ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা। সহিংসতা থামাতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। সংঘর্ষের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এ পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াল, এবিপি আনন্দ ও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।
প্রতিবেদন বলছে, সামশেরগঞ্জে বাড়িতেই বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তারা হলেন হরগোবিন্দ দাস (৭৪) ও চন্দন দাস (৪০)। এছাড়া সুতির সাজুর মোড়ে গুলিতে আহত কিশোরের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। পুলিশ জানায়, সংঘর্ষ চলার সময় শামসেরগঞ্জে হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়ে কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী। পরে ঘর থেকে বাবা-ছেলের রক্তাক্ত দেহ মেলে।
ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা। শুক্রবারের পর শনিবারও সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সামশেরগঞ্জ। শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ধুলিয়ান পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক যুবক ও এক কিশোর। চিকিৎসার জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।
আহতরা হলেন- হাসান সেখ ও গোলামউদ্দিন সেখ। তাদের বাড়ি সামশেরগঞ্জ থানার তারাবাগান এলাকায়। এই ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন আহতদের আত্মীয়রা।
ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার বিকেল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। জঙ্গিপুরের ঘটনার পর ১৬৩ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদে নামেন স্থানীয়রা। তারা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের বাধায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান ডাকবাংলো ও রতনপুর এলাকায় পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের অফিস। জ্বালানো হয় সরকারি-বেসরকারি বাস। বাদ যায়নি অ্যাম্বুল্যান্সও।
অভিযোগ, হামলা চালানো হয় স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য খলিরুল রহমানের বাড়িতেও। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চলে। আক্রান্ত হন ফরাক্কার এসডিপিও। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় বিএসএফ। শনিবার সকাল থেকে ধুলিয়ান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএসএফও নজরদারি চালাচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজিব কুমার গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের জানান, মুর্শিদাবাদের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কোনো জাতি ধর্ম দেখবে না। বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানান, সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, ‘‘সুজার মোড়ে (মুর্শিদাবাদ) প্রচণ্ড সংযত থেকে পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে বাগে আনা যায়নি। প্রায় তিন ঘণ্টা পুলিশের উপর হামলা, দোকানপাট ভাঙচুর, সরকারি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করেন তারা। তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। চার রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। তাতে দু’জন আহত হন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৫ জন আহত হয়েছেন। কয়েক জন গুরুতর আহত হয়েছেন।’’
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে প্রকাশিত একটি খোলা চিঠিতে সই করা দেশটির বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (অনিয়মিত বা খণ্ডকালীন সেনা) সেনাদের মধ্যে কর্তব্যরত সবাইকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা। খবর এপির।
এপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইডিএফের এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ সদস্যদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে দায়িত্বে থাকা সেনাসহ অন্য কারোরই অধিকার নেই সামরিক মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া। যুদ্ধে সক্রিয় থাকা অবস্থায় খোলা চিঠিতে সই করে সেনারা তাদের বাহিনীর কমান্ডার ও অধীনদের মধ্যকার শৃঙ্খলা ও আস্থা ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে যুদ্ধে কর্তব্যরত রয়েছেন এমন যেসব সদস্য ওই খোলা চিঠিতে সই করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে। তবে ঠিক কতজন সদস্যকে বরখাস্ত করা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করায় ইসরায়েলি প্রশাসনের সমালোচনা করে দেশটির গণমাধ্যমে একটি খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসহ বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার সদস্য সই করেন।
ইসরায়েলি প্রশাসন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেন। তা ছাড়া হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রশাসনের ব্যর্থতারও সমালোচনা করা হয়। প্রয়োজনে যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দেন তারা।
এমন এক সময়ে এই খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, যখন হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফেরানোর অজুহাতে পুনরায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানিসহ জরুরি মানবিক সেবার প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলি প্রশাসন।
হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মৃত বলে জানা গেছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলাতেই তারা প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েল হামলা শুরু করলে বাকি জীবিত জিম্মিদের প্রাণও ঝুঁকিতে পড়ার কথা জানায় হামাস।
তবে এতে ভ্রূক্ষেপ না করেই ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খোলা চিঠিতে সই করা সেনারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা না জানালেও গাজায় যা হচ্ছে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করেন।
এই চিঠির নেতৃত্বে থাকা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট গাই পোরান বলেন, ইসরায়েলি প্রশাসনের গাজায় এই হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এতে তারা জিম্মি ও ইসরায়েলের বহু সেনাসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। অথচ এই হামলার সুস্পষ্ট বিকল্প কিন্তু প্রশাসনের হাতে ছিল।
