বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগ করতে জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের বাস্তবসম্মত নীতি এবং দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং এ অঞ্চল ও এর বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে রপ্তানির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অটুট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা, বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীসহ বিশ্বের সকল বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগগুলো দেখার জন্য স্বাগত জানাই।’ খবর বাসস।
জাপানের টোকিওতে ওয়েস্টিন হোটেলের গ্যালাক্সি বল রুমে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের উদ্বোধনকলে এ আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃত বিনিয়োগ এখনও কম। আমরা জাপানের কাছ থেকে আরও বিনিয়োগ চাই। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেসিসিআই এবং এফবিসিসিআই’র অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) বিনিময় করা হয়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ও অ-আর্থিক নীতি এবং প্রণোদনা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, বিচক্ষণ শাসন ও নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।’
এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্টের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক এবং সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। আমি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, বাংলাদেশ আপনাদের জন্য প্রস্তত, এবং সেখানে গেলে আপনাদের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আপনারা ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সংস্থা এবং কাঠামো সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে বিশেষ করে সরকারি-বেসরকারি যৌথ অর্থনৈতিক সংলাপের (পিপিইডি) মতো উচ্চ পর্যায়ের যৌথ প্ল্যাটফর্ম রয়েছে।’
বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশীদার হতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই আপনারা সবাই আমাদের উন্নয়ন ও অর্জনের অংশীদার হোন। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুন। আমরা নিশ্চিত যে, আপনার বিনিয়োগ আপনাকে ব্যাপক সাফল্য এনে দেবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি দ্রুতই জাপান আমাদের নতুন দেশকে স্বীকৃতি দেয়। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের অক্টোবরে জাপান সফর করেন এবং দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করেন।’
অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল-ইসলাম। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া জাপানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী নিশিমুরা ইয়াসুতোশি, জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেইটিআরও) চেয়ারম্যান ইশিগুরো নোরিহিকো, জাপান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেসিসিআই) কেন কোবায়াশিসহ জাপান ও বাংলাদেশের সিইও এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি ও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদির দেয়া মিথ্যা বক্তব্য ছড়াচ্ছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে আজ এক বিবৃতিতে এ দাবি করা হয়।
সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ নামক ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি মুফতি আলাউদ্দিন জিহাদি নামে এক বক্তা দাবি করেছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন।’
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আলাউদ্দিন জিহাদির এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এটি ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘এ মিথ্যা ও বানোয়াট প্রচারণা মূলত অধ্যাপক ইউনূস ও তার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে চলমান ষড়যন্ত্রের অংশ।’
স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থাগুলো জানিয়েছে, অধ্যাপক ইউনূসের সংগঠন গ্রামীণ আমেরিকা ইসরায়েলকে ১ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে—এমন দাবি প্রথমে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়।
পরে এটি ধীরে ধীরে অন্যান্য কিছু অনলাইন পোর্টাল ও সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশ পায়।
এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর রিউমার স্ক্যানার নামে একটি ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা বিষয়টি তদন্ত করে।
তাদের তদন্তে জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম হামলার সময় বাংলাদেশে ছড়ানো হয় যে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইসরায়েলকে এক হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
তদন্তে আরও উঠে আসে, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রচারণামূলক অনলাইন মিডিয়া বাংলা ইনসাইডার একটি ভুয়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং তা ছড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয় যে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতি এই তথ্য সমর্থন করেছে। কিন্তু সেই সময় ইসরায়েলি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও রিউমার স্ক্যানারকে নিশ্চিত করে যে এমন কোনো বিবৃতি তারা প্রকাশ করেনি।
এ ছাড়া ইসরায়েলি সাংবাদিক ও ফ্যাক্ট-চেকাররাও রিউমার স্ক্যানারকে জানান, তারা এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন। একইসঙ্গে ইউনূস সেন্টারও নিশ্চিত করে যে এই বিষয়টি মিথ্যা, বলা হয়েছে বিবৃতিতে।
এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের সব আলেম, ওলামা ও দায়িত্বশীল নাগরিকদের বিভ্রান্ত না হওয়ার এবং যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে তাদের প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
