মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

ঢাবির উপাচার্য হিসেবে যোগদান করলেন ড. মাকসুদ কামাল

ঢাবি’র ২৯তম উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
আপডেটেড
৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১৬:১৪
প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশিত
প্রতিনিধি, ঢাবি
প্রকাশিত : ৪ নভেম্বর, ২০২৩ ১৫:৫৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।

আজ শনিবার সকালে উপাচার্য কার্যালয়ে নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ঢাবি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অফিস প্রধানগণ, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অন্যান্যরা।

মাকসুদ কামাল শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছেন তাদের সবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এদেশের সকল অর্জনের পিছনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য অবদান রয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করে উপাচার্য বলেন, গুণগত শিক্ষা, মৌলিক গবেষণা, সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে যাবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য, ভাবমূর্তি, সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য উপাচার্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।’

মাকসুদ কামালের জীবনবৃত্তান্ত

অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ২০২০ সালের জুন মাস থেকে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (একাডেমিক)-এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক। এর পূর্বে ভূতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. মাকসুদ কামাল বিশ্বখ্যাত University College London, UK to Visiting Professor হিসেবে এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৭ পর্যন্ত নিয়োগ লাভ করেছেন।

তিনি ২০০০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং একই বিভাগে ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে (স্পারসো) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে প্রায় ছয় বছর কর্মরত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Bose Center for Advanced Study and Research in Natural Sciences -এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে দুই বছর গবেষণা কাজ করেছেন। এছাড়া, তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে যথাক্রমে ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঠদান করেছেন।

মাকসুদ কামাল ১৯৮২ সালে এস এস সি, ১৯৮৪ সালে এইচ এস সি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৯৮৮ সালে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম ডিভিশন / বিভাগ প্রাপ্ত হয়েছেন। ১৯৯৮ সালে তিনি International Institute for Gep Information Sciences and Earth Observation, University of Twente, The Netherlands থেকে Applied Geomorphology and Engineering Geology বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৪ সালে তিনি Tokyo Institute of Technology (IIT), Japan থেকে Earthquake Engineering বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তাঁর ৬৫টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বুক চ্যাপ্টারসহ তাঁর ১০০টির উপরে গবেষণাকর্ম রয়েছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে তিনি Reviewer হিসেবে অবদান রেখে আসছেন।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল পর্যায়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (২০১২-২০১৭) ছিলেন যা বর্তমানে ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগ নামে পরিচিত। প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পাওয়ার পূর্বে ২০১২ সাল থেকে আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিনের (চারবার নির্বাচিত)


কোটা বাতিলে সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম

যানজটে চরম জনদুর্ভোগ
ফাইল ছবি
আপডেটেড ৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’-এর ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার কোটা বাতিলে সরকারকে তিন দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে।

এদিকে আজ মঙ্গলবার অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগ কর্মসূচি ঘোষণা করে দীর্ঘ চার ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় ছেড়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ফলে আজ কোন মাঠের কর্মসূচি থাকছে না।

রাত সাড়ে আটটায় কর্মসূচি ঘোষণা করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখন অর্ধ বেলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু আমরা সারা দেশে সর্বাত্মক ব্লকেড কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। তাই আগামীকাল (মঙ্গলবার) ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সাথে আমরা সমন্বয় করবো এবং গণসংযোগ করব এরপর বুধবার কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে। আর সেই কর্মসূচি কী সেটা মঙ্গলবার বিকেলে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের চলমান ছাত্র ধর্মঘট এবং ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।’ এ সময় শিক্ষার্থীরা মেট্রোরেল ব্লকের দাবি জানালে নাহিদ ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য বলেন, ‘আমরা ব্লকেড কর্মসূচি থেকে সরে আসছি না। সর্বাত্মক ব্লকেডে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনারা সারাদেশ ব্লকেডের প্রস্তুতি নিন।’

কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধের কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল বিকেল থেকে অচল হয়ে পড়ে রাজধানীর বড় অংশ। তারা শাহবাগ মোড় ছাড়াও চানখারপুল, সায়েন্সল্যাব, পল্টন মোড়, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মৎস ভবন, ফার্মগেট, আগারগাঁও, রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করেন। এতে পুরো রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে, সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।এতে যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। নারী এবং অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের পড়তে হয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করেন। আর এই মিছির শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর এই মিছিলের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ মিন্টো রোড, মৎসভবন বাংলামোটর এবং কাওরান বাজার মোড় অবরোধ করেন।

এ ছাড়া একই সময়ে ইডেন মহিলা কলেজ আর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েনসল্যাব মোড়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল ও শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা চাঁনখারপুল মোড় ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সংলগ্ন র‌্যাম্প অবরোধ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন পল্টন মোড়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দী শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান মোড় অবরোধ করেন।

আর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

এ ছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট মোড় অবরোধ করে এবং আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করে আসছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা।

এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা খুলনা মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শুরুতে তাদের দাবি চারটা থাকলেও গতকাল থেকে তারা এক দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই এক দাবি হলো ‘সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে।’

