ইউরোপে আবারও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে যাচ্ছে রাশিয়া। আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্র মালিকানাধীন গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রেম।
গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের প্রেক্ষপটে রাশিয়ার ওপর একের পর এক অবরোধ আরোপের জবাবে প্রাকৃতিক গ্যাসকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
বিবৃতিতে গ্যাজপ্রেম জানায়, পশ্চিম রাশিয়া ও জর্মানিকে সংযুক্তকারী নর্ড স্ট্রিমে আগামী ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ কাজে তাদের অংশীদার জার্মানির সিমেন্স এনার্জির বিশেষজ্ঞরাও জড়িত থাকবেন।
এদিকে জার্মানির অভিযোগ, জ্বালানিকে রাজনীততে ব্যবহার করছে রাশিয়া। যাতে করে ইউক্রেন সংঘাতকে প্রভাবিত করা যায়। তবে রাশিয়ার দাবি, প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে সরবরাহ কমে যাচ্ছে।
গ্যাজপ্রেমের একটি প্রকল্প নর্ড স্ট্রিম এজি পাইপলাইন। ২০০৫ সালে চালু হয় এ প্রকল্পটি। এর মাধ্যমে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ করে রাশিয়া। এরপর সেই গ্যাস জার্মানির কাছে থেকে পাঠানো হয় ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। সরবরাহ কমানো হলে শীতের আগে ইউরোপী ইউনিয়নের দেশগুলোতে গ্যাস মজুত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এদিকে অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। শীতকালে ইউরোপে গ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতি ইউরোপকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিসা নিয়ে পাকিস্তান ভ্রমণকারী কমপক্ষে ৩৩৫ জন ভারতীয় নাগরিককে বহিষ্কার করেছে ইসলামাবাদ সরকার।
ভারত সরকার এই ঘোষণা দিয়েছে। ‘ইরানা জানায়’ মঙ্গলবার রাতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর শহর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পেহেলগামের পর্যটন এলাকায় বন্দুকধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। ওই হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভারত ওই হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার অভিযোগ করলেও ইসলামাবাদ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ হামলার বিস্তারিত তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করা, সীমান্ত বন্ধ করাসহ আরো অনেক কিছু।
অপরদিকে, ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও একটি কড়া বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন দুই দেশের মধ্যে অভূতপূর্ব উত্তেজনার পরিণতিতে নতুন করে আঞ্চলিক সংঘাতের সূচনা হতে পারে।
উল্লেখ্য, বিতর্কিত কাশ্মীর অঞ্চলে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী টানা তৃতীয় রাতে গুলি বিনিময় করেছে। পেহেলগাম সন্ত্রাসী ঘটনার কারণে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এদিকে,শনিবার ভারত থেকে কমপক্ষে ৭৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশে ফিরেছেন।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে শনিবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং ভুল বোঝাবুঝি নিরসনে তার প্রস্তুতির কথা ব্যক্ত করেছেন।
ফোনালাপে তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনাবলি মোকাবেলায় বিশেষ করে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আর্থিক ও অস্ত্র অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য বৃহত্তর আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এ অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
টেলিফোন সংলাপে শাহবাজ শরীফ যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং এই অশুভ ঘটনার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তারা ভালোভাবেই জানে। আমরা দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি এবং পাকিস্তানি জাতির কল্যাণকে উন্নত করতে চাই। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের মতো আমরা এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং স্থায়ী নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছি।
শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে টেলিফোনে আলাপকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে ভারত সরকার ও জনগণের প্রতি ওই ঘটনার জন্য দুঃখ ও সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং এই অভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে সংহতির প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
