বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত এবং পরিবারের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আজ শুক্রবার দুপুরে রংপুরের পীরগঞ্জের মদনখালী ইউনিয়নের জাফরপাড়ার বাবনপুর গ্রামে আবু সাঈদের বাড়িতে যান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরসহ অন্যান্য নেতারা।
কবর জিয়ারত ও পরিবারের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের পর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপিত রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দেশ নেত্রী খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাড়াও ছাত্রদল এই আন্দোলনের শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমসহ সকল শহীদের পাশে রয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাদি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে ও আগামীতেও বিএনপি ও ছাত্রদল প্রতিটি শহীদের পাশে থাকবে।
ছাত্রদল সভাপতি বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতেই হবে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন সকল শহীদের পাশে থাকবে ছাত্রদল। যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্ররা রাজপথে ছিলো এবং শহীদ হয়েছে তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গিকার নিয়েই ছাত্রদল রাজপথে থাকবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেভাবে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে রাজত্ব করেছে, ধর্ষণ, লুন্ঠন বিভিন্ন অপরাধসহ বর্বরতা চালিয়েছে সেদিকে লক্ষ্য করেই সাধারণ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসমূহে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কথা বলছে।
সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, খুনি হাসিনা সরকারের পেটুয়া বাহিনীর দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে আবু সাঈদ। একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এবং একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য আবু সাঈদ আত্মত্যাগ করেছে। আবু সাঈদের এই আত্মত্যাগ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনে রাখবে।
তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে যে আত্মত্যাগের মাধ্যমে নতুন বংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেই বাংলাদেশের চেতনা গভীরভাবে স্মরণ রাখবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
শহীদ আবু সাঈদসহ যারা প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের আলাদা আলাদা তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, খুনি হাসিনার বিচার এবং তার দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার করার জন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এদেশের মানুষের পক্ষে এদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।
এসময় তার সঙ্গে রংপুর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক শরিফ নেওয়াজ জোহা, সদস্য সচিব সুজন, পীরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মিলু, সদস্য সচিব সুলতান আহম্মেদ, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মাহমুদুন নবী চৌধুরী পলাশ, যুব দলের সদস্য সচিব আব্দুস সালামসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্কের মোড় সড়কে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নৃশংসতা ও গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং বাংলাদেশের বকেয়া আর্থিক দাবি নিষ্পত্তিসহ অমীমাংসিত ঐতিহাসিক বিষয়গুলো সমাধান করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি ‘দৃঢ় দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ‘পদ্মায়’ আয়োজিত এফওসিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ তাদের নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দেন। প্রায় ১৫ বছর পর ঢাকা ও ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা ফরেন অফিস কনসাল্টেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দেন পররাষ্ট্র সচিব জসীম উদ্দিন।
পাকিস্তানের কাছে ক্ষতিপূরণের পরিমাণের বিষয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক ডেপুটি চেয়ারম্যানের দেওয়া হিসাব মতে, ৪ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও আরেকটা হিসাবে ৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। আমরা আজকের আলোচনা এই ফিগারটা বলেছি। ১৯৭০ সালে যে ভয়াবহ বন্যা হয়; এতে বিভিন্ন বিদেশি রাষ্ট্র ও এজেন্সি ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করেছিল, আমরা তার হিস্যাও চেয়েছি।’
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক কর্মসূচিতে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিনিধিদল। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তারা এ সমর্থন জানায়।
বৈঠকে আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন নিয়েও আলোচনা হয়। মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল এ. চুলিক এবং অ্যান্ড্রু হেরাপ।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের মিশনপ্রধান ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিক সহায়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন এবং এই সংকট মোকাবিলায় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রশংসা জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা মিয়ানমার সরকারের ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের উপযুক্ত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
চুলিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুকে আপনি বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে পুরো মিয়ানমার প্রসঙ্গের অংশ হিসেবে বিবেচনা করছেন- এটা আমরা প্রশংসনীয় বলে মনে করি।’ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা আঞ্চলিক সহযোগিতা, সংযোগ বৃদ্ধি এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গিরও প্রশংসা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যেতে আন্তরিকভাবে আগ্রহী অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পুনরায় সহায়তা চালু করা এবং পারস্পরিক শুল্ক ৯০ দিন স্থগিতের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা তার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে সমর্থন দিতে কাজ করে যাচ্ছি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর গত দুই মাসের কার্যক্রম তুলে ধরে সেনা সদরের মিলিটারি অপারেশন্স ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ সময়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অন্যান্য সব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ২ হাজার ৪৫৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৭ হাজার ৮২২ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা সেনানিবাসে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব তথ্য জানান।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মার্চ ফর গাজা ও আগে কয়েকটি জায়গায় দেখা গেছে নিষিদ্ধ সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে মিছিল করতে। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী কি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মার্চ ফর গাজার বিক্ষোভে সেনাবাহিনী কালো পতাকাধারীদেরকে রহিত করেছে। কালো পতাকাধারী হলেই যে সে জঙ্গি সংগঠনের এটির কোনো প্রমাণ আমরা এখনও পায়নি। তবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনী সোচ্চার রয়েছে। গোয়েন্দা বাহিনীও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মিরা বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে জেলে ও মাছ ধরাভর্তি ট্রলার ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনী কি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাইলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, নাফ নদীতে জেলেদের যে অসুবিধা হচ্ছে এ বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ও বিজিবি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাদের কাজ চলমান আছে। অনেক জেলে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের বিষয়েও প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অথবা নৌ বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
গত ৮ মাস ধরে সশস্ত্র বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় মাঠে কাজ করছে। কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের কোনো চাপ পাচ্ছে কি না জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কাজ করতে গিয়ে কোনো বাধা পাচ্ছি না। আমরা যে কোনো অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পর পরবর্তী আইনি বিচারকার্য সেনাবাহিনীর দায়িত্বের বহির্ভূত। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতায় সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে, যেখানে যতটুকু ব্যবহার করার দরকার ততটুকুই ব্যবহার করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে। এ বিষয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব দেখা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তা বলেন, কোনো রকম গুজবে সেনাবাহিনী বিচলিত নয়। বরং সেনাবাহিনী আরও একতাবদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির পাশে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি সেনাপ্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্ধু প্রতিম দেশের সঙ্গে সম্প্রতি সেনাপ্রধানের রাশিয়া ও ক্রোয়েশিয়া সফর একটি নিয়মিত কার্যক্রম। এই সফরে সেনাপ্রধান বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি পরিদর্শন করেন। এর ফলে সামরিক সহযোগিতা আরও প্রগাঢ় হবে।
এর আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত দুই মাসে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী অন্যান্য সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন ধরণের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত মোট ২,৪৫৭ জনকে এবং এ যাবত পর্যন্ত সর্বমোট ৭,৮২২ জন্যক বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে। যাদের মাঝে কিশোর গাং তালিকাভূক্ত অপরাধী, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাই চত্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই মাসে সেনাবাহিনী ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র ও ৫৬৪ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং এ যাবত পর্যন্ত সর্বমোট ৯,৩৭০টি অবৈধ অস্ত্র ও ২,৮৫,০৫২ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
