কাগজে-কলমে শীতকাল বিদায় নিয়েছে প্রায় সপ্তাহখানেক। ফাল্গুনের এই শুরুর দিকে দিনের বেলা শীতের তেমন অনুভূতি না থাকলেও শেষ রাতে গায়ে কাঁথা টানতে হয়। ফাল্গুন যত যাবে, এই শীতের অনুভূতি ততই কমতে থাকবে। শীতের এ বিদায়বেলায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আগামী তিন দিনে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কথা বলেছে তারা। খবর বাসসের।
রোববার সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এছাড়া ভোরের দিকে দেশের নদী অববাহিকার কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।
সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। এর অর্থ, এখন শেষ রাতে বা ভোরের দিকে যে শীত অনুভব হচ্ছে, সেটাও কমতে পারে ২৪ ঘণ্টায়।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হালকা অথবা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় শতকরা ৭০ ভাগ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া রাজারহাট ও সীতাকুণ্ডে ১৫, দিনাজপুর ও তেঁতুলিয়ায় ১৬ , সৈয়দপুর ও টেকনাফে ১৬ দশমিক ৪, বদলগাছী ও ডিমলায় ১৬ দশমিক ৫, ঈশ্বরদীতে ১৬ দশমিক ৭, নিকলিতে ১৬ দশমিক ৮ এবং সন্দ্বীপে ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। আর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজারে।
ঢাকায় আজ পশ্চিম অথবা উত্তরপশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ।
রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দোহা থেকে সরাসরি ইতালির রোমে যাবেন।
আগামী শুক্রবার তিনি রোমের উদ্দেশে দোহা ত্যাগ করবেন। প্রধান উপদেষ্টা চার দিনের সরকারি সফরে বর্তমানে দোহায় অবস্থান করছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রেস সচিব বলেন, পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ছিল। বন্ধুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে প্রধান উপদেষ্টা পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন।
আগামী শনিবার পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।
শফিকুল আলম জানান, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেয়ার বাইরে প্রধান উপদেষ্টার অন্য কোন ধরনের বৈঠক সেখানে নেই। আগামী রোববার তাঁর দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ১২ বছর রোমান ক্যাথলিক গির্জার সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব পালন করেন।
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। তবে এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ৩৮ জন।
বুধবার (২৩ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ভর্তি হয়েছে ৩৮ জন। নতুন আক্রান্তের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১৪ জন। আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরও ২৪ জন।
বিজ্ঞপ্তি থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, চলতি বছর আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ নারী।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২ হাজার ৩৮৭ জন। এর মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
যশোর জেলার কেশবপুরে নবম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে অপহরণের দায়ে মতিউর রহমান মতি নমের এক যুবককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও চার মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক গোলাম কবির এ দণ্ডাদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল লতিফ লতা।
দণ্ডাদেশ পাওয়া মতিয়ার রহমান মতি কেশবপুর উপজেলার লক্ষীনাথকাটি মাঝেরপাড়া গ্রামের হাচেন আলীর ছেলে।
দণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান মতি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মতিউর রহমান মতি তার নিজের এলাকার নবম শ্রেণীর এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে সাড়া না দেওয়ায় ২০২০ সালে ৩ জানুয়ারি মতি ওই ছাত্রীকে অপহরণ করে। এ ব্যাপারে ৯ জানুয়ারি ওই ছাত্রীর মা কেশবপুর থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পরে কেশবপুর থানা পুলিশ যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সহযোগিতায় যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি এলাকার একটি বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি পুলিশ এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আজ বুধবার দণ্ডাদেশ দেন।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এ অনশনে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও অনশনরত এক শিক্ষার্থী মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার সময় জ্ঞান হারালে তাকেও কুয়েটের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে এ পরিস্থিতিতেও অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের এক দাবি, ভিসির পদত্যাগ ছাড়া তারা অনশন ভাঙবেন না।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মূল ফটকের সামনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অনশনরত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তখনো ঘুমিয়ে আছেন। মশার হাত থেকে বাঁচতে বড় মশারি টানানো হয়েছে। কেউ কেউ বসে বই পড়ছেন। কাঁথা-বালিশ ছড়ানো ছিটানো। প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে চারদিকে পাঁচ-ছয়টি স্ট্যান্ড ফ্যান চলছে। অদূরে একটি সাদা অ্যাম্বুলেন্স যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর জন্য অপেক্ষমাণ। অনশনরত শিক্ষার্থীদের সাহস জোগাতে অন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে তাদের সহায়তা করছেন।
গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্রের সামনে অনশন শুরু করেন। সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছাত্র কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালক, সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনশন না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান। তবে শিক্ষার্থীরা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা, তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করানো, শিক্ষার্থীদের দাবি সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের হল খুলে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ সময় তারা ভিসিকে উদ্দেশ করে বলেন, এখন তার সঙ্গে সমঝোতা করলে ভবিষ্যতে তিনি আবারও এসব ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন। ফলে তারা এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ কারণে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গেছেন তারা। তার পদত্যাগই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান।
টানা আড়াই ঘণ্টা দুপক্ষের আলোচনায় ফল না হওয়ায় শিক্ষকরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। তবে যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, অনেক ধরনের কথা হয়েছে। একটাই কথা ছিল আমরা একটা সমাধান চাই। আসলে ১৮ তারিখের (১৮ ফেব্রুয়ারি) যে ঘটনা তা অনেক শাখা-প্রশাখা হয়ে আজ এই পর্যায়ে এসেছে। তাই আমরা তোমাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব। এই ভবনে আমার অফিস। সেখানে সব সময় দরজা খোলা থাকবে। আবার আমরা আসব। আমাদের শিক্ষকরা আসবেন। তাদেরকে অনুরোধ করা হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা না বুঝবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
এদিকে গত ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। এতে আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।
অন্যদিকে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া আগামী ৪ মে থেকে শুরু এবং ২ মে সব আবাসিক হল খুলে দিয়ে ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়।
তবে ছাত্ররা এর আগেই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে চলে এসে হল খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা এক রাত খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করে নিজেরাই সিলগালা করা তালা ভেঙে হলে উঠে পড়েন। এরপর তাদের দাবি মানতে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) কাশ্মীরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এই জঘন্য ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি।’
মঙ্গলবার ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহেলগামে একটি রিসোর্টে বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ২৬ জন পর্যটককে নিহত হন।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনাটি অঞ্চলটির সংঘাত-প্রবণ ইতিহাসে এক নতুন মোড়ের আভাস দিয়েছে, যেখানে এতদিন পর্যটকরা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ছিলেন।
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ইউএনবিকে বলেন, ‘কাশ্মীরের পাহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।’
বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা কাতারের রাজধানী দোহায় আর্থনা সামিটে অংশ নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত আসামি গ্রেফতার না করতে বাংলাদেশ পুলিশের অফিস আদেশের কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংক্রান্ত মামলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত আসামি গ্রেফতার না করার অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।
ওই অফিস আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফাতেমা নজীব এবং বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুলসহ এই স্থগিতাদেশ দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, ডিএমপি কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে এই রিটের পক্ষে বিনা ফি’তে (প্র-বোনো) শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
গত ২০ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন রিটটি করেন। এর আগে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ পুলিশের এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংক্রান্ত রুজুকৃত মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে এজাহার নামীয় আসামির সংখ্যা অধিক। এসব মামলার এজাহারনামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তারের নিমিত্তে উপযুক্ত প্রমাণসহ (ভিকটিম/বাণী/প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী, ঘটনা সংশ্লিষ্ট ভিডিও/অডিও/স্থির চিত্র ও সিডিআর ইত্যাদি) অবশ্যই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গ্রেফতার করতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত বৈষম্যবিরোধী মামলার এজাহারনামীয় কিংবা তদন্তে প্রাপ্ত কোনো আসামি গ্রেফতার না করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর বিভিন্ন থানার হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা উত্তরের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ছয়জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান।