উত্তরাধিকারে নারী ও পুরুষ-এর সমান অধিকার নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল শনিবার নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করে।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদনটি হস্তান্তর করেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান শিরীন পারভিন হক। এ সময় কমিশনের অন্য সদস্যগণও উপস্থিত ছিলেন।
সংস্কার কমিশন ১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। বিষয়গুলো হচ্ছে- সংবিধান আইন ও নারীর অধিকার, সমতা ও সুরক্ষার ভিত্তি, নারীর অগ্রগতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা ও জাতীয় সংস্থাসমূহ, নারীর স্বার্থ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন, নারী ও মেয়ে শিশুর জন্য সহিংসতা মুক্ত সমাজ, জনপরিসরে নারীর ভূমিকা জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে, জন প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ, নারীর অগ্রগতির জন্য শিক্ষা, প্রযুক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সকল বয়সী নারীর জন্য সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার, শ্রম ও কর্মসংস্থান, নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন, দারিদ্র্য হ্রাসে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা, গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ, চিত্রায়ন ও প্রকাশ, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে নারীর অন্তর্ভুক্তি ও বিকাশ এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনে নারী।
এসব সুপারিশে অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সম্পদের অধিকার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদে করণীয় নারীদের কৃষিখাতে অন্তর্ভুক্তি সহজ করা, মৎস্যজীবী হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি ও বনজ সম্পদের ওপর নারীর অধিকার নিশ্চিত করা। সুপারিশে উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের মেয়াদে করণীয় বিষয়ে বলা হয়েছে যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগ্রহণে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ে প্রবেশ সহজ করা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। যুবনারীদের কর্মসংস্থানে প্রবেশ সহজ করার লক্ষ্যে তাদের উপযোগি শিক্ষা, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সম্ভাবনা সংক্রান্ত তথ্য, আর্থিক সমর্থন ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রদান করা।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে নভেম্বরে। চলতি মাসের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কমিশনের মেয়াদ রয়েছে। এ সংস্কার কমিশন মোট ৪৩ টি নিয়মিত বৈঠকে মিলিত হয়। নারী অধিকার, উন্নয়ন সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন, পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সাথে ৩৯ টি পরামর্শ সভা করে কমিশন। অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সাথে ৯টি সভায় মিলিত হয়। পরামর্শ সভাগুলো হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খুলনা, শ্রীমঙ্গল, রংপুর ও ময়মনসিংহে। পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও সংগঠনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নেয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চারদিনের সরকারি সফরে আগামীকাল কাতারের রাজধানী দোহার উদ্দেশে রওনা দেবেন। সেখানে তিনি ‘আর্থনা সামিট-২০২৫’ -এ অংশগ্রহণ করবেন।
অধ্যাপক ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে এ সফরে যাচ্ছেন বলে বাসসকে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
আজাদ মজুমদার বলেন, সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি কাতারের আমিরের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন,জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকবেন বলে জানা গেছে।
দেশের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের চারজন জাতীয় নারী ক্রীড়াবিদ প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে কাতারে যাচ্ছেন।
এই চার ক্রীড়াবিদ হলেন- ফুটবলার আফিদা খন্দকার ও শাহেদা আখতার রিপা এবং ক্রিকেটার সুমাইয়া আখতার ও শারমিন সুলতানা।
‘আমাদের উত্তরাধিকার গড়ে তোলা: স্থায়িত্ব, উদ্ভাবন ও ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান’ প্রতিপাদ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠেয় ‘আর্থনা সামিট’-এ কাতারের উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়ায় টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে দেশটির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও অনন্য প্রতিবেশগত বৈচিত্র্যকে কাজে লাগানোর প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হবে।
এই সামিট একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে যেখানে প্রথাগত জ্ঞান ও আধুনিক উদ্ভাবনের সমন্বয়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের নতুন দিক উন্মোচন এবং এক সমৃদ্ধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যৎ গঠনের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল এই দুই দিনে সামিটে উপস্থাপনা, ইন্টারঅ্যাকটিভ প্যানেল আলোচনা, কর্মশালা ও গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
ছয় দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার সারা দেশে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী।
কুমিল্লার কর্মসূচিতে ‘হামলার’ অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে সারা দেশে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে আজ প্ল্যাকার্ড হাতে ‘রাইজ ইন রেড’ নামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘দেশ গড়ার হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘কুমিল্লায় হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর আগে শুক্রবার দুপুরে ছয় দফা দাবি আদায়ে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে গণমিছিল করেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