তিনি আরো বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ঘরমুখ মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে ২ সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে নির্বিঘ্নে যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের সকল জেলার বাস স্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় যা মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ফলশ্রুতিতে, সড়ক দূর্ঘটনাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড গত বছরের তুলনায় বহুলাংশে হ্রাস পায় যা জনসাধারণকে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদযাপনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তিনি আরও জানান, বিগত সময়ে শিল্পাঞ্চল সমূহের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ১৩৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেছে এবং ৩১ বার বিভিন্ন মূল সড়ক অবরোধ থেকে অবমুক্ত করেছে। শিল্পাঞ্চলে জাতীয় নিরাপত্তা বিধানকালে গত ৯ এপ্রিল নারায়নগঞ্জে অবস্থিত রবিন টেক্স গার্মেন্টসে অস্থিরতা প্রশমন কালে নিয়োজিত সেনাসদস্যগণ কিছু গার্মেন্টস শ্রমিক কর্তৃক ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় আক্রান্ত হয় এবং এতে ২৪ জন সেনা সদস্য আহত হয়। ঈদ পূর্ব গার্মেন্টসে অস্থিরতা মোকাবিলায় সেনাবাঘিনী মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ, মন্ত্রণালয়, শিল্পাঞ্চল পুলিশ ও ইএগঊঅ সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে সমন্বয় সাধন করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধে বিশেষ ব্যবস্থা করে যা শ্রমিকদের মাঝে ঈদ পূর্ববর্তী গতানুগতিক অস্থিরতা প্রশমনে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সেনাবাহিনী বিগত দুই মাসে ২৩২টি বিভিন্ন ধরণের বিশৃংখল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, যার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ৩৭টি, সরকারী সংস্থা, অফিস সংক্রান্ত ২৪টি, রাজনৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের ঘটনা ছিল ১৫টি।
তিনি আরও জানান, ১৩ তারিখে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলাতে খোলাপেটুয়া নদীর প্রায় ৩০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গেলে আশে-পাশের প্রায় ৯টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যগণ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনগনকে সম্পৃক্ত করে দ্রুততম সময়ে বাঁধটি মেরামত করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রত্যন্ত অঞ্চলে পানিবন্দী মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেয়।
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম আরও জানান, গত ২৮ মার্চ ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্প মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডে আঘাত হানে যার ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়। এ ভূমিকম্পে মায়ানমারে মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়। প্রতিবেশী দেশের বিপদসংকুল এসময়ে বাংলাদেশ সরকার জরুরী উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেনাবাহিনীর কর্নেল শামীমের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার কোরের ২১ জনের একটি উদ্ধারকারী দল এবং ১০ জনের একটি মেডিকেল দল প্রেরণ করা হয়। সেনাবাহিনী ছাড়াও নৌবাহিনীর ৩ জন, বিমানবাহিনীর ৩ জন, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর ১০ জন এবং ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি অসামরিক মেডিকেল দল প্রেরণ করা হয়। এই উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়ক দল প্রেরণের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিমান, বিমান বাহিনীর বিমান ও নৌ জাহাজ ব্যবহার করা হয়।
তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী অদ্যাবধি ৪ হাজার ৩৪০ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। যার মধ্যে ৪৩ জন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের সম্মানে সেনাবাহিনী গত ২৩ মার্চ সেনামালঞ্চে ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে। ২৫ মার্চ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আহত এবং শহীদ পরিবারের সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করা হয়। সেনাবাহিনী প্রধান উপস্থিত থেকে সকলের খোঁজ-খবর নেন। চিকিৎসাসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অর্থনৈতিক অপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে ও তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি।
এরআগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রিজওয়ানা বলেন, বৈঠকে ব্যাংকিং খাতের কিছু বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে আছে, সরকারি হিসাব নিরীক্ষা অধ্যাদেশ, ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ। এছাড়া রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশে এবং গ্রামীণ ব্যাংক সংশোধন অধ্যাদেশেও নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এই অধ্যাদেশগুলো নিয়ে আলোচনার সময় আমাদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে অর্থনৈতিক অপরাধ যে গোষ্ঠীগুলো করেছে, তাদের তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য একটা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ জন্য প্রাথমিক কাজগুলো হয়েছে। এখন অর্থনৈতিক অপরাধে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত শুরু করার জন্য আলাদা একটি কমিটি গঠন করেছি।’
জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশনে সইয়ের সিদ্ধান্ত
পানিসম্পদ উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, জাতিসংঘের পানিপ্রবাহ কনভেনশনে সই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। এশিয়ার মধ্যে আমরাই প্রথম এই কনভেনশনে সই করতে যাচ্ছি।
‘আর আমাদের অভিন্ন নদীর পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা সবসময় বলি, আমরা আন্তর্জাতিক আইনগুলোতে কেন সই করছি না। এই অভিন্ন জলরাশির পানির ব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দুটো আইন আছে জাতিসংঘে। একটি হচ্ছে জাতিসংঘ পানিপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭, আরেকটি হচ্ছে ১৯৯২ কনভেনশন,’ বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ কনভেনশন কার্যকর হয় ১৯১৪ সালে। অর্থাৎ উজানের দেশগুলোর অনীহার কারণে মাত্র ৩৬টি দেশের সই লাগত। সেই সই পেতে ১৭ বছরেরও বেশি লেগে যায়। আরেকটি আইন হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে টার্গেট করে ১৯৯২ সালে আরেকটি আইন করা হয়েছিল। এটি ২০১৬ সালে সব দেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।
‘এ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের প্রায় ১১টি দেশ আইনটিতে সই করেছে। তারমধ্যে বেশিরভাগ দেশ আফ্রিকান। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই কনভেনশনে আমরা অনুস্বাক্ষর করবো,’ বলেন এই উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, ‘এরআগে যত প্রক্রিয়া ছিল, সংশ্লিষ্টজনদের সাথে আলাপ-আলোচনা করা, আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা করা, ওই কনভেনশনের সেক্রেটারিয়েট থেকে লোক আসা—সবই আমাদের হয়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কনভেনশন অব দ্য প্রটেকশন এন্ড ইউজ অব ট্রান্সবাউন্ডারি ওয়াটারকোর্স এন্ড ইন্টারন্যাশনাল লেক ১৯৯২-এ সই করবো। বাংলাদেশকে দিয়েই এশিয়ার দেশগুলোর স্বাক্ষর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।’
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশের সম্পৃক্ততার অভিযোগ জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় বাংলাদেশকে জড়ানোর যেকোনও চেষ্টাকে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ধরনের সহিংস হামলায় মুসলমানদের প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনায় আমরা গভীরভাবে নিন্দা জানাই।’
‘সংখ্যালঘু মুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ সরকার আহ্বান জানাচ্ছে,’ বলেন প্রেস সচিব।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক সহিংসতার প্রাথমিক তদন্তে কিছু ‘বাংলাদেশি দুষ্কৃতকারীর’ সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি করেছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমএইচএ) সূত্র।
তবে এসব দাবি নাকচ করে বাংলাদেশ বলেছে, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল)। তাকে ফিরে পাওয়ার প্রতীক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না পরিবারের। এমনকি তিনি জীবিত, না মৃত– সে রহস্যও কাটেনি। তাকে অক্ষতভাবে ফিরে পাওয়ার আশায় এখনও অপেক্ষার প্রহর গুনছে তার পরিবার ও নেতাকর্মীরা।
২০১২ সালের এই দিনে ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক আনসার আলীসহ নিখোঁজ হন তিনি। এর পর তাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। হরতাল, মিছিল-মিটিং চলে বছরের পর বছর। প্রিয় নেতাকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে নিজ এলাকা বিশ্বনাথে গুলিতে প্রাণ দেন তিন নেতাকর্মী।
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য নিশ্চিত না করায় এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। মাঝেমধ্যে ইলিয়াস আলীর সন্ধান পাওয়া গেছে– এমন খবরে নতুন করে আশায় বুক বাঁধলেও পরক্ষণে তা ম্লান হয়ে যায়।
সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। ‘আয়নাঘরে’ তাকে পাওয়া গেছে— এমন খবরও প্রচার করা হয়।
এমনকি গত বছরের ১৯ আগস্ট সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর মাদ্রাসায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে ইলিয়াস আলী বেঁচে আছেন এবং বিদেশের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দাবি করে বক্তব্য দেন বিএনপির এক নেতা।পরে ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা সেটিকে গুজব বলে মন্তব্য করেন।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর স্বামীকে ফিরে পেতে গুম কমিশনে আবেদন করেন লুনা। কিন্তু সেই আবেদনেরও কোনো অগ্রগতি নেই দাবি করে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ইলিয়াস আলীকে অক্ষতভাবে ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি বিশ্বনাথ উপজেলার রামধানায় পারিবারিকভাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপি আজ (বুহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন ও দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেবে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী। এ ছাড়া সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের উদ্যোগে বাদ জোহর হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল।
তিনি জানান, ‘১৩ বছর ধরে প্রিয় নেতাকে ফিরে পাওয়ার দাবি করা হচ্ছে। অতীতের ফ্যাসিস্ট সরকার তাঁকে গুম করে রাখে। কিন্তু আজও তার সন্ধান মেলেনি।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনও আশা ছাড়িনি। ইলিয়াস আলীর প্রতীক্ষায় আছি। তিনি এমন এক নেতা, যার জন্য প্রাণ দিয়েছেন কর্মীরা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৮ মে দিন ধার্য করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। তবে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি প্রতিবেদন দাখিল না করায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।
২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করা হয়। পরে ওই টাকা ফিলিপাইনে পাঠানো হয়। দেশের অভ্যন্তরের কোনো একটি চক্রের সহায়তায় হ্যাকার গ্রুপ রিজার্ভের অর্থপাচার করে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ওই ঘটনায় একই বছরের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের উপ-পরিচালক জোবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ৪-সহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৪ ধারায় ও ৩৭৯ ধারায় একটি মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপের প্রভাবে সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সকাল ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ বর্তমানে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবে সারা দেশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে।
এ সময় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
এদিন সারা দেশে দিন ও রাতের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৩ শতাংশ। ঢাকায় পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে পারে।
এ ছাড়াও ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ২১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটে।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
প্লট ও ফ্ল্যাট জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলায় যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতির বিষয়ে আদালতে হাজির হয়েই বক্তব্য দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক শুধু আদালতে উপস্থিত হয়েই নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। অভিযোগ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও টিউলিপ বাংলাদেশে তার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ে গুলশানে একটি সরকারি লিজকৃত প্লট ইস্টার্ন হাউজিংকে অনুমোদনের ব্যবস্থা করে বিনিময়ে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেছেন তিনি।
এছাড়া, ২০২২ সালে পূর্বাচলে রাজউকের মূল্যবান জমি নিজের মা, ভাই ও বোনের নামে বরাদ্দ নিতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে আদালত থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মর্টগেজ সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়িত করে বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। এ দিন রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সালমান এফ রহমানের ছেলে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, ব্যাংকটির সাবেক এমডি মো. শাহ আলম সারোয়ার, ব্যাংকটির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এ আর এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী, গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, হেড অব লোন পারফর্মেন্স ম্যানেজমেন্ট শাহ মো. মঈনউদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, মো. নুরুল হাসনাত ও মনিতুর রহমান। ব্যাংকটির হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, ধানমন্ডি শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও এফভিপি নাজিমুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী, রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, এসপিও আয়েশা সিদ্দিকা এবং এফএডিপি সিলভিয়া চৌধুরী।
আরও আসামি করা হয়েছে বিএসইসির সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. আবদুল হালিম।
এছাড়া সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিমাই কুমার সাহা, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তিলাত শাহরিনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করেই- প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তি সরেজমিনে পরিদর্শন বা মূল্য যাচাই না করেই অস্বাভাবিক অতি মূল্যায়ন করে ৮৭ কোটি টাকার জমিকে এক হাজার ২০ কোটি টাকায় মূল্যায়ন করেছে।
অন্যদিকে, অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মাসখানেক আগে রেজিস্ট্রিকৃত কথিত কোম্পানির তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের চলতি হিসাবে জমা করে। সেখান থেকে রিডেশন রাউন্ডে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করে অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা (সরকারি অর্থ) বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং নিয়মাবলী উপেক্ষা করে নগদে ও বিভিন্ন রকম সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ৪৭৭৫/ ১০৯ তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গগত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৩ মার্চ সালমান এফ রহমান ও ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) জাকিয়া তাজিনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা টিকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথাও জানিয়েছে দুদক। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্টে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। বর্তমানে সালমান এফ রহমান জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ছাত্র-জনতা হত্যার বেশি কয়েকটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন। ২০২৫ সালের এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ক্ষুদ্রঋণের ধারণা ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) প্রকাশিত মর্যাদাপূর্ণ এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
টাইম ম্যাগাজিনে ড. ইউনূসকে নিয়ে লেখা মুখবন্ধে বলা হয়, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের স্বৈরচারী প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে একজন সুপরিচিত নেতা হাল ধরেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত মোহাম্মদ ইউনূস।
মুখবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি আরও লিখেছেন, কয়েক দশক আগে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ব্যবসা গড়ে তোলা ও পরিবার পরিচালনা করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের মর্যাদা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। তার এই উদ্যোগের সুফল পেয়েছে লাখো মানুষ, যাদের ৯৭ শতাংশই নারী।
যুক্তরাষ্ট্রেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ড. ইউনূস কীভাবে সহযোগিতা করেছিলেন, সে কথারও স্মৃতিচারণ করে হিলারি লেখেন, তিনি যখন তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটনকে সহযোগিতায় প্রথমবার আরকানসাসে আসেন, তখন তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এরপর বিশ্বের যেখানেই আমি গিয়েছি, সেখানেই আমি তার (ইউনূস) কাজের অসাধারণ প্রভাবে জীবন বদলে যাওয়া, সমাজের উন্নয়ন ও নতুন করে আশার সঞ্চার হতে দেখেছি।
এখন মাতৃভূমির ডাকে ড. ইউনূস আরও একবার সাড়া দিয়েছেন উল্লেখ করে হিলারি লেখেন, তিনি বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তার নেতৃত্বে মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জবাবদিহি চাইছেন। সেই সঙ্গে একটি ন্যায়সঙ্গত ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি স্থাপন করছেন এই অর্থনীতিবিদ নেতা।
অর্থনৈতিক খাতসহ সামাজিক পরিবর্তন ও মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে ড. ইউনূস এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।
টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৫ সালের প্রকাশিত তালিকায় ৩২টি দেশের ব্যক্তিত্বরা স্থান পেয়েছেন। তালিকায় আরও রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শাইনবাউম, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসাস, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েনসহ বাঘা বাঘা সব ব্যক্তিরা।
তালিকায় বিশ্বনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে উদ্ভাবক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ বিনোদন জগতের মানুষের নামও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামস, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, ফরাসি সাঁতারু লিওঁ মারশাঁ, মার্কিন সংগীতশিল্পী (র্যাপার) স্নুপ ডগ, ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী এড শিরান, ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা, হলিউড অভিনেত্রী ডেমি মুর, বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট প্রমুখ।
এছাড়া টেকসই ও মানবিক স্থাপত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমও এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে না হলেও আসছে বছরের জুন মাস পার হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে যাই বলুক জুনের পরে নির্বাচন যাবে না।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, তেমন নয়। আমরা বলেছি, এই সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হবে। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করব, সেটা না।’তিনি বলেন, যদি ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেইৃ না হয় জানুয়ারিতে, আমরা এভাবে বলেছি যে ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময়ে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য, অকারণে আমরা একমাস বা দুই মাস বেশি ক্ষমতায় থাকলাম মোটেই সেটা না। এ সময় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনের দুই মাস আগে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
আসিফ নজরুল উল্লেখ করেন, সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক। ওনারা অনেক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং তাঁদের সন্তুষ্ট মনে হয়েছে। একটা বিষয়ে ভিন্নমত হতে পারে যে, ওনারা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই ইলেকশন দিলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার পর বিএনপি মহাসচিব অসন্তুষ্টির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ বরলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনার থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে, আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে। আমার কাছে ওনাদেরকে দেখে হ্যাপি লেগেছে। মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল তার অনেকগুলোর উত্তর ওনারা পেয়েছেন।”
বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাতে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “কোনো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা ওনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে ওনারা সন্তুষ্ট। ওনারা (ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে) যে সমস্ত আশঙ্কার কথা বলেছেন, আমরা আমাদের মত বলেছি যে, এই সমস্ত আশংকার কোনো কারণ নাই। এসব ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমরা অত্যন্ত রেসপেক্টফুলি ওনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, ওনারা বলেছেন যে, আমাদের কথা-বার্তার মধ্যে এতো অস্পষ্টতা থাকে, কেউ কেউ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টার কথা বলেন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি যে যেটাই বলুক না কেনো, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বার বার যেটা রিপিট করেছেন সেটাই সরকারের অবস্থান। অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা, নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন সেটাতে তারা (বিএনপি) যেন বিভ্রান্ত না হন।
আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি নেতারা জানতে চেয়েছেন যে, সংস্কার যদি হয়ে যায় এতো দেরি করার মানে কি আছে? আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চাটার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা যেটি গ্রহণ করতে মাঝে মধ্যে সময় লাগে। আমরা উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারব না। জুলাই চার্টার প্রণীত হওয়ার পর হয়ে যাবে, আমরা অংশীজনের সাথে কথা বলে ব্রড কনসালেটেশনের ভিত্তিতে করব।
অর্ন্তবর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, জনগণের তো একটা আকাঙ্খা আছে যে, আমরা বিচার করে যাই। আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, আমরা যদি ইলেকশন দেই, আমরা মানুষের কাছে, নিজের কাছে জবাব দিবো কীভাবে? ফলে শুধু ইলেকশন, সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে এজন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন টাইম বারটা করা হয়েছে।
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রলম্বিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার বিচারে কোনো বিলম্ব হচ্ছে না। আমরা এর আগে যে বিচার হয়েছে সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি, যে কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না। আমরা ওনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর ওনারা আর কথা বলেননি। তার মানে ওনারা বুঝতে পেরেছেন। তবে তারা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে, এটা অচিরেই হযে যাবে। বাড়ানোর প্রক্রিয়া কম পক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করেছি। আমাদের তো উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, আমাদের লজিস্টিক ঠিক করতে হবে। আশা করি, এটা এক থেকে দুই সাপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।
এর আগে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শুরু হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল মাহমুদ টুকু।
আসিফ নজরুল আরও জানান, বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের দল দেশে গত ১৫ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি। তিনি বলেন, “ওনারা বলেছেন যে আমাদের অন্তর্র্বতী সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেটা বিএনপির প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি, সিদ্ধান্ত আছে যেটা বিএনপির অনুকূলে গেছে। তারপরও ওনারা বলেছেন যে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস পুনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। এ সময়ে ৮ হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে, এতো দ্রুত গতিতে সম্ভব কিনা? ওনারা আমাদের বলেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন।
বৈঠকে বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। বলেন, “ওনারা (বিএনপি নেতা) বলেছেন যে, দলের যে সংস্কার ভাবনা এটা বহু পুরনো। ওনারা সবসময় সংস্কারপন্থি দল। আমরা এটা অ্যাগরি করেছি। অবশ্যই বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদ খুব দ্রুত গতিতে হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিএনপিও তাদের আশ্বাস দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ৫৫৮ টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়া অভিযানকালে ২০৬ টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯৩ টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে গতকাল মঙ্গলবার এসব মামলা করে।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।