ফ্রান্সের শ্রমমন্ত্রী এলিজাবেথ বর্নিকে দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় পর দেশটিতে একজন নারী প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের সরকারি দপ্তর এলিসি প্যালেস সোমবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এলিজাবেথ বর্নির নিয়োগের বিষয়টি জানায়। ৬১ বছর বয়সী এই নারী রাজনীতিক বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্সের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
এর আগে সামাজিক সংস্কারে নেয়া দেশটির প্রেসিডেন্টের ঘোষিত প্যাকেজের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ফ্রান্সে। সেই সময় একজন দক্ষ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান এলিজাবেথ বর্নি। বর্নির কার্যকর পদক্ষেপ আন্দোলন প্রশমনে মাখোঁ সরকারকে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
দেশটিতে সবশেষ নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করেন ইডিথ ক্রেসন। তিনি ১৯৯১ সালের মে মাস থেকে ১৯৯২-এর এপ্রিল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী জ্যঁ ক্যাসটেক্স এর আগে তার পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্টের কাছে জমা দিয়েছেন।
চলতি বছর এপ্রিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাখোঁর দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ের পর সরকারে ব্যাপক রদবদল আনার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী পদে এমন পরিবর্তন আনলেন মাখোঁ।
আগামী জুনে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হবার কথা রয়েছে ফরাসি পার্লামেন্টে। এ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লড়াইয়ে মধ্যপন্থী মাখোঁর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বামপন্থী ও কট্টর ডানপন্থীদের জোট। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একজন বামপন্থী নেতা এবং যার পরিবেশ বিষয়ে পর্যাপ্ত দখল রয়েছে তাকেই প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য মনে করেছেন মাখোঁ।
ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে আশপাশের এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং বন্দর আব্বাসের কিছু শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এতে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিস্ফোরণে বন্দরটি কেঁপে ওঠে। জরুরি উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। খবর তেহরান টাইমস, বিবিসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী বের হচ্ছে। অন্যান্য ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জরুরি দপ্তর জানিয়েছে, একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। কী কারণে ট্যাঙ্কারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তার কারণ জানা যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে হরমোজান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হরমোজান সংকট ব্যবস্থাপনা দপ্তরের প্রধান পরিচালক বলেন, বিস্ফোরণটি ব্যাপক শক্তিশালী ছিল। তবে এর কারণ এখনো অজানা।
প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, বন্দরের একটি প্রশাসনিক ভবন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এতে আরও একাধিক গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধারকারী দল বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আহতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বন্দর আব্বাসসহ স্থানীয় হাসপাতালগুলোত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ফারসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কাশেম থেকেও শোনা গেছে। যা বন্দর আব্বাস থেকে ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল) দূর অবস্থিত।
২০২০ সালে ইরানের এই বন্দরের কম্পিউটারগুলো একটি সাইবার হামলার শিকার হয়, যার ফলে পানিপথ ও সড়কপথে বন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল এর পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ইরানের আগের একটি সাইবার হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।
তবে শহিদ রাজি বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।
সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ অনুসারে, রাজধানী তেহরানের ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহিদ রাজাই ইরানের সবচেয়ে উন্নত কন্টেইনার বন্দর। এটি বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এখান দিয়ে বিশ্বের তেল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ যায়।
এদিকে, ইরনা জানিয়েছে, অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে ঘটনাস্থলে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান বলেছেন, ‘প্রতিক্রিয়া দলগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তদন্ত চলছে। আমরা বর্তমানে আহতদের সরিয়ে নিয়ে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি।’
পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। কাশ্মীরের এই ইস্যুতে পাকিস্তানের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে দুদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি। দিল্লির এমন মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদও।
রীতিমতো যুদ্ধের আশঙ্কা চিরশত্রু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা কার? যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, কার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। আলোচনা চলছে কার কত সামরিক ক্ষমতা, তা নিয়েও।
এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।
ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানিয়েছে, ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ১৯ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।
সামগ্রিক সামরিক র্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক
‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।
র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।
পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
