মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

রেকর্ডের ভান্ডার অনেক বেশি প্রসারিত

চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত
প্রকাশিত
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত
প্রকাশিত : ২৯ জুন, ২০২৪ ২২:১৪

২০ দলের ২৯ দিনের লড়াই শেষ হলো ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার লড়াই দিয়ে। ক্রিকেটের বাজার বাড়াতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে এবার বিশ্বকাপের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। ক্রিকেট অবকাঠামো এখনো সম্পূর্ণ না হওয়া দেশটি তড়িঘড়ি করে বেছে নিয়েছিল ভিন্ন উপায়। অন্যদেশ থেকে বানিয়ে এনেছিল উইকেট। কিন্তু সেই উইকেট নিয়ে এরপর যেটা হয়েছে সেটা এর আগের আটটি আসরের কোনোটিতেই হয়নি। উইকেট নিয়ে এবারের আসরেই সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে। সেসব একপাশে সরিয়ে রাখলে রেকর্ড বইটিও কম সমৃদ্ধ হয়নি!

শুরুটা বোলারদের দিয়েই করা যাক। বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার প্যাট কামিন্স। এতে অনন্য এক কীর্তি গড়েছেন তিনি; নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়। টানা দুই ম্যাচে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক নেই আর কারও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই এমন কীর্তি সর্বশেষ হয়েছিল ২৫ বছর আগে। তখন তো টি-টোয়েন্টি ছিলই না। এমন কীর্তি গড়া হয়নি ওয়ানডেতেও। পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। অসি পেসার কামিন্স প্রথম হ্যাটট্রিকটি করেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। এরপর আফগানিস্তান ম্যাচে করেন দ্বিতীয়টি।

একটি হ্যাটট্রিক করেছিলেন ইংলিশ পেসার ক্রিস জর্ডানও। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ ওভারে হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট নিয়েছেন ক্রিস জর্ডান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আট আসরে হ্যাটট্রিক হয়েছে মোটে ৬টি। আর ২০২৪ আসরে সেমিফাইনালের আগেই হ্যাটট্রিক হয়েছে তিনটি। জর্ডানের রেকর্ড আছে আরেকটি; টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ওভারে চার উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় বোলার তিনি। প্রথম বোলার আয়ারল্যান্ডের কার্টিস ক্যাম্ফার, ২০২১ আসরে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে।

বাংলাদেশি পেসার তানজিম হাসান সাকিবও গড়েন একটি রেকর্ড। নেপালের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড গড়েন তিনি। বাংলাদেশি এই পেসার চার ওভারে সাত রান দিয়ে চার উইকেট পান। সেসব ছাপিয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে সর্বোচ্চ ডটবলের রেকর্ড। সেই ইনিংসে সাকিব ডট দেন ২১টি, বিশ্বকাপে যা ছিল সর্বোচ্চ।

এক দিন পরই অবশ্য সাকিবের সেই রেকর্ডটি ভাঙেন লুকি ফার্গুসন। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে চার ওভার বল করে সবকটিই মেডেন নেন তিনি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে এর আগে কোনো বোলার ইনিংসের ২৪ বলের ২৪টিই ডট নিতে পারেননি। আর এই মেডেন ওভারগুলোতে ফার্গুসন তুলে নেন তিন তিনটি উইকেট।

আফগান বোলার ফজল হক ফারুকি গড়লেন আরেকটি রেকর্ড। প্রথমবার সেমিফাইনাল খেলা এই পেসার এবারের আসরে শিকার করেন ১৭টি উইকেট। এটাই তাকে নিয়ে যায় রেকর্ডের পাতায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল শ্রীলংকার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার। ২০২১ আসরে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।

তবে ব্যাটারদের ব্যাটেও রানের কমতি তেমন একটা ছিল না। ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাটাররা চার-ছক্কার ফুলঝুড়ি দেখিয়েছে। সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও ফিরে এসেছেন ক্যারিবীয় তারকা নিকোলাস পুরান। ৯৮ রান করে রান আউটে কাটা পড়েন তিনি।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটার অ্যারন জোন্স পড়েছিলেন মধুর সমস্যায়, সেটা না হলে হয়তো তিনি সেঞ্চুরিটা করেই ফেলতেন। তার সেঞ্চুরি করার আগেই দল জিতে গিয়েছিল। ৯৪ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি।

সুপার এইটের ম্যাচে রোহিত শর্মা সেঞ্চুরির আশা দেখালেও পূরণ করতে পারেননি তিনিও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি কাটা পড়েছিলেন ৯২ রানে।


সেরাদের সেরা যারা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

২০ দলের ২৯ দিনের লড়াইয়ের সমাপ্তি ঘটল দক্ষিণ আফ্রিকা-ভারতের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে। আর উত্তেজনাকর মারকাটারি এ সংস্করণের পর্দা নামল ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে। তাই সবশেষে এখন খুঁজে নেওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্রদের; যারা মাতিয়ে রেখেছিল ২৯ দিনের এই আয়োজনকে। কারা নাম লেখালেন সেরাদের তালিকায়।

টুর্নামেন্টের সেরা দল ভারত; এটা নিয়ে আর নতুন করে পরিচিত করানোর কিছু নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত সাফল্যে কারা এগিয়ে থাকল? এ প্রশ্নের উত্তর মেলানো যাক এবার। শুরুটা করা যাক টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়কে দিয়েই।

টুর্নামেন্টের সেরা সেই ক্রিকেটারের নামটি জাসপ্রিত বুমরাহ। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই ভারতীয় বোলিং লাইনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। যখনই আক্রমণে ডাক পড়েছে, দুই হাত উজাড় করে দিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ। ফাইনালের শেষ দিকের দুই ওভারে মাত্র ৬ রান দেওয়া ছাড়াও ম্যাচে ২টি উইকেটসহ ৮ ম্যাচে তার শিকার ১৫ উইকেট।

এবারের আসরে প্রতিটি উইকেটের জন্য তার খরচ মাত্র ৮.২৬ রান। এক বিশ্বকাপে অন্তত ১০ উইকেট নেওয়া বোলারদের মধ্যে সেরা গড় এটি। ২৯.৪ ওভার বোলিং করে ওভারপ্রতি তিনি দেন স্রেফ ৪.১৭ রান। বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত ২০ ওভার করা বোলারদের মধ্যে এটিই সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলিংয়ের কীর্তি।

ফাইনালসহ আসরজুড়ে নজরকাড়া বোলিংয়ে টুর্নামেন্টসেরা ক্রিকেটারের পুরস্কারও জেতেন বুমরাহ। ফাইনাল ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়টি যে বিরাট কোহলি এটা ইতোমধ্যেই দৃষ্টিগোচর হয়েছে সবারই। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া কোহলি এ দিন জ্বলে উঠলেন অন্ধকারে মশাল হয়ে। আগের ৭ ম্যাচে ৭৫ রান করা কোহলি ফাইনাল ম্যাচেই খেললেন ৭৬ রানের ইনিংস। যেটা ভারতের বিশ্বকাপে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই ম্যাচসেরার পুরস্কারটিও উঠেছে তার হাতেই।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটারটির নাম রহমানুল্লাহ গুরবাজ। আফগানিস্তান সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিলেও তাকে টপকে যেতে পারেনি কোনো ব্যাটার। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই তিনি ছিলেন আফগানদের ব্যাটিং লাইনের কাণ্ডারি। ৮ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২৮১ রান। যার মধ্যে চারটিতে খেলেছেন চল্লিশছোঁয়া ইনিংস।

