শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২

জেএমবি সদস্য ইউনুছের ফাঁসি বহাল

ফাইল ছবি
আপডেটেড
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:১১
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত
প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা
প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৯:০৬

নেত্রকোনা উদীচীর কার্যালয়ে বোমা হামলার মামলায় জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য ইউনুছ আলীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। এ রায়ের ফলে দেড় যুগ আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বোমা হামলা মামলায় আসামি ইউনুছের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকল।

আসামি ইউনুছ আলীর করা আপিল খারিজ করে বুধবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। এ রায়ের ফলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রিভিউ ছাড়া আর কোনো আইনগত বাধা রইলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।

আদালতে ইউনুছ আলীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

ডিএজি সারওয়ার হোসেন বাপ্পী দৈনিক বাংলাকে বলেন, এ মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত তিনজন আসামি ছিলেন। তার মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এখন ইউনুছ আলীরও মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকল।

সারওয়ার হোসেন বলেন, ‘বাকি দুই আসামির তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন। তাছাড়া তার আপিল গ্রহণ করার মত কোনো গ্রাউন্ডই ছিল না। যে কারণে আদালত তার আপিল খারিজ করে হাইকোর্টের সাজা বহাল রেখেছেন।’

২০০৫ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় উদীচী কার্যালয়ে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত এ ঘটনায় করা মামলায় আসাদুজ্জামান পনির, সালাউদ্দিন সোহেল ও ইউনুছ আলীর ফাঁসির রায় দেন।

তবে এ মামলার অপর আসামি সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় এ দুজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পরে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ৩১ জানুয়ারি হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামিরা।

এর মধ্যে শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ আসাদুজ্জামান পনিরের আপিল খারিজ করে দিয়ে ফাঁসি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পরে এ রায় রিভিউ করেন পনির। সেটিও ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২০২১ সালের ১৫ জুলাই গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। পনির ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার কানাইকরস্থানের ফজলুল হক চৌধুরীর ছেলে। আর আসামি সালাউদ্দিন সোহেলকে আরেকটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।


কুয়েট ভিসি-প্রোভিসির পদত্যাগ অনশন ভাঙল শিক্ষার্থীরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
খুলনা ব্যুরো

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সরকারের হস্তক্ষেপে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও প্রোভিসি অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলম অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। গত বুধবার রাতে বিশেষ নির্দেশনা পেয়ে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং সহ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

দীর্ঘ ৬৫ দিনের আন্দোলন আর ৫৮ ঘণ্টার অনশনে ক্ষুধায় যখন শরীর ঝিমিয়ে আসছিল, তখনই সংবাদ এসেছিল শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাই গত বুধবার রাতের সেই সংবদে কুয়েটজুড়ে উঠেছিল আনন্দের বন্যা।

অনশনে থাকা শিক্ষার্থী সিভিল বিভাগের রাহাতুল ইসলাম বলেন, রাত সোয়া একটার দিকে ক্যাম্পাসে এসে তানজিম স্যার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি পত্র আমাদের পড়ে শোনান। তাতে জানতে পারি ক্যাম্পাসের স্বৈরাচারী ভিসিকে সরকারের পক্ষ থেকে অপসারণ করা হচ্ছে। তখন থেকে ক্যাম্পাসে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করে।

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা আমাদের পাশে ছিল বলে আমাদের এই বিজয় এসেছে। প্রত্যেকের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের যেকোনো ক্যাম্পাসে যদি কোনো ভিসি স্বৈরাচারী কার্যক্রম শুরু করেন তবে আমরা আবারও গর্জে উঠব।

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে নানা কারণে আলোচিত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেছিলেন।

এর আগে বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। সে সময়ে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহার করানোর জন্য অনুরোধ করেন। তবে শিক্ষার্থীরা তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তাদের হলের পানি, ইন্টারনেট বন্ধের কথা উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার ব্যাপারে অভিযোগ তোলেন।

উপদেষ্টা সেই সময়ে শিক্ষার্থীদের বলেন, আমার সঙ্গে দুইজন ইউজিসির সদস্য এসেছেন। তারা ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কুয়েট প্রশাসনকে অবহিত করবেন। তোমাদের এই যাবতীয় অসুবিধা দ্রুত সমাধান করা হবে।

তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। তবে আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আপনারা আপনাদের কাজ করতে থাকেন। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।

সে দিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে তাদের সঙ্গে কোনো সভা করেননি। এরপর ইউজিসির সদস্যদের সাথে কুয়েট প্রশাসনের সভা হয়। পরে সাড়ে ১২টার দিকে জরুরি সিন্ডিকেটে বসিয়ে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসের হল খুলে দেওয়া হয়।

এরপর সরকার ও ইউজিসির নির্দেশে ভিসি ও প্রোভিসি পদত্যাগে বাধ্য হন।

এদিকে, ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতির সিদ্ধান্তকে ন্যায়বিচারের পরাজয় বলে মন্তব্য করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল দুপুরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া ভিসি ও প্রো-ভিসির অব্যাহতির সিদ্ধান্ত ন্যায়বিচারের পরাজয়। আমরা চেয়েছিলাম একটা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। কিন্তু বর্তমান সময়ে যারা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের আন্দোলন করে আসছিল, আমরা দেখতে পাচ্ছি তারাই আজ অন্ধকার রাজনীতির করালগ্রাসে বন্দি। এ কারণে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এ ক্যাম্পাসে উদ্ভূত সংকট নিরসনে শিক্ষকবৃন্দের কোনো চেষ্টাই সফল হয়নি। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়সহ তার প্রেরিত প্রতিনিধিদলও এ ক্ষেত্রে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। ফলে সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া চাপের মুখে ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরের অব্যাহতির সিদ্ধান্তে মূলত ন্যায়বিচারের পরাজয় হয়েছে।

ড. মো. ফারুক হোসেন আরও বলেন, গৌরবান্বিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দীর্ঘ আট মাস পরেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এহেন কার্যক্রম চলতে থাকে, তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়; সমগ্র বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ভেঙে ফেলতে পারে। যা নিয়ে শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ প্রকাশ করছে। তবে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষকরা সব সময় সচেষ্ট থাকবে।

এ সময়ে তিনি বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় যারা দোষ করেছে, এই ঘটনার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অপসারণ দেওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। অপরাধ যেটা সেটা অপরাধই, সেটা আমাদের ছাত্রদেরও দাবি শিক্ষকবৃন্দেরও দাবি। আমাদের পরিষ্কার অবস্থান এই বিচার নিশ্চিত করেই ক্লাসে ফিরতে হবে। তা না হলে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত হবে না।

এদিকে, গতকাল উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলম শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে দাবি সম্বলিত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি অব্যাহতি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।


বাংলাদেশের পুনর্গঠনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস কাতারের প্রধানমন্ত্রীর

# কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান বিন জসিম আল থানি। গতকাল বৃহস্পতিবার দোহায় কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আশ্বাস দেন।

বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে মনোনীত করবেন।

এ সময় ড. ইউনূসের অব্যাহত নেতৃত্বের ওপর আস্থা প্রকাশ করে কাতারের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, চলমান সংস্কার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ আগামী বছরগুলোতে আরও শক্তিশালীভাবে আত্মপ্রকাশ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ খাতে কাতারের পূর্ণ সহযোগিতা কামনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে- দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করা।

অধ্যাপক ইউনূস কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদকে বলেন, ‘আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়তে আপনাদের সহায়তা প্রয়োজন।’

শেখ মোহাম্মদ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কাতারে একটি কারিগরি দল পাঠানোর আহ্বান জানান।

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা জনগণ যাতে মর্যাদার সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য সম্ভাব্য সকল সহায়তার আহ্বান জানান।

আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সংলাপ আয়োজনে সহায়তা করার জন্য কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ইউনূস।

দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী।

শেখ মোহাম্মদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরালো করার আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি এবং সমস্যার টেকসই সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

দুই নেতা গাজার পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করেন যে, গাজার দুর্দশার বিষয়ে বিশ্বের বেশির ভাগ অংশ এখনো নীরব। জবাবে কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গাজা সংকট নিয়মিত গণমাধ্যমে তুলে ধরার জন্য কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল জাজিরাকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কাতারের সহায়তা কামনা করেন।

তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। শেখ মোহাম্মদ এই অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন।

বৈঠকে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাব

এর আগে গত বুধবার রাতে কাতারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আবদুল রহমান বিন হাসান আল-থানির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সে দেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কাতারের বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যেতে পারে। সেখানে কাতারের ব্যবসায়ীরা সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন।’

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব বলেন, বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের মন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং ও অর্থনৈতিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ বিনিয়োগ পরিষেবা উন্নয়ন করা হচ্ছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন করে উৎপাদিত পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি করতে পারবেন। তিনি কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সেদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

পরে তিনি কাতারের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ও কাতারে অবস্থানকারী বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পৃথক আরও দুটি বৈঠক করেন। কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে, আপনারা এ সুযোগ নিতে পারেন।’

কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন,‘বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরেছে, এবং তা বড় পরিসরে। আমরা আপনাদের অংশীদারত্ব চাই।’

অনুষ্ঠানে তিনি নরওয়েজিয়ান টেলিকম অপারেটর টেলেনরকে বাংলাদেশে কীভাবে একটি টেলিফোন কোম্পানি গঠন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছিল সে প্রেরণাদায়ক গল্পটি তুলে ধরেন, যা পরে টেলেনরের সবচেয়ে লাভজনক উদ্যোগে পরিণত হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ফোরাম, কাতারের সভাপতি আজাদ আশরাফ স্বাগত বক্তব্য দেন।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সম্ভাব্য কাতারি বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়ে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনাদায়ী ঋণ ছিল, যা এখন কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ মিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে কাতার এনার্জির কাছে ২৫৪ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া ছিল, যা বুধবারের মধ্যে শূন্যে নেমে এসেছে বলে তিনি জানান।

গত বুধবার রাতে দোহায় পৃথকভাবে বিদেশি কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে মালদ্বীপের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের একজন সদস্য, মালয়েশিয়ার সাবেক একজন মন্ত্রী, কাতারের রাজপরিবারের একজন সদস্য, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার এবং কয়েকজন ধনী প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তর করতে চায় এবং সব ধরনের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।

বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মধ্যে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ হতে চাই।’

বিনিয়োগকারীরা উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং পর্যটন- বিশেষ করে কক্সবাজারের রিসোর্ট জোনে-বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর এবং বিনিয়োগ-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, চার দিনের সরকারি সফর শেষে আজ শুক্রবার ঢাকায় না ফিরে রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে দোহা থেকে সরাসরি ইতালির রোমে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রেস সচিব জানান, পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ছিল। বন্ধুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রধান উপদেষ্টা পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন। আগামী শনিবার পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে। আগামী রোববার তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।


ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে কাতার ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৯ টা ২৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ২৫ মিনিট) ভ্যাটিকান শহরের উদ্দেশ্যে কাতার ত্যাগ করেন।

কাতারের প্রটোকল প্রধান ইব্রাহিম বিন ইউসুফ আবদুল্লাহ ফখরু দোহার হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে বিদায় জানান।

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আজ বাসস’কে জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা দুপুর ২টা ১৫মিনিটে (ইতালি সময়) রোমে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ভ্যাটিকান সিটিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাঁকে স্বাগত জানাবেন।

ইতালিতে পৌঁছার এক ঘণ্টা পর প্রধান উপদেষ্টা শুক্রবার বিকাল ৩ টা ১৫ মিনিটে সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে যাবেন এবং পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

ভ্যাটিকান সিটির ভিকার জেনারেল, তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় কার্ডিনাল মাউরো গাম্বেত্তি, সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে প্রধান উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুভেচ্ছা জানাবেন।

শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯ টা ৩০মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা আবার সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা রোববার সকাল ৮টার দিকে (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) লিওনার্দো দা ভিঞ্চি রোম ফিউমিসিনো বিমানবন্দর থেকে রওনা হবেন এবং সোমবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।


সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার নামে দুদকের মামলা

মামলা হয়েছে সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী জ্যাকবের নামেও
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ২৬১ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনের অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্ত্রীসহ সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নামেও মামলা করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, শাহরিয়ার আলম সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ২৭ কোটি ৩৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন এবং তা ভোগ দখলে রাখেন। এছাড়া তার নামে থাকা ৬টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে মোট ২৬০ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩০.৬০ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে।

অন্যদিকে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক পানিসম্পদ উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের নামে মামলা করেছে দুদক। একই সঙ্গে তার স্ত্রীর নামে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

দুদক জানায়, আসামি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯ হাজার ৯২৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে এবং দখলে রেখে এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে মোট ৮৫ কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ৪১৯ টাকা স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বিধায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুদক।

এদিকে জ্যাকবের স্ত্রী নিলীমা নিগার সুলতানার নামে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৬৪ হাজার ৪৫ টাকা সম্পদের তথ্যাদি পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(১) ধারায় সম্পদ বিবরণীর নোটিশ জারি করেছে কমিশন।


‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে প্রস্তুত করার পরামর্শ প্রধান উপদেষ্টার

বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। ছবি: বাসস
আপডেটেড ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ ১৮:৩৯
বাসস

তরুণ প্রজন্মকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম অভিহিত করে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শিক্ষার্থীদেরকে কল্পনা করতে, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং নিজেদেরকে ‘তিন-শূন্য মানুষ’ হিসেবে গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছেন।

তিনি আজ কাতারের রাজধানী দোহায় কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ শিরোনামে এক অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা প্রদান করেন।

প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি যখন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাই, তখন খুবই স্বস্তি বোধ করি। আমি নিজেকে তরতাজা অনুভব করি। তোমরা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। আমি আন্তরিকভাবে তা বিশ্বাস করি। তোমরাই সুপারম্যান আর সুপারওম্যান।’

অধ্যাপক ইউনূস হচ্ছেন ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার জনক এবং ২০০৬ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পান।

অধ্যাপক ইউনূস শিক্ষার্থীদের বলেন, এমন কিছু করো না যা ধনসম্পদের কেন্দ্রীকরণে অবদান রাখে। বরং কল্পনা করো এবং স্বপ্ন দেখো এমন একটি নতুন পৃথিবী গড়ার, যেখানে আত্মবিধ্বংসী পদ্ধতির কোনো স্থান নেই।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অধ্যাপক ইউনূসকে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে অসামান্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।

নোবেল বিজয়ী ও ‘ব্যাংকার টু দ্য পুওর’ বইয়ের লেখক অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্যে একটি উদীয়মান নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরেন, যা মানবজাতি এবং পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তোমাকে অবশ্যই স্বপ্ন দেখতে হবে, কল্পনা করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি তুমি কল্পনা করো, সেটা তোমাকে সাহায্য করবে। কল্পনাকে অবহেলা করো না।’

অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ‘তিন শূন্য’ ভাবনার কথা তুলে ধরেন— শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে এই প্রজন্ম আত্মবিধ্বংসী সভ্যতা থেকে বেরিয়ে এসে পরিবেশের রক্ষক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয় লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।


কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুদেশের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে নানা বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফজলুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খালিলুর রহমান, এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ এবং কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুলরহমান বিন জাসিম আল থানি ২০২৩ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ বৈঠকটি কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।


পাল্টে যাবে সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম

শুরু হচ্ছে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের যাত্রা। এ সমুদ্র বন্দর নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর শুরু হবে দুটি জেটির সমন্বয়ে একটি টার্মিনালের নির্মাণকাজ, যা ২০২৯ সালের দিকে শেষ হবে। এতে দেশের সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা পাল্টে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক সংশ্লিষ্টদের অন্যতম একজন। তিনি বলেন, ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার ঢাকার হোটেল লো মেরিডিয়ানের বলরুমে জাপানি সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণকাজের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।

এখন জাপানি প্রতিষ্ঠানটি মাতারবাড়িতে দুটি জেটি নির্মাণের কাজ শুরু করবে। জেটি দুটির একটির দৈর্ঘ্য ৪৬০ মিটার। এটিতে শুধু কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। অপরটি মাল্টিপারপাস জেটি, যেটির দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। নির্মিত জেটিতে ১৪ মিটার ড্রাফটের বিশালাকারের কন্টেইনার কিংবা কার্গো জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। একই সঙ্গে বড় আকৃতির তিনটি, মাঝারি আকৃতির হলে চারটি মাদার ভ্যাসেল বার্থিং দেওয়া যাবে।

