বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
১০ বৈশাখ ১৪৩২

নির্বাচন কমিশনকে অসহায় ও অকার্যকর করা হয়েছে: জি এম কাদের

ফাইল ছবি
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২০ জুন, ২০২৩ ২১:৪৫

জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে অসহায় ও অকার্যকর করা হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশের সরকার নির্বাচনব্যবস্থা কুক্ষিগত করতে পারে না। কারণ, সেসব দেশে নির্বাচনব্যবস্থা সরকারের ক্ষমতার আওতার বাইরে। এটা কোনো কঠিন কাজ নয়, শুধু সবার ইচ্ছে থাকলেই হয়।’

মঙ্গলবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় মিলনায়তনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব-২ খন্দকার দেলোয়ার জালালী উপস্থিত ছিলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে আমরা কুক্ষিগত করে ফেলেছি। নির্বাচন কমিশন ইচ্ছে করলেই ভালো নির্বাচন করতে পারবে না। কারণ, নির্বাচন কমিশনের হাত-পা সরকারের কাছে বাঁধা। এই কমিশন কারচুপির অভিযোগে গাইবান্ধায় একটি উপনির্বাচন বাতিল করেছে। সেই নির্বাচনের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলো অনেকেই কিন্তু কারোই শাস্তি হলো না। অভিযুক্ত অনেকেই নাকি পুরস্কৃত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সেই নির্বাচন আবারও হলো ভোট ডাকাতির মাধ্যমেই। নির্বাচন কমিশনকে অসহায় ও অকার্যকর করা হয়েছে।’

জাপা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘প্রতিটি সরকারই নির্বাচনব্যবস্থা নিজের আয়ত্তে রাখতে চেষ্টা করেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যারাই ক্ষমতায় ছিল, তারাই আইন পরিবর্তন করে দলীয় লোকজন নিয়োগ দিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের দলীয় নেতা-কর্মী বানানো হচ্ছে। দলীয় গুণ্ডা বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের কেন্দ্র দখল করা হচ্ছে।

নির্বাচন এলেই বিরোধীরা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে। কখনো সেই আন্দোলন সফল হয়েছে, কখনো হয়নি। এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন সফল হবে কি না, ভবিষ্যতে দেখা যাবে। ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন কারণে নির্বাচনব্যবস্থা নিজস্ব আয়ত্তে এনে সরকার গঠন করতে চাইবে। যতদিন না পর্যন্ত সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিদেশিদের একটি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করে। বিদেশিদের চাপ সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচন পর্যন্ত।’


আ.লীগ কীভাবে রাজনীতি করবে, সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনীতি করবে, সেই দায়িত্ব বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা ১১টায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার চারু শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের অগ্নিদগ্ধ বাড়ি পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘সমস্ত গণতন্ত্রকামী মানুষ আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু কনস্টিটিউশনালি বা আইনগতভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো ভিত্তি নেই।’

‘যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, তারা প্রত্যেকেই আপনাদের সমর্থন করেছে। সে অনুযায়ী আপনারা দেশ চালাচ্ছেন। এখন আওয়ামী লীগ কীভাবে রাজনীতি করবে, সে দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের,’ যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘প্রশাসন আপনাদের হাতে, অন্য সব স্টেট মেশিনারি আপনাদের হাতে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে আপনারা কী করবেন, সেটা আপনাদেরই ঠিক করতে হবে।’

‘আওয়ামী লীগের দোসরদের অনুসারীরা ঘাপটি মেরে আছে নানা জায়গায়। ওদের কাছে পেট্রোল কিনে বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার যে অর্থ, মানুষকে হত্যা করার জন্য যে অস্ত্র লাগে, সেসব তাদের কাছে আছে।’

তিনি বলেন, ‘সেটাকে দমন করতে আপনাদের কী আইন প্রণয়ন করতে হ,বে সেটা আপনারা জনগণের কাছে খোলাসা করুন। যেহেতু প্রশাসন আপনাদের হাতে। দোসরদের অনেকেই পালিয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী দেশসহ অনেক জায়গায়। কিন্তু যারা নৈরাজ্য ছড়াচ্ছে তারা প্রশ্রয় পাচ্ছে কার দ্বারা?’

‘যারা ১৫ বছর যাবত শেখ হাসিনাকে পাহারা দিয়েছে, ব্যাংক লুট করেছে, অন্যের সম্পদ লুট করেছে, টাকা পাচার করেছে, তারা আজ এই জনসমুদ্রের ভিতর কোথায় লুকিয়ে আছে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি খুঁজে বের করতে না পারে, তাহলে তো এই সরকারকে মানুষ ব্যর্থ সরকার বলবে,’ ভাষ্য রিজভীর।

এ সময় মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক সভাপতি আফরোজা খানম রিতা, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আজাদ খান, গোলাম আবেদীন কায়সার, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া হাবু, যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক তুহিনুর রহমান তুহিন, মাসুদ পারভেজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জিন্নাহ খান, ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল খালেক শুভ, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম খান সজীব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা দরকার: তারেক রহমান

লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তন অডিটোরিয়ামে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলছেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি সংস্কৃতি ও খেলাধুলা একটি বড় বিষয়। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুরা যাতে বাধ্যতামূলকভাবে সংস্কৃতি ও খেলাধুলাসহ সব অ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত থাকে। এর ফলে শিশুদের যেমন মানসিক বিকাশ ঘটবে তেমনই তাদের শারীরিক বিকাশও ঘটবে।