নরেন্দ্র মোদীও পেহেলগাম সন্ত্রাসী ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে এবং সন্ত্রাসবাদের সাথে ইরানি জাতির তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে বলেন, তার বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ইরান অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ভারতীয় জনগণের অনুভূতি ও কষ্ট ভালোভাবে বুঝতে পারে। মোদি বলেন আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আমরা সম্পূর্ণ একমত যে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক ঐক্য এবং সহযোগিতা প্রয়োজন।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর, বিশ্বের ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকের একজন নতুন নেতা নির্বাচনের জন্য সোমবার কনক্লেভের তারিখ নির্ধারণ করার কথা লাল টুপি পরা কার্ডিনালদের। ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
২১ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন পোপের মৃত্যুর পর থেকে বিশ্বজুড়ে কয়েক ডজন তথাকথিত ‘চার্চের রাজপুত্র’ ভ্যাটিকানে জড়ো হচ্ছেন।
শনিবার এক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ভেতর দিয়ে ফ্রান্সিসকে সমাহিত করা হয়। এ সময় রাজপরিবার, বিশ্বনেতা ও সাধারণ তীর্থযাত্রীসহ সেন্ট পিটার্স স্কয়ার ও তার বাইরে ৪ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে।
ভ্যাটিকানের দেয়ালের বাইরে সমাহিত হওয়ার সিদ্ধান্ত রেখে যান ‘দরিদ্রদের পোপ’। রোমের সান্তা মারিয়া ম্যাগিওর ব্যাসিলিকায় তাঁর মার্বেল সমাধি দেখতে রোববারও বিপুল সংখ্যক মানুষ জড়ো হয়।
বিশ্বজুড়ে দ্বন্দ্ব ও কূটনৈতিক সংকটের মধ্যে, ফ্রান্সিসের অধীনে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতালীয় কার্ডিনাল পিয়েট্রো প্যারোলিন অনেকের কাছেই পোপের উত্তরসূরি হিসেবে প্রিয়।
তিনি পোপের নিকটতম উপদেষ্টা যাকে পোপের দ্বিতীয় নম্বর হিসেবে দেখা হয়।
ব্রিটিশ বুকমেকার উইলিয়াম হিলকে ম্যানিলার মেট্রোপলিটন আর্চবিশপ এমেরিটাস ফিলিপিনো লুইস আন্তোনিও ট্যাগলের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে রেখেছেন, তারপরের স্থানে রয়েছেন ঘানার কার্ডিনাল পিটার টার্কসন।
পরবর্তী অবস্থানে রয়েছেন জেরুজালেমের ল্যাটিন প্যাট্রিয়ার্ক পিয়েরবাত্তিস্তা পিজ্জাবাল্লা, গিনির কার্ডিনাল রবার্ট সারা এবং বোলোগনার আর্চবিশপ মাত্তেও জুপ্পি।
রোববার ফ্রান্সিসের সমাধি দেখতে আসা তথ্য ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ ৪৪ বছর বয়সী রিকার্ডো ক্রুজ বলেন, একজন ফিলিপিনো হিসেবে তিনি আশা করছেন পরবর্তী পোপ এশিয়া থেকে আসবেন, কিন্তু একজন ক্যাথলিক হিসেবে তিনি আশা করেন কার্ডিনালরা ‘সঠিক পোপ’ বেছে নেবেন।
রোমের পন্টিফিকাল গ্রেগরিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গির্জার ইতিহাস ও সংস্কৃতির অধ্যাপক রবার্তো রেগোলি এএফপিকে বলেন, কার্ডিনালরা ‘এমন কাউকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন যিনি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে জানেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে আছি যেখানে ক্যাথলিক ধর্ম বিভিন্ন মেরুকরণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই আমি কল্পনাও করি না যে খুব দ্রুত একটি সম্মেলন হবে।’
ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর থেকে কার্ডিনালরা শেষকৃত্য এবং তার পরেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সাধারণ সভা করেছেন।
সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় (গ্রিনীচ মান সময় ০৭০০ টায়) তারা তাদের পঞ্চম সভা করবেন, যেখানে তাদের একটি সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন ৪ মে পোপের নয় দিনের শোক শেষের নির্ধারিত ক্ষণ শেষের কিছু পর ৫ অথবা ৬ মে সভাটি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার বলেছেন, তিনি চান রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন 'গোলাগুলি থামান' এবং একটি শান্তি চুক্তিতে সই করুন।
ভ্যাটিকানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের এক দিন পর মার্কিন নেতা একথা বললেন।
ট্রাম্প তার শপথ গ্রহণের আগে দাবি করেছিলেন যে তিনি এক দিনের মধ্যে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ থামিয়ে দিতে পারবেন, শপথ নেওয়ার পর থেকে যুদ্ধ থামাতে একটি কূটনৈতিক প্রয়াস শুরু করেন।
এখন পর্যন্ত এই প্রচেষ্টায় কোন ফলাফল না এলেও, ট্রাম্প বলেছেন, 'যেহেতু আমি চাই তিনি গোলাগুলি থামান, বসে আলোচনা করুন এবং একটি চুক্তিতে সই করুন।'
যুক্তরাষ্ট্রের বেডমিনস্টার থেকে এএফপি জানায়, এয়ার ফোর্স ওয়ানে চড়ে ওয়াশিংটনের উদ্দেশে রওয়ান হওয়ার আগে মরিসটাউন বিমানবন্দরে ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। এর আগে শনিবার তিনি রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ট্রাম্প ইউক্রেনে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতের জন্য মার্কিন প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, 'আমার মনে হয়, আমাদের কাছে একটি চুক্তির কাঠামো আছে, এবং আমি চাই তিনি তা স্বাক্ষর করুন।'
ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে একটি অপ্রীতিকর টেলিভিশন সাক্ষাৎকারের পর ট্রাম্প রোমে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে প্রথমবারের মতোইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মুখোমুখি হন।
সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় তাদের সংক্ষিপ্ত কথোপকথনের পরে, ট্রাম্প পুতিন আদৌ যুদ্ধ শেষ করতে চান কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।এ যুদ্ধ পূর্ব ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস করেছে এবং হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
রোববার ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি রাশিয়া কর্তৃক ২০১৪ সালে দখল করে নেয়া ক্রিমিয়ার দাবি ত্যাগ করে শান্তি চুক্তি করতে প্রস্তুত।
'ওহ, আমি তাই মনে করি,' এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এ কথা বলেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল জেলেনস্কি ২০১৪ সালে রাশিয়ার অধিকৃত এই ভূখণ্ড ছাড়তে রাজি হবে বলে তিনি মনে করেন কি না।
রাশিয়া দাবি করেছে যে তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলীয় চারটি অঞ্চল অঙ্গীভূত করেছে, তবে অঞ্চলগুলোতে তাদের পুরো সামরিক নিয়ন্ত্রণ নেই।
কিছু না জানিয়েই হঠাৎ ঝিলম নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। এ পরিস্থিতিতে আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর মুজাফফরাবাদে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের সস্তা রাজনৈতিক কৌশল আবার প্রকাশ পাচ্ছে।
মুজাফফরাবাদের কাছে পানির প্রবাহ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন হাতিয়ান বালা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মসজিদগুলোতে ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয়দের সতর্কও করা হয়েছে। এদিকে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতশাসিত অনন্তনাগ থেকে পানি প্রবেশ করে চাকোঠি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুই দেশের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলম নদী।
পাকিস্তানি গণমাধ্যম দুনিয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং পানি চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। পাকিস্তানের জনগণ এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।
ভারতীয় আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানি চুক্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ভারত। দেশটি হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না।
এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে নয়াদিল্লিকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সিন্ধু আমাদের এবং আমাদেরই থাকবে। সিন্দুতে হয় আমাদের পানি প্রবাহিত হবে, নয়তো তাদের (ভারত) রক্ত।
গত শুক্রবার এক জনসমাবেশে তিনি বলেন, পিপিপি যেমন ঐকমত্য ছাড়া বিতর্কিত খাল প্রকল্পের অনুমতি দেয়নি, তেমনি পাকিস্তানিরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং সিন্ধু নদীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসনের তীব্র জবাব দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমরা সিন্ধুকে রক্ষা করব এবং আজ, সিন্ধু এই হুমকি থেকে সুরক্ষিত হয়েছে। এটি তোমাদের বিজয়।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক এবং আলোচনার সময় সম্মত হওয়া বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করে বিলওয়াল ভুট্টো উল্লেখ করেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ফেডারেল সরকার প্রকল্পটি সিসিআইর সামনে উপস্থাপন করবে। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আপনাদের (জনগণের) উদ্বেগের কথা শুনেছেন এবং এখন কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো— পিএমএলএন এবং পিপিপি- একমত হয়েছে যে সম্মতি ছাড়া কোনো নতুন খাল নির্মাণ করা হবে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ফেডারেল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত তার সঙ্গে করা চুক্তি আবারও স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছে যে, সব প্রদেশের পানির ওপর ন্যায্য দাবি রয়েছে এবং ১৯৯১ সালের পানি চুক্তি ও ২০১৮ সালের পানি নীতি উভয়ই পারস্পরিক ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