মিছিল-পরবর্তী এক ব্রিফিংয়ে কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জোবায়ের পাটোয়ারী বলেন, ‘কর্তৃপক্ষকে বলব, আমাদের দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেনে নিন, আমরা রাজপথ ছেড়ে দেব। কুমিল্লার ভাইদের ওপর হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করুন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী।’
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. মাশফিক ইসলাম দেওয়ান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সরকার, শিক্ষার্থীদের সরকার, বিপ্লবীদের সরকার। এই সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতা করতে আমরা প্রস্তুত। কারিগরি শিক্ষা সেক্টরে যে বৈষম্য আছে, আমরা চাই সরকার তা দূর করুক।’
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে মশাল মিছিল করেন। তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেও সন্তুষ্ট না হয়ে ছয় দফা দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বর্তমান সরকারের দ্বারা সংস্কারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের)। তিনি বলেন, সংস্কারের যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। এই সংস্কার-পরবর্তী সংসদে পাস করতে হবে। সংস্কারের নাম করে নির্বাচন পেছানোর জন্য বাহানা করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির বর্ধিতসভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে একই সময়ে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আরেকটি বর্ধিতসভা করে রাজধানীর সেগুনবাগিচার জেকে টাওয়ারে। এতে সভাপতিত্ব করেন পার্টির মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ। এই অংশটির কো-চেয়ারম্যান সুনীল শুভ রায়, সাবেক এমপি জাফর ইকবাল সিদ্দিক, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীরসহ বিভিন্ন জেলার নেতারা সভায় বক্তব্য দেন।
জি এম কাদের বর্ধিতসভায় আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কারই করুক তা নির্বাচিত সংসদে পাস করতে হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো সংস্কারের প্রয়োজন নেই। দেশের ৫০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে সরকার যে সংস্কার করতে চাচ্ছে, তা কোনো দিনই কার্যকর হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, সংস্কার হচ্ছে নির্বাচন পেছানোর বাহানা। নির্বাচন পেছানোর কারণে তারা কত বড় গর্তে পড়বে, তা তারা বুঝতে পারছে না। সামনের দিকে মহাসংকট আসবে, পয়সা থাকবে না, বিদেশ থেকে মালামাল কিনতে হবে। আমাদের চাল পর্যন্ত কিনতে হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই, ডিসেম্বরের কথা বলা হয়েছে, হতে পারে, আগে হলেও আপত্তি নেই। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের সমস্যা সমাধানের প্রধান ধাপ মন্তব্য করে তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করে ফেলা দরকার। কেননা, এই সরকার ৬ মাস পরে আর দেশ চালাতে পারবে না। কারণ তাদের হাতে পয়সা থাকবে না।
তিনি বলেন, দেশে যেসব বিচার চলছে তাতে কেউ বাধা দিচ্ছে না, বিচারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন পেছানো হচ্ছে। বর্তমান সরকার বুঝতে পারছে না, নির্বাচন দীর্ঘায়িত করে দেশকে একটি ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করছে। এই সরকার দেশ চালাতে পারবে না।
জি এম কাদের বলেন, ‘এই সরকার বৈধ না, আবার অবৈধও না। কারণ আমরা মেনে নিয়েছি তাই মাঝামাঝি হয়ে গেছে। নির্বাচিত সরকারকেই বৈধ সরকার বলা হয়। এই সরকার নির্বাচিত নয় কিন্তু হাইকোর্ট এই সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, আমরা মেনে নিয়েছি।’
জাতীয় পার্টি (জাপা) কোনো সুবিধাবাদী দল নয় বলে দাবি করে জি এম কাদের বলেন, ‘আমাদের নামে অনেক ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদের নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জানাশোনা কথাকে তারা ভুলভাবে তুলে ধরছেন। তাদের কথা হলো- আমরা সুবিধাবাদী ও সুবিধাভোগী। কিন্তু আমরা বলতে চাই জাতীয় পার্টির সিংহভাগ মানুষ সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের স্বার্থে তারা সংগ্রাম করেছে। আগামীতেও তারা জনগণের পাশেই থাকবে।’
জি এম কাদের বলেন, অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার যে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আন্তরিক সে বিষয়টির নিশ্চয়তা দিতে হবে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হবে কি না! বর্তমান সরকার তার দলকে নিয়ে কী ভূমিকা নেবে, তা পরিষ্কার করা দরকার। একতরফা নির্বাচন সমস্যা সমাধান আনবে না। একতরফা নির্বাচন হলে আগের মতোই সমস্যা থেকে যাবে।
দেশের প্রতিটি বিভাগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বর্ধিতসভার প্রথম দিন গতকাল শনিবার রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল এবং সিলেটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক হয়। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ আজ রোববার বর্ধিতসভায় অংশ নেবেন ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ বিভাগের নেতারা। জাতীয় পার্টির সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। এরপর নির্বাচন কমিশনে একাধিক দফায় আবেদন করে সময় বাড়িয়েছে দলটি। এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর বর্ধিতসভার আয়োজন করা হয়।
সভায় সিনিয়র নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, প্রেসিডিয়াম রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, শেরিফা কাদের প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