আজ তাদের কারাগার থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড নিতে আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিদের রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুর রহমান তাদের বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মাদ্রাসা ছাত্র মো. আরিফ হত্যার মামলায় শাজাহান খানকে একদিন এবং আতিকুল ইসলাম ও তানভীর হাসান সৈকতকে দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এছাড়াও ভাটারা থানার মনির হত্যা মামলায় আতিকুল ইসলাম, বাড্ডা থানার আরেক হত্যা মামলায় জুনাইদ আহমেদ পলক ও কোতোয়ালী থানার মামলায় দিলীপ কুমার আগারওয়ালা'র দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। অন্যদিকে যাত্রাবাড়ী থানার আরেক হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বিচারক।
এদিকে যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পশ্চিম, কোতোয়ালী, ভাটারা থানার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক বিভিন্ন মামলায় সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনাইদ আহমেদ পলক, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর হাসান সৈকত, সাবেক ওসি আবুল হাসান ও সাবেক এএসপি তানজিল আহম্মেদকে গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করার জন্য ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে এই সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত প্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে ।’
কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।
‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন আমরা নিশ্চিত করি, আজকের আলোচনা শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে একটি অর্থবহ অংশীদারিত্বের সূচনা করে যা রোহিঙ্গা সংকটকে আমাদের যৌথ মানবিক অগ্রাধিকারগুলোর শীর্ষে রাখে এবং একটি স্থায়ী সমাধানের দিকে একযোগে কাজ করে।’
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে এবং রোহিঙ্গাদের হতাশ করে তুলছে। ক্যাম্পগুলোতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসনের চেষ্টা তাদের হতাশার স্পষ্ট চিহ্ন। এই সমস্যা যদি আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে এটি পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং উন্নয়নমূলক উদ্যোগগুলোও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত ৮,২৯,০৩৬ জনের তালিকার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ২,৩৯,০৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং এর মধ্যে ১,৭৬,১৯৮ জনকে ‘মিয়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন’ আয়োজন করবে।
এই সম্মেলনে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।
তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) আশ্রয় নিয়েছে, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ কেবল মানবিক বিবেচনায় এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ মনে করে, টেকসই প্রত্যাবাসনই হলো বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান।’
ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত নৃশংসতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এবং মিয়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত সংস্থার (আইআইএমএম) চলমান উদ্যোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ এবং রোম সংবিধির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মতো অপরাধের কোনোভাবেই শাস্তি এড়ানো উচিত নয়।
রোহিঙ্গাদের আস্থা ফেরাতে এবং রাখাইন রাজ্যে তাদের প্রত্যাবাসনের পরিবেশ তৈরি করতে মিয়ানমার ও এর কর্মকর্তাদের অপরাধের জন্য দায়ী করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আইসিজে-তে দায়ের করা মামলাটি চলতি বছরের প্রথমার্ধে মেরিট পর্বে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। আইনি ফার্ম ফোলি হোয়াগ জানিয়েছে, প্রাথমিক, আপত্তি ও মূলপর্ব শেষ হওয়ার পর তারা আইসিজে-তে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার শিকারদের ক্ষতিপূরণের আবেদন করবে।
গাম্বিয়া সরকার ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত ওআইসি ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেছে, যেখানে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে, যার পরিমাণ সাত লাখ ডলার।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বর্তমান সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে টেকসই প্রত্যাবাসনকেই বিবেচনা করে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শব্দদূষণ রোধে ‘লাউড কালচারের’ বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, যেমনটি অন্যান্য সামাজিক অপরাধের বিরুদ্ধে গড়ে উঠেছে।
আজ আগারগাঁওয়ের পরিবেশ অধিদপ্তরে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের ৩য় সংশোধনীতে উপযুক্ত কার্যক্রম নির্ধারণের লক্ষ্যে’ আয়োজিত পরামর্শমূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
রিজওয়ানা বলেন, রাস্তার পাশে হঠাৎ করেই উচ্চস্বরে চিৎকার করে কথা বলা, যানবাহনে অতিরিক্ত হর্ন বাজানো কিংবা মাইক ব্যবহারে সীমালঙ্ঘন— এগুলো শুধু আইনের লঙ্ঘনই নয়, অধিকন্তু এগুলো আচরণগত অবক্ষয়ও বটে। আচরণ পরিবর্তনের জন্য গণসচেতনতা সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি।
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ‘নিরব এলাকা’তে শব্দদূষণ রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। একইসাথে, জনগণকে জানাতে হবে— শব্দদূষণও এক ধরনের সহিংসতা, যার পরিণতি মারাত্মক।
তিনি বলেন, প্রতিটি মোটরসাইকেল ও প্রটোকল গাড়ি কিংবা ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহারকারীকেই বুঝতে হবে যে— তার অপ্রয়োজনীয় হর্ন বা গান চালানো অন্যের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। শব্দদূষণ থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদেরকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. খায়রুল হাসান।