গতকাল বেলা চারটা ২৫ মিনিটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে বাংলা মটরের দিকে যেতে বাধা দিলে পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং বাংলামোটরের দিকে দৌড়ে যান সেসব রাস্তা অবরোধ করতে।

এর আগে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন।

এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের মতো জনদুর্ভোগ ডেকে আনে এমন কর্মসূচি পরিহার করা উচিত।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের পেনশন ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে গতকাল কথা বলেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে পরিপত্র জারি করে সব কোটা বিলুপ্ত করে সরকার। পরে কোটা পুনর্বহালের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করে সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। উচ্চ আদালতের রায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা মনে করি উচ্চ আদালত বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে রায় দেবেন।’

এ ছাড়া, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন সেটা রাজপথে নেয়া উচিত নয় বলে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আদালত রায় দিয়েছে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গেছে। তাই এই মুহূর্তে এই ধরনের আন্দোলনটা আমি মনে করি তাদের না করাই উচিত হবে। আন্দোলনকারীদের বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না আনতে। কারণ, এটা আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের আমি একটু ধৈর্য ধরার অনুরোধ করব। আমি জানি না আন্দোলনটা তারা কেন করছেন? আমি মনে করি আন্দোলনটা না করাই ভালো।’ এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। কাল বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলেও আমরা সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।

অবরোধের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প হিসেবে অনেকে মেট্রোরেল ব্যবহার করেন। শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মেট্রো স্টেশনগুলোতে অনেক বেশি মানুষের ভিড়। স্টেশনেও টিকিটের জন্য ছিল দীর্ঘ লাইন। টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মেও ছিল মানুষের ভিড়। সাধারণত ট্রেন এলে একবারেই স্টেশনে থাকা সব যাত্রী উঠতে পারলেও আজ বিকেলে যাত্রীদের লাইনে দাঁড়িয়ে দু–তিনটি ট্রেন যাওয়ার পর ওঠা সম্ভব হয়েছে। ট্রেনের ভেতরেও দেখা যায় মানুষের উপচে পড়া ভিড়।

রাজশাহীতে সাড়ে ৪ ঘণ্টার অবরোধে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়

রাজশাহীতে সাড়ে চার ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আটকে যায় তিনটি ট্রেন। সাড়ে চার ঘণ্টার রেলপথ অবরোধে তিন ট্রেনের শিডিউল তছনছ হয়ে যায়। ঘটে গেছে শিডিউল বিপর্যয়।

গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অনুষদ সংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হওয়া রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এরপর রেলপথ থেকে অবরোধ তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল ছাড়েন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম জানান, রাবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচি ও বিক্ষোভের কারণে হরিয়ান রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেন কপোতাক্ষ এক্সপ্রেসের স্টপেজ দিতে হয়েছে। সেখান থেকেই যাত্রী তুলে আবার ফেরত পাঠাতে হয়েছে।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিকাল তিনটায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেইট) সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।


‘অধ্যাপক রিসোর্স পুল’ করতে চায় ইউজিসি

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতির আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে ‘রিসোর্স পুল’ গঠন করে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ঘাটতি দূর করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর।

জাতীয় পর্যায়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড শিক্ষা-বিষয়ক মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউজিসিতে আজ সোমবার দিনব্যাপী এ কর্মশালা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ইউজিসি সদস্য ও গঠিত কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. হাসিনা খান।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আলমগীর বলেন, নতুন প্রতিষ্ঠিত ও প্রান্তিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও দক্ষ শিক্ষকের সংকট রয়েছে। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের নিয়ে রিসোর্স পুল গঠন করে শিখন ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সময়োপযোগী বেশ কিছু নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এসব নীতিমালার বাস্তবায়ন অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলসহ সংশ্লিষ্টদের এসব নীতিমালা বাস্তবায়নে আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক হাসিনা খান বলেন, চলতি বছরের মধ্যে ব্লেন্ডেড শিক্ষা-বিষয়ক মহাপরিকল্পনার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এলক্ষ্যে ইউজিসি অংশীজনদের সঙ্গে সভা করেছে। ব্লেন্ডেড শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা অংশগ্রহণমূলক করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক দক্ষতা ও সমস্যার সমাধানসহ আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তোলার কথা জানান তিনি।

সভায় ‘উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা’ তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মুহাইমিন আস সাকিব এবং ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং রোডম্যাপ: কস্ট মডেলিং অ্যান্ড অ্যাস্টিমেশন’ বিষয় তুলে ধরেন বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) সিইও মোহাম্মদ তৌরিত।

ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক বিষ্ণু মল্লিকের সঞ্চালনায় কর্মশালায় ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ৩১টি পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, আইকিউএসি ও আইসিটির পরিচালক ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উল্লেখ্য, সশরীরে ও অনলাইন শিক্ষা সমন্বিত করে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইউজিসি। উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে না পড়ে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে খসড়া নীতিমালায়। এ ছাড়া ক্লাসরুম শিক্ষা অধিক অংশগ্রহণমূলক করা, শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে শিখন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং শিখন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব রাখার উদ্দেশ্যে এই নীতিমালা করা হয়।


