বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আমির হোসেন আমুর দেয়া বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। এটি সরকার, আওয়ামী লীগ বা ১৪ দলের বক্তব্য নয়।’
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সরকার নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় রাজি আছে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায়ও হতে পারে।’
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমির হোসেন আমু দলের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। তার এ বক্তব্য নিয়ে আমাদের দলের মধ্যে, সরকারের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এমনকি ১৪ দলের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, তিনি বলেছেন আসলে গণমাধ্যমে যেভাবে এসেছে তিনি ঠিক সেভাবে বলেননি। যেভাবেই আসুক এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত, দল, সরকার কিংবা ১৪ দলের কোথাও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।’
নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যেভাবে ভারতে নির্বাচনকালে চলতি সরকার দায়িত্ব পালন করে, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্যে পালন করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও পদত্যাগ করেন না, নির্বাচনকালে প্রেসিডেন্টই দায়িত্ব পালন করেন। যেভাবে সব গণতান্ত্রিক দেশে চলতি সরকার দায়িত্ব পালন করে ঠিক সেভাবে আমাদের দেশেও বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। সেই সরকারের আকার কী হবে না হবে সেটি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার।’
জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের আয়োজন এবং ব্যবস্থাপনাতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, যারা গণতন্ত্রের অভিযাত্রা অব্যাহত রাখতে চায়, তাদের অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। নির্বাচন কমিশনকে আমাদের সরকার সর্বোচ্চ সহায়তা করবে, যাতে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক, উৎসবমুখর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমরা চাই সে নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিক এবং সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অত্যন্ত চমৎকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, বিশ্বের উদাহরণ হিসেবে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, সেটিই আমরা চাই। নির্বাচন নিয়ে যদি কোনো প্রসঙ্গ থাকে বিএনপিকে সেটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, কারণ নির্বাচন আয়োজন অনুষ্ঠান করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যদি আমাদের ডাকে আমরাও যাব।’
বিএনপির জাতীয় নির্বাচন বর্জন প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনকে ভয় পায়। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে, ৫০০ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছে, দুইজন প্রিজাইডিং অফিসারকে হত্যা করেছে এবং সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পুড়িয়েছে, তার মধ্যে ৫০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। তারা আসলে নির্বাচন প্রতিহত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত এবং সেই কথাটিই (বিএনপি মহাসচিব) মির্জা ফখরুল সাহেব আবার বলেছেন। কিন্তু এবার আর তাদের পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করা কিংবা নির্বাচন বর্জন করা সম্ভবপর হবে না। বিভিন্ন সময় তারা এ রকম অনুযোগ বিদেশিদের কাছে করে এসেছেন, কিন্তু এবার সেটিও করা সম্ভবপর হবে না। দেশে একটি অবশ্যই সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে।’
নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির নিজস্ব বিষয় উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেই পারে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য তা নয়, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ভণ্ডুল করে দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করা। কিন্তু নির্বাচন জনগণের অংশগ্রহণ হচ্ছে মুখ্য বিষয়। জনগণ যদি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং ভোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে সেটি জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি ভালো নির্বাচন।’
বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী রাজনৈতিক দল। কানাডার আদালতে রায়প্রাপ্ত ভ্যালিডেটেড সন্ত্রাসী অর্থাৎ সিলমারা সন্ত্রাসী দল, যারা মানুষ পোড়ায়, গাড়ি-ঘোড়া পোড়ায়, পুলিশের ওপর হামলা চালায়, মানুষের ওপর হামলা চালায়, যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা চালায়। তাদের হামলায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এস এম কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, খুলনার মনজুর ইমামসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন। তাদের হামলায় সংসদ সদস্য শেখ হেলালের জনসভায় অনেক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন, আদালতের বিচারক নিহত হয়েছেন। বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশে ৫০০ জায়গায় একযোগে বোমা ফুটেছে। বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর সহানুভূতি জানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দরজায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও যারা দরজা খোলেনি, যারা অগ্নিসন্ত্রাস চালায়, মানুষের ওপর হামলা চালায় তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কী হবে, সেটি হচ্ছে বড় প্রশ্ন।’
আসন্ন নির্বাচন মোটেও সহজ হবে না এবং ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই বলে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে যেকোনো মূল্যে দেশে নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যে অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করার দায়িত্ব নেতাকর্মীদের নিতে হবে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সারা দেশ থেকে আসা ছাত্রদল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তারেক রহমান সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গত কয়েক দিনের ঘটনা এবং চট্টগ্রামে দলীয় প্রার্থীর ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রমাণ করে যে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ষড়যন্ত্রকারীরা পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সাহসের সঙ্গে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, দলের মধ্যকার মতপার্থক্য ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, কারণ একমাত্র বিএনপিরই ষড়যন্ত্রকারীদের পিছু হটানোর শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে।
