উদ্ধারকর্মীরা যখন মিয়ানমারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ৬৩ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করছিলেন, তখন তার মতো আরও অনেকের ফিরে আসার আশা ফিকে হয়ে গেছে। গৃহযুদ্ধকবলিত দেশটিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে এরইমধ্যে প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, এই সংখ্যাটা বেড়ে কোথায় গিয়ে ঠেকবে; তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আশার কথা, এখনো জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে।
গৃহযুদ্ধের কারণে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির মানবিক সংকট বহু পুরোনো। এই ভূমিকম্প সেই সংকটকে আরও ভয়াবহ মাত্রায় নিয়ে গেছে। রাজধানী নেপিদোর উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন ধসে পড়ার পর ইট-পাথরের স্তূপের নিচে ঢাকা পড়েছিলেন ওই নারী। কিন্তু তাকে সফলভাবে তুলে আনা সম্ভব হয়েছে।
শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে আঘাত হানে ভূমিকম্প। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পর জীবিতদের উদ্ধারের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে।
দেশটির রাজধানী নেপিদোর একটি ফোরামে জান্তা সরকারের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুই হাজার ৭১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। চার হাজার ৫২১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন।’
মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশ থেকে অনুভূত হয়েছে এই বিধ্বংসী ভূমিকম্প। এতে অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। সড়ক ও সেতু ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে একদিকে উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বেশিরভাগ প্রাণহানি হয়েছে মান্দালয় ও নেপিদোতে। ইউনিসেফের মিয়ানমার প্রতিনিধি জুলিয়া রিস বলেন, ‘এখানে ব্যাপক সহায়তা দরকার। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আরও বাড়ছে। জীবনরক্ষাকারী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ কমে আসছে। আক্রান্ত এলাকাগুলোতে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরবরাহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।’
উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভেঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।’
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
সূত্র: ইউএনবি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ‘মুক্তি দিবস’ এর দিন নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে প্রস্তুত। তবে তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিশ্বকে এমন এক আক্রমণের সম্ভাবনা সম্পর্কে অনুমান করতে বাধ্য করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করতে পারে। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ যখন তীব্রতর হচ্ছে, তখন সকলের দৃষ্টি বুধবারের দিকে। ট্রাম্প বলেছেন, বুধবার হবে ‘মুক্তি দিবস’ যা এমন একটি মুহূর্ত যখন তিনি এমন কিছু শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশী পণ্য থেকে মুক্ত করার তার প্রতিশ্রুতি পুরন করবে।
ওয়াল স্ট্রিটের বাজার বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাথে ট্রাম্প তাঁর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করবেন এবং প্রতিশ্রুতি দেবেন যে তারা আমেরিকাকে অন্যায্য বিদেশি প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করবেন এবং মার্কিন শিল্পের একটি নতুন ‘স্বর্ণযুগ’ তৈরি করবেন।
ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করা দেশগুলোকে আঘাত করার জন্য পারস্পরিক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রিপাবলিকান বিলিয়নেয়ারের শুল্কের প্রতি দীর্ঘদিনের আকর্ষণ বিদ্যমান। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মুখোমুখি তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, বন্ধু ও শত্রু উভয়ের সাথেই আমেরিকার বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবিলায় এটিই একমাত্র হাতিয়ার।
তিনি যুক্তি দিয়েছেন, শুল্ক মার্কিন শিল্পগুলোকে অন্যায্য বিদেশী প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করে। ফেডারেল সরকারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে এবং অন্যান্য দেশ থেকে ছাড় দাবি করার জন্য সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা জোর দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত হারে বিস্তৃত শুল্ক বিপরীতমুখী হতে পারে।
সমালোচকরা বলছেন, আমদানিকারকরা এই খরচ বহন করলে কেবল মার্কিন ভোক্তাদের ওপরই এর প্রভাব পড়বে না, বরং তারা দেশে ও বিদেশে ক্ষতিকর মন্দার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণার কয়েকদিন আগে থেকেই বিশ্ববাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে, অন্যদিকে সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুত থাকা দেশগুলো আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপ ট্রাম্পের আমেরিকা এবং তার ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান এবং কেবল বাণিজ্য নয়, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং প্রায় সবকিছুতেই গভীর ব্যবধানকেও তুলে ধরে।
অন্যান্য দেশগুলো যে ধরনের শুল্ক আরোপ করে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শুল্ক আরোপিত হবে বলেই তিনি প্রাথমিকভাবে জানান।
সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে মার্কিন মিডিয়া জানিয়েছে, তিনি ২০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথাও বিবেচনা করছেন এবং কিছু দেশের ওপর অগ্রাধিকারমূলক আচরণ করা হতে পারে।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, ট্রাম্প ঘোষণার প্রাক্কালে তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের সাথে একটি চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য বৈঠক করছেন।
