ফিফার তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও তহবিল অপব্যবহারকে কারণ দেখিয়ে বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে গত পরশু দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। কিন্তু কী এমন উঠে এসেছে ফিফার তদন্তে, যার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত? ফিফা ৫১ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদন দিয়েছে, যেখানে সবকিছু বিস্তারিত লেখা আছে।
দৈনিক বাংলার পাঠকদের জন্য তার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হয়েছে।
দোষ -১: প্রমাণপত্রে ঝামেলা
ফিফার তহবিল ব্যবহার করে বাফুফের কয়েকটি লেনদেন বিশ্লেষণ করে ফিফার ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার সিদ্ধান্তে এসেছে যে, কিছু কিছু লেনদেনে ফিফার তহবিল ব্যবহারের প্রমাণ হিসেবে মিথ্যা কাগজপত্র দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট করে চারটি লেনদেনের কথা উঠে এসেছে।
১. খেলার পোশাক
২০২০ সালের জুনে বাফুফের ন্যাশনাল টিমস কমিটি ঢাকায় দলের আবাসিক ক্যাম্প ও ম্যাচের দিনগুলোর জন্য কিছু ক্রীড়াসামগ্রী কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। এর বিপরীতে তিনটি ‘কোটেশান’ পেয়েছে বাফুফে – স্পোর্টস লিঙ্ক, স্পোর্টস কর্নার ও রবিন এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে। স্পোর্টস লিঙ্ক নিলামে জিতে কাজটা পেয়েছে, যে প্রক্রিয়ায় সোহাগসহ পাঁচজনের অনুমোদন ছিল। সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতাবলে সোহাগ ৩০ হাজার ২৭ ডলারের পণ্যের অর্ডার দেন।
২৮ জুলাই স্পোর্টস লিঙ্ক বাফুফেকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা পণ্যগুলো সরবরাহ করেছে।
৫ আগস্ট ২০২০-এ সোহাগসহ চারজন স্পোর্টস লিঙ্ককে পণ্যের বিনিময়মূল দেয়ার নির্দেশে সই করেন।
ফিফার প্রতিবেদন
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০-এ জমা দেয়া প্রতিবেদনে ফিফা জানিয়েছে, নিলামে অংশ নেয়া তিন প্রতিষ্ঠানকেই একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পৃক্ত বলে মনে হয়েছে। দর হাঁকানো তিন প্রতিষ্ঠানের ‘কোটেশনে’ই ‘quotations’-এর জায়গায় বানান ভুল করে লেখা ছিল “Qutations”। বিডারের স্ট্যাম্পও ছিল না কোনো কোটেশানে।
তিনটির মধ্যে দুটি কোটেশনেই বাক্য শুরু হয়েছে একই লেখা দিয়ে - “we are pleased to inform you that we have supplied you the following items as per your order” অথচ তখনো কোনো পণ্য সরবরাহই করা হয়নি।
অডিট ফার্ম বিডিও ৫ মার্চ ২০২১ তারিখের প্রতিবেদনে তাদের চোখে অসঙ্গতিগুলো জানিয়েছে – ১. তিনটি কোটেশনই একই ফরম্যাটে বানানো। ২. তিনটিতেই quotations বানান ভুল আছে। ৩. রবিন এন্টারপ্রাইজের কোটেশনে যে মোবাইল নম্বর দেয়া ছিল, সেটির সঙ্গে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্তততা ছিল না। ৪. স্পোর্টস কর্নার ও স্পোর্টস লিঙ্কের অফিস একেবারে লাগোয়া। ৪. স্পোর্টস লিঙ্কের মালিকের নাম আবার রবিন – যদিও তার সঙ্গে রবিন এন্টারপ্রাইজের সম্পর্ক নিয়ে কিছু লেখা নেই। এই রবিন আবার ছিলেন স্পোর্টস কর্নারের প্রাক্তন কর্মকর্তা।
২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ফিফার নিযুক্ত গ্রাফিকস বিশেষজ্ঞ তার প্রতিবেদনে লিখেছেন, তিনটি কোটেশনই একই কর্মী বা টেমপ্লেট দিয়ে বানানো, যেটা বোঝায় যে, এগুলো সম্ভবত ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির নয়।
আরও পড়ুন: ফিফার বিরুদ্ধে আদালতে যেতে চান বাফুফের নিষিদ্ধ সাধারণ সম্পাদক সোহাগ
২. ফুটবল
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাফুফে ১৩ হাজার ৯২১ ডলারে ৪০০ ফুটবল কিনেছে। এ ক্ষেত্রে ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বরে তিনটি কোটেশন পেয়েছে বাফুফে – মারিয়া ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এইচ, ইউ, জামান ট্রেডিং ও ওফেলিয়া’স ক্লজেট। জিতেছে অফেলিয়া’স ক্লজেট। সোহাগসহ পাঁচজনের সই ছিল এখানে। ১২ ফেব্রুয়ারি সোহাগসহ চারজনের সইকৃত নির্দেশনায় অর্থ পরিশোধের কথা বলা হয়।
এ নিয়ে তদন্ত চলার সময়ে সোহাগ একটা বিবৃতি জমা দেন প্রমাণ হিসেবে। যেখানে লেখা ছিল, বাফুফে বাংলাদেশে ফিফা অনুমোদিত ম্যাচ চালাতে এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ২০১৯/২০-এর ম্যাচ পরিচালনা করতে এই বলগুলোর প্রয়োজন পড়ে। অফেলিয়া’স ক্লজেটকে বেছে নেয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে লেখা ছিল, এই প্রতিষ্ঠানটি হাল ফ্যাশনের জামা কাপড়ের পাশাপাশি ক্রীড়া সামগ্রীও বিক্রি করে, বড় পরিমাণে অর্ডার দেয়া ও টাকা দেয়ার সময়ের নমনীয়তার বিচারেও তারা এগিয়ে ছিল।
ফিফার তদন্ত যা বলে
অফেলিয়া’স ক্লজেটের যে ঠিকানা দেয়া ছিল কোটেশনে, সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আদৌ অবস্থিত ছিল না। আর প্রতিষ্ঠানটি মূলত ছিল নারী পোশাক প্রস্তুতকারী। সে ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান বাফুফেকে বল সরবরাহ করবে – এমন কিছুর সম্ভাবনা খুব কমই থাকে।