নিজের ব্যর্থতা লুকানোর জন্য মোদি সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। এমনটা উল্লেখ করে ভাষণে বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, সিন্ধু আবারও আক্রমণের মুখে পড়েছে- এবার ভারতের আক্রমণের মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, যার জন্য নয়াদিল্লি পাকিস্তানের ওপর মিথ্যাভাবে দোষ চাপিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে, কারণ সন্ত্রাসবাদের কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে পৌঁছেছে। শনিবারের এ ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদন বলছে, বিস্ফোরণটি ইরানের দক্ষিণের বন্দর আব্বাস শহরের শহিদ রাজি বন্দরে ঘটে। এই বন্দরটি মূলত বহুল গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালির কাছে অবস্থিত। বিশ্ব তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়েই পরিবাহিত হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বন্দরটির কাস্টমস অফিস জানায়, বিস্ফোরণটি সম্ভবত বিপজ্জনক ও রাসায়নিক সামগ্রীর গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ঘটেছে।
ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর উদ্ধারকর্মী ও বেঁচে যাওয়া মানুষজন ধ্বংসস্তূপে ঢাকা প্রশস্ত সড়ক ধরে হাঁটছেন। একটি ট্রাকের ট্রেইলার আগুনে পুড়ছিল এবং একটি চূর্ণ-বিচূর্ণ গাড়ির পাশে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিল, যখন একটি হেলিকপ্টার ধোঁয়ার বিশাল মেঘের ওপর পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল।
স্থানীয় জরুরি পরিষেবাগুলোর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি আইআরইবি জানিয়েছে, ‘শত শত মানুষকে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রাদেশিক রক্ত স্থানান্তর কেন্দ্র রক্তদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সর্বশেষ এই বিস্ফোরণটি এমন এক সময়ে ঘটল, যার কয়েক মাস আগে ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় তাবাস শহরের একটি কয়লা খনিতে গ্যাস লিক থেকে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।
অন্যদিকে এই বিস্ফোরণের সময় ওমানের রাজধানী মাসকাটে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক আলোচনাও চলছিল। সেখানে উভয় পক্ষই আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। এর আগে, ২০২০ সালের মে মাসে একই বন্দরে একটি বড় ধরনের সাইবার হামলার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। যার ফলে বন্দরটির কার্যক্রম কয়েক দিনের জন্য অচল হয়ে পড়ে।
ওই ঘটনার ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় একই বন্দরে আবার বিস্ফোরণ ঘটল। আর এটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ওমানে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির লক্ষ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছে। এর ফলে এই বিস্ফোরণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নতুন চাপ তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভ্যাটিকানের ব্যাসিলিকা প্রাসাদে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে এই আলোচনা হয়। আলোচনার পর ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, তার মনে হচ্ছে পুতিন ‘যুদ্ধ থামাতে চান না’ এবং পুতিন তাকে ‘খেলাচ্ছেন।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের আগে ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি ‘খুবই ফলপ্রসূ’ ছিল। অন্যদিকে, জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনাটি ছিল ‘প্রতীকী।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমরা যৌথ ফল অর্জন করতে পারি, তবে এটি ঐতিহাসিক হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।’
গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাতের পর এটি ছিল ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। সেই সাক্ষাতে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনীয় নেতাকে ব্যাপক তিরস্কার করেন। তারা ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার প্রতি অকৃতজ্ঞতার অভিযোগও এনেছিলেন।
জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পুতিনের সমালোচনা করে একটি পোস্ট করেন। ট্রাম্প লেখেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে বেসামরিক এলাকা, শহর ও নগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পুতিনের কোনো কারণ ছিল না। এটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে, সম্ভবত তিনি যুদ্ধ থামাতে চান না, তিনি শুধু আমাকে খেলিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হবে, ব্যাংকিং বা দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে? অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে!’
ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় ওয়াশিংটন দুই দেশের মধ্যে জোরালো মধ্যস্থতা করছে। রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে যুদ্ধ চলছে। গত শুক্রবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তিন ঘণ্টা ধরে ওয়াশিংটনের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।
এই বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘বেশির ভাগ মৌলিক বিষয়ে একমত হওয়া গেছে।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি কিয়েভ এবং মস্কোর নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করা হবে। তিনি বলেন, চুক্তিটি ‘খুব নিকটবর্তী।’
ট্রাম্প চুক্তি নিয়ে আগ্রহী হলেও, শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন পরিকল্পনা এবং ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য যুদ্ধবিরতির শর্তাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়ে গেছে। রয়টার্স শুক্রবার শান্তির দুটি ভিন্ন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র মস্কোকে অধিকৃত অঞ্চল ধরে রাখার প্রস্তাব দিচ্ছে। এর মধ্যে কৌশলগত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে, যা রাশিয়া ২০১৪ সালে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়।
ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে এটি শুরুতেই অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, এই অঞ্চল ‘ইউক্রেনীয় জনগণের সম্পত্তি।’ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। ইউক্রেনের সংবিধান বলছে, সব সাময়িকভাবে দখলকৃত অঞ্চল...ইউক্রেনের অংশ।’
মস্কো মার্কিন শান্তিচুক্তিতে সম্মত হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই চুক্তিকে রাশিয়ার জন্য যথেষ্ট ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের সব সৈন্যকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি মস্কোর একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারিগরি বিষয়গুলো এখনো ঠিক করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কীভাবে প্রত্যাহার করা হবে এবং ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। ট্রাম্প শুক্রবার স্বীকার করেছেন, আলোচনা ‘খুবই ভঙ্গুর।’ তিনি সতর্ক করেছেন, দুই পক্ষ শিগগিরই একটি চুক্তিতে না পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেবে।
চীনা নাগরিকদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে তাইওয়ানে বসবাস করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ জন তাইওয়ানের নাগরিকত্ব বাতিলসহ চীনা বংশোদ্ভূত কয়েক হাজার তাইওয়ানবাসীর নথিপত্রের তদন্ত চলমান রয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে এমন বলা হয়েছে।
তাইওয়ানের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকদের চীনের নাগরিকত্ব রাখার অনুমতি নেই। যেকারণে গত কয়েক দশকে চীনের নাগরিকত্ব থাকায় শত শত বাসিন্দার তাইওয়ানিজ নাগরিকত্ব কার্যত্ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া এই অভিযান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রকাশ্যে তিনজন নারীর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে তাইওয়ান সরকার। পাশাপাশি দেশটির ১০ হাজারের বেশি নাগরিক; যারা চীনে জন্মগ্রহণ করলেও তাইওয়ানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ায় এই অভিযানের সমালোচনা শুরু হয়েছে।
নাগরিকদের পরিচয়, আনুগত্য, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও দেশের নিরাপত্তার মধ্যে সরকার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক তাইওয়ানিজ।
এই অভিযান ও বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ডিসেম্বরে অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রামাণ্যচিত্রকে ঘিরে। চীন গোপনে তাইওয়ানের মানুষকে তাদের দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করছে বলে দেখানো হয় সেখানে।
প্রামাণ্যচিত্রে তিনজন ব্যক্তির তথ্য উপস্থাপন করা হয়, যারা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে গিয়ে বাস করতে শুরু করেছিলেন এবং চীনের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।
এই প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর চীনের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় তাইওয়ান সরকার। তাইওয়ানের ওপর চীনা কর্তৃত্ব বজায় রাখার অপচেষ্টা থেকেই এই কাজ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে দেশটির মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (এমএসি)।
প্রামাণ্যচিত্রের সেই তিনজনের মধ্যে একজন সু শিহ। তার ভাষ্যে, ফুজিয়ান প্রদেশে অনেক তাইওয়ানিজ রয়েছে, পাশাপাশি সেখানকার সরকারও উদ্যোক্তাদের নানা রকম ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করেন— এমনটা শুনেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।
সু জানান, সেখানে গিয়ে চীনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন বলে জেনেছিলেন তিনি। এটি তার ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে ভেবে তিনি আবেদন করেছিলেন বলে দাবি করেন।
তবে তাইওয়ানের আইনে এই নাগরিকত্ব অবৈধ। যদিও সুয়ের দাবি, অনেক তাইওয়ানিজেরই ফুজিয়ানের নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা মূলত এখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার।
চীন-তাইওয়ান দ্বন্দ্ব কেন?
তাইওয়ানকে নিজেদের একটি প্রদেশ বলে দাবি করে বেইজিং। অন্যদিকে নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি তাইওয়ানের। এ নিয়ে এই অঞ্চলগুলোর বৈরিতা বহু পুরনো।
সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বেড়েছে আরও কয়েকগুণে। তাইওয়ান শান্তিপূর্ণভাবে চীনের সঙ্গে একীভূত না হলে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সরকার। এমনকি তাইওয়ানের অভ্যন্তরেও সাধারণ নাগরিকসহ সরকার ও সামরিক বাহিনীতে সিসিপি সমর্থিত অনেকে গুপ্তচরবৃত্তি ও তৎপরতা চালান বলে তাইওয়ানের অভিযোগ।
তবে অঞ্চল দুটির মধ্যে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও চীনের অনেক নাগরিকই তাইওয়ানে বসবাস করে আসছিলেন, আবার তাইওয়ানেরও প্রায় এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ চীনে বাস করেন।
তবে গত মার্চে দেশটির অভ্যন্তরে চীনের চলমান গোপন তৎপরতা বন্ধের দাবিতে দুই অঞ্চলের মধ্যে ভ্রমণ ও পুনর্বাসনে কড়াকড়ি আরোপ করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে।
সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চীনের কর্তৃত্ব নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে তিন চীনা বংশোদ্ভূত নারীর ভিসা বাতিল করে তাইওয়ান সরকার। পরে ওই নারীর তাইওয়ানিজ স্বামী ও সন্তানকে ছেড়ে তাকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়।
তাইওয়ানের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, তাড়াহুড়ো করে নথিপত্র ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই লোকজনকে নির্বাসিত করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু মানুষজন অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট লাই বাক স্বাধীনতা সীমিত করছেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট লাই।
লাই জানান, নাগরিকত্ব বাতিল করার আগে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সেনা সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে— তাদের কখনো চীনের নাগরিকত্ব ছিল না। তাছাড়া ১০ হাজারের বেশি সাধারণ জনগণকেও চীনের হুকু (স্থায়ীভাবে চীনের থাকার জন্য এটি দরকার) বাতিলের নথি দাখিল করতে বলা হয়। যারা দাখিল করেনি তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে হুকু বাতিলের প্রমাণ দাখিল না করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে তাইওয়ানের জাতীয় অভিবাসন সংস্থা (এনআইএ)। এনআইএ জানায়, যারা হুকু বাতিল করার কাগজ জমা দিয়েছেন, তারা পুনরায় তাইওয়ানের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে।
তবে তাইওয়ানের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লিও মেই জুন বলেন, এই নির্বাসন অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে চীনা সরকারকে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে পারে। এতে বেইজিংয়ের প্রপাগান্ডারই বিজয় হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
চীনের উপকূলরক্ষী বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের একটি প্রধান সামরিক ঘাঁটির কাছে বিতর্কিত একটি প্রবালপ্রাচীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনা ম্যানিলার সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে এবং এই দাবির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অন্যান্য দেশের আপত্তি ও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে আমলে নেয়নি।
চীন ও ফিলিপাইন গত কয়েক মাস ধরে ওই বিতর্কিত জলসীমায় একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে। এদিকে ফিলিপাইন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় পরিসরের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, যাকে চীন ‘অস্থিতিশীলতাকে উসকে দেওয়া’ বলছে।
রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি শনিবার জানিয়েছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে চীনের উপকূলরক্ষী বাহিনী ‘টাইশিয়ান রিফ’ বা ‘স্যান্ডি কেই’-তে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করে।
ছোট্ট এই বালুচর স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের অংশ এবং থিতু দ্বীপের (ফিলিপাইন ভাষায় ‘পাগ-আসা’) কাছাকাছি, যেখানে একটি ফিলিপাইন সামরিক স্থাপনা রয়েছে।
সিসিটিভি জানায়, উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা স্যান্ডি কেই-তে নেমে ‘সার্বভৌমত্ব ও অধিক্ষেত্র প্রয়োগ’, ‘পরিদর্শন’ এবং ‘ফিলিপাইনের বেআইনি কার্যকলাপের ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ’ করেছে।
প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রকাশ করা হয় যেখানে দেখা যায়, পাঁচজন কালো পোশাকধারী ব্যক্তি নির্জন ওই প্রবালপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং পাশে একটি কালো রঙের রাবার নৌকা ভাসছে।
আরেকটি ছবিতে চারজন উপকূলরক্ষী সদস্যকে জাতীয় পতাকার সাথে প্রবালপ্রাচীরের ওপর পোজ দিতে দেখা যায়, যেটিকে সিসিটিভি ‘সার্বভৌমত্বের শপথ’ বলে উল্লেখ করে।
সিসিটিভি আরও জানায়, তারা প্রবালপ্রাচীর থেকে ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাঠের টুকরো এবং অন্যান্য আবর্জনা পরিষ্কার করেছে।
দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এক অজ্ঞাতনামা ফিলিপাইন সামুদ্রিক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, পতাকা উত্তোলনের পর চীনা উপকূলরক্ষীরা ওই এলাকা ছেড়ে গেছে।
এখনও পর্যন্ত চীন প্রবালপ্রাচীরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
গত কয়েক মাসে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির জন্য চীন ও ফিলিপাইন পরস্পরকে দায়ী করে আসছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া শুক্রবার জানায়, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বেইজিংয়ের ভূমি পুনরুদ্ধার কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি, ম্যানিলার অভিযোগ মিথ্যা।
থিতু দ্বীপে ফিলিপাইনের সেনা উপস্থিত রয়েছে এবং ২০২৩ সালে সেখানে একটি উপকূলরক্ষী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করে ম্যানিলা, চীনের ‘আক্রমণাত্মক মনোভাব’ মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে।
সোমবার থেকে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তিন সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক যৌথ মহড়া ‘বালিকাতান’ (অর্থাৎ ‘কাঁধে কাঁধে’) শুরু করেছে। এবারের মহড়ায় প্রথমবারের মতো সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ম্যানিলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউএস মেরিন কর্পসের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেমস গ্লিন বলেন, দুই পক্ষ কেবল ১৯৫১ সালের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রক্ষার সংকল্পই প্রদর্শন করবে না, বরং তা বাস্তবায়নের ‘অতুলনীয় সক্ষমতাও’ দেখাবে।