ইতোমধ্যে সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ চ্যানেলটিতে ভেড়ানো হয়েছে। জাহাজটিতে ৬৫ হাজার ২৫০ টন কয়লা ছিল। এ বন্দরে অনায়াসে এক লাখ টন পণ্যবোঝাই জাহাজ বার্থিং দেওয়া সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, জোয়ার-ভাটার বাধা না থাকায় এই চ্যানেলটিতে রাতে দিনে ২৪ ঘণ্টা জাহাজ ভিড়ানোর সুবিধা রয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে বাংলাদেশের যে সীমাবদ্ধতা ছিল মাতারবাড়ি তা পুরোপুরি কাটিয়ে দিতে যাচ্ছে। এক লাখ টন ধারণক্ষমতার কার্গো জাহাজ কিংবা ৮-১০ হাজার টিইইউএস কন্টেনার বহনকারী জাহাজ ভিড়ানো শুরু করা হলে পণ্য পরিবহন খরচ বহুলাংশে কমে যাবে।

ইতোমধ্যে একটি সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরে ২০২৯ সালের মধ্যে বছরে ১১ লাখ এবং ২০৪১ সালে ২৬ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। বন্দর সূত্র জানায়, মাতারবাড়িতে ১২শ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে জাপানের আর্থিক সহায়তায়। জাইকা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি এবং আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণ করছে।

১২শ মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হয়। দুই মাসের প্রয়োজনীয় অন্তত ৬ লাখ টন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে মজুদ রাখতে হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রয়োজনীয় জ্বালানির জোগান দিতে বিদেশ থেকে প্রতি মাসে অন্তত তিন লাখ টন কয়লা আমদানি করতে হয়। এক একটি জাহাজে ৬০ হাজার টন কয়লা পরিবহন করলেও মাসে অন্তত ৫টি মাদার ভ্যাসেল এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই হ্যান্ডলিং করতে হচ্ছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কয়লা আমদানির পথঘাট তৈরি করতে ১৪.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ২৫০ মিটার প্রস্থের ১৬ মিটার গভীর একটি চ্যানেল তৈরি করা হয়। এই চ্যানেল তৈরির পর জাইকার একটি প্রতিনিধিদল চট্টগ্রাম বন্দরে এসে মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর করা যায় মন্তব্য করে পুরো বিষয়টি উপস্থাপন করে। তারা জানান যে, কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যেই চ্যানেলটি তৈরি করা হয়েছে সেটিকে যদি পাশে ১০০ মিটার বাড়িয়ে ৩৫০ মিটার এবং গভীরতা ২ মিটার বাড়িয়ে ১৮ মিটার করা হয় তাহলে এটি গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তারা গভীর সমুদ্রবন্দরের বিষয়টি নিয়ে অগ্রসর হলে নতুন করে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন নামে আলাদা একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

শুরুতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প নামের প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু হয়। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বর্ধিত করে ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হয়। গভীরতাও ১৮ মিটার (এমএসএল) করা হয়েছে। নির্মিত চ্যানেল ও হারবার নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার জন্য সিপিজিসিবিএল কর্তৃক ১,৭৫৩ মিটার উত্তর ব্রেকওয়াটার, ৭১৩ মিটার দক্ষিণ ব্রেকওয়াটার এবং উত্তর দিকে ১৮০২.৮৫ মিটার রিভেটমেন্ট নির্মাণ করা হয়।