এ তালিকার অবশ্য সেরা পাঁচ হিসাব করলে বাকি চারটি নাম আসে যথাক্রমে- রোহিত শার্মা (৮ ইনিংসে ২৫৭ রান), ট্রাভিস হেড (৭ ইনিংসে ২৫৫ রান), কুইন্টন ডি কক (৯ ইনিংসে ২৪৩ রান), ইব্রাহিম জাদরান (৮ ইনিংসে ২৩১ রান)।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় অবশ্য একজনকে রাখার সুযোগ নেই। ১৯ উইকেট শিকার করে যৌথভাবে এ তালিকায় আছেন আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি আর ভারতীয় পেসার আর্শদীপ সিং।

সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেওয়া ফারুকি ৮ ইনিংস থেকেই নিয়েছেন ১৭ উইকেট। এ জন্য তিনি ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন ৬.৩১। আর প্রতি উইকেটের জন্য খরচ করেছেন মাত্র ৯.৪১ রান। অন্যদিকে আর্শদীপের ১৭ উইকেট শিকার করতে লেগেছে ৯টি ইনিংস।

বিষয়:

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের রাজসিংহাসন দুই বছরের জন্য ভারতের

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

নাটকীয়তার এতটুকু কমতিও ছিল না এ ম্যাচে। একটা ফাইনালে যা হওয়ার দরকার তার সবই হলো। লড়াইয়ের উষ্ণতা, ম্যাচের ভাগ্য বদলের নাটকীয়তা, ব্যাট-বলের লড়াই, স্কিলের ব্যবহার, স্নায়ুযুদ্ধ; সবকিছু শেষে শিরোপা উদ্‌যাপনটা করেছে ভারতই। শেষ ম্যাচের, শেষ শিরোপাটা উঁচিয়ে ধরেছেন রোহিত-কোহলি-জাদেজারা। উন্মাদ উদ্‌যাপনে মেতেছে টিম ইন্ডিয়া। ভারতজুড়ে কোটি দর্শক পুড়ছে ক্রিকেটজ্বরে।

এ উদ্‌যাপনকে ব্যাখ্যা করার শব্দ নেই। মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে রোহিতের নিজের সঙ্গেই নিজের কথা বলা, বিরাট কোহলির স্কোরবোর্ডের সঙ্গে সেলফি নেওয়া, হার্দিক পান্ডিয়ার মাটিতে বসে পড়ে কান্নাভেজা চোখ। আবেগের কত রকম যে প্রকাশ। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতিগুলোই হয়তো এমন! দীর্ঘ ১৭ বছরের অপেক্ষার ফল যে এটা।

অন্যদিকে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে সাতবার বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালের স্বপ্ন পূরণ হয়নি একবারও। নামের পাশে তাই যোগ হয়েছিল ‘চোকার্স’ শব্দটি। অষ্টম সেমিফাইনালে এসে সেটা ঘুচিয়েছিল প্রোটিয়ারা। নিশ্চিত করেছিল ফাইনালে খেলা। কিন্তু সেই মঞ্চে এসে আবারও প্রমাণ করল এখনো ‘চোকার্স’ শব্দটিকে মুছে ফেলতে পারেনি তারা। ফাইনালে সহজ সমীকরণের ম্যাচও হেরে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে এইডেন মার্করাম, ডি ককদের।

বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে শনিবার প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে হারিয়ে ১৭৬ রান তোলে ভারত। জবাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান তুলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। বুমরাহ-হার্দিকদের দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে ৭ রানের হারে শেষ হয় প্রোটিয়াদের স্বপ্ন। অন্যদিকে ১৭ বছরের আক্ষেপ শেষে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের আনন্দে মাতে ভারত।

ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই কিছুটা বিপদে পড়েছিল ভারত। প্রথম দুই ওভারেই দুই উইকেট হারায় তারা। এক ওভারেই রোহিত (৯) পান্থকে (০) ফেরায় কেশব মাহারাজ। পাওয়ার-প্লেতেই বিদায় নেন সুরিয়া কুমারও (৩)। দলের এমন অবস্থায় দেয়াল হয়ে দাঁড়ান পুরো টুর্নামেন্টে ব্যর্থ বিরাট কোহলি। তিনি যে এ দিনের জন্যই তুলে রেখেছিলেন ব্যাটটা। পুরো টুর্নামেন্টে ৭৫ রান করা কোহলি খেললেন ৫৯ বলে ৭৬ রানের ইনিংস। তাকে সঙ্গ দিলেন অক্ষর প্যাটেল (৪৭) আর শিবাম দুবে (২৭)। দুজনই খেললেন দুটি কার্যকরী ইনিংস। এতে ২০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়াল ১৭৬ রানের। যেটা লড়াই করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে একই বিপদে পড়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাও। দ্বিতীয় ওভারে রিজা হেন্ড্রিক্স (৪) আর তৃতীয় ওভারে ফিরে যান এইডেন মার্করাম (৪)। শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন দুই ব্যাটার ট্রিস্তান স্টাবস আর কুইন্টন ডি কক। পাওয়ার প্লের আগের ওভার থেকেই প্রবলভাবে ম্যাচে ফেরার তাগাদা দেন তারা। দুজন মিলে গড়েন ৫৮ রানের জুটি। অক্ষর প্যাটেলের বলে স্টাবস (৩১) ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। তবুও ম্যাচে টিকে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর উইকেটে এসে টর্নেডো চালাতে শুরু করেন হেনরি ক্লাসেন। তার সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আর্শদীপের বলে কাটা পড়েন ডি কক (৩৯)।

ডি ককের বিদায়ের রাগটা ক্লাসেন ঝাড়েন দুই স্পিনার কুলদপ যাদব আর অক্ষর প্যাটেলের ওিপর। প্রতি ওভারেই তাদের চার-ছক্কায় বাউন্ডারি ছাড়া করে সহজ সমীকরণে নিয়ে আসেন ম্যাচ। ২৩ বলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলেন অর্ধশতক। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন জয়ের সুবাস পাচ্ছে তীব্রভাবেই। ক্লাসেন আর ডেভিড মিলার তখন ক্রিজে। বাইরে এতগুলো উইকেট। এই ম্যাচ তো কার্যত শেষ! কিন্তু ক্রিকেট ম্যাচ তো শেষের আগে শেষ নয়!

