গত ফেব্রুয়ারি থেকে কোর্টে অপ্রতিরোধ্য দানিল মেদভেদেভ। তার এই ফর্ম দেখে কেউ কেউ ভেবেও ছিলেন-ইন্ডিয়ান ওয়েলস মাস্টার্স সিরিজের শিরোপাটা এবার হয়তো জিততে যাচ্ছেন মেদভেদেভই!
কারণও ছিল, একে তো টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত তিনি। তার ওপর আলকারাসের সঙ্গে আগের একমাত্র সাক্ষাতে জিতেছিলেন মেদভেদেভই। তাছাড়া হার্ড কাের্টের জোরাল প্রতিপক্ষ হিসেবেও সাম্প্রতিক সময়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মেদভেদেভ। কিন্তু আলকারাসের সামনে পেরে ওঠতে পারলেন না তিনি।
অবশ্য ফাইনালে দ্বৈত অর্জনের হাতছানি ছিল আলকারাসের সামনে। এমন সুযোগ কী হাতছাড়া করার পাত্র তিনি ! এক ঘণ্টা ১১ মিনিটেই ৬-৩, ৬-২ গেমে উড়িয়ে দিলেন মেদভেদেভকে। তাতে কাল প্রকাশিত এটিপি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরেও উঠে এসেছেন ১৯ বছর বয়সী আলকারাস।
গত ইউএস ওপেন জিতেই ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে র্যাঙ্কিং শীর্ষে উঠে এসেছিলেন আলকারাস। কিন্তু চোট এরপর তার পথচলাটাকে মসৃণ হতে দেয়নি। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে এটিপি ফাইনালস খেলা হয়নি তার। খেলা হয়নি অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও। কিন্তু ইন্ডিয়ান ওয়েলসে খেলতে নেমেই স্বরূপে হাজির আলকারাস। যে সম্ভাবনার বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে টেনিস র্যাঙ্কিংয়ের একে উঠে এসেছিলেন, তারই আলোকছটা দেখিয়ে হারিয়ে কাল হারিয়ে দিলেন মেদভেদেভকেও। তার সার্ভ, ভলি কিংবা ড্রপ শট-সবই ছিল দেখার মতো।
এই টুর্নামেন্টে অবশ্য ছিলেন না নোভাক জোকোভিচ। করোনা টিকা না নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা থাকায় টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া হয়নি সার্বিয়ান তারকার। তিনি খেললে হয়তো টুর্নামেন্ট জিতেই এক নম্বর হওয়া হতো না আলকারাসের। কিন্তু তা নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে তার! ম্যাচ শেষে বললেন, এখানে ট্রফি উচিয়ে ধরতে পারাটা আর র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থান ফিরে পাওয়াটা অন্যরকম অনুভূতির। আমি বলব এটা (আমার জন্য) নিঁখুত একটা টুর্নামেন্ট ছিল।
ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় ১০০০ মাস্টার্স সিরিজ আলকারাসের। বয়স ১৯ পেরোনোর আগেই তিনটি হাজার মাস্টার্স শিরোপা জয়ের কৃতিত্ব আছে আর একজনেরই-রাফায়েল নাদাল।
ঈদুল ফিতরের ৯ দিনের দীর্ঘ ছুটি শুরু হলেও শুক্রবার (২৮ মার্চ) ৪ রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সোনালী, জনতা, অগ্রণী এবং রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক এবং কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের আগেই বেতন-ভাতা তোলার সুবিধার্থে এসব ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা শুক্রবার খোলা থাকবে।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়াত্ত এসব ব্যাংক খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে।। এ সময়ের মধ্যে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত জুমাতুল বিদার বিরতি থাকবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়ম অনুযায়ী ভাতা পাবেন বলে নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
দুর্নীতির কারণে প্রায় ধসের মুখে থাকা ১১টি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকের মধ্যে ছয়টি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় মাসে আমানত সংগ্রহ ও গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে এসব ব্যাংক এ অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত বছরের আগস্টে গভর্নর আহসান এচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে।
ঘুরে দাঁড়ানো ছয়টি ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), আইএফআইসি ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। এসব ব্যাংকের বেশির ভাগই এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তারল্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়। সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি সহায়তার ফলে এগুলো তারল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ সরে যাওয়ার পর দেশের বৃহত্তম বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ব্যাংকটি গত ছয় মাসে ১৭ হাজার কোটি টাকা নতুন আমানত সংগ্রহ করেছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাপক আমানত উত্তোলনের চাপে পড়েছিল ব্যাংকটি, যার ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিতে হয়। তবে, বর্তমানে এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকটি পুনরায় স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা পায়। তবে, আমানতের ধারাবাহিক প্রবাহ বজায় থাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ব্যাংকটির আর তারল্য সহায়তার প্রয়োজন হয়নি।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ থেকে ব্যাংক মুক্ত হওয়ার পর চেয়ারম্যান নিযুক্ত ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ জানান, গত ছয় মাসে ব্যাংকটিতে সাড়ে ১২ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তিনি ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকাকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার মূল্যায়নের জন্য একটি অডিট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে এবং অতীতের অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