২০১৮ সাল থেকে এসব কার্যক্রম শুরু হয়। জাপানের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে প্রকল্পের খরচ জোগান দিতে থাকে। প্রকল্পটির জন্য জাইকা ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা ঋণ সুবিধা প্রদান করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার এবং সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা মিলে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু প্রকল্প গ্রহণের পরে কিছু ক্ষেত্রে খরচ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে নির্মাণ সামগ্রির মূল্যবৃদ্ধি এবং আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যয় পুনর্নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ব্যয় সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা। সময় রাখা হয় ২০২৬ সাল পর্যন্ত। কিন্তু পরবর্তীতে নানা প্রতিকুলতায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে থাকে। প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২৪ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য যে চ্যানেল ও জেটি নির্মাণ করা হয়েছিল তা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তর করেছে সিপিজিসিবিএল। একই সঙ্গে ওই চ্যানেল ও জেটি নির্মাণে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে তার দায়ও বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর দেওয়া হয়।

এবার নতুন করে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পুরো প্রকল্পটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নৌ উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. সাখাওয়াত হোসেন মাতারবাড়ি বন্দর পরিদর্শনের পর পুরো কার্যক্রমে গতিশীলতা আসে বলে উল্লেখ করে সূত্র জানিয়েছে যে, জাইকা প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন করবে। প্রথম ধাপে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জেটি, টার্মিনাল এবং ব্যাকইয়ার্ড ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে।

এই ব্যয়ের পুরো অর্থের যোগান দেবে জাপানি সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জেটি এবং টার্মিনাল নির্মাণ করবে জাপানি প্রতিষ্ঠান পেন্টা ওশান এবং থোয়া করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে এই চুক্তি স¤পাদিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটি যৌথভাবে আগামী ৪ বছরের মধ্যে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ একটি কন্টেনার জেটি এবং ৩০০ মিটার দীর্ঘ একটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করবে। দুটি জেটির জন্য সমন্বিতভাবে নির্মাণ করা হবে একটি টার্মিনাল।

বন্দরের তথ্যমতে, মহেশখালীর ১ হাজার ৩০ একর জায়গায় বন্দরের অবকাঠামো এবং ব্যাকইয়ার্ড নানা ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা হবে। আগামী ২০২৯ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুরোদমে কাজ শুরু করবে। এর মাধ্যমে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে নতুন গতিশীলতা তৈরি হবে। পাল্টে যাবে সমুদ্রবাণিজ্যের চেহারা।


শীর্ষস্থানীয় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধান উপদেষ্টা

বুধবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি : বাসস
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে গতকাল বুধবার রাতে কাতারের রাজধানী দোহায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে মালদ্বীপের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী, মালয়েশিয়ার রাজপরিবারের একজন সদস্য, মালয়েশিয়ার সাবেক একজন মন্ত্রী, কাতারের রাজপরিবারের একজন সদস্য, শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকার এবং কয়েকজন ধনী প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন।

বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্রে রূপান্তর করতে চায় এবং সব ধরনের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।

বাংলাদেশ এই অঞ্চলের মধ্যে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ হতে চাই।’

বিনিয়োগকারীরা উৎপাদন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জ্বালানি, ব্যাংকিং এবং পর্যটন—বিশেষ করে কক্সবাজারের রিসোর্ট জোনে—বিনিয়োগের সম্ভাবনা যাচাইয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সফর এবং বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।


পোপের মৃত্যুতে বাংলাদেশে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বাংলাদেশ সরকার আজ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে।

বুধবার রাতে কেবিনেট বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

এই সময়কালে (বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত) সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

প্রয়াত পোপের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ প্রার্থনারও আয়োজন করা হবে।

একজন উদ্যমী সংস্কারক পোপ ফ্রান্সিস সোমবার (২১ এপ্রিল) ৮৮ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

চলতি বছরের শুরুতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ফ্রান্সিস দু’বার মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন। গত ২৩শে মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার আগে তাকে সেখানে ৩৮ দিন থাকতে হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ পোপ নির্বাচিত হন জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও। পোপ হিসেবে নির্বাচিত হবার পর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘ফ্রান্সিস’। আর্জেন্টিনার এই ধর্মযাজক দরিদ্রদের প্রতি সহমর্মিতার জন্য বেশ পরিচিত ছিলেন।

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্য শনিবার অনুষ্ঠিত হবে বলে ভ্যাটিকান সিটির এক ঘোষণায় বলা হয়েছে।


পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা দোহা থেকে সরাসরি রোমে যাবেন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দোহা থেকে সরাসরি ইতালির রোমে যাবেন।

