১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি এখনো জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনিযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের দেশের উন্নয়নের গতিধারা ধরে রাখতে শপথ নিতে বলেছেন।
তিনি বলেন, উন্নয়নের এই ধারাকে থামানো চলবে না। কারণ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি, যারা কখনোই আমাদের স্বাধীনতা চায়নি; তারা আগের মতোই ষড়যন্ত্র করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চিন্তা করি না, কারণ আমার জীবন নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই।’
সোমবার রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একাডেমিতে ১২৭তম, ১২৮তম ও ১২৯তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও সরকার গঠন করার পর আমার বাবার মতো বলেছিলাম, আমি জনগণের সেবক।’ তিনি বলেন, ‘এ দেশের মানুষের সেবা করাই আমার একমাত্র কাজ। মানুষকে সুন্দর জীবন দেয়া, সেটাই আমার একমাত্র কাজ। সেইভাবে কিন্তু আমি এই দেশটাকে পরিচালনা করছি।’
জাতির পিতার একটি ভাষণ থেকে উদ্ধৃত করে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী ভাইয়েরা, আপনাদের জনগণের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে হবে। জাতীয় স্বার্থকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এখন থেকে অতীতের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিবর্তন করে নিজেদের জনগণের খাদেম বলে বিবেচনা করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একজন মা যেমন একটি সংসারকে আগলে ধরে সবার ভালো দেখতে চান, আমি কিন্তু সেই মানসিকতা নিয়ে দেশটাকে পরিচালনা করে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছি। এখান থেকে যেন আর আমাদের পিছিয়ে যেতে না হয়। সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়। মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির হাত থেকে যেন মানুষ মুক্তি পায়। এগুলো সমাজটাকে নষ্ট করে, একেকটা পরিবারকে নষ্ট করে। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া একান্তভাবে দরকার।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে যেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’
প্রধানমন্ত্রী অপচয় রোধের পাশাপাশি অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে কৃচ্ছ্র সাধন করারও পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ ছিল। তা আমরা ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামাতে পেরেছি। অন্তত আরও ২ থেকে ৩ শতাংশ আমাদের নামাতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘অতি দারিদ্র্যের হার যা ২৫ দশমিক ৯ ভাগ ছিল, তা আমরা এখন ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে এনেছি। কিন্তু আমরা চাই না বাংলাদেশে একজন মানুষও অতি দরিদ্র থাকুক। এটাকে একেবারে শূন্যের কোটায় আমরা নামিয়ে আনতে চাই। কাজেই কোথায় এখনো এ ধরনের মানুষ আছে, আমরা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেব।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের ভুলে গেলে চলবে না যে, তাদের বেতন-ভাতা আসে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ও গণমানুষের পকেট থেকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সব বেতন-ভাতা আসে সেই টাকা থেকে, যা দেশের জনগণের কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়। তাই, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা সবার কর্তব্য। এই বিষয়টি আপনাদের সর্বদা মাথায় রাখতে হবে।’
তিনি নবীন অফিসারদের বলেন, ‘মানুষের সেবা করা তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ হওয়া উচিত।’
শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস এবং দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু যে কতটা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন- তা জানতে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ১৯৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর লেখা বইয়ের ভলিউম পড়ার জন্য নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়া চীন’ বইটি পড়ারও আহ্বান জানান।
কোনো ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, সংস্কারপ্রক্রিয়ায় এ প্রস্তাবের পক্ষে একমত নয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি মনে করছে, টানা দুবারের বেশি না পারলেও বিরতি দিয়ে কেউ আবার প্রধানমন্ত্রী হতে চাইলে, সে সুযোগ থাকতে হবে। এটা সংকুচিত করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির এ অবস্থানের কথা জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের আলোচনার বিরতিতে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মতো বৈঠক শুরু হয় বিএনপির।