১৬ ওভার শেষে হাঁটুর চোট পেয়ে মাঠেই চিকিৎসা নিলেন রিশাভ পান্ত। একটু থমকে থাকল খেলা। ক্লাসেনের মনোযোগেও হয়তো চিড় ধরল। খেলা শুরু হতেই প্রথম ডেলিভারিতে অনেক বাইরের বল তাড়া করে আউট ক্লাসেন (২৭ বলে ৫২)।

পরের ওভারে বুমরাহ এসে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে মার্কো ইয়ানসেনকে বোল্ড করলেন। ওভারে রান দিলেন স্রেফ দুটি। ম্যাচ একটু একটু করে দূরে সরতে থাকল দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯তম ওভারে আর্শদীপ দিলেন কেবল চার রান।

শেষ ওভারে সমীকরণ দাঁড়াল ১৬ রানের। পান্ডিয়ার প্রথম বলটি উড়িয়ে মারলেন মিলার। চাপের মধ্যে সীমানায় অসাধারণ ক্যাচ নিলেন সুরিয়াকুমার। এরপর ভারতের জয় কেবল আনুষ্ঠানিকতা।

গৌরবময় ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় এসে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেন কোহলি। ম্যাচসেরা হয়ে তিনি এই সংস্করণ থেকে বিদায়ের ঘোষণাও দিলেন হাসিমুখে।

আর রোহিত শর্মা? ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের সাক্ষী, কয়েক মাস আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের পরাজিত নায়ক, এবার আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কত্ব থেকেও সরানো হয়েছে যাকে, তিনিই এখন টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অধিনায়ক।

গত এক বছরে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে যাওয়া দল, অনেক বছর ধরে একটি আইসিসি ট্রফির তেষ্টায় ছটফট করতে থাকা ভারত, অবশেষে পেল একটি বৈশ্বিক শিরোপার স্বপ্নময় পরশ।

বিষয়:

১৩ বছরের অপেক্ষার অবসান, ভারতে এলো বিশ্বকাপ

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:১৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

১৩ বছর আগে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে নুয়ান কুলাসেকেরার বলে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। সে ছক্কাই তাদের এনে দেয় বিশ্বকাপ। একটা বিশ্বকাপের জন্য এরপর থেকে হন্যে হয়ে ঘুরেছে টিম ইন্ডিয়া। সাতমাস আগেই নিজেদের মাটিতে হেরেছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল।

তবে এবার সে আক্ষেপ মিটল নিজ দেশ থেকে বহুদূরের মাটিতে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোজের কড়া রোদের নিচে আরেকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। ১৭ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছিল ম্যান ইন ব্লুরা। সেটা দিয়েই শিরোপার পথে নেমেছিল ধোনির ভারত। লম্বা অপেক্ষা শেষে আবারও সেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়েই শিরোপাখরা ঘুচালো দলটা।

বার্বাডোজে উৎসবের মঞ্চ আগেই সাজিয়ে রেখেছিল ভারত। ১৭৬ রানের শক্ত সংগ্রহ তারা দাঁড় করায় ফাইনালের মঞ্চে। বল হাতে শুরুটাও ছিল চ্যাম্পিয়নদের মতোই। মাঝে কুইন্টন ডি কক আর হেনরিখ ক্লাসেন দাঁড়ালেন দেয়াল হয়ে। এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার জয়টাও ছিল সময়ের ব্যাপার।

কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার নামের পাশে যে লেগে আছে চোকার্স তকমা। ২৪ বলে ২৬ রানের সমীকরণটাই আর মেলানো হয়নি তাদের। আর্শদ্বীপ সিং আর জাসপ্রিত বুমরাহ একের পর এক ডট ডেলিভারিতে চাপ বাড়িয়েছেন। সঙ্গী ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। স্নায়ুচাপের লড়াইয়ে জয় হলো ভারতেরই।

শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। হার্দিক পান্ডিয়ার ওই ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি লাইনে মিলারকে দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরালেন সুর্যকুমার যাদব। দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ শেষ হয়ে গেল সেখানেই। শেষ ওভারে এলো ৮ রান। ব্যর্থ হলো হেনরিখ ক্লাসেনের ২৭ বলে ৫৪ রানের দুর্দান্ত সেই ইনিংস। ৭ রানের জয়ে বিশ্বকাপের নতুন চ্যাম্পিয়ন ভারত।


ধ্রুপদী ক্রিকেট খেলা অনেক দল ভালো করতে পারেনি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরীক্ষিত দল তারা। শুধু কথায় নয়, নিজেদের সেই শক্তির জানানও দিয়েছে দলগুলো। উল্লেখিত দলগুলোর মধ্যে নিউজিল্যান্ড বাদে প্রত্যেকেই বিশ্ব মঞ্চে উঁচিয়ে ধরেছে শিরোপা। নামের পাশে একাধিক শিরোপাও আছে কোনো কোনো দলের। কিন্তু ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শেষ হওয়া বিশ্বকাপের এবারের আসরে নিজেদের সেই রূপটা তারা দেখাতে পারেনি। উল্টো বাজে পারফরম্যান্সে জন্ম দিয়েছে সমালোচনার।

টি-টোয়েন্টি মহাযজ্ঞের এবারের আসরের সেমিফাইনাল নিয়ে যতজন ভবিষ্যৎদ্বাণী করেছিলেন প্রায় সবার দলেই নাম ছিল ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের। কিন্তু ইংল্যান্ড বাদে কেউই সেটা পূরণ করতে পারেনি। সেমিফাইনালে গেলেও সেখানে লড়াইটা করতে পারেনি জস বাটলাররা।

বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে প্রথমবার আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হেরে যায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের সঙ্গে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরে যায় বাবর আজমের দল। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে একরকম বাদই পড়ে যায় তারা। শেষ ম্যাচে কানাডাকে হারিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখলেও যুক্তরাষ্ট্র-আয়ারল্যান্ডের ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বিদায় নিশ্চিত হয় তাদের।

বিশ্বকাপের আগে সম্ভাব্য সবকিছুই করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু সেসবের কেনো সুফলই দেখা গেল না ম্যাচে। মাত্র ক’দিন আগেও টি-টোয়েন্টির শীর্ষে থাকা দলটি নিজেদের সেই চেনা ক্রিকেটটা খেলতেই পারল না।

এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি আলোচনার জন্ম দেওয়া দলটির নাম নিউজিল্যান্ড। সময়ের সেরা দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসে তারাও বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। আফগানদের বিপক্ষে বড় এরপর ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেও সেই ধারা অব্যাহত রাখায় শুরুতেই শেষ হয় কেন উইলিয়ামসনদের বিশ্বকাপ।

এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দুই শক্তিশালী দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিক হওয়ায় ক্যারিবীয়দের শিরোপা জয়ের সম্ভনা ছিল প্রবল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা ছিল নিজেদের সেরা ছন্দে। দুর্দান্তভাবে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছিল দুই দলই। গ্রুপ পর্বের প্রতিপক্ষের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছে তারা। অপরাজিত থেকেই জায়গা করে নিয়েছিল সুপার এইটে। কিন্তু সেমিফাইনালের লড়াইয়ে নেমে তারা গ্রুপ পর্বের সেই ফর্মকে বেমালুম ভুলে যায়।

সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে পরাজিত করে, শুরু করে। কিন্তু শেষ দুই ম্যাচেই তারা হেরে যায়। শেষ দুই ম্যাচেই অচেনা অস্ট্রেলিয়ার দেখা মেলে। তারা পারফর্ম করতেই ভুলে যায়। বিশেষ করে আফগানিস্তানের বিপক্ষের ওই হার তাদের বিশ্বকাপ যাত্রাই থামিয়ে দেয়।

অন্যদিকে দুইবার বিশ্বকাপ জেতা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নিজেদের ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি। উল্টো প্রতিপক্ষের ফাঁদেই ফেঁসে গেছে তারা। সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পায়নি তারা। পরের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারালেও শেষ ম্যাচে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। সমাপ্তি ঘটে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বোলিংটা ছন্নছাড়া ছিল ক্যারিবীয়দের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল উল্টোটা; নিজেদের শক্তির জায়গা ব্যাটিংটাই করতে পারেনি তারা।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বেই বিদায়ের শঙ্কা জাগালেও সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু সেখানে ভারতের সঙ্গে লড়াইটাও করতে পারল না তারা। প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে ইংলিশরা। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারলে বিদায়ের শঙ্কা জাগে। তবে ওমান আর নামিবিয়াকে হারিয়ে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় তারা। সেখানে এক ম্যাচ হারলেও সবার আগেই জায়গা করে নেয় সেমিফাইনালে। সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ন্যূনতম লড়াইটা করতে পারেনি জস বাটলাররা।

নিজেদের সেই ট্র্যাডিশনাল ক্রিকেটটাই বিশ্বমঞ্চে খেলতে পারেনি এই দলগুলো। ফলাফল হিসেবে আগেই বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে আসর থেকে।


ট্রফি তুমি কার ভারত না দক্ষিণ আফ্রিকার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

২৯ দিনের জমজমাট ক্রিকেট মহারণ এবার শেষ হওয়ার পালা। সব প্রশ্ন আর সব সমীকরণের সমাপ্তিও ঘটবে। মিলে যাবে কোনো একটা দলের সব চাওয়া-পাওয়া। মাঠের একপাশে যখন আনন্দের মহোৎসবে উদ্বেলিত হবে একদল, ঠিক সেই সময়েই আরেক পাশে একরাশ বিষাদে পুড়বে আরেক দল। বিশ্বজয়ের আনন্দ আর হারানোর বেদনা দিয়েই শেষ হবে দিনটি। তার আগে অবশ্য মাঠের ক্রিকেটে হবে ব্লকবাস্টার লড়াই। দুই অপরাজেয়-অপ্রতিরোধ্য শক্তির লড়াই। যেই লড়াইয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে যাবে গ্যালারিতে থাকা হাজারো দর্শক থেকে শুরু করে টেলিভিশন সেটের সামনে থাকা কোটি দর্শককে। ২২ গজে হবে শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলিং ফাইট। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের মহাযজ্ঞের ফাইনাল লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি হবে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা। বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে দুই মহাদেশের লড়াই। বাংলাদেশ বেতারট্র খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বিশ্বকাপের দুই হট ফেভারিট ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরের অপরাজিত দুই দলও তারাই। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার এইট, সেমিফাইনাল; কেউ থামাতে পারেনি তাদের জয়রথ। নিজেদের সব প্রতিপক্ষদের হারের গ্লানি দিয়ে ফাইনালে তারা। তাই এটা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়, ফাইনালে লড়াইটা হবে সমানে সমান।

মুখোমুখি পরিসংখ্যান অবশ্য এগিয়ে রাখছে ভারতকেই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২৬ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৪টি ম্যাচে আর দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১১ ম্যাচে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। বিশ্বকাপের মুখোমুখি পরিসংখ্যানও কথা বলছে ভারতের পক্ষেই। ছয়বারের দেখায় ভারতের জয় চারটিতে। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় দুই ম্যাচে। তবে শেষ স্মৃতিটা সুখকর দক্ষিণ আফ্রিকার; বিশ্বকাপের গত আসরে ভারতকে হারিয়েছিল তারা।

ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের চেয়ে সাম্প্রতিক ফর্মটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিচারে এগিয়ে কারা? এমন প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর মেলানো বেশ কঠিন। তবে এবারের বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান বলছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি স্পিনারদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এবং সেটার ফায়দা লুটতে সিদ্ধহস্ত ভারতীয় স্পিনাররা। সেমিফাইনালেও যেটার দেখা মিলেছে।

কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে যেকোনো ‍মুহূর্তে। তাদের সেই সক্ষমতা তারা ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ডেথ বোলারও ভারতীয় জাসপ্রিত বুমরাহ। ভ্যারিয়েশন দিয়ে ব্যাটারদের বোকা বানাতে বেশ পটু হার্দিক পান্ডিয়া। সবমিলিয়ে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে বিশ্বসেরা বলাই যায়।

এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। প্রোটিয়া দুই স্পিনার তাবরাইজ শামস, কেশব মাহারাজরাও সময়ের অন্যতম সেরা স্পিনার। অধিনায়ক মার্করামও হাতটা ঘুরাতে পারেন বেশ। কাদিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, মার্কো জানসেনরা পেস আক্রমণে ভয়ংকর। মজার বিষয় হলো দুই দলেরই ফাইনালের সমীকরণ মেলানোর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বোলারদের। তবে কিছুটা হয়তো এগিয়ে থাকবে ভারতই।

ব্যাটিংয়ে সলিড দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক, রিজা হেন্ড্রিক্স, এইডেন মার্করাম, হেনরি ক্লাসেন, ট্রিস্তান স্টাবস, ডেভিড মিলাররা আছেন সময়ের সেরা ছন্দে। প্রত্যেক পারফর্ম করেছেন এবারের আসরে। নিজেদের দিনে দলকে টেনে তুলেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ ভারতের কপালে। পুরো আসরজুড়েই রান খরায় ভুগছে দলের সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। সেই পথেই আছেন আরেক ওপেনার ঋষভ পান্তও। অলরাউন্ডার শিবাম দুবেও শেষ কয়েকটি ম্যাচে ছন্দ হারিয়েছেন। যেটা কিছুট হলেও এগিয়ে রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

অবশ্য বাকিরা আছেন বেশ ভালো ছন্দে। রোহিত শর্মা ফিরেছেন আপন ছন্দে। শেষ দুই ম্যাচেই তিনি ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন। সুরিয়া কুমার, হার্দিক পান্ডিয়ারাও রোহিতের ধারা অব্যাহত রাখছেন।

সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারতের পরিসংখ্যান ভালো নয়। ঘরের মাঠে সবগুলো ম্যাচ জিতে ফাইনালে ভারত হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবার অবশ্য তেমন কিছু ঘটতে দিতে চায় না ভারত। অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দল হিসেবে আমাদের খুব শান্ত থাকতে হবে। কারণ, মাথা ঠাণ্ডা থাকলে ও চাপ না নিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ফাইনালে জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আমরা এবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। ফাইনালে একই পরিকল্পনায় খেলতে চাই।’

ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট সাতবার সেমিফাইনাল খেললেও ফাইনালে যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। অষ্টম সেমিফাইনালে এসে সেই ধারা কাটিয়ে এবার ফাইনালে উঠেছে তারা। ফাইনাল নিয়ে দলের অধিনায়ক আইডেন মার্করাম বলেন, ‘ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া বিশাল অর্জন। আমরা যখন বিশ্বকাপের জন্য আসি, শুধু ফাইনালে খেলতে আসিনি। আমরা অন্য সব দলের মতো ফাইনাল জিততে এসেছি।’

বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতে না পারলেও মিনি বিশ্বকাপে ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে সব ছাড়িয়ে ফাইনালেও বগড়া দিতে পারে বৃষ্টি। অ্যাকু ওয়েদার অনুযায়ী, শনিবার খেলার সময় আকাশ মেঘলা থাকবে। ম্যাচের দিন বজ্রবিদ্যুৎসহ ৪৭ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বার্বাডোজে খেলা শুরু স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। সেই সময় পূর্ব দিক থেকে ৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে হাওয়া বইবে। তিন মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। আর্দ্রতা থাকবে ৭৮ শতাংশ। তাপমাত্রা থাকবে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


পাত্তাই পেল না ভারতের কাছে ইংল্যান্ড

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল; সেটাকেই ব্যবহার করল ভারত। ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের ওপর রানের পাহাড়ের চাপ দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, সুরিয়া কুমার, হার্দিক পান্ডিয়ারা। বোলিংয়ে ইংলিশদের স্বপ্নে কাঁচি চালালেন দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল আর কুলদীপ জাদব। ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার উইকেট পড়তে না পারলেও ভারতীয় স্পিনাররা উইকেটের সবটুকু ফায়দা নিয়েছে। দুইজন মিলে শিকার করেছে ছয় উইকেট। তাতে লড়াইহীন এক হার দিয়েই আসর থেকে বিদায় নিয়েছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে এক দশক পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে ভারত। শিরোপা জয় থেকে তারা আর মাত্র এক ধাপ দূরে।

দুই বছর আগে বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। সে ম্যাচে ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল বাটলাররা। ভারতের করা ১৬৮ রান ইংল্যান্ড পেরিয়েছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ১৬ ওভারেই। আর গতকাল ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। প্রতিশোধ নিয়ে দুই বছর আগের সেই ক্ষতে প্রলেপ দিল রোহিত শর্মারা।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার মাঝেই রানের পাহাড় গড়ে তোলে ভারত। রোহিত শর্মার হাফসেঞ্চুরি, ‍সুরিয়া কুমারের পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ইনিংস, হার্দিক পান্ডিয়া আর রবীন্দ্র জাদেজার ছোট্ট ক্যামিওতে ১৭১ রানের পুঁজি দাঁড় করায় ভারত। সেটাকেই পাহাড় মনে হয় ইংল্যান্ডের কাছে। চাপা পড়ে পৃষ্ঠ হন বাটলার, বেয়ারস্টোরা। তাদের ব্যর্থতায় ১৬ ওভারে ১০৩ রানেই থামে ইংলিশদের ইনিংস। ৬৮ রানের বড় জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত।

১৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ করেনি ইংল্যান্ড। হাত খুলে খেলতে থাকেন অধিনায়ক বাটলার। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেন না তিনি। তাকে ফিরিয়ে আধিপত্যের শুরুটা করলেন ভারতীয় স্পিনাররা। ইংল্যান্ডের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ইংলিশদের কোমর ভেঙে দিলেন অক্ষর প্যাটেল। তার সঙ্গে যোগ দিল জাসপ্রিত বুমরাহ। পাওয়ার-প্লে শেষে যোগ দিলেন কুলদীপ জাদবও। এই ত্রয়ীর আক্রমণে আর দিশা খুঁজে পেল না ইংলিশরা।

বাটলারের পরে ফিল সল্ট, মঈন আলি, স্যাম কারান ও জনি বেয়ারস্টো দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। তাদের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তাতে দলীয় অর্ধশতকের আগেই ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর হ্যারি ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোন জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে ২৫ রান করে ব্রুক ফিরলে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় ইংলিশরা। একমাত্র ভরসা হয়ে থাকা লিভিংস্টোন রান আউটে কাটা পড়লে আর ফেরা হয়নি ইংলিশদের।

শেষদিকে জোফরা আর্চারের ১৫ বলে ২১ রানের ইনিংস কেবলই হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে অলআউট হয়েছে তারা। তাতে ৬৮ রানের জয় পেয়েছে ভারত।

ভারতীয় দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ জাদবের শিকার ৩টি করে উইকেট। দুটি উইকেট শিকার করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বাকি দুই উইকেট কাটা পড়েছে রানআউটে। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন অক্ষর।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিরাট কোহলিকে হারায় ভারত। তিনে নেমে কোহলির পথে হেঁটেছেন ঋষভ পান্তও। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও ভারতকে বিপদে পড়তে দেননি রোহিত। সূর্যকুমারকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি। ৩৬ বলে টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান রোহিত (৫৭)। অর্ধশতক করার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ফিফটি করার সুযোগ ছিল সূর্যকুমারের (৪৭) সামনেও। কিন্তু অর্ধশতক করতে পারেননি তিনি।

এরপর ভারতকে বড় ধাক্কাটা দেন ক্রিস জর্ডান। পরপর দুই বলে হার্দিক পান্ডিয়া ও শিবাম দুবেকে প্যাভিলিয়নে ফেরান ইংলিশ এ পেসার। শেষদিকে ৯ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।

ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন ক্রিস জর্ডান।


আফগানিস্তানের যেভাবে উত্থান সেভাবে পতন

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

বিশ্বকাপে আনপ্রেডিক্টেবল সৌন্দর্য দেখা বেশ আনন্দের। বিশ্ব আসরে তেমনই ব্যতিক্রম কিছু ঘটনার জন্ম দেয় দলগুলো; নিজেদেরকে নতুনভাবে পরিচিত করে তোলে বিশ্ব দরবারে। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের এবারের মহাযজ্ঞে সেই দলটির নাম আফগানিস্তান। আসরের শুরু থেকেই রূপকথার গল্প লিখতে শুরু করে আফগানরা। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু যেভাবে তাদের উত্থান, পতনটাও যেন সেভাবেই ঘটল।

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সাফল্যের পেছনে ছিল চারটি রহস্য। সেগুলোতে ভর করেই তারা প্রথমবার সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। তবে সেমিফাইনালের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণটাও করেছে সেই একই কারণে। ফলে শেষ হয়েছে তাদের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা।

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান সেমিফাইনালসহ মোট ৮টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয়ের গল্প লিখেছে ৫টিতে আর হারের ব্যর্থ অধ্যায় ৩টি ম্যাচে। আর এই ম্যাচগুলোতে চোখ বুলালেই মিলবে আফগানিস্তানের সাফল্য এবং ব্যর্থতার রহস্য।

আফগানদের সাফল্যের প্রথম রহস্য ছিল তাদের টপঅর্ডার ব্যাটারদের দুর্দান্ত ফর্ম। আরেকটু স্পষ্ট করলে দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান। আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনের স্তম্ভও তারাই। এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ৮ ইনিংসে ১২৪ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২৮১ রান। আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান সমান ইনিংস থেকে ১০৭ স্ট্রাইকরেটে ২৩১ রান করে আছেন তিন নম্বরে।

আফগানিস্তান যে পাঁচটি ম্যাচে জয় পেয়েছে সবগুলোতেই রান পেয়েছে এই দুই ব্যাটার। কিন্তু যে তিনটি ম্যাচ হেরেছে সেই ম্যাচগুলোতে তাদের ব্যাট থেকেও রান আসেনি। তারা আউট হওয়ার পরে বাকি ব্যাটাররাও দায়িত্বটা নিতে পারেনি। ফলে হারের গ্লানি পেয়েছে আফগানিস্তান।