পূর্বে শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রিত আইএফআইসি ব্যাংক গত চার মাসে চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে, যা গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা আমানত হারায় ব্যাংকটি। ফলে অক্টোবরে ব্যাংকের মোট আমানত ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে, যেখানে জুলাই মাসে এটি ছিল ৫০ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা।
বিপুল পরিমাণ আমানত উত্তোলনের ফলে তারল্য সংকট দেখা দেয় এবং ব্যাংক আমানতকারীদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তবে, চেয়ারম্যান মো. মেহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে নবনিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদ গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় আমানতের প্রবাহ আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
পূর্বে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর আমানত উত্তোলনের চাপ কাটিয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমানত প্রবাহ বাড়ায় ব্যাংকটি নিজস্ব তারল্য দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ব্যাংকটি দুই হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। তবে, আমানত ক্ষয় বন্ধ হওয়ায় গ্রাহকেরা এখন আবার তাদের তহবিল ফিরিয়ে দিচ্ছেন। গত ছয় মাসে ব্যাংকটি দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা নিট আমানত সংগ্রহ করেছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ এসেছে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, যা আগে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সাত হাজার কোটি টাকা আমানত উত্তোলনের মুখে পড়েছিল। তবে তারল্য সংকট কাটিয়ে ওঠার পর ব্যাংকটি এখন স্বাভাবিক নগদ প্রবাহ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করায় ব্যাংকটির বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম পুনরায় সচল হয়েছে। তবে, এস আলম গ্রুপের সময় খোলা এলসির বিপরীতে বড় অঙ্কের অর্থ পরিশোধের বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যাংকটি এখনো কিছুটা তারল্য সংকটে রয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের পর ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটি নতুন করে ৯০০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এছাড়া, ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার কোটি টাকা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।
এক্সিম ব্যাংক ও আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রমও বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং আমানত উত্তোলনের চাপ কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এক্সিম ব্যাংক ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া তারল্য সহায়তার একটি বড় অংশ পরিশোধ করেছে। বর্তমানে এ দুটি ব্যাংক আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তার ওপর নির্ভর করছে না।
আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জর্জরিত দেশের ৬টি ব্যাংকের সম্পদের গুনমান মূল্যায়নে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়ং (ইওয়াই) ও কেপিএমজিকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে দেশের ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
নিরীক্ষার জন্য বাছাই ব্যাংকগুলো হলো-
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইওয়াই গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক এবং কেপিএমজি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের নীরিক্ষা করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা বলেন, ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা (এমডি) পদে ফিরতে পারবেন কিনা, তা নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
নিরীক্ষায় যদি প্রমাণিত হয় এমডিরা আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন, তাহলে তারা আবার তাদের ভূমিকায় ফিরে যেতে পারেন। অন্যথায় তাদের স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানান শিখা।
উল্লেখ্য, ৬টি ব্যাংকের মধ্যে চারটিই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। গত আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংস্কার প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে সহায়তাকারী এডিবি সম্প্রতি বাংলাদেশে প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। তারা ব্যাংকগুলোর সম্পদের গুণগত মান পর্যালোচনার সুপারিশ করায় এই উচ্চ পর্যায়ের নিরীক্ষা করা হয়।
