শাহরিয়ার হাসান, টেকনাফ থেকে ফিরে
‘আমরা জলদাস, নোনা জল খেয়েই বেঁচে থাকি। কিন্তু সে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। একবেলা খাবার পাই তো অন্য বেলায় উপোস থাকি। ক্ষুধার জ্বালায় স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। কিস্তির টাকা শোধ করতে ভিটামাটিও বিক্রি করেছি। তার পরও আমাদের দিকে কারো চোখ পড়ছে না। এক ইয়াবার বিষে গোটা জেলেপাড়া আক্রান্ত।’
কথাগুলো নিজের ভাষায় বলেছিলেন টেকনাফের নাফ নদীর তীরে জেলেপাড়ার নন্দলালের স্ত্রী কাজলী দাশ। তিনি বলেন, দুই ছেলে আর তিন মেয়ের পরিবার নিয়ে তাদের মরে যাওয়া আর বেঁচে থাকা একই হয়ে গেছে।
সম্প্রতি নাফ নদীর পাড়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় কাজলী দাশের। তার গল্পে শুধু তার পরিবারের কথা না ফুটে ওঠে আরও ১০ হাজার জেলে পরিবারের কথা। যাদের কেউই ভালো নেই। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত তাদের জুটছে না।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও ইয়াবা পাচার বন্ধে ২০১৭ সালে নাফ নদীতে মাছ শিকারসহ সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দেয় সরকার। নিষেধাজ্ঞায় নাফ নদীকেন্দ্রিক জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা টেকনাফ উপজেলার ছয় ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার তিনটি ইউনিয়ন এবং এক পৌরসভার ১০ হাজার জেলে পরিবারে নেমে এসেছে অন্ধকার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এ নদীতে মাছ শিকার করে নিজেদের জীবন-জীবিকা, সংসার, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে আসছিলেন নদী পারের মানুষেরা। যদিও এই নিষেধাজ্ঞার ৫ বছর পরও থেমে নেই নাফ দিয়ে ইয়াবা পাচার। উল্টো বেড়েছে কয়েক গুণ। প্রশাসনের এই ব্যর্থতার দায় গুনতে হচ্ছে সেখানকার জেলেদের।
যাদের সুপারিশে জেলেদের জন্য এই নাফ নদী বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুল রহমান বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, নাফ নদীতে মাছ ধরা নিয়ে আগের মতো তেমন কঠোরতা নেই। চাইলে জেলেরা নাফ নদীতে নামতে পারে। তবে সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা বা অন্য যেকোনো মাদক চালান পাচার বন্ধে যা যা করার প্রয়োজন তা বিজিবি করে আসছে। কিন্তু টেকনাফের জেলেপাড়ায় গিয়ে বিজিবি পরিচালকের কথার মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
টেকনাফে বেশ কয়েকটি জেলেপাড়া আছে। এর মধ্যে হোয়াইক্যংয়ের উত্তরপাড়া, খারাইংগ্যাঘোনা, বালুখালী লম্বাবিল, হ্নীলার হোয়াব্রাং, নাটমুড়ার জেলেপাড়া, জাদীমুরা, খারাংখালী, টেকনাফের জাইল্যাপাড়া, কায়ুকখালীপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাংয়ের চৌধুরীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপের জাইল্যাপাড়া, খারিয়াখালী এবং মাঝেরপাড়া অন্যতম।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন নাফ নদীর তীরে নোঙর করে রাখা মাছ ধরার কয়েক হাজার নৌকা ও জাল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ক্ষতি কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে জীবন চালাতে যারা নৌকা ও জাল কিনেছিলেন, নদীতে যেতে না পেরে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। ঋণের টাকার জন্য বাড়ি পাড়িয়ে নামাচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। আবার অসহায়ত্বের কারণে অনেক জেলে নিজেদের ভিটেমাটি বিক্রি করে পথে বসেছেন। চাপ সামলাতে না পেরে কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জীবিকার একমাত্র পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে আবার বিকল্প আয়ের উৎস খুঁজেছেন। কিন্তু স্থানীয় বিভিন্ন প্রকল্পে রোহিঙ্গারা শ্রমিক হিসাবে কাজ করায় সে কাজ পেতেও জেলেদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলছেন, যদি জেলেদের মাধ্যমে ইয়াবা পাচার হয়ে থাকে, তাহলে রাতের বেলায় না হলেও অন্তত দিনের বেলায় নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি দেয়া হলে জেলেরা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারত।
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেলে সমিতির সভাপতি আব্দুল গনি মাঝি বলেন, ‘নাফ নদী আমাদের একমাত্র জীবন-জীবিকার ঠিকানা। সেখানে জাল ফেলতে পারছি না আমরা। নদী বন্ধের পাঁচ বছরে জেলেপল্লির হাজার হাজার মানুষ কী কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছে তা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।’
হ্নীলার জেলেপল্লির বগির দাশ বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ নদীতে মাছ আহরণ করে চলছে আমাদের সংসার। কিন্তু এ রকম সংকট কখনো দেখিনি। শুকনো খাবার খেয়ে দিন যাচ্ছে আমাদের। কিন্তু সেটা কত দিন। শরীরের ভারে এখন আর কষ্ট করেও খেতে পারি না।
শামপদ দাসের বসবাস শাহপরীর দ্বীপ বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকায়। তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ বছর সময় ধরে নাফ নদীতে মাছ শিকার করতে পারছি না। হাজার হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল তৈরি করেছিলাম। ওই টাকাও শোধ করতে পারছি না। নৌকা ও জাল অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে। রুজি-রোজগারের উপকরণ নষ্ট হলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী দৈনিক বাংলাকে জানান, রোহিঙ্গা আসাকে কেন্দ্র করে নাফ নদী বন্ধ হওয়ায় আমার এলাকার হাজার হাজার জেলে পরিবার সীমাহীন দুর্ভোগে দিন পার করছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের কারণে পাহাড়েও যেতে পারছে তারা না। তাই প্রয়োজনবোধে বিজিবির সহায়তায় নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে চেকিংয়ের মাধ্যমে নাফ নদীতে মাছ শিকারের অনুমতি দিয়ে নদীকেন্দ্রিক জীবিকা হারানো জেলেদের বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।
স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, এই জেলেদের যে সরকার খুব সহায়তা করতে পারছে সেটাও না। মাছ ধরা বন্ধ থাকার মৌসুমে তাদের বছরে ৩০ কেজি চাল দিতে পারি। এর বাইরে আমারও কিছু করার থাকে না।
নাফ নদীতে যেভাবে ইয়াবা
১৯৯৭ সালে নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান ঢোকে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়। সেই চালানটি আনেন ইয়াবা সাম্রাজ্যের অন্যতম গডফাদার হিসেবে পরিচিত সাইফুল করিম। তার তৈরি ইয়াবা নেটওয়ার্কটি নাটকীয়ভাবে বাড়তে থাকে। তিনি বনে যান ইয়াবা সাম্রাজ্যের অধিপতিদের দলে। যদিও ২০১৯ সালে কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে মারা যান সাইফুল।
সরকারি বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরুর পর থেকে তাদের সঙ্গে অবাধে আসতে শুরু করে ইয়াবা। পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অভিযান ছাড়াই চেকপোস্ট বসিয়ে ২০১৭ সালে কক্সবাজারে প্রায় ৮৬ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়, যার সবগুলো প্রবেশ করেছিল নাফ নদী দিয়ে। মাদকের দেশীয় গডফাদাররা বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন রোহিঙ্গাদের। এরপর সরকার মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নাফ নদীতে চলাচল বন্ধ কেরে দেয়।
তারপরও ইয়াবার চালান আসা কমেনি। উল্টো বছর বছর বেড়েছে। ইয়াবা উদ্ধারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিশেষ অভিযান শুরুর পরে ২০১৮ সালে উদ্ধার করা হয় ১ কোটি ২৮ লাখ ইয়াবা বড়ি। সর্বশেষ গত বছর উদ্ধার হয় আড়াই কোটির বেশি ইয়াবা। সব মিলিয়ে পাঁচ বছরে ৭ কোটি ৮৫ লাখের বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে। পাঁচ বছরে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে ১০ হাজার ৪৭৮টি। গ্রেপ্তার ১৪ হাজার ১৭৩ জন।
মাদকবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নোঙরের কক্সবাজার জেলার নির্বাহী পরিচালক দিদারুল আলম বলেন, মাদকের ব্যবসার শিকড়ে হাত না দেয়া এবং শীর্ষ কারবারিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদক চোরাচালান কমছে না, বরং বেড়েছে।
যে কারণে ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকেছেন কারবারিরা
কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও র্যাবে দেয়া তথ্য বলছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে বেশির ভাগ ইয়াবা আসে টেকনাফ হয়ে। টেকনাফে মাদক ঢোকার অন্যতম পথ হিসেবে পরিচিত নাফ নদীর তীরবর্তী হ্নীলা, দমদমিয়া, জাদিমোড়া এবং বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন টেকনাফ সদরের মহেশখালিয়া পাড়া, তুলাতলী, হাবিবছড়া ও নোয়াখালী পাড়া।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালিকাভু্ক্ত এক মাদক ব্যবসায়ী দৈনিক বাংলাকে বলেন, ইয়াবা ব্যবসায় কাঁচা টাকা। লাভও অনেক। শুরুর দিকে শুধু টাকার জন্যই এই কারবারে নেমেছিলাম। তারপর ফিরতে চাইলেও পরিনি এ কারবার থেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে গড়ে ২৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনে প্রতিটি ইয়াবা ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয় টেকনাফে। যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন দৈনিক বাংলাকে বলেন, ব্যাপক নজরদারির মধ্যেও টেকনাফ দিয়ে দেশের ভেতরে মাদক ঢুকছে। আমরা মাদকের চালান ঠেকাতে চেকপোস্ট বাড়াচ্ছি।
যেভাবে সমাধানের পথ দেখছে সরকার
নাফ নদী জেলেদের জন্য খুলে দেয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিকবার আবেদন করেছিলেন স্থানীয় জেলেরা। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি। সম্প্রতি বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির পঞ্চম সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাংলাদেশে মাদক আনা-নেয়ার রুট হিসেবে নাফ নদী ব্যবহৃত হওয়ায় এই নদীতে মাছ ধরার ট্রলারের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে অন্য দেশের নৌযান বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ আহরণ করলে সহজেই তাদের শনাক্ত করা যাবে।
সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রে যত নৌযান মাছ ধরে, সেগুলোকে শিগগিরই নিবন্ধনের আওতায় আনা কঠিন হবে। তাই নৌযানগুলোকে রং করে নম্বর দিয়ে দেয়া হবে, যাতে নৌযানগুলো চিহ্নিত করা যায়। এটা দ্রুত করতে বলা হয়েছে, না হলে মিয়ানমারের কিছু নৌকা আমাদের মধ্যে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমুদ্রে মাছ ধরার নৌযানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যাবে নৌযানের সার্বিক তথ্য। এমনকি কোনো নৌযান দুর্ঘটনায় পড়লে তার অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত উদ্ধার করা যাবে জেলেদের। প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার নৌযানে বসানো হবে এসব প্রযুক্তি। চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে এসব ডিভাইসের কার্যকারিতা।
মানবাধিকারকর্মী আইন সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিচালক নীনা গোস্বামী দৈনিক বাংলাকে বলেন, কয়েক পুরুষ ধরে এই পেশায় আছেন ওই সব জেলেরা। ওনারা এই কাজ ছাড়া আর কিছুই জানেন না। দীর্ঘদিন নদী বন্ধ করে রাখলে তাদের জন্যও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। এত দিনেও সেটা হয়নি, আর ইয়াবা আসাও বন্ধ করা যায়নি। সরকারের উচিত তাদের জন্য কিছু ভাবা। স্বাধীন দেশে তারা নিজেদের যেন পরাধীন মনে না করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক বুধবার দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমরা এর আগেও অনেকবার চেষ্টা করেছি আমাদের জেলেদের জন্য নাফ নদী সম্পূর্ণভাবে খুলে দিতে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। গত ৫ বছরে জেলা প্রশাসন থেকেও মনে হয় সেভাবে সুপারিশ করা হয়নি। তবে সম্প্রতি আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি আগামীতে যেকোনো মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এই বিষয়টি সমাধান করা হবে।
হারানো, চুরি ও ছিনতাইকৃত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২৫১টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।
আজ বৃহস্পতিবার উপ-পুলিশ কমিশনারের (তেজগাঁও বিভাগ) কার্যালয়ে তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইবনে মিজানের উপস্থিতিতে উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন প্রকৃত মালিকদের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, হারিয়ে যাওয়া, চুরি ও ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় মোবাইল ফোন মালিকরা বিভিন্ন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত একমাসে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ ৬৩টি, হাতিরঝিল থানা পুলিশ ৫৪টি, মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ৪০টি, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ ৩২টি, আদাবর থানা পুলিশ ৩২টি ও তেজগাঁও থানা পুলিশ ৩০টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে।
চট্টগ্রাম নগরের বারেক বিল্ডিং মোড়ে ডাকাতের আস্তানায় চালানো অভিযানে দুই পুলিশ সদস্য ছুরিকাঘাতে আহতের ঘটনায় ডাকাত চক্রের মূলহোতা আরিফ হোসেন ওরফে মেহেদী হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে নগরের ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সে একজন পেশাদার অপরাধী এবং অস্ত্রসহ এলাকায় আতঙ্ক ছড়াত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ (বৃহস্পতিবার) ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ডবলমুরিং থানার আওতাধীন বারেক বিল্ডিং মোড়ের একটি ফাঁকা প্লটে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। তখন পুলিশের একটি দল সেখানে উপস্থিত হলে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী ও ডাকাত দলের সদস্যরা তাদের ঘিরে ধরে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে চক্রের মূল হোতা আরিফ হোসেন ছুরি দিয়ে পুলিশকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই পুলিশ সদস্য। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ওসি কাজী রফিকুল ইসলাম জানান, ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর থেকেই আরিফ হোসেন আমাদের নজরে ছিল। সে একজন পেশাদার অপরাধী এবং অস্ত্রসহ এলাকায় আতঙ্ক ছড়াত। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ ভোরে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে যে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার হয়েছে, তা ব্যবহার করে সে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল বলে আমরা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি।
তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে অভিযান চলবে বলেও জানান ওসি।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মাহবুব আলম সুমন নামে মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের এক পিয়নের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সরকারি অনুদানের কথা বলে ও প্রধান উপদেষ্টার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তাদের কাছ থেকে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। গতকাল বুধবার দুপুরে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমানের কাছে পৃথক তিনটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগকারীরা হলেন- সনমান্দি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের নুরউদ্দিনের মেয়ে স্বর্ণা আক্তার, একই ইউনিয়নের গিরদান গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে তাসলিমা বেগম ও নাজিরপুর গ্রামের মুকবিল হোসেনের ছেলে জনি মিয়া।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারের কার্যালয়ের পিয়ন মাহবুব আলম সুমন সনমান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের কাছ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দরিদ্র অসহায়দের নগদ দুই লাখ করে টাকা অর্থ সহায়তা দেবেন বলে প্রচার করেন। সেই অর্থ পেতে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা করে জমা দিতে হবে বলে জানান। পিওনের কথা বিশ্বাস করে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক মানুষ তাকে ৬ হাজার টাকা করে ব্যাংকে দেওয়ার জন্য দিয়েছেন। তবে ওই টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নাম করে তিনি আবেদনকারীদের মোবাইল ফোনে সান্ত্বনা এসএমএস দিয়েছেন। সেখানে লেখা রয়েছে আপনার অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তবে বিষয়টি আবেদনকারীদের সন্দেহ হলে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসংস্থান ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে তাদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। তাছাড়া সেখানে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা জমা হয়নি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার অনুদানের কথা বলে নগদ টাকা ছাড়াও সরকারি ঘর পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৩২ জনের কাছ থেকে তিনি এক থেকে দেড় লাখ, গাভী দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২৬ জনের কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, খাদ্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার জন্যও টাকা নিয়েছেন।
ভুক্তভোগী স্বর্ণা আক্তার জানান, তারা গরিব মানুষ। মাহবুব আলম সুমন মৎস্য কর্মকর্তার পরিচয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুদান দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সনমান্দী ইউনিউনের আরেক ভুক্তভোগী তাছলিমা বেগম জানান, তাদের এলাকার অনেকের থেকেই বাড়ি ও গাভী দিবে বলে এক থেকে দেড় লাখ টাকা টাকা নিয়েছেন। অফিসে এসে জানতে পেরেছি তিনি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছেন।
অভিযুক্ত পিওন মাহবুব আলম সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাকে ক্ষুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো উত্তর আসেনি।
সোনারগাঁ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা রহমান বলেন, ‘আমার কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের প্রতিটি খাতেই অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কৃষি অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করছে কর্মকর্তা শাহিন রানা। কৃষকদের জন্য ধান, সয়াবিন, বাদাম ও ভুট্টা কাটার যন্ত্রপাতি বরাদ্দ এনে তা প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার পছন্দের লোক দিয়ে অন্যদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ট্রেনিং, প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর নামে কৃষকদের এনে নামমাত্র নাস্তা ও সামান্য নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে সাদা কাগজ স্বাক্ষর ও টিপসই নিয়ে বিদায় করা হয়। কৃষি অফিসটি এভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত করছেন এই কর্মকর্তা।
অভিযোগ উঠেছে, কৃষক প্রশিক্ষণ, মাঠ দিবস, প্রদর্শনী, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বরাদ্দসহ বিভিন্ন খাতের বরাদ্দের সিংহভাগ লুটপাট হচ্ছে। তারা কৃষকদের নিয়ে একটি ফসলের মাঠ দিবসের অনুষ্ঠান করে ব্যানার টাঙিয়ে ছবি তুলে রেখেই বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করে চলেছেন। এছাড়া প্রতিটি বরাদ্দের কলাম ফাঁকা রেখেই স্টক-রেজিস্টারে নেওয়া হয় কৃষকদের স্বাক্ষর ও টিপসই।
এসব অভিযোগের সত্যতার খোঁজে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রদর্শনীতে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষকদের জন্য বরাদ্দের চার ভাগের তিন ভাগই চলে যাচ্ছে কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানার পকেটে। সরকারি বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশও কৃষকরা পাচ্ছেন না। অফিসের যন্ত্রপাতি (মেশিন) থেকে শুরু করে প্রতিটি খাত থেকে কৃষি কর্মকর্তার বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাস্তা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না বলেও জানান অন্তত ১৫ জন কৃষক।
বেশির ভাগ কৃষকই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কি পরিমাণ বরাদ্দ দিচ্ছে এবং কৃষকরা পাচ্ছেন কতটুকু। তারা বলছেন, আমরা তো এত কিছু জানিও না, আর বুঝিও না। কৃষি অফিসে বরাদ্দের পরিমাণ জানতে চাইলে কিছুই জানায় না। উল্টো তার নাম কেটে দেওয়ার হুমকি ধমকিও দেন এ কর্মকর্তা। এতে কৃষকরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
কৃষি অফিস বলছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সরিষা, খেসারি, মসুর, চিনাবাদামসহ বিভিন্ন ফসলের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে এবং কৃষকদের সব বরাদ্দ পূর্ণভাবে বণ্টন করা হয়েছে। কিন্তু নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র বলছে, উন্নত মানের ধান, গম, পাট ও ভুট্টার বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণের নামে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ জন কৃষককে ৫ একরের একটি করে প্রদর্শনী প্লট দেওয়ার কথা। কোন গ্রুপে ১৫ হাজার আবার কোন গ্রুপে ১০ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয় না। হেক্টর-প্রতি কৃষকের জন্য যে পরিমাণ বীজ, সার, কীটনাশক,নগদ টাকাসহ যেসব উপকরণ দেওয়ার কথা তাও দেওয়া হয়েছে নামমাত্র।
এএসসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে রয়েছে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। প্রতিটি প্রশিক্ষণে অংশ নেন ৩০ জন কৃষক। ওই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থী কৃষকের জন্য খাবার বাবদ বরাদ্দ ৪০০ টাকা এবং ব্যাগ বাবদ ৬৫০ টাকা বরাদ্দ থাকলেও কৃষকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ১০০ টাকা দামের ১ প্যাকেট বিরিয়ানি আর ১০০ থেকে ১৫০ টাকার একটি ব্যাগ। তাদের অভিযোগ বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে অংশ গ্রহণকারী কৃষকদের মানসম্মত নাশতা ও খাবার দেওয়া হচ্ছে না।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে কৃষক ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দের তালিকা চাইলে তিনি আজ নয় কাল বলে তালবাহানা করে তালিকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ প্রতিবেদক কাগজপত্রের জন্য কৃষি অফিস অন্তত তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে এসব তথ্য নিতে পারেননি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, গত বছর কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা কাটার মেশিন ৮ টি,কম্বাইন হারভেস্টার ২ টি,রিপার ৪ টি,রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ওয়াকিং টাইপ ২ টি ও পাওয়ার স্প্রয়ার ১ টি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কমলনগর উপজেলায় ভুট্টা চাষ না হলেও এ কর্মকর্তা লুটপাটের উদ্দেশ্যে ধান কাটার মেশিন বাদ দিয়ে ভুট্টা কাটার মেশিনের চাহিদা পাঠান। এতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ৮ টি মেইজ শেলার (ভুট্টা মাড়ার মেশিন) বরাদ্দ দেন। মেশিনগুলো প্রকৃত কৃষকদের না দিয়ে তার অনুগত লোকজনের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে ফটোসেশান করে ওই মেশিন অন্যদের নিকট নামেমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেন। ৪ টি রিপার পেলেও ওইগুলো তার পছন্দের এক দালালের মাধ্যমে ভৈরব নিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে।
উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নের ফজুমিয়ারহাট এলাকার মোঃ আবুল কাশেমের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম পেয়েছেন একটি মেইজ শেলার মেশিন। ১৫ দিনের মাথায় তিনি ওই মেশিনটি অন্য এক কৃষকের নিকট বিক্রি করে দেন।
চরলরেন্স এলাকার হাছন আলীর নামে একটি মেইজ শেলার মেশিন বরাদ্দ দেখানো হয়। তার ফোন নম্বরে কল করা হলে নাম্বারটি ঢাকার এক বাসিন্দা দাবী করে বলেন, তার বাড়ী ঢাকায়, তিনি এসব বিষয়ে কিছুই জানেননা। তার ফোন নাম্বার কৃষি অফিসের তালিকায় কেন থাকবে বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
পুষ্টি বাগানের জন্য বিভিন্ন গ্রুপে ১৪৫ জন কৃষককে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতি কৃষককে ৫টি গাছের চারা,২৫০ টাকার বীজ, ও ৪৫০ টাকার সার দিয়ে বাকি টাকা সম্পূর্ণ তার পকেটে ঠুকান বলে অভিযোগ করেন ৫ জন কৃষক।
এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় বাগান পরিচর্যার জন্য শতাধিক কৃষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়। এতে প্রত্যেক কৃষকের জন্য ১০ হাজার ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার কথা থাকলেও কৃষি কর্মকর্তা সাদা-কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে দুইভাগ ৫ হাজার টাকা ধরিয়ে দেন। এ নিয়ে কৃষকদের সাথে কর্মকর্তার বাকবিতণ্ডাও হয়েছে বলে তিনজন কৃষক এ প্রতিবেদকে নিশ্চিত করেন।
এছাড়া এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় কৃষক ট্রেনিংয়ের নামে ২০ টাকার নাস্তা,১২০ টাকার দুপুরের খাওয়া ও নগদে ২৫০ টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই চলছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি।
এসএসিপি প্রকল্পে ট্রেনিং নেওয়া সাহেবের-হাট এলাকার কৃষক খুরশিদ আলম বলেন, একবার একটা ট্রেনিং করে তিনি ৮০০ টাকার ভাতা পেয়েছেন।
চরফলকন এলাকার কৃষক মো. ইউসুফ জানান, তার একটি পুষ্টি বাগান রয়েছে। কখনো ট্রেনিং করেননি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটা আমের চারা, লেবুর চারা ও একটি সাইনবোর্ড ছাড়া তিনি কিছুই পাননি।
চরলরেন্স এলাকার কৃষক মোঃ ইউসুফ জানান, তার একটি টমেটো বাগান রয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে একবার ২ হাজার ৫০০, আবার ৩ হাজার টাকা ও কিছু বীজ পেয়েছেন তিনি।
বরাদ্দের বিষয়ে অফিসের এক সহকারী বলেন, ‘কৃষক ও কৃষি যন্ত্রপাতি বরাদ্দের কোনো কপি আমাদের দেওয়া হয় না। অফিস থেকে মৌখিকভাবে জানানো হয়, আমরা ডায়েরিতে নোট করে নিই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কমলনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিন রানা বলেন, ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। তবে তার আমলে কৃষকদের বরাদ্দ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের পছন্দের কেউ থাকলে নাম দিতে পারেন। আমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপনাদের দেওয়া নামগুলোকে বরাদ্দের আওতায় নিয়ে আসব।’
ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে গতকাল (বুধবার) কয়েকঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ার পরেও দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। একিউআই সূচক অনুযায়ী ঢাকার বাতাস আজ ‘অস্বাস্থ্যকর’।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা ২৩ মিনিটে দূষিত বাতাসের শহরের তালিকায় বাংলাদেশের একিউআই স্কোর ১৮৩।
নেপালের কাঠমান্ডু, সেনেগালের ডাকার ও ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় শহর যথাক্রমে ১৭০, ১৬৭ ও ১৬০ একিউআই স্কোর নিয়ে তালিকার দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান দখল করেছে। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, যার স্কোর ১৪৯।
যখন দূষণের একিউআই মান ৫০ থেকে ১০০ এর মধ্যে থাকে তখন বাতাসের গুণমানকে 'মাঝারি' বলে বিবেচনা করা হয়।
একিউআই সূচক ১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে হলে 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ সময় সাধারণত সংবেদনশীল ব্যক্তিদের দীর্ঘ সময় ধরে বাইরে পরিশ্রম না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে হলে ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে হলে ’খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলে বিবেচনা করা হয়।
এছাড়া ৩০১ এর বেশি হলে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশে একিউআই সূচক পাঁচটি দূষণের ওপর নির্ভরশীল। সেগুলো হলো- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন।
ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ুদূষণজনিত সমস্যায় জর্জরিত। শহরটির বায়ুর গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে এবং বর্ষাকালে উন্নত হয়।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) মতে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বায়ুদূষণের কারণে প্রধানত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মৃত্যুর হার বাড়ে।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় সালিসে না যাওয়ায় বাবা-ছেলেকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আজ সোমবার (১৪ এপ্রিল) নিহতের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ৬০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে তাদেরকে ময়মনসিংহ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার নাওগাঁও ইউনিয়নের নাওগাঁও দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফুর (৫০) ও তাঁর ছেলে মেহেদী হাসান (১৫) কে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে আজ সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। জানাযা শেষে রাতেই পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি বাবা-ছেলেকে দাফন করা হয়।
আবদুল গফুরের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে রোববার রাতেই ফুলবাড়িয়া থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় ২২ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৬০ জনকে আসামি করা হয় বলে জানান থানার ওসি মো. রোকনুজ্জামান। হত্যার ঘটনায় তাৎক্ষনিক পলাশীহাটা গ্রামের মো. রিপন (৩২), নাওগাঁও গ্রামের মৃত সাবান আলীর ছেলে মো. মোজাম্মেল হক (৬৫) ও এক কিশোর (১৩) আটক করে পুলিশ।
ওসি মো. রোকনুজ্জামান বলেন, সালিশে না যাওয়াকে কেন্দ্র করে বাড়িতে গিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বাবা-ছেলেকে হত্যা করা হয়, মামলার এজাহারে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। তিনজন আসামিকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নিহতের স্ত্রী শিল্পী আক্তার বলেন, তাঁর স্বামীর চাচাতো ভাই আবদুল মোতালেবের কাছে সাড়ে ৭ কাঠা জমি পাঁচ বছর আগে বন্ধক দিয়েছিলেন। দুই লাখ টাকা জমি বন্ধক দিলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং টাকার প্রয়োজন হওয়ায় আরও পাঁচ বছরের জন্য এক লাখ টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু টাকা ও জমি কিছুই দিতে চাইছিলেন না আবদুল মোতালেব। পরে তাঁর স্বামী অন্য জায়গায় জমি বন্ধক দিতে চাইলে তাতেও বাধা দেন। ওই অবস্থায় স্থানীয়ভাবে সালিসে বসে তিন মাস আগে এক লাখ টাকা দিলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল মোতালেব।
তিনি আরও বলেন, মেহেদী আমার স্বামীর প্রথম পক্ষের ছেলে। সে একটু বখাটেপনা করত। চার-পাঁচ দিন আগে আবদুল মোতালেবের ফিশারি থেকে দুটি তেলাপিয়া মাছ ধরায় ক্ষুব্ধ হয়ে বকাঝকা করে এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়। এর মধ্যে প্রতিবশি বিদেশফেরত একজনের কিছু কাগজ ও মুঠোফোন চুরি হওয়ায় এর অপবাদ দেয় মেহেদীকে। এ নিয়ে সালিস বসালে আমার স্বামী ছেলেকে নিয়ে যায়নি। সে কারণে বাড়িতে এসে হামলা করে তাদের হত্যা করে।
মাদারীপুরের রাজৈরে বাজি ফাটানো নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দুই গ্রামের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। দুই দিনব্যাপী এ সংঘর্ষে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে।
পরে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা যৌথভাবে তৎপরতা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টাব্যাপী রাজৈর উপজেলা সদরের বেপারীপাড়া মোড়ে বদরপাশা ও পশ্চিম রাজৈর গ্রামের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ১০-১২টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট তাণ্ডব চালানো হয়।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল হক জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে। ভাঙচুরের পর বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেছেন আয়োজকরা।
রোববার রাতের দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে অনুষ্ঠানস্থলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলাচেষ্টাকারীরা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে দাবি করেছে। হামলাচেষ্টার অভিযোগে ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
অনেক বছর ধরে ‘সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদের’ ব্যানারে চট্টগ্রামের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। এবার অনুষ্ঠানটি ৪৭ বছরে পা রাখতে চলেছে।
পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী টিটু বলেন, রাত পৌনে ৮টার দিকে আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ জনের যুবক ‘স্বৈরাচারের দোসরেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান নিয়ে মঞ্চের দিকে আসেন।
একপর্যায়ে তারা ডেকারেশনের কাপড় ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন এবং মঞ্চের পেছনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলেন।
হামলার পর পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। তবে সোমবার (১৪ই এপ্রিল) অনুষ্ঠান করার মতো অবস্থা আর ছিল না বলে জানান তিনি।
টিটু বলেন, ‘ডিসি অফিসে মিটিংয়ের সময় উপস্থিতদের মধ্যে কয়েকজন হামলার সময়ও ছিলো বলে শুনেছি আমি। মঞ্চের পিছনের ডিজাইন তারাই ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান আমরা বাতিল করছি। কারণ রিস্ক নেওয়া যাবে না।’
নববর্ষের দিনও এমন হামলার ঘটনা ঘটতে পারে— এমন আশঙ্কা থেকেই এবারের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, নববর্ষের অনুষ্ঠানটি ফ্যাসিস্টের দোসররা আয়োজন করেছে বলে হামলাকারীরা দাবী করেছেন।
হামলাকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে উল্লেখ করে আলমগীর হোসেন বলেন, হামলায় কেউ আহত হয়নি, কেবল ব্যানার ছিঁড়েছে। তবে মূল মঞ্চের কিছু হয়নি।
এ ঘটনায় আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পহেলা বৈশাখের সকালে ‘পান্তা-ইলিশ’ ভোজন বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্য। তবে এখন ‘পান্তা’ভাত থাকলেও নেই ইলিশ নিয়ে মাতামাতি। গত কয়েক বছর ধরে বাঙালির বৈশাখী উৎসবে ইলিশের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ‘ডিম ভাজি আর আলু ভর্তা’।
‘ইলিশের বাড়ি বরিশালে’ এবারও ‘পান্তা, ডিমভাজা আর মরিচ ভর্তা’ দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশালবাসী। কেননা একদিকে জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা, তার ওপর বাজারে ইলিশের তীব্র আকাল- যা আছে তা চড়া মূল্যে কেনা দুঃসাধ্য।
বরিশাল নগরীর অন্যতম পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র পোর্ট রোড মৎস্য আড়ত। যেটি ইলিশের মোকাম হিসেবে পরিচিত। সরেজমিনে শনিবার সকালে ইলিশ মোকামে দেখা যায়, গত বছরের মতোই বৈশাখ উদযাপনে ইলিশ নিয়ে মাতামাতি নেই। মোকাম থেকে ইলিশ সরবরাহ হচ্ছে না অন্য কোথাও। বিগত বছরগুলোতে যেখানে দাম কোনো বিষয় ছিল না, সেখানে এ বছর আগাম কোনো অর্ডার পাননি আড়তদাররা। সকাল ১০টা বাজার আগেই ইলিশ শূন্য হয়ে যায় পাইকারি বাজার। স্বল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে বসে আছেন খুচরা বিক্রেতারা। তবে দুপুরের পর পরই একেবারে ইলিশ শূন্য হয়ে পড়ে পাইকারি মোকাম।
তবে নগরীর চৌমাথা, বড় বাজার এবং আদালতপাড়া এলাকার খুচরা বাজারে দেখা মেলে ইলিশের। তাও দামে চড়া। খুচরা মৎস্য বিক্রেতারা মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম হাঁকিয়েছেন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। আর এক কেজি সাইজের ইলিশের দাম তিন থেকে চার হাজারের ওপরে। ফলে নিম্ন আয়ের ক্রেতারা দাম শুনে ঘুরেফিরে দেশি মাছের দিকে ঝুঁকছেন।
ক্রেতা নগরীর সদর রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান বলেন, আগে পরিবার নিয়ে ‘পান্তা-ইলিশ’ দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছি। গত বছরও ইলিশের পরিবর্তে ডিম ভাজা দিয়ে আর মরিচভর্তা দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপন করেছি। এবার তো ইলিশই নাই। তাই এবারও পান্তা আর ডিমভাজা দিয়েই বৈশাখ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ইলিশের বাড়ি নাকি বরিশাল। অথচ বরিশালেই ইলিশ নাই। তার ওপর এখন জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলছে। তাই বাজারও ইলিশ শূন্য। ইলিশের দাম এতটাই চড়া যে, এখন স্বাভাবিক দিনগুলোতেও কেনা যাচ্ছে না। তার ওপর বৈশাখ ঘিরে এর দাম দিন দিন বাড়ছে। এ কারণে সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে এবার ‘পান্তা-ডিমভাজি এবং শুকনা মরিচপোড়া’ দিয়ে বৈশাখ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছি।
মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এবার প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পুনর্বিন্যাস করেছে সরকার। এতে সময়সীমা কমিয়ে ৫৮ দিন নির্ধারণ করার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞার সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রায় একই সময়ে করা হয়েছে। গত ১৭ মার্চে মৎস্য অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সরকার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে প্রতি বছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা থাকবে বঙ্গোপসাগরের ভারতের জলসীমায়ও। এ ক্ষেত্রে ভারতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার দুদিন আগে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে। এই হিসাবে পহেলা বৈশাখের পরদিন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে।
এদিকে, পোর্ট রোড আড়তের পাইকাররা জানিয়েছেন, বর্তমানে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা, সে হিসাবে কেজি দাঁড়ায় তিন হাজার টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশের মণ দেড় লাখ টাকা। যার কেজি দাঁড়ায় দুই হাজার ৬২৫ টাকা। ৬০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৯৫ হাজার। যার কেজি দাঁড়াচ্ছে দুই হাজার ৩৭৫ টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৬৫ হাজার, যার কেজি দাঁড়ায় এক হাজার ৬২৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি ইলিশ ৫শ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি দাম হাঁকানো হচ্ছে।
পোর্ট রোড মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি জহির সিকদার বলেন, বিগত বছরগুলোতে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে এপ্রিল মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মোকাম থেকে ইলিশ যেত রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। এজন্য বড় সাইজের ইলিশের চাহিদা ছিল সবচেয়ে বেশি। দামের কোনো সমস্যা ছিল না। ওই সময় সাগরে নিষেধাজ্ঞা চললেও একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জেলেদের দিয়ে ইলিশ শিকার করাত। এভাবে চলে আসছিল বছরের পর বছর। আগের বছরগুলোতে ১ এপ্রিল থেকে ১২ ও ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫০ মণের বেশি ইলিশ যেত দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু গত বছর থেকে দাম বাড়ায় চাহিদা কমেছে। এবার অর্ডার নেই বললেই চলে।
পোর্ট রোডের মেসার্স আক্তার মৎস্য আড়তের স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বর্তমানে জাটকা শিকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ বাজারে নেই বললেই চলে। তাই দামে আগুন। আগের বছরগুলোতে এই সময় ৩০০-৪০০ মণ ইলিশ উঠত এই মোকামে। অথচ ঈদের পর থেকে পোর্ট রোড মোকামে ৫০ মণ ইলিশও উঠেনি। তাই এবার বৈশাখে ইলিশ নিয়ে তেমন মাতামাতিও নেই।
পোর্ট রোডের আড়তদার হেমায়েত উদ্দিন ও মো. সাজু মিয়া জানিয়েছেন, জাটকা বড় হলে ইলিশে রূপ নেয়। কিন্তু সেই জাটকা শিকার করছে একশ্রেণির অসাধু জেলে। এ কারণে প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন কমছে। জাটকা শিকার বন্ধ করতে পারলে নদী ও সাগরে ইলিশ বেড়ে যাবে। তখন দামও কমে যাবে। সাগরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকির প্রয়োজন নেই। অবৈধ জাল উৎপাদন হচ্ছে যেখানে-সেখানে অভিযান চালিয়ে জাল উৎপাদন বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, আগের বছরগুলোর চেয়ে ইলিশের উৎপাদন কমেনি বরং বেড়েছে। এখন জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ চলছে। কঠোরভাবে অভিযান চালানো হচ্ছে। জেলেদের সাগরে নামতে দেখলেই জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। এ জন্য মোকামে জাটকা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এবার প্রথমবারের মতো ভারতের সঙ্গে মিলিয়ে সাগরে জাটকা ধরার নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ ইলিশ শিকার করতে পারবে না। অভয়াশ্রম থেকে শুরু করে যেসব এলাকায় ইলিশের প্রজনন বেশি সেসব এলাকায় রাতদিন পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে জেলেদের সচেতন করার কাজও চলছে। আশা করছি আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। আর উৎপাদন বাড়লে দামও কমবে বলে আশাবাদী এই কর্মকর্তা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়াসহ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ সাতক্ষীরায় খাসজমি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে প্রশাসনকে নিয়ে জমি উদ্ধার করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রউফের কাছ থেকে কিছু খাসজমি উদ্ধার করেন এবং সাতক্ষীরার বাকালে সরকারি জায়গার উপর নির্মাণ করা ট্রাক-মালিক সমিতির ভবন গত বৃহস্পতিবার গুঁড়িয়ে দেয়। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফসহ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা সদরের এসিল্যান্ড, পুলিশ বিভাগসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের বাকবিতণ্ড ঘটে। উপস্থিত সবার সামনে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বাটপার বলে চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে যেটা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এবং সমালোচনার ঝড় ওঠে। গত ৬ এপ্রিল বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সভাপতি আব্দুস সবুরের কাছে অবৈধভাবে ভোগদখলে থাকা ১৬ বিঘা জমি উদ্ধার করেন। নিয়মিত এ জমি উদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত আছে, ঠিক সেই সময় মানুষ জেলা প্রশাসককে বিভিন্নভাবে কথা বলছে। ডিসি ও আব্দুর রউফ চেয়ারম্যান এবং তার ভাই আব্দুস সবুর প্রসঙ্গে কিছু না কিছু কথা হচ্ছে, যাহা হটকেক বা টক অব দ্য টাউন। কেউ কেউ আবার ফেসবুক থেকে বিভিন্ন বাক্য ভঙ্গিতে আলোচনা-সমালোচনাসহ জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে। আবার কেউ কেউ জেলা প্রশাসককে সাধুবাদ জানিয়ে ধন্যবাদ দিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাপ্তাহিক মুক্তস্বাধীন পত্রিকার সম্পাদক আবুল কালামসহ অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন পর সাতক্ষীরার মানুষ খুশি ইত্যাদি। আবার অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন জেলা প্রশাসক আপনি যাকে বাটপার বলেছেন তিনি পাঁচবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলীপুর ইউনিয়ন থেকে এবং তিনি বিএনপি করার কারণে তার একমাত্র সন্তান সেলিম নিখোঁজ হয়েছে ইত্যাদি।
সাতক্ষীরা জেলা যুবদলের সাবেক সমন্বয়ক ও পৌর সাবেক কাউন্সিলর আইনুল ইসলাম নান্টা, রেজাউল ইসলামসহ বিভিন্ন ব্যক্তি জেলা প্রশাসককে ভর্ৎসনা করেন। সেসব লেখার মধ্যে কয়েকটি লেখা হুবহু দেওয়া হয়েছে; যেমন- পীরে কামেল তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদের ঘুষ বাণিজ্য!।
পীরের খবর:পীরে কামেল শেখ মুজিবের কবর জিয়ারতকারী তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদের ঘুষ-বাণিজ্যে হতবাক জেলাবাসী। তিনি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তাবলিগের আওয়ামীপন্থি সাদ গ্রুপের লোক হিসেবে বেশ পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা মিটিংসহ সব জায়গায় নিজেকে সৎ পীরে কামেল হিসেবে দাবিদার আওয়ামী মোস্তাক আহমেদ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের কাছে কোটি টাকা ঘুষ দাবি করেন। ইতোমধ্যে রেজাউল ইসলাম সেই ঘুষের টাকা ২ দফায় ৩০ লাখ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপি ও জেলা জামায়াত ইসলামের নেতারাও অবগত আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
দাবিকৃত ঘুষের টাকা এলআর ফান্ডের নাম করে ১ম দফায় ২০ লাখ ও ২য় দফায় ১০ লাখসহ মোট ৩০ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের এডিএম রিপন বিশ্বাসের কাছে দিয়েছেন রেজাউল ইসলাম। এ বিষয়ে ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়।
এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকার ২ শতাংশ পীরে কামেল তথাকথিত আওয়ামী মোস্তাক আহমেদকে তার নাজিরের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক দিতে হয় বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে শহরের খড়িবিলার ৫৮০ বিঘা জমি একটি গোষ্ঠী বাৎসরিক ১৫ হাজার টাকা করে হারি নিয়ে ব্যবসা করে আসছে মোস্তাক আহমেদের যোগসাজশে। যার বিঘাপ্রতি ৬ হাজার মোস্তাক আহমেদের পকেটে চলে যায়। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের ভাতের হোটেল মালিক ডিবি হারুন স্টাইলে ট্রাক-মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের নাজিরের রুমে আটকে রেখে মিথ্যা জবানবন্দি নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষ জেলার গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এ বিষয়ে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আরও দেখা যায় জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বঙ্গবন্ধুর মাজারে গিয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে ফটোসেশন করেছেন। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতার সঙ্গে মাজারে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন, যা নিয়ে সাতক্ষীরা বিভিন্ন প্রান্তে সমালোচনার খোরাক হয়েছে। টাকা নেওয়া-সংক্রান্ত বিষয়ে এডিএম রিপন বিশ্বাস গণমাধ্যম কর্মীকে বলেন, যিনি দিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করেন।
সাতক্ষীরা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রিজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি মোবাইলে কোনো কথা বলব না, এ কথা বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘আমি সাতক্ষীরায় সাত মাস আসছি আমি কোনো দিন কারও সঙ্গেই খারাপ ব্যবহার করিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে বাজে কথা বলছে সব মিথ্যা। সাতক্ষীরার সব খাসজমি উদ্ধার করা হবে এতে করে যাদের স্বার্থে আঘাত লাগবে তাতে আমার কি?’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নেইনি এবং টাকা কে কার কাছে দিয়েছে তাও আমি জানি না।’
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রাক্ষসী ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনে ২০টি বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, দোকানপাটসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে সোনাপুর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এসব চিত্র। এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়সহ নদের তীরবর্তী এলাকার ২০০টি ঘরবাড়ি।
এ ছাড়া অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের কবলে পড়েছে সোনাপুর, চরসোনাপুর, ঘুঘুমারী, চরগেন্দার আলগা, গুচ্ছগ্রাম, সুখেরবাতি, খেরুয়ারচর, দক্ষিণ নামাজের চরসহ ১০টি গ্রাম।
ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের ফলে গ্রামের পর গ্রামে ঘরবাড়ি ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীতে। এতে করে হাজারও মানুষ তাদের বাব-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে পরিণত হচ্ছে ভূমিহীনে। এসব পরিবার সবকিছু হারিয়ে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে বিভিন্ন রাস্তার দুই পাশ ও আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
চরসোনাপুর গ্রামের লিচু মিয়া, আবু সাইদ ও ফারুক মিয়া বলেন, ‘আমাগো আবাদি জমি নেই, যে টুকু ছিল সেটাও নদীতে ভাঙ্গয়া গেছে, ঘাটপাড়ে দোকান করে খাইছি তাও নদীতে ভাঙ্গিতেছে। আমরা রিলিপ চাই না, নিজে জমিতে ঘর তুইলা শান্তিকে পোলাপান নিয়া থাকবার চাই।’
সোনাপুর গ্রামের সুরুতজামান, মামদ আলী, রাজ্জাক, জহির, বুদ্দি মিয়া ও ময়াজ বলেন, ‘এক বছরে আমরা চারবার বাড়ি টান দিছি, নিজে বাড়ি নেওয়ার জমি নাই, অন্যের জমি বন্ধক নেওয়ার ক্ষমতাও আমাগরে নাই। আমরা এখন নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাগো একটাই দাবি নদীটা যেন এই সরকার তাড়াতাড়ি বাঁইনধা দেয়।’
চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কে এম ফজলুল হক মণ্ডল বলেন, চরশৌলমারী ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তায়ে ভাঙনে ২০টি বাড়ি, কাঁচা রাস্তা, দোকানপাটসহ ফসলীয় জমি নদে বিলীন হয়েছে। দ্রুত এ ভাঙনরোধে ব্যবস্থা না নিলে মুক্তিযোদ্ধের প্রশিক্ষণের কেন্দ্র সোনাপুর হাইস্কুল, ফসলি জমিসহ নদের তীরবর্তী ২০০টি বসতবাড়ি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উজ্জ্বল কুমার হালদার বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমরা আরও খোঁজখবর নিচ্ছি ভাঙন-কবলিত সব পরিবারকে আমার উপজেলা পরিষদ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।’
কুড়িগ্রাম জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করেও এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবে মাতোয়ারা পার্বত্য চট্টগ্রাম। আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসল বিজুর ফুল।
শনিবার সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আয়োজন। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৯ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর জলকেলি’র মাধ্যমে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।
২৯ চৈত্র ১২ এপ্রিল শনিবার সকালে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৈসাবি’র মূল আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে দিনটি উদযাপন করে থাকে। তবে এটি ‘ফুল বিজু’ নামে বেশি পরিচিত। রাঙামাটির শহরের গর্জনতলী মধ্যম দ্বীপে কাপ্তাই হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার।
পূর্ণময় এই দিনে দেশ ও দশের মঙ্গল কামনা করছেন পাহাড়িরা। সবেমাত্র পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে সূর্য। তার লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে হ্রদের বুকে। সেই ভোরে নানা বয়সি মানুষ ফুল নিয়ে জড়ো হতে থাকে ঘাটে। ডালায় থাকা রক্তজবা, রঙ্গণ গাদাসহ নাম না জানা বুনো ফুল কলা পাতায় সাজাতে ব্যস্ত সবাই। উদ্দেশ্য গঙ্গা দেবীর আরাধনার হ্রদের জলে ফুল নিবেদন। এ উৎসবে নারীরা পরিধান করেছে বাহারি রঙের পিনোন হাদি আর ছেলেরা ধুতি, পাঞ্জাবি/ফতুয়া। দেখে মনে হবে হ্রদের পাড়ে বসেছে রঙের মেলা। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এই সামাজিক উৎসবে ব্যস্ত প্রতিটি পল্লী। বাংলাবর্ষ বিদায় ও বরণ উপলক্ষে ত্রিপুরারা বৈসুক, মারমারা সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু ও অহমিয়ারা বিহু- এভাবে ভিন্ন ভিন্ন নামে উদযাপন করে। যা বৈসাবি নামে বেশি পরিচিত। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে পুরানো বছরের সব গ্লানি, হিংসা, বিভেদ নদীর জলে ভেসে যাবে। আর নতুন বছর বয়ে আনবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি- এমন প্রত্যাশায় রাঙামাটি শহরের গর্জনতলী, রাজবিহার ঘাট, কেরানী পাহাড়ঘাট সহ, বিভিন্ন এলাকায় ভাসানো হয় বিজুর ফুল।
গর্জনতলী ঘাটে ফুল ভাসাতে আসা অমিয় ত্রিপুরা বলেন, ‘সকালে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুোনো বছরের দুঃখ বেদনা গ্লানি পানিতে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন সুন্দর হয়।’
রাজ বনবিহার ঘাটে ফুল ভাসিয়ে শ্রাবণী চাকমা বলেন, এটি পার্বত্য অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। হ্রদে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি, ‘আগামী বছরটা যেন আরও সুখশান্তিতে কাটাতে পারি। পার্বত্য এলাকাসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক’।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিনে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি। আমরা যাতে সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে সকল জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করতে পারি।’
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খোন্দকার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস। সবার মাঝে সম্প্রীতি অটুট থাকুক। আর আগামী দিনগুলোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলাদেশ, এটাই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা। এসময় অন্যান্যর মধ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ,ত্রিপুড়ার কল্যান ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা প্রীতি কান্তি ত্রিপুড়া, ত্রিপুরা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি শংকর ত্রিপুরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজ বনবিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের জলে হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল বাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙামাটির সাবেক সাংসদ উষাতন তালুকদার। তিনি বলেছেন, পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ এদিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ফুল ভাসানোটা এখন সম্প্রীতির উৎসবে রুপ নিয়েছে। সবাই একসঙ্গে একত্রিত হয়ে ফুল নিবেদন করে প্রার্থনা করে। আজকের দিনে আমাদের চাওয়া হলো, আগামী দিনেগুলোতে যাতে সবাই মিলেমিশে সুখ-শান্তিতে বসবাস করতে পারি।
এসময় অন্যান্যর মধ্যে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, চাংক্রান-২০২৫ উদযাপন কমিটির সভাপতি সাবেক উপ সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈসাবীর আমেজ পুরো জেলা জুড়ে সাজ সাজ রব।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ১১টি লোহার দানবাক্স থেকে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এবার ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ১১টি লোহার দানবাক্স খোলা হয়।
এ সময় মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদরাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাসহ প্রায় ৪০০ জনের একটি দল টাকা গণনার কাজে অংশ নিয়েছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান ও পুলিশ সুপার হাছান চৌধুরীর উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। এছাড়াও বিপুলসংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসার সদস্য উপস্থিত আছেন।
টাকা গণনায় তদারকি করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মোহাম্মদ আলী হারেছিসহ মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা।
এর আগে সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বরে মসজিদের দশটি দানবাক্স ও একটি ট্যাংক খোলা হয়েছিল, তখন ৩ মাস ১৪ দিনে ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়াও দানবাক্সে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়।
মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।
মসজিদটিতে এবার আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এটি নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। সেখানে ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান জানান, এবার ৪ মাস ১২ দিন পর শনিবার সকালে পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়েছে। এতে ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। পরে মসজিদের দোতালায় এনে টাকা গণনার কাজ শুরু হয়েছে।
‘তিন মাস পর পর দানবাক্সগুলো খোলা হলেও এবার ৪ মাস ১২ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে। আমাদের পাগলা মসজিদের একাউন্টে জমা আছে ৮০ কোটি ৭৫ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৬ টাকা জমা আছে,’ বলেন তিনি।