সেনা সংখ্যা
ভারতের সক্রিয় সেনা সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা। অপরদিকে, পাকিস্তানে সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সেনা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে চার কোটি সেনা।
স্থলবাহিনী
ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে চার হাজার ৬১৪টি ট্যাংক। সামরিক যান রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি। পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে দুই হাজার ৭৩৫টি ট্যাংক। সামরিকযান রয়েছে তিন হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।
বিমান বাহিনী
ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে দুই হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে এক হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।
নৌবাহিনী
আমর্ডফোর্সেসের হিসাবে ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ দুটি। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে পাঁচটি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।
প্রতিরক্ষা বাজেট
ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।
গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে সৌদি আরব ও ইরান। দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেন সৌদি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয়পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি আরব। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ফোনালাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি।
পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।
এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পেহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। এ সময় হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
উত্তেজনা প্রশমনে ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আলোচনায় তিনি ‘উত্তেজনা কমাতে ইরানের শুভেচ্ছাপূর্ণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার’ প্রস্তাব দেন।
আরাঘচি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে লেখেন, তার দেশ ‘সংঘাত নিরসনে নিজের সদিচ্ছার মাধ্যমে সহায়তা করতে প্রস্তুত’ রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীর অঞ্চলের ওপর সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে থাকে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির পর থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে।
সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এমন একসময়ে এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল যখন পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গেই ইরানের ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস এবং উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রবল উপস্থিতি ইরানের প্রচেষ্টাকে সফল করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৬
পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে অন্তত ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) এক বিবৃতি জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বান্নু জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।
এতে দাবি করা হয়, অভিযান পরিচালনার সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হন। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানদের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে পাকিস্তানে হামলার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। যার বেশির ভাগই কেপি ও বেলুচিস্তানে। ইসলামাবাদের দাবি, শত্রু গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে হামলা পরিচালনা করছে।
পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে কাশ্মীরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দেশ দুটি একে অন্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। থেমে নেই কথার লড়াইও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এবার এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও।
অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মিত্র দেশ সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভারতের ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন সৌদি ও ইরানের সমকক্ষ কর্মকর্তারা।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।
এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।
ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারাও পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয় পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।
এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ফিরে ভিসা বাতিল করে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশদুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের তার সমকক্ষ ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।
এ সময় আলাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখান করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।
পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।
এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। এ সময়ে হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
অন্যদিকে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান।
এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশই ইরানের মিত্র। চলমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইরান দেশদুটিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমঝোতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের ইসহাক দার। শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ‘কোনো দেশ যদি ভারতের সঙ্গে তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’
এদিকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ইন্দাস নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক চুক্তি ‘ইন্দাস ওয়াটারস ট্রিটি’ কার্যত স্থগিত করেছে ভারত। ১৯৬০ সালে সই হওয়া এ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত দুটি যুদ্ধের মধ্যেও গত মঙ্গলবারের ওই হামলার আগে পর্যন্ত বহাল ছিল। এ ছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানি ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবার ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করায় দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।
ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ভারত পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হবে।
চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে? বিশেষ করে ইন্দাস অববাহিকার সেই তিনটি নদীর প্রবাহ, যেগুলো পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। চুক্তি অনুযায়ী ইন্দাস অববাহিকার রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু ভারতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ইন্দাস, ঝেলম এবং চেনাব নদীর পানির ৮০ শতাংশ পাকিস্তান পায়। পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ এই পানির ওপর নির্ভরশীল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে এ বিশাল পরিমাণ পানি আটকে রাখা বা অন্যদিকে প্রবাহিত করা বাস্তবে খুব একটা সম্ভব নয়। ভারতের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা পানির প্রবাহকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে বড় আকারে পানি জমিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষার সময় বিশাল এই জলপ্রবাহ আটকে বা ঠেকিয়ে রাখা কঠিন।
তবে ভারত যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়া নতুন বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণে যায়, তাহলে শুকনো মৌসুমে এর প্রভাব পাকিস্তানের ওপর ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, তখন নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ কম থাকে এবং ভারত যদি সেই পানি ধরে রাখে, তবে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে পানিপ্রবাহ ও বন্যা সম্পর্কিত তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখন চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারত চাইলে এ তথ্য পাকিস্তানকে জানানো বন্ধ করে দিতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগেও ভারত এ-সংক্রান্ত মাত্র ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে দিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একে ‘ওয়াটার বম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। অর্থাৎ উজানের দেশ হিসেবে ভারত যদি হঠাৎ পানি আটকে রাখে এবং পরে আকস্মিক তা ছেড়ে দেয়, তাহলে ভাটিতে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এতে ভারতের নিজস্ব এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি কৌশলগত দিকও সামনে এসেছে। ইন্দাস নদীর উৎস চীনের তিব্বতে। ২০১৬ সালে ভারতের হুঁশিয়ারির পর চীন একবার ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী আটকে দিয়েছিল। এখন চীন তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করছে, যা ভারতের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে নেওয়া ভারতের এই পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণ সহজ নয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে এর কৌশলগত প্রভাব পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এ হামলাকে ভারত সরকারের ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যেন এ ধরনের ‘নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড’ থেকে সরে আসে। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যেন পেহেলগাম হামলার মতো ঘটনা ‘পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে, পরিচালনা করে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কাজে লাগানোর’ পথ পরিহার করে। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতের ও একজন নেপালের নাগরিক। এ সময় আহত হন আরও ১৭ জন। এ ঘটনায় ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করার ভারতের এই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানি সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। এতে বলা হয়, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম ও প্রস্তুত রয়েছে-হোক তা পানিসন্ত্রাস কিংবা সামরিক উসকানি।
প্রস্তাবে বলা হয়, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়ানোর ভারতের যে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা’, তা সিনেট স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘পরিকল্পিত ও অসৎ প্রচারাভিযান’-এরও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
প্রস্তাবে ভারত কর্তৃক ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তিকে একতরফাভাবে স্থগিত করাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে উল্লেখ করা হয়। এ চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ ও বৈরিতার মধ্যেও টিকে ছিল। পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে, কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে দেয় এবং ইসলামাবাদকে ‘সীমান্তপাড়ে সন্ত্রাসে মদদদাতা’ হিসেবে অভিযুক্ত করে পদক্ষেপ নেয়।
সিনেটের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান যেভাবে ভারতের আগ্রাসনের জবাব দিয়েছে, ভবিষ্যতেও যেকোনো ভুল পদক্ষেপের মুখে কঠোর ও সঠিক জবাব দেওয়া হবে। প্রস্তাব পেশকালে ইসহাক দার বলেন, কেউ যদি পাকিস্তানে আগ্রাসনের চিন্তা করে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। অতীতে যেমন জবাব দিয়েছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারতের এমন কোনো পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলজুড়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি ও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ গ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিল ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এসময় ঘটনাস্থল পেহেলগামে সে সময় সেনা অনুপস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া প্রশ্নের মুখে ফেলে বিরোধীরা। এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে, পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত বলে ভারতের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পানি–সন্ত্রাসবাদ বা সামরিক উসকানিসহ যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে বিরোধীদের মূল প্রশ্ন ছিল-পেহেলগামের কাছে বৈসারনে হামলার সময় কেন কোনো নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল না? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রথম এই প্রশ্ন তোলেন। পরে রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংহসহ আরও অনেকে তা সমর্থন করেন।
