২০১৭ সালে দুর্নীতির মামলায় মাস ছয়েক কারাগারে ছিলেন প্রয়াত রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার। ওই সময় কারাগারে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয় এবং সেখানে থাকা অবস্থায় জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের অন্যতম আসকারি সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেলের সঙ্গে। সোহেলের মাধ্যমেই তিনি পুরোদমে সম্পৃক্ত হয়ে যান আনসার আল ইসলামের সঙ্গে। বেরিয়ে এসে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে পড়েন জঙ্গিবাদে।
ওমর ফারুকের স্ত্রী মার্জিয়া মলি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ফারুককে ফাঁদে ফেলে জঙ্গি বানানো হয়েছে। তাকে বুঝিয়ে দুই সন্তানের কথা বলেও জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে চলত জেলে থাকা এক জঙ্গির কথামতো। শেষে ওই জঙ্গির বোনকেই সে বিয়ে করেছে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আইনজীবী হিসেবে ফারুক আনসার আল ইসলামের সদস্যদের মামলাগুলোর দেখভালও করতেন। সর্বশেষ দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রেকি করার সময়ও ওমর ফারুক সম্পৃক্ত ছিলেন। এমনকি জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর সোহেলের স্ত্রী শিখাকে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় এনে গোপন আস্তানায় পৌঁছে দেন ফারুক।
কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) উপকমিশনার এস এম নাজমুল হক দৈনিক বাংলাকে বলেন, দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ছাড়াও ওমর ফারুকের সঙ্গে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তার নিকটজনদের আর কেউ জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন ওমর ফারুক তালকদার। পরে তিনি নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা এলাকায়। একই এলাকার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রয়াত জ্যেষ্ঠ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সাবেক এপিএস অনুকুল তালুকদার ডালটনের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। ২০০৮ সালে ডালটন আইন পড়তে লন্ডন চলে যাওয়ার সময় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে ফারুকের পরিচয় করিয়ে দেন। রেলমন্ত্রী হওয়ার পর সুরঞ্জিত ফারুককে নিজের এপিএস হিসেবে নিয়োগ দেন।
ফারুকের স্বজন ও বন্ধুরা জানান, ২০১২ সালে ৭০ লাখ টাকাসহ রেলের নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আধুনিক জীবনযাপন করতেন ফারুক। কিন্তু ওই ঘটনায় চাকরিচ্যুত হওয়ার পর থেকে একটু-আধটু ধর্মকর্মে মনোযোগ দেন। ২০১৭ সালে দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পুরোপুরি পাল্টে যান ফারুক। জেলে থাকা অবস্থাতেই তিনি ধর্মীয় দিক থেকে কট্টর মনোভাবের হয়ে পড়েন।
জঙ্গিবাদ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছিলেন স্ত্রী
ফারুকের স্বজন ও বন্ধুরা জানান, ২০১৭ সালের পর থেকে বেশভূষায় পরিবর্তন আসে তার। তখন তারা কথা, আচরণ ও চালচলনে স্বজন ও বন্ধুরা বুঝতে পারেন উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়েছেন ওমর ফারুক তালুকদার। তার স্ত্রী মার্জিয়া মলিও একাধিকবার তাকে এই পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেন।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ওমর ফারুকের সঙ্গে তার স্ত্রীর কথোপকথনের কিছু রেকর্ড পেয়েছেন তারা। এতে ফারুকের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া নিয়ে তার স্ত্রীর ভাষ্য ও অনেক তথ্য রয়েছে। এসব তথ্য আমলে নিয়েও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ওমর ফারুকের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও ইসলামি বক্তা আলী হাসান উসামারও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া অর্থ কারাগারে থাকা জঙ্গিদের কাছে পৌঁছে দিতেন তিনি।
ওমর ফারুকের স্ত্রী মার্জিয়া মলি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ফারুককে ফাঁদে ফেলে জঙ্গি বানানো হয়েছে। আমি অনেক বুঝিয়েছি। আমাদের দুই সন্তানের কথা বলে তাকে জঙ্গিবাদের পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে জেলে থাকা এক জঙ্গির কথামতো চলত। শেষে ওই জঙ্গির বোনকেই সে বিয়ে করেছে।’
মার্জিয়া মলি বিভিন্ন সময়ে ফারুকের মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে বলেছেন, ‘প্লিজ ফারুক, মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। তুমি জঙ্গিদের ফাঁদ থেকে বের হয়ে আসো।’
আরেক মেসেজে মলি বলেন, ‘আমার কোনো দুঃখ নাই। আমি তোমাকে ফেরানোর চেষ্টা করছি। আমার সন্তানসহ তোমার বন্ধুরা সাক্ষী। জঙ্গিরা তোমাকে ‘মাসনা’ (মাসনা অর্থ দ্বিতীয় বিয়ে) করিয়েছে, ঘরছাড়া করছে, এখন তোমাকে দিয়ে বোমা হামলা করাবে। তুমি ভয়ংকর জঙ্গি হয়ে গেছ, তোমার মাথা ওয়াশ, আমি বুঝে গেছি তোমার ফিরে আসা কঠিন। তুমি জেলখানার পরামর্শে চলো, জেলখানার পরামর্শে ঘর ছাড়ছ। জঙ্গি না হওয়াটা আমার অপরাধ হয়ে গেছে, তাই তুমি জঙ্গি বিয়ে করেছ।’