নেতাকর্মীদের মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এখন ‘আমি কী পেলাম’ তা ভাবার সময় নয়, বরং দেশ ও জাতিকে কী দিতে পারলাম—সেটিই মুখ্য হওয়া উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতেও যখনই দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে, তখনই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি দেশকে রক্ষা করেছে। এবারও জনগণকে প্রধান সহযোগী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে এই ‘যুদ্ধে’ জয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তরুণ নেতাদের উদ্দেশে তারেক রহমান বিএনপির উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো, বিশেষ করে ফ্যামিলি কার্ড, কৃষক কার্ড, হেলথ কার্ড, শিক্ষা ও বেকার সমস্যা সমাধানসহ ৮টি বিষয় সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় তুলে ধরার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই; ভোটের মাঠে ও সংগ্রামের ময়দানে জনগণের সমর্থন আদায়ে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে আসা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতারা অংশ নেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকারীদের শেকড় যতই শক্তিশালী হোক না কেন, তা উপড়ে ফেলা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল শরিফ ওসমান হাদিকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসররা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে ধ্বংস করতে এবং আগামী নির্বাচন বানচাল করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। হাদির ওপর হামলা সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তবে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাসীদের এই উদ্দেশ্য সফল হবে না এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন হাদির দ্রুত সুস্থতার জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা বলেন, একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিতে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর। আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে এবং ফলাফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার সঠিক প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এর আগে, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মালিথিয়া গ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় একটি বিশেষ প্রার্থনা সভায় অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল। সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার জন্যও সবার দোয়া প্রার্থনা করেন।
আগামী ১৪ ডিসেম্বর ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ এবং ১৬ ডিসেম্বর ‘মহান বিজয় দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শনিবার এক বিবৃতির মাধ্যমে তিনি এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে ১৪ ও ১৬ ডিসেম্বরের গুরুত্ব অপরিসীম। এই দিনগুলো আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও গৌরবের চিরন্তন স্মারক। তিনি ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় আত্মোৎসর্গকারী শহীদ বুদ্ধিজীবী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। একইসঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে জামায়াত আমির বলেন, ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী অপশাসন, গুম-খুন ও জুলুমের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। দেশ যখন ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনো ফ্যাসিবাদের দেশি-বিদেশি দোসররা ষড়যন্ত্র থামায়নি। গত ১২ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে তিনি দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি দেশবিরোধী সকল চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা ও দেশবাসীকে আলোচনা সভা, র্যালি ও দোয়ার মাধ্যমে দিবস দুটি পালনের নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে তিনি দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং দেশের সার্বিক সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
পুরো দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী এবং নির্বাচন নিয়ে জনগণ ঐক্যবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনৈতিক দল হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অতীতে যারা ভুল পথে রাজনীতি করেছে, তারা কখনোই জনগণের প্রকৃত কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারেনি। তাই সচেতনভাবে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে দেশ পরিচালনায় সক্ষম নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) নগরীর পশ্চিম বাকলিয়া ডিসি রোড মিয়ার বাপের মসজিদের সামনে বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় চকবাজার থানা যুবদলের উদ্যোগে আয়োজিত দোয়া মাহফিল ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এসব কথা বলেন।
নিজের দায়িত্ব পালনের অগ্রগতি তুলে ধরে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, তিনি নগরবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং সামনে তা আরও কমবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, নগরীর উন্নয়ন কাজের প্রায় ৫০ শতাংশ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি কাজের মধ্যে খাল ও নালা সংস্কারসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচির বিষয়ে মেয়র বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় চট্টগ্রাম নগরে চার লাখ পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। এই কার্ডের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন। এছাড়া বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও পুনর্বাসন ভাতার সুবিধাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।
চকবাজার থানা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মো. সেলিমের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহেল ও সাদ্দামুল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনের ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী আবু সুফিয়ান।