এরই মধ্যে ৬টি ব্যাংকের কাছে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিরীক্ষা দলকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তা এবং এডিবির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বৈঠকে স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক পরিদর্শনে বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের আশঙ্কাজনক নমুনা পাওয়া গেছে।
ঋণ জালিয়াতিতে আলোচিত আরও ৫ ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- এক্সিম, গ্লোবাল ইসলামী, এসআইবিএল, আইসিবি ইসলামিক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। রোববার তাদের ছুটিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এডিবির অর্থায়নে ৬টি ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট শুরু করছে বিদেশি অডিট ফার্ম। স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিট সম্পন্ন করতে তারা চায় বর্তমান এমডিরা কেউ দায়িত্বে না থাকুক। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাতে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে।
বিএবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে অডিট সম্পন্ন করার জন্য এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারও দায় প্রমাণিত না হলে তিনি আবার ফিরতে পারবেন। এর আগে শনিবার ফার্স্টসিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তাকে আগামী তিন মাসের জন্য ছুটিতে পাঠানো হয়। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব পালন করবেন ব্যাংকটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক গত বৃহস্পতিবার ৬ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করে। সেখানে এসব ব্যাংকে অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এস আলম ঘনিষ্ঠ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক শনিবার পরিচালনা পর্ষদের জরুরি বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রোববার এস আলমের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলোর উচ্চ পদে শিগগিরই পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে। ২০১৭ সালে এস আলম ইসলামী ব্যাংক দখলের সময় আব্দুল মান্নানকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে পদত্যাগ করানো হয়।
সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ৯৮টি ব্যাংক হিসাবে ৩ হাজার ১৮১ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৯৭ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্যও পেয়েছে দুদক। এসব অভিযোগে নসরুল হামিদ বিপু, তার স্ত্রী সীমা হামিদ ও ছেলে জারিফ হামিদের নামেও আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
আক্তার হোসেন জানান, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে পাওয়া অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশে হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করায় দুদক আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আরেক মামলায় নসরুল হামিদ বিপু ও তার ছেলে জারিফ হামিদকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ছেলে জারিফের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। একইসঙ্গে তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ২৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা জমা এবং ১৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা উত্তোলনের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ছেলে জারিফের লেনদেনকে ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক’ উল্লেখ করে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ এবং পিতার প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তার ছেলে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
তৃতীয় মামলায় নসরুল হামিদ বিপু ও তার স্ত্রী সীমা হামিদকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় সীমার বিরুদ্ধে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া তার ২০টি ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৯ টাকা জমা এবং ১১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৮ টাকা উত্তোলনসহ ‘অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক’ লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক।
গত ২২ আগস্ট নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওইদিন তার প্রতিষ্ঠান হামিদ গ্রুপে অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এ ছাড়া রাজধানীর বনানীর নসরুল হামিদের ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ নামে ভবনের ভেতর থেকে বেশ কয়েকটি ভল্টে থাকা নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ২০০ তুর্কি মুদ্রা উদ্ধার এবং অস্ত্র-গুলিসহ অন্যান্য সামগ্রী জব্দ করা হয়।
আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার পরিবারের সদস্যদের নামের ১২৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক ইব্রাহীম মিয়া এ নির্দেশ দেন।