গত শুক্রবার আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময়ে ঝটিকা মিছিল করেছে। এই বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় থাকার বিষয়টি সামনে আসছে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ ইতোমধ্যে দুজনকে ধরেছে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ও ঝটিকা মিছিলের বিরুদ্ধে পুলিশের কোনো রকম নিষ্ক্রিয়তা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারা যদি এগুলো ভালোভাবে কন্ট্রোল করতে না পারে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে আরও উন্নত করা যায়।
থানা পরিদর্শনের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের পুলিশ সদস্যদের থাকার জায়গা, খাওয়ার জায়গাগুলো কেমন এগুলো দেখার জন্যই মূলত আমরা পরিদর্শন করছি। তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হলে তাদের থাকা এবং খাওয়ার জায়গার দিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, নিচের সারির পুলিশ সদস্যদের সুবিধার জন্য একই বিভাগে পোস্টিংয়ের বিষয়ে চিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে আরও উন্নত হয় সেক্ষেত্রে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ সদস্যদের বদলি করার পরও তারা বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগদান করছে না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাদের বদলি হওয়ার পরেও তারা কর্মস্থলে যোগদান করছে না, এমন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা একটা তালিকা দিন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আপনারা জানেন, ঢাকায় প্রায় সবাই নতুন।’
দাবিকৃত সময়ে নির্বাচন আদায় করতে ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। শরিকরা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন।
গতকাল শনিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রথমে ১২ দলীয় জোট এবং পরে এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ ও তাদের দ্রুত বিচারের বিষয়ে ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয় ও আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে একমত হয়েছে বিএনপি।’
বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে ডিসেম্বরে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান ১২ দলীয় জোটের প্রধান জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামান হায়দার।
এ বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ১২ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে উপস্থিত বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাগপার রাশেদ প্রধান, জমিয়তের উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন একরাম প্রমুখ।
সন্ধ্যা ৭টায় একই স্থানে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন নজরুল ইসলাম খান। বৈঠকে এলডিপির নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অর্ন্তর্বতী সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার ব্যাপারে একমত হলেও এই মুহূর্তে সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো কর্মসূচি কিংবা বড় আন্দোলনে যেতে চাচ্ছে না বিএনপি। বরং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করবে তারা। বিএনপি চায় না এই সরকার ব্যর্থ হোক- এ বিষয়গুলোই ১২ দলীয় জোট এবং এলডিপির সঙ্গে শেয়ার করেছেন নজরুল ইসলাম খান। জবাবে এলডিপি এবং ১২ দলীয় জোটের নেতারা বিএনপির সব সিদ্ধান্তের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানান।
তবে, ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির শীর্ষ নেতারা নিজেদের মতামত দিতে গিয়ে বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে দেশের চলমান পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে ও অস্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তাই চাপ তৈরি করে সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিএনপিকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহদাত হোসেন সেলিম জানান, ‘যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে একটা কনভেনশন করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনো স্বৈরাচারের যেসব দোসর বসে আছে তাদের অপসারণ এবং পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের নানামুখী অপতৎপরতা মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি যেটা বলেছে, সেটা হলো এ বছরের ডিসেম্বর মাসটা হচ্ছে কাট অফ টাইম। এ বাইরে কোনো অবস্থাতেই যাওয়া যাবে না। এ ব্যাপারে আমরা সবাই একমত হয়েছি। সরকার যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন না দেয়, তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান কেবল কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন নয়; এটা ক্ষমতা থেকে একটি দলকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানোর পরিকল্পনা ছিল না। বরং কীভাবে রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করা যায় এরকম একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল।’
গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এনসিপি। যে দলের প্রধান শক্তি ও ভিত্তির জায়গাটা হচ্ছে এই দেশের তরুণরা। সেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের যে বক্তব্য ছিল - আমরা ফ্যাসিবাদের বিলোপ ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন সময় জনগণ রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলন করেছে। আমরা ৯০ গণঅভ্যুত্থানের কথা বইয়ে পড়েছি; কিন্তু যে আকাঙ্ক্ষায় জনগণের রাস্তায় নেমে আসা সে আকাঙ্ক্ষাগুলো বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার ফলেই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তাই আমরা চাই, এবারের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়। জনগণের ভেতরে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এটা জাতির প্রতি আমাদের সবারই অঙ্গীকার।
সংস্কার বলতে এনসিপি মৌলিক সংস্কারের কথা বলছে জানিয়ে নাহিদ আরও বলেন, যে সংস্কার করলে রাষ্ট্রকাঠামো গুণগত আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে। কারণ, আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে আমাদের সংবিধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ ঘটেছিল। আমাদের সংবিধানে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি কাঠামোর বীজ বুনেছিল। ফলে সেই রাষ্ট্রকাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে-ই ক্ষমতায় যাক তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে। সেই জায়গায় রাষ্ট্রের সংস্কার, সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থা, নির্বাচন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এনসিপির ভাবনার কথা উল্লেখ করে দলটির আহ্বায়ক বলেন, এবার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে আমাদের জাতির সামনে, জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন, জুলাই সনদ প্রয়োজন। জাতির সামনে আমাদের সবাই সেই অঙ্গীকার রাখতে হবে যেন আরেকটি স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা, আরেকটি ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশে আসার সব রাস্তা আমরা বন্ধ করে সামনের দিকে এগোবো। একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান, রাষ্ট্রকাঠামো তৈরিতে আমরা সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করব।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফররাজ হোসেন ও ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এনসিপির পক্ষ থেকে থেকে অংশ নেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসেল।
আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ আমাদেরকেই নির্মাণ করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমেরিকা থেকে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীন থেকে এসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এসে ধাক্কা দিয়ে কিছু করে দিয়ে যাবে না। যা করার আমাদেরই করতে হবে। এই বিষয়গুলো আমাদেরকে মনের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, হতেও হবে। যেভাবে গণঅভ্যুত্থানে সবাই এক হয়েছিল সেভাবেই এক হয়ে কাজ করতে হবে।’
গতকাল শনিবার রাজধানীতে ‘বাংলাদেশের ক্ষমতায়ন: নেতৃত্ব, ঐক্য এবং প্রবৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি দেশের পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ ভালো হবে, খুব ভালো হবে।
তিনি বলেন, সবাই এখন ভিন্ন দিকে নজর দিচ্ছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ট্যারিফ দিয়েছে তা দেশের জন্য একটু বিপদে পড়ার মতোই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া বাড়তি শুল্ক দ্রুত সমাধান করতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সভায় মির্জা ফখরুল দেশের কৃষি খাতে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। মাঠেঘাটে যারা কাজ করছেন, তাদের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, ড. ইউনূস সাহেবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি চেষ্টা করছেন। তাকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি ড. ইউনূস সফল হবেন। আসুন আমরা নিজেরা নিজেদের সাহায্য করি।
রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। দেশে যেন কোনোভাবেই আর ফ্যাসিবাদের উত্থান না ঘটে, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন আর ফিরে না আসে, তার সব রাস্তা বন্ধ করতে এনসিপি অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদের নেতৃত্বে এনসিপির আট সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে অংশ নেন।
এ সময় নাহিদ বলেন, ‘সংস্কার বলতে আমরা মৌলিক সংস্কারকে বুঝি, যেটি রাষ্ট্র কাঠামোর একটি আমূল ও গুণগত পরিবর্তন আনবে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দলীয়করণ দেখেছি আমরা। এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর বীজ বপন হয়েছিল আমাদের সংবিধানে।’
এ কারণে আগের রাষ্ট্র কাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে দলই রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে, তাদের মধ্যেও ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে বলে মন্তব্য করেন এই এনসিপি নেতা।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কেবল ব্যক্তির পরিবর্তন কিংবা একটি দলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে আরেকটি দলকে বসানো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল না। বরং রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তন করে, রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক এবং গুণগত সংস্কারের মাধ্যমে জনগণের অধিকার রক্ষা করবে—এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ছিল আামদের।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কথা বইয়ে পড়েছি, কিন্তু যে আকাঙ্ক্ষায় জনগণ রাস্তায় নেমে আসে, সে আকাঙ্ক্ষাগুলো বিভিন্ন সময় আমরা দেখেছি, ব্যর্থ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার ফলেই ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদের শাসন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। তাই আমরা চাই, এবারের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয়।’
‘জনগণের মধ্যে যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। এটা জাতির প্রতি আমাদের সবারই অঙ্গীকার। আরেকটি ফ্যাসিবাদ, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা যেন বাংলাদেশে না আসে, তার সব রাস্তা বন্ধ করেই সামনে এগোতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য যার যার জায়গা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।’
এ সময় রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের ক্ষেত্রে সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা, নির্বাচনব্যবস্থাকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান নাহিদ।