তিনি আরো জানান, বুধবারের ঘোষণার পরে ‘অবিলম্বে’ শুল্ক কার্যকর হবে। অন্যান্য দেশের সাথে আলোচনার জন্য কোনো প্রকার বিলম্ব করা হবে না।
ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে বেশ কয়েকটি শুল্ক ঘোষণা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থেকেছেন।
তবে তার পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে মূল্য বৃদ্ধি ও ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটানোর এক ক্ষতিকারক বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডাসহ প্রধান অর্থনীতিগুলো প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
মঙ্গলবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি কানাডার পক্ষ থেকে লড়াইয়ে যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ করে আসছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মঙ্গলবার বলেছে, তারা এখনও একটি সমাধান নিয়ে আলোচনা করার আশা করছে তবে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও তাদের কাছে রয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার ট্রাম্পের সাথে যুক্তরাজ্য-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তির জন্য ‘ফলপ্রসূ আলোচনা’ নিয়ে কথা বলেছেন। ভিয়েতনাম মঙ্গলবার বলেছে, তারা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমাবে।
মার্চ মাসে চীন সকল পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে বেইজিং প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ শুরু করে। ইইউ এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে তাদের নিজস্ব পদক্ষেপ উন্মোচন করেছে।
চীনের সামরিক বাহিনী বুধবার জানিয়েছে, তারা তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে অনুশীলনের অংশ হিসেবে ’লাইভ-ফায়ার’ মহড়া পরিচালনা করেছে। চীন আরো জানিয়েছে, তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছে।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
সামরিক মুখপাত্র সিনিয়র কর্নেল শি ই বলেন, পূর্ব চীন সাগরে ’দূরপাল্লার লাইভ-ফায়ার মহড়া’ পরিচালিত হয়েছে। এই মহড়ায় গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং জ্বালানি সুবিধার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানা হয়েছে এবং কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের জন্য ১৭ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা পাঠিয়েছে। এসব খাদ্য ইতোমধ্যে চট্রগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে।
আমেরিকান কৃষকদের উৎপাদিত এই খাদ্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দশ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গাকে জরুরি সহায়তা প্রদানের অংশ হিসেবে সরবরাহ করা হবে।
আজ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অবদান ধারাবাহিক পর্যায়ে রয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে পর্যাপ্ত সাহায্য পৌঁছানো নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দাতা এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের বোঝা ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত সংস্থান সরবরাহ করতে উৎসাহিত করেছে।
চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ১২।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাস- মিনিবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
নিহত হলেন, লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের মো. পারভেজের ছেলে মো. জাহেদ, একই এলাকার আলমের ছেলে রিফাত (২৯), পদুয়া ইউনিয়নের চরপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে নাজিম, সুখছড়ি মৌলভীপাড়ার আমির হোসেনের ছেলে জিয়ান হোসেন অপু ও সাতকানিয়া উপজেলার ডেলিপাড়ার ছাত্তারের ছেলে ছিদ্দিক।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, ‘সকালে মহাসড়কে বাস-মিনিবাস সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।’
লিবিয়ার মিসরাতা শহরে ২৩ অপহৃত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুজন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) দিবাগত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে লিবিয়ায় বাংলাদেশি দূতাবাস এমন তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, লিবিয়া পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ২৩ জন অপহৃত বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে এবং এ ঘটনায় জড়িত দুই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। মিসরাতার আল-গিরান থানায় বেশ কয়েকজন বিদেশিকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি এই তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের মাধ্যমে অপহরণকারী চক্রের অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ সফল অভিযান পরিচালনা করে জিম্মিদের মুক্ত করে। পরবর্তীতে উদ্ধারকৃত ব্যক্তি ও গ্রেপ্তারকৃতদের আইনি প্রক্রিয়ার জন্য আল-গিরান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাস মিসরাতার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও কার্যকর উদ্যোগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় আইনি সহায়তা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করতে দূতাবাস সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
ভূমিকম্পে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মঙ্গলবার মিয়ানমার এক মিনিট নীরবতা পালন করবে। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ২ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ব্যাংকক পর্যন্ত রাস্তাঘাট ধসে পড়েছে এবং বাড়িঘর, ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
মিয়ানমারের মান্দালয় থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
গত শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার চার দিন পরও মিয়ানমারের অনেক মানুষ এখনো বাড়ির বাইরে ঘুমাচ্ছে। আরো ভূমিকম্পের আশঙ্কায় এবং ভয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে মানুষ ফিরতে সাহস পাচ্ছে না।
গত শুক্রবার দেশটিতে স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫০মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ঠিক একই সময়ে ভূমিকম্পে নিহত মানুষের স্মরণে নীরবতা পালন করা হবে।
ক্ষমতাসীন জান্তা জনগণকে সেই সময় মন্দির এবং প্যাগোডায় প্রার্থনার আহবান জানিয়েছেন। এই সময় নীরবতা পালন করতে মিডিয়ার সম্প্রচার বন্ধ রাখতে এবং শোকের প্রতীক প্রদর্শন করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এই নীরবতা পালন পদক্ষেপটি জান্তা কর্তৃক ঘোষিত এক সপ্তাহের জাতীয় শোকের অংশ। যেখানে ’প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির প্রতি সহানুভূতি জানানোর জন্য’ আগামী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ভবনগুলোতে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
জান্তা সরকার সোমবার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩ হাজার ৯শ’ জনেরও বেশি মানুষ আহত এবং ২৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ভূমিকম্পে প্রতিবেশি থাইল্যান্ডে কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে ভূমিকম্পের ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া শহর ও গ্রামে উদ্ধারকারী দল পৌঁছালে মৃতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের দ্বিতীয় শহর এবং ১৭ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসস্থল মান্দালয় ভূমিকম্পের ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছে। অনেক আবাসিক ভবন ধ্বংসস্তূপের স্তূপে পরিণত হয়েছে।
ভূমিকম্পের ফলে শত শত বাসিন্দা চতুর্থ রাত খোলা আকাশের নিচে কাটিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে অথবা তারা ভীত ছিলেন যে আফটারশক আরো ক্ষতি করবে এই আশঙ্কায়।
ঘড়ি নির্মাতা সো টিন্ট এএফপি’কে বলেন, ’আমি নিরাপদ বোধ করছি না। আমার বাড়ির পাশে ছয় বা সাত তলা ভবন হেলে আছে। সেগুলো যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বন্ধে ইসরাইলকে চাপ দিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইয়ার্ডেন বিবাস নামে হামাসের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এক ইসরাইলি জিম্মি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই আহ্বান জানান তিনি।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এই খবর জানায়।
ইয়ার্ডেন বিবাসের স্ত্রী সিরি বিবাস ও আরো দুই সন্তান গাজায় হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন। তবে বন্দি অবস্থায় তার স্ত্রী ও দুই সন্তান ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহত হয়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় গত মাসে ইয়ার্ডেন বিবাসকে মুক্তি দেয়া হয়।
মুক্তির পর প্রথমবারের মতো এক সাক্ষাৎকারে ইয়ার্ডেন বিবাস বলেছেন, চলতি মাসে ইসরাইল নতুন করে যে সামরিক অভিযান শুরু করেছে এর ফলে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে আটক থাকা কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্ত করা সম্ভব হবে না।
গত রোববার প্রচারিত সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’-এর সাথে সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন, দয়া করে এই যুদ্ধ বন্ধ করুন এবং সমস্ত জিম্মিকে ইসরাইলে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করুন।
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি জানি তিনি সাহায্য করতে পারেন। আমি আজ এখানে একমাত্র ট্রাম্পের কারণেই। আমি মনে করি, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আবার এই যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন’।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনী হামলা শুরু হয়। টানা ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা স্থায়ী হয়নি। চুক্তি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে বিরামহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল।
এমনকি ঈদুল ফিতরের উৎসবের মধ্যেও ইসরাইলের হামলা অব্যাহত ছিল। গত দুই দিনে গাজায় ইসরাইলের হামলায় কমপক্ষে ৮০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৫ জন।
ফলে দীর্ঘ হচ্ছে হতাহতের তালিকা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ হাজার ৩৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ১৪ হাজার ৪শ’ জন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে চীন ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শীর্ষ কূটনীতিক এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
রাশিয়ার ‘স্বার্থ রক্ষায়’ সমর্থন করে মঙ্গলবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রিয়া নভোস্তিকে তিনি এ কথা বলেন।
মস্কো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই চীন বলেছেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর আকাঙ্ক্ষা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সংঘাত নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে প্রস্তুত তার দেশ। মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠকের আগে সংস্থাটি ওয়াং’র উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ পদত্যাগ করেছেন। গতকাল সোমবার তিনি পদত্যাগ করেন। এরমধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডান পন্থি জোটের মধ্যে উত্তেজনা আরো তীব্র হয়ে উঠল।