তিনি বলেন, ‘‘কোনো কিছুর চেয়ে দ্রুত বন্ধন গড়ে তোলে যৌথ প্রতিকূলতার অভিজ্ঞতা।’’ তবে কোনো নির্দিষ্ট হুমকির নাম তিনি উল্লেখ করেননি।
চীন এ মহড়াকে ‘আঞ্চলিক কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে এবং ম্যানিলাকে ‘বহিঃআঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে আশপাশের এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং বন্দর আব্বাসের কিছু শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এতে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিস্ফোরণে বন্দরটি কেঁপে ওঠে। জরুরি উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। খবর তেহরান টাইমস, বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী বের হচ্ছে। অন্যান্য ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জরুরি দপ্তর জানিয়েছে, একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। কী কারণে ট্যাঙ্কারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তার কারণ জানা যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে হরমোজান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হরমোজান সংকট ব্যবস্থাপনা দপ্তরের প্রধান পরিচালক বলেন, বিস্ফোরণটি ব্যাপক শক্তিশালী ছিল। তবে এর কারণ এখনো অজানা।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, বন্দরের একটি প্রশাসনিক ভবন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এতে আরও একাধিক গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধারকারী দল বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আহতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বন্দর আব্বাসসহ স্থানীয় হাসপাতালগুলোত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ফারসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কাশেম থেকেও শোনা গেছে। যা বন্দর আব্বাস থেকে ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল) দূর অবস্থিত।
২০২০ সালে ইরানের এই বন্দরের কম্পিউটারগুলো একটি সাইবার হামলার শিকার হয়, যার ফলে পানিপথ ও সড়কপথে বন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল এর পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ইরানের আগের একটি সাইবার হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
তবে শহিদ রাজি বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।
সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ অনুসারে, রাজধানী তেহরানের ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহিদ রাজাই ইরানের সবচেয়ে উন্নত কন্টেইনার বন্দর। এটি বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এখান দিয়ে বিশ্বের তেল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ যায়।
এদিকে, ইরনা জানিয়েছে, অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে ঘটনাস্থলে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান বলেছেন, ‘প্রতিক্রিয়া দলগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তদন্ত চলছে। আমরা বর্তমানে আহতদের সরিয়ে নিয়ে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি।’
পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। কাশ্মীরের এই ইস্যুতে পাকিস্তানের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে দুদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি। দিল্লির এমন মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদও।
রীতিমতো যুদ্ধের আশঙ্কা চিরশত্রু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা কার? যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, কার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। আলোচনা চলছে কার কত সামরিক ক্ষমতা, তা নিয়েও।
এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।
ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানিয়েছে, ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ১৯ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।
সামগ্রিক সামরিক র্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক
‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।
র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।
পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
সেনা সংখ্যা
ভারতের সক্রিয় সেনা সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা। অপরদিকে, পাকিস্তানে সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সেনা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে চার কোটি সেনা।
স্থলবাহিনী
ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে চার হাজার ৬১৪টি ট্যাংক। সামরিক যান রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি। পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে দুই হাজার ৭৩৫টি ট্যাংক। সামরিকযান রয়েছে তিন হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।
বিমান বাহিনী
ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে দুই হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে এক হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।
নৌবাহিনী
আমর্ডফোর্সেসের হিসাবে ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ দুটি। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে পাঁচটি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।
প্রতিরক্ষা বাজেট
ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।
গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে সৌদি আরব ও ইরান। দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেন সৌদি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয়পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি আরব। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ফোনালাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি।
পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।
এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পেহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। এ সময় হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
উত্তেজনা প্রশমনে ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আলোচনায় তিনি ‘উত্তেজনা কমাতে ইরানের শুভেচ্ছাপূর্ণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার’ প্রস্তাব দেন।