তবে চিঠিতে সই করা সেনাদের মধ্যে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তার জানা নেই উল্লেখ করে গাই বলেন, কেউ বরখাস্ত হয়েছে বলে শুনিনি আমি, তবে চিঠি প্রকাশের পর আরও অনেক সেনা এতে সই করছেন।
এই চিঠি প্রকাশের ঘটনাকে তাচ্ছিল্য করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বিদেশি কিছু এনজিওর অর্থায়নে এক ঝাঁক আগাছা এই কাজ করেছে। ডানপন্থি জোট সরকারের পতনের উদ্দেশ্যেই তারা এসব করছে। সাধারণত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের সেনাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, তাই প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব কমই তাদের প্রতিবাদ করতে শোনা যায়। তবে বর্তমানে সেই চিত্র বদলাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ চালানোর বিষয়ে সবাই একমত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নমত বাড়ছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গাজায় অব্যাহত হামলার সমালোচনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে যুদ্ধে সেনাদের নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে ও জিম্মিদের মুক্তিতে ব্যর্থতায় নেতানিয়াহু প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছে।
গাজাজুড়ে অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি বর্বরতা
গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নির্বিচারে চালানো হামলায় বাদ যাচ্ছে না আবাসিক ভবন ও আশ্রয় ক্যাম্পগুলোও। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা। বিশেষ করে নারী ও শিশু। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সবশেষ খবরে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে ও সেখানে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তবে বিধ্বস্ত রাস্তা ও ধ্বংসস্তূপের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেই বাড়িতে পৌঁছানো খুব কঠিন।
নুসাইরাতেও একটি ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার একজন ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তা ছাড়া রাতভর গাজা শহরের শুজাইয়ায় একটি বাড়িতে বোমা হামলা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে রাফাহ ও খান ইউনিসে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ চলছে।
আল-আকসার ইমামের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইসরায়েল
মসজিদ আল-আকসার শেখ মুহম্মদ সেলিমকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি খুতবায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন।
সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, শুক্রবার জুমার নামাজে খুতবা দেওয়ার সময় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান ও অব্যাহত গোলাবর্ষণের নিন্দা জানান শেখ মুহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গে তিনি অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বানও জানান।
নামাজ শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় আল আকসার একটি ফটক থেকে শেখ মুহম্মদ সেলিমকে আটক করে ইসরায়েলি পুলিশ। পরে তাকে পূর্ব জেরুজালেমের একটি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয় আর দেওয়া হয় ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সাত দিন তিনি আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না, যদি করেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া যেতে পারে বলে রায় দিয়েছেন লুইজিয়ানার অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স।
গ্রেপ্তারের প্রায় মাসখানেক পরে স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এই রায় ঘোষণা করেন বিচারক। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন মাহমুদের আইনজীবীরা। আগামী ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিচারক। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এমন খবর দিয়েছে।
গত বসন্তে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিক্ষোভে জড়িত থাকার কারণে এ বছরের ৮ মার্চ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। এরপর থেকে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে ছিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তার। গ্রেপ্তারের পরই তার গ্রিনকার্ড বাতিলের কথা জানায় ওয়াশিংটন।
শুক্রবারের এই রায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ফিলিস্তিন-সমর্থিত গ্রিনকার্ডধারী ও ভিসাধারীদের কণ্ঠরোধ ও দমনপীড়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মাহমুদের আইনজীবী ও আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস-নিউ জার্সির নির্বাহী পরিচালক অমল সিনহা বলেছেন, ‘তাড়াহুড়ো করে দেওয়া আদালতের এই রায় পুরোপুরি ভিত্তিহীন। সরকার পক্ষ নিজেদের সমর্থনে তেমন কোনো প্রমাণই উপস্থাপন করতে পারেনি, আসলে তাদের কাছে কোনো প্রমাণই তো নেই মাহমুদের বিরুদ্ধে।’
এই রায়কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মতামতের লজ্জাজনক অনুসরণ বলে অভিহিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ডিয়ালা শামাস।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের উদাহরণ দিয়ে রুবিও বলেছিলেন, ‘মাহমুদের কার্যকলাপ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এজন্য তাকে বিতাড়িত করা উচিত।’
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তার নেই বলে জানিয়েছেন বিচারক কোমান্স। তাছাড়া মাহমুদকে বিতাড়িত করতে প্রশাসন তাদের যুক্তি প্রমাণ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
খলিলের আইনজীবীরা অভিযোগ করেন, লুইজিয়ানার যে আদালতে মাহমুদের মামলার শুনানি হয়েছে, সেখানকার বিচারকরা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে এই রায় দিয়েছেন।
তারা জানান, ১৯৫২ সালের অভিবাসন আইনের অধীনে নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। বিচারক সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এদিকে, মাহমুদকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে এই রায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য এই রায়কে উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কারণ গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই ট্রাম্প অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থি প্রতিবাদী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এই আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যম জেটো নিউজের এক খবরে জানা যায়, রায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে খলিল বলেন, ‘এই আদালত ঠিক সেটিই করেছেন, ঠিক যে উদ্দেশ্যে আমার পরিবার থেকে প্রায় এক হাজার মাইল দূরে আমাকে পাঠিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আমি আশা করি যে দ্রুততার সঙ্গে আমার ঘটনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, একইরকম যেন মাসের পর মাস আটকে থাকা বন্দিদের বিষয়েও আদালত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়।’
ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে গত বসন্তে বিক্ষোভ করায় খলিলের মতো আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছেন অভিবাসন কর্মকর্তারা। তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মাহমুদকে গ্রেপ্তারের পর তার আইনজীবী কিংবা তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে না জানিয়েই তাকে লুইজিয়ানাতে স্থানান্তর করা হয়, যদিও তার মামলাটি নিউ জার্সির একটি আদালতে বিচারাধীন ছিল।
এর আগে তার গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম ও পঞ্চম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না সে বিষয়ে হাবিয়েস পিটিশন করেছিল তার আইনজীবীরা।
শুক্রবারের রায় ঘোষণার পর মাহমুদ খলিলের আইনজীবীরা বলেন, ‘মাহমুদকে বিতাড়ন করা আটকাতে লড়াই এখনও শেষ হয়নি। তার পরিবারের কাছে তাকে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।’
ভারতের ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ করা হবে না বলে জানিয়েছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এই আইন রাজ্য সরকার সমর্থন করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সামাজিকমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। মমতা বলেন, ‘বাংলায় তা বলবৎও হবে না। তা হলে হিংসা কেন? যারা এই হিংসায় উসকানি দিচ্ছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইনে এমন খবর দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী বলেন, ‘সেই আইনটি কিন্তু আমরা করিনি। আইনটি কেন্দ্রীয় সরকার করেছে। তাই উত্তর যা চাওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চাইতে হবে।’
রাজনৈতিক দলের চক্রান্তের কথাও উল্লেখ করে মমতা, ‘কিছু রাজনৈতিক দল ধর্মকে অপব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে। তাদের প্ররোচনায় পা দেবেন না। আমি মনে করি, ধর্ম মানে মানবিকতা, সহৃদয়তা, সভ্যতা ও সম্প্রীতি।’ এ সময়ে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ভারতের ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে দেশটির নানা প্রান্তে তীব্র বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের শীর্ষ আদালতেও আইনটি বাতিল করার দাবিতে একাধিক পিটিশন জমা পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ আগামী সপ্তাহেই এই মামলাগুলো শুনবে।
অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ওই রাজ্যের হাজার হাজার বিতর্কিত ওয়াকফ সম্পত্তি চিহ্নিত করে তা বাজেয়াপ্ত করার জন্য উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। ভারতে সব চেয়ে বেশি ওয়াকফ সম্পত্তি আছে উত্তরপ্রদেশেই।
ওই একই রাজ্যের মুজফফরনগরে গত শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় হাতে কালো আর্মব্যান্ড পরে নতুন আইনটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তিন শতাধিক ব্যক্তিকে নোটিশ পাঠিয়ে মাথাপিছু ২ লাখ রুপি করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়ও আইনপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। গেল বৃহস্পতিবার কলকাতায় এক বিশাল সমাবেশ থেকে ওয়াকফ আইন বাতিল করার দাবিতে কম করে এক কোটি মানুষের স্বাক্ষর ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে মুসলিম সংগঠন জমিয়ত-ই-উলেমা হিন্দ।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে প্রকাশিত একটি খোলাচিঠিতে সই করা দেশটির বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (অনিয়মিত বা খণ্ডকালীন সেনা) সেনাদের মধ্যে কর্তব্যরত সবাইকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সময় শুক্রবার এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা।-খবর এসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি)।
এপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইডিএফের এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘রিজার্ভ সদস্যদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব থাকা সেনাসহ অন্য কারোরই অধিকার নেই সামরিক মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া।’
যুদ্ধে সক্রিয় থাকা অবস্থায় খোলা চিঠিতে সই করে সেনারা তাদের বাহিনীর কমান্ডার ও অধীনদের মধ্যকার শৃঙ্খলা ও আস্থা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে যুদ্ধে কর্তব্যরত রয়েছেন এমন যেসব সদস্য ওই খোলাচিঠিতে সই করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে। তবে ঠিক কতজন সদস্যকে বরখাস্ত করা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করায় ইসরায়েল প্রশাসনের সমালোচনা করে দেশটির গণমাধ্যমে একটি খোলাচিঠি প্রকাশিত হয়। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসহ বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার সদস্যরা সই করেন।
ইসরায়েলে প্রশাসন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা খোলাচিঠিতে অভিযোগ করেন। তাছাড়া হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রশাসনের ব্যর্থতারও সমালোচনা করা হয়। প্রয়োজনে যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দেন তারা।
এমন এক সময়ে এই খোলাচিঠি প্রকাশিত হয়েছে, যখন হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফেরানোর অজুহাতে পুনরায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। উপত্যকাটিতে খাদ্য, জ্বালানিসহ জরুরি মানবিক সেবার প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল প্রশাসন।
হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মৃত বলে জানা গেছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলাতেই তারা প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েল হামলা শুরু করলে বাকি জীবিত জিম্মিদের প্রাণও ঝুঁকিতে পড়ার কথা জানায় হামাস।
তবে এতে ভ্রূক্ষেপ না করেই ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খোলাচিঠিতে সই করা সেনারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা না জানালেও গাজায় যা হচ্ছে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করেন।
