শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪

বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা

আপডেটেড
৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২১:১৯
বাসস
প্রকাশিত
বাসস
প্রকাশিত : ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ ২১:১৯

মিরপুরে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়েছে।
ভোর থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। এসময় পুরো মাঠ কভার দিয়ে ঢাকা ছিলো। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি আরও বাড়তে থাকলে । বেলা ১টা ৫৪ মিনিটে দ্বিতীয় দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষনা করেন ম্যাচ কর্মকর্তারা।

আগামীকাল তৃতীয় দিনের খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে।
গতকাল টেস্টের প্রথম দিন টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। স্পিন সহায়ক পিচে ব্যাট হাতে নেমে ৬৬ দশমিক ২ ওভারে ১৭২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে মুশফিকুর রহিম ৩৫, শাহাদাত হোসেন ৩১, মেহেদি হাসান মিরাজ ২০, মাহমুদুল হাসান জয় ১৪ ও নাইম হাসান অপরাজিত ১৩ রান করেন। নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ও গ্লেন ফিলিপস ৩টি করে উইকেট নেন।

এরপর দিনের শেষ সেশনে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ স্পিনারদের ঘুর্ণির মুখে পড়ে ৪৬ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। আলো স্বল্পতার কারনে দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হওয়ায় বাকী সময়ে আর কোন উইকেট হারায়নি নিউজিল্যান্ড। দিন শেষে ১২ দশমিক ৪ ওভারে ৫ উইকেটে ৫৫ রান করে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের মিরাজ ১৭ রানে ৩টি ও তাইজুল ২৯ রানে ২ উইকেট নেন।


ট্রফি তুমি কার ভারত না দক্ষিণ আফ্রিকার

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

২৯ দিনের জমজমাট ক্রিকেট মহারণ এবার শেষ হওয়ার পালা। সব প্রশ্ন আর সব সমীকরণের সমাপ্তিও ঘটবে। মিলে যাবে কোনো একটা দলের সব চাওয়া-পাওয়া। মাঠের একপাশে যখন আনন্দের মহোৎসবে উদ্বেলিত হবে একদল, ঠিক সেই সময়েই আরেক পাশে একরাশ বিষাদে পুড়বে আরেক দল। বিশ্বজয়ের আনন্দ আর হারানোর বেদনা দিয়েই শেষ হবে দিনটি। তার আগে অবশ্য মাঠের ক্রিকেটে হবে ব্লকবাস্টার লড়াই। দুই অপরাজেয়-অপ্রতিরোধ্য শক্তির লড়াই। যেই লড়াইয়ের উষ্ণতা ছুঁয়ে যাবে গ্যালারিতে থাকা হাজারো দর্শক থেকে শুরু করে টেলিভিশন সেটের সামনে থাকা কোটি দর্শককে। ২২ গজে হবে শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলিং ফাইট। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের মহাযজ্ঞের ফাইনাল লড়াইয়ে আজ মুখোমুখি হবে ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা। বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে দুই মহাদেশের লড়াই। বাংলাদেশ বেতারট্র খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বিশ্বকাপের দুই হট ফেভারিট ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকা। আসরের অপরাজিত দুই দলও তারাই। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে সুপার এইট, সেমিফাইনাল; কেউ থামাতে পারেনি তাদের জয়রথ। নিজেদের সব প্রতিপক্ষদের হারের গ্লানি দিয়ে ফাইনালে তারা। তাই এটা বলতে দ্বিধা থাকার কথা নয়, ফাইনালে লড়াইটা হবে সমানে সমান।

মুখোমুখি পরিসংখ্যান অবশ্য এগিয়ে রাখছে ভারতকেই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ২৬ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১৪টি ম্যাচে আর দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১১ ম্যাচে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে। বিশ্বকাপের মুখোমুখি পরিসংখ্যানও কথা বলছে ভারতের পক্ষেই। ছয়বারের দেখায় ভারতের জয় চারটিতে। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় দুই ম্যাচে। তবে শেষ স্মৃতিটা সুখকর দক্ষিণ আফ্রিকার; বিশ্বকাপের গত আসরে ভারতকে হারিয়েছিল তারা।

ক্রিকেটে পরিসংখ্যানের চেয়ে সাম্প্রতিক ফর্মটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিচারে এগিয়ে কারা? এমন প্রশ্নের সোজাসুজি উত্তর মেলানো বেশ কঠিন। তবে এবারের বিশ্বকাপের পরিসংখ্যান বলছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটি স্পিনারদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখছে। এবং সেটার ফায়দা লুটতে সিদ্ধহস্ত ভারতীয় স্পিনাররা। সেমিফাইনালেও যেটার দেখা মিলেছে।

কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজারা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে যেকোনো ‍মুহূর্তে। তাদের সেই সক্ষমতা তারা ইতোমধ্যেই দেখিয়েছে। বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ডেথ বোলারও ভারতীয় জাসপ্রিত বুমরাহ। ভ্যারিয়েশন দিয়ে ব্যাটারদের বোকা বানাতে বেশ পটু হার্দিক পান্ডিয়া। সবমিলিয়ে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে বিশ্বসেরা বলাই যায়।

এ ক্ষেত্রে খুব বেশি পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই দক্ষিণ আফ্রিকাকেও। প্রোটিয়া দুই স্পিনার তাবরাইজ শামস, কেশব মাহারাজরাও সময়ের অন্যতম সেরা স্পিনার। অধিনায়ক মার্করামও হাতটা ঘুরাতে পারেন বেশ। কাদিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, মার্কো জানসেনরা পেস আক্রমণে ভয়ংকর। মজার বিষয় হলো দুই দলেরই ফাইনালের সমীকরণ মেলানোর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বোলারদের। তবে কিছুটা হয়তো এগিয়ে থাকবে ভারতই।

ব্যাটিংয়ে সলিড দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক, রিজা হেন্ড্রিক্স, এইডেন মার্করাম, হেনরি ক্লাসেন, ট্রিস্তান স্টাবস, ডেভিড মিলাররা আছেন সময়ের সেরা ছন্দে। প্রত্যেক পারফর্ম করেছেন এবারের আসরে। নিজেদের দিনে দলকে টেনে তুলেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা চিন্তার ভাঁজ ভারতের কপালে। পুরো আসরজুড়েই রান খরায় ভুগছে দলের সেরা খেলোয়াড় বিরাট কোহলি। সেই পথেই আছেন আরেক ওপেনার ঋষভ পান্তও। অলরাউন্ডার শিবাম দুবেও শেষ কয়েকটি ম্যাচে ছন্দ হারিয়েছেন। যেটা কিছুট হলেও এগিয়ে রাখবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

অবশ্য বাকিরা আছেন বেশ ভালো ছন্দে। রোহিত শর্মা ফিরেছেন আপন ছন্দে। শেষ দুই ম্যাচেই তিনি ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন। সুরিয়া কুমার, হার্দিক পান্ডিয়ারাও রোহিতের ধারা অব্যাহত রাখছেন।

সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারতের পরিসংখ্যান ভালো নয়। ঘরের মাঠে সবগুলো ম্যাচ জিতে ফাইনালে ভারত হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এবার অবশ্য তেমন কিছু ঘটতে দিতে চায় না ভারত। অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দল হিসেবে আমাদের খুব শান্ত থাকতে হবে। কারণ, মাথা ঠাণ্ডা থাকলে ও চাপ না নিলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। ফাইনালে জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। আমরা এবার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছি। ফাইনালে একই পরিকল্পনায় খেলতে চাই।’

ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে মোট সাতবার সেমিফাইনাল খেললেও ফাইনালে যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। অষ্টম সেমিফাইনালে এসে সেই ধারা কাটিয়ে এবার ফাইনালে উঠেছে তারা। ফাইনাল নিয়ে দলের অধিনায়ক আইডেন মার্করাম বলেন, ‘ফাইনালে খেলার সুযোগ পাওয়া বিশাল অর্জন। আমরা যখন বিশ্বকাপের জন্য আসি, শুধু ফাইনালে খেলতে আসিনি। আমরা অন্য সব দলের মতো ফাইনাল জিততে এসেছি।’

