সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেন তিনি।
এমনকি বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরিতে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান টেসলা ও মহাকাশযানের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুতকারী কোম্পানি স্পেসএক্সের শীর্ষ নির্বাহী এই ধনকুবেরকে বৃহস্পতিবার টুইটারের মূল কার্যালয়ে একটি সিঙ্ক বহন করতেও দেখা গেছে।
আজ শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
খবরে বলা হয়, ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কিনেছেন ইলন মাস্ক। আর এরই মাধ্যমে মাস্কের টুইটার কেনা নিয়ে নানান গুঞ্জন, বাদানুবাদ ও জল্পনার অবসান হলো।
চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই নেটিজেনদের মুখে মুখে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের টুইটার কিনতে চাওয়ার খবরটি চাউর হয়। পরের মাসেই শোনা যায়, টুইটার কেনার পরিকল্পনা থেকে সাময়িকভাবে সরে এসেছেন মাস্ক।
সরে আসার কারণ হিসেবে এই ধনকুবের জানান, টুইটারে কতগুলো ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার প্রকৃত তথ্য তাকে দেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য না পেলে টুইটার কিনবেন না তিনি।
বিষয়টি নিয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মাস্কের বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায় মাস্ক টুইটার কিনতে গড়িমসি শুরু করেন। পরে টুইটার কর্তৃপক্ষ আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলাও করে। ইলন মাস্কও নানা আইনি মারপ্যাঁচে মামলার কার্যক্রম দেরি করানো থেকে শুরু করে নানা কৌশল নেন। তবে গত ১৭ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের চ্যান্সেরি আদালত এক রায়ে জানান, চলতি বছরের ২৮ অক্টোবরের মধ্যেই টুইটার কিনতে হবে ইলন মাস্ককে এবং এটি কিনতে হবে পূর্ব প্রতিশ্রুত ৪৪ বিলিয়ন (৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারেই।
অবশেষে আদালতের সেই রায় মেনে সময়সীমা পেরোনোর এক দিন আগেই টুইটার কিনে নিয়েছেন বলে ঘোষণা দিলেন এই ধনকুবের।
এদিকে টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে ইলন মাস্ক বরখাস্ত করেছেন বলেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে ইরান, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে মিল রয়েছে। কারণ ট্রাম্পও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে অবশ্য জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে ওমান। এর আগে ট্রাম্প সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদি ইরান আলোচনায় না আসে তাহলে হামলারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া তেহরানও এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে বসে ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি। এটি শনিবার হবে। আমাদের একটি খুব বড় বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে। তিনি বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে বলেন, আমি মনে করি সবাই একমত যে একটি চুক্তি করাই ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে ইরান বড় বিপদে পড়বে বলেও হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কে?
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইরান। ইতোমধ্যে ভেন্যু ও তারিখ চূড়ান্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় বসার বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। এরপর ট্রাম্পের ঘোষণার সত্যতা নিশ্চিত করে ইরান।
ইরান জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে। তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। ওমানে এ বৈঠক হবে এবং দেশটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে।
আরাঘচি এক্স-এ লিখেন, ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ওমানে পরোক্ষ উচ্চস্তরের আলোচনায় বসবে। এটি যতটা সুযোগ, ততটাই পরীক্ষা। বল এখন আমেরিকার কোর্টে।’এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন। তবে তার বক্তব্যে হুমকিমূলক বাক্য ছিল।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি এবং তারা সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। শনিবার আমাদের খুব বড় একটি বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে।
তেহরান এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল- ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তা করলে তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তেহরান। এর এক দিন পর ট্রাম্প আলোচনার ঘোষণা দেন এবং কয়েক ঘণ্টা পর তেহরান আলোচনার টেবিলে বসার তথ্যটি স্বীকার করে নেয়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে। এবারের হামলার ভয়াবহতা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এ দফায় বিশ্ব এগিয়ে না এলে তাদের বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এর ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের মানবিক সহায়তার সহকর্মীরা আমাদের জানিয়েছেন-গাজাজুড়ে ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে নিয়মিতভাবে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গাজায় অনেক শিশু নিহত এবং আহত হচ্ছে। অনেকে জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, গাজাজুড়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বারবার বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। এমন এক সংকুচিত স্থানে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।
জাতিসংঘের হাতে আসা তথ্য উপস্থাপন করে ডুজারিক বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা অনুমান করি যে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি গাজার মোট ফিলিস্তিনির ১৮%। ডুজারিক আরও জোর দিয়ে বলেন, বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এর দায়িত্ব দখলদার শক্তি হিসাবে ইসরায়েলের ওপর বর্তায়।