এই চিঠির নেতৃত্বে থাকা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট গাই পোরান বলেন, ‘ইসরায়েলি প্রশাসনের গাজায় এই হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এতে তারা জিম্মি ও ইসরায়েলের বহুসেনাসহ নিরাপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। অথচ এই হামলার সুস্পষ্ট বিকল্প কিন্তু প্রশাসনের হাতে ছিল।’
তবে চিঠিতে সই করা সেনাদের মধ্যে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তার জানা নেই উল্লেখ করে গাই বলেন, ‘কেউ বরখাস্ত হয়েছে বলে শুনিনি আমি, তবে চিঠি প্রকাশের পর আরও অনেক সেনা এতে সই করছেন।’
এই চিঠি প্রকাশের ঘটনাকে তাচ্ছিল্য করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘বিদেশি কিছু এনজিওর অর্থায়নে এক ঝাঁক আগাছা এই কাজ করেছে। ডানপন্থি জোট সরকারের পতনের উদ্দেশ্যেই তারা এসব করছে।’
সাধারণত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের সেনাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, তাই প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব কমই তাদের প্রতিবাদ করতে শোনা যায়। তবে বর্তমানে চিত্র বদলাচ্ছে।
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ চালানোর বিষয়ে সবাই একমত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নমত বাড়ছে। গাজায় অব্যাহত হামলার সমালোচনা বেড়েই চলেছে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে। বিশেষত যুদ্ধে সেনাদের নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে ও জিম্মিদের মুক্তিতে ব্যর্থতায় নেতানিয়াহু প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান টানাপোড়েন আরও বাড়ছে। বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনৈতিক পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। এই উত্তেজনা এখন পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। সব দেশের ওপর পালটা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেও চীনের পণ্যে স্থগিত না করে উল্টো শুল্ক ২১ শতাংশ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে চীন।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর চীন প্রায় ৪৩৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ১৪৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য চীনে রপ্তানি করেছে। নতুন শুল্কের কারণে উভয় দেশের শিল্পক্ষেত্রে তীব্র সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। মার্কিন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত খরচ, কর্মী ছাঁটাই এবং প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
শুল্ক যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ৮০ শতাংশ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এতে বৈশ্বিক জিডিপি ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে সংস্থাটি।
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনকে মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী গোপন অস্ত্র আছে। তিনি বলেছেন, এসব অস্ত্রের ভয়াবহতা সম্পর্কে কেউ কখনো ধারণাও করতে পারবে না। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সামরিক ক্ষমতার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী অস্ত্র আছে।
গত বুধবার ওভাল অফিসে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, চীনের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে আপনি আতঙ্কিত কি-না। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বের অন্যতম একজন স্মার্ট লোক। তিনি এমন কাজ করবেন না। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র খুবই শক্তিশালী দেশ। এই দেশটির এত ক্ষমতা ও অস্ত্র আছে যে, বিশ্বের কেউ সেই সম্পর্কে ধারণাই করতে পারে না।
এদিকে চীন ও ইউরোপের কাছেও অস্ত্র আছে। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সয়া বীজ। এই বীজ যে কোনো আকারে পুরো বীজ, পশুখাদ্য বা তেল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি শিল্পের একটি মূল উপাদান। এটি আমেরিকার কৃষি আয়ের অন্যতম বড় উৎস এবং দেশের জিডিপির প্রায় ০.৬ শতাংশের সমান। মার্কিন কৃষি বিভাগ অনুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সয়া বীজ উৎপাদনকারীর সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি এবং এই শিল্পের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এই শিল্পের মূল্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১শ’ ২৪ বিলিয়ন ডলার, যা অনেক দেশের অর্থনীতির চেয়েও বেশি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধারাবাহিক শুল্ক আরোপের জবাবে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের মাধ্যমে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। বেইজিং স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা এই শুল্ক যুদ্ধের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে। চীন অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ জোরপূর্বক ও অনৈতিক এবং তারা এই বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। তীব্র বাকযুদ্ধের পাশাপাশি চীন এখন কৌশলগতভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোট গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে, যাতে আমেরিকার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করে এই শুল্কনীতি প্রত্যাহার করা যায়।
চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে তারা বাণিজ্য জোরদার করতে আলোচনায় বসেছে। তবে চীনের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, তারা চীনের সঙ্গে একজোট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করল চীন
গতকাল শুক্রবার চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্কহার ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করছে। এই নতুন শুল্ক আজ শনিবার থেকে কার্যকর হবে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বেইজিংয়ের সঙ্গে একত্র হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা নিপীড়নের’বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো আহ্বান জানানোর কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঘোষণা আসল।