আলোচনায় বিএনপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা হলেন, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিশনের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে দলের অবস্থান স্পষ্ট। জনগণ যদি কোনো ব্যক্তিকে দুই মেয়াদের পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে চায়, সেই সুযোগ সংকুচিত করা উচিত হবে না। আমরা বিষয়টি উন্মুক্ত রাখতে প্রস্তাব দিয়েছি।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, একই ব্যক্তি সরকার প্রধান ও দলীয় প্রধান হতে পারবে না- এমন চর্চা আমরা দেখি না। যুক্তরাজ্যেও আমরা দেখি, পার্টি প্রধানই সরকার প্রধান। এটি গণতান্ত্রিক চর্চা। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলন হয় এবং নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রচলন করা যায়, তাহলে সেই ভোটে যারা ক্ষমতায় আসবে, মনে করতে হবে জনগণ তাদেরকে সেই ক্ষমতা দিয়েছে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের ক্ষেত্রে আমরা শুনেছি আস্থা বিল এবং অর্থ বিলের ক্ষেত্রে প্রায় সবাই একমত। রাষ্ট্র পরিচালনার সুবিধার্থে এবং সরকারের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করার স্বার্থে আমরা চারটা বিষয় এখানে উল্লেখ করেছি–অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধনী বিল, আস্থা ভোট এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন– এই চারটা বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাদের বক্তব্য এবং ভোট প্রদান করতে পারবে। তাতে তাদের সংসদ সদস্যপদ বিলুপ্ত হবে না।’
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারেন না। সেখানে বলা আছে, কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন বা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।
এই বিধানের কারণে খোদ সংসদেই গণতন্ত্র চর্চা ব্যহাত হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করে আসছেন রাজনীতির বিশ্লেষকরা। সেজন্য ৭০ অনুচ্ছেদ পুরোপুরি বিলোপের দাবিও জানিয়ে আসছে বিভিন্ন সংঠন। নির্বাচনে প্রার্থিতার বয়স নূন্যতম ২১ বছর করার প্রস্তাবনায় বিএনপির দ্বিমত প্রকাশ করেছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিছু কিছু সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্য থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ করা যায়, সবগুলোতে নয়। এক ব্যক্তি দল এবং সরকার প্রধান না হওয়ার প্রস্তাবনায় আপত্তি রয়েছে। এটি দলের স্বাধীনতা। গণতান্ত্রিক চর্চার জন্য অপশন থাকা উচিত।’
ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়ে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘আমরা এটার বিপক্ষে মতামত দিয়েছি। বিএনপি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগের অবস্থায় ফিরে যেতে চায়। তবে কমিশন তাদের প্রস্তাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা যুক্ত করতে বলেছেন। বিএনপি সেখানে একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদে নারী আসন ৫০ থেকে ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে বিএনপি একমত। কিন্তু এখন যেমন আছে, সেটা আগামী সংসদ পর্যন্ত বহাল থাকতে হবে। আগামী সংসদ গঠিত হওয়ার পর তাদের (নারীদের) কোন পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে ইন্টারনেট প্রাপ্তির বিষয়ে বিএনপি একমত জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হয় রাষ্ট্রকে। মৌলিক অধিকার বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার বিষয়টিও দেখতে হবে। তাই আমরা বলেছি, সংবিধানে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত না করে, যা রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে তাই করতে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়, তারপরও নির্বাচন আয়োজনের সময় তারা প্রয়োজনের খাতিরেই ৯০ দিনের জন্য অনির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্ব দিতে চান।
‘দিস ইজ ডকট্রিন অব নেসেসিটি। আমাদের পলিটিক্যাল হিস্ট্রিতে ও কালচারে দেখা গেছে উইথআউট কেয়ারটেকার গভার্নমেন্ট আমরা কোনো ইলেকশনই অবাধ, নিরপেক্ষ সুষ্ঠু করতে পারি না।’ ‘যতদিন পর্যন্ত আমরা সেই কালচারে উন্নীত হতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আমাদের নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকারের বিধানটা রাখা উচিত। এই ভোটের জন্য আমরা ১৫ বছর আন্দোলনও করেছি,’ যোগ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, রাষ্ট্রপতিকে কী কী বিষয়ে ক্ষমতায়িত করে আইন প্রণয়ন করা যায় সেসব কিছু বিষয়ে এবং নিয়োগের কিছু বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। সেগুলো নতুন আইন প্রণয়ন করে সংসদ প্রণীত করা যাবে। সেক্ষেত্রে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং রাষ্ট্রপতির আরো ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে।’
