যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে হারের পর নিজের দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন ঋষি সুনাক। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যাচ্ছেন তিনি।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ঋষি সুনাক। ইতোমধ্যে বাকিংহাম রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে রাজা চার্লসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।
এদিকে, নির্বাচনে লেবার পার্টির কাছে ভরাডুবির মধ্যদিয়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টির পতন হলো। সুনাকের দল জয় পেয়েছে মাত্র ৭১টি আসনে। নির্বাচনে হার স্বীকার করে ঋষি সুনাক বলেন, দলের এই হারের দায় আমার। আমি দুঃখিত। কেয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন।
অন্যদিকে, ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাজ্যের ভোটে ভালো ফলাফল করেছে লেবার পার্টি। দলটি ৪১২টি আসনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। যুক্তরাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে কোনো দলের ৩২৬ আসনের প্রয়োজন।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কেয়ার স্টারমার বলেন, আপনারা ভোট দিয়ে আমাদের জিতিয়েছেন। এবার আমাদের দায়িত্ব হলো আপনাদের জন্য কাজ করা।
ব্রিটেনের এবারের নির্বাচনে চার বাঙালি কন্যা জয় পেয়েছেন। তারা হলেন টিউলিপ সিদ্দিক, রুশনারা আলী, রুপা হক ও আফসানা বেগম। এই চারজনই সদ্য বিজয়ী দল লেবার পার্টির হয়ে নির্বাচনে লড়েছেন।
যুক্তরাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী, ৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে নতুন সরকার।
খ্রিস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তা বাসভবনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্বনেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। বিশ্বনেতাদের মধ্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রথম দিকেই পোপ ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধা জানান। তিনি পোপকে স্মরণ করে বলেন, ‘তিনি ছিলেন বিনয়ের প্রতীক, সবসময় দুর্বল ও অসহায় মানুষের পাশে।’ খবর বিবিসির।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন, ‘পোপ তার নম্রতা ও কম ভাগ্যবানদের প্রতি পবিত্র ভালোবাসা দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের বাইরেও লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’ পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ‘গভীরভাবে ব্যথিত’ জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক পোপ ফ্রান্সিসকে একজন ‘ভালো, উষ্ণ এবং সংবেদনশীল মানুষ’ হিসেবে স্মরণ করেছেন।
মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দুল ফাত্তাহ আল সিসি বলেছেন, পোপ ফ্রান্সিস ‘শান্তি, ভালোবাসা এবং করুণার কণ্ঠস্বর ছিলেন।’ স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ‘সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ’ মানুষের প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের অঙ্গীকারের প্রশংসা করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে আমি শোকাহত। শান্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের প্রতি তার অঙ্গীকার এক গভীর দৃষ্টান্ত রেখে গেছে। শান্তিতে থাকুন।’
দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। এর আগে ইতালির রোমে একটি হাসপাতালে বেশ কিছুদিন তার চিকিৎসাও চলে।
নতুন পোপ নির্বাচনে ভ্যাটিকানের রহস্যঘেরা প্রক্রিয়া
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর পরবর্তী পোপ নির্বাচন করতে ভ্যাটিকানে একত্রিত হবেন ক্যাথলিক চার্চের শীর্ষ ধর্মগুরুদের সংগঠন—কলেজ অব কার্ডিনালস। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তারা রোমে আসবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং এক ঐতিহাসিক ও গোপন প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন। যার নাম কনক্লেভ। এটি লাতিন শব্দ cum clave থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ ‘চাবি-সহ’ বা ‘অবরুদ্ধ বৈঠক’।
কীভাবে কাজ করে এই কনক্লেভ?
বিশ্বজুড়ে ৭০টিরও বেশি দেশে ২২০ জনেরও বেশি কার্ডিনাল বা প্রতিনিধি আছেন। তবে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে প্রায় ১২০ জনের। যাদের বয়স ৮০ বছরের নিচে। উল্লেখ্য যে, গত এক দশকে এই ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশই পোপ ফ্রান্সিস কর্তৃক মনোনীত। ফলে নতুন পোপ নির্বাচনে তার উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শনের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।
রীতিনীতি অনুযায়ী, পোপের মৃত্যুর ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কার্ডিনালরা রোমে জমায়েত হন। সিস্টিন চ্যাপেলে তাদের ডেলিবারেশন বা পরামর্শ পর্ব শুরু হয়। যেখানে মাইকেলেঞ্জেলোর বিখ্যাত চিত্রকর্ম তাদের ঐতিহাসিক মুহূর্তগুলোর ওপর ছায়া ফেলে।
পর্দার আড়ালের গোপনীয়তা
‘Extra omnes’—অর্থাৎ ‘সবাই বেরিয়ে যান’—এই ঘোষণার পর শুধু ভোটার বা কার্ডিনাল ও কিছু কর্মকর্তা ও ডাক্তার ভেতরে থাকেন। এরপর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোন, সংবাদপত্র, চিঠিপত্র সবকিছুই নিষিদ্ধ থাকে সেখানে। এমনকি সম্ভাব্য গোয়েন্দা যন্ত্র শনাক্ত করতে চ্যাপেল স্ক্যানও করা হয়।
এই গোটা সময়ে কার্ডিনালরা সেন্ট মার্থা হাউসে অবস্থান করেন—যেখানে পোপ ফ্রান্সিস নিজে ১২ বছর ধরে বাস করতেন। এখান থেকেই তারা প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ভোট দিতে যান সিস্টিন চ্যাপেলে।
ভোটদান ও সাদা ধোঁয়া
প্রক্রিয়ার প্রথমে একটি পবিত্র মেস বা প্রার্থনাসভার মাধ্যমে কনক্লেভ শুরু হয়। এরপর কার্ডিনালরা ব্যালট কার্ডে ‘Eligo in summum pontificem’ (আমি সর্বোচ্চ ধর্মগুরু হিসেবে নির্বাচন করছি) কথাটির নিচে নির্বাচিত ব্যক্তির নাম লিখে ভোট দেন। তবে ব্যালট গোপনীয়ভাবে থাকে।
প্রতিদিন দুইবার করে ভোট হয়। প্রতিবারের ভোট শেষে ব্যালট পুড়িয়ে ধোঁয়া বের করা হয়। এতে কালো ধোঁয়া মানে ভোটে সিদ্ধান্ত হয়নি, আর সাদা ধোঁয়া মানে নতুন পোপ নির্বাচিত। ৩০টি ব্যালটেও যদি সিদ্ধান্ত না আসে, তখন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কাউকে পোপ ঘোষণা করা হয়।
ভ্যাটিকানের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ কনক্লেভ ছিল ১৯২২ সালে। তখন পোপ নির্বাচনে সময় লেগেছিল পুরো পাঁচ দিন।
নতুন পোপের অভিষেক
এরপর নির্বাচিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি নির্বাচন গ্রহণ করছেন কিনা। একই সঙ্গে তিনি কোন নাম নিতে চান। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ‘Room of Tears’-এ। সেখানে তিনি সাদা পোশাক ও লাল স্লিপার পরিধান করেন। সেখানে বিভিন্ন মাপের পোশাক আগে থেকেই তৈরি করে রাখা থাকে। সবশেষে, কার্ডিনালদের ডিন সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশে ঘোষণা করেন—‘Annuntio vobis gaudium magnum: Habemus papam’ অর্থাৎ ‘আমি তোমাদের মহাসমাচার জানাচ্ছি: আমাদের একজন পোপ আছেন।’
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে অন্তত আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দিনভর হামলা চালিয়ে আরও ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে এবং লেবাননে আরও দুজনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে গাজার আল-মাওয়াসির তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চলেও’ হামলা করেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২০১ জনে পৌঁছেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১৪৫ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।
ভয়াবহ মানবিক সংকটে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও অবরোধে দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মানবিক সংকট। এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ‘বড় অস্ত্র’। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের চেয়েও বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে অনাহার। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের এমনই দুঃসহ জীবনের করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লাখো মানুষ মৃত্যুর মুখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে বেঁচে থাকার ন্যূনতম জিনিসও এখন অনেকের নাগালের বাইরে।
অক্সফামের জরিপ বলছে, গাজায় শিশুদের একটি বড় অংশ দিনে এক বেলারও কম খাবার পাচ্ছে। অনেক বাবা-মা নিজের খাবার ত্যাগ করে সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন এবং নিজেরা অভুক্ত থাকছেন।
যু্দ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তা প্রায় শেষ। উদভ্রান্তের মতো ত্রাণ দেওয়া তাঁবুগুলোতে খালি হাঁড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার মানুষ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ শতাংশ।
৪৪ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি বলেন, ‘আমি প্রায়ই আমার নিজের খাবার থেকে ছেলেকে ভাগ দিই। এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাব- ধীরে ধীরে এই অনাহার আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোও চরম সংকটে। চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে অনেক সময় রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দেইর আল-বালাহর চিকিৎসাকর্মী আমান্দে বাজেরোল জানান, বার্ন ক্লিনিকগুলোতে দিনপ্রতি ১০ জনের বেশি রোগী নেওয়া হচ্ছে না, কারণ ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার ওপর পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বারবার জানিয়ে আসছে ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গাজায় এই অবরোধ দিয়েছেন তারা, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই দাবির বিপরীতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ, মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হচ্ছে, যা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরির নামে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ভূমি দখলের আশঙ্কা দিনে দিনে প্রবল হচ্ছে।
‘ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যা’
অভিযানসংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তাদের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজায় ১৫ জন চিকিৎসক নিহত হন। ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত করে বলেছে, তাদের নির্দেশ-সংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি ও আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এ ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তদন্তে এ ঘটনার বেশ কিছু ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। তদন্তের সময় অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ইস্টার সানডে উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন দুই হাজারের বেশিবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, রুশ বাহিনী দুই হাজারের বেশি বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তবে সোমবার ইউক্রেনে কোনো ধরনের এয়ার অ্যালার্ট জারি করা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রোববার দিনের শুরু থেকেই রুশ বাহিনী দুই হাজারের বেশিবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন হামলা ও গোলা ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে এবং দেশ দুটি একে অপরকে দুষছে। তবে যুদ্ধরত উভয়পক্ষের এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
পুতিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ফ্রন্টলাইন বরাবর ইস্টার সানডে উপলক্ষে এক দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির আদেশ দিয়েছিলেন। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে। তবে এর বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি দেননি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। দেশটির অন্তত ২০ শতাংশ ভূমি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলও রয়েছে। ধারণা করা হয়, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ হয় মারা গেছে বা আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই সৈন্য।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে মস্কো বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে। শনিবার পুতিন মস্কোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। কিয়েভও এটা মেনে চলার কথা বলেছিল।
পুতিন এক ঘোষণায় বলেন, এই সময়ের জন্য আমি সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি ইউক্রেনও আমাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করবে। একই সময়ে আমাদের সৈন্যরা অবশ্যই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও উসকানি প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবে।
তবে জেলেনস্কি রোববার রাতে বলেন, যুদ্ধবিরতির এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া ১ হাজার ৮৮২ বার গোলাবর্ষণ করেছে এবং ৮১২টি ঘটনায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, দখল করা পোকরোভস্ক শহরের কাছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বেশি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি হাব যেখান থেকে রসদ সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের পদক্ষেপ ছিল এমন যে আমরা নীরবতার জবাব নীরবতা দিয়ে দিয়েছি। আমাদের হামলা ছিল রাশিয়ার হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য। এর আগে তিনি সেদিন কোনো রেড অ্যালার্ট না থাকার কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি পুতিনের ঘোষণাকে অর্থহীন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ইস্টারে এটা পরিষ্কার হয়েছে, যুদ্ধের একমাত্র উৎস ও কারণ হলো রাশিয়া। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলেছে।
যদিও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমারাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশ পুতিন দেননি। এর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন।
রোববার ওয়াশিংটন আবারও একটি সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির কথা বলেছে। তবে ইস্টারের প্রার্থনায় কিয়েভে ও রাশিয়ার দখলীকৃত দোনেৎস্কে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুতিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ওলেনা পপরিচ নামের এক আইনজীবী রয়টার্সকে বলেন, আমি মনে করি না তার (পুতিন) মধ্যে মানবতা বলতে কিছু আছে। জেলেনস্কিও যুদ্ধবিরতিতে কতটা অনড় থাকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন দোনেৎস্কের অধিবাসী ওই আইনজীবী।
রোববার ব্রিটিশ সরকার পুতিনের যুদ্ধবিরতিকে ‘এক দিনের নাটক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এ সময়েও সেখানে নিরীহ মানুষের আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পুতিন সত্যিকারভাবেই শান্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে; কিন্তু তাতে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি আসেনি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এটি হলে কয়েক দিনের মধ্যেই হতে হবে।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এমন খবর দিয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকান ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো পোপ। এরআগে মহাদেশটি থেকে কোনো পোপ নির্বাচিত হননি। যাপিত জীবনে বিনয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিলেন তিনি। দরিদ্রদের নিয়ে তার উদ্বেগ ও পুঁজিবাদের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও তাকে সরব থাকতে দেখা গেছে।
কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর রোমের গির্জাগুলোতে ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয়েছে। কেভিন ফেরেল বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে স্বর্গে গমন করেছেন রোমের বিশপ। প্রভু ও তার গির্জার জন্য নিজের পুরো জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন।’
শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগে আক্রান্ত ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তরুণ বয়সে তার ফুসফুসের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৩৮ দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই ধর্মীয় গুরুকে। তার গেল এক যুগের পোপজীবনে এটা ছিল সবচেয়ে বেশি সময়ে হাসপাতালে থাকা।
কিন্তু মৃত্যুর আগের দিন রবিবার ইস্টার সানডেতে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার লোককে আশীর্বাদ জানাতে তিনি সেন্ট পিটার্স চত্বরে আসেন। পোপমোবাইলে—পোপের জন্য বানানো বিশেষ গাড়ি—চড়ে হাজির হলে লোকজন তাকে দেখে উল্লাশ প্রকাশ করেন।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চের এক বৃষ্টিভেজা রাতে দুই হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানে এসে নতুন বাতাসে শ্বাস নেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও। এমন এক সময়ে তিনি পোপ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব ছিল অনেকটা কমতির দিকে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পদত্যাগ করেন পোপ এ্যামিরেটাস ষোড়শ বেনেডিক্ট। ১৪১৫ সালে ত্রয়োদশ গ্রেগরির পর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি মৃত্যুর আগেই পোপের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। এরপর নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্রান্সিস। কিন্তু তার নেওয়া কিছু প্রগতিশীল পদক্ষেপে রক্ষণশীলদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
তাকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ২০১৮ সালে। তখন চিলিতে ধর্মযাজকের যৌন হয়রানির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ঘটনাটি জোড়াতালি দিয়ে সুরাহা করার চেষ্টা করেন। এতে যারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন, তারা ব্যথিত হন এবং পোপের সমালোচনা করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রেল সংযোগ-সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ভারত সরকার। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে এড়িয়ে এখন নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করছে মোদি সরকার।
এই সিদ্ধান্তে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে ও ৫টি সম্ভাব্য প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
বন্ধ হওয়া প্রধান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১. আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ভারত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটির অনুদানে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ও ত্রিপুরার অংশ ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। এতে ত্রিপুরা ও আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ বাড়ার কথা ছিল।
২. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি, যা ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ভারতের ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতো।
এই প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেইসঙ্গে এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকারও থাকার কথা ছিল ভারতের।
৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প। এটি ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি অর্থ-সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অর্থ ছাড় ও প্রশাসনিক অনুমোদনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫টি প্রকল্পে অবস্থান জরিপ কাজ চলছিল, যা এখন স্থগিত রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ ও লাগাতার বোমাবর্ষণ চলছে। আর এ কারণে গাজার শিশুরা এখন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি মানবিক সংস্থার নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা এখন ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়ার’ পথে। ইসরায়েলের ১৮ মাসব্যাপী সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপিত পূর্ণ অবরোধ পরিস্থিতিকে চরম সংকটময় করে তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাহায্য সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করে দিয়েছে, কারণ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে চলাচল করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি বলেন, শিশুরা এখন এক বেলার কম খাবার খাচ্ছে ও তাদের পরবর্তী খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবাই কেবল টিনজাত খাবার খাচ্ছে এবং অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরল বলেন, সাহায্যকর্মীরা অত্যন্ত সীমিত রসদের মধ্যে সহায়তা দিতে গিয়ে নিরুপায়ভাবে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর দৃশ্য দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি শুধু মানবিক ব্যর্থতা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা একটি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
গাজা শহর থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাটিতে শিশুখাদ্য বা বেবি ফর্মুলার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযুক্ত দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ও ফার্মেসিগুলোতে এসব পণ্য প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।
দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা ফাদি আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ হয় ও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে সে আর লড়াই করতে পারেনি।’
এক দাদি ইনতিসার হামদান জানান, তার নাতি দুধের অভাবে তিন দিন না খেয়ে থাকার পরে মারা গেছে। এমন দৃশ্য দেখে বেঁচে থাকাটাও কঠিন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে বর্তমানে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মানবিক কর্মীদের জন্য গাজা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০-রও বেশি সাহায্যকর্মী ও ১ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব সংস্থা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো যেন সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গাজায় বাধাহীনভাবে সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ১৮ মাস ধরে সংঘাত চলছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে নতুন করে ৩০ হাজার তরুণ যোদ্ধাকে নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তাদের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের অধীনে এ যোদ্ধাদের যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের গোপন সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের সামরিক দক্ষতা শহুরে যুদ্ধ, রকেট হামলা ও বিস্ফোরক স্থাপন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ- এমনটাই দাবি করেছে আল-আরাবিয়া। যোদ্ধাদের কবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তারা দলে যুক্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। শুরু থেকেই গাজা দখলের জন্য ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনারা। এখন পর্যন্ত গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলেও তারা সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকা দখল করে সেখানকার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে। এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তারা। পাশাপাশি হামলার নামে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে গাজা পরিণত হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ খাদ্যসংকটের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের এক তরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপত্যকাবাসী। আরব নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবার না পেয়ে অনেক পরিবার এখন বিকল্প প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ রান্না করে খাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আগে কখনো কচ্ছপ দেখেননি, এমনকি ভয় পেতেন- তবুও ক্ষুধার তীব্রতায় বাধ্য হয়ে তারা এই নিষিদ্ধ প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।
গাজাবাসী মাজিদা জানান, তিনি এখন খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, রান্নার হাঁড়িতে কচ্ছপের মাংস ফোটাতে ফোটাতে বলেন, বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা বলেছিলাম, এটা বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খায়নি।
৬১ বছর বয়সি মাজিদা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই তৃতীয়বার তিনি কচ্ছপ রান্না করছেন। বাজারে কিছুই নেই, বিশেষ করে মাংস তো নেই-ই। তিনি বলেন, দুই ব্যাগ ছোট সবজি কিনতেও ৮০ শেকেল (২২ ডলার) খরচ করতে হয়।
সাধারণত কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে সেদ্ধ করে তা পেঁয়াজ, টমেটো, গোলমরিচ ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ও বিপন্ন হিসেবে পরিচিত। তবুও গাজার উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়লে এসব কচ্ছপকেই বর্তমানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবদেল হালিম কানান নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার কথা ভাবিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের এতই সংকট হয়েছে যে, আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা ইসলামী নিয়ম মেনেই কচ্ছপ জবাই করছি। যদি দুর্ভিক্ষ না হতো, তাহলে কচ্ছপ ছেড়ে দিতাম। তবে এখন আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।
বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, এখানে দুর্ভিক্ষ এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ, বাজারে পণ্যশূন্যতা এবং ক্রমবর্ধমান দামে সাধারণ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে কেউ কেউ পশুখাদ্য, ঘাস, এমনকি পচা পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় কচ্ছপের মতো একটি বিপন্ন প্রজাতি হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ আশার উৎস- একটি প্রোটিনের বিকল্প, যা তারা কখনো ভাবেননি যে একদিন খেতে হবে। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, জীবনধারণের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃশ্য এখন গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা নিয়োগ দিল মেটা
হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের মালিক মেটা এখন দখলদার ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক নীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। একজন আমেরিকার বিশ্লেষক মেটা কোম্পানি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার মতে, আমেরিকান লেখক এবং বিশ্লেষক নেট বেয়ারের ‘ডু নট প্যানিক’ ব্লগে প্রকাশিত এবং তারপর গ্রেজোন গবেষণা ডাটাবেস দ্বারা পুনঃপ্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সঙ্গে মেটার গভীর সম্পর্কের আরও বিভিন্ন দিক প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা এবং গুপ্তচর যার মধ্যে ইউনিট ৮২০০-এর সঙ্গে যুক্ত গোয়েন্দা বাহিনীও রয়েছে, বর্তমানে মেটাতে কাজ করছেন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন হলেন মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির প্রধান শিরা অ্যান্ডারসন যার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। অ্যান্ডারসন আগে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কমান্ডার দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন এবং পরে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আইনি সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন।
৭০তম জন্মদিনে পরিবারের সঙ্গে কেক কাটা আর ঘরোয়া উদযাপন-বয়সের এই মাইলফলক নিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের এমনই কিছু সাধারণ কল্পনা থাকে। কিন্তু নাসার প্রবীণতম সক্রিয় নভোচারী ডন পেটিট তার ৭০তম জন্মদিন পালন করলেন পৃথিবীর বুকে অবতরণের পথে একটি মহাকাশযানে চড়ে। গতকাল রোববার তার জন্মদিনের দিনটিতেই একটি সয়ুজ ক্যাপসুল মার্কিন নাগরিক পেটিট ও দুই রুশ নভোচারীকে নিয়ে কাজাখস্তানে অবতরণ করে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) তাদের সাত মাসের অবস্থান শেষ করে।
রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস এদিন জানায়, ‘আজ মস্কো সময় মধ্যরাত ৪টা ২০ মিনিটে সয়ুজ এমএস–২৬ অবতরণযানটি আলেক্সেই ওভচিনিন, ইভান ভাগনার ও ডোনাল্ড (ডন) পেটিটকে নিয়ে কাজাখস্তানের জেজকাজগান শহরের কাছে সফলভাবে অবতরণ করেছে।’
মহাকাশে ২২০ দিন কাটিয়ে পেটিট ও তার সহযাত্রীরা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন তিন হাজার ৫২০ বার। এই সময়ে তাদের যাত্রার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কোটি ৩৩ লাখ মাইল। এটি ছিল পেটিটের চতুর্থ মহাকাশযাত্রা। ২৯ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মোট দেড় বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন পৃথিবীর কক্ষপথে।
স্পেস স্টেশন থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের ব্যবধানে তাদের যাত্রা শেষ হয় কাজাখস্তানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের একটি দূরবর্তী এলাকায় অবতরণের মাধ্যমে। নাসার তোলা ছবিতে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুঁড়ে প্যারাসুটে ভর করে পৃথিবীর দিকে নামছে ছোট ক্যাপসুলটি।
মাটিতে নেমে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন নভোচারীরা এবং সেখানেই স্থাপিত একটি মেডিকেল টেন্টে তাদের প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা হয়। তিনজনই তখন ‘থাম্বস আপ’ ইঙ্গিত করেন।
যাত্রার ক্লান্তিতে কিছুটা অবসন্ন দেখালেও পেটিট ‘ভালো আছেন এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তার শরীরের অবস্থা প্রত্যাশিত সীমার মধ্যেই আছে’ বলে জানিয়েছে নাসা। এরপর তাকে প্রথমে কাজাখস্তানের কারাগান্দা শহরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে একটি নাসার বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত জনসন স্পেস সেন্টারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
নাসা জানিয়েছে, এই সাত মাসে আইএসএসে থাকাকালীন তারা গবেষণা করেন পানিশোধন প্রযুক্তি, বিভিন্ন পরিবেশে উদ্ভিদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও মাইক্রোগ্রাভিটিতে আগুনের আচরণ- এই বিষয়গুলো নিয়ে। তবে তাদের সাত মাসের যাত্রা কিছুটা কম দীর্ঘ হয়েছিল সেই দুই নাসা নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামসের তুলনায়, যারা ৯ মাস ধরে আইএসএসে আটকে ছিলেন। তাদের পরীক্ষামূলক মহাকাশযানে ত্রুটি দেখা দিলে সেটি তাদের পৃথিবীতে ফেরানোর অযোগ্য বিবেচিত হয়।
উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণা এখনো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে রয়ে গেছে, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে প্রায় সব ধরনের সম্পর্কই ভেঙে পড়েছে।
ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে এই ঘোষণা দেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার থেকে এক পার্শ্বিক এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। যা আগামী সোমবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। এ সময় ইউক্রেনে সবধরনের হামলা বন্ধ রাখবে রুশ সেনারা।
ক্রেমলিন আরও জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশা ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং ইস্টারের সময়টায় হামলা থেকে বিরত থাকবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পুতিন নিশ্চিত করেছেন এই সময়টায় তিনি তার সেনাদের সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন যদি কোনো ধরনের উসকানি দেয় অথবা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে তাহলে তার সেনারা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘মানবিক দিক থেকে দেখে, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার-সোমবার পর্যন্ত রাশিয়া ইস্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছে। আমি নির্দেশ দিয়েছি এই সময়টায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি ইউক্রেনীয়রা আমাদের এই ঘোষণাতে সম্মত হবে। একই সময়ে, যুদ্ধবিরতির যে কোনো ধরনের লঙ্ঘন অথবা শত্রুদের যে কোনো ধরনের উসকানি প্রতিরোধে আমাদের সেনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলার নির্দেশ দেন পুতিন। ওইদিন ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা। প্রাথমিক অবস্থায় ইউক্রেনে তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকেছিল রুশ সেনারা। তাদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল করে ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাত করা। তবে এতে ব্যর্থ হয় রুশ সেনারা। পরবর্তীতে তারা ইউক্রেনের দুটি বড় অঞ্চল লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করার দিকে মনোযোগ দেয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে রুশ বাহিনী এ দুটি অঞ্চলের প্রায় পুরোটি দখল করে ফেলেছে।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ। এটি ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। হিব্রু ভাষার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। গতকাল শনিবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় এক্সে একটি পোস্ট করেছে। এতে তারা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনাকে আমরা দখলকৃত জেরুজালেমে ইসলামিক এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানে পদ্ধতিগত উসকানি হিসেবে বিবেচনা করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এ বিষয় সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে এই উসকানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে দেখা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
ইসরায়েলি অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা প্রায়ই মুসলিমদের পবিত্র এ স্থানে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনা করে। এতে তাদের সরাসরি সহায়তা করে দখলদার ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসব অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমিতে জোরপূর্বক বাস করে। তারা দখলদার ইসরায়েলি সরকার থেকে সবধরনের সুরক্ষা পেয়ে থাকে।
গত সপ্তাহেও আল-আকসা মসজিদে কয়েক ডজন ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারী (সেটলার) জোর করে ঢুকে ধর্মীয় আচার পালন করে। জেরুজালেমের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চুক্তি অনুযায়ী, ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত ওই মসজিদ চত্বরে অমুসলিমদের কোনো ধরনের ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি নেই।
১৯৬৭ সালে আল-আকসা নিজেদের দখলে নেয় ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, সেখানে মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে পারেন। ইহুদিরা প্রবেশ করতে পারেন, তবে প্রার্থনার অনুমতি নেই তাদের। এরপরও সেখানে অবস্থিত ‘টেম্পল মাউন্টে’ প্রার্থনা করে থাকেন ইহুদিরা।
আল-আকসায় ইহুদিদের প্রবেশ বাড়ছে
ইসরায়েল এক দিনে এক হাজারের বেশি ইহুদি পুন্যার্থীকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি দলে সর্বোচ্চ ১৮০ জন করে ইহুদি প্রবেশ করেছেন। সংখ্যার দিক থেকে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রবেশের ঘটনা। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় এ প্রবেশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ইহুদিদের কাছে এ স্থান ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত।
ইসরায়েল এত দিন পর্যন্ত একসঙ্গে ৩০ জনের বেশি ইহুদি প্রবেশে অনুমতি দিত না। কিন্তু এবার সে নীতি থেকে সরে এসে একসঙ্গে বৃহৎ পরিসরে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধানে থাকা ইসলামিক ওয়াক্ফ জানায়, গত বুধবার এক দিনে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি ইহুদি মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। পাসওভারের ছুটি শুরুর পর এ সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবি তাদের।
ওয়াক্ফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ বলেন, ‘গত কয়েক দিনে যা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। এটি অত্যন্ত ভীতিকর পরিস্থিতি। ২০০৩ সালে যেখানে ২৫৮ জন প্রবেশ করেছিল, এখন তা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমন চিত্র আগে দেখিনি।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদকে ভাগ করে ফেলার বিষয়টি ক্রমেই বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি অনেকটাই হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের পুনরাবৃত্তি।’ তিনি যোগ করেন, ‘গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।’
স্থিতাবস্থার প্রশ্নে বিতর্ক
ঐতিহাসিকভাবে ১৭৫৭ সালের উসমানীয় ফরমান অনুযায়ী, অমুসলিমদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং ইহুদিদের শুধুমাত্র ওয়েস্টার্ন ওয়াল বা দেয়াল সংলগ্ন এলাকায় প্রার্থনার অনুমতি ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বারবার বলেছেন, ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রবেশ ক্রমেই নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। অনেক রক্ষণশীল ইহুদি নেতা টেম্পল মাউন্টে উপাসনার দাবি জানিয়ে আসছেন, যদিও তাদের ধর্মীয় নেতারা ‘পবিত্রতা রক্ষা না হওয়া পর্যন্ত’ সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেননি।
সরকারের কট্টর ডানপন্থি সদস্য ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বারবার আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি উপাসনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি তাকে বেশ কয়েকবার মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতেও দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর এর মধ্যেই যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তা শর্তের আবর্তে আটকে আছে। ইসরায়েল একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি বলছে, তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায়। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মিকে তারা মুক্তি দিতে আগ্রহী। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রয়টার্স ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়া এক ভাষণে জানান, তারা আর কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হবেন না। হামাসের যে দলটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, হায়া তারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রয়টার্স জানায়, হামাসের এ অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না এবং গাজায় তেল আবিবের সাম্প্রতিক অভিযান আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
হায়া বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ও গাজা পুনর্গঠনের বিনিময়ে সব জিম্মিকে ছাড়তে হামাস যত শিগগির সম্ভব ‘পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনায়’ বসতে চায়। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার এসব সাময়িক চুক্তিকে ব্যবহার করছে; সব জিম্মিকে বলি দিয়ে হলেও তারা এটা করতে চায়। আমরা এ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হতে চাই না।’
১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। গত ১৮ মার্চ ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে ইসরায়েল প্রথম ধাপের সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছিল। দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তির পাশাপাশি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনো জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, হামাসের মন্তব্য প্রমাণ করে, তারা শান্তিতে নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতায় আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত বদলায়নি– জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও।
যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে গত সোমবার কায়রোতে হওয়া সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনায় কোনো ধরনের সমঝোতাই হয়নি। জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া বেশ কিছু শর্তে আপত্তি আছে হামাসের। তেল আবিবের শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল-হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বারবারই বলেছে, ‘অস্ত্র সমর্পণ’এমন একটি ‘লাল দাগ’, যা নিয়ে আলোচনা তো দূর, এটি বিবেচনাযোগ্যও নয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জনসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ১০ জনের মরদেহ ও অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। খান ইউনিসের বানি সুহাইলায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।’
আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভেতরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ এবং সাহায্য সরবরাহ হ্রাসের ফলে মানসিক চাপের মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
সফর সংক্ষিপ্ত করে পালালেন ইসরায়েলের মন্ত্রী
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার যুক্তরাজ্য থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে ‘পালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানোর পরই এ দখলদার পালিয়ে দ্রুত ইসরায়েলে চলে যান। লন্ডনভিত্তিক জিএলএএন ছাড়াও হিন্দ রজব ফাউন্ডেশনও তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জানিয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজাজুড়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক দিনে ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মেডিকেল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জরুরি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, গাজায় এখন খাদ্যের প্রয়োজন। কারণ লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫১ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদার ইসরায়েল।
ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে মার্কিন সামরিক বিমান
ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে মার্কিন বিমান। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯টি মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমান অবতরণ করেছে। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের বরাতে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেলআবিবের কাছে একটি ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে ওই বিমানগুলো অবতরণ করে। প্রতিটি বিমানই বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে বোঝাই ছিল। মধ্যাঞ্চলীয় ইসরায়েলের তেল আবিবের কাছে নেভাতিম বিমানঘাঁটির অবস্থান। সেখানেই বাংকার বাস্টার বোমা ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৯টি মার্কিন পরিবহন বিমান অবতরণ করেছে।
হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন কোনোভাবেই নিরস্ত্র হবে না। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা যাবে না।’ গত শুক্রবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। নাঈম কাসেম কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘যারা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়, তারা ইসরায়েলি স্বার্থে ষড়যন্ত্র করছে’। তার ভাষায়, ‘এই অস্ত্রই আমাদের স্বাধীনতা এনেছে।’
আল-মানার চ্যানেলে সম্প্রচারিত ভাষণে নাঈম কাসেম বলেন, ‘হিজবুল্লাহর অস্ত্র লেবাননের প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীই দেশকে মুক্ত করেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে এবং আজও ইসরায়েলের আগ্রাসনকে প্রতিহত করে চলেছে।’
তার ভাষায়, ‘যারা আমাদের নিরস্ত্র করতে চায়, তারা আসলে দক্ষিণ লেবাননকে দখলের পথে ইসরায়েলের জন্য পথ তৈরি করতে চায়।’ হিজবুল্লাহ মহাসচিব এ সময় জানান, লেবাননে যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল ২ হাজার ৭০০-এরও বেশিবার আগ্রাসন চালিয়েছে। আমাদের প্রতিরোধ ছাড়া এই আগ্রাসন থামত না।
তিনি আরও জানান, হিজবুল্লাহ সব সময় যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলেছে। তবে দখলদার ইসরায়েল তা একের পর এক ভেঙে চলেছে। মার্কিন চাপ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নাঈম কাসেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে নিজেদের ছায়া প্রশাসন বজায় রাখতে চায়। তারা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়, যাতে লেবানন দুর্বল হয় এবং ইসরায়েল সহজেই দেশটিকে গ্রাস করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিরোধ নীতি অব্যাহত থাকবে। আমেরিকার হুমকিতে নয়, আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষার স্বার্থে আমরা এই নীতি বজায় রাখব।’
শেখ কাসেম তার বক্তব্যে ইয়েমেনের হুতি আনসারুল্লাহ গোষ্ঠীকেও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ইয়েমেনকে স্যালুট জানাই- যারা আজ পুরো বিশ্বের হয়ে মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।’
সেই সঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংলাপ সফল হবে এবং অঞ্চল শান্তির পথে এগোবে। কিন্তু শর্ত একটাই- ‘ইসরায়েলকে লেবানন থেকে পিছু হটতে হবে’।
শেখ নাঈম কাসেমের এই বক্তব্য একদিকে যেমন হিজবুল্লাহর আপসহীন প্রতিরোধ নীতির পুনর্ব্যাখ্যা, তেমনি এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভেতরকার জিওপলিটিকাল লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যেখানে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের পথে ঠেলে দিতে চায়, সেখানে হিজবুল্লাহ বলছে- অস্ত্রই নিরাপত্তা।
তাদের বক্তব্যের প্রকারান্তরে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যতদিন ইসরায়েল তার আগ্রাসন চালিয়ে যাবে, ততদিন প্রতিরোধও চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থীই ভারতীয়। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের অভিযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়। এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ইস্যুটি কি মার্কিন প্রতিরূপের সঙ্গে আলোচনায় তোলা হবে?
এআইএলএর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (ডিওএস) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিশানা করছে। এতে করে ভিসা বাতিল, পড়াশোনার স্ট্যাটাস বাতিল এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ৩২৭টি কেস সংগ্রহ করেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এর পরই আছে চীন। দেশটির ১৪ শতাংশ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশ।
রমেশ এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ভিসা বাতিলের কারণ অস্পষ্ট এবং এলোমেলো। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন? এআইএলএর দাবি, বিক্ষোভে জড়িত নয়- এমন শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। অনেকের এসইভিআইএস স্ট্যাটাস বাতিল করা হচ্ছে, যা পড়াশোনা ও থাকার অনুমতির মূল ভিত্তি।
৪০ সেকেন্ডের মধ্যে আবেদন বাতিল!
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য বি১/বি২ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেছিলেন ভারতের এক নাগরিক। ভারতে তার স্থিতিশীল চাকরি এবং সুস্পষ্ট ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষাৎকারের মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তার আবেদন বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই অভিজ্ঞতা সামাজিকমাধ্যম রেডিটে শেয়ার করেছেন তিনি, যা মার্কিন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওই ব্যক্তি ফ্লোরিডায় দুই সপ্তাহের ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মতো জনপ্রিয় স্থান ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার মাত্র তিনটি প্রশ্নের পরই শেষ হয়ে যায়।
দূতাবাস তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কেন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান?’, ‘আপনি কি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করেছেন?’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে কি আপনার বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের কেউ থাকে?’ এর পরই তাকে ২১৪(বি) ধারার অধীনে ভিসা প্রত্যাখ্যানের নোটিশ দেওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করিনি। তবে ফ্লোরিডায় আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ এই জবাবের পরপরই তার আবেদন বাতিল করা হয়।
রেডিটে একজন ব্যবহারকারী এই পরিস্থিতির সারাংশ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনার আবেদন সঠিকভাবেই বাতিল হয়েছে, যদিও এটা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার কোনো বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই এবং আপনার প্রেমিকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক এবং ভারতে ফেরার কোনো শক্তিশালী কারণ না থাকার ইঙ্গিত দেয়।’
মার্কিন ভিসা প্রত্যাখ্যানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজ দেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক প্রমাণে ব্যর্থতা। এই সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারে স্থিতিশীল চাকরি, সম্পত্তি বা পারিবারিক দায়বদ্ধতা। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্থিতিশীল চাকরি থাকা সত্ত্বেও বিদেশে ভ্রমণের রেকর্ড না থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমিকার উপস্থিতি তার সেখানে অতিরিক্ত সময় থাকার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের উচিত তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা। ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভুল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেওয়া বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে এবং আবেদন বাতিল হতে পারে।