বিশ্বকাপের ফাইনালে যেতে না পারলেও মিনি বিশ্বকাপে ১৯৯৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে সব ছাড়িয়ে ফাইনালেও বগড়া দিতে পারে বৃষ্টি। অ্যাকু ওয়েদার অনুযায়ী, শনিবার খেলার সময় আকাশ মেঘলা থাকবে। ম্যাচের দিন বজ্রবিদ্যুৎসহ ৪৭ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বার্বাডোজে খেলা শুরু স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে। সেই সময় পূর্ব দিক থেকে ৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে হাওয়া বইবে। তিন মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। আর্দ্রতা থাকবে ৭৮ শতাংশ। তাপমাত্রা থাকবে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।


পাত্তাই পেল না ভারতের কাছে ইংল্যান্ড

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল; সেটাকেই ব্যবহার করল ভারত। ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের ওপর রানের পাহাড়ের চাপ দিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা, সুরিয়া কুমার, হার্দিক পান্ডিয়ারা। বোলিংয়ে ইংলিশদের স্বপ্নে কাঁচি চালালেন দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল আর কুলদীপ জাদব। ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার উইকেট পড়তে না পারলেও ভারতীয় স্পিনাররা উইকেটের সবটুকু ফায়দা নিয়েছে। দুইজন মিলে শিকার করেছে ছয় উইকেট। তাতে লড়াইহীন এক হার দিয়েই আসর থেকে বিদায় নিয়েছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে এক দশক পরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছে গেছে ভারত। শিরোপা জয় থেকে তারা আর মাত্র এক ধাপ দূরে।

দুই বছর আগে বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে ভারতকে হারিয়েই ফাইনালে উঠেছিল ইংল্যান্ড। সে ম্যাচে ভারতকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিল বাটলাররা। ভারতের করা ১৬৮ রান ইংল্যান্ড পেরিয়েছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে মাত্র ১৬ ওভারেই। আর গতকাল ইংল্যান্ডকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। প্রতিশোধ নিয়ে দুই বছর আগের সেই ক্ষতে প্রলেপ দিল রোহিত শর্মারা।

গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে বৃষ্টির লুকোচুরি খেলার মাঝেই রানের পাহাড় গড়ে তোলে ভারত। রোহিত শর্মার হাফসেঞ্চুরি, ‍সুরিয়া কুমারের পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই ইনিংস, হার্দিক পান্ডিয়া আর রবীন্দ্র জাদেজার ছোট্ট ক্যামিওতে ১৭১ রানের পুঁজি দাঁড় করায় ভারত। সেটাকেই পাহাড় মনে হয় ইংল্যান্ডের কাছে। চাপা পড়ে পৃষ্ঠ হন বাটলার, বেয়ারস্টোরা। তাদের ব্যর্থতায় ১৬ ওভারে ১০৩ রানেই থামে ইংলিশদের ইনিংস। ৬৮ রানের বড় জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত।

১৭২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ করেনি ইংল্যান্ড। হাত খুলে খেলতে থাকেন অধিনায়ক বাটলার। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারলেন না তিনি। তাকে ফিরিয়ে আধিপত্যের শুরুটা করলেন ভারতীয় স্পিনাররা। ইংল্যান্ডের টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ইংলিশদের কোমর ভেঙে দিলেন অক্ষর প্যাটেল। তার সঙ্গে যোগ দিল জাসপ্রিত বুমরাহ। পাওয়ার-প্লে শেষে যোগ দিলেন কুলদীপ জাদবও। এই ত্রয়ীর আক্রমণে আর দিশা খুঁজে পেল না ইংলিশরা।

বাটলারের পরে ফিল সল্ট, মঈন আলি, স্যাম কারান ও জনি বেয়ারস্টো দ্রুত সাজঘরে ফেরেন। তাদের কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। তাতে দলীয় অর্ধশতকের আগেই ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপর হ্যারি ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোন জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে ২৫ রান করে ব্রুক ফিরলে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে যায় ইংলিশরা। একমাত্র ভরসা হয়ে থাকা লিভিংস্টোন রান আউটে কাটা পড়লে আর ফেরা হয়নি ইংলিশদের।

শেষদিকে জোফরা আর্চারের ১৫ বলে ২১ রানের ইনিংস কেবলই হারের ব্যবধান কমিয়েছে। শেষ পর্যন্ত ১০৩ রানে অলআউট হয়েছে তারা। তাতে ৬৮ রানের জয় পেয়েছে ভারত।

ভারতীয় দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ জাদবের শিকার ৩টি করে উইকেট। দুটি উইকেট শিকার করেন জাসপ্রিত বুমরাহ। বাকি দুই উইকেট কাটা পড়েছে রানআউটে। ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন অক্ষর।

এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিরাট কোহলিকে হারায় ভারত। তিনে নেমে কোহলির পথে হেঁটেছেন ঋষভ পান্তও। দ্রুত দুই উইকেট হারালেও ভারতকে বিপদে পড়তে দেননি রোহিত। সূর্যকুমারকে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি। ৩৬ বলে টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় ফিফটির দেখা পান রোহিত (৫৭)। অর্ধশতক করার পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। ফিফটি করার সুযোগ ছিল সূর্যকুমারের (৪৭) সামনেও। কিন্তু অর্ধশতক করতে পারেননি তিনি।

এরপর ভারতকে বড় ধাক্কাটা দেন ক্রিস জর্ডান। পরপর দুই বলে হার্দিক পান্ডিয়া ও শিবাম দুবেকে প্যাভিলিয়নে ফেরান ইংলিশ এ পেসার। শেষদিকে ৯ বলে ১৭ রান করে অপরাজিত ছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা।

ইংল্যান্ডের হয়ে ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন ক্রিস জর্ডান।


আফগানিস্তানের যেভাবে উত্থান সেভাবে পতন

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

বিশ্বকাপে আনপ্রেডিক্টেবল সৌন্দর্য দেখা বেশ আনন্দের। বিশ্ব আসরে তেমনই ব্যতিক্রম কিছু ঘটনার জন্ম দেয় দলগুলো; নিজেদেরকে নতুনভাবে পরিচিত করে তোলে বিশ্ব দরবারে। ক্রিকেটের ছোট সংস্করণের এবারের মহাযজ্ঞে সেই দলটির নাম আফগানিস্তান। আসরের শুরু থেকেই রূপকথার গল্প লিখতে শুরু করে আফগানরা। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নতুন শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে। কিন্তু যেভাবে তাদের উত্থান, পতনটাও যেন সেভাবেই ঘটল।

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের সাফল্যের পেছনে ছিল চারটি রহস্য। সেগুলোতে ভর করেই তারা প্রথমবার সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল। তবে সেমিফাইনালের মঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অসহায় আত্মসমর্পণটাও করেছে সেই একই কারণে। ফলে শেষ হয়েছে তাদের এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা।

এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তান সেমিফাইনালসহ মোট ৮টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে জয়ের গল্প লিখেছে ৫টিতে আর হারের ব্যর্থ অধ্যায় ৩টি ম্যাচে। আর এই ম্যাচগুলোতে চোখ বুলালেই মিলবে আফগানিস্তানের সাফল্য এবং ব্যর্থতার রহস্য।

আফগানদের সাফল্যের প্রথম রহস্য ছিল তাদের টপঅর্ডার ব্যাটারদের দুর্দান্ত ফর্ম। আরেকটু স্পষ্ট করলে দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান। আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইনের স্তম্ভও তারাই। এবারের আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ৮ ইনিংসে ১২৪ স্ট্রাইকরেটে করেছেন ২৮১ রান। আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান সমান ইনিংস থেকে ১০৭ স্ট্রাইকরেটে ২৩১ রান করে আছেন তিন নম্বরে।

