শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ গোলাম মোস্তফা ঘটনাটি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
শুক্রবার বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ গোলাম মোস্তফা ঘটনাটি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে,রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৪। এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। উৎপত্তিস্থলে ভূপৃষ্ঠ থেকে এর গভীরতা ছিল ১০ কিলোমিটার।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রমে সহায়ক তথ্য দিয়ে কমিশনকে সাহায্য করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
প্রায় ১৬ বৎসর পূর্বে সংঘটিত ঘটনার তথ্য উদ্ঘাটন জটিল হলেও কমিশন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যাতে করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
কমিশন নজিরবিহীন লোমহর্ষক পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সাক্ষ্য আহ্বান করেছে। যে পদ্ধতিতে তথ্য দেওয়া যাবে: ওয়েবসাইটের মাধ্যমে bdr-commission.org, ই-মেইলের মাধ্যমে: [email protected]। এছাড়াও কমিশনে হাজির হয়ে। তাছাড়া কুরিয়ার ও ডাকযোগেও সহায়তা করা যাবে। ঠিকানা: বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম), নতুন ভবন (৭ম তলা), ড. কুদরত-এ-খুদা সড়ক (সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোড), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫। কমিশনকে ঢাকার বাইরে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকারী তথ্যদাতার বাসায় যেয়ে বা অন্য যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে উল্লেখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
হটলাইন (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা: ০১৭৬৯-৬০০২৮১)। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সহায়তাকারী ব্যক্তিবর্গের পরিচয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তথ্যদাতা তার নাম, ফোন, ই-মেইল, ঠিকানা সাবমিট করবেন ওয়েবসাইটে। এর আগে তথ্যের প্রকৃতি নির্বাচন করতে হবে-বেঁচে ফিরে আসা শহীদ পরিবারের ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, অন্যান্য সাক্ষী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, প্রিন্ট মিডিয়া (খবরের কাগজ), ইলেকট্রনিক মিডিয়া (ইমেজ, ভিডিও, অডিও, নিউজ পেপার) মোবাইল কল রেকর্ড, মোবাইল ম্যাসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদঘাটন, ঘটনায় রুজুকৃত দুটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত, ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার সহযোগী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ঘটনার সংঘটনকারী এবং ঘটনার অপরাপর সংশ্লিষ্ট বিষয় ও অপরাধীদের এবং সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, বিভাগ, সংগঠন চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে একটি 'জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন' গঠন করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী কিছু কিছু বিদেশি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এই প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখা হয়েছে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কমিশন সকল তথ্য সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা করেছে।
কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে এবং কোন প্রকার চাপ বা প্রভাব মুক্ত অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৬ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। কমিশন তাদের তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একাধিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তদন্ত কমিশন তাদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তপ্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি মির্জা আজম, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের তৎকালীন অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ শামসুল আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের সময়সূচি ফোন, ই-মেইল বা চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যার সময়সীমা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ এর অধীনে মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে (অবসরপ্রাপ্ত) সভাপতি করে ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের’ বিষয়ে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার উদঘাটন এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এই জাতীয় স্বাধীন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনকে সময়সীমা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি বিষয়ে বলা হয়েছে, ১. ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটন করা।
২. ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের (ব্যক্তি/ গোষ্ঠী/ সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/ বিভাগ/ সংগঠন) চিহ্নিত করা। ৩ হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে/পরে সংঘটিত অপরাধের উদঘাটন, দায়ীদের চিহ্নিত করা এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করা। ৪. হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের (ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন) চিহ্নিত করা।
৫. হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাধে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তদের অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি- এমন প্রকৃত অপরাধীদেরকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। ৬. তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোনও স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যে কোনও ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ বেসামরিক নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ নির্মম, নৃশংস ও ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রচিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। বিদ্রোহের ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি রাখা হয়েছে।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়।
এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই দেশে সবচেয়ে বড় মামলা।
বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান। এরপর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। যা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃতি ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতসহ চার বিদেশি প্রতিনিধি আজ শুক্রবার বান্দরবান জেলা পরিদর্শনে আসেন।
প্রতিনিধি দল বান্দরবানের নীলাচলে আসার পর সেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন।
ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ একথা জানানো হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অপার সৌন্দর্যের বিষয়ে উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা প্রতিনিধি দলকে ধারণা দেন এবং বান্দরবান জেলার পর্যটন স্পট নীলাচল, মেঘলা ও পর্যটনের রূপবৈচিত্র্যময় অপার সৌন্দর্যের দৃশ্যগুলো তাদের ঘুরিয়ে দেখান।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের প্রতিনিধিদের মধ্যে ইইউ অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার, ইতালিয়ান নাগরিক আন্তেনিও আলেসান্দ্রো ও পাওলা বেনিফিওর এবং ডাচ আইনজীবী এন্ড্রে কার্স্টেন্স উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঁচ দিনের সরকারি সফরে গতকাল বান্দরবান এসে পৌঁছান।
এ সময় পার্বত্য উপদেষ্টার স্ত্রী নন্দিতা চাকমা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানসামা লুসাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ কুমার মহোত্তম, যুগ্ম সচিব কঙ্কন চাকমা, বান্দরবান জেলা পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার, বান্দরবান জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে সারাদেশে ১০ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ৩৯০ জনকে আটক করা হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, চিহ্নিত দুর্বৃত্ত, ডাকাত, চাঁদাবাজ, একাধিক মামলার পলাতক আসামি, ছিনতাইকারী, কিশোর গ্যাং সদস্য, মাদক ব্যবসায়ী, মাদকাসক্ত এবং দালালচক্রের সদস্যরা রয়েছে।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয় সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের অধীনস্থ ইউনিটসমূহ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যৌথ অভিযান চালানো হয়।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে দেশব্যাপী পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের কাছ থেকে ১০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৬টি বিভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ, মাদকদ্রব্য, সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার দেশী অস্ত্র, চোরাই মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।
আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উপলক্ষে বৈশাখি উৎসব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত উৎসবকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী বিভিন্ন এলাকায় টহল ও নিরাপত্তা কার্যক্রম চালায়।
বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটের ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করেছে সেনাবাহিনী। পাশাপাশি, চলমান এসএসসি এবং সমমান পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশব্যাপী টহল কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী।
দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী এ ধরনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সাধারণ জনগণকে যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপের বিষয়ে নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম মাগুরা মেডিকেল কলেজ বন্ধের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আজ সকালে কলেজ পরিদর্শনকালে তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, মেডিকেল কলেজ বন্ধ, স্থানান্তর বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অধিভুক্ত করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই।
কলেজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
এ সময় মাগুরা জেলা প্রশাসক মো. ওহিদুল ইসলাম, কলেজের অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শফিকুল আলম বলেন, কলেজের একাডেমিক অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি সম্যক অবহিত, যা সন্তোষজনক বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে, দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠতে এবং দেশের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখতে উৎসাহিত করেন।
পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন আজ বলেছেন, লাখ লাখ প্রবাসীদের উন্নত সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকার বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে বিশেষ করে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসগুলোতে জনবল বৃদ্ধিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা মানবসম্পদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছি, বিশেষ করে আমাদের কনস্যুলার পদগুলোতে। আশা করছি এই প্রচেষ্টায় অন্তত আংশিক সাফল্য পাব।’
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ফরেন সার্ভিস ডে-২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।
হোসেন বলেন, বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীরা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন তার প্রায় ৮০ শতাংশ তাদের অভিবাসনের আগে দেশের ভেতরে এবিষয়ক কার্যক্রম থেকে আসে, বাকি ২০ শতাংশ অভিবাসী দেশে ঘটে।
‘তবুও, বিদেশে আমাদের মিশনগুলোকে সম্পূর্ণ ১০০ শতাংশ সমস্যার সমাধান করতে হবে’ এ কথা উল্লেখ করে তিনি বিদেশী মিশনের উপর চাপ কমাতে দেশে মূল কারণগুলো সমাধানের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, সীমিত জনবল এবং লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, বাংলাদেশ মিশনগুলো বিশ্বব্যাপী এক কোটিরও বেশি প্রবাসীকে পরিষেবা প্রদান করছে।
সৌদি আরবের উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরবে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, একটি মিশনের ৫০ জন কর্মকর্তা কীভাবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সমস্যা সামাল দিতে পারেন?
অভিবাসী শ্রমিকরা দেশ ছাড়ার আগেই যে পদ্ধতিগত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা কমাতে ঢাকায় উদ্যোগ নিতে তিনি আহ্বান জানান।
কর্মকর্তাদের মধ্যে আরও বেশি সহানুভূতি জানানোর আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রবাসীরা ইচ্ছা করে মিশনে (কনস্যুলেট) যান না। বেশিরভাগই মরিয়া হয়ে আসেন। যদিও কয়েকজন ভালো আচরণ নাও করতে পারে, তবে বেশিরভাগের সহায়তার গুরুতর প্রয়োজন হয়।
তিনি বিদেশে মিশনের কর্মকর্তাদের দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে অত্যন্ত আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের সেবা করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সংকটের কথাও উল্লেখ করে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানকে ‘দ্বিধাগ্রস্ততা’ হিসেবে অবহিত করেন।
তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে এই অগ্রগতির পথে একটি বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আরাকান আর্মি রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত নয়, তাই আনুষ্ঠানিক আলোচনা সম্ভব নয়। তবুও, কোনও না কোনওভাবে তাদের সম্পৃক্ত না করে সংকটের সমাধান অসম্ভব।’
হোসেন জোর দিয়ে বলেন, স্বীকৃতি না পেলেও রাখাইনে আরাকান আর্মির উপস্থিতি ও প্রভাব রোহিঙ্গা সংকটের যেকোনো সামগ্রিক সমাধানে তাদের ভূমিকা অনিবার্য করে তুলেছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে স্মরণ করে প্রতি বছর ১৮ এপ্রিল ফরেন সার্ভিস দিবস পালন করা হয়, তৎকালীন পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে কর্মরত একদল সাহসী বাঙালি কূটনীতিক প্রথম বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং বেশ কয়েকজন সাবেক বাংলাদেশী কূটনীতিকও দিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
তাদের সাহসী পদক্ষেপ জাতির স্বাধীনতার দিকে যাত্রায় একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল এবং যা একটি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি স্থাপন করেছে।
এই দিনটি বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের স্বার্থকে এগিয়ে নিতে দেশের কূটনৈতিক সম্প্রদায়ের সাহস, প্রতিশ্রুতি ও পেশাগত উৎকর্ষতার প্রতীক।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে একটি অভিযান পরিচালিত হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানান, অভিযানকালে এনফোর্সমেন্ট টিম হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসির (প্রশাসন) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের জনবল নিয়োগ দুর্নীতি-সংক্রান্ত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সংগ্রহ করে। প্রতিবেদনের প্রাথমিক পর্যালোচনায় জনবল নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়।
এ ছাড়া সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক টিম। টিম জানতে পারে, প্রকল্পের অর্থায়নে ১৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ শেষে এই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৫ বছর চাকরি করবেন এ ধরনের শর্তে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হলেও প্রশিক্ষণ শেষে ৮৫ জন কর্মকর্তা হাসপাতালে যোগদান করেননি। অত্যন্ত অপরিকল্পিতভাবে এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন এমন বিষয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়। এর ফলে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় সাধিত হয়। অধিকন্তু, হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিদ্যমান একটি ব্যাংক, একটি ফার্মেসি ও দুটি ক্যানটিন পরিচালনায় অনিয়মের প্রাথমিক প্রমাণ পায় দুদক টিম।
এ ছাড়া স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার সম্পত্তি আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে সম্প্রতি একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানকালে প্রাথমিক তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি একটি নিবন্ধিত, অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, যা সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধন নম্বর-২১৯/১৯৬২ অনুযায়ী পরিচালিত হয়ে আসছে। এটি পরিচালনা করে কার্যকরী পরিষদ, যার সভাপতির পদে নবাব পরিবারের একজন বংশধর থাকেন। বর্তমানে কার্যনির্বাহী পরিষদ না থাকায় ৮ অক্টোবর একজন প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়, যিনি পরবর্তীতে পদত্যাগ করেন। এরপর মার্চ ২০২৫-এ নতুন একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।
এ অবস্থায় নবাব বংশের দাবিদার খাজা আলী মাদানির নেতৃত্বে গঠিত সাত সদস্যের একটি কমিটি নতুনভাবে স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম অরফানেজ সোসাইটি নামে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে এবং ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে নিবন্ধন পায়। একই প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে নিবন্ধিত ও প্রশাসক নিয়োগপ্রাপ্ত থাকা সত্ত্বেও নতুন নিবন্ধন প্রদান বিষয়ে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে মর্মে টিম জানতে পারে। অভিযানকালে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলি সংগ্রহ করে দুদক টিম।
এদিকে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কর্ণফুলি শিপ বিল্ডার্স লি. কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অধিক মূল্যে জাহাজ ক্রয় ও ড্রেজার নির্মাণে দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের শুরুতে অধিক মূল্যে জাহাজ ক্রয়ের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে টিম বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ঢাকার আগারগাঁও অফিসে গিয়ে মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংশ্লিষ্ট সব রেকর্ডপত্র এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময় ড্রেজার নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়।
রাজধানীতে পৃথক অভিযানে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ছয় নেতাকে গ্রেপ্তারর করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহের আলম মুরাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৫০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. আরিফ হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াত, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ.এফ. রহমান হল শাখার সহ-সভাপতি বাপ্পি রায়হান, ঢাকা মহানগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের ভাতিজা এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবির বিভিন্ন দল। শুক্রবার ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহের আলম মুরাদকে গ্রেপ্তার করে ডিবির একটি টিম। এছাড়া ডিবি ওয়ারী বিভাগের একটি দল রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ.এফ. রহমান হল শাখার সহ-সভাপতি বাপ্পি রায়হানকে গেপ্তার করে। অপর এক অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৫০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মো. আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, একই দিন বৃহস্পতিবার ডিবি মতিঝিল বিভাগের একটি টিম খিঁলগাও থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. শাখাওয়াততে গ্রেপ্তার করে।
অপর এক অভিযানে ডিবি সাইবারের একটি টিম রাজধানীর শান্তিনগর থেকে ঢাকা মহানগরের ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া তেজগাঁওয়ের একটি বাসা থেকে ডিবির অপর একটি টিম সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুনের ভাতিজা এবং মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে দেশীয় অস্ত্র ‘চাপাতি’ ঠেকিয়ে একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। চাঞ্চল্যকর এ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই জড়িতদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামে পুলিশ।পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটি মোটরসাইকেল ও দেশীয় অস্ত্রসহ এক পেশাদার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম ইমরান খান সাকিব ওরফে শাকিল (৩৫)।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে গাজীপুরের পূবাইল থানা পুলিশের সহায়তায় কুদাব পশ্চিমপাড়া এলাকায় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় জড়িত অপর দু’জনকে গ্রেপ্তারে মাঠে কাজ করছে পুলিশ।
ঢাকা মগানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) ভোরে ভুক্তভোগী অংগ্যজাই মারমা তার চাচাতো বোনকে নিয়ে শান্তি পরিবহনের একটি বাস থেকে নেমে রিকশায় পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসায় যাচ্ছিলেন। তাদের বহনকারী রিকশাটি মান্নান সরণি এলাকায় পৌঁছালে ইমরান খান সাকিব ও তার দুই সহযোগী মোটরসাইকেলে এসে রিকশার গতিরোধ করে। এরপর তারা ধারালো চাপাতি হাতে ভুক্তভোগীদের ভয় দেখিয়ে অংগ্যজাই মারমার মানিব্যাগ এবং তার চাচাতো বোনের গলার রুপার চেন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর মানিব্যাগে নগদ ২ হাজার ৫০০ টাকা, তিনটি ক্রেডিট কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, মেট্রোকার্ড ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে (ভাইরাল) বিষয়টি পুলিশের নজরে আসে। এরপর মিরপুর মডেল থানা পুলিশ ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তার আশ্বাস দেয়। এর প্রেক্ষিতে ১৭ এপ্রিল মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।
তিনি আরও জানান, মামলা নেয়ার পর তদন্তে নেমে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। পরে শুক্রবার সকালে গাজীপুরে অভিযান চালিয়ে ইমরান খান সাকিব ওরফে শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও ভুক্তভোগীর ছিনতাই হওয়া আড়াই হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার শাকিলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিরপুর মডেল থানা এলাকার পূর্ব মনিপুরের একটি ভবনের ছাদ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি ধারালো চাপাতি উদ্ধার করা হয়।
ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার শাকিল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। তার বিরুদ্ধে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় ছিনতাই, চুরি ও মাদকসংক্রান্ত একাধিক মামলা রয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও দুইজন পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
নিবন্ধন নিয়ে হতাশ না হতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির। শিগগিরই দলটি নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পেতে যাচ্ছে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান অ্যাডভোকেট শিশির মনির। এ সময় জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের মুক্তির বিষয়টিও চলতি মাসেই ফয়সাল হবে বলে জানান তিনি।
আসন্ন নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা না করলেও ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। পিছিয়ে নেই জামায়াতও। এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছে দলটি। অথচ নিবন্ধন এবং প্রতীকের বিষয়টি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি সর্বোচ্চ আদালতে। এরই মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাস কেটে গেছে। এর মধ্যে রাজনীতির মাঠেও বেশ সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। অথচ এখন পর্যন্ত নিবন্ধন না পাওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে জামায়াত নেতাকর্মীদের মধ্যে।
বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলছেন দলের আইনজীবীরা। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, যৌক্তিক কারণে বিলম্ব হলেও হতাশ হওয়ার কারণ নেই। শিগগিরই নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাওয়ার মামলার চূড়ান্ত রায় হবে। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনি প্রক্রিয়ায় অন্যদলের শীর্ষ নেতারা মুক্ত হলেও একযুগের বেশি সময় ধরে কারাগারে এটিএম আজহার। সেটিও নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে দলটির ভেতরে-বাইরে। তবে মুক্তির আইনি প্রক্রিয়া শেষ। এখন শুধু শুনানির অপেক্ষা। জামায়াতের এ আইনজীবী আরও বলেন, আগামী রোববার (২০ এপ্রিল) থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচার কাজ শুরু হবে। কিন্তু ২৩ থেকে ৩০ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি দেশের বাইরে থাকবেন। এরপর এই দুই মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবকে দেওয়া এক লিখিত আবেদনে এই অনুরোধ জানিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন দল এনসিপি।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে সচিবের কার্যালয়ে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এই আবেদন জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন এবং সদস্য মনিরুজ্জামান। ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব বরাবর ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন’ শিরোনামে এই আবেদন করেছে দলটি।
এনসিপির আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে। একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কমিশন সারা দেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও আয়োজন করেছিল। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই ইসির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এনসিপি বলেছে, ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিলেও এখন পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই ত্বরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তগুলোকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়ে এনসিপির আবেদনে বলা হয়েছে, আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এই বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রণীত। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেই জেলা পর্যায়ে ১০ শতাংশ ও উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছরে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তা ছাড়া ইসির বর্তমান কাঠামো ও ব্যক্তিদের নিয়োগ ২০২২ সালের বিতর্কিত আইন অনুসারে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।
এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।
চিঠির শেষাংশে এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন করে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক। এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা অন্যূন ৯০ দিনের বাড়ানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
এই আবেদন জমা দিতে যাওয়া এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ইসি সচিবের দপ্তরে গিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন সচিবের দপ্তরে আমরা জমা দিয়ে এসেছি।’
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরকারের মালিকানা কমিয়ে ফেলেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করা হয় ‘গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশ’। এই সংশোধনীর মূল বিষয় ছিল গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের বিদ্যমান মালিকানা কমানো। অধ্যাদেশে ব্যাংকটিতে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। উপদেষ্টা পরিষদ এতে সম্মতি জানিয়ে এতে নীতিগত অনুমোদন দেয়। গতকাল সকালে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে রাজধানীর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ‘গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশে’নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটিতে সরকারের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৯০ শতাংশ রাখা হয়েছে ব্যাংকের সুবিধাভোগীর জন্য।
প্রসঙ্গত, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ১৯৭৬ সালে ক্ষুদ্র পরিসরে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর পর ১৯৮৩ সালের অক্টোবরে জাতীয় আইন দ্বারা গ্রামীণ ব্যাংককে একটি স্বাধীন ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয় তদানীন্তন সরকার। এরপর থেকে ব্যাংকটির প্রধান কর্তার দায়িত্ব পালন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০০৬ সালে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখায় নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয় গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তবে পরবর্তীতে বয়সজনিত কারণকে সামনে এনে এর পরিচালনা পর্ষদ থেকে ড. ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় তদানীন্তন আওয়ামী লীগ সরকার।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, এখানে গ্রামীণ ব্যাংক আগে যখন কাজ করত, একটা মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করত। সেই মূল্যবোধ হচ্ছে যারা গ্রামীণ ব্যাংকের সুবিধাভোগী, তাদেরই অংশগ্রহণ থাকবে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে। কিন্তু আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদকে রাজনৈতিকভাবে টার্গেট করা হয়েছিল এবং গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় তার যে দর্শন ছিল—‘যে ঋণ নেবে তার হাতেই সুবিধা থাকবে’— সেখান থেকে সরিয়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে নিয়ে আসা হয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে যে অধ্যাদেশ সংশোধন করা হলো, তার মাধ্যমে আগে গ্রামীণ ব্যাংক ভূমিহীনদের জন্য কাজ করতো, এখন বিত্তহীনদের একটা সংজ্ঞা সংযোজন করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পরিসর থেকে বেরিয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, অধ্যাদেশে বোর্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে—যারা এই ব্যাংকের সুবিধাভোগী, তাদের মধ্যে থেকে ৯ জন নির্বাচিত হয়ে আসবেন। এই ৯ জনের মধ্যে থেকে আবার ৩ জন মনোনীত হবেন এবং তাদের মধ্যে থেকে একজন চেয়ারম্যান নিযুক্ত হবেন। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছে— পরিশোধিত মূলধন আগে ছিল সরকারের ২৫ শতাংশ, আর সুবিধাভোগীদের ৭৫ শতাংশ । এখন হয়ে গেছে ১০ শতাংশ এবং ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া ‘ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট ২০১৫’ অনুসারে গ্রামীণ ব্যাংককে জনস্বার্থ সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করার একটা বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে হত্যার দায়ে দুবাইয়ে পলাতক আলোচিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খানসহ ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আরাভ খানের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), মামুন ইমরানের বন্ধু রহমাত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩)। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে আরাভ খান ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া পলাতক রয়েছেন।
অপর ৬ আসামির মধ্যে রহমাত উল্লাহ, সারোয়ার হোসেন জামিনে থেকে আদালতে হাজির হন। এছাড়া বাকি চার আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে ৬ আসামিকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। আরাভ খান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
এর আগে কয়েক দফা রায় পেছানো হয়। সর্বশেষ গত ৯ এপ্রিল রায় পিছিয়ে আজকের দিন ধার্য করা হয়েছিল।
২০১৮ সালের ৭ জুলাই বনানীতে খুন হন পুলিশ পরিদর্শক মামুন। পরে ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন ইমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পরে তার ভাই বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ রহমত উল্লাহ ও রবিউল ইসলাম ওরফে আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয় ওরফে হৃদিসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, রবিউল ইসলামের (আরাভ খান) নেতৃত্বে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত একটি চক্র। তাদের লক্ষ্য ছিল রহমত উল্লাহকে আটকে ‘অশালীন’ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে টাকা আদায় করা। সেজন্য ওই চক্র জন্মদিনের নাটক সাজিয়ে রহমতকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিল বনানীর ওই বাসায়।
বন্ধু রহমতের সঙ্গে সেখানে গিয়ে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন।
রাজধানীর উত্তরা থেকে খিলক্ষেত অভিমুখী সড়কে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিনই ছিল তীব্র যানজট। যানজটের প্রধান কারণ ছিল খিলক্ষেত বাসস্টপের ঠিক সামনে কুড়িল ফ্লাইওভার ওঠার মুখে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিটের (এমআরটি লাইন-১) ইউটিলিটি স্থানান্তর কাজের জন্য নানা ধরনের প্রস্তুতি। পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে কুড়িল ফ্লাইওভার বন্ধ করে দিনভর কাজটি করার পর গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ঘোষণা দিয়েছে, খিলক্ষেত থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার র্যাম্পটি আরও ২৯ ঘণ্টা টানা বন্ধ থাকবে। ফলে গতকাল পুরোদিনের পর আজ শুক্রবারও সারাদিন এই র্যাম্পটি দিয়ে কুড়িল হয়ে ৩০০ ফুটের সড়ক বসুন্ধরা হয়ে খিলগাঁও, পল্টনের দিকে সরাসরি যাতায়াত করা সম্ভব হবে না।
এ জন্য এই রুটে চলাচলকারী যানবাহনকে খিলক্ষেত থেকে সোজা রাস্তা ধরে এগিয়ে হোটেল র্যাডিসনের আগে থাকা বিভাজকে ইউটার্ন নিয়ে নিকুঞ্জ-১ এর সামনে অবস্থিত বিশ্বরোডের র্যাম্প ব্যবহার করে কুড়িল ফ্লাইওভারে ওঠার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১) এর প্রকল্প পরিচালক মো. আবুল কাসেম ভূঞা স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ডিএমটিসিএল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা হতে ১৮ এপ্রিল শুক্রবার রাত ১২ টা পর্যন্ত খিলক্ষেত হতে কুড়িল ও বসুন্ধরা অভিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে, গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ডিএমটিসিএল কুড়িল ফ্লাইওভারের খিলক্ষেতের মুখটি আটকে ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজ শুরু করায় উত্তরা থেকে খিলক্ষেত হয়ে নগরীতে প্রবেশে ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়েন রাজধানীবাসী। এদিন বৃহত্তর পাবলিক পরীক্ষা হিসেবে স্বীকৃত এসএসসি পরীক্ষা থাকায় পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষে বাসায় ফেরার পথে ভীষণ দুর্ভোগের শিকার হন। ভুক্তভোগীরা জানান, উত্তরার আজমপুর থেকে খিলক্ষেত আসতে যেখানে ১০-১৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে না সেখানে যানজটে প্রতিটি যানবাহনের দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে র্যাডিসন হোটেলের আগের ইউটার্ন পর্যন্ত ছিল এই যানজট। ফলে একদিকে বৃষ্টি ও পরে ভ্যাপসা গরমে ভীষণ দুর্ভোগে পড়েন পথযাত্রীরা।
মাহবুব আলম নামে খিলক্ষেতের এক বাসিন্দা জানান, ইউটিলিটি স্থানান্তরের কাজটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হতে পারে তবে কাজটি কখন কোথায় শুরু হচ্ছে তা আগেই নগরবাসীকে জানানো উচিত। তিনি বলেন, নিজের গাড়ি নিয়ে খিলক্ষেত পর্যন্ত এসে শুনি কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্যদের দিয়ে হ্যান্ড মাইকে অনুরোধ করা হচ্ছিল কুড়িলগামী গাড়িগুলোকে ফ্লাইওভার পরিহার করে র্যাডিসনের আগের সড়ক বিভাজকে ইউটার্ন নিয়ে নিকুঞ্জ-১ এর সামনের ফ্লাইওভার দিয়ে কুড়িল হয়ে গন্তব্যে যেতে। বিষয়টি আগে থেকে জানা থাকলে আগে থেকেই বিকল্প পথ বেছে নেওয়া সম্ভব ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমানে খিলক্ষেত বাসস্টপ এলাকায় ও কিছুদিন আগে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় এই কাজটি চলছে। খিলক্ষেত ও এর ভেতরের এলাকাগুলোতে কয়েক লাখ মানুষ বসবাস করেন। তাই এসব মানুষের পথচলা নির্বিঘ্ন রাখতে পথ বন্ধ রাখার মতো যেকোনো কাজে আগাম ঘোষণা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।