ সময় অসম্মতি জানালে একপর্যায়ে হট্টগোল করে থানা থেকে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। এই ঘটনায় মঙ্গলবার রাতেই বাগাতিপাড়া থানার উপপরিদর্শক মানিক কুমার চৌধুরী বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরে রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রুবেলের দুই বোনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে ছাত্রদল নেতা রুবেলকেও গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মামলার অন্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান চালাচ্ছে যৌথবাহিনী। লালপুর থানায় সংঘটিত ঘটনার জন্য লালপুর থানার ওসি নাজমুল হক ও দায়িত্বরত একজন উপপরিদর্শক এবং দুজন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়ে আসামি ছিনতাই করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দশম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ৮,০৯১ মিটার (২৬ হাজার ৫৪৫ ফুট) উচ্চতার মাউন্ট অন্নপূর্ণা-১ আরোহণ করে আবারও নজির সৃষ্টি করলেন পর্বতারোহী বাবর আলী।
বাবর আলী চট্টগ্রামভিত্তিক দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।
পেশায় ডাক্তার এই পর্বতারোহী ২০২৪ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে একই অভিযানে দুটি আট হাজার মিটারের শৃঙ্গ এভারেস্ট এবং লোৎসে পর্বত এবং প্রথম বাঙালি হিসেবে ২০২২ সালে অন্যতম টেকনিক্যাল চূড়া আমা দাবলামের শীর্ষ স্পর্শের নজির গড়েন। অনেকে ছয় হাজার মিটারের পর্বত বাদেও বাবর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ভারতের দীর্ঘতম সড়ক কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী করেছেন সাইক্লিং, প্রথম বাঙালি হিসেবে হেঁটে পাড়ি দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত।
প্লাস্টিকের দূষণের বার্তা ছড়াতে তিনি ৬৪ দিনে হেঁটেছেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা। এ ছাড়া লেখক হিসেবে আছে বাবর আলীর বেশ সুখ্যাতি। তিনি ম্যালরি ও এভারেস্ট, পায়ে পায়ে ৬৪ জেলা, সাইকেলের সওয়ারি, এভারেস্ট ও লোৎসে শিখরে নামক ৪টি বইয়ের রচয়িতা। বাবর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার নজুমিয়া হাটের লেয়াকত আলী এবং লুৎফুন্নাহার বেগমের দ্বিতীয় সন্তান।
তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের প্রেসিডেন্ট এবং অভিযান ব্যবস্থাপক ফরহান জামান জানান, পৃথিবীর দশম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ অন্নপূর্ণা-১-এ গতকাল সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান চট্টগ্রামের বাবর আলী। এই অভিযানের আউটফিটার মাকালু অ্যাডভেঞ্চারের স্বত্বাধিকারী মোহন লামসাল তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে বাবরের সাথী ছিলেন ক্লাইম্বিং গাইড ফূর্বা অংগেল শেরপা।
বাবরের সংগঠন এবং এই অভিযানের আয়োজক পর্বতারোহণ ক্লাব ভার্টিক্যাল ড্রিমার্সের পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে বলা হয়, ‘লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন স্রষ্টা। প্রকৃতিমাতা বিমুখ হননি। বঙ্গ সন্তান বাবরকে ক্ষণিকের জন্য নিজের চূড়ায় দাঁড়াতে দিয়েছে অন্নপূর্ণা। বিশ্বের দশম শীর্ষ পর্বত এবং অন্যতম কঠিন পর্বত ২৬,৫৪৫ ফুট উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১ এর শীর্ষে প্রথমবার উড়লো আমাদের লাল-সবুজের পতাকা। অন্নপূর্ণা জয় করার পর বাবর আলী সুস্থাবস্থায় ক্যাম্প-৩ তে নেমে এসেছেন।
বাংলাদেশ থেকে বাবর আলী নেপালে যান গত ২৪ মার্চ। প্রস্তুতি শেষ করে ২৬ মার্চ কাঠমান্ডু থেকে বিমানে যান পোখারা। এরপর কিছু পথ গাড়িতে ও বাকি পথ পায়ে হেঁটে ২৮ মার্চ পৌঁছেন বেসক্যাম্পে। এক দিন বিশ্রাম নিয়ে পরদিন পর্বতটিতে আরোহণ শুরু করেন। ৫ হাজার ২০০ মিটার উচ্চতার ক্যাম্প-১ এ দুই রাত কাটানোর পর ৫ হাজার ৭০০ মিটার উচ্চতার ক্যাম্প-২ এ উঠে সেখানেও এক রাত কাটান। এরপর ২ এপ্রিল তিনি ফের বেসক্যাম্পে নেমে এসে ভালো আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষার করেন। নেমে এসেই জানতে পারেন আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ভালো আবহাওয়া থাকবে পরদিন থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম খারাপ অবস্থার জন্য ৭ হাজার৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে আগেই একবার ফিরে আসে। সম্ভাব্য ভালো আবহাওয়াকে কাজে লাগাতে মাত্র ২৪ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়েই বাবর ৩ এপ্রিল থেকে আবার পর্বত আরোহণ শুরু করেন। ওইদিন ক্যাম্প-১ এ থেমে পরদিন উঠে যান ক্যাম্প-২। এর মাঝেই শুরু হয় বিপত্তি। বিকাল থেকেই হঠাৎ শুরু হয় তুষারঝড়। দীর্ঘ যোগাযোগহীনতার পর স্বস্তির খবর পাওয়া যায় যে ৫ এপ্রিল বাবর পেরিয়ে গেছেন কঠিন অংশ, পৌঁছে গেছেন পর্বতশৃঙ্গটির ৬ হাজার ৫০০ মিটারে অবস্থিত ক্যাম্প-৩ এ। সাধারণত ৭৪০০ মিটার উচ্চতায় ক্যাম্প-৪ তৈরি করে সামিট পুশ শুরু হলেও সিদ্ধান্ত হয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্যাম্প বাদ দিয়ে ক্যাম্প-৩ থেকেই শুরু হবে চূড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা, অর্থাৎ ওই উচ্চতায় একটানা ১৬০০ মিটার পথ দিতে হবে পাড়ি। চূড়া পর্যন্ত পথ তৈরি এবং আবহাওয়ার উন্নতির জন্য ক্যাম্প-৩ এ অতিরিক্ত এক দিন অপেক্ষা করে ৬ এপ্রিল রাতে ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে বাবর বেরিয়ে পড়েন। এদিকে রোপ ফিক্সিং টিম সামিট পর্যন্ত পথ তৈরি করতেই ভোরে শীর্ষে উঠে আসেন বাবর আলী। আবহাওয়া বেগতিক দেখে পরবর্তী পরিকল্পনা হয় গতকালই তিনি নেমে আসবেন ক্যাম্প-২ এ। সেখানে রাতটা কাটিয়ে নেমে আসবেন বেসক্যাম্পের নিরাপত্তায়। তার অবরোহণের বিস্তারিত অবশ্য গত রাতে জানা সম্ভব হয়নি।