আফগানিস্তান যে পাঁচটি ম্যাচে জয় পেয়েছে সবগুলোতেই রান পেয়েছে এই দুই ব্যাটার। কিন্তু যে তিনটি ম্যাচ হেরেছে সেই ম্যাচগুলোতে তাদের ব্যাট থেকেও রান আসেনি। তারা আউট হওয়ার পরে বাকি ব্যাটাররাও দায়িত্বটা নিতে পারেনি। ফলে হারের গ্লানি পেয়েছে আফগানিস্তান।

দ্বিতীয় রহস্য তাদের বোলিং আক্রমণ। এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণ ছিল আফগানিস্তানের। আফগানদের স্পিনের রাজা বলা হলেও এবারের বিশ্বকাপে তারা রাজত্ব করেছে পেস বোলিং দিয়ে। আর সেটার নেতৃত্ব দিয়েছেন ফজলজক ফারুকি। বিশ্বকাপের সেরা পাঁচ উইকেট শিকার বোলারের মধ্যে তিনজনই আফগানিস্তানের। ৮ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে সবার শীর্ষে ফজলহক ফারুকি। ১৪ উইকেট নিয়ে তিন নম্বরে রশিদ খান আর ১৩ উইকেট নিয়ে পাঁচ নম্বরে নাভিন-উল-হক।

দুই ওপেনার যখন ন্যূনতম একটা ফাইটিং স্কোর এনে দিয়েছে তখন সেটাকে বেশ ভালোভাবেই ডিফেন্ড করেছে বোলাররা। প্রতিপক্ষের ওপর আগ্রাসী বোলিংয়ে জয়ের উপলক্ষ এনে দিয়েছে।

তৃতীয় রহস্য ছিল কন্ডিশন। আফগানিস্তান তাদের সবগুলো ম্যাচ খেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে। যেখানে কন্ডিশন বরাবরই স্পিনারদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। আর আফগান বোলাররা সেটাকে কাজে লাগিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, মোহাম্মদ নবিরা উইকেটের পুরো ফায়দা নিয়েছে। যেটা বড় ভূমিকা রেখেছে তাদের জয়ের পেছনে।

শুরুতে যেটা বলেছিলাম, ‘যেভাবে উত্থান, সেভাবেই পতন’। সেমিফাইনাল দেখলেই সেটা স্পষ্ট হবে। দুই আফগান ওপেনার ফিরে গেছে পাওয়ার-প্লের মধ্যেই এবং অন্যান্য ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও দায়িত্ব নিতে পারেননি বাকি ব্যাটাররা। ফলে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে আফগানিস্তান। যেটা শেষ পর্যন্ত মাত্র ৫৬ রানেই থামিয়েছে তাদের ইনিংসকে।

দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে আসলে এই রান দিয়ে ফাইট করা সম্ভব নয় এবং হয়েছেও সেটাই; হেসেখেলেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।


চোকার শব্দটি ক্যারিবীয় সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

কী দুর্দান্ত প্রতাপশালী পারফরম্যান্স; প্রতিপক্ষকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে প্রতিবার সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু এর পরের গল্পটা সবারই জানা; সেমিফাইনালে দেখা মেলে এক অচেনা দক্ষিণ আফ্রিকার। সে ম্যাচে যেন খেলাই ভুলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে এমন করে কেটে গেছে ৭টি বিশ্বকাপ। কিন্তু ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি প্রোটিয়াদের। নামের পাশেও তাই ঠাঁই পেয়েছে ‘চোকার্স’ শব্দটি। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে আবারও এলো তেমনই একটি উপলক্ষ। তবে আর কোনো ভুল নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা হেঁটেছে সঠিক পথেই। ‘চোকার’ শব্দটিকে ক্যারিবীয় সমুদ্রে ছুড়ে ফেলে স্বপ্নের ফাইনালে পৌঁছে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে প্রথমবার সেমিফাইনালে উঠে আনন্দে আত্মহারা আফগানিস্তান ডুবেছে গহিন সমুদ্রে। কল্পনাতীত বাজে পারফরম্যান্সে একরকম দক্ষিণ আফ্রিকাকে ফাইনাল উপহারই দিয়েছে তারা। সেমিফাইনালে দেখা মিলল না নূন্যতম লড়াইয়ের। বোলিং ইনিংসেই জয় নিশ্চিত করা দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করেছে নিশ্চিন্তে আপন মনে। ম্যাচ শেষ করেছে ১১ ওভার ১ বল বাকি থাকতেই।

ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মার্কো জানসেন আর তাবরাইজ শামসিদের বোলিং তোপে মোটে ৫৬ রানেই অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৫ রানের মাথায় কুইন্টন ডি কক ফিরলেও আর কোনো হতাশার অধ্যায় রচনা করতে দেয়নি এইডেন মার্করাম আর রিজা হেন্ড্রিকস। ৯ উইকেটের বড় জয়ে প্রথমবার ফাইনালে চলে গেল এইডেন মার্করামের দল।

দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে ইতিহাস গড়তে লক্ষ্যটা কেবলই ৫৭ রানের। কিন্তু এমন লক্ষ্যেও শুরুতে কিছুটা গড়বড় পাকিয়ে বসল প্রোটিয়া ব্যাটাররা। ফজলহক ফারুকির দারুণ এক ইনসুইং ডেলিভারিতে শুরুতেই ফিরে গেলেন ডি কক। এইডেন মার্করামও এসে ক্যাচ তুলে দিলেন উইকেট কিপার গুরবাজের কাছে। কিন্তু বেঁচে যান আফগানদের ভুলে। মার্করামের ব্যাট ছুঁয়ে বল চলে গেলেও কোনো রিভিউ নেয়নি রশিদ খান। ম্যাচে এতটুকু লড়াই করতে পেরেছে আফগানরা। এরপর থেকে আর কোনো প্রকার ভুল করেননি মার্করাম এবং রিজা হেন্ড্রিকস। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানের জুটি দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথমবারের মতো তুলে দেয় যেকোনো বিশ্বকাপের ফাইনালে। নিজেদের ৮ম সেমিফাইনাল ম্যাচে এসে এমন সাফল্য পেল প্রোটিয়ারা। ৬৭ বল বাকি থাকতেই ফাইনাল নিশ্চিত করল তারা।

ম্যাচের ভাগ্যটা অবশ্য লেখা হয়ে গিয়েছিল আফগানিস্তানের প্রথম ইনিংসের পরেই। আরও স্পষ্ট করে বললে ইনিংসের প্রথম ৬ ওভারে। বিশ্বকাপের পুরোটাজুড়েই ছিল বোলারদের আধিপত্য। সেমিফাইনালে আরও একবার দেখা গেল তা। পাওয়ারপ্লেতেই আফগানিস্তান হারাল ৫ উইকেট। বিশ্বকাপে এর আগে এমন বিপর্যয় দেখেছিল কেবল উগান্ডা, পাপুয়া নিউগিনি এবং আয়ারল্যান্ড।

আফগানদের ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর শুরুটা করলেন মার্কো জানসেন আর শেষ করলেন তাবরাইজ শামসি। মাঝখানে যোগ দিলেন কাগিসো রাবাদা আর আনরিখ নরকিয়াও। এরপর কিছু কি বাকি থাকার কথা আফগানদের! না আর কিছুই ছিল না।

প্রথম ওভারে গুরবাজ, তৃতীয় ওভারে গুলবাদিন নাইবকে ফেরালেন মার্কো জানসেন। চতুর্থ ওভারে কাগিসো রাবাদার শিকার মোহাম্মদ নবী আর ইব্রাহিম জাদরান। আফগানিস্তানের হারের শুরুটা হয়ে যায় সেখান থেকেই। পাওয়ারপ্লেতে আর কিছুই করা হয়নি তাদের। ১০ রান করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই ফিরলে একপ্রকার শেষই হয়ে আফগানিস্তানের ফাইনালের স্বপ্ন।