কর্মশালায় বিভিন্ন দপ্তরের নীতিনির্ধারক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধি, পরিবেশবিদ ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু বাস্তবসম্মত পরামর্শ উঠে এসেছে, যা প্রকল্পের পরবর্তী ধাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফের ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিপেটাসহ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে এ ঘটনায় আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রথমে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী সিটি কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজে হামলা চালিয়ে কলেজটির নামফলক খুলে নিয়ে আসে। তবে ঠিক কী কারণে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সকাল থেকেই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের কাছাকাছি চলে আসে। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পালটাপালটি ধাওয়া হয়। পুলিশকে লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবারক হোসেন বেলা ৩টা ২০ মিনিটের দিকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিটি কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের বাসায় ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান । তিনি বলেন, সিটি কলেজের স্থাপনায় যে হামলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে, সেটির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। এ ঘটনাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। মারামারি করে এসব সমস্যার সমাধান হবে না বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘এতে সিটি কলেজের স্থাপনার ক্ষতি হবে, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে এবং আশপাশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে।’
এদিকে জানা গেছে, এর আগে গতকাল ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনা ঢাকা কলেজের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে গত ১৫ এপ্রিল এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পালটাপালটি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
নিউমার্কেট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুল ইসলাম বলেন, দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি ছিল, এখন সেটা আর নেই। শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯৯৯ সালে দেওয়া সম্মানসূচক ডিগ্রি পুনর্বিবেচনা করছে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ)।
প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া সম্মানসূচক আইন ডিগ্রির বিষয়টি পর্যালোচনা করছে অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এএনইউ)। অর্থাৎ তাকে দেওয়া ডিগ্রিটি বহাল থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে ভাবছে তারা। হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ওঠার কারণে এ পদক্ষেপ নিয়েছে এএনইউ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনাকে দেওয়া সম্মানসূচক আইন ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি কমিটি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে তারা এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডিগ্রি প্রত্যাহারের ব্যাপারে তারা বড় পরিসরের একটি নীতিমালা তৈরির কাজ করছে, যেটির ভিত্তিতে ভবিষ্যতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এএনইউ যদি সত্যিই শেখ হাসিনার সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রত্যাহার করে, তবে তা একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হবে, যা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
এএনইউয়ের এক মুখপাত্র অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েট প্রেসকে (এএপি) বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এমন ডিগ্রি প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি এবং এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কোনো সুস্পষ্ট প্রক্রিয়াও বিদ্যমান নেই। এখন আমরা একটি স্পষ্ট ‘প্রত্যাহার নীতি’ তৈরি করছি, যার মাধ্যমে ভবিষ্যতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এএনইউয়ের এ ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে ভারতে অবস্থানরত হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ জানিয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে আন্দোলন দমনে চালানো অভিযানে ১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ তোলে, কারফিউ জারি করার পর সেনাবাহিনীকে আন্দোলনকারীদের ‘দেখামাত্রই গুলি করার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
অভ্যুত্থান চলাকালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তার বাহিনীর বর্বরতা থামাতে চাপ দিতে হবে। সেই সঙ্গে অস্ত্রহীন ছাত্র আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর দায় সেনাবাহিনীকে নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে আজ এই শুনানি শুরু হয়।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
‘বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তুচ্যুত জনগণের সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ - রোহিঙ্গা ইস্যু’ শীর্ষক এই বৈঠকে তিনি বক্তব্য দেবেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ উপস্থিত রয়েছেন।