বাংলা ব্লকেড: প্রতিদিনই স্থবির হচ্ছে রাজধানী ঢাকা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৮ জুলাই, ২০২৪ ২০:১৫
ঢাবি প্রতিনিধি

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আজ দুপুর থেকেই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থী ও সরকারি চাকুরি প্রত্যাশিরা আন্দোলন করেছেন। শাহবাগ চানখারপুল, সায়েন্সল্যাব, পল্টন, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মৎস ভবন, ফার্মগেট, আগারগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা এলাকাগুলোতে এসময় তারা অবরোধ তৈরি করেন। ফলে এ এলাকাগুলোতে বিকেল থেকেই দেখা দেয় তীব্র যানজট। এতে পুরো ঢাকা একপ্রকার স্থবির হয়ে পড়ে।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সোমবার বিকেল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল শুরু করেন। আর এ মিছিল নিয়েই শিক্ষার্থীরা প্রথমে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এরপর মিছিলের একটি অংশ রাজধনীর মিন্টো রোড, মৎসভবন, বাংলামোটর এবং কাওরান বাজার মোড় অবরোধ করে।

এছাড়া একই সময়ে ইডেন মহিলা কলেজ আর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত মোড়, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েনসল্যাব মোড়, ঢাবির অমর একুশে হল ও শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের শিক্ষার্থীরা চাঁনখারপুল মোড় ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার সংলগ্ন র‌্যাম্প অবরোধ করে।

ঢাবির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন পল্টন মোড়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল ইসলাম কলেজ এবং সোহরাওয়ার্দীর শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান মোড় অবরোধ করেন। আর ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রামপুরা-বাড্ডা সড়ক অবরোধ করলে পুরো ঢাকা জুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেট এলাকা, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় অবরোধ করেন।

শিক্ষার্থীদের এই অবরোধের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হলেও তাদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলছেন পথচারীরা। বিক্রমপুর থেকে গুলিস্তান এসে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে শাহবাগ আসেন হানিফ দেওয়ান নামের একজন পথচারী।

তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, আমি যাবো ধানমন্ডি ১৫তে। হেঁটেই যেতে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে একটু তারপরও এটাকে আমি কষ্ট মনে করছি না। শিক্ষার্থীদের যেই দাবি সেটা আমারও দাবি। তারা চাকরি করে যদি কোটার কারণে চাকরি না পায় তাহলে এটা ঠিক না।

সুজিত পাল নামের আরেকজন বলেন, আমিও গুলিস্তান থেকে হেঁটে আসছি। যাব আরও অনেক দূরে। আমাদের কষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদেরও কষ্ট হচ্ছে। এটার একটা যৌক্তিক সমাধান হওয়া দরকার।

গত ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করে আসছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। শুরুতে তাদের দাবি চারটা থাকলেও আজ সোমবার থেকে তারা এক দাবিতে আন্দোলন করছেন। সেই এক দাবি হলো ‘সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাশ করে কোটাপদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে’।

আজ সোমবার বেলা ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ মোড় ছেড়ে বাংলা মটরের দিকে যেতে বাধা দিলে পুলিশ বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং বাংলামোটরের দিকে দৌড়ে যান সেসব রাস্তা অবরোধ করতে।

পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করে।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল কর’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি সাড়ে ৩টা থেকে শুরুর কথা থাকলেও আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের একটি রুমে বৈঠকে বসেন সরকারের একটি দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা। ফলে সেই বৈঠক শেষ করে প্রোগ্রাম শুরু করতে দেরি হয় শিক্ষার্থীদের। তবে এই বৈঠকে কোনো সমাধান আসেনি।


শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, পল্টনে চলছে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব ও পল্টন মোড় আবারও অবরোধ করেছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। ফলে এই এলাকাগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

আজ সোমবার বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটের দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবরোধ করেন। এসময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের শাহবাগ ছেড়ে বাংলা মটরের দিকে যেতে বাধা দিলে বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় এবং বাংলামোটরের দিকে দৌড়ে যান।

এর কিছু আগে রাজধানীর পল্টন মোড় অবরোধ করেন অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল শহীদুল্লাহ্ হলসহ আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজ এবং ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তিতুমীর কলেজসহ আশেপাশের শিক্ষার্থীরাও এসময় ফার্মগেট অবরোধ করেছেন। এছাড়া রাজধানীর শনির আখড়া, গুলিস্তান মোড়ও অবরোধ করার কথা রয়েছে বলে জানা যায়।

এর আগে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন।শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে মিছিলে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে অবরোধ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী নানা স্লোগান দেন।

এদিকে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি আজ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শুরুর কথা থাকলেও আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে বৈঠকে বসেন সরকারের একটি দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা। ফলে সে বৈঠক শেষ করে প্রোগ্রাম শুরু করতে দেরি হয় শিক্ষার্থীদের। তবে এই বৈঠকে কোনো সমাধানে আসেনি।

এর আগে গত শনিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা করেন। আর গতকালও একই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।


কোটা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত: শিক্ষামন্ত্রী

ফাইল ছবি
আপডেটেড ৮ জুলাই, ২০২৪ ১৭:০২
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। আজ সোমবার আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডাকা জরুরি বৈঠকে অংশ নেন তিনি।