৫০ রানেই শেষ আরও তিন উইটেক। করিম জানাতকে ফিরিয়ে নিভু ‍নিভু করা মশালে বাতাস দিলেন তাবরাইজ শামসি। আর রশিদ খানকে ফিরিয়ে সেটাকে নিভিয়ে দিলেন আনরিখ নরকিয়া। শেষ পর্যন্ত টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোরের লজ্জা নিয়ে মাত্র ৫৬ রানেই অলআউট হতে হয় আফগানিস্তানকে। পুরো বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে থাকা আফগানিস্তান নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ম্যাচ খেলতে এসেছিল গতকাল। আর সেখানেই দেখতে হলো ক্রিকেটের নির্মমতার চিত্র।

৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরা হন মার্কো জানসেন। সমান সংখ্যক উইকেট শিকার তাবরাইজ শামসিরও। দুটি করে উইকেট রাবাদা আর নরকিয়ার।

বিষয়:

সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্ধ্যাত্ব কাটানোর খেলা

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে কাল সকালে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান। অন্যদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনালে খেললেও ফাইনালের মঞ্চে নামার সুযোগ হয়নি প্রোটিয়াদের। ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া অষ্টমবারের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিতে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা। কাল সকাল সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

দাপুটে জয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে নাম লেখানোর স্বপ্নের কথা জানালেন অধিনায়ক মার্করাম, ‘সেমিফাইনালে উঠতে পেরে দারুণ তৃপ্তি লাগছে। সেমিতে দাপটের সাথে জিততে চাই। আগের সাত ম্যাচে অনেক ভুল করেছি আমরা। আশা করি, সেমিতে পুরোনো ভুলগুলো হবে না। তবে এটি সত্যি, আমরা এখন পর্যন্ত দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। বোলিং ইউনিট দুর্দান্ত করেছে। পাশাপাশি ব্যাটিং ইউনিট সময়মত নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়েছে। আশা করি, সেমিতে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’

অন্যদিকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল স্বপ্নের মতো লাগছে আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের, ‘বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা, দল হিসেবে এটি আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। আমরা যেভাবে টুর্নামেন্ট শুরু করেছি, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর বিশ্বাসটা চলে আসে। এটি অবিশ্বাস্য। অনুভূতি বোঝানোর মতো ভাষা নেই আমার। এত বড় অর্জনে দেশের সবাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের নিয়ে অনেক খুশি।’

এ ম্যাচে মুখোমুখি পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে প্রোটিয়াদেরই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে হওয়া দুই দেখাতেই জয় প্রোটিয়াদের। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সেই আফগানিস্তান আর বর্তমান আফগানিস্তানের মধ্যে তফাতটা অনেক বেশি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরের অপরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের প্রথম চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষ ছিল- বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। অপরাজিত থাকার সেই ধারা ধরে রাখে সুপার এইট পর্বেও। প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর পরে বিধ্বস্ত করে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গ্রুপ পর্বের ৪ ও সুপার এইটের ৩ ম্যাচসহ টানা ৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বড় চমক দেয় তারা। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় রশিধ খানের দল। সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ধাক্কা খেলেও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আসে তারা।

এ মুহুর্তে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ কয়েক ম্যাচে রেজা হেন্ডরিক্স, কুইন্টন ডি কক, হেনরি ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করামরা তাদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে। বিধ্বংসী এ ব্যাটাররা একজনই বের করে নিতে পারেন ম্যাচ। বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, কেশাব মাহারাজরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

বিপরীতে যদিও ব্যাটার-বোলার দুই বিভাগরই আসরের সেরা ক্রিকেটার আফগানিস্তানের। কিন্তু বোলিংটাই মুল শক্তির জায়গা আফগানদের। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার ব্যর্থ হলে বাকিদের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা নিয় প্রশ্ন আছে। তিনটি ম্যাচে সেই প্রশ্ন তৈরি করেছে তারাই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, গুলবাদিন নাইব, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকিরা এই মুহুর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন সহায়ক উইকেটে চ্যালেঞ্জ জানাবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে বার বার তীরে এসে তরি ডুবায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’শব্দটি স্থায়ীভাবে লেপ্টে গেছে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেকে বিদায় নিয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ‘চোকার্স’ শব্দকে মুছে ফেলতে চায় তারা।


ফাটাফাটি লড়াই হবে ভারত-ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে

ফাইল ছবি
আপডেটেড ২৬ জুন, ২০২৪ ২২:৩০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টির বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০২২ সালে পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তুলেছিল তারা। তৃতীয় শিরোপার লক্ষ্যে চলমান আসরের সেমিফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ১০ বছর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা ভারত। এবারের টুর্নামেন্টর অপরাজেয় রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে ইংলিশদের লড়াইটা হবে গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ সময় কাল রাত সাড়ে ৮টায় দেখা যাবে দুই দলের আধিপত্যের লড়াই। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ভারত। গ্রুপ পর্ব, সুপার এইট মিলিয়ে টানা সাত ম্যাচ অপরাজিত রোহিত-কোহলিরা। তাদের থামাতে পারেনি পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়াও। তাদের হারিয়েই সেমিফাইনালে ভারত। অন্যদিকে নানান সমীকরণ মিলিয়ে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। শঙ্কা জেগেছিল তাদের বিদায়েরই। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে জস বাটলারের দল।

২০১০, ২০১৬ ও ২০২২ সালের পর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। তাই সেমিফাইনালে জয় ছাড়া অন্য কিছুই ভাবছে না ইংলিশরা। দলের অধিনায়ক জশ বাটলার বলেন, ‘আমাদের সামনে চতুর্থ ফাইনাল খেলার সুযোগ। ফাইনালে খেলার সুযোগ যে কেউ লুফে নেবে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নয়। ফাইনালে খেলতে দলের সবাই মুখিয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য ফাইনাল খেলা।’

অন্যদিকে তৃতীয় ফাইনাল খেলার সুযোগ থাকছে ভারতের সামনে। ২০১৪ সালের পরে আর ফাইনালে খেলা হয়নি ভারতের। দীর্ঘদিন পরে পাওয়া সেই সুযোগ হারাতে চায় না ভারত। দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘ দিন পর ফাইনালে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের সামনে। এই সুযোগ কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে রাজি নই আমরা। ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে সেমির লড়াইয়ে নামবে দল।’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ২০১০ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরে প্রথমবার মতো শিরোপা ঘরে তোলে ইংল্যান্ড। ২০১৬ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে শিরোপা হারালেও ২০২২ সালে আবার সেটা উদ্ধার করে পাকিস্তানকে হারিয়ে। অন্যদিকে ২০০৭ সালে হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শিরোপা হারায় শ্রীলঙ্কার কাছে। এরপর কখনো ফাইনালে খেলার সুযোগ হয়নি ভারতের।

সবশেষ আসরে সেমিফাইনালে উঠেছিল বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল ভারত। সে ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। অ্যাডিলেডের সেই ম্যাচে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই স্মৃতিই ইংল্যান্ডকে শক্তি জোগাচ্ছে।

তবে ভারত-ইংল্যান্ডের লড়াই ছাপিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে গায়ানায় ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচে ৮৮ শতাংশ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভারত-ইংল্যান্ডের মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কোনো রিজার্ভ ডে রাখেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। তবে ওই ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত ৪ ঘণ্টা ১০ মিনিট রেখেছে আইসিসি। তাই কোনোভাবেই পরের দিন ম্যাচ আয়োজনের কোনো সুযোগ নেই।

বৃষ্টির কারণে ম্যাচ আয়োজন সম্ভব না হলে কপাল পুড়বে ইংল্যান্ডের। আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট ব্যবধানে ভারত এগিয়ে থাকায় সরাসির ফাইনালে চলে যাবে ভারত।