তিনি আরও বলেন, পত্র-পত্রিকা খুললেই সংস্কার আর সংস্কার। সংস্কার কিন্তু শুরু করেছে বিএনপি। শহীদ জিয়া প্রথম সংস্কার শুরু করেছেন খাল খননের মধ্য দিয়ে। বিএনপি যদি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সব খাল খনন করে জীবিত করা হবে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রথম কাজ হবে খাল খনন কর্মসূচি। নদীগুলোও খনন করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তন অডিটোরিয়ামে বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক দিনব্যাপী কর্মশালায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটির আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার শেষ বেলায় বিকেলে ভার্চুয়ালি যোগ দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশ যদিও ল্যান্ড ওয়াইজ (আয়তনের ক্ষেত্রে) বড় দেশ না, তবুও জনসংখ্যার ভিত্তিতে অনেক বড়। লালমনিরহাটের যেমন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কিছু বৈশিষ্ট্য আছে তেমনই কুড়িগ্রামের আছে, চট্টগ্রামের আছে, কুষ্টিয়ার ওইদিকেও আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কৃষ্টিকালচার সংস্কৃতি আছে। সে রকম আলাদা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্যও আছে। আর এই বৈশিষ্ট্যটাই হচ্ছে আমাদের ঐতিহ্য।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি যতবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে দেশীয় কৃষ্টি-কালচারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। আমরা জানি গত ১৭ বছর বহু সংস্কৃতিকর্মী কষ্টে জীবনযাপন করেছেন। চিকিৎসার অভাবে কষ্টে দিনযাপন করেছেন। যখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার কাছে সুযোগ ছিল এমন অনেক সংস্কৃতিকর্মীকে সহযোগিতা করা হয়েছিল। আমাদের সামগ্রিক চিন্তার মধ্যে যেটি রয়েছে তা হচ্ছে আমাদের এই কালচারকে এগিয়ে নিয়ে যাব। প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রেও কালচারাল একটি বিষয় থাকবে। খেলাধুলার বিষয় থাকবে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুরা যেন বাধ্যতামূলকভাবে সব অ্যাক্টিভিটিসে যুক্ত থাকে। এর ফলে তাদের যেমন মানসিক বিকাশ ঘটবে তেমনই শারীরিক বিকাশও ঘটবে।

তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে দেশের জনগণের স্বার্থে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে দলের যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, নেওয়াজ হালিমা আরলি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন শ্যামল। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লালমনিহাট জেলার পাঁচ উপজেলার দুই শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

কর্মশালায় অংশ নেওয়া বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে শান্তি ফিরে আসবে, সব সেক্টর দুর্নীতিমুক্ত হবে, দেশে থাকবে না একনায়কতন্ত্র শাসন ব্যবস্থা।

এর আগে কর্মশালার প্রথম অধিবেশনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, তারেক রহমানের ৩১ দফার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন হবে। একদলীয় শাসনের মাধ্যমে দেশের মানুষ আর জিম্মি থাকবে না। ৩১ দফার মাধ্যমেই দেশে শান্তি ফিরে আসবে।

তিনি আরও বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের মানুষকে মানুষ মনে করেনি, তারা তাদের মনঃপুত একটি দলকে প্রাধান্য দিয়েছে। জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে, তারা বাইরের প্রভুত্ব মানে না।


ডিসেম্বর ধরেই নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বিএনপি : নজরুল ইসলাম খান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

আগামী ডিসেম্বর ধরেই জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এ সময়ে ভোট আয়োজনে বাঁধা দেখছে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও সরকারের চাওয়ার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই। সরকার তো বলেনি ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমরা বলেছি, ডিসেম্বরের একটা তারিখ ধরে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক।’

আজ সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে লেবার পার্টির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এটাকে ধরে একটা রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হোক। সরকার বলছে যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে তারা তো বলেনি যে, ডিসেম্বর নির্বাচন হবে না। কিন্তু আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে এরকম একটা তারিখ ধরে রোড ম্যাপ ঘোষণা করা হোক। পার্থক্য তো খুব বেশি না।’

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকারের কথা অনুযায়ী নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারিতেও হতে পারে। কাজেই আমাদের সঙ্গে সরকারের পার্থক্য তো বহু মাসের না। আমরা শুধু সরকারকে বলছি, এভাবে না বলে, এভাবে বলেন।’

চলতি বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের দ্বায়িত্ব পূর্ণ করতে যাচ্ছেন। তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচনে বাধা কোথায় প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, যারা ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না তাদেরই উত্তর দিতে হবে বছরের শেষে ভোটগ্রহণে অসুবিধা কোথায়?

বিএনপি ৩১ দফা থেকে সরে যাচ্ছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এখানে সরাসরি কোনো ব্যাপার নেই। ৩১ দফা বিএনপির প্রস্তাব। সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে এর প্রেক্ষিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মতামত প্রদান করেছে। এটা নিয়ে এখনো কোনো ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। আমরা বলেছি পর পর দু’বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না। এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলাম তখন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছিলেন, এর চেয়ে ভালো কোনো প্রস্তাব যদি কারো কাছে থাকে তাহলে সেটা আমরা বিবেচনা করবো। এ কারণে আমরা দেখবো এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব যদি কেউ দেয় সেটা যদি অধিকতর যুক্তিসংগত হয় তবে গ্রহণ করার সঙ্গে ৩১ দফার থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দাবি করছে প্রশাসন বিএনপির হয়ে কাজ করছে, সেক্ষেত্রে তারা মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন রেখে নজরুল ইসলাম বলেন, যারা অভিযোগ করছেন তারা সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন, তারাই বিএনপির লোক বসিয়ে এসেছেন কিনা?

তিনি বলেন, ‘বিএনপিকে তো প্রশাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে। কোথাও বিএনপির কোনো ছিল না। যারা বৈষম্যের শিকার ছিল, যাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের ৭’শ অফিসারকে এখনো কোথাও পদায়ন করা হয়নি। তাহলে বিএনপির লোককে বসানো হলো কোথায়?’

বৈঠক শেষে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জনগণ ও রাজনীতিবিদদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ড. ইউনূস ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। লেবার পাটির পক্ষ থেকে বিএনপির কাছে জাতীয় কনভেনশন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাইনি: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

জুলাই-আগস্টের ত্যাগের পরও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ পাননি মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা কিন্তু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এখনো কোনো নির্বাচিত সরকার বা পার্লামেন্ট পাইনি। সে জন্য আমাদের দৃঢ়তা এবং সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের সব সময় সজাগ থাকতে হবে। এ জন্য আমাদের সংগঠনকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে হবে।

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ‘শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকের এ সময়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকে কতগুলো নির্ধারিত বিষয়কে আমরা অনির্ধারিত করে ফেলেছি। নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে সব দলের উচিত হবে বিষয়গুলো নিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য সমাধান করা। আমাদের আশা আমরা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে একটি কাঙ্ক্ষিত আশা পূরণ করতে পারব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এ পরিচয় আমি দিতে চাই না। তিনি এর থেকেও অনেক বড় মানের নেতা ছিলেন। এ মহান মানুষটির প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তিনি চলে গেছেন তবে আমাদের জন্য রেখে গেছেন তার কাজগুলো। এ কাজগুলো যদি আমরা অনুসরণ করি তাহলে অনেক উপকার হবে।

তিনি বলেন, আজকের এ সময় জাতির জন্য নোমান ভাইয়ের প্রয়োজনটা অনেক বেশি ছিল। এ ফ্যাসিবাদ পতনের পর জনগণকে সঠিক পথে নেওয়া সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কাজটা নোমান ভাই সব থেকে ভালো পারতেন। তিনি সহজেই জনমতকে এক করে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারতেন।

প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ত্যাগী শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। যারা এ হত্যাকাণ্ড করেছে তারা কখনো এ দেশের মঙ্গলের সঙ্গে থাকতে পারে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলন বাদেও ১৫ বছরের যত আন্দোলনে শ্রমিকরা আত্মহুতি দিয়েছেন, তাদের তালিকা শ্রমিক দলের কাছে থাকা উচিত। আমি আশা করব আমাদের শ্রমিক নেতারা এ বিষয়টাকে গুরুত্ব দেবেন এবং এ তালিকা তৈরি করবেন।

সরকার পরিবর্তন হলে শ্রমিকদের নেতৃত্বও পরিবর্তন হয়ে যায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যতই আন্দোলন করেন লাভ হবে না। শ্রমিকদের কথা শ্রমিকদেরই বলতে হবে। এজন্য শ্রমিকদেরই নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যাতে করে কোনো সুবিধাভোগী এসে যেন সুবিধা নিতে না পারেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আজকে একটি পক্ষ বলছে আমাদের কোনো অবদান নেই, তাদের সব অবদান। তাই আজকে আমি বলতে চাই আসুন না আমরা সবাই একজোট হই, ঐক্যবদ্ধ হই। নিজেদের আরও দৃঢ়ভাবে তৈরি করি। যাতে করে তাদের সেই তাদের বোধ থেকে সরিয়ে দিতে পারি এবং আমাদের অধিকারকে যেন আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। নোমান ভাইয়ের আত্মা সেদিনই শান্তি পাবে যেদিন তিনি ওপার থেকে দেখতে পারবেন এদেশে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্র‍য়াত বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাইদ আল নোমান দুর্জয় বলেন, আমার বাবা জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত কোনো শর্ত দিয়ে রাজনীতি করেননি। আমার বাবা মনে করতেন রাজনীতিতে নেওয়ার কিছু নেই, রাজনীতিতে দেওয়ার অনেক কিছু আছে। আমার বাবা দলকে কখনো বলেনি আমাকে কিছু না দিলে আমি কিছু করব না। আমার বাবা চট্টগ্রামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। এ কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী এক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনি তার রাজনীতি শুরু করেন শ্রমিক নেতা হওয়ার মাধ্যমে। ১৯৭৮ সালে তিনি যখন শ্রমিক দলের দায়িত্বে ছিলেন তখন তার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়। নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমি বহু বছর কাজ করেছি। দীর্ঘদিন তিনি সভাপতি ছিলেন আমি সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তার সঙ্গে আমার কখনো কোনো দ্বন্দ্ব হয়নি।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, চট্টগ্রামের বিএনপির রাজনীতির ইতিহাসে নোমান ভাই ছিলেন নেতাদের নেতা। চট্টগ্রামের বহু নেতা নোমান ভাইয়ের অধীনে রাজনীতি করেছেন। এমনকি যেদিন তিনি মারা যাবেন সেদিনও তিনি চট্টগ্রামের এক জনসভায় যেতে চেয়েছিলেন। নোমান ভাইয়ের মতো আপাদমস্তক রাজনীতি করা লোক সহজে দেখা যায় না। আমরা যদি তার আদর্শ ধারণ করে চলতে পারি তাহলে তার রাজনীতি সার্থক হবে।


টানা দুবারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকার পক্ষে বিএনপি

* ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২১ এপ্রিল, ২০২৫ ১২:৩৪
নিজস্ব প্রতিবেদক
    * সংসদে নারী আসন ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে একমত * সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনে সংশোধনে রাজি * নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ন্যূনতম বয়স ২১ করার প্রস্তাবে দ্বিমত * ‘একই ব্যক্তি সংসদ নেতা এবং পার্টিপ্রধান হবেন না’, সুপারিশে ভিন্নমত

কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় এ প্রস্তাবের পক্ষে একমত নয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি মনে করছে, টানা দুবারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে কেউ আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে, সে সুযোগ থাকতে হবে। এটা সংকুচিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির এ অবস্থানের কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো বৈঠক শুরু হয় বিএনপির।

আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সেই সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না। আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না- এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদেরকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি আস্থা বিল এবং অর্থ বিলের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই একমত। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার্থে এবং সরকারের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করার স্বার্থে আমরা চারটা বিষয় এখানে উল্লেখ করেছি–অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন– এই চারটা বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের বক্তব্য এবং ভোট প্রদান করতে পারবে। তাতে তাদের সংসদ সদস্যপদ বিলুপ্ত হবে না।’

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। সেখানে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

এই বিধানের কারণে খোদ সংসদেই গণতন্ত্র চর্চা ব্যহাত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করে আসছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। সেজন্য ৭০ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বিলোপের দাবিও জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংঠন। নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স নূন্যতম ২১ বছর করার প্রস্তাবনায় বিএনপির দ্বিমত প্রকাশ করেছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা যায়, সবগুলোতে নয়। এক ব্যক্তি দল এবং সরকার প্রধান না হওয়ার প্রস্তাবনায় আপত্তি রয়েছে। এটি দলের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য অপশন থাকা উচিত।’

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা এটার বিপক্ষে মতামত দিয়েছি। বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। বিএনপি সেখানে একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত। কিন্তু এখন যেমন আছে, সেটা আগামী সংসদ পর্যন্ত বহাল থাকতে হবে। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার পর তাদের (নারীদের) কোন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে বিএনপি একমত জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়, তারপরও নির্বাচন আয়োজনের সময় তারা প্রয়োজনের খাতিরেই ৯০ দিনের জন্য অনির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে চান।

‘দিস ইজ ডকট্রিন অব নেসেসিটি। আমাদের পলিটিক্যাল হিস্ট্রিতে ও কালচারে দেখা গেছে উইথআউট কেয়ারটেকার গভার্নমেন্ট আমরা কোনো ইলেকশনই অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু করতে পারি না।’ ‘যতদিন পর্যন্ত আমরা সেই কালচারে উন্নীত হতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আমাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকারের বিধানটা রাখা উচিত। এই ভোটের জন্য আমরা ১৫ বছর আন্দোলনও করেছি,’ যোগ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, রাষ্ট্রপতিকে কী কী বিষয়ে ক্ষমতায়িত করে আইন প্রণয়ন করা যায় সেসব কিছু বিষয়ে এবং নিয়োগের কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। সেগুলো নতুন আইন প্রণয়ন করে সংসদ প্রণীত করা যাবে। সেক্ষেত্রে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং রাষ্ট্রপতির আরো ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।’

তবে ‘ন্যাশনাল কন্টিস্টিটিউশন কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা নতুন ধারণা বাংলাদেশের পলিটিক্যাল কালচারে বা সংসদীয় কালচারে, যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উভয় কক্ষের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতিসহ আরও কয়েকজনের কথা বলা আছে। এই বডিটার হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষমতা–যেমন সব কমিশন, তিন বাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে পিএসসি, দুদকসহ আরও যেসব সাংবিধানিক পদ আছে… এগুলো আমরা একমত নই।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, তাতে রাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভ ফাংশনটাকে এত বেশি লিমিট করা হবে যে এক্সিকিউটিভ বা প্রধানমন্ত্রী যে নামেই ডাকি, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে। অথচ দায়িত্বটা থাকবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগনের কাছে এবং সংসদে কাছে, অথচ তার কাছে তেমন কোনো পাওয়ার দেওয়া থাকল না।’

বিএনপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখা পক্ষেই মত দিয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কমিশনকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না।


ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় বিএনপি

রবিবার সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসেছে বিএনপি প্রতিনিধি দল। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের সংলাপে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এই সংলাপ শুরু হয়।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া রাষ্ট্রীয় সংস্কার উদ্যোগের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করছে কমিশন।

কমিশনের সঙ্গে আজকের সংলাপে অংশ নিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিএনপি প্রতিনিধি দল।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে আলোচনা চলছে।

সংলাপে অংশ নেওয়া প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, সাবেক সচিব আবু মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিট থেকে বিকাল পৌনে ৫টা পর্যন্ত কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। তবে এই সময়ের মধ্যে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিও ছিল।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলোতে একটি অংশীদারিত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে।

এখন পর্যন্ত, কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছেন ১৩টি রাজনৈতিক দল।

চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই কমিশনকে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের উপর একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় অবস্থান তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক পর্যায়ে এটি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের মূল সুপারিশগুলো প্রস্তুত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক, জনপ্রশাসন, নির্বাচনী, বিচার বিভাগীয় এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্কারগুলো। মূল সুপারিশগুলোর ওপর মতামত চেয়ে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে এর স্প্রেডশিট পাঠানো হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৩৪টি দল তাদের মতামত জানিয়েছে।

কমিশন মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তার প্রথম দফার আলোচনা সম্পন্ন করবে। একই মাসের মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দ্বিতীয় দফার আলোচনা শুরু করার কথা এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।


সংস্কার ও খুনিদের বিচারের আগে নির্বাচন নয়: জামায়াতের আমির

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আগামীতে যেকোনো নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের আগে অবশ্যই দুটি কাজ সম্পন্ন করতে হবে। একটি হচ্ছে খুনিদের বিচার, যা দৃশ্যমান হতে হবে। আর আরেকটি হচ্ছে প্রয়োজনীয় সংস্কার—এই দুটি ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’

শনিবার (১৯ এপ্রিল) লালমনিরহাটের কালেক্টরেট মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, কালো টাকা ও পেশীশক্তির প্রভাবযুক্ত নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। সেজন্য অবশ্যই নির্বাচনের সমতল মাঠ তৈরি করতে হবে।’

ভারতের সঙ্গে সম্প্রীতি, শ্রদ্ধা ও সমতার ভিত্তিতে প্রতিবেশী হিসেবে বসবাসের দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমরা ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকবে। আমাদের ভালো কেড়ে নিলে ভারতকে চিন্তা করতে হবে তারা ভালো থাকবে কিনা।’

জামায়াতপ্রধান আরও বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনও কিছু কু-রাজনীতিক চাঁদাবাজি-দখলবাজি করছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের সম্মান, নিরাপত্তা ও কাজের ব্যবস্থা করবে বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।

পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ লালমনিরহাটের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীকে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান।

তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই—যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন চাই না। টুকরা টুকরা জাতি চাই না। আমরা মাইনরিটি ও মেজরিটি শব্দই শুনতে চাই না।

ডা. শফিকুর বলেন, এখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও বলছে এই কথাগুলো বলেই বলেই আমাদের শোষণ করা হয়েছে। আমরাও চাই না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই দেশকে গড়ে তুলবো। নারীদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তারা নিরাপদভাবেই ঘরে থাকবেন, বাইরে যাবেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। যুবকদের হাতকে আমরা কাজের হাতে পরিণত করব। সেই অপেক্ষায় আছি।

তিনি বলেন, আমাদের লাখ লাখ মানুষ বলছেন, জীবন দেবো, দেশের সার্বভৌমত্ব দেবো না। কারো লাল চোখের দিকে আর আমরা তাকাবো না। আমাদের দিকে যদি কেউ লাল চোখ তুলে তাকায় তাও আমরা বরদাশতহ করব না। আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো হাতে বন্দি হওয়ার জন্য না। বরং সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই বৈষম্যহীন মানবিক সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চায় বলে উল্লেখ করেন জামায়াত আমির।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা সেই দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা বিভেদহীন জাতি চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি নিয়ে সামনে এগোতে চাই, লালমনিরহাটের প্রাণের দাবি তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও লালমনিরহাটের বিমানবন্দর চালু করতে হবে—তাহলে বেকারত্ব দূর হবে।

কালেক্টরেট মাঠ ছাড়াও শহরের অপর একটি মাঠে নারীদের জন্য বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়।

জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আবু তাহেরের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন ও অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দও এসময় জনসভায় বক্তব্য দেন।


বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে সিরিয়াস: সালাহউদ্দিন

* ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির সংলাপ
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিবেদক
    * সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে স্প্রেডশিটের বিস্তর ফারাক * সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় হলে প্রশ্ন উঠবে

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশের মধ্যে ২৫টির সঙ্গে একমত ও ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত এবং বাকিগুলোতে দ্বিমত প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বিশেষ করে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানসম্মত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এছাড়া সুপারিশগুলো ‘স্প্রেডশিট’ আকারে পাঠিয়ে হ্যা-না মতামতের প্রক্রিয়া বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়েও দলটির পক্ষ থেকে মতামত দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের বিরতিতে এসব বিষয় গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে স্প্রেডশিটের ‘বিস্তর ফারাক’ তারা দেখতে পেয়েছেন। ‘স্প্রেডশিটে সংক্ষিপ্ত হ্যাঁ/না জবাব দেওয়ার জন্য যে কাগজগুলো দিল, তাতে করে অনেকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে, মিস লিড করা হয়েছে। স্প্রেডশিট দিয়ে আমাদের উনারা বিভ্রান্ত করেছেন, মিস লিড করেছেন। এটা দেওয়া উচিত হয়নি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এ সদস্য জানান, দলের পক্ষ থেকে তারা সুপারিশের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার সংক্রান্ত হার্ড কপি জমা দিয়েছেন। সংবিধান সংস্কার, বিচার বিভাগ, নির্বাচনসহ সব বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে। বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে সিরিয়াস বলে এ সময় উল্লেখ করেন তিনি। বিচারবিভাগের সংস্কারে ৮৯ দফা নিয়ে মতামত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু সাংবিধানিক হওয়া উচিত। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা চাই। প্রক্রিয়াটা যেন সাংবিধানিক হয়। বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশিরভাগই সংশোধনী দিয়েছে। এনআইডি, সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।’

সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৩১টি প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে এর মাত্র ৭০ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের ২৫টি প্রস্তাবে একমত, ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত। বাকি বিষয়গুলোতে একমত হতে পারেনি। আমরা যে সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি, সে বিষয়ে কমিশনকে যৌক্তিকভাবে বোঝাব এবং তাদের প্রস্তাবের বিষয়েও আমরা যৌক্তিকভাবে জানতে চাচ্ছি। যেটা যৌক্তিক, সেটা জাতির কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব।

বিচার বিভাগের মতামত নিয়ে প্রতিবেদনে ‘মিস লিড’ করার অভিযোগ তুলে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিস্তারিত প্রতিবেদনের ১৫০টি মতামতের মধ্যে ৮৯টির বিষয়ে মতামত দিয়েছি। বাকিগুলোর অধিকাংশ ক্ষেত্রে একমত হওয়া বা মন্তব্যসহ একমত হওয়ার কথা জানিয়েছি। যেসব বিষয়ে ‘হ্যাঁ/ না’ তে মতামত চাওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে বিস্তারিত প্রতিবেদনের ‘বিস্তর ফারাক’। কেননা সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের সংশোধনী ব্যতিরেকে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ জারি করা ততক্ষণ পর্যন্ত অসাংবিধানিক হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তা সংবিধানে গৃহীত হচ্ছে। এছাড়া ‘১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানসম্মত হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রইবে। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না।’ বিএনপি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় জানিয়ে সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘প্রক্রিয়া যাতে আইনানুগ ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে হয়, সেজন্য বিস্তারিত মতামত দেব। লিখিতও দিয়েছি।’

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অধিকাংশ বিষয় ‘সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত’– মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘কিছু বিষয়ে তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা বজায় থাকবে না।’ যদিও বিএনপির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রয়োজনে আরও আলোচনা হবে। কারণ আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আগাচ্ছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলে বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। এ দলে আরো ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যরিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে বিএনপির সঙ্গে কমিশনের বৈঠক শুরু হয়।

ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্র্বতী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে দুই ধাপে ১১টি কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। সেদিন ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রথম বৈঠক হয়। এরপর সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চায় ঐকমত্য কমিশন। পরে মতামত তুলে ধরে ৩৪টি দল, যাদের সঙ্গে এখন আলাদা করে বৈঠক করছে কমিশন।

বৃহস্পতিবার বিএনপির সেঙ্গে আলোচনার শুরুতে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এদেশে গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে, ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে; সেগুলো যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সংগ্রাম করেছে, বিএনপি অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা; যাতে করে বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’


বিএনপি সংস্কারেরই দল, তবে সবকিছুর মূলে জনগণ: নজরুল ইসলাম খান

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘বরং বিএনপি সংস্কারেরই দল, তবে সবকিছুর মূলে জনগণ। জনগণের সম্মতিতে যেন সব হয়।’

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।

নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, ‘আমরা গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে নয়, বিএনপি সংস্কারেরই দল। কিন্তু কেউ কেউ নানান কথা বলেন। তারা যখন সংস্কারের দন্তস্য উচ্চারণ করেননি, তখন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন।’

সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংসদের এলডি হলে শুরু হয়েছে।

গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ আন্দোলন–সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের সামনে আরেকবার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা তা কাজে লাগাতে চাই। আমরা এই কমিশনকে সহযোগিতা করছি, এই সরকারকে সহযোগিতা করছি, সেই প্রত্যাশা নিয়েই।’

যদি ঐকমত্য কমিশনের কোনো সনদ না-ও হয়, বিএনপির জন্য সংস্কারের সনদ রয়েছে বলে জানান নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সবকিছুর মূলে জনগণ এবং জনগণের সম্মতিতে যেন সব হয়। তিনি আরও বলেন, ‘আর জনগণ কার মাধ্যমে সম্মতি জানায়, তা আমরা জানি।’

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ,আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সচিব নিরুজ্জামান খান অংশ নেন।

আজ দিনব্যাপী এই আলোচনা চলতে পারে বলে ঐক্য কমিশন সূত্রে জানা গেছে। আজ আলোচনা শেষ না হলে প্রয়োজনে আগামী সপ্তাহে আবারও বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন।


প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারে সন্তুষ্ট নই: মির্জা ফখরুল

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিনিধি

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের’ ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে’ এমন বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘তার (প্রধান উপদেষ্টার) বক্তব্যে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই।’

আজ বুধবার মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে বের হওয়ার পর তিনি এ হতাশা ব্যক্ত করেন। বিএনপির মিডিয়া উইং থেকে জানানো হয়, বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে একটি চিঠিও দেয়া হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন দেননি। তিনি বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে তিনি নির্বাচন শেষ করতে চান। উনি ডিসেম্বর থেকে জুন বলেছেন, উনি বলেননি এটা ডিসেম্বরে হবে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, আমাদের কাটঅফ টাইম ইজ ডিসেম্বর। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন যদি না হয়, তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি, সেটা আরও খারাপের দিকে যাবে। সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।এ সময় ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে বিএনপি কী করবে-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব বলেন, দলের মধ্যে এবং মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয় ছিলো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে। সে বিষয়ে কথা বলেছি। আর বলেছি যে, যে পরিস্থিতি আছে এবং দেশের যে অবস্থা, তাতে করে আমরা বিশ্বাস করি এখানে দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, যে সংস্কার কমিশনগুলো করা হয়েছে, সেগুলোতে আমরা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছি। কয়েকদিন আগে সংস্কার কমিশনের কাছে আমাদের মতামতগুলো দিয়েছি। আগামীকালও আমাদের সঙ্গে বৈঠক আছে। সবগুলো দল যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি। বাকি যেসব সংস্কারে আমরা একমত হব, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলো বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের (বিএনপির) মূল কথা।

এ বৈঠকের জন্য বেলা সোয় ১২টায় ‘যমুনা’য় পৌঁছায় বিএনপি মহাসচিবসহ দলের স্থায়ী কমিটির ৭ সদস্য। পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে নির্বাচনী রোডম্যাপ, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, শেখ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

সরকারের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ছিলেন উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

চিঠিতে যা বলা হয়েছে

চিঠিতে বিএনপি উল্লেখ করে, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণতন্ত্র ও মানবিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রতিটি লড়াইয়ের নেতৃত্বদানকারী কিংবা গর্বিত সক্রিয় অংশীদার হিসেবে বিএনপি তার অবস্থান থেকে প্রতিটি লড়াইয়ের সুফল জনগণের জন্য কার্যকর করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে এবং করছে। সেই লক্ষ্যেই এবারও জুলাই-আগস্টের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল জনগণের কল্যাণে এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিবেদিত করার টেকসই ক্ষেত্র প্রস্তুতের লক্ষ্যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপরিচালনার ভার আপনার নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা সমর্থন জানিয়েছি এবং দায়িত্ব পালনে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি এবং সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। আপনার ও আপনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বতী সরকারের কাছে প্রায় দেড় যুগ ধরে গণতান্ত্রিক অধিকারহীন জনগণের স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল। যত দ্রুত সম্ভব ফ্যাসিবাদী দল, তাদের দলীয় সরকার ও তার দোসরদের আইনের আওতায় এনে তাদের গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, দুর্নীতি-অনাচারের মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুণ্ঠনকারীদের বিচার ও পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারের, ফ্যাসিস্ট সরকারের হাতে নিহত ও আহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ, সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পতিত সরকারের সব অপচক্র ও সিন্ডিকেট ধ্বংস করার পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া, যাতে তারা সম্মিলিতভাবে দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি, উন্নত অর্থনীতি এবং জনগণের মানবিক অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে পারে।’

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘বিএনপি মনে করে যে জনগণের স্বার্থরক্ষা ও স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংস্কার একটি সদা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া। বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো “আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র” যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল, এখনো কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” তেমনই ভ্রান্ত কূটতর্ক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবগুলো পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়; পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।’

এতে আরও বলা হয়, আজ যারা সংস্কারের কথা বেশি বেশি বলে এবং বিএনপিকে সংস্কারের বিপক্ষের শক্তি বলে চিহ্নিত করার অপচেষ্টা করছে, তাদের ভিশন-২০৩০ এবং রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা কর্মসূচিতে যেসব সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে ও যেসব পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে, তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোষ্ঠীস্বার্থে এবং রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে হেয় ও অপ্রাসঙ্গিক করার অপচেষ্টায় অযথা সময়ক্ষেপণ করে জনগণকে তাদের ভোটাধিকার তথা রাষ্ট্রের মালিকানা প্রতিষ্ঠার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার কৌশলকে বিএনপি সমর্থন করে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে জনগণের সম্মতি নিয়ে ৩১ দফায় বর্ণিত এবং ঐকমত্যে গৃহীত সব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে। চিঠিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী ও তার সরকারের বক্তব্য ও মতামতে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি এর কিছু ব্যতিক্রম আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করি আপনি এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’

বিএনপি বলে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি, বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব পরিবর্তন জরুরি, তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সে লক্ষ্যে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার এবং নির্বাচনি এলাকা পুনর্র্নিধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছি। একই সঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল, তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার; জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসা দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনার অধিকতর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ১/১১-এর অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে করা সব মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।


তিন খাতে দ্রুত সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চাইবে বিএনপি

* প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আজ
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বিশেষ প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আজ বুধবার সাক্ষাৎ করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর আগে একাধিকবার প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বৈঠকে অংশ নিলেও আজ নিজেদের আগ্রহে তার সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছে দলটি। দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, আলোচনার মূল ইস্যু হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। বৈঠকে তারা কবে নির্বাচন এবং কবে নাগাদ এর রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানতে চাইবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে আজকের বৈঠকের সম্ভাব্য এজেন্ডা জানতে চাইলে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে, নির্বাচন থাকবে প্রধান ইস্যু। পূর্বের দাবি অনুযায়ী, নির্বাচনের লক্ষ্যে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ এবং প্রশাসন’ এই তিন খাতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন, ততটুকু দ্রুত সম্পন্ন করে দাবিকৃত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানানো হবে।

প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একাধিকবার তার প্রকাশ্য বক্তব্যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। তার মতে, দলগুলো বড় ধরনের সংস্কার চাইলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে আর কম সংস্কার চাইলে নির্বাচন হতে পারে ডিসেম্বরে। কিন্তু বিএনপি দাবি করে আসছে চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন। দলটির নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে বারবার চলতি বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছেন। ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বলেও তারা উল্লেখ করেন।

যদিও নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির দাবির পক্ষে অন্য দলগুলো একমত নয়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। জামায়াত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দাবি করেছে। আর এনসিপির নেতারা বলছেন, সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন হতে হবে।

যদিও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দৈনিক বাংলাকে জানান, নির্বাচন নিয়ে চারদিকে যেসব গুজব ডালপালা মেলছে সেসব বন্ধে প্রধান উপদেষ্টাকে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ গত ৯ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট করেই বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চাওয়া হবে।

তিনি বলেছেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ডিসেম্বরের আগে একটা রোডম্যাপ অবশ্যই চাইব। তিনি তা স্পষ্টভাবে জাতির সামনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করেন, যাতে অনিশ্চয়তার যে একটা ভাব আছে, সেটা কেটে যায়।

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা বলব যে এটা যথেষ্ট সময়। তার আগে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা জুনের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবে। প্রধান উপদেষ্টাও ইতোপূর্বে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার জন্য তারা সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘যেহেতু বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পক্ষের বক্তব্যে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে, সেটি পরিষ্কার করার জন্য আমরা তাকে (প্রধান উপদেষ্টা) আহ্বান জানাব।’

উল্লেখ্য যে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতন ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এরপর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রথম থেকেই বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিএনপি বলছে, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন নেওয়ার চেষ্টা হলে তারা বিরোধিতা করবে এবং প্রয়োজনে রাজপথে কর্মসূচি পালন করবে।

জানা যায়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করবে বিএনপি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পর দলটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আজকের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।


আমরা ঐক্যের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব

ছবি:সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করব। নিঃসন্দেহে আমাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব হবে এবং আমরা সফল হবো।’

আগামী ১৬ এপ্রিল উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের নতুন রোডম্যাপ আশা করছি। আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে শিফটিং হচ্ছে, এই সমস্যারও সমাধান হবে।’

এক সপ্তাহ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আজ সোমবার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি’র মহাসচিব এসব কথা বলেন।

দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা গোটা জাতি আশা করছি- বাংলার ১৪৩২ নববর্ষ গোটা জাতির জন্য নতুন দিগন্ত নিয়ে আসবে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মন ও হৃদয় উদ্ভাসিত হবে, নতুন সম্ভাবনার আনন্দে। এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। মনে করি, আমাদের অতীতের যত ধুলোবালি, জঞ্জাল সবকিছু উড়িয়ে দিয়ে নতুন বৈশাখ সম্পূর্ণ এক নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবে।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুরে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্ত্রী রাহাত আরা বেগম।


নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

আজকের নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা অতিদ্রুত মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ সোমবার দুপুরে নববর্ষ উপলক্ষে রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে সতীর্থ স্বজনের উদ্যোগে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন,'যার জন্য আমরা গত ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে লড়াই করছি এখনও সেটি নিশ্চিত হয়নি। সেটি নিশ্চিত করার পথেই আমরা এগুচ্ছি। কিন্তু, এটি নিয়ে টালবাহানা করা চলবে না। চলবে না এই অর্থেই যে, এটার জন্যই তো সংগ্রাম হয়েছে—সেটা হলো গণতন্ত্র। সুতরাং নববর্ষে জাতির আকাঙ্ক্ষা মানুষের ভোটাধিকার ফিরেয়ে দেওয়া। কারণ, শেখ হাসিনা মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই ভোটাধিকার কেড়ে নিতে গিয়ে তিনি(হাসিনা) আজীবন ক্ষমতাবিলাসী চেতনা নিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, দেশের ন্যায় বিচার, আদালত, আইন কানুন, গণমাধ্যম সবকিছু ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়ে একটা একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
রিজভী বলেন, 'শেখ হাসিনার এই ভয়ংকর থাবার মধ্যেও এদেশের মানুষ তার নিজস্ব চিন্তা তার নিজস্ব সংস্কৃতি তার গৌরবময় অতীত এবং তার আবহমান বাংলার প্রকৃত যে আদর্শ—সেটা বুকে ধারন করেই লড়াই করেছে। আর এই লড়াই করেছে বলেই আমরা আজকে বিজয়ী হয়েছি।
তিনি বলেন, এই বিজয়কে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে। এই বিজয়কে একটি গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই আমি যে কথাটি বললাম— আজকের নববর্ষের জাতির আকাঙ্খা হচ্ছে অতিদ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া।
রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, 'ভোটাধিকারকে কেন সংস্কারের সঙ্গে এক করে দেওয়া হচ্ছে? পৃথিবীর কোথাও তো এটা দেখা হয়নি। গণতন্ত্র মানেই সংস্কার। গণতন্ত্র মানে একটা নদীর প্রবল স্রোতের মতো একটা পদ্ধতি, একটি ধারাবাহিকতা। যে নদীর পানি যত খরস্রোতা, সেই নদীর পানি তত স্বচ্ছ। কারণ, সেখানে কোনো ধরনের আবদ্ধতা তৈরি হয় না ‘।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, 'বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একটি বিদেশি সংস্কৃতির উপদানগুলো আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে কত পরিকল্পিত এবং সূক্ষ্মভাবে তারা যে মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে যে সমস্ত মুখোশ ব্যবহার করত, যে প্রতিকৃতিগুলো তারা ব্যবহার করত—সেখানে পরিকল্পিতভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিকৃতভাবে চিহ্নিত করে একে সেটা নিয়ে তারা মঙ্গল শোভাযাত্রা করেছে।
তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক দেশে প্রত্যেকের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত থাকতে হবে। সেখানে পরিকল্পিতভাবে দাড়িওয়ালা, টুপি ওয়ালাদেরকে বিকৃত করা হতো, কেন? সব দাড়িওয়ালা টুপিওয়ালারা তো স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধিতা করেনি। দেশের প্রত্যেকটি মানুষ একটি পর্যায়ে বুঝতে পেরেছে আমরা একটি পরিকল্পিত আগ্রাসী শক্তির সাংস্কৃতিক আধিপত্যের মধ্যে পড়ে যাচ্ছি।
রিজভী বলেন, '৫ আগস্টের আন্দোলনের যে সফলতা, এই যে দুনিয়া কাঁপানো যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শুধু একটি রাজনৈতিক দল বা ফ্যাসিস্টের পতন নয়—এটা ছিল আমাদের পদলিত করে রাখার যে সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদী চক্রান্ত, সেটার বিরুদ্ধেও কিন্তু এই লড়াইয়ে বিজয়ী হওয়া। শুধু হাসিনার পতন নয়, আমরা সমস্ত দিক থেকে বিজয়ী হয়েছি—এটার মধ্য দিয়ে।
এসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কবি রেজাবুদ্দৌলা স্টারলিন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, যুবদল নেতা মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদল নেতা তৌহিদ আউয়াল, রাজু আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


banner close