এর আগে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। তার আগে বুধবার চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করে ট্রাম্প প্রশাসন। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার চীনও মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ৩৪ থেকে ৮৪ শতাংশ করে। আর একদিন পরেই মার্কিন পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপ করলো বেইজিং।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান শুল্কহারের প্রেক্ষাপটে মার্কিন পণ্যের জন্য চীনা বাজারে গ্রহণযোগ্যতার কোনো সম্ভাবনা নেই। যুক্তরাষ্ট্র বারবার অস্বাভাবিকভাবে উচ্চহারে যে শুল্ক আরোপ করছে, তা এখন শুধুই একটি সংখ্যার খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এটির কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক বাস্তব ভিত্তি নেই।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণেই বিশ্ব অর্থনীতি, বাজার ও বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থাগুলো বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই বৈশ্বিক অস্থিরতার সম্পূর্ণ দায় যুক্তরাষ্ট্রকেই নিতে হবে। চিনপিং প্রশাসন আরও দাবি করেছে, ট্রাম্প অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চীনের চাপের ফলেই।
দক্ষিণ ফ্লোরিডায় একটি প্রধান মহাসড়কের কাছে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ৩ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও একজন।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে দক্ষিণ ফ্লোরিডায় একটি প্রধান আন্তঃরাজ্য মহাসড়কের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং একটি গাড়ি রেললাইনের উপর পড়ে যায়। এতে এসব হতাহত হয় বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বোকা র্যাটন ফায়ার রেসকিউর সহকারী প্রধান মাইকেল লাসাল জানিয়েছেন, বিমান দুর্ঘটনায় তিনজনই নিহত হয়েছেন। বিমানটি মাটিতে পড়ার পর আগুনের কুণ্ডলির তৈরি হয়। এতে দুর্ঘটনাস্থলের পাশের গাড়িতে থাকা একজন আহত হয়েছেন।
লাসাল জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর বোকা র্যাটন বিমানবন্দরের কাছে ইন্টারস্টেট ৯৫-এর কাছে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
দুর্ঘটনার শিকার সেসনা ৩১০ বিমানটিতে তিনজন আরোহী ছিলেন বলে জানিয়েছে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
সংস্থাটি একটি ই-মেইলে বলেছে, বোকা র্যাটন বিমানবন্দর থেকে টালাহাসির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এটি বিধ্বস্ত হয়।
দমকল কর্মকর্তারা দক্ষিণ ফ্লোরিডা সান সেন্টিনেলকে জানিয়েছে, বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে একটি গাড়িকে রেললাইনের উপরে ধাক্কা দিয়েছে, যার ফলে লাইনটি বন্ধ হয়ে গেছে।
বোকা র্যাটনের মেয়র স্কট সিঙ্গার এক বিবৃতিতে বলেছেন, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ‘আমরা গভীরভাবে দুঃখিত যে আজ আমাদের একটি বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এই মুহূর্তে আরও বিস্তারিত জানা যাচ্ছে। আমরা জরুরি উদ্ধারকারী এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। তদন্ত চলাকালে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ধৈর্যধারণের অনুরোধ করছি এবং সহযোগিতা কামনা করছি।’
এনটিএসবি’র নেতৃত্বে ঘটনাটির তদন্ত করছে এফএএ এবং জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড।
জানুয়ারিতে ওয়াশিংটনের কাছে মাঝ আকাশে বিমানের সংঘর্ষে ৬৭ জন নিহত হন। ফেব্রুয়ারিতে সিয়াটল বিমানবন্দরে একটি বিমান আরেকটি বিমানকে ধাক্কা দেয়। মার্চ মাসে ডেনভারে অবতরণের পর আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে আগুন ধরে যায়—এতে আহত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়
জাতিসংঘের পরমাণু ওয়াচডগের ইনসপেক্টরদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছে ইরান। দেশটি জানিয়েছে, দেশের ওপর বাইরের হুমকি অব্যাহত থাকলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের বহিষ্কার করা হতে পারে। গতকাল শুক্রবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরান জানিয়েছে, দেশের ওপর বাইরের হুমকি অব্যাহত থাকলে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার পরিদর্শকদের বহিষ্কার করা হতে পারে। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ওমানে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় সদিচ্ছা দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশটি।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাঈ গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা সতর্কতা ও সদিচ্ছার সঙ্গে কূটনীতিকে একটি প্রকৃত সুযোগ দিচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এই সিদ্ধান্তের যথাযথ মূল্যায়ন করা, যদিও তারা এখনো শত্রুতা দেখাচ্ছে।
শনিবার ওমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিদের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই ইরান এমন মন্তব্য করেছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফের ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেন। বুধবার তিনি বলেন, আলোচনায় ব্যর্থ হলে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই নেওয়া হতে পারে এবং এই পদক্ষেপে ইসরায়েল নেতৃত্ব দেবে।
এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপদেষ্টা রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী শামখানি বৃহস্পতিবার বলেন, বাইরের হুমকি ও সামরিক আগ্রাসনের সম্ভাবনার কারণে পারমাণবিক পর্যবেক্ষকদের বহিষ্কার ও সহযোগিতা বন্ধের মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আরও সুরক্ষিত স্থানে স্থানান্তরের বিষয়টি বিবেচনা করছি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, এই ধরনের হুমকি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তিনি সতর্ক করেন, এই পদক্ষেপ ইরানের জন্য একটি গুরুতর ভুল হিসেব হতে পারে।
তিনি আরও যোগ করেন, এই বৈঠক একটি বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ, কোনো বৃহত্তর কাঠামোর অংশ নয়। এটি কেবল নির্ধারণ করার জন্য যে ইরান আসলেই আলোচনায় আগ্রহী কি না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও তেলের নেটওয়ার্ককে কেন্দ্র করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ইয়েমেনে বোমাবর্ষণ কার্যক্রমের পাশাপাশি ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়ায় ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন পারমাণবিক চুক্তি করবে ইরান?