সেমিফাইনালে দুই দলের লড়াইটা হবে তুমুল উত্তেজনার। দুই দলেরই আধিপত্যের লড়াই চলবে এ দিন। ভারতের লক্ষ্য থাকবে গত আসরের সেমিফানালে হারের প্রতিশোধ নেওয়া।


নতুন অধ্যায় রচনা করার লক্ষ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা-আফগানিস্তান

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আফগানিস্তান। সেই ইতিহাস ভেঙে এবার নতুন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায় রশিদ খানরা। একটা জয় পেলেই বিশ্বমঞ্চের ফাইনালে চলে যাবে তারা। তবে তার আগে আফগানদের দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা। প্রথম সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। যারা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাতবার সেমিফাইনালে খেলেছে কিন্তু কোনোবারই উতরাতে পারেনি সেই বাধা। তাই দুই দলের সামনেই লক্ষ্য ফাইনাল নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে ৬টায় ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসরের প্রথম সেমিফাইনালে হতে যাচ্ছে একটি রেকর্ডও। প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠবে নতুন কোনো দেশ; যারা এখনো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেনি। সাতবার সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালে খেলতে না পারার বন্ধ্যত্ব এবার ঘোচাতে মরিয়া অষ্টমবারের মতো আইসিসি টুর্নামেন্টের সেমিতে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্যদিকে প্রথমবার সেমিফাইনালে ওঠা আফগানিস্তানও ফাইনাল ব্যতীত অন্য কিছুতে চোখ দিতে নারাজ।

তবে মুখোমুখি পরিসংখ্যান এগিয়ে রাখছে প্রোটিয়াদেরই। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে দুইবার মুখোমুখি হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে হওয়া দুই দেখাতেই জয় প্রোটিয়াদের। ২০১০ সালে ৫৯ রানে এবং ২০১৬ সালে ৩৭ রানে জয় পেয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, সেই আফগানিস্তান আর বর্তমান আফগানিস্তানের মধ্যে তফাৎটা অনেক বেশি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরের অপরাজিত দল দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ পর্বে ৪ ম্যাচের সবগুলোতে জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের প্রথম চ্যালেঞ্জে প্রতিপক্ষ ছিল- বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও নেপাল। অপরাজিত থাকার সেই ধারা ধরে রাখে সুপার এইট পর্বেও। প্রথম ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানোর পরে বিধ্বস্ত করে ইংল্যান্ড আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। গ্রুপ পর্বের ৪ ও সুপার এইটের ৩ ম্যাচসহ টানা ৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্যদিকে এবারের বিশ্বকাপে দারুণ শুরু করেছিল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বড় চমক দেয় তারা। তবে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। সব মিলিয়ে তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইটে জায়গা করে নেয় রশিধ খানের দল। সুপার এইটের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ধাক্কা খেলেও শেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আসে তারা।

এ মুহূর্তে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ কয়েক ম্যাচে রেজা হেন্ডরিক্স, কুইন্টন ডি কক, হেনরি ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, এইডেন মার্করামরা তাদের ভয়ঙ্কর রূপ দেখিয়েছে। বিধ্বংসী এ ব্যাটাররা একজনই বের করে নিতে পারেন ম্যাচ। বোলিংয়ে কাগিসো রাবাদা, আনরিখ নরকিয়া, কেশাব মাহারাজরা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

বিপরীতে যদিও ব্যাটার-বোলার দুই বিভাগরই আসরের সেরা ক্রিকেটার আফগানিস্তানের। কিন্তু বোলিংটাই মুল শক্তির জায়গা আফগানদের। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার ব্যর্থ হলে বাকিদের দায়িত্ব নেওয়ার সক্ষমতা নিয় প্রশ্ন আছে। তিনটি ম্যাচে সেই প্রশ্ন তৈরি করেছে তারাই। রশিদ খান, নুর আহমেদ, গুলবাদিন নাইব, নাভিন-উল-হক, ফজলহক ফারুকিরা এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে রয়েছে তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিন সহায়ক উইকেটে চ্যালেঞ্জ জানাবে প্রোটিয়া ব্যাটারদের।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমে বার বার তীরে এসে তরি ডুবায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেওয়ায় প্রোটিয়াদের গায়ে ‘চোকার্স’ শব্দটি স্থায়ীভাবে লেপ্টে গেছে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেকে বিদায় নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ‘চোকার্স’ শব্দকে মুছে ফেলতে চায় তারা।


বহু আকাঙ্ক্ষিত সেমিফাইনালে আফগানিস্তান, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ নিয়ে বিদায় বাংলাদেশ

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

চলমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মহাযজ্ঞের আনপ্রেডিক্টেবল সৌন্দর্য আফগানিস্তান। লড়াকু এ দলটি যেটা করল সেটা কজনই আর ভেবেছিল! পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই তারা লিখে চলেছে একের পর এক রূপকথার উপাখ্যান। সেটাই তাদের নিয়ে গেল বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পর্যন্ত। যুদ্ধবিধ্বস্ত লড়াকু জাতি আফগানরা; ক্রিকেট মাঠেও তাদের সেই ক্ষুরধার লড়াকু মনোভাবের কাছেই পরাস্ত হয়েছে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর শেষটা বাংলাদেশ। আর তাতেই লেখা হয়ে গেল নতুন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল রশিদ-নবিরা।

মঞ্চটা প্রস্তুতই ছিল কিন্তু আফগানরা কীভাবে ব্যবহার করে সেটাই দেখার অপেক্ষা ছিল। তবে ব্যাটিং ইনিংসটা ভালো হলো না আফগানিস্তানের। বাংলাদেশের বোলারদের তোপের মুখে গুটিয়ে গেল ১১৫ রানেই। এখানেই শেষটা লিখতে নারাজ রশিদ খানের দল। হারতে চায় না হারার আগে; অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করা তো তাদের রক্তেই মিশে আছে। এ দিনও করলেন সেটাই। শান্ত থেকে নিজেদের কাজ করে যেতে লাগলেন। শেষ বেলায় সাফল্যও পেয়ে গেলেন। বাংলাদেশকে ৮ রানে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে জায়গা করে নিলেন সেমিফাইনালে।

ইতিহাস গড়ার সুযোগটা বাংলাদেশের সামনেও তৈরি হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হারে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা জেগে ওঠে বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে সেই আশাকে আরও জাগিয়ে তুললেন বোলাররা। কিন্তু ব্যাটারদের ধারাবাহিক খামখেয়ালিতে হেলায় হারাল সুযোগ। সেমিফাইনালের আশা ধূলিসাৎ করে উল্টো হারের লজ্জায় পড়ল।

বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে ১২.১ ওভারে করতে হতো ১১৬ রান। আধুনিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা মামুলি ব্যাপার নয়। হালের নেপাল, সিঙ্গাপুর, ওমানের মতো দলও এখন ১০ রানরেটে রান তোলে। কিন্তু স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচের জন্ম দিয়ে শান্তরা সেমিফাইনালে যেতে তো পারলেনই না, উল্টো আফগানিস্তানের কাছে শেষ ম্যাচটা হারলেন সম্ভাবনা জাগিয়ে! রান তুলতে গিয়ে নিয়মিত উইকেট হারিয়ে একটা সময় সেমিফাইনালের সমীকরণটাই ভুলে যান বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শেষে তো জেতার সমীকরণও শান্তর দল মেলাতে পারেনি। এমন হারের পর ব্যাটারদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।

সেন্ট কিটসের কন্ডিশন যে মোস্তাফিজদের জন্য পয়মন্ত হবে সেটা অনুমেয়ই ছিল। ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল; উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে চেপে ধরলেন আফগান ব্যাটারদের। শুরুর দিকে উইকেটের দেখা না পেলেও চেপে ধরেছিল রানের গতি। ১১তম ওভারে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। তানজিম সাকিব বাদে মোটামুটি সবাই দুর্দান্ত বল করেছেন। জবাবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ছাড়া আফগান ব্যাটারদের কেউই আসলে সেভাবে প্রতিরোধ গড়তে পারেননি।