সিটিটিসি কর্মকর্তারা জানান, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ফারুক চলতি বছরের এপ্রিলে মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি আবু সিদ্দিক সোহেলের বোন তানজিনা শিরিনকে বিয়ে করেন। তাদের এই বিয়েও জেলে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে সম্পন্ন করে দেন আবু সিদ্দিক সোহেল।
দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের আগে রেকিও করেছেন ফারুক
আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের আগে জঙ্গিদের সহযোগীদের সঙ্গে ফারুকও নিম্ন আদালত এলাকায় রেকি করেছিলেন। এমনকি জঙ্গি ছিনতাইয়ের আগের দিনও তিনি পুরান ঢাকার আদালত এলাকায় ঘুরে এসেছেন।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের আগেই ফারুক নিজে ময়মনসিংহ গিয়ে আবু সিদ্দিক সোহেলের স্ত্রী শিখাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সোহেলের শ্বশুর ও শিখার বাবা আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দিও দিয়েছেন। ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ফারুক একাধিকবার তার ময়মনসিংহের বাসায় গিয়েছেন। সর্বশেষ গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি শিখাকে নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তিনি ফারুকের কাছে মেয়ে শিখার বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক তাকে শিখা ভালো আছেন বলেও জানান।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর ফারুক তার ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ফেলে দিয়েছেন যাতে পুলিশ তাকে ধরলে কোনো তথ্য বের করতে না পারে। গত ৫ ডিসেম্বর ওমর ফারুক বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাসও দেন।
গত ২০ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনার এক মাসের মাথায় গ্রেপ্তার করা হয় ওমর ফারুককে। চার দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘটনায় ফারুকের দ্বিতীয় স্ত্রী তানজিলাকেও গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আজ বলেছে, নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করছে, ইসলামী কট্টরপন্থীরা একটি উন্মোচন দেখছে’ শীর্ষক নিবন্ধটি বিভ্রান্তিকর।
প্রেস উইং তার যাচাইকৃত ফেসবুক পেজ-সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধটি বাংলাদেশের একটি বিভ্রান্তিকর ও একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে দেশটি ধর্মীয় চরমপন্থীদের নিয়ন্ত্রণের দ্বারপ্রান্তে’।
এই বয়ান কেবল দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক গতিশীলতাকে অতিরঞ্জিত করে না বরং ১৮ কোটি মানুষের একটি সমগ্র জাতিকে অন্যায়ভাবে কলঙ্কিত করার ঝুঁকির মুখেও ফেলে দেয়।
বিবৃতি বলা হয়, একটি বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরার মতো বেছে বেছে উস্কানিমূলক উদাহরণের উপর নির্ভর করার পরিবর্তে বিগত বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও পরিস্থিতির জটিলতা স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিবৃতিটি নিম্নরূপ :
১. বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করা :
নিবন্ধটিতে ধর্মীয় উত্তেজনা ও রক্ষণশীল আন্দোলনের কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলেও অগ্রগতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ নারীদের অবস্থার উন্নতিতে উলে¬খযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণের জন্য বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এটি এমন একটি সরকার যা নারীর অধিকার ও সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, যা নিবন্ধে তুলে ধরা আবছা চিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত।
এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল ‘যুব উৎসব ২০২৫’, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ২৭ লক্ষ মেয়ে ৩,০০০ খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছিল।
বিভিন্ন অঞ্চল, প্রান্তিক সম্প্রদায় এবং আদিবাসী যুবসমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে নারী ও মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত ও গতিশীল সম্পৃক্ততার প্রতিফলন।
একটি ফুটবল খেলা বিরোধিতার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি অন্যান্য ২,৯৯৯টি ইভেন্টের সাফল্যকে মুছে ফেলে না, যা অসংখ্য অংশগ্রহণকারী ও সম্প্রদায় উদযাপন করেছিল।
একটি অনুষ্ঠানে একটি মাত্র বাধার বিষয়ে আলোকপাত করার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজের, বিশেষ করে নারীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহন ও দৃঢ় অঙ্গীকারের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘চরমপন্থী শক্তির বিরুদ্ধে যথেষ্ট কঠোরভাবে প্রতিরোধ করেননি’ এই দাবি কেবল মিথ্যাই নয়, বরং এটি নারীর ক্ষমতায়নের প্রতি তার আজীবন প্রতিশ্রুতিকেও উপেক্ষা করে।