বিশ্ব রাজনীতির উত্তাল পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পারমাণবিক চুক্তির কথা চিন্তা করছে ইরান। সাম্প্রতিক নানা হুমকি ও চাপের মধ্যেই এই উদ্যোগ গ্রহণের কথা ভাবছে তেহরান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, উত্তেজনা প্রশমনে এটি হতে পারে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতের বিস্তৃত চুক্তির সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করতে পারে।
গত বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দুই মাসের মধ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করলে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হবে। এর আগে গত মাসে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প এই দুই মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করেন। ট্রাম্পের দাবি, এই সময়ের মধ্যেই ইরানকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু ইরান মনে করে, এত স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই চুক্তি করা সম্ভব নয়।
এই অবস্থায় ইরান একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কথা ভাবছে যাতে করে দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতায় পৌঁছানোর সময়সীমা বাড়ানো যায়। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্প পরিচালক আলী ভায়েজ অ্যাক্সিওসকে বলেন, ’ইরানিরা বিশ্বাস করে, ট্রাম্প যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তা যথেষ্ট নয়। তাই তারা চূড়ান্ত চুক্তির পথে অন্তর্বর্তী সমঝোতার কথা ভাবছে।’ এটি কেবল সময়ক্ষেপণ নয়, বরং সংলাপ ও সহযোগিতার একটি কার্যকর ধাপ হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু হবে। তবে ইরান এমন কোনো সরাসরি আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করে জানায়, ওমানে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এবং হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের মধ্যে মধ্যস্থতাপূর্ণ আলোচনা হবে। এই আলোচনার মধ্যস্থতা করবেন ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আল-বুসাইদি। তবে একইসঙ্গে ট্রাম্প বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন—চুক্তি না হলে বোমাবর্ষণ বা কঠোর শুল্ক আরোপ হতে পারে।
বিশ্বের নজর এখন এই সম্ভাব্য চুক্তি ও মধ্যস্থতামূলক আলোচনার দিকে। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা ও অবিশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে এটি যদি বাস্তবে রূপ নেয়, তাহলে তা হতে পারে পারমাণবিক সংকট নিরসনের পথে একটি আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ। বিশ্ব শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য এমন সংলাপ এবং কৌশলগত সমঝোতা আজ আরও জরুরি হয়ে উঠেছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। ব্যাপক সমালোচনার মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। সেখানে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস গাজায় ইসরায়েলের ত্রাণ অবরোধের কারণে আরও রোগ ও মৃত্যুর আশঙ্কা করেছেন। সেখানের ১০ হাজারের বেশি মানুষকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ৮৮৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৫ হাজার ৮৭৫ জন। যদিও উপত্যকাটির সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬১ হাজার ৭০০ জনে দাঁড়িয়েছে। কারণ ধ্বংসস্তূপের মধ্যে যারা চাপা পড়েছেন আশঙ্কা করা হচ্ছে তারাও মারা গেছেন।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ক্রমাগত নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত এই উপত্যকার ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ ফিলিস্তিনি।
এদিকে গত মঙ্গলবার প্রকাশিত হওয়া পিউ রিসার্চের ওই জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক এখন ইসরায়েলের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের আগে ২০২২ সালের মার্চে করা এক জরিপে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানদের তুলনায় মূলত ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলের প্রতি বেশি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকেন। পিউ রিসার্চের জরিপে জানা গেছে, বর্তমানে ৬৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ৩৭ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে ২০২২ সালের পর এই হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।
গাজায় ওষুধের মজুত সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে
৮০,০০০-এরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী এবং দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ১,১০,০০০ মানুষ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ গ্রহণ করতে পারছেন না। গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে ওষুধের মজুত সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য উদ্ধৃত করে এ খবর জানিয়েছে ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিম।
প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের মজুত সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, ৫৯% প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং ৫৪% ক্যান্সার ও রক্ত-সংশ্লিষ্ট রোগের ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮০ হাজারেরও বেশি ডায়াবেটিস রোগী এবং ১ লাখ ১০ হাজার দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ গ্রহণ করতে পারছেন না।
মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই সংকটের কারণ হলো সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়া। দখলদার বাহিনী হাসপাতাল ও ক্লিনিকের জন্য চিকিৎসা সরবরাহ এবং ওষুধসহ মানবিক সহায়তা সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর আইইডি হামলা
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সামরিক যানবাহনে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) হামলা হয়েছে। এমন দাবি করেছে সেখানকার যোদ্ধাদল জেনিন ব্রিগেড।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, জেনিন ব্রিগেড ইসরায়েলি সামরিক যানবাহনে ‘অত্যন্ত বিস্ফোরক’ আইইডি হামলার দাবি করেছে। আল-জাজিরা আরবির সংবাদদাতারা জানান, ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইরত ফিলিস্তিনিদের একটি গোষ্ঠী জেনিন ব্রিগেড। তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। এই দলটি এক বিবৃতিতে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বিবৃতিতে তারা বলেছে, একটি অত্যন্ত বিস্ফোরক ডিভাইস আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং জেনিনের সিলাত আল-হারিথিয়া শহরের প্রবেশপথে শত্রু যানবাহন পৌঁছালে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
তবে প্রাথমিকভাবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলি বাহিনীর থেকে এখনও কোনো তথ্য জানানো হয়নি। আল-জাজিরা বলেছে, সংবাদদাতারা এ বিষয়ে খোঁজ রাখছেন। কোনো পক্ষ থেকে নতুন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা পাঠকদের জানিয়ে দেবে।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) সশস্ত্র শাখা আল-কুদস ব্রিগেডের নাবলুস ব্যাটালিয়নও নাবলুসের পুরাতন শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর হামলা করেছে। কয়েকটি স্থান থেকে যুদ্ধের খবর এসেছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি খুবই নাজুক হওয়ায় বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় নাবলুসের পুরাতন শহরে নিজ বাড়ি থেকে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক সামের খুওয়াইরাকে ধরে নিয়ে গেছে তারা।
