রাজধানীর তেজগাঁওয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র শীল (৫৩) মারা গেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মারা যান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ভুবনের শ্যালক পলাশ চন্দ্র শীল জানান, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
পলাশ বলেন, ‘আমার জামাইবাবুর শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতি হচ্ছিল। তিনি কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না। যেকোনো দুঃসংবাদের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন চিকিৎসকরা।’
এর আগে গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তেজগাঁওয়ের এলাকার সিটি পেট্রলপাম্প এবং বিজি প্রেসের মাঝামাঝি সড়ক দিয়ে ভাড়ায় মোটরসাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছিলেন ভুবন চন্দ্র। এ সময় সন্ত্রাসীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পরে তাকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ওই দিন রাতেই তাকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকালে মারা যান তিনি।
টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন।
প্লট ও ফ্ল্যাট জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতির মামলায় যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি ও সাবেক ‘সিটি মিনিস্টার’ টিউলিপ সিদ্দিককে দুর্নীতির বিষয়ে আদালতে হাজির হয়েই বক্তব্য দিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার বিকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য জানান মো. আক্তার হোসেন।
তিনি বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক শুধু আদালতে উপস্থিত হয়েই নিজের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাবেন। অভিযোগ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও টিউলিপ বাংলাদেশে তার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময়ে গুলশানে একটি সরকারি লিজকৃত প্লট ইস্টার্ন হাউজিংকে অনুমোদনের ব্যবস্থা করে বিনিময়ে একটি ফ্ল্যাট গ্রহণ করেছেন তিনি।
এছাড়া, ২০২২ সালে পূর্বাচলে রাজউকের মূল্যবান জমি নিজের মা, ভাই ও বোনের নামে বরাদ্দ নিতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এরইমধ্যে আদালত থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মর্টগেজ সম্পত্তিকে অতিমূল্যায়িত করে বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীর প্রায় ৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বুধবার দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। এ দিন রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সালমান এফ রহমানের ছেলে আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, ব্যাংকটির সাবেক এমডি মো. শাহ আলম সারোয়ার, ব্যাংকটির সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, এ আর এম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী, গোলাম মোস্তফা, মো. জাফর ইকবাল, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, হেড অব লোন পারফর্মেন্স ম্যানেজমেন্ট শাহ মো. মঈনউদ্দিন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম, গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, মো. নুরুল হাসনাত ও মনিতুর রহমান। ব্যাংকটির হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, ধানমন্ডি শাখার সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক ও এফভিপি নাজিমুল হক, সাবেক ব্যবস্থাপক হোসাইন শাহ আলী, রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, এসপিও আয়েশা সিদ্দিকা এবং এফএডিপি সিলভিয়া চৌধুরী।
আরও আসামি করা হয়েছে বিএসইসির সাবেক কমিশনার রুমানা ইসলাম, মিজানুর রহমান, শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও মো. আবদুল হালিম।
এছাড়া সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিমাই কুমার সাহা, কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মিজানুর রহমান, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউজ্জামান ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তিলাত শাহরিনকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করেই- প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তি সরেজমিনে পরিদর্শন বা মূল্য যাচাই না করেই অস্বাভাবিক অতি মূল্যায়ন করে ৮৭ কোটি টাকার জমিকে এক হাজার ২০ কোটি টাকায় মূল্যায়ন করেছে।
অন্যদিকে, অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মাসখানেক আগে রেজিস্ট্রিকৃত কথিত কোম্পানির তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের চলতি হিসাবে জমা করে। সেখান থেকে রিডেশন রাউন্ডে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করে অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা (সরকারি অর্থ) বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং নিয়মাবলী উপেক্ষা করে নগদে ও বিভিন্ন রকম সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/ ৪২০/ ৪৬৭/ ৪৬৮/ ৪৭১/ ৪৭৭৫/ ১০৯ তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারার এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গগত, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সালমান এফ রহমান, তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের নামে থাকা ৩৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৩ মার্চ সালমান এফ রহমান ও ইনডেক্স পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি লিমিটেডের সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) জাকিয়া তাজিনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই মামলায় অর্থ আত্মসাৎ ও টাকা পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে করোনা টিকায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথাও জানিয়েছে দুদক। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্টে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক। বর্তমানে সালমান এফ রহমান জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ছাত্র-জনতা হত্যার বেশি কয়েকটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিশ্বের একশ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন। ২০২৫ সালের এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
ক্ষুদ্রঋণের ধারণা ও সামাজিক ব্যবসার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) প্রকাশিত মর্যাদাপূর্ণ এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস।
টাইম ম্যাগাজিনে ড. ইউনূসকে নিয়ে লেখা মুখবন্ধে বলা হয়, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের স্বৈরচারী প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে একজন সুপরিচিত নেতা হাল ধরেন। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত মোহাম্মদ ইউনূস।
মুখবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি আরও লিখেছেন, কয়েক দশক আগে বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে ব্যবসা গড়ে তোলা ও পরিবার পরিচালনা করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজেদের মর্যাদা ফেরাতে সক্ষম হয়েছেন। তার এই উদ্যোগের সুফল পেয়েছে লাখো মানুষ, যাদের ৯৭ শতাংশই নারী।
যুক্তরাষ্ট্রেও এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ড. ইউনূস কীভাবে সহযোগিতা করেছিলেন, সে কথারও স্মৃতিচারণ করে হিলারি লেখেন, তিনি যখন তৎকালীন গভর্নর বিল ক্লিনটনকে সহযোগিতায় প্রথমবার আরকানসাসে আসেন, তখন তার সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। এরপর বিশ্বের যেখানেই আমি গিয়েছি, সেখানেই আমি তার (ইউনূস) কাজের অসাধারণ প্রভাবে জীবন বদলে যাওয়া, সমাজের উন্নয়ন ও নতুন করে আশার সঞ্চার হতে দেখেছি।
এখন মাতৃভূমির ডাকে ড. ইউনূস আরও একবার সাড়া দিয়েছেন উল্লেখ করে হিলারি লেখেন, তিনি বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনার দায়িত্ব নিয়েছেন। তার নেতৃত্বে মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি জবাবদিহি চাইছেন। সেই সঙ্গে একটি ন্যায়সঙ্গত ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি স্থাপন করছেন এই অর্থনীতিবিদ নেতা।
অর্থনৈতিক খাতসহ সামাজিক পরিবর্তন ও মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে ড. ইউনূস এ স্বীকৃতি পেয়েছেন।
টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৫ সালের প্রকাশিত তালিকায় ৩২টি দেশের ব্যক্তিত্বরা স্থান পেয়েছেন। তালিকায় আরও রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শাইনবাউম, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেয়েসাস, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্ডা গেটস, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডের লিয়েনসহ বাঘা বাঘা সব ব্যক্তিরা।
তালিকায় বিশ্বনেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে উদ্ভাবক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্বসহ বিনোদন জগতের মানুষের নামও রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কিংবদন্তি টেনিস খেলোয়াড় সেরেনা উইলিয়ামস, ফরমুলা ওয়ান ড্রাইভার ম্যাক্স ভেরস্টাপেন, ফরাসি সাঁতারু লিওঁ মারশাঁ, মার্কিন সংগীতশিল্পী (র্যাপার) স্নুপ ডগ, ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী এড শিরান, ব্রিটিশ পপ তারকা ডুয়া লিপা, হলিউড অভিনেত্রী ডেমি মুর, বলিউড অভিনেত্রী আলিয়া ভাট প্রমুখ।
এছাড়া টেকসই ও মানবিক স্থাপত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমও এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরে না হলেও আসছে বছরের জুন মাস পার হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্র্বতী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে যাই বলুক জুনের পরে নির্বাচন যাবে না।
আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার বাইরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সরকারের কালবিলম্বের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা নেই। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে না, তেমন নয়। আমরা বলেছি, এই সময়ের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করা হবে। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে দেরি করে করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করব, সেটা না।’তিনি বলেন, যদি ডিসেম্বরে সম্ভব হয় ডিসেম্বরেইৃ না হয় জানুয়ারিতে, আমরা এভাবে বলেছি যে ডিসেম্বর থেকে জুন মানে আমরা ইচ্ছা করে একটু বেশি সময়ে ক্ষমতা ভোগ করার জন্য, অকারণে আমরা একমাস বা দুই মাস বেশি ক্ষমতায় থাকলাম মোটেই সেটা না। এ সময় জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, নির্বাচনের দুই মাস আগে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
আসিফ নজরুল উল্লেখ করেন, সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক। ওনারা অনেক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন এবং তাঁদের সন্তুষ্ট মনে হয়েছে। একটা বিষয়ে ভিন্নমত হতে পারে যে, ওনারা বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই ইলেকশন দিলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করার পর বিএনপি মহাসচিব অসন্তুষ্টির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ বরলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “বিএনপি মহাসচিবের এটা বলার অবশ্যই অধিকার আছে। একটা আলোচনার থেকে একজন একভাবে পারসিভ করে, আরেকজন আরেকভাবে পারসিভ করে। আমার কাছে ওনাদেরকে দেখে হ্যাপি লেগেছে। মনে হয়েছে উনাদের মনে যে প্রশ্ন ছিল তার অনেকগুলোর উত্তর ওনারা পেয়েছেন।”
বিএনপি বলেছে ডিসেম্বরে, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তাতে বিএনপির সঙ্গে অন্তর্র্বতী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে আইন উপদেষ্টা বলেন, “কোনো দূরত্ব তৈরি হয় নাই। ফখরুল ভাই আপনাদের বলেছেন যে, উনি সন্তুষ্ট না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, আমাদের অনেক ব্যাখ্যা ওনারা বুঝতে পেরেছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে ওনারা সন্তুষ্ট। ওনারা (ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে) যে সমস্ত আশঙ্কার কথা বলেছেন, আমরা আমাদের মত বলেছি যে, এই সমস্ত আশংকার কোনো কারণ নাই। এসব ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। আমরা অত্যন্ত রেসপেক্টফুলি ওনাদের মতামত বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা এ ব্যাপারে আরও সচেতন থাকব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এই শিক্ষক আরও বলেন, ওনারা বলেছেন যে, আমাদের কথা-বার্তার মধ্যে এতো অস্পষ্টতা থাকে, কেউ কেউ আমাদের কোনো কোনো উপদেষ্টার কথা বলেন। আমরা ক্যাটাগরিক্যালি বলেছি যে যেটাই বলুক না কেনো, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বার বার যেটা রিপিট করেছেন সেটাই সরকারের অবস্থান। অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা, নিজস্ব বিবেচনায় কথা বলেন সেটাতে তারা (বিএনপি) যেন বিভ্রান্ত না হন।
আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি নেতারা জানতে চেয়েছেন যে, সংস্কার যদি হয়ে যায় এতো দেরি করার মানে কি আছে? আমরা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছি, জুলাই চাটার্ড প্রণীত হলেও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা, নীতিগত ব্যবস্থা যেটি গ্রহণ করতে মাঝে মধ্যে সময় লাগে। আমরা উদাহরণ দিয়ে বলেছি যে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন ২৩ বার ড্রাফট করেছি বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়ার জন্য এবং বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছে। সেজন্য আমরা বলেছি যে, আমরা তো পিন পয়েন্ট করতে পারব না। জুলাই চার্টার প্রণীত হওয়ার পর হয়ে যাবে, আমরা অংশীজনের সাথে কথা বলে ব্রড কনসালেটেশনের ভিত্তিতে করব।
অর্ন্তবর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, জনগণের তো একটা আকাঙ্খা আছে যে, আমরা বিচার করে যাই। আমরা যদি কোনো বিচার না করে যাই, আমরা যদি ইলেকশন দেই, আমরা মানুষের কাছে, নিজের কাছে জবাব দিবো কীভাবে? ফলে শুধু ইলেকশন, সংস্কার, বিচার এবং আমাদের সরকারের গৃহীত কিছু পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করে এজন্যই ডিসেম্বর থেকে জুন টাইম বারটা করা হয়েছে।
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার প্রলম্বিত হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, শেখ হাসিনার বিচারে কোনো বিলম্ব হচ্ছে না। আমরা এর আগে যে বিচার হয়েছে সেটা কম্পেয়ার করে দেখিয়েছি। বলেছি, যে কোনো রকম বিলম্ব করা হচ্ছে না। আমরা ওনাদের সব কিছু বুঝিয়ে বলার পর ওনারা আর কথা বলেননি। তার মানে ওনারা বুঝতে পেরেছেন। তবে তারা আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কথা বলেছেন। আমরা বলেছি যে, এটা অচিরেই হযে যাবে। বাড়ানোর প্রক্রিয়া কম পক্ষে একমাস আগে থেকে শুরু করেছি। আমাদের তো উপযুক্ত বিচারপতি নিয়োগ করতে হবে, আমাদের লজিস্টিক ঠিক করতে হবে। আশা করি, এটা এক থেকে দুই সাপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে।
এর আগে দুপুর ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শুরু হয়।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেন। দলের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল মাহমুদ টুকু।
আসিফ নজরুল আরও জানান, বিএনপি নেতারা বলেছেন, তাদের দল দেশে গত ১৫ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছে। অবশ্যই এটার জন্য আমরা শ্রদ্ধাবোধ দেখিয়েছি। তিনি বলেন, “ওনারা বলেছেন যে আমাদের অন্তর্র্বতী সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যেটা বিএনপির প্রতিকূলে গেছে। আমরা উদাহরণ দিয়েছি, সিদ্ধান্ত আছে যেটা বিএনপির অনুকূলে গেছে। তারপরও ওনারা বলেছেন যে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। আমরা বলেছি যে, পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস পুনর্গঠন হয়েছে মাত্র তিন মাস আগে। এ সময়ে ৮ হাজারের মতো মামলা প্রত্যাহার হয়েছে, ১৬ হাজারের মতো মামলা লিস্টেড আছে। আমরা বলেছি যে, এতো দ্রুত গতিতে সম্ভব কিনা? ওনারা আমাদের বলেছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন।
বৈঠকে বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। বলেন, “ওনারা (বিএনপি নেতা) বলেছেন যে, দলের যে সংস্কার ভাবনা এটা বহু পুরনো। ওনারা সবসময় সংস্কারপন্থি দল। আমরা এটা অ্যাগরি করেছি। অবশ্যই বিএনপি সবসময় সংস্কারের কথা বলেছে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, জুলাই সনদ খুব দ্রুত গতিতে হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে বিএনপিও তাদের আশ্বাস দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ৫৫৮ টি মামলা করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
এছাড়া অভিযানকালে ২০৬ টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৯৩ টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে।
আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে গতকাল মঙ্গলবার এসব মামলা করে।
এতে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগর এলাকায় ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রায় দেড়যুগ বিসিবির দায়িত্বে ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। নানা সময়েই বিসিবিতে দুর্নীতির কানাঘুষা শোনা গেছে। বিপিএলের টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্নের জায়গা ছিল। কিন্তু স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে সেগুলো নিয়ে কোনো জোর আলোচনায়ই হয়নি। মিডিয়া থেকে প্রশাসন; কথা বলার সুযোগ পায়নি কেউই।
এবার বিসিবির দুর্নীতি নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের গতকাল প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) অভিযান পরিচালনা করেছে সংস্থাটি। দুপুর ১২টা নাগাদ মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে দুদকের তিন সদস্যের একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করেন। বিসিবির বিভিন্ন বিভাগে প্রায় দেড় ঘণ্টার অভিযানের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনটি অভিযোগ নিয়ে কাজ করার কথা জানান দুদকের সহকারী পরিচালক আল আমিন।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে বিভিন্ন ক্রিকেট লিগের বাছাইপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ অর্জনসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনফোর্সমেন্ট অভিযানের নিমিত্তে টিম প্রেরণ।’ এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে আল আমিন জানান, বাকি দুটি অভিযোগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) টিকেট বিক্রির আয়ে অসঙ্গতি ও মুজিব শতবর্ষে অর্থ আত্মসাৎ সম্পর্কিত।
প্রায় দশ বছর পর এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগ। ২০১৪-১৫ মৌসুমে এই লিগে খেলার ফি ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করা হলে ক্রমেই কমতে থাকে দলের সংখ্যা। গত কয়েক বছরে ৫টির বেশি দল ছিল না এই লিগে। তবে এবার আবেদন ফি কমিয়ে করা হয়েছে ১ লাখ টাকা। এর সঙ্গে শিথিল করা হয়েছে কিছু শর্ত। যার ফলে এবারের বাছাই লিগে অংশ নিয়েছে ৬০টি দল।
বাছাই লিগের আবেদন ফি বাড়ানো, দলের অংশগ্রহণ কমার পেছনে বোর্ডের বা ব্যক্তিগত কোনো প্রভাব ছিল কি না সেটি খতিয়ে দেখা হবে জানিয়েছেন আল আমিন, ‘তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে এবার ৬০টি দল অংশ নিয়েছে। আগে ২-৩ বা সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এখানে হয়তো কোনো কারণ আছে। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা বোর্ডের কোনো প্রভাব ছিল কি না দেখার জন্য। এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে, আগে হয়তো অংশগ্রহণের স্বাধীনতা ছিল না, কোনো চাপ ছিল, যে কারণে দলগুলো আসত না। আমরা বিস্তারিত যাচাইবাছাই করে বুঝতে পারব এখানে কী অসঙ্গতি ছিল।’
বিপিএলের সবশেষ আসর শেষে বিসিবি সভাপতি ও টুর্নামেন্টের গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেছিলেন, টিকেট বিক্রি করে তারা সব মিলিয়ে ১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা আয় করেছেন। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন, বিপিএলের প্রথম ১০ আসরে টিকেট থেকে মোট ১৫ কোটি টাকা পেয়েছিল বিসিবি।
টিকেট বিক্রির আয়ে এই অস্বাভাবিকতা নিয়ে কাজ করার কথাও বললেন দুদকের সহকারী পরিচালক, ‘আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকেটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকেট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজ থেকে টিকেট বিক্রি করছে। যার প্রেক্ষিতে একাদশ আসরে আমরা দেখেছি, ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটি। রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি। বিস্তারিত যাচাই করলেই বোঝা যাবে কী অসঙ্গতি এখানে।’
এ ছাড়া ২০২০-২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশব্যাপী আয়োজনে শামিল হয়েছিল বিসিবিও। জাঁকজমকপূর্ণ কনসার্টসহ বর্ণিল আয়োজন করা হয়েছিল তখন। মুজিব শতবর্ষের ওই আয়োজনে ব্যয়ের হিসেব গড়মিলের কথা বলেন আল-আমিন।
এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসেবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে আমরা আমাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে প্রতিবেদন দাখিল করব। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
পরে মুজিব শতবর্ষের আয়োজনে আর্থিক অসঙ্গতির বিস্তারিত তুলে ধরেন আল-আমিনের সঙ্গে থাকা আরেক সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। তিনি বলেন, ‘কনসার্টসহ যে আয়োজন হয়েছিল, সেখানে সব মিলিয়ে ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। আমরা এই অভিযোগ পেয়েছি। তবে আসলে খরচ হয়েছে ৭ কোটি টাকার মতো। এখানে প্রায় ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বা কিছু হয়েছে। এরকম অভিযোগ আমরা পেয়েছি।’
দুদকের অভিযানের পুরোটা সময় সঙ্গে ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। অভিযান শেষে সংবাদ সম্মেলনে দুদককে পূর্ণ সহযোগিতার কথা জানালেন তিনি, ‘যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, এসবের ব্যাপারে আমাদের কাছে যত কাগজপত্র আছে, সব বিভাগকে সেগুলো দুদকের কাছে দিয়ে সহযোগিতার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এখন যেহেতু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তাই এর বেশি কিছু বলা উচিত হবে না।’
দুই ঘণ্টা পর দুপুর ২টায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাাল শুরু হয়েছে।
ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়িতে মহাসড়ক অবরোধ করে কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার বেলা পৌনে ১২টায় কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন বে-সরকারিপলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মহাসড়কে জড়ো হয়। পরে সেখানে তারা বসে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। ফলে মহাসড়কের উভয় লেনের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে মহাসড়কের দুই পাশে অন্তত ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত যানজট সৃষ্টি হয়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবরোধ স্থলে আসে। এসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে। পরে বেলা ২টায় শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান। শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে চলে গেলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, খবর পেয়ে মহাসড়কে অবরোধ স্থলে যায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শিক্ষার্ধীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। পরে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে বেলা ২টা থেকে যান চলাচল শুরু হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারত্বের (বিসিডিপি) আওতায় দেশের সব বিভাগীয় সদর ও পৌর এলাকায় আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। শহর এলাকার বিশেষ করে, ঢাকা শহরের তাপমাত্রা কমাতে সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অফিসকক্ষে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারত্বের অগ্রগতি বিষয়ক এক বৈঠকে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বিসিডিপি’র মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় উপকূলের মানুষের জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিকেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিসিডিপি’র কর্মপন্থা প্রণয়নে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে, যারা পরবর্তী পরিকল্পনা নির্ধারণ করবে। উপদেষ্টা আগামী জুলাই মাসের মধ্যে বিসিডিপির ওয়েবসাইটসহ কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।’
বৈঠকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) ড. ফাহমিদা খানম এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সিনিয়র ক্লাইমেট চেইঞ্জ অফিসার মৌসুমি পারভিনসহ এডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সার্কের সব সদস্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চান বলে জানিয়েছেন তার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পরিবারভুক্ত, প্রধান উপদেষ্টা চান এ অঞ্চলের দেশগুলোর সংগঠন সার্কের প্রত্যেক দেশের সঙ্গে আমাদের যাতে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়। আমরা যেমন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছি, একই সঙ্গে ভারত, ভুটান, নেপালের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নয়ন চাচ্ছি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফরের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, গত সপ্তাহে একটা সিদ্ধান্ত এসেছে যে নেপালের জন্য আমরা একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল করবো। এটার জন্য আমরা জমি দেখছি উত্তরবঙ্গে। সবার সঙ্গে উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে এটা হচ্ছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আসছেন, আমাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট যেসব বিষয় আছে সব নিয়ে কথা হবে।
তিনি দাবি করেন, এই সরকারের বিদেশ নীতি হচ্ছে প্রো-বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্বার্থ যতটুকু অক্ষুণ্ন রাখা যায়, কূটনীতিতে আমরা সেটাই করছি।
প্রেস সচিব বলেন, প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর বলেছিলেন তার বিদেশ নীতির অন্যতম একটা দিক হচ্ছে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করা এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন। অধ্যাপক ইউনূস কিন্তু সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা অনেকবার বলেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি সার্কের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, ডি-৮ সম্মেলনের ফাঁকে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, দাভোসের সম্মেলনের ফাঁকে বলেছেন, বাকুতেও বলেছেন বলে উল্লেখ করেন শফিকুল।
ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো এবং বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে।
আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফেনীতে ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উল্লেখ্য, আজ ভোর ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকুণ্ডে ৩৬ মিলিমিটার বা মিমি।
আজ সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৭৫ শতাংশ। ঢাকায় বাতাসের গতি দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ঘন্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে।
ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ৩৬ মিনিটে।
আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে যেসব জায়গায় সবাই একমত আছে, তার ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় সনদ তৈরির মাধ্যমে জাতির যে রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেদিকে অগ্রসর হওয়া যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) সঙ্গে আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে গতকাল পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সময় আমরা টেবিলের দুই প্রান্তে বসলেও আমরা দুই পক্ষ নই। আমরা একপক্ষ, আমাদের লক্ষ্য এক। আমরা রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবাই চেষ্টা করছি।
আলোচনার শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, আমাদের পথের ক্ষেত্রে সামান্য ভিন্নতা আছে। আলোচনার মাধ্যমে এই মতভিন্নতা দূর করা যাবে। যে ঐক্যের মাধ্যমে আমরা একটা ফ্যাসিবাদী শাসনকে পরাস্ত করতে পেরেছি, সেই ঐক্যের জায়গাকে অব্যাহত রেখে তা আরও সুদৃঢ় করতে পারব।
বিজ্ঞপ্তিতে আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুততার সঙ্গে সম্ভব একটি জাতীয় সনদের জায়গায় পৌঁছানো। এই কমিশনের মেয়াদ জুলাই মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। আশা করছি প্রাথমিক আলোচনা মে মাসের মাঝামাঝি পর্যায়ে শেষ করা যাবে। এরপর পরবর্তী ধাপে অগ্রসর হবে কমিশন। আমরা বিবেচনা করব কীভাবে এক জায়গায় আসতে পারি।
আলোচনায় এনডিএম-বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের নেতৃত্বে আট সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলটির মহাসচিব মোমিনুল আমিন, ভাইস চেয়ারম্যান ফারুক উজ জামান চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার সাহিদুল আজম প্রমুখ। এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সফর রাজ হোসেন, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বেশির ভাগ জায়গায় এনডিএম একমত জানিয়ে ববি হাজ্জাজ বলেন, তারা সংস্কারগুলো বড়ভাবে দেখতে চান।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৪টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে ৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে কমিশন। আগামী ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছাপানোসহ অন্যান্য মুদ্রণ কাজে কাগজ লাগবে ২ লাখ ৩০ হাজার রিম। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৩৫ কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার এক আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) থেকে এই চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, বিজি প্রেসের সঙ্গে আমাদের প্রাথমিক বৈঠক হয়েছে। তারা বলেছে, ব্যালট পেপারসহ সব মুদ্রণ কাজ সম্পন্ন করতে তিন মাসের মতো সময় লাগবে। আমরা বলেছি চার মাস সময় নেন।’
এক্ষেত্রে তারা সবকিছু হিসাব করে পরবর্তী বৈঠকে জানাবে বলেও জানান আখতার আহমেদ।
কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত ডিসেম্বরকে টার্গেট করেই কাগজ কেনা হবে। এক্ষেত্রে তফসিলের আগেই কাগজ কেনা সম্পন্ন করতে হবে। এজন্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। কেননা, তফসিলের আগেই বেশ কিছু মুদ্রণ সম্পন্ন করতে হয়।
আলোচনার পর ইসি সচিব তাদের চার মাস সময় দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আগামী মে মাস থেকেই কাগজ কেনার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০টি আসনের নির্বাচন এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী সামগ্রীর মুদ্রণ পরিকল্পনা প্রণয়ন করার অংশ হিসেবেই বৈঠকটি হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ২১ প্রকার ফরম, ১৭ প্রকার প্যাকেট, পাঁচ প্রকার পরিচয়পত্র, আচরণ বিধি, প্রতীকের পোস্টার, নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েল, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা ইত্যাদি মুদ্রণ কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট পেপার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক সংবলিত হয়ে থাকে। এ কারণে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তালিকা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল পরিমাণ পেপার স্বল্প সময়ের মধ্যে মুদ্রণ করে মাঠ কার্যালয়গুলোতে বিতরণ করতে হবে। অন্যান্য ফরম, প্যাকেট, পরিচয়পত্র, আচরণ বিধিমালা, প্রতীকের পোস্টার, ম্যানুয়েল, নির্দেশিকা ইত্যাদি সম্ভাব্য সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মুদ্রণ করে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
জাতীয় সংসদ এবং অন্যান্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতীত) নির্বাচনে ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য মুদ্রণ সামগ্রী মুদ্রণের জন্য কী পরিমাণ কাগজ প্রয়োজন হবে তার হিসাব জানার জন্য গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস, তেজগাঁও এবং কাগজের বর্তমান মজুত সম্পর্কে জানার জন্য বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা-কে গত ১৩ জানুয়ারি চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস, তেজগাঁও ও বাংলাদেশ স্টেশনারি অফিস, তেজগাঁও, ঢাকা নির্বাচন কমিশনে সচিবালয়ের সংরক্ষিত কাগজের বিস্তারিত হিসাব প্রেরণ করে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন উপলক্ষে এক লাখ ৬১ হাজার ৭৪ রিম কাগজ ক্রয় করা হয়েছিল। আগামীতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে দুই লাখ ৩০ হাজার রিম কাগজের প্রয়োজন হবে। বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার রিম কাগজ মজুদ রয়েছে। বাকিগুলো কিনতে হবে। এজন্য ৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৩ টাকা সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে।
নির্বাচনী মুদ্রণের কাজ মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন গভর্নমেন্ট প্রিন্টিং প্রেস, বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় (বিজি প্রেস) ও বাংলা নিরাপত্তা মুদ্রণালয়ে সম্পন্ন করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনে ৪৮ হাজার ভোটকেন্দ্র ছিল। এবার সে সংখ্যা বাড়তে পারে৷ এছাড়া ভোটার সংখ্যাও বেড়ে সাড়ে ১২ কোটি হতে পারে। তাদের ব্যালট পেপার, মনোনয়নপত্রসহ ৫৩ ধরনের নির্বাচনী উপকরণ ছাপাতে হয়।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দুই মামলায় দুদকের দেওয়া চার্জশিট আমলে গ্রহণ করে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর মধ্যে এক মামলায় ১২ জন ও অন্য মামলায় ১৭ জন আসামি। আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। একইসঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তারসংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদকের করা ছয় মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
দুদকের প্রসিকিউশন বিভাগের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া অন্য আসামিরা হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন ও সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সাবেক সদস্য শফি উল হক, পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা, পূরবী গোলদার, আনিছুর রহমান, নাসির উদ্দীন, সামসুদ্দীন, নায়েব আলী, খুরশীদ আলম, শরীফ আহমেদ, শহীদ উল্লা, ওয়াছি উদ্দিন ও সাইফুল ইসলাম দুই মামলাতেই রয়েছেন। সে হিসেবে দুই মামলায় মোট ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান বাদী হয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়কে প্রধান ও শেখ হাসিনাকে সহযোগী আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় আরও ১৩ জনকে আসামি করা হয়। তদন্ত শেষে ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
গত ১৪ জানুয়ারি দুদকের উপপরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দাখিল করে দুদক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শেখ হাসিনা নিজের মালিকানায় ও তার ছেলে, মেয়ে, বোন এবং বোনের দুই ছেলেমেয়ের নামে ঢাকা শহরে বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরেও সেই তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বরাদ্দসংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ প্রকল্পের বরাদ্দবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মচারীদের প্রভাবিত করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
জানা যায়, পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার পরিবারের সদস্য, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পৃথক ৮টি অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দাখিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়।
দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।