গতকালও বোলারদের ধারাবাহিকতায় অল্প রানে আফগানদের বেঁধে রেখেছিলেন মোস্তাফিজ-সাকিবরা। সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণটা কঠিন হলেও একেবারে অসম্ভব ছিল না। ৭২ বলে বাংলাদেশের করতে হতো ১১৬ রান। এ ধরনের চেজে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কম থাকলেও আধুনিক ক্রিকেটে দলগুলো অহরহ এমন রান তাড়া করছে।

ব্যাটিংয়ে শুরুটা বাংলাদেশ ভালোভাবেই করেছিল। কিন্তু সেটা আর ধরে রাখতে পারল কোথায়? লিটন দাস এক প্রান্তে চেষ্টা করে গেলেও বাকিরা যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সেমিফাইনালের আশা। ব্যাটারদের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ মেলাতে পারেনি ১২৪ বলে ১১৪ রানের সমীকরণও।

এ দিনও শূন্য রানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তানজিদ তামিম (০)। অধিনায়ক নাজমুল শান্ত (৫), সাকিব আল হাসান (০), সৌম্য সরকারও (১০) ফিরে যান দ্রুতই। তৌহিদ হৃদয় প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফিরেছেন ১৪ রানেই। ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ (৬), রিশাদ হোসাইনরা (০)। তাতেই লেখা হয়ে যায় বাংলাদেশের হার। আর আফগানদের ইতিহাস। ১৯তম ওভারে পরপর দুই বলে তাসকিন আর মুস্তাফিজকে ফিরিয়ে জয়ের স্ট্যাম্পে সিল মারেন নাভিন-উল-হক। মেতে ওঠেন বুনো উল্লাসে। স্বপ্ন পূরণের আনন্দে ভিজে ওঠে চোখ।

এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়লেও জয় নিয়ে ফিরতে পারেননি লিটন কুমার দাস। সমান চারটি করে উইকেট শিকার করেন রশিদ খান আর নাভিন-উল-হক।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১১ ওভার পর্যন্ত কোনো উইকেট না হারিয়ে খেলতে থাকেন দুই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান। ১১তম ওভারে জাদরানকে (১৮) ফিরিয়ে তাদের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসাইন। ১৭তম ওভারে গুরবাজকে ফেরালে প্রতিরোধ ভাঙে আফগানদের। তবে শেষদিকে রশিদ খান তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে রানটা একটু বাড়িয়ে নেন। সেটা ২০ ওভার শেষে ঠেকে ১১৫ রানে।

৪ ওভার বল করে রিশাদ শিকার করেন ৩ উইকেট। বাকিরাও ছিলেন বেশ কিপ্টে। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু তানজিম সাকিব। ৪ ওভারে তিনি খরচ করেছেন ৩৬ রান।


মা হারালেন পাইলট

মা নার্গিস আরা বেগমের সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৫ জুন, ২০২৪ ১৫:১৬
ক্রীড়া প্রতিবেদক

মা হারিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তার মা নার্গিস আরা বেগম (৭২) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস লিখে বিষয়টি নিজেই জানিয়েছেন খালেদ মাসুদ পাইলট। তার মা বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় থাকতেন।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, নার্গিস আরা বেগমের উচ্চ রক্তচাপ ছিল। শরীরে লবণের সংকট ছিল। এ ছাড়া তিনি হৃদ্‌রোগ, কিডনি, ডায়াবেটিস ও থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছিলেন। এসব জটিলতা নিয়ে গতকাল সোমবার তাকে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে খালেদ মাসুদ পাইলট তার মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া চেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বাদ এশা নগরীর টিকাপাড়া কবরস্থানে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

পাইলটের মায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি মরহুমার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন। পাশাপাশি তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।


বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিতে আফগানিস্তান

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইটের পর বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে আফগানিস্তানের দেওয়া ১১৬ রানের লক্ষ্য ১২.১ ওভারের মধ্যে তাড়া করতে হতো। তা আর হলো না, ম্যাচটাই হারলো নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

৮ রানের এই জয়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল নিশ্চিত করলো আফগানিস্তান। তাতে সুপার এইট থেকে বিদায় নিলো বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া।

আজ মঙ্গলবার কিংস্টনে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান তুলে আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। ম্যাচের মাঝে বৃষ্টি হানা দিলে ডিএলএসে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৯ ওভারে ১১৪ রানে। জবাবে খেলতে নেমে ১৭ ওভার ৫ বলে ১০৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই নাভিন উল হককে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে শুরু করেন লিটন দাস। তবে পরের ওভারেই ফজল হক ফারুকিকে উইকেট দিয়েছেন তানজিদ তামিম। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের বাইরে গুড লেংথে করেছিলেন ফারুকি। সেখানে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তানজিদ তামিম। ৩ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।

তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তও। উইকেটে এসেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে নাভিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫ বলে ৫ রান।

পরের বলেই সাকিব আল হাসানকেও ফিরিয়েছেন নাভিন। চারে নেমে গোল্ডেন ডাক খেয়েছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। একাদশে ফেরা সৌম্য ভালো শুরু পেয়েও তা কাজে লাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ১০ বল খেলে করেছেন ১০ রান।

তাওহিদ হৃদয় উইকেটে এসে শুরু থেকেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন। তবে এদিন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রশিদের শিকার হওয়ার আগে ৯ বলে করেছেন ১৪ রান।

মাহমুদউল্লাহ যখন উইকেটে আসেন তখনও বাংলাদেশের সেমির সমীকরণ বাস্তব ছিল। ১৯ বলে যখন ৪৩ রান দরকার তখন দশম ওভারে ৫ বল ডট খেলেন মাহমুদউল্লাহ। সে ওভার থেকে আসে মাত্র ৪ রান। এতেই সেমির স্বপ্ন ম্লান হয় টাইগারদের। পরের ওভারে রশিদের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ৯ বল খেলে ৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। পরের বলেই রিশাদ হোসেনকেও ফেরান রশিদ।

সেমির সুযোগ নষ্ট করে ম্যাচ থেকেও ছিটকে যায় বাংলাদেশ। এক প্রান্তে লিটন দাস দাঁড়িয়ে থাকলেও আরেক প্রান্তে ছিল ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মিছিল। তাতে কোনোরকমে একশ পেরিয়ে অলআউট হয় টাইগাররা। লিটন শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রান করে।

এর আগে বোলিংয়ে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে দুই পেসার তানজিম সাকিব ও তাসকিন আহমেদ শুরুতে ভালো সুইং পেয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাওয়ার প্লেতে রানের লাগাম টেনে ধরে বাংলাদেশ। তবে আফগানিস্তান কোনো উইকেট হারায়নি। দেখে-শুনে খেলার চেষ্টা করেছেন দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান।

ইনিংসের নবম ওভারে প্রথমবার আক্রমণে আসেন রিশাদ হোসেন। আর নিজেদের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে উইকেটের দেখা পেয়েছেন তিনি। ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে আফগান শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন এই লেগ স্পিনার। ১৮ রান করে ইব্রাহিম ফেরায় ভাঙে ৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।

তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি আজমতউল্লাহ ওমরজাই। মুস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়ার আগে ১২ বলে ১০ রান করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার।

ধীরগতির ব্যাটিং করা গুরবাজ শেষ পর্যন্ত সাজ ঘরে ফেরেন রানের গতি বাড়াতে গিয়ে। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে রিশাদকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৫ বলে ৪৩ রান। একই ওভারের চতুর্থ বলে গুলবাদিন নাইবকেও ফিরিয়েছেন রিশাদ।

