বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
২ বৈশাখ ১৪৩২

ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থায় অর্থায়ন স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালি

গাজায় শরণার্থী শিবিরে ইউএনআরডব্লিউএর কর্মীদের কাছ থেকে সহায়তা নিচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড
২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৪:৩৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪ ১৪:৩২

ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থায় অর্থায়ন স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশ। ইসরায়েলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার সঙ্গে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন- এমন অভিযোগ ওঠায় সংস্থাটির অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালি। গতকাল শনিবার পৃথক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিবিসি ও আল-জাজিরা। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে বলে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে।

ইউএনআরডব্লিউএর কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের ভয়াবহ হামলায় ইউএনআরডব্লিউএর কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন- আমাদের কাছে এমন অভিযোগ জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের এমন অভিযোগের পরপরই সংস্থাটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।’

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগের পর ইউএনআরডব্লিউএকে অর্থ দেওয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া ইসরায়েলের এ অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে দেশটি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছে কানাডাও। কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী আহমেদ হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বার্তায় বলেন, ‘৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিন্দা জানিয়েছে কানাডা। এ হামলার সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএর কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার পর ইউএনআরডব্লিউএকে তহবিল স্থগিতের কথা জানিয়েছে ইতালিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, ‘মিত্র দেশগুলো সম্প্রতি একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা ফিলিস্তিনের মানুষদের জন্য মানবিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিন্তু পাশাপাশি ইসরায়েলের নিরাপত্তাও রক্ষা করে চলি।’

এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস বলছে, ইসরায়েল ইউএনআরডব্লিউএসহ জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’ চালাচ্ছে এবং গাজায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে চায়।

গাজায় তুমুল লড়াই, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হাসপাতাল

গাজায় হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে, বিশেষ করে গাজার খান ইউনিস শহরে। সেখানকার নাসের হাসপাতাল এরই মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছে রোগীরা। কয়েক দিন ধরেই খান ইউনিসে অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। তা ছাড়া আল-দাহারা এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। তাছাড়া হামাসের হামলায় এক হাজার ১৩৯ জন ইসরায়েলি এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। শুক্রবার এ রায়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তার বাহিনী গাজায় আর গণহত্যা চালাবে না ও ‘কথিত’ গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে।

গাজা উপত্যকায় গণহত্যা নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মামলার রুল জারি করেছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। এতে গাজায় গণহত্যা বন্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে গাজায় ইসরায়েলকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দেননি আদালত।

বিষয়:

গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব দিল ইসরায়েল

নিহত আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপ গাজার একটি এলাকা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যস্থতাকারী দেশ মিসর ও কাতার যৌথভাবে এ প্রস্তাব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের কাছে পাঠিয়েছে। এখন গোষ্ঠীটি এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ইজিপ্ট টুডের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিসর ও কাতার যৌথভাবে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠিয়েছে। কায়রোভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল কাহেরা নিউজ সূত্রে জানা গেছে, মধ্যস্থতাকারীরা হামাসের কাছ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

একটি টেলিগ্রাম বার্তায় হামাস (ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্ট) জানায়, তারা প্রস্তাবটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। প্রয়োজনীয় আলোচনা শেষে দ্রুত এর জবাব দেবে তারা।

হামাসের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, তারা তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে, যে কোনো ভবিষ্যৎ চুক্তির মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, বন্দি বিনিময় চুক্তি, ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংস হওয়া অবকাঠামো পুনর্গঠনের কার্যকর প্রক্রিয়া এবং গাজা থেকে অন্যায় অবরোধ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে হবে।

আল আরাবিয়া নেটকে ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েল তাদের নতুন প্রস্তাবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত দিয়েছে যুদ্ধবিরতির জন্য। তবে হামাসের একজন নেতার বরাতে জানা গেছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের শর্তে তারা সব ইসরায়েলি বন্দিকে একসঙ্গে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। আন্দোলনের শীর্ষ নেতা খালিল আল-হাইয়ার নেতৃত্বে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল গত শনিবার কায়রোতে পৌঁছায়। তারা গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে মিসরীয় ও কাতারি মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন।

মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলআত্তি জানিয়েছেন, তাদের সাম্প্রতিক প্রস্তাব গাজার পরিস্থিতি শান্ত করতে, মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে এবং বন্দি-বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করতে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, এই প্রস্তাব সব পক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং ইতিবাচক আলোচনাও চলছে। তবে আজ যে প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠানো হয়েছে, সেটি ইসরায়েলই মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পাঠিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ জন।

গাজায় আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। গত ১৮ মার্চ গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে ১৬০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৫১ হাজারে পৌঁছে গেছে। এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে আরও ৩৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫০ হাজার ৯৮৩ জনে পৌঁছেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১১৮ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৭৪ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।

দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬১৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান

বিশ্বের সব মুক্ত মানুষকে ইসরায়েলের অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন এক হাজার ৮০০ ইরানি সাংস্কৃতিক ও মিডিয়া কর্মী। এই আহ্বান জানিয়ে এক চিঠিতে তারা বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ কথার প্রচারণা ভালোবাসেন না, তবে কেহ অত্যাচারিত হয়ে থাকলে তার কথা স্বতন্ত্র; এবং আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।’ সুরা নিসা-১৪৮

মিডিয়া কর্মীরা বলেন, একটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি ভবনের মাঝখানে আঘাত করে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ গোটা ভূ-স্বর্গ কেঁপে ওঠে। বাতাসে উড়তে দেখা যায় ধোঁয়া, ধুলো এবং আগুন। মুহূর্ত পরে ... কালো দাগ দৃশ্যের পুরো ফ্রেম পূর্ণ করে। এগুলো হলো বিন্দু বিন্দু যা অবিশ্বাস্য গতিতে আকাশে ছুঁড়ে ফেলা হয় এবং মাটিতে পড়ে যায়।

এই বিন্দুগুলো কী? বিস্ফোরণের শক্তি আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে কী বিচরণ করে রেখেছে? ... সময় গড়িয়ে যায় এবং আমরা বুঝতে পারি যে বিন্দুগুলো হলো হাত, দেহ, মাথা এবং অঙ্গ। মানুষগুলো সবচেয়ে জঘন্যতম প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্টতম প্রাণীর বর্বরতার আগুনে পুড়ছে। এই মানুষগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে আকাশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। তুমি কি দেখতে পাচ্ছো? সেই মানুষটি জ্বলছে এবং আকাশে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ...। বিভীষিকাময় এই ঘটনা এমন একটি দেশের, যার নাম দুঃখের সঙ্গে জড়িত: সেটি হলো গাজা।


ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে মামলা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
আপডেটেড ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:৩০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বাতিল চেয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা হয়েছে। ট্রাম্পের আরোপিত নতুন শুল্কনীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গত সোমবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা দায়ের করেছে একটি আইনি সহায়তা সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপের বিষয়টি স্থগিত করার অনুরোধ জানানো হয়।

সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘন করেছেন। ‘লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার’ নামে ওই সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা পাঁচটি ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন আমদানিকারক সংস্থার পক্ষে এ মামলাটি করেছে। এসব সংস্থা এমন কিছু পণ্য আমদানি করে যেগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক আরোপ করেছে।

মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে যে ব্যবসাগুলোর নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নিউইয়র্কের একটি ওয়াইন ও স্পিরিট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, একটি স্পোর্টফিশিং যন্ত্রপাতি উৎপাদন ও বিক্রয়কারী ই-কমার্স কোম্পানি, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান থেকে আমদানি করা রজন দিয়ে তৈরি ইউএসভিত্তিক পাইপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ভার্জিনিয়ার একটি ইলেকট্রনিক কিট এবং বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং ভেরমন্টের নারীদের সাইক্লিং পোশাক প্রস্তুতকারক একটি ব্র্যান্ড।

গত ২ এপ্রিল ঘোষণা হওয়া শুল্কের পাশাপাশি চীনের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে আরোপিত শুল্ককে ওই মামলায় চ্যালেঞ্জ করা হয়। লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের সিনিয়র আইনজীবী জেফ্রি শোয়াব এক বিবৃতিতে বলেন, কোনো ব্যক্তিরই এমন কর আরোপের ক্ষমতা থাকা উচিত নয় যার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এমন বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস এক বিবৃতিতে ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির কারণে চীনের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হওয়ায় বেশ কিছু বিরল খনিজ পদার্থ ও চুম্বক দেশটিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে চীন। পেন্টাগন এবং প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা চীনে খনন বা প্রক্রিয়াজাত করা চুম্বক এবং বিরল মাটির খনিজ পদার্থের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। ফলে চীনের এমন পদক্ষেপের কারণে ঝুঁকিতে পড়তে পারে মার্কিন সামরিক কর্মসূচি।

বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো ইঞ্জিন চালু করতে এবং জরুরি শক্তি সরবরাহের জন্য চীনে খনন করা বা প্রক্রিয়াজাত করা বিরল মাটির খনিজ পদার্থ দিয়ে তৈরি চুম্বকের প্রয়োজন হয়।

মার্কিন সেনাবাহিনীর পছন্দের তালিকায় থাকা নির্ভুল-নির্দেশিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে চীনা বিরল আর্থ উপকরণযুক্ত চুম্বক বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া নতুন বৈদ্যুতিক এবং ব্যাটারিচালিত ড্রোন, কম্প্যাক্ট বৈদ্যুতিক মোটরে বিরল চুম্বকের ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।


ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ক্যালিফোর্নিয়া

ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ব্যস্ততম সড়ক। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে অঙ্গরাজ্যটির সান দিয়েগো নগরীর বাইরে গ্রামীণ রাস্তাগুলোতে পাথরের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ছাড়া নগরীর সাফারি পার্কে ঝাঁকুনি অনুভব করেন কর্মকর্তারা। তবে কোনো আহত বা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১০টা ৮ মিনিটে আঘাত হানে। এটি সান দিয়েগো কাউন্টিতে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল প্রায় ১৫০০ জন লোকের একটি পাহাড়ি শহর জুলিয়ান থেকে মাত্র কয়েক মাইল (৪ কিলোমিটার) দূরে। ভূমিকম্পটি লস এঞ্জেলেস কাউন্টির উত্তরে প্রায় ১২০ মাইল (১৯৩ কিলোমিটার) দূরে অনুভূত হয়েছিল। এরপর বেশ কয়েকটি আফটারশক হয়।

জুলিয়ানে ১৮৭০ এর দশকে পরিচালিত একটি প্রাক্তন সোনার খনির মালিক পল নেলসন বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম সিঙ্গল-পেন জানালাগুলো ফাটতে চলেছে কারণ সেগুলো বেশ ভালোভাবে কাঁপছিল। উপহারের দোকানের কাউন্টারে থাকা কিছু ছবির ফ্রেম ঝাঁকুনিতে পড়ে গেছে। কিন্তু পর্যটকরা যে সুড়ঙ্গগুলো ঘুরে দেখতে পারেন তার কোনো ক্ষতি হয়নি। এর আগে রোববারও ভূমিকম্প আঘাত হানে বলে জানান তিনি।

জুলিয়ানের উত্তর-পশ্চিম স্টেট রুটসহ পাহাড়ি ঢালে এবং রাস্তা ও হাইওয়েতে আছড়ে পড়া পাথরের দিকে সতর্ক থাকতে যানবাহন চালকদের সতর্ক করে দিয়েছেন পরিবহণ কর্মকর্তারা। সান দিয়েগো কাউন্টির ক্যালিফোর্নিয়া পরিবহণ বিভাগ জানিয়েছে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির জন্য সড়কপথের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।

সান দিয়েগো সাফারি পার্কে আফ্রিকান হাতির একটি পাল ভূমিকম্পের সময় তাদের বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্য দৌড়ে যাওয়ার ঘটনা একটি ভিডিওতে ধরা পড়ে। হাতিদের তাদের পায়ের মাধ্যমে শব্দ অনুভব করার ক্ষমতা রয়েছে এবং আচরণটি একটি ‘সতর্ক বৃত্ত’ হিসাবে পরিচিত।

এই ভূমিকম্পের ফলে উত্তর কাউন্টি ট্রানজিট জেলা ট্রেনগুলো বিলম্বে ছেড়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়া ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফায়ার প্রোটেকশন ফর সান ডিয়েগো কাউন্টির ক্যাপ্টেন থমাস শ্যুট জানান, মাটি সরে গেলে সতর্কতা হিসেবে স্কুলছাত্রীদের ভবনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি একটি ঝাঁকুনি সতর্কতা পেয়েছিলেন এবং তারপর ধাক্কা অনুভব করতে শুরু করেছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার একজন অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ লুসি জোনসের মতে, ভূমিকম্পটি এলসিনোর ফল্ট জোনের কাছে ৮.৩ মাইল (১৩.৪ কিলোমিটার) গভীরে আঘাত করেছিল। এটি ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যস্ততম ভূমিকম্প অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি এবং বিখ্যাত সান আন্দ্রেয়াস ফল্ট সিস্টেমের অংশ যা সাধারণত প্রতি বছর কমপক্ষে একটি ৪ মাত্রার ভূমিকম্পের সাক্ষী হয়। জুলিয়ানে রোববার অনুভূত ভূমিকম্পটি ছিল ৩.৫ মাত্রার কম্পন, যা সোমবারের বৃহত্তর ভূমিকম্পের পূর্বশক ছিল।