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সন্ত্রাসীদের এই নির্বাচন বন্ধ করার কোনো ক্ষমতা নেই। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নরসিংদী জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলটি নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিলে জেলা বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলসহ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সমাবেশে খায়রুল কবির খোকন অভিযোগ করে বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তবে জনগণ ইতিমধ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তিনি এসব সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সন্ত্রাসীদের কারণে যদি নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তবে তার সব দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকে নিতে হবে। সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অপরাধী যে দলেরই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সময় তিনি ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হাদির ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করেন এবং বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন কী ভূমিকা পালন করে, সেদিকে জনগণ তাকিয়ে আছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘হাদির ওপর বর্বরোচিত হামলা গণতন্ত্রের ওপর আঘাত।’
ওসমান হাদির ওপর বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘হাদি আমার সন্তান সমতুল্য। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে আহত হয়েছি। এ আঘাত গণতন্ত্রের ওপর আঘাত। যারা এই আঘাত করেছে, তাদের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে।’
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত ইনকিলাব মঞ্চের ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভপূর্ব এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দুপুর ২টায় হাদি গুলিবিদ্ধ হন, আর এর আধাঘণ্টা পরই একটি দল উত্তেজনা সৃষ্টির জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া শুরু করে। আমি হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পেলাম সবই পরিকল্পিত। আমি ঢাকার ছেলে। দীর্ঘ ৫০ বছর ঢাকায় রাজনীতি করি। ওই সময় আমি শান্ত ছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে যারা এগুলো করেছে, তারা হাদির সমর্থক নয়। তারা অন্য একটি দলের সদস্য। তখন আমরা শান্ত না থাকলে, হাদির চিকিৎসা ব্যাহত হতো। ওই সময় তারা চেয়েছিল, হাদির চিকিৎসা যাতে ব্যাহত হয় এবং সে যেন মারা যায়।’
এ সময় কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটি দলের ষড়যন্ত্র আমরা ৭১ সালে দেখেছি। এদের মূল শক্তিই হলো ষড়যন্ত্র। এরা স্থিতিশীল রাষ্ট্র সহ্য করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রকে সব সময়ই অস্থিতিশীল রাখতে চায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে, সে যেই হোক তার মৃত্যু কামনা করি না। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এক-দেড়শ লোক ফেসবুকে দেশে মব সৃষ্টির জন্য উসকানি দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন, তারা সকলেই একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘৭৭ সাল থেকে নির্বাচন করে আসছি। কারও সঙ্গে মারামারি হয়নি। একসাথে প্রার্থীরা কোলাকুলি করেছি, খেয়েছি। মারামারি করে আওয়ামী লীগ, আর নির্বাচনসহ রাষ্ট্রকে অস্থির করে তোলে সেই বিতর্কিত রাজনৈতিক দল।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বাণীতে তিনি জাতির মুক্তির জন্য জীবনদানকারী এসব সূর্যসন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, হানাদার বাহিনী ভেবেছিল দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করলেই এ দেশ আর নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। কিন্তু তাদের সেই অমানবিক পরিকল্পনা সফল হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা জাতির মানসিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের যে স্ফুরণ ঘটিয়েছিলেন, তা আজও জাতিকে আত্মপরিচয়ের সন্ধান দেয় এবং যেকোনো অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার প্রেরণা যোগায়।
বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু একদলীয় দুঃশাসন কায়েম করে বারবার সেই স্বপ্নকে ব্যর্থ করা হয়েছে এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে দমন করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে নানামুখী ঝড়ঝাপ্টা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ সার্থক করতে হলে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুজ্জীবনে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা ছিল দেশকে মেধাশূন্য করার এক গভীর চক্রান্ত। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দেওয়া এই বাণীতে তিনি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক ও শিল্পীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
তারেক রহমান উল্লেখ করেন, বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্তে দেশের এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার বিজয়কে বাধাগ্রস্ত করা। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বুদ্ধিজীবীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন এবং স্বাধীনতার পক্ষে কলম ধরেছিলেন। তাদের জ্ঞান, মুক্ত চিন্তা ও সম্প্রীতির চেতনা আজও জাতিকে অনুপ্রাণিত করে এবং একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয় জাগায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় দুঃশাসন চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকটের মুখে পড়েছে। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতনের পর আইনের শাসন, স্বাধীন বিচার বিভাগ এবং বহু মতের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমেই শহীদদের আদর্শ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। বাণীতে তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ‘গণতন্ত্রের টর্চ বেয়ারার’ হিসেবে অভিহিত করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসছেন। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এই আনন্দের সংবাদ দেন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অঙ্গনে এক নতুন জোয়ার সৃষ্টি হবে এবং নেতাকর্মীদের সেই দিন ও আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