এরপর মোহাম্মদ নবি-করিম জানাতরা চেষ্টা করেও রানের গতি বাড়াতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে শেষ দিকে উইকেটে এসে ১০ বলে অপরাজিত ১৯ রানের ইনিংস খেলে আফগানদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন রশিদ খান। ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান। যদিও ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইনিংসের সেরা বোলার রিশাদ।


ক্যারিবীয়দের দুরমুশ ব্যাটিং সাম্রাজ্য শাসন করে দ. আফ্রিকা সেমিফাইনালে

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বড় শক্তির জায়গা ব্যাটিং। বিপরীতে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে দক্ষ হলেও বিশ্বকাপের এবারের আসরের বেশির ভাগ ম্যাচেই তারা বাজিমাত করেছে বোলিং দিয়ে। এ ম্যাচে তাই ক্যারিবীয় অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ব্যাটিং বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার সংহারপূর্ণ বোলিংয়ের লড়াই হবে; এমনটাই অনুমেয় ছিল। ২২ গজেও সেটাই দেখা গেল। তবে সেই লড়াইয়ে জয়ী হলো প্রোটিয়া বোলাররাই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং সাম্রাজ্য শাসন করে অপরাজিত থেকে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিল চোকার্স-খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকা।

ইংল্যান্ড রাতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করায় এ ম্যাচটা দুই দলের জন্যই পরিণত হয়েছিল ডু অর ডাই। যারা জিতবে তারাই জায়গা করে নেবে সেমিফাইনালে। ঘরের মাঠে নিজ দেশকে শুভ কামনা জানাতে তাই গ্যালারি পূর্ণ করেছিল ক্যারিবীয় সমর্থকরা। শেষদিকের উত্তেজনায় উৎসবে মেতেছিল তারা। কিন্তু মার্কো ইয়ানসেনের এক ছক্কাতেই মিলিয়ে যায় সেই উৎসব। নীরবতা নেমে আসে স্যার ভিডিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে। বৃষ্টি আইনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তিন উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনালে চলে গেল এইডেন মার্করামরা।

বিশ্বকাপের এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্যে দেখা যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকাকে। তবে সুপার এইটে এসে পুরোটাই বদলে গেছে তারা। নিজেদের ছন্দ খুঁজে পেয়েছে। অন্যদিকে বিপরীত চিত্র ওয়েস্ট ইন্ডিজ শিবিরে। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলে ক্যারিবীয়রা ছন্দ হারিয়েছে সুপার এইটে এসে। প্রথম ম্যাচেই ইংলিশদের কাছে হেরে যায় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালের আশা জাগালেও; দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরে সেটা ফিকে হয়ে গেল।

ক্যারিবীয়রাও পুড়েছে পুরোনো অভিশাপেই। এর আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু কোনো দেশই স্বাগতিক হিসেবে ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারেনি। একই পরিণতি হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের।

স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সোমবার সকালে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ক্যারিবিয়ানদের ১৩৫ রানে আটকে রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়াদের রান তাড়ায় দুই ওভারের পর বৃষ্টি নেমে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। পরে বৃষ্টি আইনে নতুন লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ১৭ ওভারে ১২৩। নানা নাটকীয়তা পেরিয়ে সেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা ৩ উইকেট ৫ বল বাকি থাকতেই।

এ ম্যাচে স্কোয়াড সাজাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। উইকেট ও কন্ডিশনকে মাথায় রেখে একাদশে ফেরায় লেগস্পিনার তাবরিশ শামসিকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশা ভেঙে দেন তিনিই। ব্যাটারদের ব্যর্থতার দিনে আশা হয়ে থাকা দুই ক্যারিবীয় ব্যাটার কেইল মায়ার্স আর রোস্টন চেইজকে ফিরিয়ে তিনি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। তিন উইকেট শিকার করে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনিই। অন্য দুই স্পিনার কেশব মহারাজ ও মার্করামও ছিলেন দুর্দান্ত।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান তাড়ার শুরুটা ছিল নাটকীয়। ইনিংসের প্রথম চার বলেই আকিল হোসেনকে তিন দফায় বাউন্ডারিতে পাঠান কুইন্টন ডি কক। পরের ওভারেই জোড়া ধাক্কায় প্রোটিয়াদের নাড়িয়ে দেন আন্দ্রে রাসেল। ফিরে যান দুই ওপেনার রিজা হেনড্রিকস (০) আর কুইন্টন ডি কক (১২)।

এরপরই বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা। বিরতির পর মার্করাম ও ট্রিস্টান স্টাবস শুরু করেন ইতিবাচকভাবে। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে রান আসে ৪১। কিন্তু আলজারি জোসেফ বল হাতে নিয়েই থামান মার্করামকে (১৫ বলে ১৮)। এরপর হেনরি ক্লাসেন চড়াও হলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ বলে ২২ করে ফিরে যান তিনি।

তবে রোস্টন চেইস আক্রমণে এসে আবার জমিয়ে দেন খেলা। ধুঁকতে থাকা ডেভিড মিলারকে (১৩ বলে ৪) বোল্ড করেন তিনি। পরে তিনি ফিরিয়ে দেন দারুণ খেলতে থাকা স্টাবসকেও (২৭ বলে ২৯)।

একটু পরে যখন কেশব মহারাজকেও বিদায় করেন চেইস, উল্লাসে তখন ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম। কিন্তু ওই ওভারেই শেষ বলে দুর্দান্ত শটে চার মেরে সমীকরণ সহজ করে দেন কাগিসো রাবাদা। এরপর শেষ ওভারের প্রথম বলে ইয়ানসেনের ওই ছক্কায় ম্যাচ শেষ।

ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে বোলিং নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে সফলও হয়েছে তারা। প্রোটিয়া বোলারদের তোপের মুখে দাঁড়াতেই পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটাররা। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে ক্যারিবীয় ব্যাটিং লাইনআপ। লড়াই করেছে কেবল প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা কেইল মায়ার্স আর অলরাউন্ডার রোস্টন চেইজ। ৩৪ বলে ৩৫ রান করেন মায়ার্স। আর ৪২ বল থেকে ৫২ রান করে চেইজ। এটাই সর্বোচ্চ আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তাদের ছাড়া দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পেরেছে আর দুইজন ব্যাটার। আন্দ্রে রাসেল (১৫) আর আলজারি জোসেফ (১১)। ২০ ওভার শেষ ৮ উইকেট ১৩৫ রান সংগ্রহ করে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ।

দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে উঠল ১০ বছর পর। এই গ্রুপ থেকে আগেই শেষ চার নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ঠিক হওয়ার পালা অন্য গ্রুপ থেকে।


ধুন্ধুমার বোলিং এই বিশ্বকাপের আকর্ষণ

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

আইসিসি স্বীকৃত ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি। ক্রিকেট প্রিয় দর্শকদের বিনোদনের মাধ্যমও এই সংস্করণই। সাদা বলের এই ফরম্যাটের আকর্ষণ বাড়ায় ব্যাটে-বলের ধুন্ধুমার লড়াই। বিশেষ করে চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে দলগুলোর বড় ইনিংস খেলা। চলছে সেটারই মহাযজ্ঞ। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ আর মার্কিন মুল্লুকে বসেছে এবারের বিশ্বমঞ্চ। সেটা প্রায় শেষের দিকেও। কিন্তু দর্শক চাহিদার কতটুকু মেটাতে পেরেছে এবারের বিশ্বকাপ- সেই প্রশ্ন করা অমূলক নয়। ব্যাটারদের চার-ছক্কা ছাড়িয়ে এবারের বিশ্বকাপের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে বোলাররা। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই রাজত্ব করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ফিরেও খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি সেই ধারায়।

বিগত আসরগুলোকে ছাড়িয়ে সবদিক থেকে এবার সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড হয়েছে। সবচেয়ে আলোচনায় ছিল গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলো। চলমান আসরে গ্রুপ পর্বে ম্যাচ হয়েছে ৩৭টি, এর মধ্যে ১৩টি যুক্তরাষ্ট্রে আর ২৪টি হয়েছে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে। রানও তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বীপ দেশগুলোতে। তবে গ্রুপ পর্ব এক নজরে দেখলে বোঝা যাবে যে, এখানে কতটা রাজত্ব ছিল বোলারদের। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে রাজত্ব করেছেন পেসাররা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্পিনারদের অধিপত্য। তাদের সামনে ব্যাটাররা ছিলেন জড়সড়, বড্ড নড়বড়ে!