প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস নারীর অধিকারের পক্ষে তার অবস্থানে অটল রয়েছেন। দুই কন্যার পিতা, ইউনূস তার সমগ্র কর্মজীবন এবং গ্রামীণ ব্যাংককে নারীর শক্তিতে তার গভীর বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলেছেন, যা শেষ পর্যন্ত তাকে নোবেল পুরষ্কার এনে দিয়েছে।
নারীর অধিকার এগিয়ে নেওয়া এবং তাদের স্বাধীনতা রক্ষায় তার নিষ্ঠা ও কাজ তার খ্যাতির ভিত্তি।
২. ধর্মীয় সহিংসতা সম্পর্কে ভুল ধারণা সংশোধন :
বাংলাদেশের মতো দেশে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মীয় সহিংসতার মধ্যে পার্থক্য করা গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত অনেক সংঘর্ষকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যদিও বাস্তবে, সেগুলো মূলত রাজনৈতিক প্রকৃতির ছিল।
রাজনৈতিক বিভিন্ন দল অনেক সময় সমর্থন লাভের জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে, যা বিষয়টিকে জটিল করে তোলে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে ধর্মীয় নিপীড়নের মিশ্রণের ঝুঁকি তৈরি করে। পুরো পরিস্থিতিকে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত হিসাবে উপস্থাপন করা বিভ্রান্তিকর, কারণ এটি প্রকৃত রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কারণগুলোকে উপেক্ষা করে।
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্য তার প্রতিশ্রুতি সুস্পষ্ট করেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চলমান কাজ এবং সন্ত্রাসবাদ দমন প্রচেষ্টা এই প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরদার করে।
সামাজিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে চরমপন্থা মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ভুল তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে ম্লান হওয়া উচিত নয়।
৩. বৈশ্বিক মঞ্চে বাংলাদেশের ভূমিকা :
বাংলাদেশ নীরবে এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, একটি প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় যা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রচুর সুযোগের প্রতিশ্রুতি দেয়।
সকল প্রতিকূলতার মধ্যেও, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হয়েছে যা উল্লেখযোগ্য স্থিতিস্থাপকতার প্রতিফলন।
গত সাত মাসে, রপ্তানি প্রায় ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার পরেও ব্যাংকিং খাত গতিশীল রয়েছে এবং স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার মার্কিন ডলারের বিপরীতে প্রায় ১২৩ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে।
সামনের দিকে তাকালে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৮৪ বছর বয়সী মুহাম্মদ ইউনূস গত আট মাস ধরে যেসব অবিশ্বাস্য কাজ সম্পন্ন করেছেন তার স্বীকৃতি কোথায়? বাংলাদেশের জন্য একটি উন্নত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য তিনি সারা বিশ্বজুড়ে সফর করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।
গত সপ্তাহে চীন সফরের সময় চীন সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ঢাকা আগামী সপ্তাহে, বিনিয়োগকারীদের সম্মেলন আয়োজন করবে, যেখানে ৫০টি দেশের ২,৩০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী অংশগ্রহণ করবেন, যার মধ্যে মেটা, উবার ও স্যামসাংয়ের মতো বৈশ্বিক কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারাও থাকবেন।
বিশ্ব ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এটি হচ্ছে আশা, শক্তি ও অভূতপূর্ব সুযোগের গল্প - যা সম্মান ও যথাযথ বিবেচনার দাবি রাখে।
৪. অতি সরলীকরণ এড়িয়ে চলা এবং একটি জাতিকে অপবাদ দেয়া :
নিউ ইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধে কয়েকটি ঘটনার উলে¬খ রয়েছে, যেমন একজন মহিলার উপর নির্যাতনকারী একজন ব্যক্তিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে, যা একটি দেশের চরমপন্থায় পতিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে।
এটি কেবল বিভ্রান্তিকরই নয় বরং ক্ষতিকারক। ১৮ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে, কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা দ্বারা সমগ্র দেশকে সংজ্ঞায়িত করা অযৌক্তিক।
বাংলাদেশ একটি বৈচিত্র্যময় ও গতিশীল সমাজ যেখানে সহনশীলতা, সংস্কৃতি এবং প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে।
ধর্মীয় উগ্রবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একা নয়; এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা যা অনেক দেশ বিভিন্ন রূপে মোকাবেলা করে।
তবে, আইন প্রয়োগ, সামাজিক সংস্কার ও সন্ত্রাসবাদ বিরোধী উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য ক্রমাগত কাজ করে আসছে।
মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান বা অন্য যে কোনও সম্প্রদায়ের বৈচিত্র্যময় জনসংখ্যাকে রক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বিভিন্ন সমাবেশে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘৃণা ছড়ানোর জন্য সবসময়ই কট্টরপন্থীরা সক্রিয় থাকলেও তাদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি না দেয়া আমাদের দায়িত্ব।
এছাড়া, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে চরমপন্থার উত্থান অনিবার্য এমন চিন্তা অত্যন্ত পূর্বধারণাপ্রসূত।
দেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ এমন শক্তিশালী যা চরমপন্থী মতাদর্শের উত্থানকে প্রতিহত করে চলেছে।
চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী গতিধারা কেবল চরমপন্থীদের কর্মকাণ্ড দ্বারা নির্ধারিত হবে না।
বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে এর যুবসমাজ ও মহিলারা একটি ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
পরিশেষে, বাংলাদেশের সহনশীলতার ইতিহাস, গণতন্ত্রের প্রতি তার অঙ্গীকার এবং নারীর ক্ষমতায়নের উপর তার মনোযোগ এই সত্যের প্রমাণ যে, দেশটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও এগিয়ে যাবে।
কয়েকটি নেতিবাচক উদাহরণের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে, আমাদের আজকের বাংলাদেশকে সংজ্ঞায়িত করে এমন অগ্রগতি, সহনশীলতা ও দৃঢ় অঙ্গীকারের ব্যাপকতর চিত্রটির স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো: মাহফুজ আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গুম-খুন করে তার বাবা-মায়ের হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে মানুষ যখন ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করছিলেন, তখনই সবচেয়ে বেশি গুম করা হয়েছিল। যার মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করা।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার তেজগাঁওয়ে মানবাধিকার সংগঠন মায়ের ডাক-এর উদ্যোগে গুমের শিকার মানুষের স্বজনদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তথ্য উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তথ্য উপদেষ্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আওয়ামী লীগকে এদেশে আর রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিলেই আবার দেশে গুম-খুনের পরিমাণ বেড়ে যাবে। তাদের এই সুযোগ দেওয়া হবে না। শেখ হাসিনা মানুষের সব মানবাধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। এখনো ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, যা খুবই দুঃখজনক। বর্তমান সরকার হারানো মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছে।
মাহফুজ আলম বলেন, সরকার ইতোমধ্যে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের প্রস্তাবনা অনুযায়ী গুমের সঙ্গে জড়িত অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান।
বিগত সরকারের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, যারা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করেছেন, তাদের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে গুম করা হয়েছে এবং তাদের স্বজনদের আতঙ্কগ্রস্ত করা হয়েছে। গুমের কাজে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করা হয়েছিল। মতবিনিময় সভায় গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন এবং গুম হওয়া স্বজনদের সন্ধান চান।
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় দ্বিতীয় দফায় জরুরি ওষুধ, চিকিৎসক দল, ত্রাণসামগ্রী ও উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ (মঙ্গলবার) বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি ও বিমান বাহিনীর দুটিসহ মোট তিনটি পরিবহন বিমান উদ্ধার সরঞ্জামাদিসহ একটি উদ্ধারকারী দল, জরুরি ওষুধ সামগ্রীসহ একটি চিকিৎসক দল এবং ১৫ টন ত্রাণসামগ্রী নিয়ে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোর উদ্দেশে যাত্রা করেছে।
৩৪ জন উদ্ধারকারী ও ২১ জন চিকিৎসাকর্মী মিলিয়ে মোট ৫৫ জনের একটি দল এই মিশনে অংশ নিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর কর্নেল মো. শামীম ইফতেখারের নেতৃত্বে মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও জরুরি চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করবে দলটি।
উদ্ধারকারীদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ২১ জন, নৌবাহিনীর দুজন, বিমানবাহিনীর একজন ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ১০ সদস্য রয়েছেন। চিকিৎসা সহায়তা দলে রয়েছেন সেনাবাহিনীর ১০ জন, নৌবাহিনীর একজন, বিমানবাহিনীর দুজন ও অসামরিক ৮ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দ্বিতীয় দফায় পাঠানো ১৫ টন ত্রাণ সহায়তার মধ্যে রয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, তাঁবু, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য ও ঔষুধসহ নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী।