তবে ‘ন্যাশনাল কন্টিস্টিটিউশন কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবে বিএনপি একমত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা একটা নতুন ধারণা বাংলাদেশের পলিটিক্যাল কালচারে বা সংসদীয় কালচারে, যেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, উভয় কক্ষের স্পিকার এবং প্রধান বিচারপতিসহ আরও কয়েকজনের কথা বলা আছে। এই বডিটার হাতে রাষ্ট্রের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের ক্ষমতা–যেমন সব কমিশন, তিন বাহিনী প্রধান থেকে শুরু করে পিএসসি, দুদকসহ আরও যেসব সাংবিধানিক পদ আছে… এগুলো আমরা একমত নই।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, তাতে রাষ্ট্রের এক্সিকিউটিভ ফাংশনটাকে এত বেশি লিমিট করা হবে যে এক্সিকিউটিভ বা প্রধানমন্ত্রী যে নামেই ডাকি, তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা দায় হয়ে যাবে। অথচ দায়িত্বটা থাকবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগনের কাছে এবং সংসদে কাছে, অথচ তার কাছে তেমন কোনো পাওয়ার দেওয়া থাকল না।’
বিএনপি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর রাখা পক্ষেই মত দিয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কমিশনকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে চাই। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি। কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছি। গণতন্ত্রে মত-দ্বিমত থাকাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা বাকশালে বিশ্বাস করি না।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি নারী শান্তিরক্ষী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
আজ রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসংঘের শান্তি কার্যক্রমবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যাঁ-পিয়ের লাক্রোয়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।
বৈঠকে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি যা উৎসাহিত করি তা হলো শান্তিরক্ষা মিশনে আরও বাংলাদেশি নারীর অংশগ্রহণ।’
শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ তিন দেশের একটি। বর্তমানে বাংলাদেশের ৫,৬৭৭ জন শান্তিরক্ষী ১১টি সক্রিয় মিশনের মধ্যে ১০টিতে কাজ করছে।
জাতিসংঘ আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জানান, নারীদের শান্তিরক্ষায় সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে জাতিসংঘের একটি নীতিমালা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের নির্দিষ্ট কোনো ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না।’ তিনি উল্লেখ করেন যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষার সব ক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগে সমর্থন দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রয়োজনে বাংলাদেশ অতিরিক্ত সৈন্য ও পুলিশ পাঠাতে প্রস্তুত। তিনি জাতিসংঘের পিসকিপিং ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেম (পিপিআরএস)-এর র্যাপিড ডিপ্লয়মেন্ট পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুত পাঁচটি ইউনিটের কথা উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় সদর দপ্তর এবং মাঠপর্যায়ে বাংলাদেশি নেতৃত্ব বৃদ্ধির পক্ষে মত দেন। জাতিসংঘ প্রতিনিধি বলেন, এ ব্যাপারেও তারা বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, শান্তিরক্ষী নিয়োগে জাতিসংঘের যাচাই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ কঠোরভাবে মেনে চলে এবং প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে আরও সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়, যাতে মানবাধিকার প্রতিপালন আরও জোরদার হয়।
প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আগামী ১৩ থেকে ১৪ মে জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নেবে।
মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষ, সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনা, বেসামরিক নাগরিক হতাহত এবং নাফ নদীুসংলগ্ন এলাকায় জীবিকা বিঘ্নিত হওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি সতর্ক করেন, এই অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে তা আরও অবনতি হয়ে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক উদ্যোগের আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা স্মরণ করে বলেন, তার এই সফর রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে নতুন করে আশা জুগিয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। এটা শুধু আমাদের পছন্দের খাবারই নয়, বরং হাজারও জেলের জীবন-জীবিকার মাধ্যমও। ইলিশ শুধু একটি মাছই নয় এই মাছ হচ্ছে বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির প্রতীক। কিন্তু এই মাছের ওপর নির্ভর করে দেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ। প্রতিদিন ভোর হলেই জেলেরা মেঘনা নদীতে ছুটে যান মাছ ধরার আশায়। জাল ফেলেন নদীতে। আর মনে মনে অপেক্ষা করেন রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে কি না। একসময় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। কালের আর্বতে ইলিশ যেন হারিয়ে গেছে। এর বড় কারণ হচ্ছে জাটকা নিধন। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নরসিংদীর মেঘনা নদীতে চলছে জাটক ধরার মহোৎসব। এসব জাটকা জেলেরা প্রকাশ্যে বিভিন্ন হাট-বাজারে এবং শহরের পাড়া-মহল্লায় অবাধে বিক্রি করছে। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