দুই মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। এতে আইনমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকায় চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে এখনও কিছু জানানো হয়নি।

ধানমন্ডি কার্যালয় সূতে জানা যায়, দপ্তর সম্পাদকের কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে সেখানে যান সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে বৈঠকে যোগ দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার চাপা ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, চলমান ইস্যুসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর কোটা বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

এর আগে গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘কোটার প্রশ্নে যে কথা বলা হচ্ছে, মেধাবী এবং কম মেধাবী নাকি জেলাভিত্তিক সেটা তো খুবই সাবজেক্টিভ বিষয়। একটা নির্দিষ্ট মানের মেধা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব না, সেটা তো আমরা সবাই জানি। সে ক্ষেত্রে তার পরবর্তী ধাপ কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেটা যেহেতু আদালতে পেন্ডিং আছে, সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘যে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আদালতের জন্য অবমাননাকর কোনো বক্তব্য দেয়া আমার পক্ষে অবশ্যই সম্ভব নয়। কেননা, কোটার বিষয়টি উচ্চ আদালতে এখনও বিচারাধীন। এটি নিয়ে রায় না আসা পর্যন্ত মন্তব্য করা আমার পক্ষে আদালত অবমাননার শামিল।’


আগামীকাল ফের বাংলা ‘ব্লকেড ঘোষণা’ দিয়ে শাহবাগ ছাড়লো শিক্ষার্থীরা

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ৭ জুলাই, ২০২৪ ২১:১৭
ঢাবি প্রতিনিধি

আগামীকাল সোমবার ফের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে টানা চার ঘণ্টা অবরোধ করার পর আজ রাত ৮টায় শাহবাগ মোড় ছেড়েছে চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ চার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা।

এরপর থেকে এই রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তার আগে আজ রোববার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চানখারপুল, সায়েন্সল্যাব এবং বাংলামোটর মোড় ছেড়ে দিয়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড়ে এসে জড়ো হন।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম বলেন, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে চলমান ছাত্র ধর্মঘট অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য চলবে। একই সঙ্গে আগামীকালও সারা দেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চলবে। আজকে শাহবাগ থেকে বাংলামটর পর্যন্ত অবরোধ গিয়েছে, কালকে ফার্মগেট পর্যন্ত যাবে। আমাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে শহর থেকে শহরে। আগামী দিনে এটা আরও ছড়িয়ে পড়বে। আমরা সংবিধানের সকল নাগরিকের সমান অধিকার আদায়ে লড়াই করছি। আমাদের আদালত দেখালে আমরা সংবিধান দেখাব।

তিনি বলেন, আমাদের আদালতের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলা হচ্ছে। আমরা ৫০ বছর অপেক্ষা করছি। আর কত? শিক্ষার্থীদের পিঠ দেওয়ালে লেগে গেছে। হয় কোটা দূর করতে হবে নয়তো পুরো বাংলাদেশকে শতভাগ কোটার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

চলমান এই সমস্যা সমাধানে লক্ষে আজ সন্ধ্যা ৭টার কিছু পর সরকারের তরফ হতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেন আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ আর সারজিস আলম।

আলোচনার কথা বলে তাদের তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ বলে আন্দোলনকারীদের একটি মহল এসময় দাবি করে। আন্দোলনের কর্মী হাসিব আল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, আমাদের আন্দোলনের তিন সমন্বয়ককে প্রশাসন তাদের সঙ্গে কথা বলতে নিয়ে গেছে। উনাদের না নিয়ে আমরা শাহবাগ ছাড়বো না।

আলোচনার নামে যদি আমাদের ভাইদের গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে ছাত্র সমাজ এর উপযুক্ত জবাব দেবে। পরে আলোচনা শেষ না করেই পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করতে চলে আসতে হয় আন্দোলনকারীদের।

এর আগে, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ রোববার দুপুর থেকে সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল আর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এতে এই চারটি মোড়ের আশেপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।

বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করতে শুরু করেন। একই সময়ে চানখারপুল মোড় অবরোধ করেন অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল শহীদুল্লাহ্ হলসহ আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আর দুুপুর আড়াইটা থেকে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করেন ঢাকা কলেজসহ আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা। ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে শাহবাগ মোড় দখল শেষে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের দিকে আসেন এবং চারপাশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অবরোধ শুরু করেন।

এ সময় আটকে পড়া যাত্রী ও বাস চালকদের আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা যেসব যাত্রী, গাড়িচালক ভাইয়েরা, ভিতর বসে আছেন আপনার এবং আপনার সন্তানের জন্যই আমাদের আন্দোলন। আপনাদের যাদের কোনো কোটা নেই আপনারা সন্তানরা যেন পড়ালেখা করে চাকরি পায় কোনো কোটার কারণে বঞ্চিত না হয় সেজন্যই আমাদের এই আন্দোলন। দয়া করে আমাদের সহযোগিতা করুন। আপনারা ছেলে যখন কোটা না থাকলেও চাকরি পাবে তখনের আনন্দ চিন্তা করে আজকের সামান্য এই কষ্ট সহ্য করুন।

এরপর শিক্ষার্থীরা কয়েক ভাগ হয়ে একটি অংশ মিন্টোরোড মোড়, আরেকটি অংশ পরীবাগ মোড় ও পরবর্তীতে বাংলা মোটরে অবস্থান নেন। এসময় কিছু শিক্ষার্থীদের রাস্তার ওপর ফুটবল, ক্রিকেট, লুডুসহ বিভিন্ন খেলা খেলে সময় পার করতে দেখা গেছে।

এর আগে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন।এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করেন।

আর বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলো তাদের হল থেকে চানখারপুল আর ঢাকা কলেজসহ আশেপাশের কলেজগুলো সেখান থেকে সায়েন্সল্যাব অবরোধ করা হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’; ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

গতকাল শনিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকার সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন মহাসড়ক, সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা তাদের এই অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে আজ দুপুরে গণভবনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার আন্দোলন করছে। যারা এর আগে আন্দোলন করেছিল, তারা আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কত পাস করত, এখন কত করছে। এটা সাবজুডিস ম্যাটার, আদালতে বিচারাধীন।

তিনি বলেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করছে। এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো, পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।


শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুলে চলছে কোটাবিরোধীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ঢাবি প্রতিনিধি

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব ও চানখারপুল মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করছেন চাকরিতে কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালসহ আরও চারটি দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এবং চাকরি প্রত্যাশীরা। এতে এ এলাকাগুলোতে ও আশেপাশের সড়কে প্রায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আজ রোববার বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। একই সময়ে চানখারপুল মোড় অবরোধ করেছেন অমর একুশে হল, ফজলুল হক মুসলিম হল শহীদুল্লাহ্ হলসহ আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা।

আজ বেলা আড়াইটা থেকে সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেছে ঢাকা কলেজসহ আশেপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর তিতুমীর কলেজসহ আশেপাশের শিক্ষার্থীদের মহাখালী অবরোধ করার কথা রয়েছে।

এর আগে পূর্ব ঘোষিত ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নেন। এতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিভাগ, হল এবং ইনিস্টিটিউটের ব্যানারে অবস্থানে যোগ দেন। এরপর এই মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর টিএসসি হয়ে শাহবাগ এসে মোড় অবরোধ করেন।

বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলো তাদের হল থেকে চানখারপুল আর ঢাকা কলেজসহ আশেপাশের কলেজগুলো সেখান থেকে সায়েন্সল্যাব অবরোধ করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘একাত্তরের পথ ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘কোটা ছেড়ে কলম ধরো, বাংলা ব্লকেড সফল করো’, ‘দফা এক দাবি এক, কোটা নট কামব্যাক’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

এর আগে গতকাল শনিবার বিক্ষোভ মিছিল শেষে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির ঘোষণা করেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকার সায়েন্সল্যাবসহ বিভিন্ন মহাসড়ক, সড়ক অবরোধ করে সেখানে অবস্থান নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রথযাত্রা তাদের এই অবরোধ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।

এদিকে আজ দুপুরে গণভবনে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লেখাপড়া বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করার আন্দোলন করছে। যারা এর আগে আন্দোলন করেছিল, তারা আগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় কত পাস করত, এখন কত করছে। এটা সাবজুডিস ম্যাটার, আদালতে বিচারাধীন।

তিনি বলেন, পড়াশোনা বাদ দিয়ে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা সময় নষ্ট করছে। এ আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

ধারণা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর কঠোর অবস্থানে যেতে পারে পুলিশ। এতোদিনের অবরোধে পুলিশ শিক্ষার্থীদের কোনো বাধা না দিলেও আজ অবরোধের কিছু পর শিক্ষার্থীদের শাহবাগ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে পুলিশ। আর অনুরোধে সাড়া না দিয়ে শিক্ষার্থীরা না সরলে অ্যাকশনেও যেতে পারে পুলিশ।

কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো, পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া, সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা–সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোয় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।


কোটাবিরোধী আন্দোলনের পেছনে ষড়যন্ত্র আছে কি না, প্রশ্ন থাকতে পারে

রোববার ডিআরইউ আয়োজিত ‘এসএসসি-এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী শিক্ষার্থীদের চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনের বিষয়ে বলেছেন, ‘এটা সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং সেটার সমাধান না হওয়ার আগেই হঠাৎ করে আমি রাস্তায় নেমে আসলাম এবং রাস্তা-ঘাট সব ব্লক করে দিলাম; স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রশ্ন থাকতে পারে এর পেছনে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র আছে কি না।’

আজ রোববার (৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘এসএসসি-এইচএসসি সমমান পরীক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করার জন্য অনেকেই অনেকভাবে অনেক জায়গায় উসকানি দেয়। আমাদের অনেকেই দেশের বাইরে অপপ্রচার করে যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বা সংগঠন করতে নাকি নিষেধ, চ্যালেঞ্জ করে তারা সমালোচনা করতে চায়। আজকে যারাই আন্দোলন করছেন; এ আন্দোলনে তাদের যে একটা রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে স্টে (অবস্থান) করতে পারছেন এটা কি প্রমাণ হয় না বাংলাদেশে রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে বাকস্বাধীনতার চর্চার প্রশ্নে আমাদের সরকারের কারও ওপরে কোনো বিধিনিষেধ নেই।

তিনি বলেন, মানুষের বাকস্বাধীনতা অবশ্যই আছে। তবে যে বিষয়টি নিয়ে এখানে আন্দোলন হচ্ছে বা একটা জায়গা সৃষ্টি হয়েছে বা সেটাকে বহিঃপ্রকাশ ঘটানো হচ্ছে যে আমাদের সড়ক অবরোধ করার মাধ্যমে বা ব্লকেড কর্মসূচির মাধ্যমে। সেটা যেহেতু আমরা সরকারে আছি আইনের শাসনের প্রতি আমাদের অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং এটা যেহেতু উচ্চ আদালতে এখনো বিচারাধীন বিষয় এবং এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো রায় আমাদের সর্বোচ্চ আদালত দেবেন, এ বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করাটা আদালত অবমাননার সামীল হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হয় তো রাস্তায় দাঁড়িয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে আদালতের জন্য আবমাননাকর কোনো বক্তব্য দেওয়া আমার পক্ষে অবশ্যই সম্ভব নয়। আমি এ বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলবো যে অনেক সময় জনপ্রিয় অনেক বিষয়কে পুঁজি করে ষড়যন্ত্রকারীরা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। তাই সেই ফাঁদে যাতে আমরা পা না দেই।

এ সমস্যার সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমত এটি আদালতে বিচারাধীন আছে; আদালতের সিদ্ধান্তের পরে নির্বাহী বিভাগ সেটা বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই একটা ফ্লেক্সিবিলিটি থাকে। সেটার জন্য অবশ্যই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা বাংলাদেশে দেখেছি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, সেই সময়টাতে কিন্তু নানানভাবে শুরু হয়েছিল ষড়যন্ত্রকারীদের কর্মকাণ্ড। স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশে এমন একটা পরিস্থিতি করা যেখানে প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বারংবার এমন একটা অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। সে ধরনের প্রচেষ্টা হচ্ছে কি না সেটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে কথা বলা হচ্ছে কোটার প্রশ্নে মেধাবী এবং কম মেধাবী নাকি জেলাভিত্তিক সেটা তো খুবই সাবজেক্টিভ বিষয়। একটা নির্দিষ্ট মানের মেধা ধারণ না করে কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করা সম্ভব না, সেটা তো আমরা সবাই জানি। সে ক্ষেত্রে তার পরবর্তী ধাপ কীভাবে নির্ধারিত হবে, সেটা যেহেতু আদালতে পেন্ডিং আছে, সেটা নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চায় না।

অনুষ্ঠানে ডিআরইউর সদস্যদের মধ্যে যাদের সন্তান ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এসএসসি এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি দেওয়া হয়। ডিআরইউর সভাপতি সৈয়দ শুকুর আলী শুভর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য এজেডএম মফিউদ্দিন শামীম। ডিআরইউর কল্যাণ সম্পাদক তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন।


‘ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড’ প্রতিযোগিতার ফাইনাল শনিবার

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিকস, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিল্পকলা এবং গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যতিক্রমী আয়োজন ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের সমাপনী অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আগামীকাল শনিবার দুপুর ৩টার দিকে শাহাবাগ জাতীয় জাদুঘরে এ অনুষ্ঠান হবে। প্রথমবারের মতো এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করছে আইটেসারেক্ট টেকনোলজিস।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিল্পকলা ও গণিত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য এই জমকালো অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।

ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক ও প্রধান উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ডা. দীপু মনি।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এস এম মাসুদ কামাল, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, আইসিটি বিভাগের সচিব শামসুল আরেফিন, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ, এডিএন গ্রুপের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ, আইসিটি বিভাগের মহাপরিচালক মোস্তফা কামাল এবং প্রাইম ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও হাসান ও রশিদ।

অনুষ্ঠানে সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন বিভাগে কুইজ এবং প্রজেক্ট প্রদর্শনী এবং দুপুর ৩ টা থেকে সমাপণী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শুরু হবে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ কুইজ ও প্রজেক্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দসহ প্রযুক্তিবিদ ও প্রযুক্তিবিষয়ক শিল্পের ঊর্ধ্বতন ব্যাক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হামিদ।

এই অলিম্পিয়ারে ৬টি ভিন্ন লেভেলের শিক্ষার্থীরা মোট ৮ টি বিভাগে রেজিস্ট্রেশন ফি ছাড়াই অংশ নেন। বাংলাদেশে ৩১০টি স্কুল, ৬১টি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৩২টি কলেজ, ২২টি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান এবং ২৫টি মাদ্রাসা থেকে কুইজ এবং প্রোজেক্টে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৯৭৬ জন। কুইজ নিবন্ধন সংখ্যা ছিল ৫৫ হাজার ৭৪৯। প্রোজেক্টের জন্য নিবন্ধন সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২২৭ এবং ৫৩ জন মেন্টর এবং বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন।

এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩০টি ক্লাব, ২৯০ জন ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর এবং ৪ হাজার ৭০২ জন ভলেন্টিয়ার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এই অলিম্পিয়াডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই আয়োজন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশে সব স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার প্রথম সিজন ২০২৩ সালের ১৫ মার্চ থেকে শুরু হয়।


৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু ২৮ আগস্ট

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। আগামী ২৮ আগস্ট এই পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্ধারিত দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে প্রার্থীদের আবশ্যিক ও পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর এই লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শুধু মানসিক দক্ষতা বিষয়ে পরীক্ষা শুরু হবে বেলা সাড়ে ১২টায়। বিভাগভিত্তিক ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে একযোগে এই পরীক্ষা চলবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পরীক্ষার হল ও আসন বিন্যাসসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাগুলো পিএসসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

এর আগে ৪৬তম বিসিএসসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এই বিসিএস থেকে মোট ৩ হাজার ১৪০টি পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এসব পদের বিপরীতে আবেদন করেন ৩ লাখ ৩৭ হাজারের অধিক প্রার্থী।

গত ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৮ জন। উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।

বিষয়:

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ, হাইকোর্টের রায় বহাল

ছবি: দৈনিক বাংলা
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল (নিয়মিত আপিল) করতে বলেছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিতে আপিল বিভাগ রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, আপাতত হাইকোর্টের রায় যেভাবে আছে, সেভাবে থাকুক। রায় প্রকাশ হলে আপনারা নিয়মিত আপিল দায়ের করেন। আমরা শুনব।

প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আন্দোলন হচ্ছে হোক। রাজপথে আন্দোলন করে কি হাইকোর্টের রায় পরিবর্তন করবেন?

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু। তিনি বলেন, আপিল বিভাগে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে।

গত ৯ জুন সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সেদিন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে, না কি বাতিল হবে এ বিষয়ে আপিল বিভাগই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

গত ৯ জুন সকালে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।

গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।


‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ৩ জুলাই, ২০২৪ ০০:১০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ চালুর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো নেওয়া হয়নি কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা। গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ও প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, সরকারের কারও পক্ষ থেকে আলোচনার কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তারা আলোচনায় প্রস্তুত এবং দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে চান। কিন্তু দাবির সুরাহা না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকবে না। সোমবার (১ জুলাই) থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।

১ জুলাই থেকে চালু হওয়া কর্মসূচি অনুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪০০টির মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় পেনশন দেওয়া হবে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমবে। ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক ও তাদের অবমাননাকর। তারা নতুনদের জন্য এই আন্দোলন করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবি তিনটি-প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ সচিবেরা যে ধাপে বেতন-ভাতা পান) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।

মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এ ছাড়া প্রসাশনিক কাজ বন্ধ করে রেজিস্টার ভবনের সামনে অবস্থান নেন আরেকটি অংশ।

তাদের অভিযোগ, বৈষম্যমূলক এই পেনশন স্কিম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এই স্কিম প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহার ছাড়াও শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন ও সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবিতে দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির এই কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করছে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনের মাঠে সরব হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমিতিগুলোও।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক: অর্থমন্ত্রী

এদিকে সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলন অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

মঙ্গলবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর অফিস কক্ষে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দক্ষিণ, মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াংমিং ইয়ংয়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রত্যয় স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা

সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয়-এর প্রাসঙ্গিক বিষয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছে। গতকাল কর্তৃপক্ষের জনংসযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

এতে উল্লেখ করা হয়, সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয়’-এর স্কিম যাত্রা চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একটি টেকসই পেনশন ব্যবস্থায় আনয়নের লক্ষ্যে অন্যান্যে পাশাপাশি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এ স্কিম প্রবর্তন করা হয়।

বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠান কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক প্রাপ্ত হয়ে থাকেন, কোনো পেনশন পান না। তা ছাড়া সরকারি, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও দেশের বিপুল সংখ্যক জনসাধারণ একটি সুগঠিত পেনশনের আওতার বাইরে আছে। সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য একটি সুগঠিত পেনশন কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রবর্তন করেছে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন, ২০২৩ এর ১৪ (২) ধারা অনুযায়ী, দেশের সব মানুষের জন্য পেনশন স্কিম প্রবর্তনের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই ২০২৪ বা তৎপরবর্তীতে যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৩০ জুন পর্যন্ত যেসব শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন, তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা প্রাপ্য হবেন।

প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে শিক্ষকদের জিম্মি করা হচ্ছে: জিনাত হুদা

এদিকে প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা দেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির নেতাসহ অন্য শিক্ষকরা কলাভবনের মূল ফটকে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

অবস্থান কর্মসূচিতে অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, ‘এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জন্যই। ভবিষ্যতে তারাই শিক্ষক হবেন। এ আন্দোলন নিয়ে অনেক ধরনের অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এ আন্দোলন করা হচ্ছে। মূলত শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জন্যই এ আন্দোলন করছেন। আর প্রত্যয় স্কিমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের শিক্ষকদেরই মূলত জিম্মি করা হচ্ছে।’

উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশের কথা বাদই দিলাম... যেহেতু সবকিছুই বাদ দিচ্ছি; এই উপমহাদেশের দিকে তাকান, ভারত, শ্রীলঙ্কা এমনকি পাকিস্তানেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি। যাদের বিরুদ্ধে আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম, তাদের দেশেও শিক্ষকদের বেতন অনেক বেশি।’

সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি ও ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই পেনশন স্কিমটি শিক্ষকদের মান-সম্মানের ব্যাপার। যারা পেনশন স্কিমের পক্ষে কথা বলছে, তারা তাদের নিজস্ব অবস্থান বজায় রাখার জন্য এসব বলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্ররা সবসময় আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এই জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছে। তাই আমি মনে করি এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলন। যদি সরকার এই স্কিম বাতিলে আরও কালক্ষেপণ করেন, তাহলে আমাদের আন্দোলনে দেশের সাধারণ জনগণও অংশগ্রহণ করবেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও এই আন্দোলনে আমাদের কোনো মতপার্থক্য নেই। সব দল-মতনির্বিশেষে আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে একমত।’

কর্মসূচিতে অধ্যাপক জিনাত হুদার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রহিম, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এম ওহিদুজ্জামান, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছিরসহ আরও অনেকে। এ সময় শিক্ষকরা তাদের বক্তব্যে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন।

একই দাবিতে সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের সামনের মল চত্বরে এসে জড়ো হন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তারাও দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এসময় অবিলম্বে দাবি না মানলে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব মূল ফটকে তালা ঝোলানোরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। দাবি আদায়ে উপাচার্যকে ঊর্ধ্বতন মহলে আলোচনার আহ্বান জানান তারা।

কর্মচারীরা বলেন, সচিবরা আমাদের ওপর তাদের তৈরি করা অন্যায় নীতি চাপিয়ে দিয়েছে। তারা আমাদের বুকের ওপর দিয়ে গাড়িতে করে অফিসে যান। আমাদের দাবি মেনে না নিলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাস্তা বন্ধ করে দেব। ফলে তারাও আর আমাদের বুকের ওপর দিয়ে অফিসে যেতে পারবেন না। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে দেব। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল হয়ে যাবে।


দ্বিতীয় দিনেও বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেন্দ্রে যান শিক্ষার্থীরা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে গত কয়েক দিন ধরেই টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই বৃষ্টিপাতের ফলে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে কাজকর্ম করতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। আষাঢ় মাসের এই বৃষ্টির মধ্যেই সারা দেশে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।

গত রোববার (৩০ জুন) পরীক্ষার প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের বৃষ্টি মাথায় নিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনেও বৃষ্টিতে ভোগন্তির শিকার হতে দেখা গেছে পরীক্ষার্থীদের। এদিনও পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও বৃষ্টির ভোগান্তি মাথায় নিয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন।

মঙ্গলবার এইচএসসির বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়ে বেলা ১টায় শেষ হয়। তবে বৃষ্টির জন্য ঢাকা-চট্টগ্রামসহ প্রায় সারা দেশের পরীক্ষার্থীদের বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শুক্রাবাদের রাসেল স্কয়ারে নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে দেখা গেছে, রিকশা, মোটরসাইকেল, অটোরিকশায় পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছান পরীক্ষার্থীরা। ছাতা মাথায় থাকলেও অনেক পরীক্ষার্থী আধাভেজা হয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। শুধু নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ নয়, রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সকাল থেকে বৃষ্টির কারণে ভোগন্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা।

গত ৩০ জুন অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রথম দিনে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীকে ভিজে বাসায় পৌঁছাতে হয়। অভিভাকরাও পড়েন ভোগান্তিতে। ওই দিনও পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় থেকে বৃষ্টির ভোগান্তিতে পড়েন পরীক্ষার্থীরা। ছাতা নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে আধাভেজা অবস্থায় পৌঁছান অনেকে।

এদিকে কয়েক দিন টানা বৃষ্টিপাতের আভাস থাকায় এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের কিছু নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। তাতে প্রয়োজনে দেরিতে পরীক্ষা শুরু করে সময় আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টা সমন্বয় করতে বলা হয়েছে।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, যেহেতু বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে, তাই পরীক্ষার্থীদের সময় হাতে নিয়ে বের হওয়া উচিত হবে। তারপরও কেউ যদি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কেন্দ্রে দেরিতে পৌঁছে, তাকে সময় সমন্বয় করে পুরো সময়ে পরীক্ষা দিতে সুযোগ দেওয়া হবে। সেই নির্দেশনা আমরা দিয়েছি।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আবুল বাশারের সই করা জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক দিন প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরীক্ষার দিনগুলোতে বৃষ্টি থাকলে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কেন্দ্রের মূল ফটক খুলে দিয়ে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে।

এতে আরও বলা হয়, অনিবার্য কারণে কোনো কেন্দ্রের পরীক্ষা শুরু করতে আধাঘণ্টা কিংবা এক ঘণ্টা দেরি হলে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় সেই আধাঘণ্টা বা এক ঘণ্টা সময় সমন্বয় করে পরীক্ষা শেষ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আগামী চার-পাঁচ দিনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির আভাস রয়েছে।

অন্যদিকে বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ড এবং সিলেট বিভাগের চার জেলায় মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিম এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পরীক্ষা ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। ফলে ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে প্রথম দিনে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১১ লাখ ২২ হাজার ৫৫২ জন।


banner close