আমির খসরু বলেন, বিগত ১৭ বছরের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে তারেক রহমানের নেতৃত্বে জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর দেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন এসেছে, তা ধারণ করে বিএনপি একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়তে চায়। তবে বর্তমান সময়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা হাদি ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতির ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যখন স্থিতিশীলতা প্রয়োজন, তখন একটি মহল ‘মবক্রেসি’ বা গায়ের জোরে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে। এ ধরনের অপরাজনীতির বিষয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের চোখ-কান খোলা রাখার পরামর্শ দেন।
বিএনপির দেশ পরিচালনার ভবিষ্যৎ রূপরেখা তুলে ধরে আমির খসরু বলেন, আসন্ন নির্বাচন শুধু বিএনপির জয় নয়, এটি হবে গণতন্ত্রের জয়। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে কাজ শুরু হবে। তিনি স্পষ্ট করেন যে, উন্নয়নের নামে লোক দেখানো মেগা প্রকল্প নয়, বরং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগই হবে বিএনপির অগ্রাধিকার। রাজনৈতিক গণতন্ত্রের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এর সুফল প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সারা দেশ থেকে আসা বিএনপি নেতারা অংশ নেন।
যারা বাংলাদেশে নির্বাচন চায় না, তারাই ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা চালিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, চট্টগ্রামে হামলার ঘটনার পর প্রশাসন যদি কঠোর ব্যবস্থা নিত, তবে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, হামলা ও সহিংসতার মাধ্যমে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি যদি মনে করে নির্বাচন রুখে দেবে, তবে সেটি তাদের ভুল ধারণা।
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, রাজনৈতিক বিতর্ক থাকতেই পারে, কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে যেন কোনো ফাটল না ধরে, সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ ধরনের অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া, ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে আহূত ঐক্যের ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপি সেখানে যোগ দেবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন শরিফ ওসমান হাদি। তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, যারা গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে নিয়ে রাজনীতি করে এর একক মালিকানা দাবি করেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে, সেই রাজনীতি ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে যারা ৭১ এর চেতনাকে ব্যবহার করে রাজনীতি করতে চেয়েছিল তারাও চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সব মানুষেরই সংগ্রাম ছিল। একাত্তেরকে যারা দলীয়করণ করতে চেয়েছে তারা ইতিহাসের আস্তাকূড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। চব্বিশের গণঅভ্যত্থানে শহীদদের রক্তের প্রত্যাশা যেটি সেটি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির প্রত্যাশা। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থা থেকে মুক্তি, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং হারানো মানবধিকার ফিরে পেতে চেয়েছে। এগুলোর সমষ্টিগত অভিপ্রায়ের চূড়ান্ত রূপ হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান। গণঅভ্যুত্থান শুধুমাত্র ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল নয়। ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত এ দীর্ঘ স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে বহু রক্ত দিতে হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট পাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বিপক্ষে একটি কথাও বলে না। যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করেছে এদের ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।অনেকে বলেছিল পিআর ছাড়া নির্বাচন হবে না, আবার একইদিনে গণভোট হলে মানব না। এরা সবাই গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির, এরা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জনগণের ভোট দেয়ার প্রত্যাশা নিশ্চিত হয়েছে। বিএনপির গণতন্ত্রের সংজ্ঞা জনমানুষের গণতান্ত্রিক সংজ্ঞা। ভবিষ্যতে রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক ও প্রযুক্তি নির্ভর রাজনীতি করতে হবে বলে জানান তিনি।
কৃষিকে আধুনিকায়ন ও উন্নত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষকদের মেরুদণ্ড যদি শক্তিশালী হয় তাহলে জাতির অর্থনীতির মুক্তি হবে। কারণ দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ কৃষক। বাংলাদেশের মাটি ১২ মাস ফলনের জন্য উপযুক্ত। এসময় তিনি দলের কর্মীদের স্বাস্থ্য কার্ড, ফ্যামিলী কার্ড ও শিক্ষা কার্ডের উপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর আহবান জানান।
৩১ দফা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধুমাত্র অপরিকল্পিত আবেগী ধর্মীয় মিক্সার নিয়ে আমরা নির্বাচনের যাব না। আমরা যাব সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে। সেই পরিকল্পনা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই সমগ্র জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন। ৩১ দফা জাতির মুক্তির সনদের ঠিকানা। ৩১ দফা বাংলাদেশের রাজনীতির মহাকাব্যে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও সকল প্রার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
এ ছাড়া আগামীকাল সারা দেশে দলটি বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দলের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রিজভী বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা, চট্টগ্রামে বিএনপির একজনের ওপর হামলাসহ আইশৃঙ্খলার উন্নতি, অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আওতায় আনতে শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে ৩টা ১৪ মিনিটের দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন তিনি।
তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। কোনো সময়ই না। আমাদের মতাদর্শ যাই হোক না কেন, যে কেউ ভয়ভীতি বা শক্তির আশ্রয় নিলে তাকে একসঙ্গে প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, যখন পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন খোদ ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা নেই। আমি তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। আমি আশা করি অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাস দমনে দৃঢ়ভাবে ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর বিজয়নগরের কালভার্ট রোডে নির্বাচনি প্রচার চালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের পর এ ঘটনা ঘটে।