এদিন দুদকের উপপরিচালক (টিম লিডার) মো. আবু সাঈদ এ আবেদন করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত ১২৫ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণের নির্দেশ দেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম বিষয়টি বাসসকে নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের আবেদনে বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ০১ (এক) বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানকালে তার ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির বিভিন্ন শাখার ১২৫টি হিসাবে জমাকৃত বাইশ কোটি পয়ষট্টি লাখ ঊনপঞ্চাশ হাজার একশত একানব্বই টাকা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন। এসব হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ থাকার বিষয়টি অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।
আবেদনে আরও বলা হয়, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ গোপন উদ্দেশ্যে ব্যাংক হিসাবসমূহে জমা রেখেছেন। যেকোনো সময় এ অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে পাচার বা গোপন করার আশঙ্ক্ষা রয়েছে।
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংকগুলোতে প্রবেশ স্তরের চাকরির জন্য নতুন বয়সসীমা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকীর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা আগের ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩২ বছর নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত ১৮ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত একটি অধ্যাদেশে সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় এমন সরকারি করপোরেশন এবং স্ব-শাসিত সংস্থার জন্য সরাসরি নিয়োগের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩২ বছর করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘অধ্যাদেশের আলোকে এখন ব্যাংকগুলোকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছরের পরিবর্তে ৩২ বছর নির্ধারণের নির্দেশনা দেওয়া হলো।’
২০১৩ সালের ২৩ জুন বিআরপিডি সার্কুলার নম্বর ০৮-এ বর্ণিত পূর্বের নির্দেশনাও বাতিল করা হয়। তবে, প্রত্যাহার করা নির্দেশিকাগুলোর অধীনে পূর্বে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বৈধ থাকবে।
সংকটে পড়া ছয় ব্যাংকের ঋণপত্র (এলসি) খোলার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ঋণপত্র খোলার সময় এসব ব্যাংককে আর শতভাগ মার্জিন বজায় রাখতে হবে না। এর আগে চলতি বছরের আগস্টে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর এই উদ্যোগ নেওয়া হলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক চিঠির মাধ্যমে এসব ব্যাংককে এখন থেকে শতভাগ মার্জিন শর্ত না মেনে আগের নিয়মে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।
এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আগে সমালোচিত ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের দখলে ছিল।
জুলাই মাসে শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে স্থবিরতা এসেছে। এর প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। টানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত কমেছে ১২ শতাংশ। এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৪) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। আর তিন মাস পর অর্থাৎ সেপ্টেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মোট হিসাবধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ১০৯টি। সেই হিসাবে তিন মাসে হিসাব বেড়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৭৫১টি।
২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। আর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত কমেছে ৫৪৩ কোটি টাকা বা ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, উচ্চ-মূল্যস্ফীতির একটা বড় প্রভাব প্রান্তিক মানুষের ওপর পড়েছে। যার ফলে আমানত কমতে পারে। এ ছাড়াও গত বছরের জুন থেকে ব্যাংকিং খাতে প্রতি মাসেই ঋণের সুদহার বাড়ছে। যার কারণে গ্রাহকরাও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করছেন। প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে ঋণ বিতরণের স্থিতি বেড়েছে ২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকের বড় অংশই গ্রামের মানুষ। এ সময়ে গ্রামে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৯৫ জন। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্টধারীদের মধ্যে নারী গ্রাহকের সংখ্যা এখন ১ কোটি ১৭ লাখ ৪ হাজার ৮৪৬ জন।
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন সহজ করতেই মূলত এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হয়েছে। সাময়িকভাবে কোনো মাসে লেনদেন কমতে পারে। তবে বাস্তবিক অর্থে এটা এখন সারা দেশে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ সাধারণ মানুষ হাতের কাছে ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারছেন। এমনকি সাধারণ মানুষ এখন এসব এজেন্ট ব্যাংকিং থেকে ঋণও নিতে পারছেন।
আগামী বছরের শুরুতে পাঁচ দিন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের লেনদেন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। এ সময়ে ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথ থেকে কোনো সেবা পাবেন না ব্যাংকটির গ্রাহকরা। তবে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটের লেনদেন চালু থাকবে। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করার জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মূল ব্যাংকিং সেবা আগামী ১ থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটির কোনো গ্রাহক শাখায় যেমন লেনদেন করতে পারবেন না, তেমনি ব্যাংকটির এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারবেন না। এ ছাড়া ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট সাত দিন বন্ধ থাকবে। তবে এই বন্ধের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি ও বছরের প্রথম দিন হিসেবে ব্যাংক হলিডে রয়েছে। সেই হিসাবে মূলত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের স্বাভাবিক লেনদেন বন্ধ থাকবে দুই দিন।
বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি বুধবার ব্যাংক হলিডে। ৩ ও ৪ জানুয়ারি শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ফলে ২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ও ৫ জানুয়ারি রোববার ব্যাংকের লেনদেন বন্ধ থাকবে। কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার হালনাগাদ করতে ব্যাংক বন্ধ রাখার বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করা হয়। তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এ বিষয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘বছরের শুরুর সময়টাতে ব্যাংকিং লেনদেনের চাপ কম থাকে। তাই গ্রাহকসেবার মান আরও উন্নত করতে সফটওয়্যার হালনাগাদের জন্য আমরা এই সময়টাকে বেছে নিয়েছি।’
সমস্যা থাকলেও কোনো ব্যাংক বন্ধ করা হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ইসলামী ব্যাংকও উন্নতির দিকে রয়েছে। তবে কিছু ব্যাংকে এখনও সমস্যা আছে। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধ করব না।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ব্যাংকিং খাতকে স্থিতিশীল রাখতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আর্থিক ব্যবস্থাপনার দিকে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ব্যয় কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তবে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা এতে প্রভাবিত হবে না’বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রসঙ্গে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অপ্রয়োজনীয় বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।
চলতি ২০২৪ হিসাব বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকিং খাতের কোম্পানিগুলোর অধিকাংশ ভালো ব্যবসা করতে সক্ষম হয়েছে। এ সময়ে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি সংখ্যক ব্যাংকের মুনাফায়ও প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংকের চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৩৬টি। এর মধ্যে অনিবার্য কারণবশত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। বাকি ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা বেড়েছে ১৮টির। বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১৪টির। আর লোকসান করেছে ৩টি ব্যাংক। এর মধ্যে একটি নতুন করে লোকসানি তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
আলোচিত সময়ে শতকরা হিসাবে মুনাফায় সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি এসেছে ওয়ান ব্যাংকে। এ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এসেছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের মুনাফায়। আর মুনাফায় ৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তালিকায় ৩য় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। অন্যদিকে আলোচিত সময়ে মুনাফা সবচেয়ে বেশি কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। এই হার ছিল ৯০ শতাংশ। ৮৩ শতাংশ মুনাফা কমে তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক। আর এবি ব্যাংক ৬৫ শতাংশ মুনাফা হারিয়ে তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ওয়ান ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ৬৩ পয়সা। আগের বছরের প্রথম ৯ মাসে ২৮ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চলতি বছরের আলোচিত সময়ে শেয়ারপ্রতি ৪৮ পয়সা মুনাফা লুফে নিয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংক আলোচিত সময়ে ৪ টাকা ৯২ পয়সা ইপিএস করলেও আগের বছরের একই সময়ে ২ টাকা ৯৭ পয়সা শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছিল। আগের বছরের জানুয়ারি-সেপেম্বর সময়ে উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ২ টাকা ৩৭ পয়সা। চলতি বছরের একই সময়ে এ মুনাফা ৬১ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৮২ পয়সা হয়েছে। সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯৫ পয়সা ইপিএস করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৮ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে এই ইপিএস হয়েছিল ৬০ পয়সা।