এর আগে, গত ২৪ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে পাঠানো ১৬৬টি সুপারিশে ওপর মতামত দেয় এনসিপি। যার মধ্যে ১১৩টিতে দলটি একমত হয়েছে বলে জানান এই নেতা। বাকি ২৯টিতে আংশিক দ্বিমত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতোমধ্যে ১২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে কমিশন।
সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়েছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লিখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত ৩২টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কমিশন মতামত পেয়েছে।
সাধারণ মানুষের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পাটের তৈরি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা করারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা হবে।’
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে প্লাস্টিক দূষণ রোধে করণীয় সংক্রান্ত সেমিনার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচার কার্যক্রম চালানো হবে। পাটের ব্যাগ তৈরির সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। টেকসই ব্যবস্থার জন্য জেডিপিসি, এসএমইএফ, জয়িতা ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’
‘প্লাস্টিকের বিকল্প নেই—এই ধারণা ঠিক নয়। সরকারের সব উদ্যোগ রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে,’ বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। অ
নুষ্ঠানে বক্তব্য দেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি; ঢাকা নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান মারিয়ান রাবে ক্নাভেলসরুদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ; ইউনিডোর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাকি উজ জামান; ঢাকা মেডিকেল কলেজের ড. আফিয়া শাহনাজ; বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান।
সময় পরিবেশ উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
রাজধানীতে পরিচালিত পৃথক অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এসব সংগঠনের সাম্প্রতিক ঝটিকা মিছিল নিয়ে সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে ডিএমপি। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠন ঝটিকা মিছিল করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে দুয়েক মিনিট মিছিল করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এসব মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।
তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানায় ডিএমপি। পৃথক অভিযানে রাজধানীতে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ছয় সদস্য হলেন- পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নং ওয়ার্ডের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নাইম, যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রিপন হোসেন ফাহিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৯ নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মো. সোহেল, বাড্ডা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা, বাড্ডা থানার ৩৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়ামিন ও বাড্ডা ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল বাশার খান।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পল্লবী থানার বাউনিয়া এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম নাইমকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ।
অন্যদিকে, মহানগর গোয়েন্দা সাইবার বিভাগের বিভাগের একটি দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. রিপন হোসেন ফাহিমকে গ্রেফতার করে। ডিবি-ওয়ারী বিভাগ কদমতলী থানাধীন মোহাম্মদবাগ এলাকা থেকে শেখ মো. সোহেলকে গ্রেফতার করে।
এরপর শনিবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে ডিবি সাইবারের একটি টিম রাজধানীর বাড্ডা থানার মধ্য বাড্ডা এলাকা থেকে মো. সোহেল রানা ও মোহাম্মদ ইয়ামিনকে এবং শাহ আলি এলাকা হতে অপর একটি টিম পৃথক অভিযান চালিয়ে আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে।
ডিএমপি জানায়, এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় সাধারণ জনগণকে এসব সংগঠনের বিচ্ছিন্ন অপতৎপরতা সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছে মহানগর পুলিশ।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-কে আশ্বস্ত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এএনএফআরইএল এর একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, এই নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা এবং দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় এক মাইলফলক।’
এএনএফআরইএল প্রতিনিধিদলে ছিলেন নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, প্রচারাভিযান ও অ্যাডভোকেসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম কর্মকর্তা থারিন্ডু অ্যাবেইরাথনা, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এ কথা জানান।
এএনএফআরইএল হলো নাগরিক সমাজের একটি আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক যা এশিয়ায় গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নয়নে নিবেদিত, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বৈঠকে, এএনএফআরইএল প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে চলমান বিভিন্ন উদ্যোগ বিশেষ করে নাগরিক সমাজের-নেতৃত্বাধীন স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাঠামো পুনর্গঠনের অঙ্গীকার তুলে ধরেন।
প্রতিনিধিদলটি অংশীজন ম্যাপিং এবং চাহিদা নিরূপণের মাধ্যমে নাগরিক সমাজের সম্পৃক্ততা শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাচনী স্বচ্ছতা বৃদ্ধির সুযোগ চিহ্নিত করার বিষয়েও আলোচনা করে।
এএনএফআরইএল প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে অংশীজনদের সঙ্গে চলমান সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে।