সারা বিশ্বে ৬০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন খাতে চাকরি করছেন। এদের মধ্যে ১৬ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি সোসাইটির (বিসিপিএস) সভাপতি ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার। এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ ও বিসিপিএসের যৌথ উদ্যোগে ‘বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস-২০২৪’ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাতে আয়োজিত এক ওয়েবিনারে কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। প্রতিবছরের ১০ অক্টোবর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। এবারের দিবস প্রতিপাদ্য ছিল ‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার এখনই সময়’। ওয়েবিনারে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহীম, স্বাস্থ্য অধিপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ডক্টর মো. আখতার হোসেন খান।
বিসিপিএস সভাপতি ড. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘অতিরিক্ত কাজের চাপ, যা একজন কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বিপরীতে কর্মক্ষেত্রে একজন কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা গেলে সেটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। গবেষণা বলছে, যদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিরসনে ১ ডলার বিনিয়োগ করা হয় তবে রিটার্ন আসে ৪ ডলার। খুবই সহজ একটি ব্যবসা। আপনি ১০০ টাকা বিনিয়োগ করলে ৪০০ টাকা রিটার্ন পাবেন। এরচেয়ে সহজ ব্যবসা আর কী আছে! কিন্তু তারপরও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হচ্ছে না।’
ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তাদের সেবা প্রদান করা অনেক জরুরি। আমরা দেখতে পাই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজন আছে এমন মানুষদের মধ্যে মাত্র ৮ ভাগ মানুষ সেবা নিতে পারছেন। আর ৯২ শতাংশই মানসিক স্বাস্থ্য সেবার বাইরে রয়ে যান। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে আমাদের দেশে যে রিসোর্চের ঘাটতি আছে তা এতেই স্পষ্ট হয়। একইসঙ্গে যদি শিশু-তরুণদের চিত্র দেখি তাদের মধ্যে চিকিৎসা ঘাটতির পরিমাণ ৯৪ শতাংশ, মাত্র ৬ শতাংশ চিকিৎসা নিতে পারছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মক্ষেত্রকে চিন্তা করি আর্থিক নিরাপত্তার বিবেচনায়। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি এতটা গুরুত্ব পায় না। মানসিক স্বাস্থ্য একটি স্টেট অব ওয়েল বিং। যেখানে আমরা জীবনকে কীভাবে খাপ খাইয়ে নেই, কীভাবে আমাদের অ্যাবিলিটিগুলোকে ব্যবহার করি, কীভাবে আমরা শিখি, শেখাটাকে কাজে প্রয়োগ করি এবং কীভাবে আমরা চারপাশের কমিউনিটিতে অবদান রাখি এই সব বিষয়গুলোই মানসিক স্বাস্থ্যের অংশ। এই মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি আমাদের চারপাশের কমিউনিটিতে অবদান রাখতে, সামগ্রিক বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে, সম্পর্কগুলোকে জোরালো করতে এবং বজায় রাখতে সাহায্য করে।’
এসময় নিউরোসাইকোলজি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এমএম জালাল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার রোগী সার্বিক স্বাস্থ্য খাতের ১৩-১৪ শতাংশ। অথচ এর বিপরীতে বাজেট মাত্র ০.৫ শতাংশ। সুতরাং আমাদের রিসোর্চের যেমন ঘাটতি আছে আমাদের বাজেটেরও ঘাটতি আছে।’
ওয়েবিনারে ঢাবির নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিটের পরিচালক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ব্যক্তি উদ্যোগের চেয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বেশি প্রয়োজন। কেননা পরিবেশ থাকলে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। প্রতিষ্ঠান যদি সেটি নিশ্চিত করতে পারে, মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে এমন ঘটনা যদি বন্ধ করা যায় তাহলেই কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা সম্ভব। ’
আইইউবিএটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘কর্মস্থলে এমন নীতিমালা থাকতে হবে, যাতে কর্মীরা বৈষম্যের শিকার না হন। যাতে কর্তৃত্বের ভারসাম্য থাকে।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. জহির উদ্দিন বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে একটি বৈষম্যহীন পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। কর্মীর যাতে মনে না হয় তার সঙ্গে যথাযথ ব্যবহার করা হচ্ছে। কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে যাতে মূল্যায়ন হয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।’
কর্মক্ষেত্রে কমান্ডিং ভয়েজটা চেঞ্জ করে সহকর্মীর সমস্যা বোঝা দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক প্রশাসন ডা. এবিএম আবু হানিফ। তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সৃষ্ট পদে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের পোস্টগুলো কেন শূন্য হয়ে আছে, সেটা আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’