এ অভিযানের ব্যবস্থাপক ফরহান জামান বলেন, ‘গত বছর এভারেস্ট-লোৎসে সামিটের পর এবার অন্নপূর্ণা-১ শীর্ষে পৌঁছানোর মাধ্যমে বাবর আলী বাংলাদেশের পর্বতারোহণের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত করেছেন। তার কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস অধ্যবসায়ের প্রতিফলন এই সাফল্য। আমরা আশা করি এই অর্জন বাংলাদেশের পর্বতারোহণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমাদের ইচ্ছা ছিল এবার বাবরকে একসঙ্গে তিন পর্বতে পাঠাব। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের একটি পর্বতেই থামতে হয়েছে। বাবরের লক্ষ্য ১৪টি আটহাজারী শৃঙ্গের সবকটিতেই লাল-সবুজের পতাকা উড়ানো। উল্লেখ্য, এই দুঃসাহসিক অভিযানে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ভিজ্যুয়াল নিটওয়্যার্স লি., ভিজ্যুয়াল ইকো স্টাইলওয়্যার লি., এডিএফ এগ্রো, ফ্লাইট এক্সপার্ট, এভারেস্ট ফার্মাসিউটিক্যালস লি. এবং ব্লু জে।
উল্লেখ্য, নেপালের গন্ডকিতে অবস্থিত অন্নপূর্ণা পর্বত স্থানীয়দের কাছে ফসলের দেবী হিসেবে পূজনীয়। এটি হিমালয়ে অবস্থিত ৫৫ কিলোমিটার লম্বা স্তূপ-পর্বত। এর মূলত চারটি চূড়া আছে। যার মধ্যে শীর্ষ হলো পৃথিবীর দশম শীর্ষ পর্বত ৮,০৯১ মিটার (২৬,৫৪৫ ফুট) উচ্চতার অন্নপূর্ণা-১। উচ্চতায় দশম হলেও কৌশলগতভাবে অন্যতম কঠিন পর্বত হিসেবে বিবেচিত এই পর্বত। এর সফল সামিটের বিপরীতে মৃত্যুর হার প্রায় ১৪ শতাংশ, যা ২০১২ সালের আগে ছিল ৩২ শতাংশ! গত মৌসুম পর্যন্ত এই পর্বত সামিট করেছেন ৫১৪ জন পর্বতারোহী। এদের মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ৭৩ জন। ১৯৫০ সালের ৩ জুন ফ্রান্সের মরিস হেরজগ এবং লুইস লেচেনাল এই পর্বত চূড়া প্রথম স্পর্শ করেন, যা যেকোনো আটহাজারী শৃঙ্গে প্রথম মানব সাফল্য। এই ৭৫ বছরের মধ্যে ২০০৯ সালে অন্নপূর্ণা-৪-এ একবার বাংলাদেশি অভিযান হলেও অন্নপূর্ণা-১ এ এটিই প্রথম অভিযান এবং প্রথমবারেই এল সাফল্য।
মানুষ যখন উন্নতমান কাঠের, স্টিলের খাট-পালংসহ নানা আসবাবপত্র ব্যবহার করছেন, সে সময় বাঁশের খাট, পালং, শোকেসকে মামুলি মনেই হতে পারে; কিন্তু একটু গভীরভাবে ভাবলেই বোঝা যায়, এর সঙ্গে মিশে আছে প্রকৃতি আর সৃষ্টিশীলতার যোগসাজশ। সেই মায়ায় পড়েই জীবনের ৫৩টি বসন্ত পার করে দিলেন নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের চকসাদক কোণাপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তার।
নবতীপর এই বৃদ্ধ তার ছোট্ট একটি ঘরের আঙিনায় প্রতিষ্ঠা করেছেন কাঠ দিয়ে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানা। লোহার ফ্রেম তৈরি করে হাতেটানা মেশিন বসিয়ে খুন্দাই কাজের মাধ্যমে সনাতনী পদ্ধতির মাধ্যমে তৈরি করছেন স্বরাজ, দোতারা, একতারা, ডুগডুগি, খুঞ্জুরী, ঢোল, খমক, ঘাইল, বেলাইন।
এ ছাড়া বাঁশ-বেতের মাধ্যমে তৈরি করছেন মাছ শিকারের চাঁই (বাইর), পলো, ঝুপড়া, চুপরা, উঁইচ, বৃষ্টি ফেরানোর পাতলা, বিভিন্ন প্রকার ঘুড়ি, বিছানা খাট, পালং, দরম, শোকেস, টেবিল, ৩৫ ফুট লম্বা বাঁশের মই ইত্যাদি।
ক্রেতারা তার বাড়িতে এসে এসব জিনিস কিনে নিয়ে যান। মূল্য নিয়েও সমস্যা হয় না। খুব কম মূল্যেই এসব জিনিসপত্র তিনি বিক্রি করে দেন। কারণ হিসেবে তিনি জানালেন, শুধু লাভের আশায় এগুলো তিনি তৈরি করেন না। এ কাজকে তিনি শিল্প হিসেবে মনে করেন। তাই মাধুরী মিশিয়ে একটু একটু করে এসব জিনিস তৈরি করেন। এর সঙ্গে মিশে থাকে নিখাঁদ ভালোবাসা।
প্রত্যন্ত অঞ্চলের চকসাদক কোণাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই নিভৃতচারী শিল্পী। পিতা মৃত সমর আলী ওরফে লাবু মিয়া, মায়ের নাম নাইবের মা। তারা বহু আগেই মারা গেছেন।
আব্দুস সাত্তার জানান, তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই অর্থাৎ লেখাপড়া করেননি। স্ত্রী আবিয়া খাতুনকে নিয়ে সংসারে ৩ ছেলে নজরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান ও দীন ইসলামসহ তাদের স্ত্রীরা এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে ২১ জনের একটি পরিবার। মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ ভূমিতে তাদের বসবাস।
দৈনিক বাংলাকে তিনি বলেন, প্রথম দিকে সখ করে এসব তৈরি করলেও পরে এটিই পেশা নেশা হয়ে ওঠে। ৪০-৪৫ বছর আগে উত্তর মাসকা গ্রামের ঘানি তৈরির কারিগর আব্দুল জব্বারের কাছে কারুকাজের তালিম নেন। তিনিই তার ওস্তাদ।
তবে বর্তমানে কাঠ, বাঁশ, চামড়া, ফিতা ইত্যাদির দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন আর পণ্যসামগ্রী উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎচালিত খুন্দাইল মেশিন নেই। নিজে তৈরি হাতেটানা মেশিন দিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করে এসব জিনিস তৈরি করতে হয়। তিনি আরও বলেন, ‘এসব জিনিসপত্র তৈরি করতে দুজন লোক লাগে। টাকা দিয়ে সহকারী রাখার মতো সামর্থ্য নেই আমার। তাই যখন যাকে পাই তাকে দিয়েই দড়িটানার কাজটা করিয়ে নিই।’
এ কাজে সংসার চলে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিল্পী বলেন, ‘একদম চলে না। ঘরটা ভেঙে পড়ছে। মেরামত করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এক সময় বৈঠকি বাউল গান করতাম, এখন আর করি না। আমার তৈরি বাদ্যযন্ত্র দিয়ে শিল্পীরা যখন গান-বাজনা করে আমার তখন খুবই আনন্দ হয়। তখন ভুলে যাই পেটে ভাত না থাকার কথা।’
আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী আবিয়া খাতুন জানান, ‘সারাজীবন মানুষটা কষ্টই করল। থাকার মতো একটা ঘর পর্যন্ত নাই। সরকার যদি একটা ঘর, একটা খুন্দাইল মেশিন দিত, বাকি জীবনডা একটু শান্তি পাইতো।’
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, আব্দুস সাত্তার একজন অসাধারণ গুণী মানুষ। সারাজীবন তিনি এ কাজগুলোই করে যাচ্ছেন। তার তৈরি জিনিস মানুষ দেখতে আসে, এটা এলাকাবাসীর গর্ব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে শেষ জীবনে একটু শান্তিতে যেতে পারতেন।
কক্সবাজারের চকরিয়ায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে জিয়াউদ্দিন কাজল (৩৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। তাকে উদ্ধারের দাবিতে পরিবারের সদস্যরা গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে পৌর শহরে নিউজ পয়েন্টে সংবাদ সম্মেলন।
গত রোববার রাত ৮টার দিকে উপজেলার খুটাখালী বাজারের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু অপহৃত জিয়াউদ্দিন কাজলকে উদ্ধার করতে পারেননি।
অপহৃত জিয়াউদ্দিনকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় উদ্ধার করে ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন তার স্ত্রী নুসরাত জাহান নিপা ও ছেলে নূর জামিন। নিখোঁজ ব্যবসায়ী জিয়াউদ্দিন কাজল উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নে ৩ নম্বর ওয়ার্ড নূর হোসেনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে নুসরাত জাহান নিপা জানান, চকরিয়ায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী শিব্বির আহমদ, নাছির উদ্দিন বাবুল, মো. সালাহ উদ্দিন, জমির উদ্দিন, মো. আলী আহমদ, রাশেদুল ইসলাম, মো. মিন্টুসহ অজ্ঞাত ২-৩ জন পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে অপহরণ করেন। গত রোববার রাত ৮টায় আমার স্বামী জিয়াউদ্দিন কাজল খুটাখালী বাজারে ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ওই সন্ত্রাসী আসামিরা পূর্বশত্রুতার আক্রোশে পরিকল্পিতভাবে জিম্মি করে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে। অপহরণ করে চিংড়ি প্রজেক্ট এলাকার গোপন স্থানে নিয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় ১৮ ঘণ্টা হয়ে গেলেও স্বামীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।’
চকরিয়া থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশের টিম অপহৃতকে উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। অপহৃতের মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে:-
পাবনা: গাজা উপত্যকার বাতাসে এখন হাহাকার ও আর্তনাদ। ইসরায়েলের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শিক্ষার্থী-জনতার বিক্ষোভে উত্তাল পাবনার সড়ক। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ চত্বরে এ বিক্ষোভ শুরু হয়। এর আগে পাবনা জিলা স্কুল, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহীদ চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। এর সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এ সময় বক্তারা বলেন, ‘গাজায় ১৮ মাস ধরে হামলা ও হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। অসংখ্য মুসলিম হত্যা করেছে। শিশু, চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক- কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছে না। গাজাকে একটি ধ্বংস নগরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এ রকম বর্বরতা বিশ্ব এর আগে দেখিনি। আমরা বিশ্ব মুসলিমের অংশ হিসেবে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’
এ সময় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের স্লোগান দিয়ে শহীদ চত্বরের পাশে লতিফ টাওয়ারের বাটা শোরুমে জুতা ও ঢিল নিক্ষেপ করেন বিক্ষুব্ধরা। উত্তেজনা বাড়তে থাকলে ছাত্রনেতারা তাদের নিবৃত্ত করেন। পরে গাজাবাসীর জন্য মোনাজাত করে কর্মসূচি শেষ হয়।
নরসিংদী: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে সারা দেশের ন্যায় নরসিংদীতেও ব্যাপক সংখ্যক লোক বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে এ প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। নরসিংদী শহরের শিক্ষা চত্বর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এক বিক্ষোভ মিছিল বের করে। নরসিংদী জেলখানা মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মাওলানা মুসলেহুদ্দীন, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি উপাধ্যক্ষ মাওলানা আমজাদ হোসাইন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক মকবুল হোসেন, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল লতিফ খান, ইব্রাহিম ভূঁইয়া, নরসিংদী সদর থানার আমির মাহফুজ ভূঁইয়া, নরসিংদী শহর আমীর আজিজুর রহমান ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রুহুল আমীনসহ নেতারা।
অন্যদিকে বেলা ১১টায় নরসিংদী পৌরসভা চত্বর থেকে সর্বস্তরের মুসলমান এক বিশাল মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে জেলখানা মোড়ে এসে প্রতিবাদ সমাবেশ করে কর্মসূচি শেষ হয়। নরসিংদী শহরের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে জেলখানা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশে একত্রিত হন। এতে করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে সড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে।
নেত্রকোনা: গাজায় হামলা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সারা দিনব্যাপী জেলা সদরসহ ১০ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এ কর্মসূচি পালিত হয়। জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত আন্দোলনসহ রাজনৈতিক দল, ইসলামী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় বক্তারা অনতিবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে সর্বপ্রকার ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের দাবি জানান তারা।
রংপুর: ফিলিস্তিনের মানুষের ওপর ইসরায়েলের বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের অংশ হিসেবে রংপুরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সকালে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মিছিল নিয়ে এসে টাউন হলের সামনে সড়কে অবস্থান করে। সেখানে সমাবেশে ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা। এ সময় ইসরায়েলের পণ্য বয়কটসহ জাতিসংঘকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
নওগাঁ: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদ এবং বিশ্বব্যাপী ডাকা হরতালের সমর্থনে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশ করেছে নওগাঁ সরকারি কলেজ এবং নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা শহীদ ফাহমিন চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কলেজ চত্বর প্রদক্ষিণ করে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফিলিস্তিন ফিলিস্তিন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘নেতানিয়াহুর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ স্টপ জ্যানোসাইডসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করে কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও অংশগ্রহণ করেন।
নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সুলতান শাহরিয়া শাফি বলেন, ‘এই ইসরায়েল আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের কেন মারছে? কী উদ্দেশ্য তাদের? শুধুই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা ভূমি দখলের জন্য? নাকি আমাদের দ্বীন, আমাদের ইমানের জন্য? তাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা কোথায়? তাদের বিরুদ্ধে আমাদের পদক্ষেপ কেমন হওয়া উচিত। তারা আমাদের আকিদার শত্রু, দ্বীনের শত্রু। আমরা নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পাসপোর্টে একসেপ্ট ইসরায়েল পুনর্বহাল এবং ইসরায়েলি পণ্য নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘মিডিয়ায় যখন গাজার ধ্বংসস্তূপের ভিডিওগুলো দেখি তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। শত শত মরদেহ আকাশে উড়ছে। ছোট ছোট শিশুদের নিথর দেহ পড়ে আছে। আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না। জাতিসংঘের কাছে এই হত্যার বিচার চাই।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও নওগাঁ ব্লাড সার্কেলের উপদেষ্টা রেশমা পারভীন বলেন, ‘দখলদার ইসরায়েল বাহিনী আমাদের ভাইদের ভূমি দখল করে তাদেরই উৎখাত করছে। অথচ বিশ্ব বিবেকের এটি নিয়ে কোনো কথা নেই। আমরা এই সমাবেশ থেকে দেশবাসীকে ইসরায়েলি সব পণ্য বয়কট করার জন্য আহ্বান জানাই।
বাগাতিপাড়া (নাটোর): ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা ও নির্মম গণহত্যার প্রতিবাদে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (বাউয়েট) শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্লাজা প্রাঙ্গণে শত শত শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। তারা ফিলিস্তিনের শিশু, নারী ও সাধারণ মানুষের ওপর চালানো গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান এবং বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানান।