অডিট প্রতিষ্ঠান বিডিও তাদের প্রতিবেদনে লেখে – পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাফুফের সরবরাহকারীর অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দৃশ্যত, অফেলিয়া’স ক্লজেটের ফুটবল সরবরাহ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব আমদানি লাইসেন্স ছিল না, তারা ‘এক বন্ধু’র লাইসেন্স ব্যবহার করেছে বলে জানিয়েছে।
অফেলিয়া’স ক্লজেট পণ্য সরবরাহের বিপরীতে কোনো চালান দেয়নি, তবু বাফুফে এই সরবরাহকারীকে অর্থ দিয়ে দিয়েছে।
৩: ফ্লাইটের টিকিট
২০২২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলতে ওমান যাত্রার উদ্দেশে ২০১৯-এর নভেম্বরে জাতীয় দলের ভ্রমণের ফ্লাইট টিকিট বাবদ আল মারওয়াহ ইন্টারন্যাশনালকে ১৯ হাজার ৯২৫ ডলার দিয়েছে। এখানে মি. সোহাগ বরাবর তিনটি কোটেশন জমা পড়েছে- আল মারওয়াহ ইন্টারন্যাশনাল, পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরস।
ফিফার তহবিল যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়, সে অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর মি. সোহাগসহ চারজনের সইয়ে এই খরচের টাকা দিতে দুটি চেক ইস্যু করা হয়।
তদন্তের সময় মি. সোহাগ জানিয়েছেন, ‘জাতীয় দলের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের এয়ার টিকিটের চাহিদা বাড়িয়ে দেয় জাতীয় দল কমিটি।’
ফিফার তদন্ত কী বলে
১. তিনটি কোটেশনেই অনেক মিল ছিল। তিনটিই শুরু হয়েছে ‘we are pleased to submit the following rout air tickets quotations’ লেখা দিয়ে, তিনটিতেই যাত্রাপথের ইংরেজি বানান লেখা ছিল ‘rout’।
২. মাল্টিপ্লেক্স ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস নাম বাংলাদেশের দুটি বিজনেস ডিরেক্টরিতে ট্র্যাভেল এজেন্সি হিসেবে লেখা ছিল কিন্তু এই সরবরাহকারীর কোটেশনে নিজেদের নামের বানানের ক্ষেত্রেই একটা বাড়তি ‘e’ ছিল, সেটাও বোল্ড করা – ‘(…) & Tourse’।
৩. পূরবী ইন্টারন্যাশনাল মূলত একটি শ্রমজীবী নিয়োগ দেয়ার কোম্পানি, তাই তাদের ফ্লাইটের টিকিটের কোটেশন দেয়ার সম্ভাবনা কমই ছিল।
৪. তিনটি কোটেশনের মূল অংশেই সংখ্যার ক্রমে ভুল ছিল, তিনটিতেই একই ভুল। ক্রমটা সাজানো ছিল এভাবে - (‘1, 3, 4’)।
৫. অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে লেখা, পূরবী ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপ্লেক্স ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস- দুই প্রতিষ্ঠানই নিশ্চিত করেছে, তারা বাফুফেকে এই কাজে কোনো কোটেশন জমা দেয়নি।
৬. পূরবী ইন্টারন্যাশনাল নিশ্চিত করেছে, তারা একটি নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান।
লেনদেন ৪: ঘাস কাটার যন্ত্র
২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বাফুফে ১ হাজার ৪১২ দশমিক ৬০ ডলারের ঘাস কাটার যন্ত্র কেনে। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯-এ দুটি কোটেশন জমা পড়েছে এ ক্ষেত্রে- বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার ও শোভা এন্টারপ্রাইজ। বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার কাজটি পেয়েছে।
এর দুই দিন পর শারমিন এন্টারপ্রাইজ নামের প্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি কোটেশন জমা পড়ে।
ফিফার তদন্ত কী বলে
১. তিনটি কোটেশন নিয়েই তদন্তে ফিফা পেয়েছে, বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের নামের বানানের শেষে ভুল ছিল- ‘Bangladesh Hardwar’। ঠিকানাও একটু এদিক-সেদিক ছিল।
২. অডিট ফার্মের তদন্তের সময়ে শারমিন এন্টারপ্রাইজে ফোন করা হলে ফোন রিসিভার পরিচয় দিয়েছেন শোভা এন্টারপ্রাইজের কর্মী হিসেবে।
৩. বাংলাদেশ হার্ডওয়্যারের কোটেশন ও অর্থপ্রাপ্তির স্বীকারপত্রে সই মেলেনি।
দোষ- ২: ফিফার ফান্ডের অপব্যবহার
২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত চার বছরের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করেছে ফিফার তদন্ত কমিটি। ফিফার তহবিলের ক্ষেত্রে বলাই থাকে যে, এই তহবিলের জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট কাজে লাগানো হোক। কিন্তু বাফুফে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানোর অ্যাকাউন্ট দিয়েও ফিফা ফরওয়ার্ড তহবিল সম্পৃক্ত খরচ পরিশোধ করেছে।
- ২০১৬ সালে ফিফার তহবিল থেকে বাফুফে পায় ৭ লাখ ৮ হাজার ৮২০ ডলার। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৯০ হাজার ১৪ ডলার ফিফার তহবিলের জন্য নির্ধারিত অ্যাকাউন্ট দিয়ে পরিশোধ করা হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ লেনদেন ঠিকভাবে নিয়ম মেনে করা হয়েছে।
- মেয়েদের ফুটবলবিষয়ক খরচ ও বেতনের খাতে ১ লাখ ৭ হাজার ৬৩৪ ডলার খরচের বিপরীতে কোনো তথ্য-প্রমাণ বা কাগজ জমা দেয়নি বাফুফে।
- জাতীয় দলের কোচ ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের বেতন মিলিয়ে অঙ্কটা দাঁড়ায় ৪৪ হাজার ১০০ দশমিক ৪১ ডলার। এই অর্থটা নগদে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বাফুফের ব্যাংক রেকর্ডও দেখাচ্ছে, তাদের বেতন ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের বেতন দুবার দেয়া হয়েছে বলে মনে হতে পারে।
