তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহর নিয়োগ ঠেকাতে একটি সিন্ডিকেট উঠেপড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সংস্থাটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা অপকর্ম, ঘুষ বাণিজ্য ও লুটপাটের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় ওই সিন্ডিকেটের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন নীতিনিষ্ঠ এই কর্মকর্তা। ফলে সরকার যখন তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব দেয়ার কথা ভাবছে, তখনই তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে অভিযোগ তোলার পাঁয়তারা চালাচ্ছে পক্ষটি।
তবে সম্প্রতি তিতাস কর্তৃপক্ষ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব রটানো ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের লোকজনকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য সরবরাহকারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার তিতাসের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ এমডি পদে দায়িত্ব নেয়ার ২১ মাসের মধ্যেই ৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৮৬টি গ্যাসের চুলা, ৫১৫টি শিল্প, ৫২৯টি বাণিজ্য, ১৭৯টি ক্যাপটিভ ও ৫৪টি সিএনজি গ্রাহকের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এ ছাড়া ৭৪৪ দশমিক ৪১ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ করেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই মেয়াদে তিনি ৫ জনকে বরখাস্ত, ১৪ জনকে সাময়িক বরখাস্তসহ মোট ১৮৯ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন। ওই ২১ মাসের মেয়াদে এক হাজার ৫০ জনকে বিভিন্ন শাখায় বদলিও করেন তিনি।
এ ছাড়া ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে মোট ৪০৪ দশমিক শূন্য ৬ কোটি টাকা আদায় করা হয়।
তিতাস গ্যাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের এসব কঠোর সিদ্ধান্তে নাখোশ হন তিতাসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। অবৈধ সংযোগদানে জড়িত ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা এর পরই তার বিরুদ্ধে তৎপর হয়ে ওঠেন।
তারা নামে-বেনামে নানা ধরনের অভিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠান। সেগুলো বিভিন্ন সাংবাদিকের কাছে সরবরাহ করে ভিত্তিহীন ও অসত্য খবর প্রকাশের মাধ্যমে তার তৃতীয় দফার নিয়োগ বাতিল করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন তিতাস গ্যাসের একটি সংযোগকে ঘিরে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগের পাশাপাশি একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে তিতাস গ্যাসের সংযোগ প্রদানসহ নানাবিধ অনিয়ম’ খবরের বিপরীতে তিতাস গ্যাস টিঅ্যান্ডডি কো. লি.-এর বক্তব্য হচ্ছে- যেকোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংযোগ প্রদান করা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করার সংবাদটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার।
তিতাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানান, ভিত্তিহীন অভিযোগগুলো তদন্তাধীন। তার পরও কুচক্রীমহল বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছে তিতাসের পক্ষ থেকে।
উল্লেখ্য, আব্দুল লতিফ নামে এক ব্যক্তির মিথ্যা অভিযোগ সামনে এনে চক্রটি তার নিয়োগ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ভুক্তভোগী দাবিদার আব্দুল লতিফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে তিতাস গ্যাস কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে যাদের স্বার্থহানি হয়েছে। সেই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা কল্পিত অভিযোগ ও অপপ্রচার চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়ে তিতাস গ্যাস নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সরকারের সাফল্য ম্লান করার অপচেষ্টায় রয়েছে সরকারবিরোধী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরাই আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সামাজিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কর্মময় জীবনে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। তাই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি।’