এমপি মার্কেট, নরসিংদী বড়বাজার, নতুন বাজার, বউ বাজার, হোসেন বাজার, করিমপুর বাজার, ভেলানগর বাজার, বটতলা বাজারে বসেছে জাটকার হাট। জেলার সর্বত্র জাটকা বিক্রি যেন এখন ওপেন সিক্রেটে পরিণত হয়েছে। প্রতি কেজি জাটকা ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাঝেমধ্যে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের টাক্সফোর্স ও নৌ-পুলিশ অভিযান চালালেও মৎস্য বিভাগের কোনো অভিযান নেই। জেলা পুলিশেরও জাটকার বিষয়ে কোনো তৎপরতা নেই বললেই চলে। অনেকটা ফ্রি-স্টাইলে জাটকা নিধন এবং ক্রয়-বিক্রয় চলছে। জাটকা রক্ষায় মৎস্য বিভাগের এমন ভূমিকায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সমাজের সচেতন মহল বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মেঘনা নদীতে ইলিশ সংকট দেখা দেবে। এতে করে জেলে পল্লিতেও অভাব দেখা দেবে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেঘনা নদীতে জেলেরা প্রকাশ্যে কারেন্টজাল দিয়ে জাটকা মাছ ধরছেন। এক শ্রেণির মৌসুমি জেলে ও ভাসমান আড়তদার সেজে ইলিশের উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করতে ব্যক্তির লাভের আশায় জাটকা ধ্বংস করছে। তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জাতীয় মৎস্য সম্পদের বারোটা বাজাচ্ছে। প্রতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে নদীতে সব ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ থাকলেও মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ জাল ফেলে জাটকাসহ ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছ শিকার করছেন জেলেরা।
বিষয়টি নিয়ে নরসিংদী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আজমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, গত ৮ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত জেলা মৎস্য বিভাগের আয়োজনে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হয়েছে এবং যথাযথভাবে লিফলেট ও মাইকিং করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রয়োজনীয় জনবল এবং অর্থ বরাদ্দ না থাকায় জোরদার অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে দাবি করলেও কর্তৃপক্ষ নীরব থাকায় নির্বিঘ্নে চলছে জাটকা নিধন। অন্যদিকে জাটকা সংরক্ষণ অভিযান সপ্তাহ পালন করা হলেও বাস্তবে অভয়াশ্রমে দেখা মেলেনি কোনো অভিযান। এ ছাড়া নেই কোনো জাটকা সংরক্ষণের প্রচারণা। নামমাত্র জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহের মিটিং দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন মৎস্য কর্মকর্তারা। জেলেদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, দৈনিক আয়নির্ভর জীবনযাপন করছেন। নিষিদ্ধ সময়ে খাদ্য-সহায়তা পান না জেলেরা। এ জন্য জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক মাছ শিকার করছেন।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একজন মহিলা। তাকে দিয়ে কোনো কিছুই করা সম্ভব না। কাজের প্রতি তার কোনো দায়িত্ব নেই বলেই চলে। আমরা চেষ্টা করছি তার পরিবর্তে এখানে একজন পুরুষ কর্মকর্তা দেওয়ার জন্য। সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাসকিরা বেগমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং এ প্রতিবেদককে বলেন, জাটকা ধরার ব্যাপারে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলতে নারাজ। এটা মৎস্য বিভাগের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমার বিরুদ্ধে যা পারেন লিখেন, এতে আমার কিছুই আসে যায় না।
সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ৪৫ জন মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, আমলার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে দায়ের করা মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য আগামী ২০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম আজ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে একথা জানান।
তিনি বলেন, এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির অভিযোগ আছে। আজ শুনানিতে এ মামলার ১৭ জন আসামিকে আদালতে উপস্থিত করা হয়েছিল। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে একটি রিপোর্ট আদালতকে প্রেরণ করা হয়েছে এবং জানানো হয়েছে যে আমাদের আরও দু'মাস সময় দরকার, আদালত তা মঞ্জুর করে আগামী ২০ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন। আমরা সময় বেশি চাইলেও তদন্ত রিপোর্ট আগেই তৈরি হয়ে যেতে পারে। কোনো কোনো মামলার তদন্ত রিপোর্ট খুব দ্রুতই পাওয়া সম্ভাবনা আছে।
জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১২ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৯ জনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
এদের মধ্যে ছিলেন- আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান ফজলুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনাইদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে আজ তাদের বিরুদ্ধে করা বিভিন্ন মামলায় সময় আবেদনের শুনানি হয়েছে।
এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীদের আদালতে হাজির করা হলে পরবর্তী শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রাজধানীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. সাব্বির আহমদ নির্ঝর (২৮), মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের পরিবেশ বিষয়ক উপ-সম্পাদক কামরুল আহসান নিশাদ (২৮), ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ওরফে কালু (২৫), ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাকিল হোসেন ওরফে জীবন (৩০), ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওহিদ এম আর রহমান (৫০), আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শামীম শাহরিয়ার (৫৮), ডেমরা থানার পাইটি ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস কাঞ্চন (৬৪), ৩৩ নম্বর বংশাল ইউনিট যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন মাছুম (৫৮), ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুল হাসান রতন (৩৪) ও উত্তর বাড্ডা এলাকার ছাত্রলীগ কর্মী রবিন দেওয়ান (২৯)।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ এ তথ্য জানানো হয়।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, ২০ এপ্রিল রাতে বংশাল এলাকা থেকে মোহাম্মদ হোসেন মাছুমকে ও মগবাজার এলাকা থেকে মো. হাবিবুল হাসান রতনকে গ্রেফতার করে ডিবি-লালবাগ বিভাগের পৃথক টিম।
এদিকে গতকাল দুপুর একটায় মিরপুর-১০ এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. সাব্বির আহমদ নির্ঝরকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগের একটি টিম।
একই দিন সকাল আনুমানিক ১০টায় ডিবি-গুলশান বিভাগের একটি দল অভিযান চালিয়ে উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে রবিন দেওয়ানকে গ্রেফতার করে।
ডিবি সূত্র আরও জানায়, গতকাল ডিবি-রমনা বিভাগ পৃথক অভিযান পরিচালনা করে দুপুর আনুমানিক ১২টায় ফুলবাড়িয়ার আনন্দ বাজার থেকে ইব্রাহিম খলিল ওরফে কালুকে ও সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে কামরুল আহসান নিশাদকে গ্রেফতার করে।
এছাড়া গতকাল সন্ধ্যা আনুমানিক ৭টায় ডিবি-মতিঝিল বিভাগের একটি টিম রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে শাকিল হোসেন ওরফে জীবনকে গ্রেফতার করে। একই দিন রাত আনুমানিক ১১টা ৫৫ মিনিটে ডিবি-তেজগাঁও বিভাগের একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে ওহিদ এম আর রহমানকে গ্রেফতার করে।
ডিবি সূত্রে আরও জানা যায়, শনিবার রাতে ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি টিম মগবাজার এলাকা থেকে শামীম শাহরিয়ারকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে ১৯ এপ্রিল রাতে ডিবি-ওয়ারী বিভাগের একটি টিম যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মো. ইলিয়াস কাঞ্চনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা নানাভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদির দেয়া মিথ্যা বক্তব্য ছড়াচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ নামক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদি নামে এক বক্তা দাবি করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন।’
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আলাউদ্দিন জিহাদির এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এটি ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা মূলত অধ্যাপক ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রের অংশ।’
স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের সংগঠন গ্রামীণ আমেরিকা ইসরায়েলকে ১ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে—এমন দাবি প্রথমে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়।
পরে এটি ধীরে ধীরে অন্যান্য কিছু অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পায়।
এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর রিউমার স্ক্যানার নামে একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করে।