প্রথম পর্বের মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে উপজেলার দয়ারামপুর বাজারের প্রধান সড়ক এলাকায় প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ করেন।
বাউয়েটের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা মাছুদার রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ তূর্য্য ও গাজাবাসীর জন্য বিশেষ মোনাজাত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ আল আমিন প্রমুখ।
ঈশ্বরদী (পাবনা): গতকাল সোমবার বাদ জোহর ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ হতে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘট কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে ধর্মঘট-বিক্ষোভ করেছে ঈশ্বরদীর হাজারও সাধারণ মানুষ। জোহরের নামাজের আগেই বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের খণ্ড খণ্ড মিছিল এসে মসজিদের সামনে জড়ো হয়। ছাত্র, শিক্ষক, কৃষক, দিনমজুর, ব্যবসায়ী, যুবক, বৃদ্ধসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এতে অংশ নেন। শহরজুড়ে মিছিলটি বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। মিছিল শেষে ঈশ্বরদী রেলগেট মোড়ে পথসভা হয়। বক্তারা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): গাজায় ইসরায়েলি বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল ত্রিশালের রাজপথ। গতকাল সোমবার বাদ জোহর গোহাটা মসজিদ থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ পৌর শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এতে হাজার হাজার জনতা অংশ নেন। পরে সরকারি নজরুল কলেজের সামনে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন মুফতি জহিরুল ইসলাম, মাওলানা নজরুল ইসলাম, মাওলানা এখলাস উদ্দিন, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল মালেক, মাওলানা তোফাজ্জল হক মুফতি মোশারফ হোসেইন প্রমুখ। এ ছাড়া সকালে গাজায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ ত্রিশাল পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে খণ্ড খণ্ড বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের খবর পাওয়া গেছে।
মৌলভীবাজার: ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গতকাল কমলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা এবং ভারতের মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ করা হয়। সোমবার দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর, ভানুগাছ, পতনঊষার, মুন্সীবাজার, আদমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এ বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।
এসব মিছিল শেষে বক্তারা অবিলম্বে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা বন্ধে বিশ্ব নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের মানুষদের প্রতি সবাইকে সহায়তার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানান। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল সেনাবাহিনী কর্তৃক নারী, শিশু, স্কুল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে জঘন্য ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।
সারা দেশে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালীন ভাঙচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল সোমবার দেশের বেশ কয়েকটি শহরে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে এসব ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার ভ্যারিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলার তদন্ত চলছে এবং এই নিন্দনীয় কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আরও মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
এতে আরও বলা হয়, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পুলিশ গত রাতে অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে বিক্ষোভের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করছে। এই সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য দায়ী সবাইকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
তদন্তে সহায়তা করতে পারে—এমন তথ্য যাদের কাছে আছে তাদের সহযোগিতাও কামনা করা হয় বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়, এই ধরনের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের প্রতি অবমাননাকর। যারা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বানও জানানো হয়।
দালালের অত্যাচারে লিবিয়ায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের সোহাগ মিয়া (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৩০ মার্চ মৃত্যুর খবর পায় নিহতের পরিবার। নিহত যুবক পৌর শহরের কালিপুর দক্ষিণ পাড়ার সোবহান মিয়া বাড়ির মৃত নূর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে। লিবিয়ায় নিহত সোহাগের রুমমেট দেলোয়ারের মাধ্যমে খবর পেয়ে তথ্য নিশ্চিত করেন নিহতের বড়ভাই সুজন মিয়া।
জানা যায়, পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সোহাগ দ্বিতীয়। দীর্ঘ ৮ বছর তিনি কাতারে অবস্থান করছিলেন। ১ বছর আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। এরপর নরসিংদীর বেলাবোর বারৈচা এলাকার সেন্টু মিয়ার মাধ্যমে ১৬ লাখ টাকার চুক্তিতে ইউরোপের দেশ ইতালি যেতে লিবিয়ায় পাড়ি জমান সোহাগ। এক মাসের ভেতর ভূমধ্যসাগর দিয়ে ইতালি পৌঁছার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৭ মাস ধরে তাকে লিবিয়ায় আটকে রাখা হয়। সেই সঙ্গে তাকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করতে থাকে দালালচক্র। এ অত্যাচারের ফলে ১ সপ্তাহ আগে অসুস্থ হলেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করায়নি দালালরা। গত ৩০ মার্চ রোববার রাত ২টায় গুরুতর অসুস্থ হলে লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের ভাই সুজন মিয়া বলেন, ‘আমি ইতালিতে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছি। আমার ভাই কাতারে ভালো অবস্থানে ছিল। এত বছর আগে দেশে এসে বিয়ে করেন। তার সংসারে নুসাইবা নামে ৩ মাসের একটি কন্যা-সন্তান রয়েছে। ৭ মাস আগে দালালের সঙ্গে ১৬ লাখ টাকা চুক্তিতে লিবিয়া যায় আমার ভাই। প্রথমে ৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর ১ মাস পর ইতালিতে পৌঁছানোর কথা বলে পুরো ১৬ লাখ টাকা নেয় আমার কাছ থেকে। কিন্তু টাকা দেওয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হলেও আমার ভাইকে ইতালিতে পাঠায়নি। দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারিনি। এদিকে আমার ভাইকে না খাইয়ে বিভিন্ন সময় মারধোর করে ও নানাভাবে অত্যাচারে করে দালালচক্র। আমার ভাই অসুস্থ হওয়ার পর তাকে চিকিৎসা করায়নি। আজ চিকিৎসার অভাবে আমার ভাই সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে।’
এদিকে প্রবাসে দালালের অত্যাচারে সোহাগের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মা ও স্ত্রী বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। নিহতের স্ত্রী লিজা বেগম বলেন, ‘দালালের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেছে। আমি আমার তিন মাসের সন্তান নিয়ে কোথায় যাব। আমার পরিবারের কী হবে।’ এ কথা বলতে বলতে কান্নায় লুটিয়ে পড়েন। স্বামীর লাশ ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সেই সঙ্গে দালালচক্রের বিচারের দাবি জানান শিশু কন্যার জননী লিজা বেগম।
এ ব্যাপারে দালাল সেন্টু মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শবনম শারমিন জানান, ওই যুবক যদি সরকারিভাবে প্রবাসে গিয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও শ্রম কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেখবে। নিহতের পরিবার আমার কাছে এলে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করব। নিহতের পরিবার যাতে মরদেহ ফিরে পায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে যে, রাজশাহী এবং চট্টগ্রাম বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া, দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রাঙ্গামাটি, ফেনী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসমূহের উপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিত অংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।পরবর্তী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীর বাঘাবাড়ীতে ৩৮ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সিলেটে ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোর ৬ টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীর ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২১ মিলিমিটার।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৫৩ শতাংশ। ঢাকায় বাতাসের গতি পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম ধাপে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকার সম্মতি জানিয়েছে গত শুক্রবার। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনের বৈঠকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে এ তথ্য জানানোর পর থেকে এ বিষয়ে আলোচনা-সমোলোচনা চলছে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে। দেশটির রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ এলাকা এখনও দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির দখলে থাকায়, দেশটির জান্তা সরকার তাদের গ্রামে ফিরিয়ে নিতে পারবে কি করে এমন প্রশ্ন তুলেছেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