এর আগে, গত রোববার (৩০ মার্চ) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে প্রথম দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়। সেই মিশনে ওষুধ, তাঁবু, শুকনো খাবার ও একটি মেডিকেল টিম অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গত শুক্রবার দিনের মাঝামাঝি সময়ে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে মিয়ানমারে। এরপর থেকে সেখানে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৫ জনের লাশ উদ্ধার করেছে দেশটির সামরিক সরকার। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ হাজার ৯০০ মানুষ। ধ্বংসস্তুপের নিচে আরও প্রায় ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
সূত্র: ইউএনবি
ঈদের দিন ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে চলাচল করা গণপরিবহন মেট্রোরেল চলতে শুরু করেছে।
ঈদের আগে এক বিশেষ ঘোষণায় মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ উপলক্ষ্যে শুধুমাত্র ঈদের দিন মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকবে। অন্য দিনগুলোতে যথা নিয়মে মেট্রোরেল চলাচল অব্যাহত থাকবে।
মেট্রোর প্রথম ট্রিপ হিসেবে মেট্রোরেল উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এবং মতিঝিল থেকে প্রথম ট্রেন সাড়ে ৭টায় উত্তরা উত্তর স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়
অন্যদিকে ঈদের আগে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, ঈদের দিন সারা দেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। ঈদের আগে সব ট্রেনের ডে-অফ বাতিল থাকবে এবং ঈদের পর তা আবার কার্যকর হবে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনের প্রথম ট্রেন হিসেবে পর্যটক এক্সপ্রেস ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে।
জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সোমবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাতে নামাজ শেষে শহীদদের বাসায় যান তিনি।
এদিন নামাজের পর জুলাই আন্দোলনে শহীদ ফারহানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত আমির। তিনি শহীদ ফারহানের মা-বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শহীদ ফারহানের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহি পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান ও কামাল হোসাইনসহ স্থানীয় জামায়াত নেতারা।
একই দিন ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হামলায় শহীদ হওয়া সাইফুল্লাহ মো. মাসুম ও হাফেজ শিপনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শহীদ মাসুম ও শিপনের মা, বাবা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন ও পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
এ ছাড়া সোমবার বিকালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ দশম শ্রেণির ছাত্র শাহরিয়ার খান আনাসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। তিনি শহিদ শাহরিয়ার খান আনাসের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেন।
এর আগে রোববার সন্ধ্যায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ ছয় বছরের শিশু জাবির ইব্রাহিমের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত আমির। তিনি শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন, পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে তার রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
এ ছাড়া জুলাই আন্দোলনের শহীদ পিকআপ ভ্যানচালক রানা তালুকদারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তার মা, স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের সার্বিক খোঁজখবর নেন তিনি।
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আরেক শহীদ জুবায়েরের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন ডা. শফিকুর রহমান। তিনি জুবায়েরর বাবা এবং দুই সন্তানের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন ও পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন । একই দিন জুলাই আন্দোলনের শহীদ আসাদুল্লাহর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি শহিদ পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করেন, পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন। জামায়াত আমির শহিদ আসাদুল্লাহর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সদ্যজাত সন্তানকে কোলে তুলে নেন ও পরম স্নেহ-মমতায় আদর করেন।
জুলাই আন্দোলনে পানি বিতরণ করার সময় শহীদ মীর মুগ্ধের বাসায়ও যান জামায়াত আমির। তিনি মীর মুগ্ধর বাবা, ছোট ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঈদের কুশল বিনিময় করেন, পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নেন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে শহীদ মীর মুগ্ধর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করেন।