জাতিসংঘ প্রায়ই ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন এসবের কোনো তোয়াক্কাই করেন না। শুধু তাই নয়, গাজায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থাপনা। যেমন- গত ২ এপ্রিল উত্তর গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হামলাটি করা হয়। এতে অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা এই হামলাকে সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েলের ওপর কার্যত কোনো বিশ্বচাপ দৃশ্যমান হয়নি।
ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। এতে গত এক দিনে ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সর্বশেষ নিহতের ঘটনায় গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। অপরদিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম রাফায় আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শহরের পশ্চিম অংশ রাফায় আবাসিক ভবন ভেঙে ফেলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে তেল আল-সুলতান পাড়ায় সব নিঃশেষ করে ফেলছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তারা গত ২৩ মার্চ থেকে এলাকাটিতে ভয়াবহ সামরিক আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ এবং বাফার নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে এলাকাটি অবরুদ্ধ করে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জন জিম্মি হয়েছিল। জিম্মিদের উদ্ধার এবং হামাস নির্মূলে হামলা আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজায় ২১১ সাংবাদিক নিহত
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২১১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম ডন এ তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি গণমাধ্যম তাঁবুতে গত সোমবার ভোরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় পর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি জারি করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
মিডিয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, ওই হামলায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আহমেদ মনসুর গাজায় ইসরায়েলের নিহত ২১১তম গণমাধ্যমকর্মী। এতে বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন, আরব সাংবাদিক ফেডারেশন এবং বিশ্বের সব দেশের সব সাংবাদিক সংগঠনের প্রতি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিগত অপরাধের নিন্দা জানাতে আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাতভর ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে উপত্যকাজুড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং কয়েক বহু মানুষ। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, এদিন রাতে পশ্চিম তীরজুড়ে অভিযান অব্যাহত রাখে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে গ্রেপ্তার এবং উচ্ছেদ করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ ইরান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি একটি নথি প্রকাশ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের প্রতি ইরানের যে সমর্থন এটি সেই যোগাযোগের একটি প্রতিলিপি। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও জেরুজালেম পোস্টের।
ওই নথিতে দাবি করা হয়েছে, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মুহাম্মদ দেইফের সঙ্গে ইরানের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, এই দুই নেতা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডারের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর আগে বা এর থেকেও কিছু সময় আগে ইরানের কাছে এই অর্থ দাবি করেছিল হামাসের নেতারা। তবে এরইমধ্যে হামাসের এসব নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
রোববার কাতজ বলেছেন, ইরান হলো শয়তানের প্রধান এবং সকল প্রকার অস্বীকার সত্ত্বেও, আজকাল তারা গাজা থেকে শুরু করে লেবানন, সিরিয়া এবং সামেরিয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন এবং প্রচার করে। এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা হলো ইসরায়েলকে ধ্বংস করা।
তিনি আরও বলেছেন, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক না হতে পারে- তার জন্য ইসরায়েল সবকিছু করবে এবং তার প্রক্সিদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের ভূখণ্ড ভেদ করে দেশটিতে তাণ্ডব চালায়। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ২০০ জন। সেইসঙ্গে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে হামাস জিম্মি করে।
সেইদিনেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে আহত হয়েছে লক্ষাধিক।
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোর থেকে চালানো হামলায় তারা নিহত হন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মোহাম্মদ বাশালের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদ মাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এর আগে নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের তাবুতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হন।
চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা নগরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের কড়াকড়ি আরোপের ফলে ৬ লাখ ২ হাজার শিশু পোলিও টিকা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত রবিবার তুরমাস আইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোর ওমর মোহাম্মদ রাবেয়াকে গুলি করে হত্যা করেছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে। শুধু তাই নয় ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা-গণহত্যা চলছেই। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সির।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে ৩০০-র বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।
মরক্কো
গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় গতকাল। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো একে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নেরও নিন্দা জানিয়েছেন।
তুরস্ক
রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখায় আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এ সময় তারা ‘জর্ডান নদীর তীর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’ ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, ইসরায়েলের দখলদারী নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগানও দিয়েছেন। রোববার রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।
ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।
এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্যদিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।
গত মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল নাটকীয়ভাবে গাজা উপত্যকায় সীমানা প্রসারিত করেছে। তারা এখন উপত্যকাটির ৫০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ভূমি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি মানবাধিকার গোষ্ঠী ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের বরাতে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
আল-জাজিরা জানায়, গাজা সীমান্তের আশপাশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকা, যেখানে সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে যেখানে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।
তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বিতাড়নের পরিকল্পনা
পাঁচ ইসরায়েলি সেনা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই চলমান।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনোই না। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপিকে একই ধরনের কথা বলেন।
গতকাল সোমবার বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারত্ব বিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিত ভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন। গোষ্ঠীটি বলেছে, ব্যাপক পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।
সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
বিভক্ত গাজা
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে।
ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের হামলা শুরু করে, তখন থেকে তারা বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করেছে তারা।
বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।
বাফার জোনে ঢুকলেই গুলি
ইসরায়েলি সেনারা বলেছেন, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে। ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে তাকে গুলি করা হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
তার দাবি, অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে। ইসরায়েলের এ সেনা আরও বলেন, আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের লোকদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকেও হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনী যদি অভিযান শুরু করে, তাহলে কে কার পক্ষে দাঁড়াবে, এখন চলছে সেই সমীকরণও। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর এক গোয়েন্দা তথ্য। জার্মান সামরিক গোয়েন্দাদের ওই তথ্য বলছে, ভয়ংকর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
রাশিয়াকে দুর্বল করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পুতিনের নেতৃত্বে আমেরিকাকে বারবার ব্যর্থ করে দিয়েছে রাশিয়া। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায় নিজের বন্ধু বাড়িয়েছেন পুতিন। ইরানের সঙ্গেও সম্প্রতি রাশিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান অত্যাধুনিক সব যুদ্ধ-সরঞ্জামও পাচ্ছে। তাই সম্ভাব্য মার্কিন হামলার আগে তেহরানকে সাহস জোগাচ্ছে মস্কো।
জার্মান সামরিক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের এমন বিশ্বাস জন্মেছে, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। জার্মানির তিনটি গণমাধ্যম এ নিয়ে যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন করে, তার ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পশ্চিমের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে, এমনটাই ভাবছে রাশিয়া। একই সঙ্গে সেই অনুযায়ী আগাম প্রস্তুতিও নিচ্ছেন পুতিন।
নিজের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য অর্জনে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা করছেন পুতিন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে শুরু করা ইউক্রেন যুদ্ধ সেই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ। শেষ পর্যন্ত পুরো ইউরোপের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামবেন পুতিন। এই দশকের শেষ দিকে একটি বড় ধরনের প্রচলিত যুদ্ধের ভিত্তি দাঁড় করে ফেলবে রাশিয়া।
এই মুহূর্তে ন্যাটোর একটি বা একাধিক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা নেই রাশিয়ার। যদিও লিথুয়ানিয়ার স্পেশাল সার্ভিস-ভিএসডি বলছে, এই মুহূর্তে ন্যাটোর এক বা একাধিক দেশের বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে সামরিক অ্যাকশন নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে মস্কোর। জার্মানির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সার্ভিস-বিএনডির অভিযোগ- জোটের অন্য দেশকে সহযোগিতার ব্যাপারে ন্যাটোর সদস্যরা কতখানি দায়বদ্ধ, তা পরীক্ষা করে দেখতে চান পুতিন।
বিএনডি বলছে, দ্রুতগতিতে নিজেদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে ক্রেমলিন। আগামী বছরের মধ্যে নিজেদের সেনা সংখ্যা ১৫ লাখে উন্নীত করতে চায় রাশিয়া। ২০২৫ সালে রাশিয়ার সামরিক বাজেট ১২০ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। চার বছর আগের তুলনায় এটা প্রায় চার গুণ বেশি। গত সপ্তাহে মার্ক রুট্টে হুঁশিয়ার করে বলেন, রাশিয়া যদি পোল্যান্ড বা জোটের অন্য দেশে হামলা করে তাহলে যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘মিত্র বিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করল শ্রীলঙ্কা সরকার। দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর করা, আর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে এটি নরেন্দ্র মোদির ২২তম সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। বিশ্বমঞ্চে বিশেষ বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে এই ‘মিত্র বিভূষণ’ পদক চালু করেছে শ্রীলঙ্কা।
এই পদক ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের উষ্ণতা ও গভীরতাকে প্রতিফলিত করে। পদক পাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই সম্মান দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও ঐতিহাসিক বন্ধনের পরিচয় দেয়।
এক্স-এ পোস্ট করে মোদি বলেন, ‘‘আজ রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিশানায়েক আমাকে ‘শ্রীলঙ্কা মিত্র বিভূষণে’ সম্মানিত করেছে। এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই সম্মান শুধু আমার একার নয়, এটা ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের প্রতি সম্মান। এটা ভারত ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতীক। এই সম্মানের জন্য আমি রাষ্ট্রপতি, সরকার ও শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’’
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘মিত্র বিভূষণ’ প্রদান করেন। দিশানায়েকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্মানের যোগ্য।
প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দিশানায়েকে বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে শ্রীলঙ্কা সরকার তাকে (নরেন্দ্র মোদি) বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান হিসেবে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ সম্মান ‘শ্রীলঙ্কা মিত্র বিভূষণ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর পর ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।
ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতের মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।
তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।
পাঁচ ইসরায়েলি সেনা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চলমান।
গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, ‘তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও তারা গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনই না।’ নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপিকে এসব কথা বলেন।
সোমবার (৭ এপ্রিল) বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারবিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিতভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন।
গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘ব্যাপক, পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।’
সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।
বিভক্ত গাজা
ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে।
ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় হামলা শুরু করে, তখন এটি বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার (১.৮ মাইল) পর্যন্ত দখলে নেয়।
বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।
গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়—যা রাফাহ শহরকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। গাজার ওই অঞ্চলে সম্প্রতি পরিকল্পিত হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা।
বাফার জোন ‘কিল জোন’, দাবি সেনাদের
সৈন্যরা বলেছে, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে।
ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে, তাকে গুলি করা হয়। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।
কম্পিত ও ভীত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি যে, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকে হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।’
সেনাবাহিনী বলেছে, ‘যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে’ গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছেন।
এদিকে, ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। দক্ষিণ ইসরায়েলের আশদোদ শহরে চালানো এ হামলায় আহত হয়েছেন তিনজন। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এই রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড। ফিলিস্তিনের বেসামরিক জনগণের উপর ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার জবাবেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচয় আদ্রে জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েলের শহর লক্ষ্য করে ছোড়া ১০টি রকেট শনাক্ত করেছে তারা। এর বেশিরভাগই ইসরায়েলি সেনারা প্রতিহত করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, আশকেলন শহরে একটি রকেট পড়ায় সেখানে তিনজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় আশদোদ, আশকেলন ও ইয়াভনি শহরে সর্তকতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।
এ হামলার কড়া জবাব দিতে মধ্য গাজায় চলমান অভিযান আরও জোরদার করতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এরপর রবিবার রাত থেকেই মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ শহরে বিমান হামলা শুরু করে আইডিএফ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতভর লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো উড়তে দেখা গেছে গাজার আকাশে।এতে আজ (সোমবার) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।
নতুন করে চালানো এসব হামলায় অন্তত ১ হাজার ৩৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩ হাজার ২৯৭ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আজ (সোমবার) বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ ধর্মঘটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি।
ফিলিস্তিনভিত্তিক ওয়াফা নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সমগ্র ফিলিস্তিনে সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ’দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্স অব প্যালেস্টাইন’ বা প্যালেস্টাইন জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী। আজ সোমবার এই ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী হলো দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট। এই জোট তার সদস্যদের এজেন্ডা সমন্বয় করে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথ রাজনৈতিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
এক বিবৃতিতে জোটটি প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর উত্থাপন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে একত্রিত করার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য জবাবদিহিতার দাবি অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গাজাবাসীর এই আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ’ ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন। ’
আজ বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারা দেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।
তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
একই আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুকে পেজে তিনি লিখেছেন, ’গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আগামীকাল সোমবার বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ ধর্মঘটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি।
ফিলিস্তিনভিত্তিক ওয়াফা নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সমগ্র ফিলিস্তিনে সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ’দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্স অব প্যালেস্টাইন’ বা প্যালেস্টাইন জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী। সোমবার এই ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী হলো দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট। এই জোট তার সদস্যদের এজেন্ডা সমন্বয় করে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথ রাজনৈতিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে।
এক বিবৃতিতে জোটটি প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর উত্থাপন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে একত্রিত করার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য জবাবদিহিতার দাবি অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, গাজাবাসীর এই আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ’ ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন। ’
বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারা দেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।
তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।
একই আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুকে পেজে তিনি লিখেছেন, ’গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন।’
প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একযোগে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে প্রায় এক হাজার ২০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে- যা একক দিনের ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে বড় আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং হালকা বৃষ্টির মধ্যেও ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে বেশ কিছু সংগঠনও যুক্ত হয়। ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষেও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ট্রাম্পবিরোধী জমায়েতে ফিলিস্তিনি পতাকা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন মার্কিনিরা। মিছিলে ইসরায়েলি হামলা এবং এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের নিন্দা জানানো হয়। এ সময় গাজাকে বাঁচতে দাও এমন স্লোগানও ওঠে। গেল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি বড় ব্যানারও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে।
ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। বিক্ষোভে একশ পঞ্চাশটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা দিতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
আন্দোলনের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রায় ১৫০টি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিন্সটনের অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন জানান, ‘আমি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডিওজিই বিষয়ক অবস্থান, এই সপ্তাহের ট্যারিফ, শিক্ষা- সবকিছুর বিরুদ্ধেই এসেছি। আমাদের গোটা দেশ, সব প্রতিষ্ঠান আজ হুমকির মুখে।’
সমাবেশস্থলে অনেকে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি ইউক্রেনের পতাকা নিয়েও হাজির হন। মঞ্চে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন। ওয়েস্ট কেপ মে, নিউ জার্সির অবসরপ্রাপ্ত মানি ম্যানেজার ৭৩ বছর বয়সী ওয়েইন হফম্যান বলেন, ‘এই ট্যারিফগুলোর ফলে লাল রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতি হবে, কর্মসংস্থান যাবে, ৪০১কে তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকজন হাজার হাজার ডলার হারাচ্ছে।’
কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ডে ৮৪ বছর বয়সী সু-অ্যান ফ্রিডম্যান একটি উজ্জ্বল গোলাপি লেখা পোস্টার নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার মিছিল করা শেষ, কিন্তু মাস্ক আর ট্রাম্পের মতো লোকেরা আবার আমাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে।’
৭৪ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী পল ক্রেটসম্যান প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে সোশ্যাল সিকিউরিটি ধ্বংস করে ফেলা হবে, আমাদের সেবাগুলো কে দেবে? এটা সরকারের কাঠামো ভেঙে ফেলার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে, যেন ট্রাম্প দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একযোগে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে প্রায় এক হাজার ২০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে- যা একক দিনের ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে বড় আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং হালকা বৃষ্টির মধ্যেও ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে বেশ কিছু সংগঠনও যুক্ত হয়। ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষেও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ট্রাম্পবিরোধী জমায়েতে ফিলিস্তিনি পতাকা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন মার্কিনিরা। মিছিলে ইসরায়েলি হামলা এবং এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের নিন্দা জানানো হয়। এ সময় গাজাকে বাঁচতে দাও এমন স্লোগানও ওঠে। গেল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি বড় ব্যানারও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে।
ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। বিক্ষোভে একশ পঞ্চাশটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা দিতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
আন্দোলনের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রায় ১৫০টি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিন্সটনের অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন জানান, ‘আমি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডিওজিই বিষয়ক অবস্থান, এই সপ্তাহের ট্যারিফ, শিক্ষা- সবকিছুর বিরুদ্ধেই এসেছি। আমাদের গোটা দেশ, সব প্রতিষ্ঠান আজ হুমকির মুখে।’
সমাবেশস্থলে অনেকে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি ইউক্রেনের পতাকা নিয়েও হাজির হন। মঞ্চে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন। ওয়েস্ট কেপ মে, নিউ জার্সির অবসরপ্রাপ্ত মানি ম্যানেজার ৭৩ বছর বয়সী ওয়েইন হফম্যান বলেন, ‘এই ট্যারিফগুলোর ফলে লাল রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতি হবে, কর্মসংস্থান যাবে, ৪০১কে তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকজন হাজার হাজার ডলার হারাচ্ছে।’
কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ডে ৮৪ বছর বয়সী সু-অ্যান ফ্রিডম্যান একটি উজ্জ্বল গোলাপি লেখা পোস্টার নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার মিছিল করা শেষ, কিন্তু মাস্ক আর ট্রাম্পের মতো লোকেরা আবার আমাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে।’
৭৪ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী পল ক্রেটসম্যান প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে সোশ্যাল সিকিউরিটি ধ্বংস করে ফেলা হবে, আমাদের সেবাগুলো কে দেবে? এটা সরকারের কাঠামো ভেঙে ফেলার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে, যেন ট্রাম্প দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে একযোগে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য শহরে প্রায় এক হাজার ২০০টি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে- যা একক দিনের ট্রাম্পবিরোধী সবচেয়ে বড় আন্দোলন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং হালকা বৃষ্টির মধ্যেও ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে বেশ কিছু সংগঠনও যুক্ত হয়। ওয়াশিংটন ছাড়াও নিউইয়র্কে ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষেও স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ট্রাম্পবিরোধী জমায়েতে ফিলিস্তিনি পতাকা ও গাজায় গণহত্যা বন্ধের প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন মার্কিনিরা। মিছিলে ইসরায়েলি হামলা এবং এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের নিন্দা জানানো হয়। এ সময় গাজাকে বাঁচতে দাও এমন স্লোগানও ওঠে। গেল ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনিদের নামের তালিকা সম্বলিত একটি বড় ব্যানারও দেখা যায় বিক্ষোভকারীদের হাতে।
ট্রাম্পবিরোধী এই বিক্ষোভের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হ্যান্ডস অফ’। এর একটি অর্থ হতে পারে, ‘আমাদের নিজের মতো চলতে দাও’। বিক্ষোভে একশ পঞ্চাশটির মতো গোষ্ঠী অংশ নিয়েছে। সেগুলোর একটি ‘ইনডিভিজিবল’। গোষ্ঠীটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, বিশাল এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে তারা ট্রাম্প, ইলন মাস্ক, রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য ও তাদের মিত্রদের পরিষ্কার বার্তা দিতে চান যে, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ওপর কোনো হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না।
আন্দোলনের ওয়েবসাইট অনুসারে, প্রায় ১৫০টি অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপ এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ছাড়াও কানাডা ও মেক্সিকোতেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রিন্সটনের অবসরপ্রাপ্ত বায়োমেডিকেল বিজ্ঞানী টেরি ক্লেইন জানান, ‘আমি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতি, ডিওজিই বিষয়ক অবস্থান, এই সপ্তাহের ট্যারিফ, শিক্ষা- সবকিছুর বিরুদ্ধেই এসেছি। আমাদের গোটা দেশ, সব প্রতিষ্ঠান আজ হুমকির মুখে।’
সমাবেশস্থলে অনেকে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ লেখা প্ল্যাকার্ডের পাশাপাশি ইউক্রেনের পতাকা নিয়েও হাজির হন। মঞ্চে মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরাও ট্রাম্পের নীতির সমালোচনা করেন। ওয়েস্ট কেপ মে, নিউ জার্সির অবসরপ্রাপ্ত মানি ম্যানেজার ৭৩ বছর বয়সী ওয়েইন হফম্যান বলেন, ‘এই ট্যারিফগুলোর ফলে লাল রাজ্যের কৃষকদের ক্ষতি হবে, কর্মসংস্থান যাবে, ৪০১কে তহবিল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লোকজন হাজার হাজার ডলার হারাচ্ছে।’
কানেকটিকাটের স্ট্যামফোর্ডে ৮৪ বছর বয়সী সু-অ্যান ফ্রিডম্যান একটি উজ্জ্বল গোলাপি লেখা পোস্টার নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম আমার মিছিল করা শেষ, কিন্তু মাস্ক আর ট্রাম্পের মতো লোকেরা আবার আমাকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে।’
৭৪ বছর বয়সি অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী পল ক্রেটসম্যান প্রথমবারের মতো কোনো বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে সোশ্যাল সিকিউরিটি ধ্বংস করে ফেলা হবে, আমাদের সেবাগুলো কে দেবে? এটা সরকারের কাঠামো ভেঙে ফেলার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে, যেন ট্রাম্প দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে।’