আরাঘচি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে লেখেন, তার দেশ ‘সংঘাত নিরসনে নিজের সদিচ্ছার মাধ্যমে সহায়তা করতে প্রস্তুত’ রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীর অঞ্চলের ওপর সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে থাকে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির পর থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এমন একসময়ে এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল যখন পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গেই ইরানের ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস এবং উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রবল উপস্থিতি ইরানের প্রচেষ্টাকে সফল করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৬
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে অন্তত ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) এক বিবৃতি জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বান্নু জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।
এতে দাবি করা হয়, অভিযান পরিচালনার সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হন। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানদের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে পাকিস্তানে হামলার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। যার বেশির ভাগই কেপি ও বেলুচিস্তানে। ইসলামাবাদের দাবি, শত্রু গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে হামলা পরিচালনা করছে।
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে কাশ্মীরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দেশ দুটি একে অন্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। থেমে নেই কথার লড়াইও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এবার এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও।
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মিত্র দেশ সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভারতের ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন সৌদি ও ইরানের সমকক্ষ কর্মকর্তারা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারাও পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয় পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ফিরে ভিসা বাতিল করে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশদুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের তার সমকক্ষ ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।
এ সময় আলাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখান করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।
এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। এ সময়ে হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশই ইরানের মিত্র। চলমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইরান দেশদুটিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমঝোতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের ইসহাক দার। শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ‘কোনো দেশ যদি ভারতের সঙ্গে তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
এদিকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ইন্দাস নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক চুক্তি ‘ইন্দাস ওয়াটারস ট্রিটি’ কার্যত স্থগিত করেছে ভারত। ১৯৬০ সালে সই হওয়া এ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত দুটি যুদ্ধের মধ্যেও গত মঙ্গলবারের ওই হামলার আগে পর্যন্ত বহাল ছিল। এ ছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানি ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবার ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করায় দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ভারত পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হবে।
চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে? বিশেষ করে ইন্দাস অববাহিকার সেই তিনটি নদীর প্রবাহ, যেগুলো পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। চুক্তি অনুযায়ী ইন্দাস অববাহিকার রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু ভারতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ইন্দাস, ঝেলম এবং চেনাব নদীর পানির ৮০ শতাংশ পাকিস্তান পায়। পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ এই পানির ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে এ বিশাল পরিমাণ পানি আটকে রাখা বা অন্যদিকে প্রবাহিত করা বাস্তবে খুব একটা সম্ভব নয়। ভারতের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা পানির প্রবাহকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে বড় আকারে পানি জমিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষার সময় বিশাল এই জলপ্রবাহ আটকে বা ঠেকিয়ে রাখা কঠিন।
তবে ভারত যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়া নতুন বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণে যায়, তাহলে শুকনো মৌসুমে এর প্রভাব পাকিস্তানের ওপর ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, তখন নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ কম থাকে এবং ভারত যদি সেই পানি ধরে রাখে, তবে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে পানিপ্রবাহ ও বন্যা সম্পর্কিত তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখন চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারত চাইলে এ তথ্য পাকিস্তানকে জানানো বন্ধ করে দিতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগেও ভারত এ-সংক্রান্ত মাত্র ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে দিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একে ‘ওয়াটার বম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। অর্থাৎ উজানের দেশ হিসেবে ভারত যদি হঠাৎ পানি আটকে রাখে এবং পরে আকস্মিক তা ছেড়ে দেয়, তাহলে ভাটিতে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এতে ভারতের নিজস্ব এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি কৌশলগত দিকও সামনে এসেছে। ইন্দাস নদীর উৎস চীনের তিব্বতে। ২০১৬ সালে ভারতের হুঁশিয়ারির পর চীন একবার ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী আটকে দিয়েছিল। এখন চীন তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করছে, যা ভারতের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে নেওয়া ভারতের এই পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণ সহজ নয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে এর কৌশলগত প্রভাব পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।