জবাবে সরকার জানায়, বৈসারন এলাকা সাধারণত জুন মাসে শুরু হওয়া বার্ষিক অমরনাথ যাত্রার আগে থেকেই নিরাপত্তার আওতায় আসে। তখন ওই পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় এবং তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়; কিন্তু এ বছর স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলো ২০ এপ্রিল থেকেই সেখানে পর্যটক নিয়ে যাওয়া শুরু করে দেয়। প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে আগাম কোনো তথ্য ছিল না। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পর্যটন শুরু হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি।
বৈঠকে বিরোধীরা আরও প্রশ্ন তোলে-ভারতের যদি পানি সংরক্ষণক্ষমতা না থাকে, তাহলে সরকার কেন সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করল? জবাবে সরকারি প্রতিনিধি জানান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবিক লাভের জন্য নয়, বরং প্রতীকী ও কৌশলগত বার্তা দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, সেটাই এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকার কোন পথে এগোবে, তার ইঙ্গিতও এতে রয়েছে।
বৈঠকে কংগ্রেস, বিজেপি, এনসিপি-এসপি, শিব সেনা, আরজেডি, ডিএমকে ও সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন জেপি নাড্ডা, সুপ্রিয়া সুলে, প্রফুল্ল প্যাটেল, সস্মিত পাত্র, শ্রীকান্ত শিন্ডে, প্রেমচাঁদ গুপ্ত, তিরুচি শিবা ও রাম গোপাল যাদব।
‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় দুই ডজনের বেশি পর্যটক নিহতের ঘটনায় নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এ সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি ‘খুবই নিবিড়ভাবে ও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে’ পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।
এখনকার পরিস্থিতির যেন আর অবনমন না হয় তা নিশ্চিতে উভয় দেশের সরকারকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ মুখপাত্র বলেছেন, ‘পারস্পরিক ও অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে থাকা যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং সেটাই হওয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
এমন এক সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের দিক থেকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের এ আহ্বান এলো, যখন কাশ্মীরে জঙ্গি হামলাকে ঘিরে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ একে অপরের প্রতি প্রবল যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখাচ্ছে।
পেহেলগামে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ভারত এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক একটি পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এর পাল্টায় পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।
পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন কাশ্মীরি তরুণ আদিল
ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক কাশ্মীরি তরুণ। তার নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। এক বন্দুকধারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে নিহত হন আদিল। ৩০ বছর বয়সি এই তরুণ একজন ঘোড়াচালক। তিনি বৈসারনের তৃণভূমিতে আগত পর্যটকদের তার ঘোড়ায় চড়ানোর কাজ করতেন। আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেছেন, তার ছেলে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি গর্বিত।
গত বুধবার জানাজা শেষে তাকে পেহেলগামের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় অংশ নেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নিহত আদিল হুসেনের বাবা হায়দার শাহকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি শোকাহত ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ ছাড়া শত শত শোকাহত মানুষের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন। এরপরই নিহত আদিল হুসেনের বীরত্বপূর্ণ কাজটি জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করে।
নিহত আদিলের ভাই সৈয়দ নওশাদ বলেন, আদিল হুসেন কাজ করতে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্দুকধারী তার বুকে তিনবার গুলি করে। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারনে নিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা যখন পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়, তখন আমার ভাই ওদের থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যটক, যার বাবা ওই হামলায় নিহত হন, তিনি এসএমএইচএস হাসপাতালে আমাকে আদিলের বীরত্বের কথা জানান।
মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আদিলের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তিনি যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে পার্কিং এলাকা থেকে বৈসারন ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের রক্ষা করতে তিনি নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তার শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি।’
এদিকে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত বলে ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তান।
উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার প্রস্তাবটি সিনেটে উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, পানি–সন্ত্রাসবাদ বা সামরিক উসকানিসহ যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত।
প্রস্তাবে ‘ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল সংগঠিত পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়িত করার সব অসার ও ভিত্তিহীন প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা পাকিস্তান–সমর্থিত মূল্যবোধের পরিপন্থী।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই চুক্তির অধীনে সৌদির কাছে ১০ হাজার কোটি ডলারের (১০০ বিলিয়ন) বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের আগেই এ চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।
রয়টার্স জানায়, লকহিড মার্টিন, আরটিএক্স করপোরেশন, বোয়িং, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল অ্যাটমিকসের মতো শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো এ চুক্তির আওতায় থাকছে। ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহীর যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, চুক্তির আওতায় সৌদি আরবকে সি-১৩০ পরিবহন প্লেন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার সিস্টেমসহ নানা রকম উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করা হতে পারে।
তবে সৌদি আরব লকহিড মার্টিনের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কেবল ন্যাটোর মিত্র দেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকে এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে।
রয়টার্স জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। সেই প্রস্তাবিত চুক্তিতে চীনা বিনিয়োগ সীমিত করা এবং বেইজিং থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধের বিষয়টিও ছিল। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত চুক্তিতে এসব শর্ত থাকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
হোয়াইট হাউস কিংবা সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। চুক্তিতে যুক্ত কোনো অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিও রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে দেশটির ভূমিকার প্রেক্ষাপটে।
তবে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সৌদি আরবের প্রতি কঠোর অবস্থান শিথিল করে। সবশেষ, ২০২৪ সালে গাজা পুনর্গঠনে সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যা
সম্প্রতি ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুক হামলায় কয়েকজন নিহত হন। এ ঘটনার পর পাকিস্তানকে হুমকি দেয় ভারত। ভারতের হুমকির প্রতিবাদে আজাদ জম্মু ও কাশ্মীর (এজেকে)-সহ পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। খবর জিও নিউজের।
ওই হামলার সঙ্গে জড়িতদের ছাড় না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে’ মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন তিনি। এ ছাড়া ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নয়াদিল্লি। পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে পাকিস্তানও।
এদিকে পাকিস্তানে স্থানীয় একটি দলের ডাকা বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আজমল বালুচ নামের একজন ব্যবসায়ী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘ভারত যদি যুদ্ধে জড়াতে চায়, তাহলে প্রকাশ্যে এগিয়ে আসুক।’ আজমল এবং অন্য বিক্ষোভকারীরা সিন্ধু পানি চুক্তি বাতিলসহ ভারতের ‘অগ্রহণযোগ্য’ নানা হুমকির বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
২৫ বছর বয়সি মুহাম্মদ ওয়াইস বলেন, ‘পানি আমাদের অধিকার এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা এটি পুনরুদ্ধার করব। এমনকি যদি এর জন্য যুদ্ধের মাধ্যমেও কিছু করতে হয়, আমরা পিছু হটব না।’ ভারতবিরোধী স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে মুজাফ্ফরাবাদের মূল শহরেও মিছিল হয়।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সিনিয়র নেতা জাভেদ মীর বলেছেন, ‘ভারত যদি আক্রমণ করার মতো ভুল করে, তাহলে পাকিস্তানি কাশ্মীরিরা সামনের সারিতে লড়াই করবে। আমরা পাকিস্তানের জন্য মরতে প্রস্তুত।’ এ ছাড়া বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটায়ও বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভারত-শাসিত কাশ্মীরের একটি পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় এক নেপালি নাগরিকসহ ২৬ জন নিহত হন। ভারত সরকার এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে, যদিও ইসলামাবাদ এ দাবি তীব্রভাবে অস্বীকার করে এবং ‘ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশন’ হিসেবেও অভিহিত করেছে। হামলার পরদিন বুধবার প্রতিবেশী দেশটির নাগরিকদের ভিসা বাতিল ও সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ভারত।
ভারতের পদক্ষেপের জবাবে পাকিস্তানও কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভারতীয়দের ভিসা বাতিল, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত, ভারতের বিমানের জন্য আকাশসীমা বন্ধসহ বুধবার বেশ কয়েকটি পালটা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। পালটাপালটি এসব পদক্ষেপে দেশ দুটির মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা হয়তো সামরিক সংঘাতে গড়াতে পারে বলে শঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতকে হুঁশিয়ারি আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রীর
আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ারুল হক হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত যদি পাকিস্তানে কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে পাকিস্তান ‘চূড়ান্ত জবাব’ দেবে। গত বৃহস্পতিবার আজাদ কাশ্মীরের আইন সভায় দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী চৌধুরী আনোয়ারুল হক ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, সীমান্ত অতিক্রম করে যদি ভারত কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে পাকিস্তান ‘চূড়ান্ত জবাব’ দেবে।
আনোয়ারুল হক বলেন, ‘ভারতের সাহস নেই পাকিস্তানের সীমান্ত লঙ্ঘনের। কিন্তু যদি করে, তাহলে শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়বে।’ তিনি ভারতের কূটনৈতিক আচরণকে চাণক্য নীতি- অর্থাৎ ‘কূটনীতির আবরণে ছুরি মারা’ বলেও আখ্যা দেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে ভারত যে গল্প বলছে, তা ভুয়া। ইতোমধ্যে ধরা পড়ে গেছে।
আনোয়ারুল হক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভারত কোনো তৃতীয় পক্ষকে ব্যবহার করে আজাদ কাশ্মীরকে অস্থির করতে চাইতে পারে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ভারত যদি এমন কোনো দুঃসাহস দেখায়, তাহলে উপযুক্ত জবাব পাবে।’
আজাদ কাশ্মীরের এই প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ভারত এক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে ‘পানি আগ্রাসন’ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পুঁছ ও নীলম নদীর প্রবাহ ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো কাজ শুরু করেছে ভারত। এগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। ’
মোদি সরকারের সন্ত্রাসের চেহারা বিশ্ব চিনে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেছেন আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, ‘কানাডা থেকে শুরু করে কাশ্মীর পর্যন্ত মোদির ভারত রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ হিসেবে সন্ত্রাসকে বেছে নিয়েছেন। বিশ্ব আজ তা বুঝে ফেলেছে।’
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে হক বলেন, আজাদ কাশ্মীরের পতাকার পেছনে শক্তি হচ্ছে পাকিস্তান। আমরা যে স্বাধীনতা উপভোগ করি, তা ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে নেই। আমি আমাদের লাইন অব কন্ট্রোলের ওপারের ভাই-বোনদের পাশে আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি ভারত লাইন অব কন্ট্রোল লঙ্ঘন করে, তাহলে জাতিসংঘ সনদের আওতায় পাকিস্তান পালটা জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে।’ আনোয়ারুল হক বলেন, ‘পাকিস্তান একটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। ভারতসহ কোনো দেশই আমাদের সীমান্ত লঙ্ঘনের সাহস করবে না। আমরা সব সময় প্রস্তুত।’
নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত-পাকিস্তানের গোলাগুলি
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার তৃতীয় দিনের মাথায় পাকিস্তানি ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবর দিয়েছে এনডিটিভি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, বৃহস্পতিবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় চৌকি লক্ষ্য করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনুমাননির্ভর গুলির পাল্টায় ভারতীয় সেনাবাহিনী গুলি চালিয়েছে।
সামরিক সূত্র বলছে, নিরাপত্তা বাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘কার্যকর জবাব’ দিয়েছে এবং কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এক সূত্র এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘গত রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানের তরফে ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সেই গুলির কার্যকর জবাব দেওয়া হয়েছে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি লিখেছে, জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর জঙ্গি হামলার কয়েক দিন পর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে।
পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতশাসিত কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভারত ভ্রমণের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এতে ভারতের যেকোনো জায়গা ভ্রমণে ন্যূনতম দ্বিতীয় মাত্রার সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে দেশটির চারটি অঞ্চল ভ্রমণে সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার, অর্থাৎ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
পহেলগামে মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা এবং সহিংস বেসামরিক অস্থিরতা ঘটতে পারে। এই অঞ্চলটি ভ্রমণ করবেন না (তবে লাদাখ ও এর রাজধানী লেহ সফরের অনুমতি রয়েছে)। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি থাকায় ওই অঞ্চল এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, মাওবাদী চরমপন্থি গোষ্ঠী অথবা নকশালপন্থিরা ভারতের একটি বিশাল অঞ্চলে সক্রিয়। এরা স্থানীয় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
এদের হুমকির তীব্রতার কারণে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং উড়িষ্যা রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভ্রমণের আগে অনুমতি নিতে হবে। তবে তারা যদি কেবল এই রাজ্যগুলোর রাজধানী শহরে ভ্রমণ করেন তবে অনুমতির প্রয়োজন নেই। মার্কিন কর্মকর্তাদের জন্য মহারাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণেও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
সহিংসতা এবং অপরাধের হুমকির কারণে মনিপুর ভ্রমণেও সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংসতার কারণে উত্তরপূর্ব ভারতের কিছু এলাকায় ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ভারতে ভ্রমণকারী মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে ভ্রমণের আগে এবং আসাম, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার রাজধানী শহরগুলোর বাইরের যেকোনো এলাকা পরিদর্শনের সময় পূর্বানুমতি নিতে হবে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার দখল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, শান্তি আলোচনাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য জেলেনস্কিই দায়ী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ স্যোসালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের জন্য শান্তি চুক্তি আলোচনা অনেকটাই এগিয়েছিল। কিন্তু ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে এই যুদ্ধকে আরও দীর্ঘায়িত করবেন।
এর আগে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তির একটি রোডম্যাপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এটি দুই পক্ষকেই একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে বাধ্য করবে। ভ্যান্স আরও জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন- উভয়কেই কিছু অঞ্চল ছাড়তে হবে। তবে কার কোন ভূখণ্ডকে ছাড় দিতে হবে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু জানায়নি মার্কিন প্রশাসন।
ক্রিমিয়া নিয়ে জটিলতা যেখানে
ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার সার্বভৌমত্বকে প্রশাসন স্বীকৃতি দিতে চাচ্ছে কি না হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের করা এমন এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যে কোনো প্রকারে তিনি এই চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি চান।
তার ভাষায়, আমার কোনো পক্ষ নাই। আমি শুধু এর একটি সমাধান চাই। এদিকে ইউক্রেন বহুদিন বলে আসছে যে ২০১৪ সালে রাশিয়া অবৈধভাবে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপদ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে এবং এ বিষয়ে তারা আপসহীন।
জেলেনস্কি বারবার জানিয়েছেন, তার দেশ কিছুতেই ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দাবি ছাড়বে না। তিনি বলেন, এটা নিয়ে আলোচনার কিছু নেই। এটি আমাদের সংবিধানের পরিপন্থি। এক সময় ইউক্রেনের দখলে থাকা ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া জেলেনস্কির পক্ষে রাজনৈতিকভাবে এমনিতেই সম্ভব নয়।
পাশাপাশি এটি বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নীতিমালারও পরিপন্থি। আন্তর্জাতিক আইনে জোর দিয়ে বলা আছে, বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কোনো দেশ তার সীমান্ত পরিবর্তন করতে পারবে না। সে হিসাবে ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার দখলদারিত্বকে আইনগত স্বীকৃতি দেওয়া অসম্ভব।
এদিকে ইউক্রেনে বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে কিয়েভে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে নয়জন নিহত এবং ৬০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। গত তিন বছর ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাগুলোর মধ্যে একটি।
এএফপির সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন, তারা রাজধানী কিয়েভ থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। এদিকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সতর্কতা জারি করেছে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ। ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিষেবা মৃতের সংখ্যা আপডেট করে জানিয়েছে, রাশিয়া কিয়েভে বিশাল আকারের হামলা শুরু করেছে।
ভারত কোনোভাবেই কাশ্মীরের পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের হত্যাকারী এবং এ হামলার নেপথ্যে যারা রয়েছে তাদের ছাড় দেবে না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একথা জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিহারের এক সভায় তিনি বলেছেন, এমন সাজা দেওয়া হবে, যা ওই হামলাকারীদের কল্পনারও অতীত।
দেশবাসীকে আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বনেতা যারা হামলার পর ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যেও বার্তা দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছেন, বিহারের মাটি থেকে আমি পুরো বিশ্বকে বলছি- ভারত প্রত্যেক সন্ত্রাসীকে এবং তাদের যারা সমর্থন করছে, তাদের চিহ্নিত করবে এবং সাজা দেবে। পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে হলেও তাদের খুঁজে বের করা হবে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদ কখনোই ভারতের মনোবল ভাঙতে পারবে না। ন্যায়বিচারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা করা হবে। যারা মনুষ্যত্বে বিশ্বাস করে, তারা প্রত্যেকে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। যেসব দেশ এই সময় আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেসব দেশের নাগরিক এবং তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে আমি এই কথাগুলো বলতে চাই।’
জাতীয় পঞ্চায়েতরাজ দিবস উপলক্ষে বিহারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ভাষণের সময় এসব কথা বলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর এটাই প্রথম প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখলেন তিনি। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে মোদি বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসীরা নিরপরাধ দেশবাসীদের যে নির্মমতার সঙ্গে হত্যা করেছে, তাতে পুরো দেশ ব্যথিত। দোষীদের সাজার কথাও বলেছেন তিনি। ‘আমি খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, যারা এই হামলা করেছে সেই সন্ত্রাসীরা এবং এই ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনাকারীরা তাদের কল্পনার চেয়ে বড় সাজা পাবে।’
বাংলাদেশ সফর স্থগিত করেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। আগামী রোববার তার ঢাকা আসার কথা ছিল। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় ও গতকাল উভয়পক্ষের বিভিন্ন ঘোষণায় প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হওয়ায় ঢাকায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সফর স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার আগামী ২৭-২৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারছেন না। সফরের পরবর্তী তারিখ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর এবং এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে তিনি পূর্বনির্ধারিত সময়ে আসতে পারছেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকাকে জানানো হয়েছে।
আগামী রোববার (২৭ এপ্রিল) দুই দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় আসার কথা ছিল পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের। দীর্ঘ ১৩ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা ছিল। বৈঠককে কেন্দ্র করে দুই দেশই বেশ কিছু সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছিল। এর আগে গত ১৭ই এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকা সফর করেন। ওই সময় মন্ত্রী পর্যায়ের এ সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়।