চলতি টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের রানরেট ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বনিম্ন। ৩৭ ম্যাচে রান হয়েছে ৬.৭১ গড়ে। এর আগে সর্বনিম্ন ৭.৪৩ রানরেট দেখা গিয়েছিল ২০২১ আসরে, সেটিও এবারের চেয়ে ওপরে। এ ছাড়া এবার উইকেট পড়েছে প্রতি ১৭.৮০ রানে একটি করে, এটি এই সংস্করণের বিশ্বকাপে সর্বনিম্ন রানে উইকেট পড়ার রেকর্ড। অথচ ২০১০ ও ২০২২ আসর ছিল এদিক থেকে সর্বনিম্ন (২১.৪২)।

এবারের বিশ্বকাপ হচ্ছে দুই অঞ্চলে; উইকেটের চরিত্রও দেখা গেছে দুই রকমই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথমবার সহযোগী আয়োজক হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল ক্রিকেটীয় অবকাঠামো। পিচগুলো বানিয়ে আনা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে। নিউইয়র্ক, ডালাস ও ফ্লোরিডার পিচের সেই ১৩ ম্যাচে পেসাররা ১৭.৫০ গড়ে রান দিয়ে ১২৫ উইকেট এবং স্পিনাররা ২১.৬ গড়ে ৩৪ উইকেট শিকার করেন। সেখানে পেসারদের দাপটই ছিল বেশি।

অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয়টি ভেন্যু ছিল স্পিনারবান্ধব। সেখানে হওয়া ২৪ ম্যাচে ঘূর্ণি বোলাররা ১৯.৪৬ গড়ে ১১৬টি উইকেট নেন। এর মধ্যে ছিল একজন বোলারের পাঁচ উইকেট শিকারসহ ছয়বার চার উইকেট নেওয়ার কীর্তি।

চলতি আসরে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার একটি বাজে রেকর্ডও হয়েছে। এবার দলীয় ১০০ রানের আশপাশে অলআউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ১২ বার। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসে এর ধারেকাছে নেই কোনো আসর। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ বার করে ১০০ রানের আশপাশে অলআউট হওয়ার নজির দেখা গিয়েছিল ২০১৪ ও ২০২১ বিশ্বকাপে। এ ছাড়া এবার সর্বোচ্চ তিনবার ৫০ রানের নিচে অলআউটও হয়েছে দুই দেশ।

বোলারদের এমন দাপটের বিশ্বকাপেও কয়েকটি ম্যাচে দর্শকদের আকাঙ্ক্ষিত চার-ছক্কার ফুলঝুরি ফোটাতে দেখা গেছে ব্যাটারদের। নিকোলাস পুরান, জস বাটলার, অ্যারন জোন্স, কুইন্টন ডি ককরা কয়েকটি ম্যাচে হাত খুলে খেলেছে। তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার আর ট্রাভিস হেড। গ্রুপ পর্বের রানের সেই শূন্যতা কাটিয়ে সুপার এইট পর্বে কিছুটা রানের দেখা মিলেছে।


সেমিফাইনালের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে আফগানিস্তান-বাংলাদেশ

ফাইল ছবি
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

গ্রুপ পর্বের চার ম্যাচের তিন ম্যাচ জিতে সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপরই যেন পথ হারিয়ে ফেলেছে টাইগাররা। সুপার এইটের প্রথম দুই ম্যাচেই জুটেছে হার। তাতে সেমিফাইনালের আশা এখন ফিকে হয়ে গেছে নাজমুল শান্তর দলের। তবে খাতা-কলমের হিসাব-নিকাশে নিভু নিভু করে জ্বলছে এখনো সেমিফাইনালের আশার প্রদীপ। সেটাকে বাঁচিয়ে রাখতেই শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নস ভেল স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে ৬টায়। বাংলাদেশ বেতার খেলার চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে।

এবারের বিশ্বকাপের বড় চমকজাগানিয়া দল আফগানিস্তান। গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেটার শুরু করেছিল রশিদ খানের দল। এরপর সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে লিখেছে আরেকটি রূপকথার উপাখ্যান। দলগত পারফরম্যান্সে বেশ ভালো অবস্থানেই আছে আফগানরা।

অন্যদিকে গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লড়াই করেও হেরেছিল টাইগাররা। তবে পরের দুই ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল। তবে দলগত পারফরম্যান্সে টাইগারদের পাস মার্ক পাওয়া নিয়েই চলবে টানাটানি, যা প্রকাশ পেয়েছে সুপার এইটে এসে। দুই ম্যাচেই হেরেছে তারা।

পুরো টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে ব্যাটিং ব্যর্থতা। ছিল না ধারাবাহিকতার লেশমাত্র। বিশেষ টপঅর্ডার যেন রান করতেই ভুলে গেছে। লিটন, তানজিদ, শান্ত, সাকিবরা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। সেই প্রেশার নিতে গিয়ে ডুবেছে মিডল অর্ডারও। তবে কিছুটা আশার খবর হলো নাজমুল শান্ত রানে ফিরেছে। তবে তার স্ট্রাইক রেট নিয়ে এখনো প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।

আফগান ব্যাটিং লাইনের অবস্থাও অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। টাইগারদের ব্যর্থ টপ অর্ডার আর আফগানদের ব্যর্থ মিডল অর্ডার। ওপেনিংয়ে রহমানুল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান রান পেলেও বাকিরা দলের হাল ধরতে পারেনি। আফগানিস্তান যে দুটি ম্যাচে হেরেছে সেখানে টপ অর্ডার ব্যর্থ হওয়ার পর আর দায়িত্ব নিতে পারেনি মিডল অর্ডার।

তাই এ ম্যাচে বাংলাদেশের বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে আফগান দুই ওপেনারকে দ্রুত ফেরানো। তাহলে হয়তো অল্প রানেই আটকে রাখা যাবে তাদের।

এ ম্যাচে বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখছে একটি পরিসংখ্যান; আইসিসি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে কখনও জিততে পারেনি আফগানিস্তান। ৫০ ওভার বা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনোটিতেই নয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাত্র একবার দেখা হয়েছে দুই দলের। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানকে মাত্র ৭২ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৯ উইকেটের জয় পেয়েছিল টাইগাররা। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১১ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ৫টিতে ও আফগানদের ৬টিতে।

বাংলাদেশকে আশা দেখাচ্ছে ম্যাচের ভেন্যুও। সেন্ট ভিনসেন্টের এই ভেন্যু বাংলাদেশের পয়মন্ত। কারণ এই ভেন্যুর উইকেট মন্থর গতির, যা টাইগারদের ঘরের মাঠের মতো। তাই ফেভারিট বাংলাদেশই। সাধারণত ঘরের মাঠে এ ধরনের উইকেটে সারা বছরই খেলে থাকে টাইগাররা। এ জন্য এমন উইকেটের কারণে বেশি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।

অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের কাছে টানা দুই হারের কারণে বিশ্বকাপের সেমিতে ওঠার পথ কঠিন হয়ে গেছে বাংলাদেশের। তারপরও অনেক যদি ও কিন্তুর ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল। প্রথমত ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হারতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে জিততে হবে বাংলাদেশকে। তাহলেই সেমিফাইনালের সুযোগ তৈরি হবে টাইগারদের। কিন্তু আজ সোমবার রাতে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া জিতলে আফগানিস্তানের সঙ্গে খেলতে নামার আগেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাবে টাইগারদের।

বিষয়:

banner close