তাদের তদন্তে জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম হামলার সময় বাংলাদেশে ছড়ানো হয় যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রচারণামূলক অনলাইন মিডিয়া বাংলা ইনসাইডার একটি ভুয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং তা ছড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি এই তথ্য সমর্থন করেছে। কিন্তু সেই সময় ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করে যে এমন কোনো বিবৃতি তারা প্রকাশ করেনি।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট-চেকাররাও রিউমার স্ক্যানারকে জানান, তারা এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন। একইসঙ্গে ইউনূস সেন্টারও নিশ্চিত করে যে এই বিষয়টি মিথ্যা, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের সব আলেম, ওলামা ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার এবং যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
উত্তরাধিকারে নারী ও পুরুষ-এর সমান অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জন প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
এসব সুপারিশে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় নারীদের কৃষিখাতে অন্তর্ভুক্তি সহজ করা, মৎস্যজীবী হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি ও বনজ সম্পদের ওপর নারীর অধিকার নিশ্চিত করা। সুপারিশে উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে প্রবেশ সহজ করা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। যুবনারীদের কর্মসংস্থানে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে তাদের উপযোগি শিক্ষা, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্য, আর্থিক সমর্থন ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রদান করা।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩ টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯ টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে ৯টি সভায় মিলিত হয়। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের সরকারি সফরে আগামীকাল কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে তিনি ‘আর্থনা সামিট-২০২৫’ -এ অংশগ্রহণ করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন বলে বাসসকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
আজাদ মজুমদার বলেন, সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন,জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।
দেশের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন।
এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন- ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় ‘আর্থনা সামিট’-এ কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।
এই সামিট একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল এই দুই দিনে সামিটে উপস্থাপনা, ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ছয় দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী।
কুমিল্লার কর্মসূচিতে ‘হামলার’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে সারা দেশে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে আজ প্ল্যাকার্ড হাতে ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ছয় দফা দাবি আদায়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
মিছিল-পরবর্তী এক ব্রিফিংয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে বলব, আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিন, আমরা রাজপথ ছেড়ে দেব। কুমিল্লার ভাইদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করুন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।’
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার, শিক্ষার্থীদের সরকার, বিপ্লবীদের সরকার। এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। কারিগরি শিক্ষা সেক্টরে যে বৈষম্য আছে, আমরা চাই সরকার তা দূর করুক।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে মশাল মিছিল করেন। তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেও সন্তুষ্ট না হয়ে ছয় দফা দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বর্তমান সরকারের দ্বারা সংস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তিনি বলেন, সংস্কারের যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। এই সংস্কার-পরবর্তী সংসদে পাস করতে হবে। সংস্কারের নাম করে নির্বাচন পেছানোর জন্য বাহানা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির বর্ধিতসভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে একই সময়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আরেকটি বর্ধিতসভা করে রাজধানীর সেগুনবাগিচার জেকে টাওয়ারে। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ। এই অংশটির কো-চেয়ারম্যান সুনীল শুভ রায়, সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিক, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা সভায় বক্তব্য দেন।