ওয়েবিনারে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিশু নিহতের ঘটনা স্মরণ করেন সরকারি ডিএনএ ল্যাবের মহাপরিচালক ডা. এ এম পারভেজ রহিম। পরিবারে মেন্টাল ট্রমা কতটা কষ্টের তা উল্লেখ করে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরেন। বলেন, ‘যদি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হয় তাহলে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতি বছর আত্মহত্যায় অনেক বড় অংশের মানুষ মারা যায়।’
সভাপতির বক্তব্যে ঢাবির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিসিপিএসের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শাহানূর হোসেন বলেন, ‘১৮ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা আছে। এর মধ্যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার এগুলো মিলিয়ে ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবং বাকিগুলো অন্যান্য ডিসঅর্ডারের মধ্যে পড়ে। এতে স্পষ্ট যে ডিপ্রেশন অ্যাংজাইটি, সোমাটাইজেশন ডিসঅর্ডার বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রধান মানসিক সমস্যা। এ ছাড়া ১২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু-কিশোরদের মানসিক সমস্যা আছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগে এম.এস, এম.ফিল থিসিস মিলিয়ে প্রতিবছরই ২৫/৩৫টি গবেষণা হয়। এর মধ্যে ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে দেশের সরকারি জরিপের তুলনায় তিনগুণ বেশি মানুষ মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছেন।’
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয় উল্লেখ করে ড. মো. শাহানূর হোসেন বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা সাইকিয়াট্রি এ ধরনের স্পেশালাইজড প্রফেশনাল গ্রুপ যারা মেন্টাল হেলথ এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করেন তাদেরকে তৈরি করা একটা লম্বা সময়ের ব্যাপার। প্রায় ৩-৪ বছরের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০০-৬০০ জন সাইকোলজিস্ট আছেন যারা কাজ করছেন, যেখানে প্রয়োজন ৫০ হাজারের অধিক।’
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে ঈদুল ফিতরের বার্তা ধারণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে এবং দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এবারের ঈদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমরা একে অপরের কাছাকাছি যেতে পারি, আমাদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারি, দেশ ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। কারণ, এবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অর্জন করতে হবে।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে এই বার্তা মনে রাখতে হবে।
আজ সোমবার বিকেলে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে (সিএও) আয়োজিত অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের প্রতি সহনশীল হব, আমরা পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলব। এর মাধ্যমে একটি সমাজে শান্তি ফিরে আসে। বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি এবং এটি প্রতিদিন আমাদের মনে রাখতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা (জনগণ) দেশে শান্তি চান যাতে মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের দিন কাটাতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা একে অপরের মঙ্গল কামনা করি এবং আমরা দেশ ও সারা বিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করি’।
ঈদের বার্তা তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ঈদ জাতি এবং তার জনগণকে পরিশুদ্ধ করার একটি অনন্য দিন, যাতে তারা সকল দূরত্ব এবং সকল পার্থক্য কাটিয়ে তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে পারে।
তিনি বলেন, জাতির সেই ঐক্য দরকার, বিশেষ করে এই সময় যখন আমরা আমাদের ইতিহাসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঐক্য গড়ে তুলতে এবং এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি সকলের সাহায্য কামনা করেন।
উপদেষ্টাবৃন্দ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, কূটনীতিক, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য, সংস্কার কমিশনের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান, সুশীল সমাজের সদস্য এবং সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আজ সোমবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী ও পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পুলিশ সদস্যদের মেস পরিদর্শন করেন এবং তাদের খোঁজখবর নেন। নিজেদের ঈদ আনন্দ বিসর্জন দিয়ে জনগণের ঈদ আনন্দ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এসময় তারা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
মনের সংকীর্ণতা ও সীমাবন্ধতা কাটিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
আজ সোমবার নিজ জেলায় পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ শেষে এ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
পৃথিবীর সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দোয়া করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দোয়া করবো, যেন আমরা একসঙ্গে আমাদের মনের সংকীর্ণতা এবং আমাদের সীমাবন্ধতা কাটিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
তিনি বলেন, রমজানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। আর সকল নেতিবাচক কাজ থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর প্রতি যেমন বান্দার হক রয়েছে তেমনি বান্দার প্রতিও বান্দার হক রয়েছে। এই হক যেন আমরা আমাদের জায়গা থেকে আদায় করতে পারি।
এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পৃথিবীতে অনেক মুসলিম ভাই বোনরা আছেন, যারা আমাদের মতো করে ঈদ করতে পারছেন না।
এর আগে তিনি আটোয়ারী উপজেলার নিজ এলাকা থেকে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে আসেন। নামাজ শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি বিনিময় করেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ফ্যাসিবাদ সরকারের শাসনামলের থেকে এবার ঈদ আনন্দময় পরিবেশে হচ্ছে। আমরা মুক্ত পরিবেশে ঈদ পালন করছি।
সোমবার ঈদের দিন সকালে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গত ১৫ বছরের ঈদের সাথে এবারকার ঈদের পার্থক্যটা কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক পার্থক্য, এবার আমরা মুক্ত পরিবেশে একটা আনন্দময় পরিবেশে ঈদ পালন করছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই দিনে আমরা আশা করব যে, যেই দায়িত্ব নিয়েছেন সেই দায়িত্বে সবাই সফল হবেন এবং বিশেষ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার জনগণের কাছে তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করবেন। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে অবশ্যই সহায়তা করব।
তিনি বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনে প্রত্যেকটি বাংলাদেশী মানুষ যেন আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারে সেই জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছি।
দোয়া চেয়েছি আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে দ্রুত আমাদের কাছে ফিরে আসেন এবং আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি যেন অতি শিগগিরই আমাদের মাঝে ফিরে আসেন সেই দোয়া চেয়েছি।’
সকাল সাড়ে ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান শেরে বাংলা নগরে জিয়া উদ্যানে জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে এসে তার কবরে ফুল দেন এবং দোয়া করেন।
এ সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, হাবিব উ্ন নবী খান সোহেল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, রফিক শিকদার, এসএম জাহাঙ্গীর, আমিনুল হকসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারতের পর মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদেন বলেন, ‘আমরা দলের পক্ষ থেকে, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান এবং স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ‘ঈদ মোবারক’ আপনাদের মাধ্যমে আমরা পুরো দেশবাসীর কাছে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ‘ঈদ মোবারক।’
সুলতানি-মুঘল আমলের ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাজধানী ঢাকার রাজপথে হয়েছে ঈদ আনন্দ মিছিল।
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে আরও উৎসবমুখর করতে এই মিছিলের আয়োজন করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি), যেখানে ঢাকার ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এই মিছিল পেয়েছে আরও বর্ণিল রূপ।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্য মেলার মাঠে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাত শেষে সকাল ৯টায় সেখান থেকেই শুরু হয় বর্ণাঢ্য ঈদ আনন্দ মিছিল।
আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।
মিছিলে ছিল সুসজ্জিত পাঁচটি শাহী ঘোড়া, ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি, ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্যযন্ত্র। এ ছাড়া সুলতানি ও মোগল আমলের ইতিহাসচিত্র সম্বলিত পাপেট শো আয়োজন করা হয়। যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের সেমাই ও মিষ্টি খাওয়ানো হয়।
মিছিলে অংশ নেওয়া তানভীর আহমেদ সাদী জানান, এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে সত্যিই দারুণ লাগছে। আমাদের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে এমন আয়োজন বারবার হওয়া উচিত। আব্বুর মুখে এমন ঈদ মিছিলের কথা শুনেছি, কিন্তু নিজে কখনো দেখিনি। আজ নিজে এমন মিছিলে অংশ নিতে পেরে আনন্দিত।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য ঢাকার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনা। এই ঈদ আনন্দ মিছিল তারই একটি অংশ। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এর আয়োজন করা হবে।
এবারে ঢাকা উত্তর সিটির ঈদ আনন্দ উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলা। ঈদের দিন ও এর পরদিন (আজ ও আগামীকাল) এ মেলা হচ্ছে বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। মেলায় বিভিন্ন পণ্যের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের ২০০টির বেশি স্টল বসেছে। মেলা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় শিশুদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা থাকবে। খেলাধুলার জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন খেলার সামগ্রী।
দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল ৯ টায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লিদের অংশগ্রহণে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ২৩ একর জমি নিয়ে বিস্তৃত গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান। সারা দেশ থেকে মুসল্লিরা এ জামাতে অংশ নেন।
ঈদগাহ মাঠে আগত মুসল্লিদের শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত আদায়ের জন্য এলাকায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও মুসল্লিদের ওযুর ব্যবস্থা, যানবাহন রাখার ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম, খাবার পানিসহ ১৪৫টি মাইক রাখা হয়। মসজিদের প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হয়।
সকাল থেকে মাঠে আসতে শুরু করে মুসল্লিরা। সকাল ৯টা বাজার আগেই মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। এই জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হাফেজ মাওলানা মাহফুজুর রহমান।
জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মারুফাত হুসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ, শিশু কিশোর ও বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এই মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন । নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পবিত্র ঈদুল ফিতরের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৭টায়। এরপর পর্যায়ক্রমে সকাল ৮ টা, সকাল ৯টা, সকাল ১০টা এবং সর্বশেষ সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে ঈদের সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল ৭টায় প্রথম ঈদ জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মুহিববুল্লাহিল বাকী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।
সকাল ৮টায় দ্বিতীয় জামাতে ইমাম ছিলেন সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররমের প্রধান খাদেম মো. নাসিরউল্লাহ।
সকাল ৯টায় তৃতীয় জামাতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস ড. মাওলানা মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান। মুকাব্বির ছিলেন খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
সকাল ১০টায় চতুর্থ জামাতে ইমাম ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক ড. মুশতাক আহমদ। মুকাব্বির ছিলেন খাদেম মো. আলাউদ্দীন।
সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটের পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ। মুকাব্বির ছিলেন জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।
ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে ফজর নামাজের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে আসতে থাকেন। সকাল ৭টার আগেই মসজিদ মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে যায়। সাতটায় শুরু হয় প্রথম জামাত। প্রতিটি জামাতেই মসজিদ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিটি জামাতে দুই রাকাত ওয়াজির নামাজের পর খুতবা দেন ইমাম, এরপর হয় মোনাজাত।
মোনাজাতে গুনাহ মাফের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানানো হয়। মুসল্লিরা অনেকেই চোখের জলে আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মোনাজাতের দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করা হয়। বর্তমান সরকারের জন্য দোয়া করা হয়। একই সঙ্গে মোনাজাতে ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রহমত
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদসহ বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআ’য় ঈদুল ফিতরের প্রথম জামাতের পর শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি টিএসসি হয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।
এ উপলক্ষে তিনি সকলের অনাবিল সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।
উপাচার্য বলেন, বর্তমানে দেশ এক কঠিন সময় অতিক্রম করছে। এ পরিস্থিতিতে সব ভেদাভেদ ভুলে সকলকে সাম্য, মৈত্রী ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। পরস্পর হাত ধরাধরি করে সদৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মাহে রমজানের আত্মশুদ্ধি ও সংযমের শিক্ষা গ্রহণ করে ব্যক্তিগত জীবনে সৌহার্দ্য, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।
উন্নত, উদার ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম।
গতকাল রোববার এক শুভেচ্ছা বার্তায় উপদেষ্টা বলেন, ঈদুল ফিতর আনন্দ, সহমর্মিতা, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির এক মহিমান্বিত বার্তা নিয়ে এসেছে। ঈদ হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি ভুলে মানুষকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দেয়।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের পতন হওয়ায় মানুষের ঈদ-আনন্দের সঙ্গে এবারে এক ধরনের স্বস্তি যোগ হয়েছে। উপদেষ্টা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ ঐক্য গড়ে তোলার দিন, আমরা স্থায়ীভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। ঈদের জামাতে এটাই আমাদের কামনা।
আজ সোমবার (৩১ মার্চ) জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ শেষে মোনাজাতের আগে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতে অধ্যাপক ইউনূস জাতির পক্ষ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ঈদ মোবারক, আজ বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি গঞ্জে, প্রতিটি শহরে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জামাতে যারা শরিক হয়েছেন, আমরা জাতির পক্ষ থেকে তাদের ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।
যারা ঈদের জামাতে শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। আমাদের মা-বোনেরা যারা ঘরে আছেন, তাদেরও আমরা ঈদ মোবারক জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসী শ্রমিকেরা, যারা বিদেশে আছেন, সারা বছর কষ্ট করেছেন, ঈদের জামাতে হয়তো যেতে পারবেন, হয়তো যেতে পারবেন না, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাই। যারা বাংলাদেশিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আছেন, তাদের আমরা ভুলে যাইনি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। অনেকে হাসপাতালে আছেন, রোগী, বিভিন্ন কারণে ঈদের জামাতে যেতে পারেননি, তাদেরও ঈদ মোবারক জানালাম।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ দিয়েছেন, বীর সন্তানেরা, আত্মাহুতি দিয়েছেন, আমরা যেন মোনাজাতে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। যারা আহত হয়েছেন, যারা স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছেন, এই দেশের জন্য নিজেদের স্বাভাবিক জীবন ত্যাগ করতে যারা বাধ্য হয়েছেন, তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা দেওয়ার জন্য, রোগমুক্তির জন্য, আল্লাহর কাছে যেন আমরা প্রার্থনা করি আজকের দিনে।
তিনি বলেন, ঈদ দূরত্ব ঘোচানোর দিন, নৈকট্যের দিন, ভালোবাসার দিন, আজ সেই দিনটা যেন আমরা গভীর ভালোবাসার সঙ্গে উদযাপন করতে পারি, সেই বার্তা আমরা যেন সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারি। আজ একটি অটুট ঐক্য গড়ে তোলার দিন, আমরা স্থায়ীভাবে ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। ঈদের জামাতে এটাই আমাদের কামনা।
তিনি আরও বলেন, আজকের দিনে আমরা প্রার্থনা করি, যে নৈকট্য আমরা শুরু করলাম, এই নৈকট্য এবং এই ঐক্য জাতির জন্য যেন স্থায়ী হয়, আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে এগিয়ে যেতে পারি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যারা আত্মত্যাগ করেছেন, যারা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য আত্মাহুতি দিয়েছেন, বেঁচে থাকলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না, তাদের স্মরণে আমরা যেন মোনাজাত করি আল্লাহর কাছে। আমরা অবশ্যই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। শত বাধা সত্ত্বেও, যত বাধাই আসুক, আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে নতুন বাংলাদেশ গঠন করব ইনশাল্লাহ।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায়ের জন্য আসেন। ময়দানে প্রবেশ করার সময় সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা তাকে স্বাগত জানান। এ সময় সেখানে বিদ্যুৎ জ্বালানি উপদেষ্টা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে একসঙ্গে ৩৫ হাজার মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। মুসল্লিদের উপস্থিতিতে ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় ভর্তি ছিল। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সরকারের উচ্চপদস্থ ব্যক্তি ও কর্মকর্তারাও এই জামাতে নামাজ আদায় করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এর আগে, খুব সকাল থেকেই জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ইসলামি বয়ান চলছিল।
প্রধান উপদেষ্টা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিকেল ৪টায় তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আদায় করেছেন।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ হাজারো মুসল্লি।
এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে দুই ঘণ্টা আগে থেকেই মুসল্লিরা রাজধানীর হাইকোর্টসংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশ করেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম হিসেবে এ জামাতে দায়িত্ব পালন করেন, এবং ক্বারী হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ আবদুল মালেক ইমাম হিসেবে এ জামাতে দায়িত্ব পালন করেন, এবং ক্বারী হিসেবে ছিলেন বায়তুল মোকাররমের মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়েন।
ঈদের এ জামাতে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের কূটনীতিকসহ হাজারো মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে সুলতানি মোঘল আমলের কায়দায় ঈদ আনন্দ মিছিল শুরু হয়েছে। এ আনন্দ মিছিলে অংশ নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
আজ সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠের সামনে থেকে এ আনন্দ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি আগারগাঁওয়ের প্রধান সড়ক দিয়ে খামারবাড়ি মোড় হয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের জামাত শেষ হতেই বেজে ওঠে ব্যান্ডপার্টির বাজনা, বাজতে থাকে সেই মধুর সুর ‘ও মোর রমজানের ওই রোজার শেষে’। এসময় হাজার হাজার মানুষ একত্রে ঈদ আনন্দের মেতে ওঠেন।
এ ছাড়া মিছিলের শুরুতে ছিল পাঁচটি ঘোড়ার গাড়ি। মিছিলে থাকছে মোট ১৫টি ঘোড়ার গাড়ি।