- ২০১৪ ও ২০১৫ সালের প্রশাসনিক ব্যয় বাবদ ৩৫ হাজার ৫৭৩ ডলার খরচের অঙ্ক দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে।
- ফুটবল ক্লাবগুলোকে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩৫ ডলার দিয়েছে বাফুফে। ক্লাবকে এমন অর্থ দেয়ার নিয়ম ফিফার তহবিলের নির্দেশনায় নেই, ফিফার অনুমতিও নেই এতে। তা ছাড়া এই খরচের বিপরীতে কোনো প্রমাণও নেই। এই খরচের ৫৩ হাজার ৫৮৮ ডলার নগদে দেয়া হয়েছে বলে বাফুফের প্রতিবেদনে উল্লিখিত ছিল।
- এসব অসংগতি দেখে ২০১৭ সালে ফিফা বাফুফেকে দেয়া অর্থের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। বাফুফের সঙ্গে তখন ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নতুন করে ঠিক করা হয়, যেখানে বাফুফেকে নগদ লেনদেনের পরিমাণ একেবারে কমিয়ে আনতে বলা হয়। ফিফার তহবিলের ব্যবহার ফিফার নির্দেশিত খাতেই ব্যয় করতেও বলা হয়।
২০১৯ সালে ফিফার তদন্তে আগের অসংগতি কিছুটা কমে আসায় অর্থছাড়ের পরিমাণও কিছুটা বাড়িয়ে দেয় ফিফা। তবে ফিফার তদন্ত বিভাগ জানায়, এই সময়েও বাফুফে বেশ কিছু অসংগতিপূর্ণ নগদ লেনদেন করেছে।
- অডিট ফার্মের প্রতিবেদনে লেখা, ফিফার তহবিল তো এর উদ্দেশ্যের বাইরে ব্যবহার হয়েছেই, পাশাপাশি অ্যাকাউন্ট থেকে ওঠানো নগদ অর্থ এবং বাফুফের নগদ খরচের পরিমাণের মধ্যে ৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৫ ডলারের পার্থক্য আছে!
- অডিট ফার্মের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দিয়ে ১৮১টি লেনদেন করা হয়েছে যেগুলোকে ফিফার তহবিল-সম্পৃক্ত খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছে।
- দুটি ফাঁকা চালান পেয়েছে অডিট ফার্ম, যেখানে পণ্যের বিবরণ, পরিমাণ, দর, মোট অর্থ কিছুই লেখা ছিল না। কিন্তু এই চালানের বিপরীতে খরচের হিসাব বাফুফের ক্যাশবুক ও সাধারণ খতিয়ানে আছে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই অস্থির দেশের ফুটবলাঙ্গন। নারী দলের ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারকে বয়কট করেন ১৮ নারী ফুটবলার। তার অধীনে কোনো অনুশীল না করে অবসরের হুমকিও দেন তারা। সংবাদ সম্মেলন ডেকে বাটলার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন সাবিনা-মনিকারা। পরে বাফুফে সভাপতিকে চিঠি দেন তারা। বাফুফে থেকে চেষ্টা করেও আসেনি দৃশ্যত কোনো সমাধান।
সেসময় কোচ পিটার বাটলার বৈঠকের জন্য ডাকলেও তাতে সাড়া দেননি বিদ্রোহী ফুটবলাররা। অবশেষে প্রায় আড়াই মাস পর গতকাল আলোচনার টেবিলে বসেছিলেন পিটার বাটলার ও সেই বিদ্রোহী ফুটবলাররা। যদিও ব্রিদাহীদের নেতৃত্ব দেওয়া সাবিনা খাতুনসহ ছিলেন না চার সিনিয়র ফুটবলার।
নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের জন্য রবিবার থেকে ক্যাম্প শুরু করেছে বাফুফে। ছুটি শেষে সেদিনই ইংল্যান্ড থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন কোচ বাটলার৷ গতকাল সকালে জিম সেশন থাকলেও বাটলারকে বয়কট করা ফুটবলাররা যোগ দেননি সেখানে। আলোচনার টেবিলে বসতে চেয়েছিলেন দুই পক্ষই।
এরপর প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে সংকটের নানা বিষয়ে আলোচনা করেছে দুই পক্ষ। আলোচনায় অংশ নেওয়া একাধিক ফুটবলার জানিয়েছেন, বাটলার বেশ কয়েকবার কয়েকজন খেলোয়াড়কে অভিযুক্ত করেছেন। আবার কখনো আন্দোলনের সমালোচনাও করেছেন। এসব বিষয়ে ফুটবলারদের উত্থাপিত প্রশ্ন খণ্ডন করে নিজের যুক্তিও দিয়েছেন বাটলার। ফুটবলারদের বিগত বিষয়াবলী ভুলে যাওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি নিজেও এ বিষয়টি ভুলে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
বাটলারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা নারী ফুটবলাররা এখন অনেকটাই নমনীয়। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেননি এই ইংলিশ কোচের অধীনে ফেরার ব্যাপারে। যদিও কয়েকজন অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, তারা বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফিরতে রাজি হয়েছেন।
নমনীয় হয়েছেন কোচ পিটার বাটলারও। বিদ্রোহ চলাকালীন বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় কয়েকজন ফুটবলারের নাম উচ্চারণ তিনি বলেছিলেন, তারা ফিরলে তিনি আর অনুশীলন করাবেন না তিনি। তবে জানা গেছে, মত পরিবর্তন করেছেন তিনি। তারা ফিরতে চাইলে অনুশীলন করাবেন বাটলার।
গতকাল আর কোনো জিম সেশন ছিল না। আজকের জিম বা মাঠের অনুশীলনে সবাই থাকেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়। নাকি বাংলার চিরকালীন প্রবাদ ‘ভাঙা গ্লাস কখনো জোড়া লাগে না’, এই প্রবাদের মতোই খেলোয়াড়-কোচ দুই পক্ষের দূরত্ব থেকে যায় থেকে যায় সেটার প্রকৃত উত্তর সময়ের হাতেই।
উল্লেখ্য, সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জানুয়ারি মাসে শুরু হওয়া ক্যাম্পের প্রথম দিন টিম মিটিংয়ে যাননি ১৮ নারী ফুটবলার। এরপর কোচের প্রতি অভিযোগ এনে বাফুফে সভাপতিকে চিঠির পাশাপাশি মিডিয়ার সামনে বক্তব্য রাখেন ফুটবলাররা। দুই মাসের বেশি সময় অচলাবস্থার পর গতকালই প্রথম দুই পক্ষ সামনাসামনি হয়েছে।
