রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে ১ লাখ ২১ হাজারটি নিষিদ্ধ মাদক টাপেন্টাডলসহ ২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। তারা হলেন, মো. তামজীদ পাটোয়ারী (২৯) ও মবিনুর রহমান (৩০)।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার হাজারীবাগ এলাকার হাজী আফছার উদ্দিন সড়কের একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএনসি বলছে, এটি এ যাবৎকালের টাপেন্টাডলের সর্ববৃহৎ চালান এবং গ্রেপ্তার দুজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ২১ হাজার টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
ডিএনসি জানায়, চক্রের সদস্যরা রোগী সেজে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যায়। সেখান থেকে মাদদ্রব্য নিয়ে দেশে ফেরে। পরে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারা দেশে মাদক সরবরাহ করা হয়।
ডিএনসির ঢাকা মেট্রো (উত্তর) কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪২ হাজার ‘টাপেন্টাডল’ মাদকসহ পাঁচ যাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোগী সেজে তারা কলকাতা গিয়ে মাদক নিয়ে ফেরত আসতেন। তারা মূলত নিষিদ্ধ টাপেন্টাডলের চালান আনতেন। গোয়েন্দা তথ্যে আরও জানা যায়, তামজীদ পাটোয়ারী ও মবিনুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় টাপেন্টাডলের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান ডিএনসির এ কর্মকর্তা।
সাবেক হুইপ ও খুলনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক জাহিদ ফজল বাদী হয়ে দুদকের খুলনার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পঞ্চানন বিশ্বাস খুলনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও হুইপ হিসেবে পাবলিক সার্ভেন্ট থাকা অবস্থায় অসৎ উপায়ে নিজ নামে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ এক কোটি ছয় লাখ ৭১ হাজার ৪১৪ টাকার সম্পদ নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে তার নামে ৪৯ লাখ ২৩ হাজার ৫৯০ ঢাকার স্থাবর ও দুই কোটি ৫১ লাখ ২২ হাজার ৫৭২ টাকার অস্থাবরসহ মোট তিন কোটি ৪৭ হাজার ১৬২ টাকা মূল্যের সম্পদ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে তার গ্রহণযোগ্য আয়ের উৎস থেকে আয় পাওয়া যায় তিন কোটি ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৭ এবং পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় পাওয়া প্রায় এক কোটি ৪১ লাখ ৮২ হাজার ১৬৯ টাকা।
ব্যয় বাদে তার মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ এক কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৪৮ টাকা। সে হিসেবে পঞ্চানন বিশ্বাসের জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ এক কোটি ছয় লাখ ৭১ হাজার ৪১৪ টাকা।
১৯৬৪ সালে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান- ২ নাম্বারের ৭১ নং রোডের ১১৩, ১১বি (নতুন) বহুতল ভবনের ২ বিঘা জায়গাটিকে ৯৯ বছরের জন্য হস্তান্তর না করা শর্তে পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি ইমাম হোসেন চৌধুরীকে তৎকালীন ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বরাদ্দ দেয়। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের দিকে দুই হাত ঘুরে যথাক্রমে মজিবুর রহমান ভূইয়া ও শামসুন্নাহার বেগম থেকে সেই সম্পত্তি চলে যায় ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের কাছে।
২০২০ সালে টিউলিপ সিদ্দিকের আপন খালা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রভাব খাটিয়ে ইস্টার্ন হাউজিংকে লিগ্যাল পার্সোন হিসেবে অনুমোদন এবং ভবনের ৩৬টি ফ্ল্যাটের বিভাজনে তৎকালীন রাজউক সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, উল্লেখিত সম্পত্তি হস্তান্তরযোগ্য করার মধ্যদিয়ে টিউলিপ ভবনটির ২০১ নম্বর ফ্ল্যাটটি ইস্টার্ন হাউজিং থেকে গ্রহণ করেন।
এই ঘটনায় ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের পাশাপাশি রাজউকের সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা শাহ মো. খসরুজ্জামান এবং সাবেক সহকারী আইন উপদেষ্টা-১ সরদার মোশারফ হোসেনকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন সংস্থাটির উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম।
মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ’৯৯ বছরের জন্য উল্লেখিত সম্পত্তি যে লিজকৃত ছিল তা হস্তান্তরযোগ্য নয়। এই সম্পত্তি যখন হস্তান্তরযোগ্য হয়ে যায় সেকানেই অপরাধের বিষয়টি বোঝা যায়।’
দুদক জানিয়েছে, এই মামলায় তিন আসামি ছাড়াও মৃত্যুর কারণে তা থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুই আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. নাসিমের ভাই রাজউকের সাবেক আইন উপদেষ্টা ড. মো. সেলিম ও ইস্টার্ন হাউজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ইস্টার্ন হাউজিং থেকে বরাদ্দ নেন টিউলিপ সিদ্দিক। সেই ফ্ল্যাট ২০০২ সালে তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তবে ফ্ল্যাট প্রদানের বিপরীতে ইস্টার্ন হাউজিং ফ্ল্যাট কেনা বাবদ টাকা প্রদানের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। দুদকের কাছে তাঁরা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই ফ্ল্যাট বাবদ সর্বশেষ ২০২২ পর্যন্ত টাকা পরিশোধের তাগাদা দিলেও টিউলিপ টাকা প্রদান করেননি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপরাধমূলক অসদাচরণ ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোনো টাকা পরিশোধ না করেই অবৈধ পারিতোষিক হিসাবে ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুলশান-২ এর ফ্ল্যাট (ফ্ল্যাট নম্বর বি/২০১, বাড়ি নম্বর ৫এ ও ৫বি (পুরাতন), বর্তমানে- ১১৩, ১১বি (নতুন), রোড নম্বর ৭১) দখল নিয়ে ও পরে রেজিস্ট্রি মূলে খতিয়ান গ্রহণ বা প্রদানের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৪০৯/১৬১/১৬২/১৬৩/১৬৪/১৬৫(ক)/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে।
বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদকের উপপরিচালক মো. মনিরুল ইসলামের নেতৃত্ব সাত সদস্যের টিম গঠন করা হয়েছিল। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, মুবাশ্বিরা আতিয়া তমা, এস. এম. রাশেদুল হাসান, এ কে এম মর্তুজা আলী সাগর, মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম ও উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
এর আগে গত ১০ মার্চ পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারে সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক আটটি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দিয়েছে সংস্থাটি। যা আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
আজ মঙ্গলবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিম্নরূপভাবে উপদেষ্টাদের মধ্যে মন্ত্রণালয়/বিভাগের দায়িত্ব বণ্টন/পুনর্বণ্টন করেছেন। সে অনুযায়ী বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেন শেখ বশিরউদ্দীন।
এর ফলে প্রধান উপদেষ্টার হাতে থাকল ৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব।
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে থাকা ৫টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগ হলো: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের মানুষ সবসময় নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের পাশে আছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবিকে বাংলাদেশ সবসময় সমর্থন করে আসছে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে; ন্যায় ও মানবতার পক্ষে।’
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান সাক্ষাৎ করতে এলে এমন মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
বৈঠকে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর গাজা’ সমাবেশ, ফিলিস্তিন টিভির প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর, আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্মারক পাসপোর্ট ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ফিলিস্তিন বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন ও সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরব বিশ্বসহ অন্য মুসলিম দেশগুলো যা পারেনি, বাংলাদেশ তা করিয়ে দেখিয়েছে।
ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ভাইবোনরা জানতে চায় নিশ্চয়ই এমন কোনো বিশেষ কারণ রয়েছে, যাতে বাংলাদেশের জনগণ ইসরাইলের বর্বর হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এত বড় প্রতিবাদ সমাবেশ করে দেখিয়েছে।’
এর কারণ হিসেবে বাংলাদেশের মুসলিমদের সত্যিকারের ধর্মপরায়ণ হিসেবে উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সংহতি ও সহমর্মিতা সম্পর্কে ফিলিস্তিনের জনগণকে আরও সচেতন করতে আগামী ১৭ মে ‘ফিলিস্তিন টিভির’ একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহপূর্বক একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করবে, যা পরবর্তীতে ফিলিস্তিন টিভিতে প্রচারিত হবে।’
আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি স্মারক পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেন রাষ্ট্রদূত। উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে আল আকসা মসজিদের নামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্মারক পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে মর্মে রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) খন্দকার মাহাবুবুর রহমান ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) শামীম খানসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। এতে এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৭৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮৯ টাকা।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা সংক্রান্ত সভাশেষে এ তথ্য জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কিনতে এখন খরচ হবে ১৮৯ টাকা। আগে যা ছিল ১৭৫ টাকা। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, যা ছিল ৮৫২ টাকা।
বোতলজাত তেলের পাশাপাশি খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দামও ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের কারনে এই মুল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই মুল্য আরও কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এর আগে, গতমাসের ২৭ তারিখে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা বাড়াতে চেয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে চিঠি দেয় ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানাগুলোর সমিতি।
ভোজ্যতেলের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ায় দাম বাড়ানোর দাবি জানায় সমিতিগুলো।
এই নিয়ে গত সপ্তাহে সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি সরকার। অবশেষে আজকের (মঙ্গলবার) বৈঠক শেষে সরকারের সিদ্ধান্ত জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেছেন, মডেল ও মিস আর্থ বাংলাদেশ-২০২০ বিজয়ী মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, বেআইনি কিছু করা হয়নি।
আজ মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. খোদা বখস চৌধুরী বলেন, এই (বিশেষ ক্ষমতা আইন) আইন তো ব্যবহার হচ্ছে। এই আইন যে ব্যবহার হচ্ছে না, তা তো নয়। এই একটি ক্ষেত্রে আইনটি ব্যবহার হয়েছে তাও তো নয়। বেআইনি কাজ তো না।
তিনি বলেন, তবে আপনি যদি বলেন এক্ষেত্রে কী হয়েছে- একটা ঘটনা ঘটেছে, একটা অভিযোগ এসেছে, এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে। বিষয়টি হাইকোর্টে গেছে। হাইকোর্টে গেলেই এটা বিচারাধীন বিষয়। সাব-জুডিস ম্যাটারে তো কথা বলা ঠিক হবে না। দেখি কী আসে ওখান থেকে।
খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘তবে একটা জিনিস নিশ্চিত। প্রচলিত আইনে ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে।
মডেল মেঘনা আলমকে ঢাকায় তার বাসা থেকে পুলিশ আটক করার দুদিন পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। আদালত তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেন।
আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে যাচ্ছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিসট্রিবিউশন পিএলসি। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শক (পিএমসি) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ।
বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপনের প্রকল্পটি শুরু করতে পারবো।’
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পটিতে শিগগরই আরও একটি পিএমসি নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এরইমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট লিমিটেডকে (ডিটিসিএল) পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
এর আগে ২০১১ সালে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম শুরু করে তিতাস। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করার পর এ পর্যন্ত ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় মোট চার লাখ ২০ হাজার প্রিপেইড মিটার বসিয়েছে তিতাস। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে এই মিটারগুলো বসানো হয়েছিল।
তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এবারের প্রকল্পটি এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে এবং সব মিটারই স্মার্ট প্রিপেইড হবে। আগের মিটারগুলো প্রিপেইড হলেও স্মার্ট ছিল না।’
তিনি জানান, ‘প্রিপেইড ও স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মধ্যে পার্থক্য হলো—প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করতে ব্যবহারকারীকে নির্দিষ্ট ভেন্ডর পয়েন্টে যেতে হয়, কিন্তু স্মার্ট প্রিপেইড মিটারে স্মার্টফোনের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকেই রিচার্জ করা যাবে।’
নতুন প্রকল্পের আওতায় তিতাসের আওতাধীন এলাকায় মোট সাড়ে ১৭ লাখ স্মার্ট প্রিপেইড মিটার বসানো হবে বলে জানান তিনি। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১৮ মাস আগে এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দুটি পৃথক চুক্তি সই হয়েছে বলে তিতাসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সরকারি তথ্য মতে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে এই ঋণ চুক্তি করেছে তিতাস।
নতুন এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা দক্ষিণ ও নারায়ণগঞ্জে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। আর এডিবির অর্থায়নে স্মার্ট মিটার বসানো হবে ঢাকা উত্তর ও গাজীপুরে।
তিতাস গ্যাস বর্তমানে ২৮ লাখ ৭৮ হাজার গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৮ লাখ ৫৩ হাজার আবাসিক, ১২ হাজার ৭৮টি বাণিজ্যিক, ৫ হাজার ৪২৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান, ১ হাজার ৭৫৫টি ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্ট এবং ৩৯৬টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তিতাস গ্যাস দেশের মোট গ্যাস বিতরণ বাজারের ৫৫ শতাংশ দখলে রেখেছে। বাকি ৪৫ শতাংশ বিতরণ করছে অন্য পাঁচটি কোম্পানি।
প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ চার্জশিটভুক্ত ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার অপর ১১ আসামি হলেন, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য শফিউল হক,খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন,মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.),উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ,তদন্তপ্রাপ্ত জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার,সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
শেখ হাসিনার মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি শেখ হাসিনা রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন ফর্মে আবেদন করেননি। তার কোন আবেদন যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক যাচাই অন্তে প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। আবেদনকারীর আবেদন নির্ধারিত রেজিস্ট্রার বইতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।আসামি শেখ হাসিনা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে /পরিবারের উত্তরাধিকারসূত্রে অন্যান্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লংঘনপূর্বক অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোন আবেদন না করে, দখলমূলে হস্তান্তরের লিখিত আবেদন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ (দশ) কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। তা নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেন এবং সরকারি জমি আত্মসাত করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো দুইজনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
শেখ হাসিনা ও জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১৫ আসামি হলেন-জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন,সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার,রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ- পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম,তদন্ত প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
শেখ হাসিনা-জয়ের মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি সজীব ওয়াজেদ জয় রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য রাজউক বরাবরে কোন আবেদন করেন নাই। আবেদনকারীর আবেদন নির্ধারিত রেজিস্ট্রার বইতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আসামি শেখ হাসিনা তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও তাঁর ছেলে আসামি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ উভয়ে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আসামি সজীব ওয়াজেদ জয় আপন মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে নিয়ম নীতি অনুযায়ী আবেদন না করে প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়ে তা নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে ভোগদখলে রেখেছেন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। আমরা এবার শুধুমাত্র ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করেছি। কারণ ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়। ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আয়োজনে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ফারুকী বলেন, এবারের শোভাযাত্রা রাজনৈতিক নয়। তবে ঐতিহাসিকভাবে এটিকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গ্রুপ তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। আমরা এবার শুধুমাত্র ফ্যাসিস্টের মুখাবয়ব ব্যবহার করেছি, কারণ ফ্যাসিস্ট কোনো রাজনীতির অংশ নয়, ফ্যাসিস্ট সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি।
তিনি বলেন, তবে এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি রয়েছে। এখানে বাংলাদেশের সকল জনগোষ্ঠী, সকল ঐতিহ্য-সেই আকবর আমলের ঐতিহ্য, সুলতানি আমলের ঐতিহ্য সবকিছুর মিশ্রণ এখানে দেখবেন। তবে টিপিক্যাল রাজনীতির কিছু এখানে নাই।
চারুকলায় ১৯৮৯ সালে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল। পরে ১৯৯৬ সালে এটিকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম দেওয়া হয়। এবার কর্তৃপক্ষ এটিকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নাম দিয়েছে। এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চারুকলার একদল শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে ফারুকী বলেন, চাপিয়ে দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি, আগে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নাম ছিল ‘বর্ষবরণ শোভাযাত্রা’ যশোরে। সেখান থেকে ঢাকায় আসার পর নাম হয় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। এরপর চাপানো হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এবার চারুকলা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চারুকলায় যে নামে চালু হয়েছিল সে নামে শুরু হবে।
ফারুকী আরও বলেন, এটা আসলে বাঙালির প্রাণের উৎসব আর নয়, এটাকে আমরা অনেকদিন বাঙালির প্রাণের উৎসব বানিয়ে রেখেছি। এটা বাংলাদেশের প্রাণের উৎসব। বাঙালি, চাকমা, মারমা, গারোসহ সকল জাতিগোষ্ঠী বর্ষবরণ পালন করে। ফলে এটাকে আমরা বাংলাদেশের উৎসব হিসেবে পালন শুরু করলাম।
আজ পহেলা বৈশাখ। ১৪৩২ বঙ্গাব্দ। বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিতে বাংলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে আজ উৎসবের আমেজ। রঙিন পোশাকে, ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে, আনন্দ শোভাযাত্রা, জারি, সারি, লোকগান, লোকজ মেলা এবং বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে সারাদেশ আজ নতুন বছরকে বরণ করেছে।
জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ দেশের আটটি বিভাগীয় শহর, ৬৪ জেলা ও উপজেলা সদরে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীতে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ বিভাগের গাজীপুর , নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ি জেলায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রামের সব ক’টি জেলায় বিভিন্ন আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গান, কবিতা, নৃত্য, ঐতিহ্যের শোভাযাত্রাসহ লোকজ নানা অনুষঙ্গে, আনন্দ-উচ্ছ্বাসে বাংলা নববর্ষকে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে চট্টগ্রামবাসী। প্রখর রোদ উপেক্ষা করে নগরীর বর্ষবরণের বিভিন্ন আয়োজনে যোগ দেয় সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ। প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে বর্ষবরণের বড় আসর বসে সিআরবির শিরিষতলায়।
চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিসহ আরও বিভিন্নস্থানে বর্ণিল উৎসবের আয়োজন ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বের করা শোভাযাত্রায় আরও প্রাণময় হয়ে ওঠে চট্টগ্রামে পহেলা বৈশাখের আয়োজন।
পার্বত্য জেলা বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ত্রিপুরা, চাকমা ও মারমা সম্প্রদায় তাদের ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণ উৎসব আয়োজন করে। তিন দিনব্যাপী ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু উৎসব, চাকমা সম্প্রদায়ের বিজু উৎসব এবং মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উৎসবের মধ্যে দিয়ে উদ্যাপিত হয় বর্ষবরণ উৎসব। বর্ষবরণ উপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী সাংগ্রাই উৎসব আজ শুরু হয়েছে।
এছাড়াও চট্টগ্রামের কুমিল্লা, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ সবকটি জেলায় ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা, কাবাডি খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ মেলা ও শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে বিপুল উৎসাহে আনন্দঘন পরিবেশে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়।
রাজশাহী মহানগর ও আশপাশের উপজেলায় নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হয় বাংলা নববর্ষ উৎসব। বর্ষবরণ উপলক্ষে রাজশাহী জেলা প্রশাসন, রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ পৃথক পৃথক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। রাজশাহী শহরের পদ্মা নদীর পাড়ে রবীন্দ্র-নজরুল মঞ্চে রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় বর্ষবরণ উৎসব।
জেলা সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর অনুযায়ী রাজশাহী বিভাগের নাটোর, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জয়পুরহাটে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হয়।
বর্ণিল আয়োজন ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় রংপুরে আজ বাংলা নববর্ষ উদ্যাপিত হয়। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে সারাদেশের মতো প্রাণের উৎসবে মেতে ওঠে বিভাগীয় নগরী রংপুর। আনন্দ শোভাযাত্রা, লোকজ মেলা, ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা ইত্যাদি নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বর্ষবরণ করা হয়। এছাড়াও দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ে বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে বর্ষবরণ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও নগরীতে বরিশাল চারুকলা ও উদীচী শিল্পী-গোষ্ঠী পৃথক পৃথক আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। আনন্দ শোভাযাত্রায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শুচিতা শরমিনের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন।
বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদদাতাদের দেয়া খবর অনুযায়ী, খুলনা বিভাগের যশোর, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলা, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, নেত্রকোণা এবং শেরপুর জেলায় লোকজ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, পহেলা বৈশাখ শুধু একটা তারিখ নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ভালোবাসা আর আনন্দের প্রতীক।
তিনি বলেন, এদিন আমরা পুরনো দুঃখ-কষ্ট ভুলে, নতুন আশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। আজকের ছোট সোনামণিদের চোখে যে স্বপ্ন তা এদেশের ভবিষ্যতের আলো। উপদেষ্টা শিশুদের নতুন জিনিস শেখার পাশাপাশি ভালো কিছু করার উপদেশ দেন।
তিনি আজ সোমবার সকালে জাতীয় সঙ্গীত এবং এসো হে বৈশাখ দলীয় সংগীতের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির বর্ষবরণ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম এবং শিশু একাডেমির শিশু শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা শিশুদের বাবা-মা, শিক্ষক, গুরুজনদের সম্মান করার পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা, নৈতিকতার চর্চা করার বিষয়ে জোর দেন। তিনি নতুন বছরের প্রথম দিনে মিলেমিশে থাকা, হিংসা-বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা, সামাজিক ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ দুর্নীতি, মাদক, সহিংসতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
উপদেষ্টা বলেন, স্বাধীন, গণতান্ত্রিক এবং অগ্রসর রাষ্ট্রের পেছনে রয়েছে হাজারো মানুষের আত্মত্যাগ, লড়াই ও সংগ্রাম। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে শিশু এবং ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এবারের বৈশাখের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ আমাদের জাতীয় জীবনে নতুন উদ্দীপনা।
এ আয়োজনে ছড়ায় ছড়ায় বৈশাখ, নাগরদোলা, পুঁথিপাঠ, গম্ভীরা, বাইস্কোপ, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠার প্রতিযোগিতা, সাংগ্রাই উৎসবের পানি খেলা, নাচ, গান কবিতার বিভিন্ন অংশে শিশুরা আনন্দের সাথে অংশগ্রহণ করে।
জুলাই আন্দোলনে নরসিংদীতে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ায় সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম ও রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, পুলিশকে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) নরসিংদীর গণহত্যার মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সাইফুলসহ একই অভিযোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বান চৌধুরীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গুলির নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গত ১৮ জুলাই ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নরসিংদীতে শহীদ হন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ ভুঁইয়া।
পুলিশের গুলিতে তাহমিদ নিহত হওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। পরে লাশ নিয়ে মিছিল করতে গেলে আবারও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে আরও একজন নিহত হন। জুলাই আন্দোলনে শুধু নরসিংদী জেলাতেই শহীদ হয়েছেন প্রায় ২০ জন। পাশাপাশি হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়।
রাজধানীসহ সারা দেশে উৎসবের আমেজে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের সকল শ্রেণী পেশার-মানুষ একাকার হয়ে বরণ করে নিচ্ছে ১৪৩২ বাংলা বছরকে।
‘এসো হে বৈশাখ’ গানের সুর এবং বাঙালির লোক গান, প্রদর্শনী, শোভাযাত্রা, আল্পনা, নানা বর্ণের ফেষ্টুনে রঙিন হয়ে উঠেছে রাজপথ। নারী পুরুষ, শিশু কিশোর রং বেরঙের পোশাকে সজ্জিত হয়ে মেতে উঠেছে বর্ষবরণের আনন্দে। রমনার বটমূল থেকে শাহবাগ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাইকোর্ট- প্রেসক্লাব, রাজপথ অলিগলি সবখানে ভোর থেকে উৎসবমুখর মানুষের পদচারণা।
দিনটিকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, তিন পার্বত্য জেলা এবং অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল রাজধানীতে শোভাযাত্রা বের করে। পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ভোরে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের বর্ষবরণের আয়োজন। বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবং বাংলাদেশ লোকশিল্প ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে।
এবারের বাংলা নববর্ষ বাংলাদেশের সকল নাগরিক, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের কাছে অন্যরকম এক উৎসবের আবহ তৈরি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই প্রথমবারের মত দেশের সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায় ও নৃ-গোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধভাবে আজ উদযাপন করছে সর্বজনীন উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ’ ।
এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ সেজেছে নতুন সাজে। বাঙালি জাতির শাশ্বত ঐতিহ্যের প্রতীক এ দিনটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে উৎসবমুখর করে তুলতে বের হয় শোভাযাত্রা। বসেছে বৈশাখী মেলা। মেলাগুলোতে মেলে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য, কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সব প্রকার হস্তশিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্রী, খেলনা এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন: চিড়া, মুড়ি, খৈ, বাতাসা, বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় সমারোহ। গ্রামে, নগরে বন্দরে বাঙালির আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতি মেলায় বসেছে নাগরদোলা, পুতুলনাচ, যাত্রা, লোকজ গানের আসর। এই বিনোদন বাঙালি সমাজের হাজার বছরের শাশ্বত রূপ।
দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মহানগর ও পৌরসভা এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজস্ব কর্মসূচি পালন করছে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহসহ দেশের সব জেলা উপজেলায় উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির জাতিগত গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো একই সাথে পালন করেছে বৈসাবি উৎসব। ঢাকায় জনসাধারণের জন্য সকল জাদুঘর এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। শিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এদিন কোনো টিকিট লাগবে না।
সংবাদপত্রগুলোতে পহেলা বৈশাখের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসহ অন্যান্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।