গাজা যুদ্ধবিরতির জন্য জিম্মি মুক্তির দাবি ইসরাইলের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস সোমবার জানিয়েছে, গাজায় আটক অবশিষ্ট জিম্মির অর্ধেকের মুক্তি দেওয়া হলে ইসরাইল ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন এটি সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটের কবলে। গাজা সিটি থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

হামাসের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে জানান, ইসরাইল গাজা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করার জন্য ফিলিস্তিনিদের নিরস্ত্রীকরণেরও দাবি করেছে। তবে কর্মকর্তা বলেছেন, নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে।

কর্মকর্তা এবং মিশরীয় মধ্যস্থতাকারীরা জানান, একটি ইসরাইলি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবে বলা হয়েছে ‘চুক্তির প্রথম সপ্তাহে অর্ধেক জিম্মির মুক্তি দেওয়া হলে কমপক্ষে ৪৫ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হবে ও সাহায্য প্রবেশ করবে।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস হামলা চালিয়ে ২৫১ জনকে জিম্মি করে। ওই হামলা যুদ্ধের সূত্রপাত করে।

গাজায় এখনও প্রায় ৫৮ জন বন্দী রয়েছে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী যার ৩৪ জন মৃত বলে দাবি করে।

কর্মকর্তা আরো বলেন, হামাস নেতারা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পর্যালোচনা করেন। তবে অস্ত্র প্রতিরোধের বিষয়টি একটি লাল রেখা ও আলোচনার অযোগ্য বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, হামাসের আলোচকরা কাতারে যাচ্ছেন, যেখানে তাদের একটি অফিস রয়েছে এবং ইসরাইলের সাথে মূল মধ্যস্থতাকারী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হামাসের বিবৃতির বিষয়ে ইসরাইল তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।

জাতিসংঘ বলছে, চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ, জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতি রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ) জানিয়েছে, ‘যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৮ মাসের মধ্যে মানবিক পরিস্থিতি এখন সবচেয়ে খারাপ।’

এর আগে, কয়েক সপ্তাহ ধরে এই অঞ্চলে কোনও সাহায্য প্রবেশ না করায় পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে এবং গাজার মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।

কর্মকর্তা বলেন, হামাস মধ্যস্থতাকারীদের জানিয়েছে, তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণ ইসরাইলি প্রত্যাহার ও সাহায্য প্রবেশের অন্তর্ভুক্ত যেকোনো প্রস্তাবে সম্মত হতে ইচ্ছুক।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় যুদ্ধরত ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির পরবর্তী ধাপ নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে দিয়ে দুই মাস ধরে চলা বিরতি ভেঙে যাওয়ার পর মার্চ মাসে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে পুনরায় অভিযান শুরু করে।

যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে, ২ মার্চ থেকে ইসরাইল মানবিক সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে।

ওসিএইচএ জানিয়েছে, সাহায্য কর্মীদের ‘অবশিষ্ট মজুদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করার জন্য রেশনিং ও সরবরাহ কমাতে’ বাধ্য করা হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের নাসের হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আহমেদ আল-ফারাহ বলেন, ‘সবকিছুর ঘাটতি’ থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসা দল অবিরাম কাজ করছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গাজায় ‘জরুরি’ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।

ফিলিস্তিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, এক ফোনালাপে ম্যাখোঁ ও আব্বাস ‘যুদ্ধবিরতির জরুরি প্রয়োজনীয়তা, মানবিক সহায়তা সরবরাহ ত্বরান্বিত করা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে জোর দিয়েছেন।’

ম্যাখোঁ এক্স-এ বলেছেন, জিম্মিদের মুক্ত করতে ও লড়াই বন্ধ করতে ‘ফ্রান্স সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।’ তিনি হামাসবিহীন যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা পরিচালনার পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ‘সংস্কার’ করার পক্ষেও কথা বলেছেন।

হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তাহের আল-নুনু ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ‘গুরুতর বন্দী বিনিময়ের’ শর্তে ইসরাইল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর নিশ্চয়তা দিলে হামাস সকল জিম্মিকে মুক্তি দিতে ইচ্ছুক। ‘ দখলদার বাহিনী তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছে এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে নুনু বলেন, ‘বন্দীর সংখ্যা কোনো বিষয় নয়।’ তবে মিশরীয় ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের সাথে আলোচনার পর তিনি জোর দিয়ে বলেন, হামাস তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে না।

ইসরাইলি সংবাদ ওয়েবসাইট ওয়াইনেট জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের আওতায়, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেওয়ার মার্কিন গ্যারান্টির বিনিময়ে হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেবে।

১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া প্রথম যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার আগে একাধিক জিম্মি-বন্দী বিনিময় অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসরাইল প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে হামাস সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রূপরেখা অনুসারে চুক্তির অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার ওপর জোর দেয়।

তবে ম্যাখোঁ ঘোষণা করেছেন, ফ্রান্স কয়েক মাসের মধ্যে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে। তিনি সোমবার আশা প্রকাশ করেন যে, ফরাসি স্বীকৃতি অন্যান্য দেশকেও অনুসরণ করতে ‘উদ্দীপনা’ দেবে। তিনি বলেন, দেশগুলো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না তাদেরও তা দেওয়া উচিত।

ইসরাইল ম্যাখোঁর ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে। ইসরাইল জোর দিয়ে বলেছে, স্বীকৃতির পদক্ষেপগুলো অসময়ের।

নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, আমাদের ভূমির কেন্দ্রস্থলে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র যেটির একমাত্র আকাঙ্ক্ষা হল ইসরাইলের ধ্বংস। সেটির ধারণা প্রচার করে প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ মারাত্মক ভুল করছেন।


কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘টাইট’দেওয়া যায়, তা বের করতেই ভিয়েতনামে শি: ট্রাম্প

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (বাঁয়ে), মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (মাঝে), ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লাম ।
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে ‘টাইট’ দিতেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সফরের শুরুতে স্থানীয় সময় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয় পৌঁছান শি। হ্যানয়ের বৈঠক শেষেই এ সম্পর্কে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রতিবেশী ৩টি দেশে সফর শুরু করেন চীনের প্রেসিডেন্ট।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার তথ্যমতে, শি তার সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন।

এমন একটি সময় শি এই সফর শুরু করেছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কারোপ নিয়ে উত্তেজনা চলছে। এছাড়া ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়াও ট্রাম্পের শুল্কারোপে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে এমন তথ্য দেওয়া হয়েছে।

সফরের প্রথমদিনে ভিয়েতনামের শীর্ষ নেতা তো লামের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট। এ সময় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়করণসহ দেশ দুটির মধ্যে সরবরাহ শৃঙ্খল মজবুত করতে বেশকিছু সমঝোতা স্মারক সই করেন শি ও লাম।

এর পরপরই হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে এই বৈঠক নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষতির উদ্দেশেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

তিনি বলেন, ‘এখানে আমি চীনেরও দোষ দেখছি না, ভিয়েতনামেরও না। খুবই ভালো একটি বৈঠক হয়েছে, যেখানে আলোচনার বিষয় হলো—কীভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে টাইট দিতে পারি!’

বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় একটি সংকট তৈরি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে, চীনের মাথার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক। অন্যদিকে, ভিয়েতনামের ওপর রয়েছে ওয়াশিংটনের ৪৬ শতাংশ শুল্ক। যদিও সেটি ৯০ দিনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তাই শঙ্কা এখনো কাটেনি। এককভাবে ভিয়েতনামের পণ্য রপ্তানির সবথেকে বড় বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র।

এ কারণে শুল্ক কার্যকর হলে সেটি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে ‍নিশ্চিতভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। আবার চীনের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে হলে চীনেরও একটি বিকল্প বাজার দরকার। সে কারণে চীন এবার দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের প্রেডিডেন্ট আগেই তার এই সফরের পরিকল্পনা করলেও কাকতালীয়ভাবে ট্রাম্পের শুল্কারোপের পর এই সফর আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গণে বাড়তি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে।

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের প্রভাব কমাতে দেশটির সঙ্গে আলোচনায় জোর দিয়েছে কোনো কোনো দেশ। চীন কিংবা কানাডার মতো কিছু দেশ আবার পাল্টা শুল্কও আরোপ করেছে।

এছাড়া, চীন নিজেদের একটি বিশ্বস্ত বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করার চেষ্টা করছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দিয়েছেন শি জিনপিং।

ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক দলের পত্রিকা নিহানদানের একটি প্রতিবেদনে তিনি বলেন, ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধে আসলে কেউই জয়ী হবে না। এই সুরক্ষাবাদ (শুল্কারোপসহ নানাভাবে বিভিন্নদেশ থেকে পণ্য আমদানি বন্ধ করা) কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।’

ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সঙ্গে বৈঠকের পর শি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্যায় শুল্কারোপের বিরুদ্ধে তাদের সোচ্চার হওয়া উচিত। এ সময় রেলসহ বিভিন্ন খাতে মোট ৪৫টি চুক্তি সই করা হয়েছে বলে চিন ও ভিয়েতনামের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। তবে চুক্তিগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানা যায়নি।’

শুধু ভিয়েতনামই নয়; দক্ষিণ এশিয়ার আরও অনেক দেশও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি না করতে পেরে নিজেদের পণ্যগুলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রপ্তানি করতে পারে চীন। এই আশঙ্কা থেকেই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আবার চীনকেও অখুশি না করে চলতে চাইছে দেশগুলো।

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান উত্তেজনা বিশ্বের বৃহৎ দুটির অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বলেছেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। আবার সম্পর্ক টিকেও যেতে পারে। এছাড়া এক পর্যায়ে গিয়ে একটি বড় চুক্তি হতে পারে।’

কোনো চুক্তি হবে কিনা বা এই শুল্কারোপ আসলে কি ধরনের অবস্থা সৃষ্টি করবে; তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা আগেই নিশ্চিত করেছেন, ৯০ দিনের জন্য শুল্কের স্থগিতাদেশ সাময়িক।

নিজের সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘কোনো দেশই এখনো এই শুল্কের আওতাধীন না, চীন তো একদমই না। তারা আমাদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে।’


বুধবার ঢাকায় আসছেন ট্রাম্পের ২ উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি:সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

তিন দিনের সফরে আগামী বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতও।

গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় বসেন ট্রাম্প। তার প্রশাসনের প্রথম প্রতিনিধিদলের এ সফরে বাংলাদেশে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা এবং মায়ানমারের পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্র।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটনে নিয়োজিত বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, বুধবার প্রথমে ঢাকায় পৌঁছাবেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক। পরে আরেকটি ফ্লাইটে আসবেন যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপ। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মিয়ানমারে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী সফরের প্রথম দিনের শুরুতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন।

এরপর তারা পর্যায়ক্রমে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।

আগামী বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানসহ সরকারের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিদলের প্রথম বাংলাদেশ সফর। ফলে দুই দেশের সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। প্রাসঙ্গিকভাবে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।

বাংলাদেশ সফরের সময় নিকোল চুলিক অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংস্কারপ্রক্রিয়া বিশেষ করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করবেন। এ সময় তিনি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন বলে সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়া অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরে মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


ওয়াকফ আইন ইস্যুতে থমথমে পশ্চিমবঙ্গ, গ্রেপ্তার দেড় শতাধিক

নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গকে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:০৭
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইনের প্রতিবাদ এবং পরবর্তী সহিংসতায় কলকাতাসহ গোটা পশ্চিমবঙ্গে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এরই মধ্যে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে মুর্শিদাবাদে মোতায়েন করা হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে স্পর্শকাতর এলাকায় টহল দিচ্ছে তারা। ১৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব কথা বলেন রাজ্য মুখ্যসচিব ও ডিজির সঙ্গে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন গোবিন্দ মোহন।

বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। পরিস্থিতির ওপর রাজ্য প্রশাসন করা নজর রাখছে। এরই মধ্যে ১৫০ জনের বেশি ব্যক্তিকে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও বিএসএফের সহযোগিতা নিয়েছে রাজ্য।

আগেই স্থানীয় ৩০০ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল। এরপর হাইকোর্টের নির্দেশে এবং রাজ্যের অনুরোধে পাঁচ কোম্পানি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে স্পর্শকাতর এলাকায়।

ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন বলেন, পরিস্থিতির ওপর কড়া নজর রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজ্যকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন হলে তাও পাঠাতে প্রস্তুত আমরা।

গতকাল রোববার সকাল থেকেই স্পর্শকাতর এলাকাগুলোর অধিকাংশ জায়গায় দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট সেবা। রাস্তায় লোকজনও বেরিয়েছে খুব কম। ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ধুলিয়ান এবং সুতি রেলস্টেশনে বাড়তি রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

কলকাতার স্পর্শকাতর এলাকায় গণপরিবহন চলাচল করলেও তা সংখ্যায় বেশ কম। ১২ নম্বর জাতীয় সড়কেও মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বহিরাগত কেউ যেন সহিংসতার মতো ঘটনা না সৃষ্টি করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে। বহিরাগত প্রবেশ ঠেকাতে গঙ্গা নদীর ধারে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এলাকায়গুলো নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ এপ্রিল ভারতের পার্লামেন্টে বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস করা হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মুর স্বাক্ষরের পর সেটি এরই মধ্যে আইনে পরিণত হয়েছে। এরপর থেকেই নতুন ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

বিষয়:

ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা, নিহত ৩০

যুদ্ধের সমাপ্তি চায় ইউক্রেন
ইউক্রেনে রুশ হামলায় পুড়ছে গাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৪৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। সুমি শহরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আরতেম কোবজার গতকাল রোববার এক টেলিগ্রাম বার্তায় এ তথ্য জানান। খবর রয়টার্সের।

কোবজার বলেন, ‘এই পবিত্র পাম সানডের দিনে আমাদের শহর এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হয়েছে। শত্রুরা সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। দুঃখজনকভাবে এতে ইতোমধ্যেই ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে’। অন্যদিকে সুমি প্রদেশের গভর্নর ভলোদিমির আরতিউখ জানিয়েছেন, শহরের কেন্দ্রস্থলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে।

এদিকে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইহর ক্লাইমেঙ্কো জানান, রোববারের এই হামলায় স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ৩০ জন নিহত ও ৮৩ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে সাতজনই শিশু। পরে এক্সে দেওয়া এক বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধার অভিযান চলছে এবং সব ধরনের জরুরি পরিষেবা কাজ করছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বকে শক্তভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং যারা এই যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে চায়, সবার এখন দায়িত্ব রয়েছে’।

পাশাপাশি জেলেনস্কি আবারও দাবি করে বলেন, মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে এই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। তার ভাষায়, ‘রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। আলোচনায় কখনোই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমা থেমে থাকে না’।

একইসঙ্গে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রিই সিবিহা এক এক্স বার্তায় বলেন, রাশিয়া টানা দ্বিতীয় মাসের মতো যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও ইউক্রেন গত ১১ মার্চ তা নিঃশর্তভাবে গ্রহণ করেছিল। তিনি বলেন, ‘এর পরিবর্তে রাশিয়া তাদের সন্ত্রাস বাড়াচ্ছে। আমরা আমাদের মিত্রদের কাছে অতিরিক্ত আকাশ প্রতিরক্ষা সহায়তা ও মস্কোর ওপর আরও চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি’।

তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলা বা ইউক্রেনের অভিযোগ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য আসেনি।

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি চায় ইউক্রেন

রাশিয়ার সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতি নয় বরং ইউক্রেন চলতি বছরেই পুরোপুরি যুদ্ধের সমাপ্তি চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা। শনিবার তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতিক ফোরামে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমরা এ বছরই এই যুদ্ধের সমাপ্তি চাই। কিন্তু এতে যেন কোনো ধরনের কারসাজি না করা হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করাই আমাদের লক্ষ্য। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলাফলই ইউরোপের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তুলবে।

আন্তর্জাতিক এজেন্ডায় উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থায় ইউক্রেনের সম্ভাব্য সদস্যপদ রাখার ওপরও জোর দিয়েছেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইউক্রেনের ১১০টি যুদ্ধ করার মতো ব্রিগেড প্রস্তুত রয়েছে, যা ট্রান্সআটলান্টিকের নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে।

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদামে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আগুন ধরে গেছে। ইউক্রেনের দূতাবাস রোববার (১৩ এপ্রিল) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ভারতে অবস্থিত ইউক্রেনীয় দূতাবাস অভিযোগ করেছে যে, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে ইউক্রেনে ভারতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইউক্রেনের দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে কুসুম নামের একটি ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদামে আঘাত হেনেছে। ভারতের সঙ্গে ‘বিশেষ বন্ধুত্বের’ দাবি করেও মস্কো ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতীয় ব্যবসাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করছে। শিশু এবং বয়স্কদের জন্য তৈরি ওষুধ ধ্বংস করা হচ্ছে।

ভারতীয় ব্যবসায়ী রাজীব গুপ্তের মালিকানাধীন কুসুম ইউক্রেনের বৃহত্তম ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে একটি। বেশ কিছু সূত্র এনডিটিভিকে জানিয়েছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র নয় বরং একটি ড্রোন সরাসরি গুদামে আঘাত হেনেছে।

কিয়েভের বিবৃতির আগে ইউক্রেনে নিযুক্ত ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত মার্টিন হ্যারিস বলেছেন, রাশিয়ার হামলায় কিয়েভের একটি প্রধান ওষুধের গুদাম ধ্বংস হয়েছে। তবে মার্টিন আরও বলেছেন, রাশিয়ার ড্রোন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে কোনো ক্ষেপণাস্ত্র নয়।


গাজায় শিগগিরই সামরিক অভিযান বাড়াবে ইসরায়েল

ইসরায়েলি হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১৩ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৪১
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ অংশে শিগগিরই সামরিক অভিযান বাড়ানো হবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ এ কথা জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজা উপত্যকার দক্ষিণে একটি ‘নিরাপত্তা অঞ্চলের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এটা রাফা ও খান ইউনিস শহরকে পৃথক করেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খান ইউনিস ও আশপাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকা থেকে আকাশপথে হামলার কড়া জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও হামাস কোনো হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

টানা দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে দিয়ে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় হামাসের ওপর আবারও হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পর থেকে তারা গাজায় আরও বড় এলাকা দখল করেছে। হাজারো গাজাবাসীকে নতুন করে বাস্তুচ্যুত করেছে। গত শনিবার কার্তজ বলেন, রাফা ও খান ইউনিসের মধ্যবর্তী সাবেক ইহুদি বসতি ‘মোরাগ এক্সিস’ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্পন্ন করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এর মধ্য দিয়ে গাজার খান ইউনিস থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গাজা উপত্যকার প্রায় এক–পঞ্চমাংশ ভূমিজুড়ে রয়েছে রাফা। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, শিগগির গাজার আরও বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বিস্তৃত হামলা জোরদার করবে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব এলাকার যুদ্ধক্ষেত্রগুলো থেকে মানুষদের সরিয়ে নিতে হবে। হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করে আনা এবং যুদ্ধের অবসানের এটাই শেষ মুহূর্ত।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। জিম্মি করে গাজায় আনা হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলের সরকারি তথ্য এটা। এর জবাবে ওই দিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী, যা এখনো চলছে। নির্বিচার হামলায় উপত্যকাটিতে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গড় ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর নিহত হয়েছে ১ হাজার ৫৬৩ জন।

গাজায় হাসপাতালে মিসাইল ছুড়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা সিটির প্রধান আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে মিসাইল হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হাসপাতালের দোতলা ভবনে মিসাইল ছোড়ার পর সেখান থেকে আগুনের বিশাল কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ছে।

এতে হাসপাতালটির আইসিইউ এবং অস্ত্রোপচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই সময় হাসপাতালের বিছানায় থাকা বেশ কয়েকজন রোগী দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। হামাস এই হামলাকে ‘ভয়াবহ অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক চিকিৎসকে ফোন করে জানায়, তারা হাসপাতালে হামলা চালাবে। তাই দ্রুত হাসপাতালের সবাইকে সরিয়ে নিতে হবে।

স্থানীয় ওই সাংবাদিক আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে ফোন করেন, হুমকি দিয়ে বলেন, সব রোগী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষকে অবশ্যই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। আপনাদের হাতে আছে মাত্র ২০ মিনিট।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতের বেলা রোগীরাও হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের সামনে যেসব নারী ও শিশু আশ্রয় নিয়েছিলেন তারাও সরে যান।

দখলদার ইসরায়েল গাজা সিটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। এরপর আল-আহলি হাসপাতালটি সেখানকার প্রধান হাসপাতালে পরিণত হয়। রোববার রাতে এই হাসপাতালটিতেও হামলা চালিয়েছে তারা। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একই হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছিল দখলদার ইসরায়েল।

গাজার যে ৩৫ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৫ হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। উপত্যকাটির সরকারি মিডিয়া অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলা চালানো হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে-গাজা সিটির আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স, আল-আহলি হাসপাতাল, আল-কুদস হাসপাতাল, আল হায়াত স্পেশালাইজড হাসপাতাল, আল হেলু হাসপাতাল, আল-কারামা হাসপাতাল, দ্য পেশেন্ট’স ফ্রেন্ডস হাসপাতাল, পাবলিক সার্ভিস হাসপাতাল, ইন্টারন্যাশনাল আই হাসপাতাল, সেন্ট জন আই হাসপাতাল, আস-সাহাবা মেডিকেল কমপ্লেক্স, হামাদ হাসপাতাল, হাইফা হাসপাতাল, আল-ওয়াফা হাসপাতাল, আল-মাহদি মাতৃসদন হাসপাতাল, ইমিরাতি হাসপাতাল ও তুর্কি-ফিলিস্তিনি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।

উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল, কামাল আদওয়ান হাসপাতাল, বেইত হানুন হাসপাতাল, আল-আওদা হাসপাতাল, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল-রান্তিসি শিশু হাসপাতাল, আল-নাসর শিশু হাসপাতাল, মোহাম্মদ আল-দুররাহ হাসপাতাল, বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল, হ্যাপি আল-ইয়েমেন হাসপাতাল, মুসলিম স্পেশালিস্ট হাসপাতাল ও জর্দান ফিল্ড হাসপাতাল।

আরও রয়েছে-মধ্য গাজার জাফা হাসপাতাল, দক্ষিণ গাজার রাফাহ অঞ্চলের মোহাম্মদ ইউসুফ আল-নাজার হাসপাতাল, খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স আলজেরিয়ান স্পেশালাইজড হাসপাতাল দার আস সালাম হাসপাতাল ও আল-আমাল হাসপাতাল।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, এসব হাসপাতালে হামলার ফলে চিকিৎসা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব, বিদ্যুৎ সংকট এবং নিরাপত্তার ঝুঁকি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চরম বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

বিষয়:

সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করে তুলছে ইসরায়েল: এরদোগান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েল দেশটিকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে অভিযোগ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। স্থানীয় সময় রবিবার (১২ এপ্রিল) তুরস্কে চলমান আন্টালিয়া কূটনীতি ফোরামে (এডিএফ) অংশগ্রহণ করে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনার মাত্র দুদিন পরেই এমন বক্তব্য বিস্মিত করেছে অনেক কূটনৈতিক বিশ্লেষককে। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।

মূলত, এই দুটি দেশেরই সামরিক বাহিনী সিরিয়াতে সক্রিয় রয়েছে। ফলে সেখানে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গত বুধবার (৯ এপ্রিল) আজারবাইজানে বৈঠক করেন তুরস্ক ‍ও ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।

তবে বৈঠকের পরও সিরিয়ায় শান্তি নষ্ট করায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট।

আন্টালিয়া সম্মেলনে বিশ্ব নেতা ও কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে এরদোগান জানান, ‘সিরিয়ায় নতুন করে কোনো সংঘাত তারা চান না। যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাসার-আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে, তা ইসরায়েলের কারণে ব্যর্থ হচ্ছে।’

আসাদের পতনের পর সিরিয়ার গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এরদোগান।

সিরিয়ার ভৌগলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। সিরিয়ার ওপর চলমান বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে আঙ্কারার চেষ্টার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান আহমেদ আল সারা। সিরিয়ায় নতুন করে কাউকে সংঘাত সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না বলে সারাকে আশ্বস্ত করেন এরদোগান। সম্মেলনের ফাঁকে একটি বৈঠকও করেন তারা।

গত ৮ ডিসেম্বর আল সারার নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আলশামস (এইচটিএস) দামেস্ক দখল মাধ্যমে আসাদ সরকারের পতন ঘটায়। এরপর সিরিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তুরস্ক।

দামেস্কের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ে একটি চুক্তিও করতে চাইছে আঙ্কারা, এর মাধ্যমে সিরিয়াতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনসহ দেশটির আকাশসীমা ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের।

অন্যদিকে আাসদের পতনের পরই সিরিয়ায় সামরিক তৎপরতা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এ কারণে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এ মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

আবার হামা প্রদেশের প্রধান বিমানবন্দর ও হোমসের টি-৪ ও পালমিরা বন্দর পরিদর্শন করেছেন তুরস্কের সেনা কর্মকর্তারা। যেখানে তারা দামেস্কের সঙ্গে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তির অংশ হিসেবে নিজেদের সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারে। এ নিয়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যকারে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।

নিউইয়র্ক ভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের আরন লুন্ড বলেছেন, ‘সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দ্বিতীয়ার্ধে আসাদের অন্যতম রক্ষাকর্তা ছিল রাশিয়া। এখন আসাদের পতনের পর যদি সিরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে তুরস্ক, তাহলে এই অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়বে।‘

তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের সামরিক অভিযানই শুধু আঙ্কারার জন্য সমস্যা নয়, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে তেল আবিবের নানা বাধা নিয়েও চিন্তিত তারা। যেমন, দেশটির দক্ষিণে আল সারার সরকার কোনো সেনা মোতায়ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে তেল আবিব।’

এরইমধ্যে সিরিয়ার দক্ষিণের দারাহ শহরে অনুপ্রবেশ শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশ দুটির মধ্যকার বৈঠককে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আরন।

তিনি বলেন, সিরিয়ায় এই দুটি দেশই নিজেদের সামরিক তৎপরতা বহাল রাখবে। তবে তাদের মধ্যে যদি একটি যোগাযোগ চ্যানেল স্থাপিত হয় সেটি সব পক্ষের জন্য ভালো হবে বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।

বুধবারের বৈঠকের পর তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বলেন, ইসরাইলের সাথে উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি রোধ করার জন্য এবং সংঘাত বন্ধ করতে আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজন।

এদিকে বৈঠকের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য সংলাপ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে তুরস্ক ও ইসরায়েল।


গাজা যুদ্ধ বন্ধে কায়রো আলোচনায় ‘বাস্তব অগ্রগতির’ প্রত্যাশা হামাসের

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

গাজা যুদ্ধ বন্ধে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দিকে ‘বাস্তব অগ্রগতির’ প্রত্যাশা করছে হামাস—শনিবার কায়রোতে মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের প্রেক্ষাপটে এক কর্মকর্তা এ কথা জানান।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় জিম্মিদের মুক্তি চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করেছেন এমন এক সময় এ আলোচনা শুরু হচ্ছে।

এক হামাস কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, তারা আশা করছেন মিসরীয় মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হবে।

যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা আশা করি, বৈঠকে যুদ্ধ অবসান, আগ্রাসন বন্ধ এবং গাজা থেকে দখলদার বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের লক্ষ্যে একটি চুক্তির পথে বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হবে।’

সংগঠনটির প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বলে জানান তিনি।

তার ভাষ্য মতে, ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত খসড়া নথিপত্র বিনিময়ের কথা বলা হলেও হামাস এখনও নতুন কোনো যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পায়নি।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।’ তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় ‘আগ্রাসন চালিয়ে যাওয়ার’ অভিযোগও করেন।

ইসরাইলের অভিযান অব্যাহত

টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, মিসরের প্রস্তাবের আওতায় আট জীবিত জিম্মি ও আট মৃতদেহ মুক্তি দেওয়া হতে পারে। এর বিনিময়ে ৪০ থেকে ৭০ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি এবং বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সপ্তাহের শুরুতে হোয়াইট হাউজে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা (গাজায় থাকা) জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’

ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে, এটি এখন কেবল কয়েক দিনের ব্যাপার।’

ইসরাইল ১৮ মার্চ থেকে গাজায় আবার হামলা শুরু করে, যা দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির ইতি টানে।

হামাস-শাসিত গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এরপর থেকে ১,৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। উল্লেখ্য, এক মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় ত্রাণ সহায়তা বন্ধ রেখেছে ইসরাইল।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলার অনেকগুলোতে ‘শুধু নারী ও শিশু’ নিহত হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও সতর্ক করে বলা হয়, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ যেভাবে গাজাবাসীকে নতুন এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে, তা জনগণকে জোরপূর্বক ক্রমেই সংকুচিত জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে এবং এতে গাজায় ‘ফিলিস্তিনিদের একটি জনগোষ্ঠী হিসেবে টিকে থাকার ভবিষ্যৎ নিয়ে বাস্তব উদ্বেগ’ তৈরি হয়েছে।

শনিবারও ইসরায়েলের অভিযান অব্যাহত ছিল।

গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি জানায়, ওইদিন সকালে গাজা সিটিতে একটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলা চালানো হয়।

হামলার পর এএফপির ধারণ করা ভিডিওতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে সাদা কাফনে মোড়ানো চার পুরুষের মরদেহ দেখা যায়। দাফনের আগে কয়েকজন ব্যক্তি প্রার্থনায় অংশ নেন।

১৭ মার্চ শেষ হওয়া যুদ্ধবিরতিতে গাজা থেকে ৩৩ জন জিম্মি মুক্তি পেয়েছিল— যাদের মধ্যে আটজন মৃত ছিলেন। একই সময়ে ইসরাইলের কারাগার থেকে প্রায় ১,৮০০ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পায়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের মাধ্যমে গাজা যুদ্ধ শুরু হয়। এতে ১,২১৮ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিল, ইসরাইলি সরকারি পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপির হিসাব অনুযায়ী বেসামরিক মানুষ।

মারাত্মক ওই হামলায় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে এখনো ৫৮ জন গাজায় রয়েছে—এদের মধ্যে ৩৪ জনকে মৃত বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে অন্তত ১,৫৪২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০,৯১২ জনে।


ওয়াকফ বিল নিয়ে উত্তাল ভারতের মুর্শিদাবাদ, নিহত ৩

মুর্শিদাবাদে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১২ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:২৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার উত্তাল হয়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা। সহিংসতা থামাতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। সংঘর্ষের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এ পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াল, এবিপি আনন্দ ও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

প্রতিবেদন বলছে, সামশেরগঞ্জে বাড়িতেই বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। তারা হলেন হরগোবিন্দ দাস (৭৪) ও চন্দন দাস (৪০)। এছাড়া সুতির সাজুর মোড়ে গুলিতে আহত কিশোরের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। পুলিশ জানায়, সংঘর্ষ চলার সময় শামসেরগঞ্জে হরগোবিন্দ দাসের বাড়িতে ঢুকে পড়ে কয়েকজন দুষ্কৃতিকারী। পরে ঘর থেকে বাবা-ছেলের রক্তাক্ত দেহ মেলে।

ভারতে ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন ধরে উত্তাল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলা। শুক্রবারের পর শনিবারও সকাল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে সামশেরগঞ্জ। শুরু হয় সংঘর্ষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসএফ গুলি চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। ধুলিয়ান পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক যুবক ও এক কিশোর। চিকিৎসার জন্য জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।

আহতরা হলেন- হাসান সেখ ও গোলামউদ্দিন সেখ। তাদের বাড়ি সামশেরগঞ্জ থানার তারাবাগান এলাকায়। এই ঘটনায় বিএসএফের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করেছেন আহতদের আত্মীয়রা।

ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে শুক্রবার বিকেল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদ। জঙ্গিপুরের ঘটনার পর ১৬৩ ধারা অমান্য করে প্রতিবাদে নামেন স্থানীয়রা। তারা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করলে পুলিশের বাধায় অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান ডাকবাংলো ও রতনপুর এলাকায় পরিস্থিতি সব থেকে খারাপ হয়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় ট্রাফিক পুলিশের অফিস। জ্বালানো হয় সরকারি-বেসরকারি বাস। বাদ যায়নি অ্যাম্বুল্যান্সও।

অভিযোগ, হামলা চালানো হয় স্থানীয় বিধায়ক মনিরুল ইসলাম, সংসদ সদস্য খলিরুল রহমানের বাড়িতেও। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি চলে। আক্রান্ত হন ফরাক্কার এসডিপিও। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় বিএসএফ। শনিবার সকাল থেকে ধুলিয়ান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএসএফও নজরদারি চালাচ্ছে।

রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল রাজিব কুমার গতকাল শনিবার সাংবাদিকদের জানান, মুর্শিদাবাদের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কোনো জাতি ধর্ম দেখবে না। বেশ কিছু জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম জানান, সহিংসতার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

তিনি বলেন, ‘‘সুজার মোড়ে (মুর্শিদাবাদ) প্রচণ্ড সংযত থেকে পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু উত্তেজিত জনতাকে বাগে আনা যায়নি। প্রায় তিন ঘণ্টা পুলিশের উপর হামলা, দোকানপাট ভাঙচুর, সরকারি এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষতি করেন তারা। তখন বাধ্য হয়ে পুলিশকে গুলি চালাতে হয়। চার রাউন্ড গুলি চালায় পুলিশ। তাতে দু’জন আহত হন। তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৫ জন আহত হয়েছেন। কয়েক জন গুরুতর আহত হয়েছেন।’’


গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ করা সেনাদের বরখাস্তের ঘোষণা ইসরায়েলের

গাজা অভিযানে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ট্যাংক বহর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের সমালোচনা করে প্রকাশিত একটি খোলা চিঠিতে সই করা দেশটির বিমানবাহিনীর রিজার্ভ (অনিয়মিত বা খণ্ডকালীন সেনা) সেনাদের মধ্যে কর্তব্যরত সবাইকে বরখাস্ত করার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) এক কর্মকর্তা। খবর এপির।

এপিতে পাঠানো এক বিবৃতিতে আইডিএফের এক সেনা কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ সদস্যদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে দায়িত্বে থাকা সেনাসহ অন্য কারোরই অধিকার নেই সামরিক মর্যাদাকে কাজে লাগিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া। যুদ্ধে সক্রিয় থাকা অবস্থায় খোলা চিঠিতে সই করে সেনারা তাদের বাহিনীর কমান্ডার ও অধীনদের মধ্যকার শৃঙ্খলা ও আস্থা ভঙ্গ করেছেন বলেও অভিযোগ করেন ওই কর্মকর্তা।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বর্তমানে যুদ্ধে কর্তব্যরত রয়েছেন এমন যেসব সদস্য ওই খোলা চিঠিতে সই করেছেন, তাদের বরখাস্ত করা হবে। তবে ঠিক কতজন সদস্যকে বরখাস্ত করা হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করায় ইসরায়েলি প্রশাসনের সমালোচনা করে দেশটির গণমাধ্যমে একটি খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়। সেখানে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসহ বিমানবাহিনীর রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার সদস্য সই করেন।

ইসরায়েলি প্রশাসন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে বলে তারা খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেন। তা ছাড়া হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্ত করতে প্রশাসনের ব্যর্থতারও সমালোচনা করা হয়। প্রয়োজনে যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার প্রতি জোর দেন তারা।

এমন এক সময়ে এই খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে, যখন হামাসের হাতে থাকা বাকি জিম্মিদের ফেরানোর অজুহাতে পুনরায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় খাদ্য, জ্বালানিসহ জরুরি মানবিক সেবার প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলি প্রশাসন।

হামাসের হাতে থাকা ৫৯ জিম্মির মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মৃত বলে জানা গেছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলাতেই তারা প্রাণ হারিয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় পুনরায় ইসরায়েল হামলা শুরু করলে বাকি জীবিত জিম্মিদের প্রাণও ঝুঁকিতে পড়ার কথা জানায় হামাস।

তবে এতে ভ্রূক্ষেপ না করেই ভয়াবহ হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। খোলা চিঠিতে সই করা সেনারা নিজেদের দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা না জানালেও গাজায় যা হচ্ছে তা নৈতিকতা বিরুদ্ধ বলে মন্তব্য করেন।

এই চিঠির নেতৃত্বে থাকা বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত পাইলট গাই পোরান বলেন, ইসরায়েলি প্রশাসনের গাজায় এই হামলা শুরু করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। এতে তারা জিম্মি ও ইসরায়েলের বহু সেনাসহ নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলেছে। অথচ এই হামলার সুস্পষ্ট বিকল্প কিন্তু প্রশাসনের হাতে ছিল।

তবে চিঠিতে সই করা সেনাদের মধ্যে কাউকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তার জানা নেই উল্লেখ করে গাই বলেন, কেউ বরখাস্ত হয়েছে বলে শুনিনি আমি, তবে চিঠি প্রকাশের পর আরও অনেক সেনা এতে সই করছেন।

এই চিঠি প্রকাশের ঘটনাকে তাচ্ছিল্য করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, বিদেশি কিছু এনজিওর অর্থায়নে এক ঝাঁক আগাছা এই কাজ করেছে। ডানপন্থি জোট সরকারের পতনের উদ্দেশ্যেই তারা এসব করছে। সাধারণত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ইসরায়েলের সেনাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ, তাই প্রশাসনের যেকোনো সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে খুব কমই তাদের প্রতিবাদ করতে শোনা যায়। তবে বর্তমানে সেই চিত্র বদলাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ চালানোর বিষয়ে সবাই একমত হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্নমত বাড়ছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে গাজায় অব্যাহত হামলার সমালোচনা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে যুদ্ধে সেনাদের নিহতের সংখ্যা বাড়ার কারণে ও জিম্মিদের মুক্তিতে ব্যর্থতায় নেতানিয়াহু প্রশাসন সমালোচনার মুখে পড়েছে।

গাজাজুড়ে অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলি বর্বরতা

গাজায় অব্যাহত রয়েছে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলা। অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে নির্বিচারে চালানো হামলায় বাদ যাচ্ছে না আবাসিক ভবন ও আশ্রয় ক্যাম্পগুলোও। এতে প্রাণ হারাচ্ছেন নিরীহ বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা। বিশেষ করে নারী ও শিশু। ফলে লাফিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সবশেষ খবরে জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিসের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে ও সেখানে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। তবে বিধ্বস্ত রাস্তা ও ধ্বংসস্তূপের কারণে অ্যাম্বুলেন্স সেই বাড়িতে পৌঁছানো খুব কঠিন।

নুসাইরাতেও একটি ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার একজন ফিলিস্তিনিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তা ছাড়া রাতভর গাজা শহরের শুজাইয়ায় একটি বাড়িতে বোমা হামলা হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গাজা উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে রাফাহ ও খান ইউনিসে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ চলছে।

আল-আকসার ইমামের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইসরায়েল

মসজিদ আল-আকসার শেখ মুহম্মদ সেলিমকে ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসরায়েল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি খুতবায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যার সমালোচনা ও নিন্দা করেছেন।

সূত্রের বরাতে এক প্রতিবেদনে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, শুক্রবার জুমার নামাজে খুতবা দেওয়ার সময় গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান ও অব্যাহত গোলাবর্ষণের নিন্দা জানান শেখ মুহম্মদ সেলিম। সেই সঙ্গে তিনি অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রতি আহ্বানও জানান।

নামাজ শেষে বের হয়ে যাওয়ার সময় আল আকসার একটি ফটক থেকে শেখ মুহম্মদ সেলিমকে আটক করে ইসরায়েলি পুলিশ। পরে তাকে পূর্ব জেরুজালেমের একটি থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ছেড়ে দেওয়া হয় আর দেওয়া হয় ৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই সাত দিন তিনি আল-আকসা চত্বরে প্রবেশ করতে পারবেন না, যদি করেন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।

বিষয়:

banner close