গতকাল শনিবার কক্সবাজারের বেশ কয়েকটি শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে। ২০২৪ সালে রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের গ্রাম থেকে পালিয়ে এপারে আসা রোহিঙ্গারা আমির হোসেন জানান, রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির দখলে। রাখাইন রাজ্যে আমাদের ভিটা বাড়ি ছিল। আমাদের আরকান রাজ্যে এখন কোন সরকার নেই। আমাদের আরকানের জিম্মাদার এখন সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে রাখাইন রাজ্য জান্তার সঙ্গে যুদ্ধ করে দখল করে রেখেছে আরকান আর্মি। যখন জান্তার দখলে ছিল তখন আমাদের নির্যাতন করে রাখাইন থেকে বিতাড়িত করেছে। আরাকানে দুটি এলাকায় এখনও রোহিঙ্গা আছে। তাদের ওপরেও নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে তারা (মিয়ানমারের জান্তা সরকার) এক লাখ রোহিঙ্গা কোথায় নিয়ে যাবে? জান্তা সরকার আমাদের জায়গায় আরকান আর্মিকে দখলে দিয়ে দিয়েছে। সেখানে আমাদের নিয়ে কোথায় রাখবে, এটিও স্পষ্ট করেনি দেশটির জান্তা সরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের (জান্তা সরকার) এর নতুন কৌশল কিনা সেটি চিন্তা করা দরকার। কেননা সেময় তাদের দখলে থাকা রাখাইন থেকে আমাদের রোহিঙ্গাদের) বিতাড়িত করেছিল। এখনো সেখানে (রাখাইনে) আরকান আর্মির সাথে জান্তা সরকারের যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য কিভাবে আমাদের তারা (জান্তা) সেখানে নিয়ে যাবেন।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী আরেকজন মো. আলম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, মিয়ানমারে ফেরার আগে আমাদের কিছু শর্ত আছে। আমারা যেখানে বসবাস করছি সেখানে এখন আরকান আর্মির রাজত্ব। আমরা সেখানে ফিরব না। আর কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে এটা আগে পরিষ্কার হতে হবে। মিয়ানমার সরকার নিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের শর্ত, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং মিয়ানমারের নাগরিকত্বের সার্টিফিকেট বা আইডি কার্ড দিতে হবে। এগুলো সমাধান করে মিয়ানমার নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নিজস্ব জমি জমা সম্পত্তি যা ছিল সেগুলো আমাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যেভাবে মিয়ানমার বিভিন্ন গোষ্ঠী চলাফেরা করছে সেভাবে চলাফেরা করার সুযোগ করে দিতে হবে। এ শর্ত গুলো যদি মিয়ানমার সরকার পূর্ণ করে তাহলে আমরা ফিরব।’
টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের মাঝি নুর মোহাম্মদ জানান, আগেও জান্তা সরকার বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছিল আমাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু এত বছর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা ফিরিয়ে নেননি। হঠাৎ কেন তারা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলতেছে এটা রহস্যজনক মনে হচ্ছে আমাদের কাছে।
বালুখালীর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা রফিক বলেন, মিয়ানমার সরকার রাজি হলেও এখন প্রত্যাবাসনের আগে আরও কাজ আছে। আগে রাখাইনে দখলে রাখা আরকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারে সরকারের সঙ্গে বসতে হবে। না হলে তারা যাওয়ার কথা বললেও যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মিয়ানমারের নাগরিকের মর্যাদা দিয়েই ফেরাতে হবে। এই দাবি শুরু থেকে করে আসছি আমরা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘আট বছরের মধ্য মিয়ানমার জান্তা সরকার শুধু ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা তথ্য যাচাই-বাছাই শেষ করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, এটি আসলে চিন্তার বিষয়। এত দিন পর কেন তারা ছোট একটি দল নিতে চাইছে এটা আমরা পরিষ্কার না। এখানে অনেক সংশয় রয়েছে।’
নতুন পুরোনো আর বাংলাদেশে এসে জন্ম নেওয়া মোট ১৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে। এ সংখ্যা আরো কম-বেশি হতে পারে জানিয়ে এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘এভাবে নিয়ে গেলে ৫২ বছরের বেশি সময় লাগবে বাংলাদেশ সব রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন করতে। তাছাড়া আমাদের কোথায় নিয়ে রাখা হবে, বিষয়টি কেউ পরিষ্কার করেনি।’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। এসব রোহিঙ্গার মধ্যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া রয়েছে। এর আগে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের দিন ধার্য করা হলেও বাস্তবে প্রত্যাবাসন বারবার ভণ্ডুল হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীর মধ্য হালিশহর এলাকার সড়কে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে নগরীর বন্দর থানাধীন মধ্য হালিশহর-সংলগ্ন বাকের আলী টেকের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত পোশাককর্মীর নাম চাঁদনী বেগম (২২)। তিনি খুলনা জেলার দাকোপ থানাধীন খাজুরিয়া গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে। তিনি নগরীর ইপিজেড এলাকায় একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।
বন্দর থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ সুলতান আহসান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ওই নারী রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে এক লোক শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরি দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত ওই নারীকে স্থানীয় লোকজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, ‘ছুরিকাঘাত করা ব্যক্তি ওই নারীর স্বামী হতে পারে বলে স্থানীয়রা বলেছেন। আমরা ঘটনা তদন্ত করছি।’
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শরীয়তপুরের জাজিরায় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত শতাধিক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। ঘটনাটি শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় সংঘটিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে এর আগেও বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার সকালে দূর্বাডাঙ্গা এলাকায় একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন তারা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে, সংঘর্ষ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। অনেককে হাতে বালতি নিয়ে হেলমেট পরিহিত অবস্থায় দেখা গেছে। তারা বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করছেন, যা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ‘সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। হঠাৎ করে দুপক্ষের লোকজন জড়ো হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। বোমার শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠছিল। আমরা ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারিনি।’
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বর্তমানে এলাকায় শান্তি বিরাজ করছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধের কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তারা প্রশাসনের কাছে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমির স্নান শুরু হয়েছে। অষ্টমি স্নানের লগ্ন ভোর ৪টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই স্নানকে ঘিরে লাখো পুণ্যার্থীর ভিড় জমেছে।
চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাপ মোচনের জন্য প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদে পূণ্যস্নান করে থাকেন।
আয়োজকরা জানান, এবার পুণ্যস্নান প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের রমনা বন্দর এলাকা থেকে পুটিকাটা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অষ্টমীর স্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্নান উৎসবে রংপুর বিভাগের ৮ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পুণ্যার্থীরা একদিন আগেই চিলমারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়।
আগত পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য উপজেলার প্রায় ২২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পুণ্যার্থীদের স্নান পরবর্তী পোশাক পরিবর্তনের জন্য এবং রাত্রী যাপনের জন্য ৪৪টি অস্থায়ী বুথ করা হয়েছে। পুণ্যার্থীদের পূজাপর্বের জন্য প্রায় দুই শতাধিক ব্রাহ্মণ পূজারি দায়িত্ব পালন করেন।
অষ্টমী স্নান নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের বিভিন্ন পদে ১৮১ জন সদস্য ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
ফরিদপুর পৌরসভার মুন্সিবাজার এলাকার রড সিমেন্টের ব্যবসায়ী দুই ভাই রঞ্জিত বিশ্বাস ও লিটন বিশ্বাসকে কুপিয়ে যখন করেছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১১টার দিকে গেরদা ইউনিয়নের কাজীবাড়ি মসজিদ মোড় এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতদের বরাত দিয়ে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে গেরদা ইউনিয়নের সাহেব বাড়ী থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়িতে ফেরার সময় কাজীবাড়ি মসজিদ মোড় এলাকায় পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলে থাকা চার ব্যক্তি পেছন থেকে রঞ্জিত বিশ্বাস নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। এ সময় রঞ্জিত বিশ্বাসের সঙ্গে থাকা তার সহোদর লিটন বিশ্বাস আহত হন। আহতদের ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রঞ্জিত বিশ্বাসকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
তিনি আরও জানান, খবর পেয়ে পুলিশের একাধিক টিম ঘটনা অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে। হামলার কারণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আহত রঞ্জিত বিশ্বাসের ভাই লিটন বিশ্বাস বলেন, গেরদা সাহেব বাড়ির পাশে আমার বড় ভাই রাতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিল। রাত বেশি হওয়াতে কোন গাড়ি পাচ্ছিল না বাড়ি আসার জন্য। পরে আমাকে ফোন দিলে আমি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই বাড়ির থেকে রঞ্জিতকে নিয়ে আমাদের বাড়ির দিকে আসছিলাম। পথেই তিন চার ব্যক্তি দুইটি মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে। পরে আমরা রাস্তায় পড়ে গেলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়।