দ্বিতীয় রহস্য তাদের বোলিং আক্রমণ। এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ ছিল আফগানিস্তানের। আফগানদের স্পিনের রাজা বলা হলেও এবারের বিশ্বকাপে তারা রাজত্ব করেছে পেস বোলিং দিয়ে। আর সেটার নেতৃত্ব দিয়েছেন ফজলজক ফারুকি। বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ উইকেট শিকার বোলারের মধ্যে তিনজনই আফগানিস্তানের। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে ফজলহক ফারুকি। ১৪ উইকেট নিয়ে তিন নম্বরে রশিদ খান আর ১৩ উইকেট নিয়ে পাঁচ নম্বরে নাভিন-উল-হক।

দুই ওপেনার যখন ন্যূনতম একটা ফাইটিং স্কোর এনে দিয়েছে তখন সেটাকে বেশ ভালোভাবেই ডিফেন্ড করেছে বোলাররা। প্রতিপক্ষের ওপর আগ্রাসী বোলিংয়ে জয়ের উপলক্ষ এনে দিয়েছে।

তৃতীয় রহস্য ছিল কন্ডিশন। আফগানিস্তান তাদের সবগুলো ম্যাচ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। যেখানে কন্ডিশন বরাবরই স্পিনারদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আর আফগান বোলাররা সেটাকে কাজে লাগিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, মোহাম্মদ নবিরা উইকেটের পুরো ফায়দা নিয়েছে। যেটা বড় ভূমিকা রেখেছে তাদের জয়ের পেছনে।

শুরুতে যেটা বলেছিলাম, ‘যেভাবে উত্থান, সেভাবেই পতন’। সেমিফাইনাল দেখলেই সেটা স্পষ্ট হবে। দুই আফগান ওপেনার ফিরে গেছে পাওয়ার-প্লের মধ্যেই এবং অন্যান্য ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও দায়িত্ব নিতে পারেননি বাকি ব্যাটাররা। ফলে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে আফগানিস্তান। যেটা শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫৬ রানেই থামিয়েছে তাদের ইনিংসকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে আসলে এই রান দিয়ে ফাইট করা সম্ভব নয় এবং হয়েছেও সেটাই; হেসেখেলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।


চোকার শব্দটি ক্যারিবীয় সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

কী দুর্দান্ত প্রতাপশালী পারফরম্যান্স; প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে প্রতিবার সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এর পরের গল্পটা সবারই জানা; সেমিফাইনালে দেখা মেলে এক অচেনা দক্ষিণ আফ্রিকার। সে ম্যাচে যেন খেলাই ভুলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এমন করে কেটে গেছে ৭টি বিশ্বকাপ। কিন্তু ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি প্রোটিয়াদের। নামের পাশেও তাই ঠাঁই পেয়েছে ‘চোকার্স’ শব্দটি। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আবারও এলো তেমনই একটি উপলক্ষ। তবে আর কোনো ভুল নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা হেঁটেছে সঠিক পথেই। ‘চোকার’ শব্দটিকে ক্যারিবীয় সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠে আনন্দে আত্মহারা আফগানিস্তান ডুবেছে গহিন সমুদ্রে। কল্পনাতীত বাজে পারফরম্যান্সে একরকম দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনাল উপহারই দিয়েছে তারা। সেমিফাইনালে দেখা মিলল না নূন্যতম লড়াইয়ের। বোলিং ইনিংসেই জয় নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করেছে নিশ্চিন্তে আপন মনে। ম্যাচ শেষ করেছে ১১ ওভার ১ বল বাকি থাকতেই।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মার্কো জানসেন আর তাবরাইজ শামসিদের বোলিং তোপে মোটে ৫৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫ রানের মাথায় কুইন্টন ডি কক ফিরলেও আর কোনো হতাশার অধ্যায় রচনা করতে দেয়নি এইডেন মার্করাম আর রিজা হেন্ড্রিকস। ৯ উইকেটের বড় জয়ে প্রথমবার ফাইনালে চলে গেল এইডেন মার্করামের দল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ইতিহাস গড়তে লক্ষ্যটা কেবলই ৫৭ রানের। কিন্তু এমন লক্ষ্যেও শুরুতে কিছুটা গড়বড় পাকিয়ে বসল প্রোটিয়া ব্যাটাররা। ফজলহক ফারুকির দারুণ এক ইনসুইং ডেলিভারিতে শুরুতেই ফিরে গেলেন ডি কক। এইডেন মার্করামও এসে ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেট কিপার গুরবাজের কাছে। কিন্তু বেঁচে যান আফগানদের ভুলে। মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গেলেও কোনো রিভিউ নেয়নি রশিদ খান। ম্যাচে এতটুকু লড়াই করতে পেরেছে আফগানরা। এরপর থেকে আর কোনো প্রকার ভুল করেননি মার্করাম এবং রিজা হেন্ড্রিকস। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো তুলে দেয় যেকোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে। নিজেদের ৮ম সেমিফাইনাল ম্যাচে এসে এমন সাফল্য পেল প্রোটিয়ারা। ৬৭ বল বাকি থাকতেই ফাইনাল নিশ্চিত করল তারা।

ম্যাচের ভাগ্যটা অবশ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসের পরেই। আরও স্পষ্ট করে বললে ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারে। বিশ্বকাপের পুরোটাজুড়েই ছিল বোলারদের আধিপত্য। সেমিফাইনালে আরও একবার দেখা গেল তা। পাওয়ারপ্লেতেই আফগানিস্তান হারাল ৫ উইকেট। বিশ্বকাপে এর আগে এমন বিপর্যয় দেখেছিল কেবল উগান্ডা, পাপুয়া নিউগিনি এবং আয়ারল্যান্ড।

আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর শুরুটা করলেন মার্কো জানসেন আর শেষ করলেন তাবরাইজ শামসি। মাঝখানে যোগ দিলেন কাগিসো রাবাদা আর আনরিখ নরকিয়াও। এরপর কিছু কি বাকি থাকার কথা আফগানদের! না আর কিছুই ছিল না।

প্রথম ওভারে গুরবাজ, তৃতীয় ওভারে গুলবাদিন নাইবকে ফেরালেন মার্কো জানসেন। চতুর্থ ওভারে কাগিসো রাবাদার শিকার মোহাম্মদ নবী আর ইব্রাহিম জাদরান। আফগানিস্তানের হারের শুরুটা হয়ে যায় সেখান থেকেই। পাওয়ারপ্লেতে আর কিছুই করা হয়নি তাদের। ১০ রান করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই ফিরলে একপ্রকার শেষই হয়ে আফগানিস্তানের ফাইনালের স্বপ্ন।

৫০ রানেই শেষ আরও তিন উইটেক। করিম জানাতকে ফিরিয়ে নিভু ‍নিভু করা মশালে বাতাস দিলেন তাবরাইজ শামসি। আর রশিদ খানকে ফিরিয়ে সেটাকে নিভিয়ে দিলেন আনরিখ নরকিয়া। শেষ পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা নিয়ে মাত্র ৫৬ রানেই অলআউট হতে হয় আফগানিস্তানকে। পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আফগানিস্তান নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ খেলতে এসেছিল গতকাল। আর সেখানেই দেখতে হলো ক্রিকেটের নির্মমতার চিত্র।

৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা হন মার্কো জানসেন। সমান সংখ্যক উইকেট শিকার তাবরাইজ শামসিরও। দুটি করে উইকেট রাবাদা আর নরকিয়ার।

বিষয়:

সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধ্যাত্ব কাটানোর খেলা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে কাল সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। অন্যদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালের মঞ্চে নামার সুযোগ হয়নি প্রোটিয়াদের। ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া অষ্টমবারের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিতে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা। কাল সকাল সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

দাপুটে জয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লেখানোর স্বপ্নের কথা জানালেন অধিনায়ক মার্করাম, ‘সেমিফাইনালে উঠতে পেরে দারুণ তৃপ্তি লাগছে। সেমিতে দাপটের সাথে জিততে চাই। আগের সাত ম্যাচে অনেক ভুল করেছি আমরা। আশা করি, সেমিতে পুরোনো ভুলগুলো হবে না। তবে এটি সত্যি, আমরা এখন পর্যন্ত দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত করেছে। পাশাপাশি ব্যাটিং ইউনিট সময়মত নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়েছে। আশা করি, সেমিতে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’

অন্যদিকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল স্বপ্নের মতো লাগছে আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের, ‘বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা, দল হিসেবে এটি আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। আমরা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছি, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর বিশ্বাসটা চলে আসে। এটি অবিশ্বাস্য। অনুভূতি বোঝানোর মতো ভাষা নেই আমার। এত বড় অর্জনে দেশের সবাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিয়ে অনেক খুশি।’

এ ম্যাচে মুখোমুখি পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে প্রোটিয়াদেরই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে হওয়া দুই দেখাতেই জয় প্রোটিয়াদের। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সেই আফগানিস্তান আর বর্তমান আফগানিস্তানের মধ্যে তফাতটা অনেক বেশি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরের অপরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের প্রথম চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষ ছিল- বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। অপরাজিত থাকার সেই ধারা ধরে রাখে সুপার এইট পর্বেও। প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর পরে বিধ্বস্ত করে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গ্রুপ পর্বের ৪ ও সুপার এইটের ৩ ম্যাচসহ টানা ৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বড় চমক দেয় তারা। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় রশিধ খানের দল। সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ধাক্কা খেলেও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আসে তারা।

এ মুহুর্তে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ কয়েক ম্যাচে রেজা হেন্ডরিক্স, কুইন্টন ডি কক, হেনরি ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করামরা তাদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে। বিধ্বংসী এ ব্যাটাররা একজনই বের করে নিতে পারেন ম্যাচ। বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, কেশাব মাহারাজরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

বিপরীতে যদিও ব্যাটার-বোলার দুই বিভাগরই আসরের সেরা ক্রিকেটার আফগানিস্তানের। কিন্তু বোলিংটাই মুল শক্তির জায়গা আফগানদের। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার ব্যর্থ হলে বাকিদের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা নিয় প্রশ্ন আছে। তিনটি ম্যাচে সেই প্রশ্ন তৈরি করেছে তারাই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, গুলবাদিন নাইব, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকিরা এই মুহুর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন সহায়ক উইকেটে চ্যালেঞ্জ জানাবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে বার বার তীরে এসে তরি ডুবায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’শব্দটি স্থায়ীভাবে লেপ্টে গেছে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেকে বিদায় নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ‘চোকার্স’ শব্দকে মুছে ফেলতে চায় তারা।


ফাটাফাটি লড়াই হবে ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৬ জুন, ২০২৪ ২২:৩০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০২২ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা। তৃতীয় শিরোপার লক্ষ্যে চলমান আসরের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ১০ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ভারত। এবারের টুর্নামেন্টর অপরাজেয় রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে ইংলিশদের লড়াইটা হবে গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় কাল রাত সাড়ে ৮টায় দেখা যাবে দুই দলের আধিপত্যের লড়াই। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ভারত। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত রোহিত-কোহলিরা। তাদের থামাতে পারেনি পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়াও। তাদের হারিয়েই সেমিফাইনালে ভারত। অন্যদিকে নানান সমীকরণ মিলিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। শঙ্কা জেগেছিল তাদের বিদায়েরই। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে জস বাটলারের দল।

২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। তাই সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জশ বাটলার বলেন, ‘আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নেবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নয়। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’

অন্যদিকে তৃতীয় ফাইনাল খেলার সুযোগ থাকছে ভারতের সামনে। ২০১৪ সালের পরে আর ফাইনালে খেলা হয়নি ভারতের। দীর্ঘদিন পরে পাওয়া সেই সুযোগ হারাতে চায় না ভারত। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবার মতো শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে শিরোপা হারালেও ২০২২ সালে আবার সেটা উদ্ধার করে পাকিস্তানকে হারিয়ে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শিরোপা হারায় শ্রীলঙ্কার কাছে। এরপর কখনো ফাইনালে খেলার সুযোগ হয়নি ভারতের।

সবশেষ আসরে সেমিফাইনালে উঠেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল ভারত। সে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। অ্যাডিলেডের সেই ম্যাচে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই স্মৃতিই ইংল্যান্ডকে শক্তি জোগাচ্ছে।

তবে ভারত-ইংল্যান্ডের লড়াই ছাপিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে গায়ানায় ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে ৮৮ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কোনো রিজার্ভ ডে রাখেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তবে ওই ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট রেখেছে আইসিসি। তাই কোনোভাবেই পরের দিন ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।

বৃষ্টির কারণে ম্যাচ আয়োজন সম্ভব না হলে কপাল পুড়বে ইংল্যান্ডের। আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট ব্যবধানে ভারত এগিয়ে থাকায় সরাসির ফাইনালে চলে যাবে ভারত।

সেমিফাইনালে দুই দলের লড়াইটা হবে তুমুল উত্তেজনার। দুই দলেরই আধিপত্যের লড়াই চলবে এ দিন। ভারতের লক্ষ্য থাকবে গত আসরের সেমিফানালে হারের প্রতিশোধ নেওয়া।


নতুন অধ্যায় রচনা করার লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান। সেই ইতিহাস ভেঙে এবার নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায় রশিদ খানরা। একটা জয় পেলেই বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে চলে যাবে তারা। তবে তার আগে আফগানদের দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। প্রথম সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনালে খেলেছে কিন্তু কোনোবারই উতরাতে পারেনি সেই বাধা। তাই দুই দলের সামনেই লক্ষ্য ফাইনাল নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে হতে যাচ্ছে একটি রেকর্ডও। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠবে নতুন কোনো দেশ; যারা এখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। সাতবার সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া অষ্টমবারের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিতে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠা আফগানিস্তানও ফাইনাল ব্যতীত অন্য কিছুতে চোখ দিতে নারাজ।

তবে মুখোমুখি পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে প্রোটিয়াদেরই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে হওয়া দুই দেখাতেই জয় প্রোটিয়াদের। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সেই আফগানিস্তান আর বর্তমান আফগানিস্তানের মধ্যে তফাৎটা অনেক বেশি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরের অপরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের প্রথম চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষ ছিল- বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। অপরাজিত থাকার সেই ধারা ধরে রাখে সুপার এইট পর্বেও। প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর পরে বিধ্বস্ত করে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গ্রুপ পর্বের ৪ ও সুপার এইটের ৩ ম্যাচসহ টানা ৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বড় চমক দেয় তারা। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় রশিধ খানের দল। সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ধাক্কা খেলেও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আসে তারা।