বৃহস্পতিবার ভোরে অধিকৃত পশ্চিম তীরের নাবলুসে অভিযান চালায় বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনী। এ সময় সামেরের বাড়িতে আচমকা ঢুকে পড়ে তারা। একই সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নিকটবর্তী বালাতা শরণার্থী শিবিরে অনুপ্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। তারা বাড়ি থেকে ফিলিস্তিনের বের করে দেয় এবং বেশ কয়েকজনকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়।
ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য নাবলুসের পুরাতন শহরেও হামলা চালিয়েছে। আজাজ মসজিদের সামনে সামরিক যানবাহন মোতায়েন করা হয়েছে এবং গ্রেট সালাহ আল-দীন মসজিদের চারপাশ স্থল বাহিনী ঘিরে রেখেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পুরাতন শহরের আকাবা পাড়ায় একটি ফিলিস্তিনি বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে। গত মাসে, ইসরায়েলি বাহিনী পুরাতন শহরের বেশ কয়েকটি মসজিদ তল্লাশি করে এবং লুটপাত চালায়। এ নিয়ে শহরগুলোতে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সমর্থন এবং সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তবে ৫৩ শতাংশ মার্কিনি ইসরায়েলকে পছন্দ করেন না। বর্তমানে অধিকাংশ মার্কিন নাগরিকই ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। সম্প্রতি পিউ রিসার্চের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন হামলাই এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত মঙ্গলবার পিউ রিসার্চের ওই জরিপটি প্রকাশিত হয়েছে। এই জরিপে দেখা গেছে, ৫৩ শতাংশ মার্কিন নাগরিক এখন ইসরায়েলের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলা এবং পরবর্তীতে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের আগে ২০২২ সালের মার্চে করা এক জরিপে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকানদের তুলনায় মূলত ডেমোক্র্যাটরা ইসরায়েলের প্রতি বেশি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকেন। পিউ রিসার্চের জরিপে জানা গেছে, বর্তমানে ৬৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট এবং ৩৭ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন। গাজা যুদ্ধ শুরুর আগে ২০২২ সালের পর এই হার বেড়েছে ১০ শতাংশ।
কমবয়সি রিপাবলিকান বিশেষ করে যাদের বয়স ৫০ বছরের কম তাদের মধ্যে ইসরায়েলকে অপছন্দ করার হার বেড়েছে। এই বয়সি প্রায় ৫০ শতাংশ রিপাবলিকান ইসরায়েলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত কয়েক বছরে মার্কিন ইহুদিদের সঙ্গে ইসরায়েলের দূরত্ব বেড়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই দূরত্ব আরও বেড়েছে।
ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও ইসরায়েলকে নিয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বেড়েছে। এবারের জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ ডেমোক্র্যাট ইসরায়েলের বিষয়ে নেতিবাচক কথা বলেছেন, যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে শুধু ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সি রিপাবলিকান গ্রুপ ছাড়া বাকি বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন, গাজায় ইসরায়েলের হামলা তাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
অন্তত ৭৩ শতাংশ মার্কিন ইহুদি এখনো ইসরায়েলের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব ধারণ করেন। তাদের পর শ্বেতাঙ্গ ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে ইসরায়েলের পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব বেশি, যা প্রায় ৭২ শতাংশ।
শ্বেতাঙ্গ প্রোটেস্ট্যান্ট ও ক্যাথলিক উভয় দলের মানুষের মধ্যে ইসরায়েলের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব বেড়েছে। এ হার যথাক্রমে ৫০ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ। এ ছাড়া মার্কিন মুসলিমদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ইসরায়েলের বিপক্ষে ও ১৯ শতাংশ পক্ষে মত দিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে ছোট্ট একটি দেশ ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে যায় ব্রিটিশ সৈন্যরা। সে সময়ই ইহুদিরা ঘোষণা করে নিজস্ব রাষ্ট্র ইসরায়েলের। তখন থেকেই ইসরায়েল শুধু রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকেনি বরং তাদের পরিধি আরও বাড়িয়েছে। গত ৭৫ বছরে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে একদিকে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর মাথা ব্যথার কারণও হয়ে উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ ইসরায়েল। তারাই একমাত্র দেশ যারা শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সরাসরি নাগরিকত্ব দেয়, সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেরই ইহুদি হোক না কেন। ৭৫ বছরে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি বা সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ইসরায়েল। এটা সম্ভব হওয়ার পেছনে কাজ করেছে বেশ কয়েকটি বিষয়।
পশ্চিমা সহায়তা
ইসরায়েলের এতটা শক্তির পেছনে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকার একটা বড় অবদান আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ পেয়ে আসছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল জন্মলগ্ন থেকেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার সমর্থন পেয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন অঞ্চলটিতে ৪০০ বছরের অটোমান শাসনের অবসান ঘটিয়ে উপনিবেশ গড়েছিল ব্রিটিশরা। ফ্রান্সও এর মাঝে ছিল যদিও এই অঞ্চলটি সমঝোতার ভিত্তিতে ব্রিটেন শাসন করেছে। ইহুদিদের নিজস্ব একটি ভূখণ্ড থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে এসেছিল ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকেই।
তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিরা দলে দলে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে আসতে থাকে। এ নিয়ে আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দ্বন্দ্বও বাড়তে থাকে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তখন মুসলিমরা ছাড়াও খ্রিস্টানদের বসবাস ছিল। ইহুদিদের বসতি গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটে আরবরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই বিক্ষোভ দমনে ব্রিটেন আরবদের ওপর নির্যাতনও চালায়। পরবর্তীতে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার পরও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানাভাবে তাদের সঙ্গে ছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ইসরায়েল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং সে গণতন্ত্রকে সমর্থন দেয় ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ছিল সেই দেশ যারা ইসরায়েলকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ইসরায়েল রাষ্ট্র যেদিন প্রতিষ্ঠা হয়, ঠিক সেদিনই স্বীকৃতি দিয়েছিল আমেরিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ‘অফিস অব দ্য হিসটোরিয়ানসে’ উল্লেখ রয়েছে হ্যারি এস ট্রুম্যান ১৯৪৬ সালেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ইহুদি রাষ্ট্রের ব্যাপারে তার সমর্থন ঘোষণা করেন।