স্মোট্রিচের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় ইহুদি পাওয়ার পার্টির প্রধান ইতামার বেন গাভীরের সরকারে ফিরে আসার পর আরো মন্ত্রী পদের জন্য অনুরোধের প্রতিবাদে পদত্যাগ করলেন অর্থমন্ত্রী।
স্মোট্রিচ এখন ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটে তার আসনে ফিরে আসবেন। সেখানে অতি-ডানপন্থি রিলিজিয়াস জায়োনিজম দলের আইন প্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। যার নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন।
নেসেট সদস্য জভি সুক্কোতকে পুনর্বহাল করা নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গাভীরের সাথে বিরোধের জেরে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন স্মোট্রিচ।
স্মোট্রিচের দল বেন-গাভীরের প্রতি রাজনৈতিক চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে।
এই পদক্ষেপটি ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি জোটের মধ্যে হওয়া ভাঙনকে আরো বাড়িয়ে দিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ এবং নীতিমালা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে এই জোট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার তার চিন্তাভাবনার কথা পুনর্ব্যক্ত করে ‘এনবিসি নিউজ’কে বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে প্রার্থী হতে পারেন। এনবিসি নিউজ জানিয়েছে, যা মার্কিন সংবিধানে নির্ধারিত দুই মেয়াদের সীমা লঙ্ঘন করবে।
ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানায়।
রোববার সকালে ‘এনবিসি নিউজ’কে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ’আমি মজা করছি না’, যখন তাকে আরেকটি মেয়াদ বিষয়ে স্পষ্ট করতে বলা হয়, তখন তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, এর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি আছে যেখানে আপনি এটি করতে পারেন।
মিয়ানমারে ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দুই হাজারে পৌঁছেছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধার অভিযান ধীর গতিতে চলছে। গেল শুক্রবার দিনের মাঝামাঝিতে এশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে দেশটিতে। এরপর থেকে নিহতের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, একটি মঠ ভেঙে ২০০ বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন। একটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় ধসে পড়লে ৫০টি শিশুর প্রাণহাটি ঘটেছে। আর জুমাতুল বিদার নামাজ আদায়ের সময়ে সাত শতাধিক মুসল্লি নিহত হয়েছেন।
সাত দশমিক সাত মাত্রার ভূমিকম্পটি উৎপত্তি স্থল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ শহর মান্দালয়ে। এতে শহরের বিমানবন্দর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সড়কগুলো ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। আর ভেঙে মাটিতে মিশে গেছে শত শত ভবন।
জাতিসংঘের সহায়তা সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি করে জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে মিয়ানমারে খাদ্যসংকট ও রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। গৃহযুদ্ধে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আগে থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে আছে সেখানে। এই দুর্যোগ সেই পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি সংকট ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য ভারী যন্ত্রপাতিরও ঘাটতি রয়েছে। এতে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও হাত দিয়ে জীবিতদের উদ্ধার করতে হচ্ছে অনেককে।
ভেঙেপড়া মান্দালয়ের ইউ হ্লা থেন মঠের উদ্ধারকারীরা বলছেন, ‘তারা এখনো ১৫০ ভিক্ষুকের মরদেহ খুঁজে বেড়াচ্ছেন।’
মিয়ানমার ফর দ্য ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির প্রোগ্রাম উপ-পরিচালক লরেন ইলারি বলেন, ‘কী মাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, তা বর্তমান পর্যায়ে এসে আমরা পরিষ্কার হতে পারছি না। মান্দালয়ের আশি শতাংশ ভবন ভঙে পড়েছে।’
দেশটির তিনটি হাসপাতাল পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে ও ২২টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তারা বলছে, ‘আঘাত ও অস্ত্রোপচারের চিকিৎসার জন্য জরুরি সহায়তা দরকার। রক্ত সরবরাহ, চেতনানাশক, অপরিহার্য চিকিৎসা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা প্রয়োজন।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা জানিয়েছে, মিয়ানমারের উত্তরপশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১০ হাজারের বেশি ভবন ধসে পড়েছে।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক–ই–ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান আদিয়ালা কারাগারে ঈদের নামাজ পড়তে পারেননি। নিরাপত্তার কারণে তাঁকে ঈদের নামাজে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁস থেকে শুরু করে তোশাখানা তছরুপের মতো নানা অভিযোগে ১০০টির বেশি মামলা রয়েছে।
ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাবন্দী। আদিয়ালা কারাগারের ভেতরে কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হলেও নিরাপত্তার কারণে তিনি সেখানে যেতে পারেননি।
ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবিও কারাবন্দী রয়েছেন। ঈদের নামাজের সময় তাঁকে কারাকক্ষে থাকতে হয়েছে।
তবে কারাগারের অন্য বন্দী ও কারা কর্মকর্তারা ঈদের নামাজ পড়েছেন। আদিয়ালা কারাগারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন দিনের নিরাপত্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়।