এ মুহূর্তে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ কয়েক ম্যাচে রেজা হেন্ডরিক্স, কুইন্টন ডি কক, হেনরি ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করামরা তাদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে। বিধ্বংসী এ ব্যাটাররা একজনই বের করে নিতে পারেন ম্যাচ। বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, কেশাব মাহারাজরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

বিপরীতে যদিও ব্যাটার-বোলার দুই বিভাগরই আসরের সেরা ক্রিকেটার আফগানিস্তানের। কিন্তু বোলিংটাই মুল শক্তির জায়গা আফগানদের। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার ব্যর্থ হলে বাকিদের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা নিয় প্রশ্ন আছে। তিনটি ম্যাচে সেই প্রশ্ন তৈরি করেছে তারাই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, গুলবাদিন নাইব, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকিরা এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন সহায়ক উইকেটে চ্যালেঞ্জ জানাবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে বার বার তীরে এসে তরি ডুবায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’ শব্দটি স্থায়ীভাবে লেপ্টে গেছে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেকে বিদায় নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ‘চোকার্স’ শব্দকে মুছে ফেলতে চায় তারা।


বহু আকাঙ্ক্ষিত সেমিফাইনালে আফগানিস্তান, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে বিদায় বাংলাদেশ

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

চলমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মহাযজ্ঞের আনপ্রেডিক্টেবল সৌন্দর্য আফগানিস্তান। লড়াকু এ দলটি যেটা করল সেটা কজনই আর ভেবেছিল! পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই তারা লিখে চলেছে একের পর এক রূপকথার উপাখ্যান। সেটাই তাদের নিয়ে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত লড়াকু জাতি আফগানরা; ক্রিকেট মাঠেও তাদের সেই ক্ষুরধার লড়াকু মনোভাবের কাছেই পরাস্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর শেষটা বাংলাদেশ। আর তাতেই লেখা হয়ে গেল নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল রশিদ-নবিরা।

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল কিন্তু আফগানরা কীভাবে ব্যবহার করে সেটাই দেখার অপেক্ষা ছিল। তবে ব্যাটিং ইনিংসটা ভালো হলো না আফগানিস্তানের। বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে গুটিয়ে গেল ১১৫ রানেই। এখানেই শেষটা লিখতে নারাজ রশিদ খানের দল। হারতে চায় না হারার আগে; অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করা তো তাদের রক্তেই মিশে আছে। এ দিনও করলেন সেটাই। শান্ত থেকে নিজেদের কাজ করে যেতে লাগলেন। শেষ বেলায় সাফল্যও পেয়ে গেলেন। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে জায়গা করে নিলেন সেমিফাইনালে।

ইতিহাস গড়ার সুযোগটা বাংলাদেশের সামনেও তৈরি হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হারে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জেগে ওঠে বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে সেই আশাকে আরও জাগিয়ে তুললেন বোলাররা। কিন্তু ব্যাটারদের ধারাবাহিক খামখেয়ালিতে হেলায় হারাল সুযোগ। সেমিফাইনালের আশা ধূলিসাৎ করে উল্টো হারের লজ্জায় পড়ল।

বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে ১২.১ ওভারে করতে হতো ১১৬ রান। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা মামুলি ব্যাপার নয়। হালের নেপাল, সিঙ্গাপুর, ওমানের মতো দলও এখন ১০ রানরেটে রান তোলে। কিন্তু স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্ম দিয়ে শান্তরা সেমিফাইনালে যেতে তো পারলেনই না, উল্টো আফগানিস্তানের কাছে শেষ ম্যাচটা হারলেন সম্ভাবনা জাগিয়ে! রান তুলতে গিয়ে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে একটা সময় সেমিফাইনালের সমীকরণটাই ভুলে যান বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শেষে তো জেতার সমীকরণও শান্তর দল মেলাতে পারেনি। এমন হারের পর ব্যাটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।

সেন্ট কিটসের কন্ডিশন যে মোস্তাফিজদের জন্য পয়মন্ত হবে সেটা অনুমেয়ই ছিল। ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল; উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে চেপে ধরলেন আফগান ব্যাটারদের। শুরুর দিকে উইকেটের দেখা না পেলেও চেপে ধরেছিল রানের গতি। ১১তম ওভারে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তানজিম সাকিব বাদে মোটামুটি সবাই দুর্দান্ত বল করেছেন। জবাবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ছাড়া আফগান ব্যাটারদের কেউই আসলে সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।

গতকালও বোলারদের ধারাবাহিকতায় অল্প রানে আফগানদের বেঁধে রেখেছিলেন মোস্তাফিজ-সাকিবরা। সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণটা কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব ছিল না। ৭২ বলে বাংলাদেশের করতে হতো ১১৬ রান। এ ধরনের চেজে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কম থাকলেও আধুনিক ক্রিকেটে দলগুলো অহরহ এমন রান তাড়া করছে।

ব্যাটিংয়ে শুরুটা বাংলাদেশ ভালোভাবেই করেছিল। কিন্তু সেটা আর ধরে রাখতে পারল কোথায়? লিটন দাস এক প্রান্তে চেষ্টা করে গেলেও বাকিরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা। ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ মেলাতে পারেনি ১২৪ বলে ১১৪ রানের সমীকরণও।

এ দিনও শূন্য রানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তানজিদ তামিম (০)। অধিনায়ক নাজমুল শান্ত (৫), সাকিব আল হাসান (০), সৌম্য সরকারও (১০) ফিরে যান দ্রুতই। তৌহিদ হৃদয় প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফিরেছেন ১৪ রানেই। ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ (৬), রিশাদ হোসাইনরা (০)। তাতেই লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের হার। আর আফগানদের ইতিহাস। ১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে তাসকিন আর মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে জয়ের স্ট্যাম্পে সিল মারেন নাভিন-উল-হক। মেতে ওঠেন বুনো উল্লাসে। স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভিজে ওঠে চোখ।

এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেও জয় নিয়ে ফিরতে পারেননি লিটন কুমার দাস। সমান চারটি করে উইকেট শিকার করেন রশিদ খান আর নাভিন-উল-হক।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১১ ওভার পর্যন্ত কোনো উইকেট না হারিয়ে খেলতে থাকেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান। ১১তম ওভারে জাদরানকে (১৮) ফিরিয়ে তাদের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসাইন। ১৭তম ওভারে গুরবাজকে ফেরালে প্রতিরোধ ভাঙে আফগানদের। তবে শেষদিকে রশিদ খান তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে রানটা একটু বাড়িয়ে নেন। সেটা ২০ ওভার শেষে ঠেকে ১১৫ রানে।

৪ ওভার বল করে রিশাদ শিকার করেন ৩ উইকেট। বাকিরাও ছিলেন বেশ কিপ্টে। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু তানজিম সাকিব। ৪ ওভারে তিনি খরচ করেছেন ৩৬ রান।


banner close