সরকারের নানা উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ এদেশের মানুষ দুই বেলা পেটভরে ভাত খেতে পারছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে সবাইকে আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনা পয়সায় ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি, মানুষকে শিক্ষা এবং কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়ায় তারা দেশে-বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে, কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, যেন ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে পার্থিব শিক্ষা নিয়ে সবাই নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে, সে ব্যবস্থাটাই আমরা করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩-এর জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মা-বাবা হারিয়ে যখন এদেশের মাটিতে ফিরে আসি সেই চেনামুখগুলো পাইনি, পেয়েছি বনানী কবরস্থানে সারি সারি লাশ। তবে, পেয়েছি দেশের মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাস। যা আমাকে প্রেরণা যুগিয়েছে। এজন্য আমি কোনো কিছুতেই ভয় পাই না।’
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাপ্রাপ্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ১৮ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। হতদরিদ্র (শতকরা) ২৫ ভাগ থেকে ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আগামীতে বাংলাদেশে আর একটি মানুষও হতদরিদ্র থাকবে না। প্রতিটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘দেশের একটা মানুষও ভূমিহীন, গৃহহীন থাকবে না। আমাদের হিসাবে আর মাত্র ১১ হাজার ঘর বাকি আছে। এরপর আর কেউ গৃহহীন থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।’
‘জাতির পিতা আমাদের এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং আজকে আমরা বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছি। সে মর্যাদা নিয়েই মাথা উঁচু করে আমরা চলতে চাই।’
এ প্রসঙ্গে তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তার সরকার, দল ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ এনে বদনাম দেয়ার প্রচেষ্টাকে মিথ্যা প্রমাণের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমাদের বদনাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বলেছিলাম এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং তারাও কোনো দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেনি।’
‘বরং নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে প্রমাণ করেছি—আমরা কারও মুখাপেক্ষী নই, আমরা আমাদের এই দেশকে স্বাধীন করেছি এবং আমাদের কাজ আমরা নিজেরাই করতে পারি। আর এই একটা সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে।’
দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারকে সাহায্য করার জন্য সবাইকে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে আপনাদের (আলেম-ওলামাদের) সহযোগিতা চাই।’
‘আমি আপনাদের সবাইকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি, যেন আমাদের সন্তানরা বিপথে যেতে না পারে।’
প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামাদের সবার মাঝে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী ছড়িয়ে দিতে বলেন, যেন কেউ কাউকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পথে বিচ্যুত করতে না পারে এবং ইসলামের বদনাম করতে না পারে। কেননা ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং সর্বদা শান্তির কথা বলে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী, তারা সন্ত্রাসী। তারা কোনো ধর্ম, দেশ বা জাতি গোষ্ঠীর নয়। তাই সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান ইজ্জতটা রক্ষা করবেন। কেউ যেন এই বিপথে না যায়। সন্তানের নিয়মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়টা এবং কার সঙ্গে মিশছে সে বিষয়টা আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম, সেই ধর্মের সঙ্গে সামান্য মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য কেন সন্ত্রাসী নামটা যুক্ত হবে? সত্যিকারের যারা ধর্মে বিশ্বাসী তাদের জন্য এটা খুব কষ্টদায়ক। কাজেই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এই সমস্ত কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলের ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের দোয়া চাই এবং আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন বিপথে না যায় সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।’
‘নানা ধর্মের লোক এই বাংলাদেশে আছে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এটা আমাদের নবী করীম (সা.)-এর শিক্ষা, আমরা সেভাবেই চলবো। চূড়ান্ত বিচার বা শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। কাজেই কে কোন ধর্মের, কে হিন্দু না মুসলমান না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান না কাদিয়ানী তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।’
বিচারের ভার নিজেদের হাতে তুলে না নিয়ে বরং আরও বেশি সংখ্যক মানুষ যেন ইসলামের ছায়াতলে আসে সেজন্য সবার প্রচেষ্টা থাকা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
‘এই যে কোমলতি ছেলেদের মাথাগুলো খারাপ করে দিয়ে তাদের বিপথে চালানো, তাদের জীবনটাকে ধ্বংস করা, সুইসাইড অ্যাটাক করে মানুষ মারা- এটা তো ইসলাম ধর্মে মহাপাপ, গোনাহের কাজ। সুইসাইড করলে তো কেউ বেহেশতে যাবে না এটাই তো বলা আছে।’
কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুইসাইড (আত্মহত্যা) করে মানুষ হত্যা করে কোন বেহেশতে যাচ্ছে তারা? এই বিপথ থেকে তাদের সরাতে হবে। একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে বদনাম দেওয়া হয়। এই বদনামের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে বিজয়ী পাঁচজন হাফেজের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থের চেক এবং সনদ তুলে দেন। তারা হচ্ছেন- প্রথম হাফেজ আফফান বিন সিরাজ, দ্বিতীয় হাফেজ মো. ওসমান গণি, তৃতীয় হাফেজ মো. আবু জাফর শাকিল (দৃষ্টি প্রতিবন্ধী), চতুর্থ হাফেজ মো. খালিদ সাইফুল্লাহ এবং পঞ্চম হাফেজ মো. মোতাসিম বিল্লাহ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যার মধ্যে রয়েছেন সুফী মো. মিজানুর রহমান এবং হযরত মাওলানা সালাউদ্দিন নানোপুরী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশের দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আবুল কালাম আজাদ।
পুরস্কার বিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করি, তোমরা পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী ধারণ করে নিজেকে ও সমাজকে আলোকিত করবে। সমাজ থেকে কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে অবদান রাখবে এবং আদর্শ সমাজ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন খাঁটি মুসলমান। তিনি যেমন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি তেমনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।’
‘জাতির পিতা তাবলিগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী কওমি মাদ্রাসা জন্যও জমি প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তেলাওয়াতের প্রচলন করেন এবং আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন এবং ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন।’
মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে বঙ্গবন্ধু ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে।’
আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করি। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছে। কাওমি মাদ্রাসার ডিগ্রির সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করেছে, দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমান প্রদান করেছে। যাকাত তহবিল ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ এবং ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দুস্থ এবং আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ৫৬৪টি মডেল মসজিদ কাম ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এ যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট আজ সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দোহায় ২২ ও ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় এবারের আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান।’
চার দিনের এ সফর চলাকালে তিনি কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চলতি বছরে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এসব চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
আজ সোমবার সকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালসমূহ সুষ্ঠু ও যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালনার লক্ষ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। তবে আশা করি, বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০টি হাসপাতাল যৌথভাবে পরিচালনার জন্য রেলপথ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, আজ সমঝোতা স্মারক সই হলেও হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দিতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। বর্তমানে শুধুমাত্র রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এই হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ আলোচনা করেছে খেলাফত মজলিস।
সকালে ঢাকার সংসদ ভবনস্থ এল.ডি হলে সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ছাড়াও কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন দলটির মহাসচিব জালাল আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী।
আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, সংস্কার কমিশনগুলো গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের অধিকার নিশ্চিত এবং দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করা। আর যেন কোনো অবস্থাতেই ফ্যাসিবাদী শাসন ফিরে না আসে। পাশাপাশি জনগণ যেন অনুধাবন করতে পারে যে নাগরিক হিসেবে তার সকল অধিকার সুরক্ষিত আছে।
তিনি আরো বলেন, আর যেন কেউ গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়৷ মানুষ তার জীবনাচরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয়৷ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করতে পারে।
আলোচনার ধারাবাহিকতায় আজ বিকেল তিনটায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠক করবে জাতীয় গণফ্রন্ট।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালসমূহে এখন থেকে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পাশাপাশি দেশের সাধারণ জনগণও চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন।
আজ সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: ফাহিমুল ইসলাম ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো: সাইদুর রহমান নিজ নিজ দপ্তরের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
সমঝোতা স্মারকের শর্ত মোতাবেক, বাংলাদেশ রেলওয়ের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হাসপাতালসমূহ রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেলপোষ্য ও রেলওয়ের যাত্রীসাধারণের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জন্য চিকিৎসা সুবিধা উন্মুক্তকরণ এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সাথে যৌথভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করবে।
এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী রেলপথ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রেলপোষ্য ও যাত্রী সাধারণের চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল সুযোগ-সুবিধা পূর্বের ন্যায় বহাল থাকবে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত ইনভেন্টরি কমিটি কর্তৃক প্রস্তুতকৃত তালিকা অনুসারে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ হাসপাতালের সকল অস্থাবর সম্পত্তি বুঝে নিবে এবং এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন ও বিয়োজনের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
রেলওয়ে হাসপাতালে বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ না থাকায় উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিতকল্পে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংযুক্তিতে পদায়নে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সমঝোতা স্মারকের আওতায় রেলওয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর সেবা প্রদান ফি বাবদ আদায়কৃত অর্থের ব্যবস্থাপনা সরকারি হাসপাতালসমূহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধি-বিধান অনুযায়ী হবে।
হাসপাতালসমূহের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকবে। প্রতিটি হাসপাতালের জন্য পৃথক পৃথক স্থানীয় যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটিও থাকবে। এই ব্যবস্থাপনা কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি সরকার কর্তৃক আদেশের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার প্রথম মামলা হিসেবে রাজধানীর পুরান ঢাকার চানখারপুলের ঘটনায় তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এ ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ আটজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ১৯৫ দিনের মধ্যে এই তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তশেষে ৯০ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
এ মামলার আসামির হলেন— ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম, মো. ইমরুল সাবেক এসি রমজান ডিএমপি, আরশাদ হোসেন সাবেক পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন শাহবাগ থানা, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাদ হোসেন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘চানখারপুলে গত ৫ আগস্ট ৬ জন নিহত হন। সেই গণহত্যার তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। রবিবার (২০ এপ্রিল) তদন্ত সংস্থা আমাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যদিয়ে জুলাই আগস্টের গণহত্যার প্রথম কোনো ঘটনার তদন্তের কাজ শেষ হয়েছে। এ ঘটনায় ডিএমপির সাবেক কমিশনারসহ আটজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, যারা জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগে এবং যারা সরাসরি গুলি করেছেন বিভিন্ন ভিডিওয়ের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে। এ কারণে এই আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পুলিশের আইজিপির সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে।
এ মামলার চারজন আসামি পলাতক রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৪) নিজ ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ ও নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখা।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবির, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি শাখার সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রাইম এশিয়ার শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ডে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। অপ্রীতিকর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীকে জীবন দিতে হলো, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও অগ্রহণযোগ্য। এই ঘটনায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করে।’
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে নেতারা বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানতে পেরেছি, নিহত পারভেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে নাশতা করছিলেন। এ সময় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী প্রাইম এশিয়ার ইংরেজি বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে সেখানে আসেন। ওই দুই ছাত্রীকে ঘিরে ঠাট্টা-তামাশা ও হাসাহাসি থেকে বিরোধের সূত্রপাত হয়। পরে শিক্ষকরা বিষয়টি মীমাংসা করলেও কিছু শিক্ষার্থী পারভেজকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন এবং একপর্যায়ে তাকে ছুরিকাঘাত করা হলে তার মৃত্যু হয়।’
নেতারা আরও বলেন, ‘ঘটনা যাই ঘটুক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও দেশে আইন আছে। বিচারের মাধ্যমে ঘটনার সুরাহা করা যেত; কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা প্রত্যাশা করি, এই মর্মান্তিক ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় কেউ লিপ্ত হবেন না।’
নেতারা বলেন, ‘সমাজে ক্ষমতাকেন্দ্রিক ও অনৈতিক এক মূল্যবোধ গড়ে উঠছে, যেখানে পেশিশক্তির প্রদর্শন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নৈতিক অবক্ষয়কে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করার এক বিপজ্জনক সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করছে। এই হত্যাকাণ্ড সেই বিকৃত সংস্কৃতিরই এক নির্মম প্রতিফলন। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের সমাজে নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা এবং আইনের শাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন আজ তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
কমিশনের সদস্যরা দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ কথা জানান।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ১৭ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে, বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি শ্রম সংস্কার কমিশন গঠন করে।
কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন- শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. মাহফুজুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র টিইউসি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সভাপতি তপন দত্ত, বাংলাদেশ লেবার কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এডভোকেট একেএম নাসিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি এম কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আখতার চৌধুরী, আলোকচিত্রী ও শ্রমিক আন্দোলনের সংগঠক তাসলিমা আখতার এবং একজন ছাত্র প্রতিনিধি।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় আটজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২০-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহতের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির গতকাল রোববার বনানী থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সরোয়ার।
ওসি জানান, সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
২৪ বছর বয়সি জাহিদুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকায়। গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে নাস্তা করার সময় তার ওপর হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে ওসি বলেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্র হঠাৎ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার ওপর হামলা চালায়।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মামুন অপু গণমাধ্যমকে বলেন, সকাল ১০টার দিকে জাহিদুল এবং আরও কয়েকজন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলেন, ঠিক তখন আরেক দল শিক্ষার্থী এসে বলেন, তারা নাকি নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে হাসাহাসি করছিলেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি সমাধান হয়। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরেই জাহিদুল ছুরিকাঘাতে নিহত হন।
জাহিদুলের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ভাই শান্ত-শিষ্ট স্বভাবের ছিল। কখনো কোনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াত না। আমরা বুঝতেই পারছি না কেন তাকে হত্যা করা হলো। আমরা এর বিচার চাই।’
এদিকে, ছাত্রদল গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জাহিদুলকে দলীয় কর্মী দাবি করে তাকে হত্যার বিচার ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
নির্বাচন কমিশনকে এখন রুটিন মাফিক কাজ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ আসা পর্যন্ত অপেক্ষার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশগুলো অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের পর জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এই দাবিসহ কমপক্ষে ৯টি দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠক শেষে দলটির মুখপাত্র ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এসব কথা জানান। তাদের অপর দাবিগুলো হচ্ছে মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা দেওয়ার সুযোগ বাতিল করে কেবল সশরীরে জমা দেওয়া, সব দলের নিবন্ধন নবায়ন, দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ করা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা ইত্যাদি।
একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই সংস্কার বাস্তবায়ন করে নির্বাচন করা সম্ভব বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সিইসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয় ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এতে উপস্থিত ছিলেন- এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, আইন সংস্কার, নিবন্ধনের সময়সীমা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন দলটির প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে এনসিপির সার্বিক আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেকগুলো কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, এটা ইসি থেকে এসেছে। এজন্য আমরা বলব- কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন- সে বিষয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। কিন্তু রোডম্যাপ বা সরকার থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসার আগেই যখন তারা নিজেদের থেকে কথা বলে থাকেন সেজন্য আমরা সন্দেহ পোষণ করি।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, ১৭ এপ্রিলের চিঠিতে সংস্কারের বিষয়গুলো ফোকাস করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন আসে, ইসি যেন সেদিকে ধাবিত হয়- জনদাবির মুখে সেটা যেন হয় তা জানিয়েছি।’ বৈঠকে ভোটের সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা স্পেসিফিক (সুনির্দিষ্টভাবে) বলেছিলাম, সিইসি ও ইসি নিয়োগে ২০২২-এর আইন রয়েছে আমরা পূর্বে জানিয়েছিলাম, আইনটা অবৈধ। অন্যান্য দলও জানিয়েছে অবৈধ। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান (ইসি)। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট আসার পরে যদি উনারা থাকতে পারলে থাকবে; না থাকতে পারলে থাকবে না। এটা ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর নির্ভর করবে। কার প্রতি কোনো অবজেকশন নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী হোক। যারা কমিশনার রয়েছেন, সে বিষয়ে না, আমরা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি (ইসিকে)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আকারে সরকার, ঐকমত্য কমিশন থেকে ডিসিশন আসে সে বিষয়ে ইসি পুনর্গঠন হলে আমরা দেখব। যদি না হয় তখন এ বিষয়ে কমেন্ট করব।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে এনসিপি। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্ট যখন ফাইনাল হয়ে আসবে, তখন সরকার প্রতিটি সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বলেছি। ফাইনাল হতে তা বাস্তবায়নের জন্য বলেছি।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ইসি নিত্যকাজের কাজগুলো করতে পারে। অভ্যন্তরীণ কাজগুলো করতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের ফুলফেইজের কাজে যাবে সে বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের যে ফাইনাল রিপোর্ট আসবে, তার মতো হওয়া উচিত বলে মনে করি। নতুনভাবে দেশে সুন্দর যাত্রা শুরু হবে। ডেমোক্রেটিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য ইলেকশন রিফর্ম অতি জরুরি। বর্তমানে যে প্রক্রিয়া রয়েছে, ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টটা আসার পরে, সিদ্ধান্তগুলো হওয়ার পরে সে অনুযায়ী ইসি পরিচালিত হয় তাহলে বাংলাদেশে সুন্দর নির্বাচন হবে। বর্তমান ব্যবস্থায় অনেক সংস্কার জরুরি। অনেক বিষয়ে ইসি সম্মত হয়েছে, আইনগুলো ঐকমত্য কমিশনের হয়ে আসতে হবে।’
এই মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা তাদের জানিয়েছিলাম, সংস্কারের প্রত্যেকটি রিপোর্টের পাতা বাই পাতা, ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড, প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আগামীতে একটি নির্বাচনে যেতে হবে।...সংস্কার সুপারিশের প্রতিটি লাইন এসেছে সেগুলো নিয়ম, নীতির মধ্য দিয়ে প্রায়োগিক আকারে বাংলাদেশকে সে দিকে যাত্রা শুরু করতে হবে। সিইসি একমত হয়েছেন। ঐকমত্য কমিশনের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে, না হলে আমরা আস্থা পোষণ করতে পারব না। নির্বাচন কমিশন ১৫ বছরে একটা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং হয়েছে অনেক। নতুন বাংলাদেশে এটা দেখতে চাই না।’
এছাড়াও বিগত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী সাংবাদিকদের জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
এনসিপির এই নেতা জানান, ‘মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসি থেকে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেওয়া, প্রার্থীদের হলফনামা তদন্ত করে তার সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনী সহিংসতা রোধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বন্ধ করা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে তা মনিটরিং করার কথা তারা তুলে ধরেছেন। এগুলো বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব হবে না। এছাড়া একই নামে দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে, অফিস নেই অথচ দলের নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। তাই প্রত্যেকটা দলকে নতুন করে নবায়ন করা এবং সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়ন করতে তাগিদ দিয়েছি।’
রাজধানীর ওয়ারী হিয়ার স্ট্রিট এলাকায় নিজ বাসা থেকে এক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার দিবাগত রাতে জমজম টাওয়ার নামে একটি ভবনের পঞ্চম তলা একটি ফ্ল্যাট থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহতরা হলেন, মোহাম্মদ মুঈদ (৩৫) ও তার স্ত্রী আইরিন আক্তার (৩২)। পুলিশের ধারণা, স্বামীর মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করেছেন তার স্ত্রী। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
ওয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ওয়ারী এলাকার জমজম টাওয়ারের পাঁচতলায় ভাড়া থাকতেন এ দম্পতি। এরমধ্যে স্বামী মুঈদ দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাউছার আহমদ বলেন, মো. মুহিদ ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। কয়েক দিন আগে হয়তো তিনি মারা গিয়েছেন। কারণ, তার মরদেহ অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একই বিছানায় তার স্ত্রী রত্নার মরদেহ পড়েছিল। হয়তো স্বামীর মৃত্যুতে বিষণ্ন হয়ে মুহিদের স্ত্রী আইরিন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
পাশেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়। সেখানে লেখা ছিল- ‘বিয়ের পর আমার বাবা মা ও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। আমাদের দুজনের মরদেহ ঢাকায় কোনো সরকারি কবরস্থানে দাফন দিয়েন। আমাকে এবং আমার স্বামীকে বাড়িতে নেওয়ার দরকার নেই’।
বাসায় মালিক নুর হোসেন বলেন, এ দম্পতি পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে তার ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলেন। মুহিদ অসুস্থ শুনেছেন। তাই গত আগস্ট মাস থেকে ভাড়া দিতে পারছিলেন না। ফোনে গত বৃহস্পতিবার ভাড়া আনতে বলেছিলেন তারা। তবে ভাড়ার জন্য ফোন দিলেও তারা ধরেননি। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ওই বাসায় গিয়ে দেখতে পান ফ্ল্যাটের মূল দরজা বন্ধ। অনেক ডাকাডাকি করে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, মুঈদ কুমিল্লার তিতাস উপজেলার আড়াইকান্দি গ্রামের মোহাম্মদ মুসার ছেলে এবং স্ত্রী আইরিন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াজি বাড়ির জয়নাল আবেদীনের মেয়ে।
তারা আরও জানান, ‘দুজনের পরিবারের সাথে কোনো যোগাযোগ ছিল না। কারণ, তাদের বিয়ে কেউ মেনে নেয়নি’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে উত্তরায় র্যাব-১ সদর দপ্তর, নগরীর আগারগাঁওয়ে র্যাব-২ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি (সিপিসি) এবং ঢাকা সেনানিবাসের কচুক্ষেতে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বলপ্রয়োগ পূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম গত ১৫ বছরে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দায়ের করা মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে গতকাল রোববার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৮০০-৯০০টি জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ৩০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ২০০টি অভিযোগের তদন্ত প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আমাদের আরও সময় প্রয়োজন।’
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আরও দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করা হলে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৪ জুন দিন ধার্য করেন।
গতকাল শুনানি শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম জানান, ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার মাধ্যমে মামলাটি আমরা শুরু করেছিলাম। তার মধ্যে একজন গ্রেপ্তার আছেন। তিনি হচ্ছেন সাবেক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। এই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তদন্ত সংস্থার সদস্যরা চারটি ডিটেনশন সেন্টার ও গোপন কেন্দ্র খুঁজে বের করেছেন এবং সেখানে গুমের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের ম্যাটেরিয়াল উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে, যারা এই কাজ পরিচালনা করতেন তাদের নাম ঠিকানা বের করা হয়েছে এবং কীভাবে এই লাশগুলো সরিয়ে ফেলা বা নষ্ট করা হতো সেটার ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ অনেকাংশে জোগাড় হয়ে গেছে। বাদবাকি কিছু প্রমাণ জোগাড়ের কাজ এখনো চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে শত শত অভিযোগ আছে এবং কয়েকশ অভিযোগের মধ্যে থেকে বেশ কতগুলো গুমের ঘটনা তদন্ত প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে, সেগুলোর তদন্ত রিপোর্ট যেকোনো সময় আমরা হয়তো আদালতে দাখিল করতে পারব। এটার জন্য আমরা তিন মাসের সময় চেয়েছিলাম সেটি আদালত মঞ্জুর করেছেন। গুমের শতশত ঘটনাকে একত্রে করে একটি মামলা করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি মামলা ধরে ধরে আলাদা আলাদা করে তদন্ত করে দেওয়া চিন্তাভাবনা আমরা ও আমাদের তদন্ত সংস্থা করছে এবং তারা আশা করছেন খুব দ্রুতই আমরা তদন্ত রিপোর্টগুলো দিতে সক্ষম হব।
গণহত্যা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো দিন
এদিকে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন যেকোনো মুহূর্তে দাখিল হতে পারে বলেও জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জুলাই আগস্ট গণহত্যায় যে মামলা দাখিল হয়েছে তাতে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার তদন্ত প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত পর্যায় আছি বলে আমরা আদালতকে জানিয়েছি। তবুও অধিকতর সতর্কতা ও স্বচ্ছতা অবলম্বন করার জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছি। আদালত সেটা মঞ্জুর করে আগামী ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেছেন। কিন্তু আমরা আপনাদের এটা জানাতে পারি যে কোনো মুহূর্তে প্রতিবেদনটি দাখিল হয়ে যাবে। সেটা আগামী সপ্তাহেও হতে পারে, যেকোনো সময় হতে পারে।
সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ যেমন সিসিটিভি ফুটেজ, ক্যামেরা কিংবা ড্রোন ফুটেজ আমরা সংগ্রহ করেছি।
তদন্তের একেবারে শেষপর্যায়ে এসে মোটামুটি এটা বোঝা যাচ্ছে যে এসব অপরাধ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে, সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির মাধ্যমে হাসিনা তার মন্ত্রী পরিষদ, পুলিশ বাহিনীসহ সবাইকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এবং তারা এই পরিকল্পনা সাজানো থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করেছে।
জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জনকে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদের মধ্যে ছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান ফজলুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আজ তাদের মামলায় শুনানি হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের আদালতে হাজির করা হলে পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং প্রাক্তন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (এনটিএমসি) প্রাক্তন পরিচালক মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আজ তাকে শুনানির জন্য ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
সূত্র: বাসস
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল রোববার নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা শেষ হওয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু প্রায় ২০টি নতুন রাজনৈতিক দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সময় বাড়িয়ে আগামী ২২ জুন পর্যন্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।
গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
সচিব বলেন, ইসির গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা শেষ হয়েছে গতকাল। এর মধ্যেই বিভিন্ন দল বিভিন্ন মেয়াদে নিবন্ধনের এই সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২২ জুন পর্যন্ত দল নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন দল নিবন্ধনে আগ্রহীদের আবেদন আহ্বান করলে আজ পর্যন্ত সাতটি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে বলে জানান সচিব।
জানা যায়, আলোচনায় থাকা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি নিবন্ধন আবেদনের সময় বাড়াতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ প্রতিশ্রুতি নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি।
এরইমধ্যে আদালতে রিট করায় ১৮ মার্চ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জন্য দল নিবন্ধনে গণবিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে। এরপরই মূলত ভাটা পড়ে নিবন্ধন আগ্রহীদের। গণবিজ্ঞপ্তি জারির দুই সপ্তাহের মাথায় ২৫ মার্চ ‘আওয়ামী লিগ’ নামে একটি দলের নিবন্ধন আবেদন প্রথম পান বলে জানান ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ।
আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা করেছেন পলিটেকনিকের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার দুপুরে শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ থেকে এ আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
সমাবেশে শিক্ষার্থীদের হাতে দাবি-দাওয়া সংবলিত বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। এ সময় ‘আমি কে তুমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারি’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘ এক হও এক হও, পলিটেকনিক এক হও’সহ নানা স্লোগান দেন তারা।
এর আগে সকাল থেকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে তারা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে গিয়ে সমাবেশে যোগ দেয়।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি
জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদোন্নতির হাইকোর্টের রায় বাতিলসহ ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন। মামলা বা রিট দায়ের করার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা এবং ২০২১ সালের বিতর্কিত ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধি অনতিবিলম্বে বাতিল করা।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চার বছর মেয়াদি অব্যাহত রাখা এবং মানসম্মত সিলেবাস ও কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের আদলে প্রণয়ন করা।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (দশম গ্রেড) পদে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাস করা শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ আবেদন করতে পারবে না। এ পদ সংরক্ষিত করতে হবে। প্রাইভেট সেক্টরে ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা ছাত্রদের ন্যূনতম দশম গ্রেডের বেসিক অর্থাৎ ১৬ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিটি প্রকাশ করে কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, উপ-পরিচালক, অধ্যক্ষ ও দায়িত্বে থাকা সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবলকে দায়িত্ব/নিয়োগ দেওয়া।
কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের বিতর্কিত সকল নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল সকল শূন্য পদে পলিটেকনিক ও টিএসসিতে দক্ষ শিক্ষক ও দক্ষ ল্যাব সহকারীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা।
ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য আধুনিক বিশ্বের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার গেজেট পাস করতে হবে। বর্তমানে প্রস্তাবিত চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, নড়াইল, খাগড়াছড়ি) শতভাগ সিট নিশ্চিত করা।