এছাড়াও ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ তামীম ও শহীদ সিফাত-এর পরিবারের সদস্যদের সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করেন ডা. শফিকুর রহমান।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ তিনি মিরপুরে শহীদ তামীম ও শহীদ সিফাত-এর বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাত করেন।
এ সময় তার সাথে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আব্দুর রহমান মূসাসহ স্থানীয় জামায়াত নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দলের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
আজ রাত ৯টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারর্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল মাহমুদ টুকু, জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস.এম ফজলুল হক, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কে এম ফজলুল হক মিলন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নাল আবেদীন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।
রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী, যশোর, ঢাকা, ফরিদপুর এবং রাঙ্গামাটি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আজও দিনভর অব্যাহত থাকতে পারে। একইসঙ্গে দিনের তাপমাত্রাও কমার সম্ভাবনা নেই। ফলে দেশজুড়ে গরমের অনুভূতি বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রকাশিত পূর্বাভাসে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
একইসঙ্গে পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ (১ এপ্রিল) এবং আগামীকাল (২ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায়ও অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর এই দুইদিনই সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
তবে এই সময়ের শেষের দিকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি বাড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে ঈদুল ফিতরের বার্তা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমরা একে অপরের কাছাকাছি যেতে পারি, আমাদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারি, দেশ ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। কারণ, এবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অর্জন করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে এই বার্তা মনে রাখতে হবে।
আজ সোমবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (সিএও) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের প্রতি সহনশীল হব, আমরা পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলব। এর মাধ্যমে একটি সমাজে শান্তি ফিরে আসে। বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি এবং এটি প্রতিদিন আমাদের মনে রাখতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা (জনগণ) দেশে শান্তি চান যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের দিন কাটাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের মঙ্গল কামনা করি এবং আমরা দেশ ও সারা বিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করি’।
ঈদের বার্তা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ঈদ জাতি এবং তার জনগণকে পরিশুদ্ধ করার একটি অনন্য দিন, যাতে তারা সকল দূরত্ব এবং সকল পার্থক্য কাটিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, জাতির সেই ঐক্য দরকার, বিশেষ করে এই সময় যখন আমরা আমাদের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঐক্য গড়ে তুলতে এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সকলের সাহায্য কামনা করেন।
উপদেষ্টাবৃন্দ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, কূটনীতিক, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য, সংস্কার কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ সোমবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পুলিশ সদস্যদের মেস পরিদর্শন করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। নিজেদের ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে জনগণের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এসময় তারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মনের সংকীর্ণতা ও সীমাবন্ধতা কাটিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার নিজ জেলায় পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ শেষে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পৃথিবীর সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দোয়া করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দোয়া করবো, যেন আমরা একসঙ্গে আমাদের মনের সংকীর্ণতা এবং আমাদের সীমাবন্ধতা কাটিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আর সকল নেতিবাচক কাজ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর প্রতি যেমন বান্দার হক রয়েছে তেমনি বান্দার প্রতিও বান্দার হক রয়েছে। এই হক যেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে আদায় করতে পারি।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীতে অনেক মুসলিম ভাই বোনরা আছেন, যারা আমাদের মতো করে ঈদ করতে পারছেন না।
এর আগে তিনি আটোয়ারী উপজেলার নিজ এলাকা থেকে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আসেন। নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি বিনিময় করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলের থেকে এবার ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে। আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ পালন করছি।
সোমবার ঈদের দিন সকালে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গত ১৫ বছরের ঈদের সাথে এবারকার ঈদের পার্থক্যটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক পার্থক্য, এবার আমরা মুক্ত পরিবেশে একটা আনন্দময় পরিবেশে ঈদ পালন করছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই দিনে আমরা আশা করব যে, যেই দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দায়িত্বে সবাই সফল হবেন এবং বিশেষ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহায়তা করব।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশী মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।
দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেই দোয়া চেয়েছি।’
সকাল সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শেরে বাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এসে তার কবরে ফুল দেন এবং দোয়া করেন।
এ সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদেন বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘ঈদ মোবারক’ আপনাদের মাধ্যমে আমরা পুরো দেশবাসীর কাছে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ‘ঈদ মোবারক।’
সুলতানি-মুঘল আমলের ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাজধানী ঢাকার রাজপথে হয়েছে ঈদ আনন্দ মিছিল।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে আরও উৎসবমুখর করতে এই মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি), যেখানে ঢাকার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই মিছিল পেয়েছে আরও বর্ণিল রূপ।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত শেষে সকাল ৯টায় সেখান থেকেই শুরু হয় বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল।
আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। এ ছাড়া সুলতানি ও মোগল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো আয়োজন করা হয়। যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া তানভীর আহমেদ সাদী জানান, এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে সত্যিই দারুণ লাগছে। আমাদের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এমন আয়োজন বারবার হওয়া উচিত। আব্বুর মুখে এমন ঈদ মিছিলের কথা শুনেছি, কিন্তু নিজে কখনো দেখিনি। আজ নিজে এমন মিছিলে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনা। এই ঈদ আনন্দ মিছিল তারই একটি অংশ। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এর আয়োজন করা হবে।
এবারে ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন ও এর পরদিন (আজ ও আগামীকাল) এ মেলা হচ্ছে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল বসেছে। মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৯ টায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লিদের অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২৩ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। সারা দেশ থেকে মুসল্লিরা এ জামাতে অংশ নেন।
ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত আদায়ের জন্য এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও মুসল্লিদের ওযুর ব্যবস্থা, যানবাহন রাখার ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম, খাবার পানিসহ ১৪৫টি মাইক রাখা হয়। মসজিদের প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়।
সকাল থেকে মাঠে আসতে শুরু করে মুসল্লিরা। সকাল ৯টা বাজার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এই জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান।
জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, শিশু কিশোর ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন । নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।