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৩৮ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৭ টাকা ৫৮ পয়সা, ইউসিবির ৩২ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৫১ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ২৪ শতাংশ বেড়ে ৪ টাকা ৬৯ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২২ শতাংশ বেড়ে ২৮ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ১৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৩৫ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ১৬ শতাংশ বেড়ে ৪৩ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৬৫ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৯ শতাংশ বেড়ে ৩ টাকা ৪১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ২ টাকা ১১ পয়সা, প্রাইম ব্যাংকের ৩ টাকা ৫ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের ৫ টাকা ৩০ পয়সা, ইউসিবির ১ টাকা ১৪ পয়সা, যমুনা ব্যাংকের ৩ টাকা ৭৮ পয়সা, এনআরবি ব্যাংকের ২৩ পয়সা, সিটি ব্যাংকের ২ টাকা ২৮ পয়সা, রূপালী ব্যাংকের ৩৭ পয়সা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ৩ টাকা ৩১ পয়সা এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ৩ টাকা ১৪ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
এ ছাড়া চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৮ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৪৮ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে যা হয়েছিল ২ টাকা ৩০ পয়সা। আর মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৭ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৭ পয়সা এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মুনাফা ৩ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৮৬ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংক দুটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল যথাক্রমে ১ টাকা ৯৪ পয়সা এবং ২ টাকা ৭৮ পয়সা।
অন্যদিকে মুনাফা কমে যাওয়া ১৪টি ব্যাংকের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে সবচেয়ে বেশি মুনাফা কমেছে ইউনিয়ন ব্যাংকের। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ১ টাকা ৩৫ পয়সা থেকে কমে মাত্র ১৪ পয়সা হয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এই মুনাফা ৯০ পয়সা থেকে কমে ১৫ পয়সা হয়েছে। আর এবি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা আলোচিত সময়ের ব্যবধানে ৫৪ পয়সা থেকে কমে ১৯ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আলোচিত ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ৬৩ শতাংশ কমে ৪৮ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ৪৯ শতাংশ কমে ৫৭ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪৮ শতাংশ কমে ১ টাকা ১৭ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৬ শতাংশ কমে ৩৬ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ৪৩ শতাংশ কমে ২ টাকা ৭০ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়া ব্যাংকের ৪২ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের ৯ মাসে ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ১ টাকা ৩০ পয়সা, আল্-আরাফাহ ব্যাংকে ১ টাকা ১২ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংকে ২ টাকা ২৫ পয়সা, আইএফআইসি ব্যাংকে ৬৭ পয়সা, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে ৪ টাকা ৭১ পয়সা এবং ব্যাংক এশিয়ায় ৩ টাকা পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা চলতি বছরের ৯ মাসে ৩৯ শতাংশ কমে ১ টাকা ৬৬ পয়সা, এনআরবিসি ব্যাংকে ২৪ শতাংশ কমে ৮৭ পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ২০ শতাংশ কমে ২ টাকা ৩ পয়সা, মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৭ শতাংশ কমে ৫৪ পয়সা এবং ঢাকা ব্যাংকে ৬ শতাংশ কমে ১ টাকা ৭৬ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে যথাক্রমে ব্যাংকগুলোর ২ টাকা ৭২ পয়সা, ১ টাকা ১৪ পয়সা, ২ টাকা ৫৩ পয়সা, ৮৫ পয়সা এবং ১ টাকা ৮৮ পয়সা ইপিএস হয়েছিল।
চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ৩টি লোকসান করেছে। এর মধ্যে দুটি আগের বছরের ধারাবাহিকতায় লোকসান করলে নতুন করে লোকসানের তালিকায় এসেছে এক্সিম ব্যাংক। আলোচিত সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৭৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যেখানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছিল ১ টাকা ৫৮ পয়সা। গতানুগতি অন্য দুই লোকসানি ব্যাংকের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের আলোচিত সময়ের শেয়ারপ্রতি লোকসান ৫৭ শতাংশ বেড়ে ৫ টাকা ৪৯ পয়সা হয়েছে। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এই লোকসান হয়েছিল ৩ টাকা ৪৯ পয়সা। আর আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান ২৭ শতাংশ বেড়ে ৭১ পয়সা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির এ লোকসান ৫৬ পয়সা হয়েছিল।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) সাভার শাখা থেকে রেমিট্যান্সের অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেছিলেন ৭৩ বছর বয়সি সাদেকুর রহমান। গত ২৪ অক্টোবর বাবা-মায়ের চিকিৎসাসহ সংসারের খরচের এক লাখ টাকা পাঠান সাদেকুরের ছেলে রইসউদ্দিন। ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত সাদেকুর তিন কিস্তিতে ৩৫ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সক্ষম হন।
মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাদেকুর বলেন, সংসারের খরচ মেটাতে কমপক্ষে ৭০ হাজার টাকা তুলতে হবে। কিন্তু এসআইবিএল নগদ অর্থের তীব্র সংকটে থাকায় ব্যাংক কর্মকর্তারা কয়েক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু সাদেকুরের নয়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সংকটাপন্ন ব্যাংকের বিপুল পরিমাণ খেলাপিঋণের কারণে তাদের অনেক গ্রাহক জমা অর্থে পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঋণগ্রহীতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং তহবিলের অব্যবস্থাপনার কারণে তাদের ব্যবসা ‘দুর্বল’ হয়ে পড়েছে। এসআইবিএলের সাভার শাখার কর্মকর্তা আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বলেন, অনেক আমানতকারী তাদের পুরো ব্যালেন্স তুলে নিতে চাচ্ছেন। এ কারণে ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে এ ব্যাংক।
তিনি বলেন, এই শাখায় ৮৭ কোটি টাকার আমানত রয়েছে। যদি এক-তৃতীয়াংশ আমানতকারীও স্বল্প সময়ের নোটিশে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করেন, তবে তা যেকোনো ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী জমা করা অর্থ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ঋণে বিনিয়োগ করা হয়। হোসেন আরও জানান, তারা আমানতকারীদের অল্প পরিমাণে নগদ অর্থ সরবরাহ করছেন এবং তাদের অর্থ কিস্তিতে ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
সম্প্রতি নগদ অর্থের প্রচলন কমলেও ঋণের কিস্তি নিয়মিত করে তা পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তা পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক (এফএসআইবি), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক আর্থিকভাবে সচ্ছল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা পেয়েছে। তা সত্ত্বেও আমানতকারীরা এসব ব্যাংকের শাখা, প্রধান কার্যালয় ও এটিএম বুথে ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু অনেক সময় তারা প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলন করতে পারেন না।
ন্যাশনাল ব্যাংক ছাড়াও তারল্য সংকটে থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণকারী অংশীদারত্ব রয়েছে। ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এস আলম গ্রুপের নিয়েছে এবং এসব অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ফলে ঋণগুলো খেলাপি হয়ে যায়। এতে করে এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ নগদ ঘাটতি রয়েছে।
এসআইবিএলের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ফোরকানুল্লাহ বলেন, নগদ অর্থের চাহিদা মেটাতে তাৎক্ষণিক তারল্য সমাধানের ব্যবস্থা করতে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতা নিচ্ছে। ব্যাংকটি গত দুই মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণের কিস্তি ও আমানত সংগ্রহ করেছে। এটি এসআইবিএলের নগদ প্রবাহকে ত্বরান্বিত করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসআইবিএল বর্তমানে আমানতকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী নগদ চাহিদা পূরণ করছে। কিন্তু একাধিক গ্রাহক একসঙ্গে টাকা তোলার চেষ্টা করায় কিছু শাখায় সমস্যা হচ্ছে।
ফরানউল্লাহ আরও বলেন, 'এ সমস্যা সম্পর্কে সবাই সচেতন, তবে গ্রাহকরা যদি তাদের তাৎক্ষণিক প্রয়োজনের বাইরে নগদ উত্তোলন অব্যাহত রাখেন তবে এটি দীর্ঘায়িত হবে। স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরলে আমানতকারীরা তাদের টাকা পাবেন ব্যাংক।’
এফএসআইবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তারল্য সহায়তার পর স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।
বোর্ড পুনর্গঠনের পর থেকে ব্যাংকটি সফলভাবে ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে যথেষ্ট তহবিল পুনরুদ্ধার করেছে বলে জানান তিনি।
এফএসআইবির চেয়ারম্যান বলেন, এফএসআইবি গ্রাহকদের মৌলিক চাহিদা, জরুরি চিকিৎসা, জরুরি পরিস্থিতি এবং রেমিট্যান্স এনক্যাশমেন্ট পূরণের জন্য ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পর্যায়ক্রমে বড় আমানতকারীদের ঋণ পরিশোধেও কাজ করছে ব্যাংকটি।
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, গ্রাহকদের অর্থ দিচ্ছে ব্যাংক, যদিও বড় অংকের উত্তোলন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে।
তিনি বলেন, এসব সমস্যা রাতারাতি তৈরি হয়নি, বেশ কয়েক বছর ধরে তৈরি হয়েছে। আমানতকারীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে মিন্টু বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হবে।