ম্যানচেস্টার সিটির তারকা আর্লিং হালান্ড ও ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী তারকা কিলিয়ান এমবাপেকে হারিয়ে ২০২৩ ফিফার ‘দ্য বেস্ট’ পুরস্কার জিতেছেন লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকা দুই তরুণ দুর্দান্ত ফুটবলারকে টপকে বিভিন্ন দেশের ফুটবল দলের কোচ, অধিনায়ক, সাংবাদিক ও ফুটবল ভক্তদের ভোটে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
কঠিন লড়াইয়ে এমবাপে ও হালান্ডকে হারিয়ে ৮তম ব্যালন ডি'অর পুরস্কার জেতার পর ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কারটিও জিতে নিয়েছেন মেসি। ফলে টানা দ্বিতীয়বারের পুরস্কারটি জিতলেন এই আর্জেন্টাইন। সব মিলিয়ে এই সেরার স্বীকৃতি অষ্টমবারের মতো পেলেন ৩৬ বছর বয়সী ইন্টার মিয়ামি তারকা।
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের পরের দিন ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত ফুটবল খেলার পারফরম্যান্স বিবেচনায় এই পুরস্কার প্রদান করে ফিফা। দর্শক-সমর্থকদের চোখে সেরা মেসিই জিতেছেন সেই পুরস্কার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক রোনালদিনহো।
ঢাকা সফররত এ ফুটবলার বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
রোনালদিনহো এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে একটি জার্সি উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোনালদিনহোকে বলেন, ‘আপনার আগমন বাংলাদেশের ফুটবলকে অনুপ্রাণিত করবে।’
রোনালদিনহো ক্রীড়া ক্ষেত্রে অসামান্য উন্নয়নের জন্য এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীদের ফুটবলে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে ঢাকায় তার সংক্ষিপ্ত সফরে তার বাসস্থল হোটেল রেডিসনে গিয়ে জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ও নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রোনালদিনহো। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ব্রাজিল ভক্ত তামিমের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে তার।
এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান তিনি রোনালদিনহো।
সেলিব্রিটিদের নিয়ে গঠিত ‘হ্যালো সুপারস্টার’ অ্যাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ প্রীতি ফুটবল ম্যাচের। আগামী ২৭ অক্টোবর বিকেল ৩টায় কুমিল্লার ভাষা সৈনিক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। সে লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্ণিল এই আয়োজনে দেখা যাবে বাংলাদেশ ভারত ও মালেয়শিয়ার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গকে।
বুধবার বিকেলে কুমিল্লায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপের বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর, জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর।
তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরের গুণীদের সমন্বয়ে গঠিত হ্যালো সুপাস্টার অ্যাপ মহৎ একটি উদ্যোগ নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল। তারই অংশ হিসেবে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের অবসরপ্রাপ্ত এবং বর্তমান দলের বেশ কয়েকজন এবং ভারতের অবসরপ্রাপ্ত এবং বর্তমান জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় অংশ নেবেন। ভারতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মেহতাব হোসাইন, বাইচুং ভুটিয়া, রহিম নবী এবং বাংলাদেশের মামুনুল ইসলাম মামুন ও জাহিদ হাসান এমিলির মতো খেলোয়াড়রা এতে অংশ নেবেন।
ওই খেলাটি দেখতে বাংলাদেশে আসবেন মালয়েশিয়ার জাতির পিতার দৌহিত্র ও গ্লোবাল ফুটবল ক্যাম্পের কর্ণধার ওআইটিএম দাতো ইনদেরা টুঙ্কু হারুন্নারাশেদ পুত্রা এবং মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের সদস্য ও হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপের ট্রাস্টি তপুয়ান নূর সাজান্না আবদুল্লাহ। এছাড়াও প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা ৬ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মো. মুশফিকুর রহমান ও জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আসিফ আকবর আরও জানান, এই খেলাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দুদিন কুমিল্লায় এ উপলক্ষে বর্ণিল আয়োজন করা হবে। থাকবে কনসার্ট। যেখানে পারফর্ম করবেন তিনি নিজেসহ (আসিফ আকবর) বাংলাদেশ এবং ভারতের বেশ কয়েকজন সংগীতশিল্পী। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে এ উপলক্ষে বর্ণিল শোভাযাত্রা করা হবে।
আসিফ আকবর বলেন, ‘এই ম্যাচটি দেখার জন্য কোনো দর্শককে টিকিট কাটতে হবে না। শুধুমাত্র মোবাইল ফোনে হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপ ইনস্টল করলেই একটা কোড নম্বর দেখাবে। ওই কোড নম্বরটি গেটম্যানকে দেখালেই সহজে প্রবেশ করা যাবে গ্যালারিতে। উপভোগ করা যাবে পুরো ম্যাচ।’
আসিফ আকবর আরও বলেন, ‘আমাদের হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপের মূল লক্ষ্য হলো, ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ ক্লাবে খেলোয়াড় পাঠানো হবে প্রশিক্ষণের জন্য। তাতে উপমহাদেশ থেকে বিশ্বমানের ফুটবলার তৈরি হবে। বার্সালোনা, ডর্টমুন্ডের মতো বিশ্বমানের ক্লাবগুলোতে যখন বাংলাদেশের কোনো ছেলে খেলবে, তখন বাঙালি হিসেবে নিজেকে গর্ববোধ করতে পারব।’
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান ফারুক রোমেন, হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপের অনুষ্ঠান প্রধান নবীন হোসেন, হ্যালো সুপারস্টার অ্যাপের বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক টংকু মুকিত, পরিচালক আনিসুর রহমান, হ্যালো সুপার স্টার এ্যাপের কুমিল্লার সমন্বয়ক আবুল কাশেম হৃদয়সহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেস বাংলাদেশে এসেছেন।
সোমবার ভোরে রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। আজ বিকেল পর্যন্তই ঢাকায় থাকার কথা তার। এরপর কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন মার্তিনেস।
ঢাকায় এসে এদিন সকালেই ইনস্টাগ্রামের স্টোরিতে দুটি ছবি পোস্ট করে ভক্তদের জানান দেন মার্তিনেস।
মার্তিনেসের পোস্ট করা ছবি দুটির একটিতে ঢাকার সড়ক দেখা যায়। ছবির ওপরের দিকে লেখা, ‘বাংলাদেশ।’ আরেকটি ছবিতে দেখা যায় একটি কেক। যাতে একটি হোটেলের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।
সোমবার বেলা ২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্তিনেস সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। ভক্তদের সঙ্গে দেখা করার প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও তা বাতিল হয়েছে। তাকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করা সংস্থার নির্বাচিত কিছু ভক্তই শুধু তার দেখা পেয়েছেন। ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা তার দুই সন্তানকে নিয়ে দেখা করেছেন মার্তিনেসের সাথে।
কাতারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে মার্তিনেসের অবদান অনেক। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডস ও ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দলকে জিতিয়ে বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস পুরস্কার জিতেছেন মার্তিনেস।
বিশ্বকাপজুড়ে বাংলাদেশে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর হওয়ার পর বাংলাদেশকে আর্জেন্টিনায় ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশের সমর্থকদের কথা লিওনেল মেসি-মার্তিনেসদের কানেও যায়। শুধু কলকাতা সফরে আসার কথা থাকলেও মার্তিনেস নিজ থেকেই বাংলাদেশে আসতে চেয়েছেন।
১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে বাংলাদেশ – টুর্নামেন্টের আগে এটাই ছিল বাংলাদেশের বড় স্বপ্ন। কিন্তু গ্রুপ পর্বে মালদ্বীপ ও ভুটানকে হারিয়ে যখন সে স্বপ্ন ছোঁয়া হয়ে গেল, ফাইনালের স্বপ্ন তো উঁকিঝুঁকি মারারই কথা।
বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটাও ছিল স্বপ্নের সমান বড় – প্রতিপক্ষ যে অতিথি দুই দলের একটি কুয়েত! ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৯২তম বাংলাদেশের চেয়ে ৫১ ধাপ এগিয়ে থাকা কুয়েত! বাস্তবতা বলছিল, এশিয়ান কাপে নিয়মিত কুয়েতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বাংলাদেশ জেতেনি, বেঙ্গালুরুতে আজ প্রথম সেমিফাইনালে শেষ পর্যন্ত জিকো-ইসা-মোরসালিনরা হেরে গেছেন ১-০ গোলে। সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল এবারের সাফে বাংলাদেশের দুর্দান্ত যাত্রা।
কিন্তু হারের আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কী অবিশ্বাস্য লড়াই-ই না করল বাংলাদেশ!
স্কোরলাইনই কিছুটা বলে দেয় বাংলাদেশের লড়াইয়ের গল্প – বাংলাদেশের মন ভেঙে দেয়া গোলটা হয়েছে অতিরিক্ত সময়েরও যোগ করা সময়ে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কুয়েতকে রুখে দেয়ার পর অতিরিক্ত সময়েও কুয়েতের সঙ্গে লড়ে গেছে বাংলাদেশ। লড়াইটা সমানে-সমান হওয়ার কথা ছিল না, হয়ওনি – বাংলাদেশ রক্ষণ ১২০ মিনিটের প্রায় পুরোটাজুড়েই চাপে ছিল, গোলকিপার জিকো চার-পাঁচবার বাজপাখির ক্ষীপ্রতায় দারুণ সেইভ করেছেন। কিন্তু উল্টো প্রান্তে বাংলাদেশও দারুণ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে, শেষ পর্যন্ত যে সুযোগগুলো দীর্ঘশ্বাসই হয়ে থাকছে।
দুই মিনিটে মোরসালিনের অবিশ্বাস্য সুযোগ মিসে শুরু আক্ষেপের গল্প ১২০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে একজনকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে সুমনের তাড়াহুড়ো করে নেয়া শটেও শেষ হলো না। দ্বিতীয়ার্ধে রাকিবের জোরাল শট বার কাঁপিয়ে ফিরে এলে আক্ষেপ বাড়ে বাংলাদেশের।
প্রথমার্ধে বল পায়ে পেলে পাসিং ফুটবল খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ৪-১-২-১-২ ছকে দুই ফরোয়ার্ড রাকিব ও মোরসালিনের পেছনে সুযোগ পাওয়া জামাল ভুঁইয়া বেশ কয়েকবার পাস বাড়িয়েছিলেন দুই ফরোয়ার্ডের দিকে। কিন্তু শক্তিতে-উচ্চতায়-দক্ষতায় বেশ এগিয়ে থাকা কুয়েতি রক্ষণ সেসব সামলে নিয়েছে ভালোভাবেই।
উচ্চতা কাজে লাগিয়ে বারবার লম্বা পাসে আক্রমণে উঠেছে কুয়েত, দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আক্রমণের তোড় সামলাতে বেশ কয়েকবার বাজপাখি হতে হয়েছে বাংলাদেশ গোলকিপার জিকোকে। বাংলাদেশ যে ৯০ মিনিট ছাড়িয়ে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যেতে পেরেছে ম্যাচটা, সে কৃতিত্ব জিকোরই।
অতিরিক্ত সময়েও একই চিত্রনাট্য মেনে এগোচ্ছিল ম্যাচ, তবে আস্তে আস্তে দম হারাতে থাকা বাংলাদেশ এ সময়ে ধীরে ধীরে পিছু হটতে শুরু করেছে। তবু অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথমার্ধও প্রায় শেষের পথে চলে এসেছিল। প্রথমার্ধের শেষে রেফারি যোগ করা সময় ঘোষণা করেন ২ মিনিট। বাংলাদেশের কপাল পুড়েছে তখনই।
কুয়েতের মাঝমাঠ থেকে পাস আসে বাংলাদেশ বক্সের বাঁ দিকে কিছুটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে যাওয়া ফরোয়ার্ড আবদুল্লাহর কাছে। বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তপু বর্মন দ্রুত দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ান, এরপর চার্জে না গিয়ে বলের সঙ্গে সঙ্গে পিছুও হটছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেই সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময়ে তপুর দুপায়ের ফাঁক গলে শট নিয়ে নেন আবদুল্লাহ। মাটি কামড়ানো শটটা দূরের পোস্ট দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। জিকোর কিছু করারই ছিল না, তপু যে তার ‘দৃষ্টিপথ’ আটকে ছিলেন! শট কখন হয়েছে, সেটা ঠিকমতো বোঝারই সাধ্য ছিল না জিকোর। যতক্ষণে বলটা দেখতে পেলেন জিকো, ততক্ষণে বল জালের খুব কাছে।
আগের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ আর ভুটানের বিপক্ষেও আগে গোল খেয়ে বাংলাদেশ পরে ঝাঁপিয়েছে। তিনটি করে গোলও পেয়েছে। আজ প্রতিপক্ষ আরও শক্তিশালী, সময়ও ছিল কম। তবু বাংলাদেশ ঝাঁপিয়েছে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছে। চাপের মুখে কিছু সহজ পাসে ভুল হয়েছে, যা হতাশা বাড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ যে চেষ্টা করছে, সেটি একই মাঠে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে স্বাগতিক ভারতের ম্যাচ দেখতে আসা ভারতীয় দর্শকেরও করতালি কুড়িয়েছে।
সাফে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হয়তো এটাও।
দিনের প্রথম ম্যাচে লেবাননের কাছে মালদ্বীপের হারেই বাংলাদেশের কাজটা একেবারে সহজ হয়ে গেল। সমীকরণ তখন এই - ভুটানের বিপক্ষে ড্র করলেও সেমিফাইনালে বাংলাদেশ।
সে পথে প্রথমেই ধাক্কা খেল বাংলাদেশ! ১২ মিনিটে ভুটানের গোল! কিন্তু আগের ম্যাচে মালদ্বীপকে দেখে বোধহয় কিছু শেখেনি ভুটান! সেদিন মালদ্বীপ আগে গোল করে এরপর খেয়েছে তিন গোল, আজ ভুটানেরও একই পরিণতি! ৩-১ গোলে জিতে সাফের সেমিফাইনালে উঠে গেছে জামাল ভুঁইয়া, মোরসালিন, রাকিবদের বাংলাদেশ।
সাফের সেমিফাইনাল - বাংলাদেশের স্বপ্নের গণ্ডিটা ছোট হতে হতে এতটুকুতেই এসে থেমেছিল। ২০০৯ সাফের পর টানা পাঁচ সাফে যে গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি! ১৪ বছর আর ৫ সাফ পর সে স্বপ্নের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ।
সেমিফাইনাল আগামী শনিবার, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেখানে শক্তিশালী কুয়েত। অন্য সেমিফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ লেবানন।
একাদশে দুই বদল নিয়ে নামে বাংলাদেশ। চোটে পড়া ডিফেন্ডার তারিক কাজীর বদলে রহমত মিয়া, আর আগের দুই ম্যাচে গোলের কিছু সুযোগ হারানো প্রতিভাবান ফরোয়ার্ড ফাহিমের জায়গায় তরুণ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মোরসালিন - প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের শুরুর একাদশে তিনি।
সুযোগটা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগিয়েছেন মোরসালিন! ১২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ শটে টিসেন্দা দর্জির গোলে এগিয়ে যায় ভুটান, কিছুক্ষণ পর আবার ভুটানের শট ফেরে পোস্টে লেগে। প্রমাদ গুনছিল বাংলাদেশ, এই দলটার বারে বারে শেষে গিয়ে পথ হারানোর উদাহরণ তো কম নেই!
এন্টার মোরসালিন!
২১ মিনিটে দারুণ গোলে বাংলাদেশকে সমতায় ফেরালেন তরুণ মিডফিল্ডার। আগের ম্যাচে জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম গোল পাওয়া মোরসালিনের পায়ে গোলের দেখা মিলল টানা দুই ম্যাচে। ৩০ মিনিটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোলের উৎসেও মোরসালিন।
গোলটা ভুটানের ডিফেন্ডার জিগমের আত্মঘাতী। তবে মোরসালিনের দারুণ ক্রস বক্সে রাকিবের পায়ে আসে। রাকিবের রিসিভ করা বলই জগমের গায়ে লেগে ঢোকে জালে।
রাকিবের গোলের অপেক্ষাও অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ৬ মিনিট পর তার অপেক্ষার শেষ টেনে দেয়া গোলটাও হলো দুর্দান্ত! প্রায় শূন্য ডিগ্রি কোণ থেকে বল জালে জড়ালেন রাকিব - তারও টানা দুই ম্যাচে গোল হলো!
দ্বিতীয়ার্ধে ফুটবলটা ম্যাড়মেড়েই হয়েছে। তবে বাংলাদেশের তা নিয়ে ভাবার সুযোগ কই! ঈদ-উল-আযহা আগামীকাল, তবে বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে ঈদের আনন্দ আজই শুরু হয়ে গেছে।
ম্যাচটা যে বাংলাদেশের কাছে ‘ফাইনাল’-এর মর্যাদা পাচ্ছে, সেটা না বললেও হতো। বাংলাদেশ দলের কোচ-অধিনায়ক ও অন্য খেলোয়াড়েরা ঘটা করেই জানিয়েছেন, মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচটা তাদের কাছে ফাইনালের মর্যাদাই পাচ্ছে।
না পাওয়ার কারণও নেই। হেরে গেলে বাংলাদেশের বাড়ি ফেরা নিশ্চিত, জিতলে বেঁচে থাকবে সেমিফাইনালের আশা– এমন সমীকরণ নিয়েই আজ বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তাভিরা স্টেডিয়ামে গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে নেমেছে বাংলাদেশ। এবং বাংলাদেশ ‘ফাইনাল’টা জিতেও গেছে!
১৭ মিনিটে পিছিয়ে পড়লেও ম্যাচজুড়ে দারুণ পাসিং ফুটবল উপহার দেয়া বাংলাদেশ রাকিব ও তারিক কাজীর পর শেষ মুহূর্তে মোরসালিনের গোলে জিতেছে ৩-১ ব্যবধানে। এ জয়ে গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জিতলেই বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার সম্ভাবনা আরও বেড়ে গেল।
লেবানন র্যাঙ্কিংয়ে ৯৩ ধাপ এগিয়ে। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতবে, এমন আশা সম্ভবত কেউই করেননি। তবে ড্রয়ের আশার কথা তো বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরা ও অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া দুজনই কাল জানিয়েছেন। এবারের সাফে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সে ড্রয়ের পথে ৭৮ মিনিট পর্যন্ত কী দারুণই না লড়েছিল বাংলাদেশ!
কিন্তু গত কয়েক বছরে আরও অনেক ম্যাচের মতো আরেকবার তীরে এসে তরি ডুবেছে বাংলাদেশের। ৭৯ মিনিটে নিজেদের ভুলে প্রথম গোল খাওয়া বাংলাদেশ দল বেঙ্গালুরুতে আজ শেষ পর্যন্ত হেরে গেছে ২-০ গোলে।
৭৯ মিনিটে নিজেদের বক্সের সামনে বল দেয়া-নেয়া করতে গিয়ে ভুল হলো বাংলাদেশ ডিফেন্ডার তারিক কাজীর। বল কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে যান লেবানিজ দুই স্ট্রাইকার, বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান জিকো এগিয়ে এলেও হাসান মারতুকের শটটা ঠেকানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে বাংলাদেশ গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু গোল হয়নি। উল্টো গোল খেয়ে গেল কয়েক সেকেন্ড পর। পালটা আক্রমণে উঠে গোল করে যান লেবানুনের খালিল বাদের।
গ্রুপে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ মালদ্বীপের বিপক্ষে, আগামী রোববার বিকেল ৪টায়।
রেয়াল মাদ্রিদ যেন সুইচ গেট খুলে দিয়েছে। আর তা দিয়ে বানের জলের মতো করে বেরিয়ে আসছেন একের পর এক খেলোয়াড়। গতকাল মার্কো আসেনসিও, এদেন অ্যাঁজা, মারিয়ানো ও নাচো এরনান্দেস সবাই একে একে মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়েছেন। এমন খবরে মাদ্রিদ সমর্থকেরা একটু আশা ফিরে পেয়েছিলেন, আক্রমণভাগের তিনজন খেলোয়াড় যেহেতু বিদায় নিয়েছে, তাহলে সম্ভব করিম বেনজেমা আর দল ছাড়ছেন না। কিন্তু একটু আগেই মাদ্রিদ আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে ক্লাব ছেড়ে যাচ্ছেন বর্তমান বালন দ'র জয়ী স্ট্রাইকারও।
এক বিবৃতিতে মাদ্রিদ জানিয়েছে, 'রেয়াল মাদ্রিদ ও আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এ ক্লাবে খেলোয়াড় হিসেবে তার দুর্দান্ত এবং অবিস্মরণীয় সময়টার ইতি টানতে একমত হয়েছেন। আমাদের সর্বকালের সেরা কিংবদন্তিদের একজনকে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চায় মাদ্রিদ।'
২০০৯ সালে মাদ্রিদে যোগ দিয়ে ১৪ বছরে ক্লাবের সবচেয়ে বেশি ২৫টি শিরোপা জেতার রেকর্ড গড়েছেন বেনজেমা। এ মৌসুমেই তার চুক্তি শেষ হয়ে গেলেও নতুন চুক্তি নবায়নের কথা শোনা যাচ্ছিল। তবে তাকে সৌদি আরব থেকে লোভনীয় এক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। ওদিকে মাদ্রিদও চুক্তিনবায়নের ক্ষেত্রে বেনজেমার পছন্দের বেতন দিতে রাজি হচ্ছিল না বলে জানা গেছে।
গত মৌসুমে মোহামেডানে ধারে খেলে নজর কেড়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসের তরুণ মিডফিল্ডার শেখ মোরসালিন। এ মৌসুমে নিজ দলে ওভাবে সুযোগ পাচ্ছিলেন না। সাফের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক দলেও ডাক মেলেনি তার। তবে ভাগ্যক্রমে ডাক পেয়ে দ্রুতই জাতীয় দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ‘গুডবুকে’ নাম তুলে ফেলেছেন। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য গতকাল ঘোষিত ৩০ জনের প্রাথমিক দলে জায়গা পেয়েছেন মোরসালিন।
গত মাসে ৩৫ সদস্যের প্রাথমিক তালিকা সাফের কাছে জমা দেয়া হয়েছিল। তবে সাদ উদ্দিন ও মতিন মিয়া চোটের কারণে বাদ পড়ায় নেয়া হয় মোরসালিন ও মোহামেডানের স্ট্রাইকার সাজ্জাদ হোসেনকে। গতকাল ঘোষিত ৩০ জনের দলে আছেন সাজ্জাদও। বাদ পড়েছেন আবাহনীর মিডফিল্ডার মেহেদি হাসান রয়েল, শেখ রাসেলের মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, শেখ জামালের মিডফিল্ডার আবু সাইদ, কিংসের ডিফেন্ডার ইয়াসিন আরাফাত ও মোহামেডানের ডিফেন্ডার মুরাদ হোসেন।
কাবরেরার ৩০ জনের দলে তাই নতুন মুখ এখন দুজন- ফর্টিস এফসির ফরোয়ার্ড রফিকুল ইসলাম আর মোরসালিন। ডাক পেয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিকত্ব পাওয়া এলিটা কিংসলিও।
৩০ জনের প্রাথমিক দল
গোলরক্ষক: আনিসুর রহমান জিকু, মিতুল মারমা, শহিদুল আলম সোহেল ও মেহেদী হাসান শ্রাবণ।
ডিফেন্ডার: কাজী তারিক রায়হান, রিমন হোসেন, বিশ্বনাথ ঘোষ, টুটুল হোসেন, তপু বর্মণ, ইশা ফয়সাল, রহমত মিয়া, আলমগীর মোল্লা ও মেহেদি হাসান।
মিডফিল্ডার: মাশুক মিয়া, সোহেল রানা, মজিবুর রহমান জনি, সোহেল রানা, শাহরিয়ার ইমন, রবিউল হাসান, জামাল ভূঁইয়া, মোহাম্মদ হৃদয়, শেখ মোরসালিন।
ফরোয়ার্ড: রাকিব হোসেন, সুমন রেজা, ফয়সাল আহমেদ, এলিটা কিংসলিও, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রফিকুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান সজীব, সাজ্জাদ হোসেন।
আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের হাহাকার ঘুচিয়েছেন। হতাশার স্রোতে ভাসা এক দলকে জাগিয়ে তোলেন লিওনেল স্কালোনি। বিশ্বকাপজয়ী কোচের মন জিতে নেয়ার কাজটা গত ডিসেম্বরেই সম্পন্ন। তার প্রতি মুগ্ধতা আর বাড়ানো অসম্ভব বলেই মনে হতো। ভুল প্রমাণিত হলো সেটা।
আর্জেন্টিনায় একটি ফ্লাইটের বিমানে চড়ার উদ্দেশে শাটল বাসে উঠেছিলেন স্কালোনি। সে বাসে স্কালোনির সঙ্গে ছিলেন এক দম্পতিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, বাসে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধার জুতার ফিতা বেঁধে দিচ্ছেন স্কালোনি। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম ‘মুন্দো আলবিসেলেস্তে’ স্কালোনির সঙ্গে সেই বৃদ্ধার কথোপকথনও প্রকাশ করেছে। স্কালোনি সেই বৃদ্ধাকে বলেছেন, ‘আমি আপনার জুতার ফিতা বেঁধে দিচ্ছি, আপনি যেন পড়ে না যান।’
স্কালোনিকে শুরুতে বৃদ্ধ মহিলা চিনতে পারেননি। পরে আর্জেন্টাইন কোচ যখন ফিতা বেঁধে দিয়ে সোজা হন, তখন মহিলার স্বামী চিনে ফেলেন স্কালোনিকে। এরপর তারা এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন স্কালোনিকে।
ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়া কখনও হারে না। এটাই সত্য হয়ে উঠল আরেকবার। রোমার বিপক্ষে গতকাল নির্ধারিত ৯০ ও পরের ৩০ মিনিট ১-১ গোলে ড্র থাকা ফাইনাল গড়াল টাইব্রেকারে। যেখানে হোসে মরিনিওর রোমাকে ৪-১ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগ জিতেছে সেভিয়া। ইউরোপা লিগের এটি সপ্তম শিরোপা সেভিয়ার। এর আগে তার ইউরোপা লিগ জিতেছিল ২০০৬, ২০০৭, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০২০ সালে।
হাঙ্গেরির পুসকাস অ্যারেনায় গতকাল ফাইনালের ৩৫তম মিনিটে দারুণ এক পাল্টা আক্রমণ থেকে দিবালার গোলেই এগিয়ে গিয়েছিল রোমা। সেভিয়ার ইভান রাকিতিচের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মানচিনি দারুণ পাস দেন দিবালাকে। দুই ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে দলকে এগিয়ে দেল পাওলো দিবালা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতায় ফেরে সেভিয়া। এর দায় অবশ্য রোমার ডিফেন্ডার মানচিনিরও। প্রতিপক্ষের হেসুস নাভাসের একটি বিপজ্জনক ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে বল জড়িয়ে দেন তিনি।
এরপর ১-১ গোলের সমতায় শেষ হয় ৯০ মিনিটের খেলা। পরের ৩০ মিনিটও। শিরোপার নিষ্পত্তির জন্য শেষমেষ আশ্রয় নিতে হয় টাইব্রেকারের। যেখানে সেভিয়ার চার জন শট নিয়ে চারজনই সফল। লুকাস ওকাম্পোস, এরিক লামেলা ও ইভান রাকিতিচের পর সফল শট নেন মন্তিয়েল। স্পট কিকে রোমার গোলটি এসেছে ব্রায়ান ক্রিস্তান্তের শটে। হোসে মরিনিওর দলের দ্বিতীয় শট অসমান্য তৎপরতায় রুখে দেন সেভিয়া গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনু।
ইউরোপা লিগের ফাইনালে সেভিয়া যেমন ছিল অজেয়, তেমনি ইউরোপীয় কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালেও হারেননি কোচ হোসে মরিনিও। গতকাল আর জেতা হলো না তার। সেই দুঃখেই কি না, রানার্সআপ মেডেলটি গ্যালারির এক ক্ষুদে দর্শকের হাতে দিয়ে মাঠ ছাড়েন মরিনিও।