আর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা হলেও এ অঞ্চলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রভাবটাই বেশি ছিল। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। ইসরায়েল পশ্চিমাদের মদদে যখন মিসরে হামলা চালায়, তখন মিসরের পক্ষে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা করতে আগ্রহ দেখায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকাতে ব্রিটিশ সেনাদের হটিয়ে অবস্থান নেয় আমেরিকা।
মূলত ইসরায়েলের জন্মই হয়েছে পরাশক্তিদের বিশাল সমর্থনে যেটা ইসরায়েলের ক্ষমতায়নে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া এটাও মনে করা হয় যে ইহুদিদের সঙ্গে শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এমন নানা দিক পশ্চিমা চিন্তাধারার সঙ্গে মিলে যায় যেটা আরবদের চেয়ে ভিন্ন।
সামরিক ও প্রযুক্তির বিকাশ
প্রতিবেশী মিসর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সবগুলো দেশ শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি ইসরায়েলের উত্থান। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনটি পুরোদমের যুদ্ধ (১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩) এবং আরও বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল।
এভাবেই টিকে থাকার লড়াই ইসরায়েলকে আরও শক্ত করেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন ইসরায়েলের সামরিক ও প্রযুক্তিগত আধিপত্য পশ্চিমাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটেছে প্রায় আমেরিকার বিপরীতে আর ইসরায়েলের বিকাশ হয়েছে আমেরিকার বন্ধু হিসেবে।
তবে ইসরায়েলের ক্ষেত্রে দক্ষতার মাত্রাটা ভিন্ন। আধুনিক অস্ত্র, সাইবার সিকিউরিটি, আকাশ প্রতিরক্ষা, মিসাইল ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা- এসব দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে ইসরায়েল। আমেরিকার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েলের প্রযুক্তিকে অত্যাধুনিক করতে প্রভাব রেখেছে আমেরিকা। ২০২৩ অর্থবছরে যৌথ সামরিক প্রকল্পে ৫২ কোটি মার্কিন ডলারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস যার মাঝে ৫০ কোটি শুধু মিসাইল তৈরির খাতের জন্য। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়েও ইসরায়েলকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ ইসরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান করেছে। এভাবেই ইসরায়েল দিন দিন আরও খ্যাতি অর্জন করেছে। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল শুরু থেকেই চেয়েছে সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে। কারণ আরব রাষ্ট্রগুলোর মাঝখানে তাদের টিকে থাকার জন্য এটাই ছিল একমাত্র পথ। ইসরায়েল তাদের সামরিক শক্তির বিকাশও ঘটিয়েছে কৌশলে এবং দূরদৃষ্টি মাথায় রেখে।
দেশটিতে অসুস্থ এবং বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া সব নাগরিকের ১৮ বছর বয়সের পর বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হয়। তবে এটি শুধু ইহুদিদের জন্য বাধ্যতামূলক। সামরিক প্রশিক্ষণ পুরুষদের জন্য ৩২ মাস এবং নারীদের জন্য ২৪ মাস।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ
শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে ইসরায়েল। তাদের চমক জাগানো সাফল্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাদের কৃষিখাত। ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে ইসরায়েল রাষ্ট্রের যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে পানি এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল।
কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরণের শস্য ফলানোর সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি। আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর মতে ইসরায়েলের ফুড প্রসেসিং শিল্প ক্রমাগত নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স। স্থানীয় সময় বুধবার ফ্রান্স ফাইভ টেলিভিশনের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আগামী জুনে জাতিসংঘে একটি সম্মেলন হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে ফ্রান্স এই সম্মেলনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ওই সম্মেলনেই ফ্রান্সের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চান মাখোঁ। তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতির বিষয়ে আমাদের অবশ্যই এগুতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যে আমরা এটা করতে চাই।’
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফিলিস্তিন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সের স্বীকৃতির বিষয়টি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষা ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা সঠিক পথে এগোনোর একটি পদক্ষেপ হবে।
তবে এমানুয়েল মাখোঁর এই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে যেকোনো ‘একতরফা স্বীকৃতি’ হামাসের হয়ে ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৬টিই ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে গত বছর স্বীকৃতি দিয়েছে আর্মেনিয়া, স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বাহামাস, জ্যামাইকা, বার্বাডোস ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেছেন, গাজায় যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে তার দেশ প্রস্তুত।
বুধবার মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্ক সফরে রওনা হওয়ার আগে তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে গাজার প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেওয়া হতে পারে। আহত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অনাথদের অস্থায়ীভাবে ইন্দোনেশিয়ায় এনে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রাবোও বলেন, ‘আমরা আহতদের, মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের এবং অনাথদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে এবং গাজায় ফেরার মতো নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি জানান, কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ইন্দোনেশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে ফিলিস্তিনি ও অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করার জন্য তিনি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ নয়, তবে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান থেকেই ইন্দোনেশিয়া সংঘাত নিরসনে তার ভূমিকা বাড়াতে চায়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছরের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হন এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
এদিকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করার দুই মাস পর প্রাবোও এ প্রস্তাব দিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এর আগেও বলেছিলেন, প্রয়োজনে গাজায় শান্তিরক্ষী সেনা পাঠাতে প্রস্তুত তার দেশ।