আগামী শুক্রবার তিনি রোমের উদ্দেশে দোহা ত্যাগ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে দোহায় অবস্থান করছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

প্রেস সচিব বলেন, পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ছিল। বন্ধুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রধান উপদেষ্টা পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন।

আগামী শনিবার পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।

শফিকুল আলম জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয়ার বাইরে প্রধান উপদেষ্টার অন্য কোন ধরনের বৈঠক সেখানে নেই। আগামী রোববার তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।

পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ১২ বছর রোমান ক্যাথলিক গির্জার সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব পালন করেন।


দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১ জন হাসপাতালে ভর্তি

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮ জন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৪ জন।

বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।


মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরণের দায়ে যুবকের ১৪ বছর কারাদণ্ড

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

যশোর জেলার কেশবপুরে নবম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরণের দায়ে মতিউর রহমান মতি নমের এক যুবককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক গোলাম কবির এ দণ্ডাদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল লতিফ লতা।

দণ্ডাদেশ পাওয়া মতিয়ার রহমান মতি কেশবপুর উপজেলার লক্ষীনাথকাটি মাঝেরপাড়া গ্রামের হাচেন আলীর ছেলে।

দণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান মতি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মতিউর রহমান মতি তার নিজের এলাকার নবম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে সাড়া না দেওয়ায় ২০২০ সালে ৩ জানুয়ারি মতি ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে। এ ব্যাপারে ৯ জানুয়ারি ওই ছাত্রীর মা কেশবপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পরে কেশবপুর থানা পুলিশ যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সহযোগিতায় যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি এলাকার একটি বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আজ বুধবার দণ্ডাদেশ দেন।


অসুস্থ হয়েও আমরণ অনশন ভাঙতে নারাজ শিক্ষার্থীরা

# কুয়েট ভিসি পদত্যাগের দাবি
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
খুলনা ব্যুরো

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এ অনশনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও অনশনরত এক শিক্ষার্থী মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার সময় জ্ঞান হারালে তাকেও কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এ পরিস্থিতিতেও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ ছাড়া তারা অনশন ভাঙবেন না।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অনশনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তখনো ঘুমিয়ে আছেন। মশার হাত থেকে বাঁচতে বড় মশারি টানানো হয়েছে। কেউ কেউ বসে বই পড়ছেন। কাঁথা-বালিশ ছড়ানো ছিটানো। প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে চারদিকে পাঁচ-ছয়টি স্ট্যান্ড ফ্যান চলছে। অদূরে একটি সাদা অ্যাম্বুলেন্স যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অপেক্ষমাণ। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাহস জোগাতে অন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের সহায়তা করছেন।

গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে অনশন শুরু করেন। সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনশন না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা, তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করানো, শিক্ষার্থীদের দাবি সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের হল খুলে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ সময় তারা ভিসিকে উদ্দেশ করে বলেন, এখন তার সঙ্গে সমঝোতা করলে ভবিষ্যতে তিনি আবারও এসব ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফলে তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গেছেন তারা। তার পদত্যাগই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান।

টানা আড়াই ঘণ্টা দুপক্ষের আলোচনায় ফল না হওয়ায় শিক্ষকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক ধরনের কথা হয়েছে। একটাই কথা ছিল আমরা একটা সমাধান চাই। আসলে ১৮ তারিখের (১৮ ফেব্রুয়ারি) যে ঘটনা তা অনেক শাখা-প্রশাখা হয়ে আজ এই পর্যায়ে এসেছে। তাই আমরা তোমাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব। এই ভবনে আমার অফিস। সেখানে সব সময় দরজা খোলা থাকবে। আবার আমরা আসব। আমাদের শিক্ষকরা আসবেন। তাদেরকে অনুরোধ করা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা না বুঝবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

এদিকে গত ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

অন্যদিকে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া আগামী ৪ মে থেকে শুরু এবং ২ মে সব আবাসিক হল খুলে দিয়ে ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।

তবে ছাত্ররা এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলে এসে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা এক রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে নিজেরাই সিলগালা করা তালা ভেঙে হলে উঠে পড়েন। এরপর তাদের দাবি মানতে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী।


banner close