জি এম কাদের বর্ধিতসভায় আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারই করুক তা নির্বাচিত সংসদে পাস করতে হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই। দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সরকার যে সংস্কার করতে চাচ্ছে, তা কোনো দিনই কার্যকর হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংস্কার হচ্ছে নির্বাচন পেছানোর বাহানা। নির্বাচন পেছানোর কারণে তারা কত বড় গর্তে পড়বে, তা তারা বুঝতে পারছে না। সামনের দিকে মহাসংকট আসবে, পয়সা থাকবে না, বিদেশ থেকে মালামাল কিনতে হবে। আমাদের চাল পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই, ডিসেম্বরের কথা বলা হয়েছে, হতে পারে, আগে হলেও আপত্তি নেই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের সমস্যা সমাধানের প্রধান ধাপ মন্তব্য করে তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করে ফেলা দরকার। কেননা, এই সরকার ৬ মাস পরে আর দেশ চালাতে পারবে না। কারণ তাদের হাতে পয়সা থাকবে না।
তিনি বলেন, দেশে যেসব বিচার চলছে তাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না, বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন পেছানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বুঝতে পারছে না, নির্বাচন দীর্ঘায়িত করে দেশকে একটি ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করছে। এই সরকার দেশ চালাতে পারবে না।
জি এম কাদের বলেন, ‘এই সরকার বৈধ না, আবার অবৈধও না। কারণ আমরা মেনে নিয়েছি তাই মাঝামাঝি হয়ে গেছে। নির্বাচিত সরকারকেই বৈধ সরকার বলা হয়। এই সরকার নির্বাচিত নয় কিন্তু হাইকোর্ট এই সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মেনে নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টি (জাপা) কোনো সুবিধাবাদী দল নয় বলে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের নামে অনেক ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদের নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জানাশোনা কথাকে তারা ভুলভাবে তুলে ধরছেন। তাদের কথা হলো- আমরা সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী। কিন্তু আমরা বলতে চাই জাতীয় পার্টির সিংহভাগ মানুষ সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের স্বার্থে তারা সংগ্রাম করেছে। আগামীতেও তারা জনগণের পাশেই থাকবে।’
জি এম কাদের বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক সে বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হবে কি না! বর্তমান সরকার তার দলকে নিয়ে কী ভূমিকা নেবে, তা পরিষ্কার করা দরকার। একতরফা নির্বাচন সমস্যা সমাধান আনবে না। একতরফা নির্বাচন হলে আগের মতোই সমস্যা থেকে যাবে।
দেশের প্রতিটি বিভাগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বর্ধিতসভার প্রথম দিন গতকাল শনিবার রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আজ রোববার বর্ধিতসভায় অংশ নেবেন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগের নেতারা। জাতীয় পার্টির সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। এরপর নির্বাচন কমিশনে একাধিক দফায় আবেদন করে সময় বাড়িয়েছে দলটি। এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর বর্ধিতসভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, শেরিফা কাদের প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে ঝটিকা মিছিল করেছে। এই বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়টি সামনে আসছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে দুজনকে ধরেছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো রকম নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি এগুলো ভালোভাবে কন্ট্রোল করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে আরও উন্নত করা যায়।
থানা পরিদর্শনের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গা, খাওয়ার জায়গাগুলো কেমন এগুলো দেখার জন্যই মূলত আমরা পরিদর্শন করছি। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হলে তাদের থাকা এবং খাওয়ার জায়গার দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, নিচের সারির পুলিশ সদস্যদের সুবিধার জন্য একই বিভাগে পোস্টিংয়ের বিষয়ে চিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে আরও উন্নত হয় সেক্ষেত্রে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সদস্যদের বদলি করার পরও তারা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করছে না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বদলি হওয়ার পরেও তারা কর্মস্থলে যোগদান করছে না, এমন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা তালিকা দিন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আপনারা জানেন, ঢাকায় প্রায় সবাই নতুন।’
দাবিকৃত সময়ে নির্বাচন আদায় করতে ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। শরিকরা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথমে ১২ দলীয় জোট এবং পরে এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ ও তাদের দ্রুত বিচারের বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় ও আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে একমত হয়েছে বিএনপি।’
বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার।
এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ১২ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে উপস্থিত বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন একরাম প্রমুখ।
সন্ধ্যা ৭টায় একই স্থানে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন নজরুল ইসলাম খান। বৈঠকে এলডিপির নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অর্ন্তর্বতী সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে একমত হলেও এই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না বিএনপি। বরং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে তারা। বিএনপি চায় না এই সরকার ব্যর্থ হোক- এ বিষয়গুলোই ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপির সঙ্গে শেয়ার করেছেন নজরুল ইসলাম খান। জবাবে এলডিপি এবং ১২ দলীয় জোটের নেতারা বিএনপির সব সিদ্ধান্তের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান।
তবে, ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির শীর্ষ নেতারা নিজেদের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে দেশের চলমান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তাই চাপ তৈরি করে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহদাত হোসেন সেলিম জানান, ‘যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে একটা কনভেনশন করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো স্বৈরাচারের যেসব দোসর বসে আছে তাদের অপসারণ এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নানামুখী অপতৎপরতা মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি যেটা বলেছে, সেটা হলো এ বছরের ডিসেম্বর মাসটা হচ্ছে কাট অফ টাইম। এ বাইরে কোনো অবস্থাতেই যাওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হয়েছি। সরকার যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন না দেয়, তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়; এটা ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করা যায় এরকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।’
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এনসিপি। যে দলের প্রধান শক্তি ও ভিত্তির জায়গাটা হচ্ছে এই দেশের তরুণরা। সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের যে বক্তব্য ছিল - আমরা ফ্যাসিবাদের বিলোপ ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন সময় জনগণ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলন করেছে। আমরা ৯০ গণঅভ্যুত্থানের কথা বইয়ে পড়েছি; কিন্তু যে আকাঙ্ক্ষায় জনগণের রাস্তায় নেমে আসা সে আকাঙ্ক্ষাগুলো বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার ফলেই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তাই আমরা চাই, এবারের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়। জনগণের ভেতরে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এটা জাতির প্রতি আমাদের সবারই অঙ্গীকার।
সংস্কার বলতে এনসিপি মৌলিক সংস্কারের কথা বলছে জানিয়ে নাহিদ আরও বলেন, যে সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামো গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে। কারণ, আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ ঘটেছিল। আমাদের সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি কাঠামোর বীজ বুনেছিল। ফলে সেই রাষ্ট্রকাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে-ই ক্ষমতায় যাক তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে। সেই জায়গায় রাষ্ট্রের সংস্কার, সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এনসিপির ভাবনার কথা উল্লেখ করে দলটির আহ্বায়ক বলেন, এবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের জাতির সামনে, জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন, জুলাই সনদ প্রয়োজন। জাতির সামনে আমাদের সবাই সেই অঙ্গীকার রাখতে হবে যেন আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আরেকটি ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আসার সব রাস্তা আমরা বন্ধ করে সামনের দিকে এগোবো। একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান, রাষ্ট্রকাঠামো তৈরিতে আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করব।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এনসিপির পক্ষ থেকে থেকে অংশ নেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসেল।