যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সমর্থকদের দাঙ্গার ঘটনায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তলব করেছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের তদন্ত কমিটি। ট্রাম্পকে শপথের সঙ্গে সাক্ষ্য দেয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নথিও সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন গত শুক্রবার এ খবর জানিয়েছে।
নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে আইনপ্রণেতারা জড়ো হলে ট্রাম্পের পরাজয় ঠেকাতে তার শত শত সমর্থক সেখানে ঢুকে তাণ্ডব চালান। মার্কিন ইতিহাসের ন্যক্কারজনক ওই হামলায় প্রাণ হারান পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত পাঁচজন। ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গার ঘটনা তদন্ত করছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের একটি কমিটি। তারা জানায়, ট্রাম্পকে তলব করে ৪ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার ট্রাম্পকে লেখা চিঠিতে তলবের বিষয়টি জানায় তদন্ত কমিটি। এতে বলা হয়, বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত শুনানি এবং ট্রাম্প নিয়োজিত কর্মীসহ অনেকের কাছ থেকে জোগাড় করা নথিপত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল উল্টে দেয়ার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর বাধাগ্রস্ত করতে বহুপক্ষীয় চেষ্টা সমন্বয় ও তদারক করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট।
সাবেক প্রেসিডেন্টকে ১৪ নভেম্বর কিংবা আশপাশের কোনো তারিখে সাক্ষ্যদান শুরু করতে হবে। শপথের সঙ্গে সাক্ষ্য গ্রহণের মানে হলো দ্বার বন্ধ করে সাক্ষীকে প্রশ্ন করা, যার ভিডিও ধারণ করা হয়। এ সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়টি জনসমক্ষে আনা হতে পারে এবং সেটি ক্যাপিটল হামলা তদন্ত প্যানেলের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অংশ হতে পারে।
ট্রাম্পের সহযোগী স্টিভ ব্যাননের কারাদণ্ড
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও তার সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননকে চার মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ব্যাপারে তদন্তে অসহযোগিতা করায় তাকে এ সাজা দেয়া হলো।
গত শুক্রবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানানো ও নথিপত্র আদালতে দাখিল না করায় তার বিরুদ্ধে কংগ্রেস অবমাননার অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয়েছে। ব্যাননের বিরুদ্ধে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ২ লাখ ডলারের জরিমানার আবেদন করে মার্কিন বিচার বিভাগ। তবে আদালত চার মাসের কারাদণ্ড দিয়ে সাড়ে ৬ হাজার ডলার জরিমানা করেন তাকে।
তবে এ রায়কে অস্বীকার করেছেন ব্যানন। রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শুরুর দিনগুলোতে তার উপদেষ্টা ছিলেন স্টিভ ব্যানন। তবে ২০১৭ সালে সে দায়িত্ব ছেড়ে দেন তিনি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার সময় তিনি ট্রাম্পের অনানুষ্ঠানিক উপদেষ্টা ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
ধারণা করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্পের উসকানিমূলক পোস্টের কারণেই তার পরাজয় ঠেকাতে সে সময় ক্যাপিটল হিলের সামনে জড়ো হয়েছিলেন ট্রাম্প সমর্থকরা। এ ঘটনার পর নিজ দেশের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। সমর্থকদের উসকানি দেয়ার অভিযোগে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ফেসবুক টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।
ফ্লোরিডার বাড়িতে ইরান-চীনসংক্রান্ত নথিও রেখেছিলেন ট্রাম্প
গত আগস্টে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফ্লোরিডার পাম বিচের মার-এ-লাগো বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)। উদ্ধারকৃত গোপন নথির মধ্যে ইরান ও চীনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ছিল বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সম্পর্কে থাকা এই দুই দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুও জব্দকৃত নথিতে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। ট্রাম্পের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে সে সময় প্রায় ১১ হাজার নথি উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা; যা মূলত ক্ষমতা হস্তান্তরের পর মার্কিন সরকারি সংরক্ষণাগারে জমা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প এসব নথি অবৈধভাবে নিজের বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন।
উদ্ধারকৃত এসব নথির মধ্যে অন্তত ১০০টি ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি, যা সাধারণত সিল করে বা মুখবন্ধ রাখা হতো এবং গুরুত্বপূর্ণ গুটিকয়েক মানুষের এটি দেখার অনুমতি ছিল। এ বিষয়ে মার্কিন বিচার বিভাগ তদন্ত করছে যে ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারিতে অফিস ছাড়ার পর তার ফ্লোরিডার বাড়িতে যেসব গোপন নথিপত্র পাওয়া গেছে, সেটি সরকারি রেকর্ড নিয়ে আইন ভঙ্গ করেছে কি না।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এমন খবর দিয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকান ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো পোপ। এরআগে মহাদেশটি থেকে কোনো পোপ নির্বাচিত হননি। যাপিত জীবনে বিনয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিলেন তিনি। দরিদ্রদের নিয়ে তার উদ্বেগ ও পুঁজিবাদের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও তাকে সরব থাকতে দেখা গেছে।
কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর রোমের গির্জাগুলোতে ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয়েছে। কেভিন ফেরেল বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে স্বর্গে গমন করেছেন রোমের বিশপ। প্রভু ও তার গির্জার জন্য নিজের পুরো জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন।’
শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগে আক্রান্ত ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তরুণ বয়সে তার ফুসফুসের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৩৮ দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই ধর্মীয় গুরুকে। তার গেল এক যুগের পোপজীবনে এটা ছিল সবচেয়ে বেশি সময়ে হাসপাতালে থাকা।
কিন্তু মৃত্যুর আগের দিন রবিবার ইস্টার সানডেতে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার লোককে আশীর্বাদ জানাতে তিনি সেন্ট পিটার্স চত্বরে আসেন। পোপমোবাইলে—পোপের জন্য বানানো বিশেষ গাড়ি—চড়ে হাজির হলে লোকজন তাকে দেখে উল্লাশ প্রকাশ করেন।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চের এক বৃষ্টিভেজা রাতে দুই হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানে এসে নতুন বাতাসে শ্বাস নেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও। এমন এক সময়ে তিনি পোপ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব ছিল অনেকটা কমতির দিকে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পদত্যাগ করেন পোপ এ্যামিরেটাস ষোড়শ বেনেডিক্ট। ১৪১৫ সালে ত্রয়োদশ গ্রেগরির পর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি মৃত্যুর আগেই পোপের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। এরপর নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্রান্সিস। কিন্তু তার নেওয়া কিছু প্রগতিশীল পদক্ষেপে রক্ষণশীলদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
তাকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ২০১৮ সালে। তখন চিলিতে ধর্মযাজকের যৌন হয়রানির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ঘটনাটি জোড়াতালি দিয়ে সুরাহা করার চেষ্টা করেন। এতে যারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন, তারা ব্যথিত হন এবং পোপের সমালোচনা করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রেল সংযোগ-সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ভারত সরকার। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে এড়িয়ে এখন নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করছে মোদি সরকার।
এই সিদ্ধান্তে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে ও ৫টি সম্ভাব্য প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
বন্ধ হওয়া প্রধান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১. আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ভারত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটির অনুদানে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ও ত্রিপুরার অংশ ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। এতে ত্রিপুরা ও আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ বাড়ার কথা ছিল।
২. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি, যা ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ভারতের ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতো।
এই প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেইসঙ্গে এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকারও থাকার কথা ছিল ভারতের।
৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প। এটি ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি অর্থ-সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অর্থ ছাড় ও প্রশাসনিক অনুমোদনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫টি প্রকল্পে অবস্থান জরিপ কাজ চলছিল, যা এখন স্থগিত রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের পূর্ণ অবরোধ ও লাগাতার বোমাবর্ষণ চলছে। আর এ কারণে গাজার শিশুরা এখন এক বেলার খাবারও পাচ্ছে না। এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ১২টি প্রধান আন্তর্জাতিক ও ফিলিস্তিনি মানবিক সংস্থার নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা জানান, গাজার মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা এখন ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়ার’ পথে। ইসরায়েলের ১৮ মাসব্যাপী সামরিক অভিযান ও গত মাসে আরোপিত পূর্ণ অবরোধ পরিস্থিতিকে চরম সংকটময় করে তুলেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৪৩টি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় সাহায্য সংস্থার মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশই তাদের কার্যক্রম স্থগিত অথবা সীমিত করে দিয়েছে, কারণ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নির্বিচার বোমাবর্ষণের কারণে চলাচল করা চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অক্সফামের নীতিনির্ধারক বুশরা খালিদি বলেন, শিশুরা এখন এক বেলার কম খাবার খাচ্ছে ও তাদের পরবর্তী খাবারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। সবাই কেবল টিনজাত খাবার খাচ্ছে এবং অপুষ্টি ও দুর্ভিক্ষের চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের জরুরি সমন্বয়কারী আমান্দে বাজেরল বলেন, সাহায্যকর্মীরা অত্যন্ত সীমিত রসদের মধ্যে সহায়তা দিতে গিয়ে নিরুপায়ভাবে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুর দৃশ্য দেখতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি শুধু মানবিক ব্যর্থতা নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, যা একটি জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার অধিকারকে ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
গাজা শহর থেকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানান, উপত্যকাটিতে শিশুখাদ্য বা বেবি ফর্মুলার সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। নবজাতক ও শিশুদের জন্য উপযুক্ত দুধ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজার ও ফার্মেসিগুলোতে এসব পণ্য প্রায় নিঃশেষ হয়ে গেছে।
দেইর আল-বালাহ এলাকার আল-আকসা হাসপাতালে সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসা ফাদি আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের ফুসফুসে সংক্রমণ হয় ও রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে সে আর লড়াই করতে পারেনি।’
এক দাদি ইনতিসার হামদান জানান, তার নাতি দুধের অভাবে তিন দিন না খেয়ে থাকার পরে মারা গেছে। এমন দৃশ্য দেখে বেঁচে থাকাটাও কঠিন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, সেখানে বর্তমানে অন্তত ৬০ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে।
সহায়তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মানবিক কর্মীদের জন্য গাজা এখন পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ স্থান। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৪০০-রও বেশি সাহায্যকর্মী ও ১ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এসব সংস্থা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্রগোষ্ঠীগুলো যেন সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি গাজায় বাধাহীনভাবে সহায়তা প্রবেশ ও বিতরণের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে সামরিক অভিযানের নামে গাজায় রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দখলদার বাহিনী। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫১ হাজার ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় প্রায় ১৮ মাস ধরে সংঘাত চলছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার ভূখণ্ডে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে অংশ নিতে নতুন করে ৩০ হাজার তরুণ যোদ্ধাকে নিয়োগ দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। তাদের সামরিক শাখা ইজ আদ-দিন আল-কাসেম ব্রিগেডের অধীনে এ যোদ্ধাদের যুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার সৌদি আরবভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়ার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের গোপন সামরিক ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যদিও তাদের সামরিক দক্ষতা শহুরে যুদ্ধ, রকেট হামলা ও বিস্ফোরক স্থাপন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ- এমনটাই দাবি করেছে আল-আরাবিয়া। যোদ্ধাদের কবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেই তারা দলে যুক্ত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। শুরু থেকেই গাজা দখলের জন্য ব্যাপক হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি সেনারা। এখন পর্যন্ত গাজার পুরো নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলেও তারা সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী গাজার প্রায় অর্ধেক এলাকা দখল করে সেখানকার ঘরবাড়ি ধ্বংস করে ‘বাফার জোন’ তৈরি করেছে। এসব এলাকায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তারা। পাশাপাশি হামলার নামে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চালানো গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে গাজা পরিণত হয়েছে এক মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রে।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কচ্ছপ খাচ্ছে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ খাদ্যসংকটের কারণে অনেক ফিলিস্তিনি বাসিন্দা এখন বেঁচে থাকার তাগিদে সামুদ্রিক কচ্ছপের মাংস খাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরায়েলের এক তরফা স্থল ও বিমান হামলা শুরুর পর ত্রাণ প্রবেশ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উপত্যকাবাসী। আরব নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খাবার না পেয়ে অনেক পরিবার এখন বিকল্প প্রোটিনের উৎস হিসেবে সামুদ্রিক কচ্ছপ রান্না করে খাচ্ছেন। এদের কেউ কেউ আগে কখনো কচ্ছপ দেখেননি, এমনকি ভয় পেতেন- তবুও ক্ষুধার তীব্রতায় বাধ্য হয়ে তারা এই নিষিদ্ধ প্রাণীকেও খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করছেন।
গাজাবাসী মাজিদা জানান, তিনি এখন খান ইউনিস শহরের একটি তাঁবুতে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন, রান্নার হাঁড়িতে কচ্ছপের মাংস ফোটাতে ফোটাতে বলেন, বাচ্চারা কচ্ছপকে ভয় পেত। তাই আমরা বলেছিলাম, এটা বাছুরের মাংসের মতোই সুস্বাদু। কেউ কেউ খেয়েছে, কেউ খায়নি।
৬১ বছর বয়সি মাজিদা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এটাই তৃতীয়বার তিনি কচ্ছপ রান্না করছেন। বাজারে কিছুই নেই, বিশেষ করে মাংস তো নেই-ই। তিনি বলেন, দুই ব্যাগ ছোট সবজি কিনতেও ৮০ শেকেল (২২ ডলার) খরচ করতে হয়।
সাধারণত কচ্ছপের খোলস ছাড়ানোর পর, মাংস কেটে সেদ্ধ করে তা পেঁয়াজ, টমেটো, গোলমরিচ ও বিভিন্ন মসলা দিয়ে রান্না করা হয়। তবে এই প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত ও বিপন্ন হিসেবে পরিচিত। তবুও গাজার উপকূলে জেলেদের জালে ধরা পড়লে এসব কচ্ছপকেই বর্তমানে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আবদেল হালিম কানান নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, আমরা কখনই কচ্ছপ খাওয়ার কথা ভাবিনি। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর খাবারের এতই সংকট হয়েছে যে, আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা ইসলামী নিয়ম মেনেই কচ্ছপ জবাই করছি। যদি দুর্ভিক্ষ না হতো, তাহলে কচ্ছপ ছেড়ে দিতাম। তবে এখন আমাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে হচ্ছে।
বর্তমানে গাজা উপত্যকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করেছে, এখানে দুর্ভিক্ষ এখন কেবল সম্ভাবনা নয়, বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।
ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ, বাজারে পণ্যশূন্যতা এবং ক্রমবর্ধমান দামে সাধারণ মানুষ খাবার পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে কেউ কেউ পশুখাদ্য, ঘাস, এমনকি পচা পানি পান করতেও বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থায় কচ্ছপের মতো একটি বিপন্ন প্রজাতি হয়ে উঠেছে গাজাবাসীর শেষ আশার উৎস- একটি প্রোটিনের বিকল্প, যা তারা কখনো ভাবেননি যে একদিন খেতে হবে। ক্ষুধার সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে, জীবনধারণের এই ত্যাগ-তিতিক্ষার দৃশ্য এখন গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।
ইসরায়েলি গোয়েন্দা নিয়োগ দিল মেটা
হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুকের মালিক মেটা এখন দখলদার ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিচ্ছে। তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক নীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। একজন আমেরিকার বিশ্লেষক মেটা কোম্পানি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনার মতে, আমেরিকান লেখক এবং বিশ্লেষক নেট বেয়ারের ‘ডু নট প্যানিক’ ব্লগে প্রকাশিত এবং তারপর গ্রেজোন গবেষণা ডাটাবেস দ্বারা পুনঃপ্রকাশিত একটি নতুন প্রতিবেদনে ইসরায়েলের সঙ্গে মেটার গভীর সম্পর্কের আরও বিভিন্ন দিক প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০০ জনেরও বেশি সাবেক ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তা এবং গুপ্তচর যার মধ্যে ইউনিট ৮২০০-এর সঙ্গে যুক্ত গোয়েন্দা বাহিনীও রয়েছে, বর্তমানে মেটাতে কাজ করছেন।
এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন হলেন মেটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতির প্রধান শিরা অ্যান্ডারসন যার ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার ইতিহাস রয়েছে। অ্যান্ডারসন আগে দখলদার শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কমান্ডার দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেছিলেন এবং পরে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আইনি সহকারী হিসেবে নিযুক্ত হন।
৭০তম জন্মদিনে পরিবারের সঙ্গে কেক কাটা আর ঘরোয়া উদযাপন-বয়সের এই মাইলফলক নিয়ে প্রবীণ নাগরিকদের এমনই কিছু সাধারণ কল্পনা থাকে। কিন্তু নাসার প্রবীণতম সক্রিয় নভোচারী ডন পেটিট তার ৭০তম জন্মদিন পালন করলেন পৃথিবীর বুকে অবতরণের পথে একটি মহাকাশযানে চড়ে। গতকাল রোববার তার জন্মদিনের দিনটিতেই একটি সয়ুজ ক্যাপসুল মার্কিন নাগরিক পেটিট ও দুই রুশ নভোচারীকে নিয়ে কাজাখস্তানে অবতরণ করে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) তাদের সাত মাসের অবস্থান শেষ করে।
রুশ মহাকাশ সংস্থা রসকসমস এদিন জানায়, ‘আজ মস্কো সময় মধ্যরাত ৪টা ২০ মিনিটে সয়ুজ এমএস–২৬ অবতরণযানটি আলেক্সেই ওভচিনিন, ইভান ভাগনার ও ডোনাল্ড (ডন) পেটিটকে নিয়ে কাজাখস্তানের জেজকাজগান শহরের কাছে সফলভাবে অবতরণ করেছে।’
মহাকাশে ২২০ দিন কাটিয়ে পেটিট ও তার সহযাত্রীরা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেছেন তিন হাজার ৫২০ বার। এই সময়ে তাদের যাত্রার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ কোটি ৩৩ লাখ মাইল। এটি ছিল পেটিটের চতুর্থ মহাকাশযাত্রা। ২৯ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মোট দেড় বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন পৃথিবীর কক্ষপথে।
স্পেস স্টেশন থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার বেশি সময়ের ব্যবধানে তাদের যাত্রা শেষ হয় কাজাখস্তানের দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের একটি দূরবর্তী এলাকায় অবতরণের মাধ্যমে। নাসার তোলা ছবিতে দেখা যায়, ভোরের আলো ফুঁড়ে প্যারাসুটে ভর করে পৃথিবীর দিকে নামছে ছোট ক্যাপসুলটি।
মাটিতে নেমে উদ্ধারকর্মীদের সহায়তায় ক্যাপসুল থেকে বেরিয়ে আসেন নভোচারীরা এবং সেখানেই স্থাপিত একটি মেডিকেল টেন্টে তাদের প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষা হয়। তিনজনই তখন ‘থাম্বস আপ’ ইঙ্গিত করেন।
যাত্রার ক্লান্তিতে কিছুটা অবসন্ন দেখালেও পেটিট ‘ভালো আছেন এবং পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তার শরীরের অবস্থা প্রত্যাশিত সীমার মধ্যেই আছে’ বলে জানিয়েছে নাসা। এরপর তাকে প্রথমে কাজাখস্তানের কারাগান্দা শহরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকে একটি নাসার বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অবস্থিত জনসন স্পেস সেন্টারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
নাসা জানিয়েছে, এই সাত মাসে আইএসএসে থাকাকালীন তারা গবেষণা করেন পানিশোধন প্রযুক্তি, বিভিন্ন পরিবেশে উদ্ভিদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ও মাইক্রোগ্রাভিটিতে আগুনের আচরণ- এই বিষয়গুলো নিয়ে। তবে তাদের সাত মাসের যাত্রা কিছুটা কম দীর্ঘ হয়েছিল সেই দুই নাসা নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামসের তুলনায়, যারা ৯ মাস ধরে আইএসএসে আটকে ছিলেন। তাদের পরীক্ষামূলক মহাকাশযানে ত্রুটি দেখা দিলে সেটি তাদের পৃথিবীতে ফেরানোর অযোগ্য বিবেচিত হয়।
উল্লেখ্য, মহাকাশ গবেষণা এখনো রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সহযোগিতার একটি অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে রয়ে গেছে, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে প্রায় সব ধরনের সম্পর্কই ভেঙে পড়েছে।
ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে এই ঘোষণা দেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার থেকে এক পার্শ্বিক এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। যা আগামী সোমবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাত পর্যন্ত চলবে। এ সময় ইউক্রেনে সবধরনের হামলা বন্ধ রাখবে রুশ সেনারা।
ক্রেমলিন আরও জানিয়েছে, তাদের প্রত্যাশা ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হবে এবং ইস্টারের সময়টায় হামলা থেকে বিরত থাকবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পুতিন নিশ্চিত করেছেন এই সময়টায় তিনি তার সেনাদের সব ধরনের হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে ইউক্রেন যদি কোনো ধরনের উসকানি দেয় অথবা যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে তাহলে তার সেনারা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ‘মানবিক দিক থেকে দেখে, আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার-সোমবার পর্যন্ত রাশিয়া ইস্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছে। আমি নির্দেশ দিয়েছি এই সময়টায় সব ধরনের সামরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করি ইউক্রেনীয়রা আমাদের এই ঘোষণাতে সম্মত হবে। একই সময়ে, যুদ্ধবিরতির যে কোনো ধরনের লঙ্ঘন অথবা শত্রুদের যে কোনো ধরনের উসকানি প্রতিরোধে আমাদের সেনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক হামলার নির্দেশ দেন পুতিন। ওইদিন ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার হাজার হাজার সেনা। প্রাথমিক অবস্থায় ইউক্রেনে তিনদিনের প্রস্তুতি নিয়ে ঢুকেছিল রুশ সেনারা। তাদের লক্ষ্য ছিল রাজধানী কিয়েভ দখল করে ভলোদিমির জেলেনস্কির সরকারকে উৎখাত করা। তবে এতে ব্যর্থ হয় রুশ সেনারা। পরবর্তীতে তারা ইউক্রেনের দুটি বড় অঞ্চল লুহানেস্ক ও দোনেৎস্ক দখল করার দিকে মনোযোগ দেয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে রুশ বাহিনী এ দুটি অঞ্চলের প্রায় পুরোটি দখল করে ফেলেছে।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদ। এটি ভেঙে সেখানে ইহুদি মন্দির স্থাপনের পরিকল্পনা করছে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। হিব্রু ভাষার বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এ নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে। গতকাল শনিবার আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যাপারে সতর্কতা দিয়ে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় এক্সে একটি পোস্ট করেছে। এতে তারা জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
তারা বলেছে, আল-আকসা মসজিদ ভাঙার পরিকল্পনাকে আমরা দখলকৃত জেরুজালেমে ইসলামিক এবং খ্রিষ্টানদের পবিত্র স্থানে পদ্ধতিগত উসকানি হিসেবে বিবেচনা করি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং এ বিষয় সংক্রান্ত জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে এই উসকানিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব নিয়ে দেখা এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
ইসরায়েলি অবৈধ বসতিস্থাপনকারীরা প্রায়ই মুসলিমদের পবিত্র এ স্থানে গিয়ে তাণ্ডব চালায়। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও তারা সেখানে ধর্মীয় প্রার্থনা করে। এতে তাদের সরাসরি সহায়তা করে দখলদার ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এসব অবৈধ বসতিস্থাপনকারী ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত ভূমিতে জোরপূর্বক বাস করে। তারা দখলদার ইসরায়েলি সরকার থেকে সবধরনের সুরক্ষা পেয়ে থাকে।
গত সপ্তাহেও আল-আকসা মসজিদে কয়েক ডজন ইসরায়েলি অবৈধ বসতি স্থাপনকারী (সেটলার) জোর করে ঢুকে ধর্মীয় আচার পালন করে। জেরুজালেমের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার চুক্তি অনুযায়ী, ইসলাম ধর্মের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান হিসেবে বিবেচিত ওই মসজিদ চত্বরে অমুসলিমদের কোনো ধরনের ধর্মীয় আচার পালনের অনুমতি নেই।
১৯৬৭ সালে আল-আকসা নিজেদের দখলে নেয় ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী, সেখানে মুসলমানরা নামাজ আদায় করতে পারেন। ইহুদিরা প্রবেশ করতে পারেন, তবে প্রার্থনার অনুমতি নেই তাদের। এরপরও সেখানে অবস্থিত ‘টেম্পল মাউন্টে’ প্রার্থনা করে থাকেন ইহুদিরা।
আল-আকসায় ইহুদিদের প্রবেশ বাড়ছে
ইসরায়েল এক দিনে এক হাজারের বেশি ইহুদি পুন্যার্থীকে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রতিটি দলে সর্বোচ্চ ১৮০ জন করে ইহুদি প্রবেশ করেছেন। সংখ্যার দিক থেকে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় প্রবেশের ঘটনা। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর পাহারায় এ প্রবেশ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ইহুদিদের কাছে এ স্থান ‘টেম্পল মাউন্ট’ নামে পরিচিত।
ইসরায়েল এত দিন পর্যন্ত একসঙ্গে ৩০ জনের বেশি ইহুদি প্রবেশে অনুমতি দিত না। কিন্তু এবার সে নীতি থেকে সরে এসে একসঙ্গে বৃহৎ পরিসরে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। আল-আকসা মসজিদের তত্ত্বাবধানে থাকা ইসলামিক ওয়াক্ফ জানায়, গত বুধবার এক দিনে প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি ইহুদি মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। পাসওভারের ছুটি শুরুর পর এ সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে বলে দাবি তাদের।
ওয়াক্ফের আন্তর্জাতিক বিষয়ক পরিচালক আউনি বাজবাজ বলেন, ‘গত কয়েক দিনে যা ঘটেছে তা নজিরবিহীন। এটি অত্যন্ত ভীতিকর পরিস্থিতি। ২০০৩ সালে যেখানে ২৫৮ জন প্রবেশ করেছিল, এখন তা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এমন চিত্র আগে দেখিনি।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আল-আকসা মসজিদকে ভাগ করে ফেলার বিষয়টি ক্রমেই বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি অনেকটাই হেবরনের ইব্রাহিমি মসজিদের পুনরাবৃত্তি।’ তিনি যোগ করেন, ‘গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।’
স্থিতাবস্থার প্রশ্নে বিতর্ক
ঐতিহাসিকভাবে ১৭৫৭ সালের উসমানীয় ফরমান অনুযায়ী, অমুসলিমদের আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং ইহুদিদের শুধুমাত্র ওয়েস্টার্ন ওয়াল বা দেয়াল সংলগ্ন এলাকায় প্রার্থনার অনুমতি ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বারবার বলেছেন, ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের প্রবেশ ক্রমেই নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে। অনেক রক্ষণশীল ইহুদি নেতা টেম্পল মাউন্টে উপাসনার দাবি জানিয়ে আসছেন, যদিও তাদের ধর্মীয় নেতারা ‘পবিত্রতা রক্ষা না হওয়া পর্যন্ত’ সেখানে প্রার্থনার অনুমতি দেননি।
সরকারের কট্টর ডানপন্থি সদস্য ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির বারবার আল-আকসা প্রাঙ্গণে ইহুদি উপাসনার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এমনকি তাকে বেশ কয়েকবার মসজিদ চত্বরে প্রবেশ করতেও দেখা গেছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। আর এর মধ্যেই যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তা শর্তের আবর্তে আটকে আছে। ইসরায়েল একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস। ফিলিস্তিনের সংগঠনটি বলছে, তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তি চায়। পাশাপাশি ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে তাদের হাতে থাকা বাকি সব জিম্মিকে তারা মুক্তি দিতে আগ্রহী। এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। রয়টার্স ও আল জাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়া এক ভাষণে জানান, তারা আর কোনো ধরনের অন্তর্বর্তী চুক্তিতে রাজি হবেন না। হামাসের যে দলটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, হায়া তারও নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার রয়টার্স জানায়, হামাসের এ অবস্থান ইসরায়েল মেনে নেবে না এবং গাজায় তেল আবিবের সাম্প্রতিক অভিযান আরও দীর্ঘায়িত হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
হায়া বলেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ, ইসরায়েলের কারাগারে থাকা সব ফিলিস্তিনি বন্দির মুক্তি ও গাজা পুনর্গঠনের বিনিময়ে সব জিম্মিকে ছাড়তে হামাস যত শিগগির সম্ভব ‘পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আলোচনায়’ বসতে চায়। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার এসব সাময়িক চুক্তিকে ব্যবহার করছে; সব জিম্মিকে বলি দিয়ে হলেও তারা এটা করতে চায়। আমরা এ নীতি বাস্তবায়নের অংশ হতে চাই না।’
১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হামাস ও ইসরায়েল একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। গত ১৮ মার্চ ওই চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে না গিয়ে ইসরায়েল প্রথম ধাপের সম্প্রসারণ করতে চাচ্ছিল। দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, গাজায় হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মির মুক্তির পাশাপাশি গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা এখনো জানুয়ারিতে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুজ্জীবনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে তা সফল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
হামাসের অবস্থানের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জেমস হিউইট বলেন, হামাসের মন্তব্য প্রমাণ করে, তারা শান্তিতে নয়, বরং চিরস্থায়ী সহিংসতায় আগ্রহী। ট্রাম্প প্রশাসনের শর্ত বদলায়নি– জিম্মিদের মুক্তি দাও, নতুবা নরকের মুখোমুখি হও।
যুদ্ধবিরতি পুনরুজ্জীবিত করা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির লক্ষ্যে গত সোমবার কায়রোতে হওয়া সর্বশেষ রাউন্ডের আলোচনায় কোনো ধরনের সমঝোতাই হয়নি। জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা শুরু করতে ইসরায়েল ৪৫ দিনের একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি চেয়েছিল। কিন্তু তাদের দেওয়া বেশ কিছু শর্তে আপত্তি আছে হামাসের। তেল আবিবের শর্তগুলোর মধ্যে একটি ছিল-হামাসের নিরস্ত্রীকরণ। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বারবারই বলেছে, ‘অস্ত্র সমর্পণ’এমন একটি ‘লাল দাগ’, যা নিয়ে আলোচনা তো দূর, এটি বিবেচনাযোগ্যও নয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জনসহ অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সির মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল টেলিগ্রাম পোস্টে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ১০ জনের মরদেহ ও অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। খান ইউনিসের বানি সুহাইলায় ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়।’
আনাদোলু এজেন্সির খবরে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভেতরে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ আটকা পড়ে আছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলমান যুদ্ধ এবং সাহায্য সরবরাহ হ্রাসের ফলে মানসিক চাপের মাত্রা বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
সফর সংক্ষিপ্ত করে পালালেন ইসরায়েলের মন্ত্রী
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার যুক্তরাজ্য থেকে সফর সংক্ষিপ্ত করে ‘পালিয়েছেন’ বলে জানিয়েছে গ্লোবাল লিগ্যাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (জিএলএএন)। মানবাধিকার সংস্থাটি বলছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানোর পরই এ দখলদার পালিয়ে দ্রুত ইসরায়েলে চলে যান। লন্ডনভিত্তিক জিএলএএন ছাড়াও হিন্দ রজব ফাউন্ডেশনও তাঁর গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আবেদন জানিয়েছিল।
ইসরায়েলি হামলায় ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত
গাজাজুড়ে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এক দিনে ৬৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মেডিকেল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি জরুরি সতর্কতা জারি করে জানিয়েছে, গাজায় এখন খাদ্যের প্রয়োজন। কারণ লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫১ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন।
যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদার ইসরায়েল।
ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে মার্কিন সামরিক বিমান
ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে নামছে মার্কিন বিমান। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯টি মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমান অবতরণ করেছে। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের বরাতে তুর্কি সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেলআবিবের কাছে একটি ইসরায়েলি বিমানঘাঁটিতে ওই বিমানগুলো অবতরণ করে। প্রতিটি বিমানই বাংকার বাস্টার বোমা দিয়ে বোঝাই ছিল। মধ্যাঞ্চলীয় ইসরায়েলের তেল আবিবের কাছে নেভাতিম বিমানঘাঁটির অবস্থান। সেখানেই বাংকার বাস্টার বোমা ও অন্যান্য প্রতিরক্ষা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৯টি মার্কিন পরিবহন বিমান অবতরণ করেছে।
হিজবুল্লাহর মহাসচিব শেখ নাঈম কাসেম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘লেবাননের প্রতিরোধ আন্দোলন কোনোভাবেই নিরস্ত্র হবে না। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা যাবে না।’ গত শুক্রবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন। নাঈম কাসেম কঠোর ভাষায় জানিয়ে দেন, ‘যারা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়, তারা ইসরায়েলি স্বার্থে ষড়যন্ত্র করছে’। তার ভাষায়, ‘এই অস্ত্রই আমাদের স্বাধীনতা এনেছে।’
আল-মানার চ্যানেলে সম্প্রচারিত ভাষণে নাঈম কাসেম বলেন, ‘হিজবুল্লাহর অস্ত্র লেবাননের প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। সশস্ত্র এই গোষ্ঠীই দেশকে মুক্ত করেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে এবং আজও ইসরায়েলের আগ্রাসনকে প্রতিহত করে চলেছে।’
তার ভাষায়, ‘যারা আমাদের নিরস্ত্র করতে চায়, তারা আসলে দক্ষিণ লেবাননকে দখলের পথে ইসরায়েলের জন্য পথ তৈরি করতে চায়।’ হিজবুল্লাহ মহাসচিব এ সময় জানান, লেবাননে যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েল ২ হাজার ৭০০-এরও বেশিবার আগ্রাসন চালিয়েছে। আমাদের প্রতিরোধ ছাড়া এই আগ্রাসন থামত না।
তিনি আরও জানান, হিজবুল্লাহ সব সময় যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলেছে। তবে দখলদার ইসরায়েল তা একের পর এক ভেঙে চলেছে। মার্কিন চাপ ও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের বিষয়ে নাঈম কাসেম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র লেবাননে নিজেদের ছায়া প্রশাসন বজায় রাখতে চায়। তারা আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিতে চায়, যাতে লেবানন দুর্বল হয় এবং ইসরায়েল সহজেই দেশটিকে গ্রাস করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকেই ভয় পাই না। আমাদের প্রতিরোধ নীতি অব্যাহত থাকবে। আমেরিকার হুমকিতে নয়, আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষার স্বার্থে আমরা এই নীতি বজায় রাখব।’
শেখ কাসেম তার বক্তব্যে ইয়েমেনের হুতি আনসারুল্লাহ গোষ্ঠীকেও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা ইয়েমেনকে স্যালুট জানাই- যারা আজ পুরো বিশ্বের হয়ে মার্কিন-ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে এবং প্রতিরোধ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।’
সেই সঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংলাপ সফল হবে এবং অঞ্চল শান্তির পথে এগোবে। কিন্তু শর্ত একটাই- ‘ইসরায়েলকে লেবানন থেকে পিছু হটতে হবে’।
শেখ নাঈম কাসেমের এই বক্তব্য একদিকে যেমন হিজবুল্লাহর আপসহীন প্রতিরোধ নীতির পুনর্ব্যাখ্যা, তেমনি এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভেতরকার জিওপলিটিকাল লড়াইয়ের প্রতিচ্ছবি। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যেখানে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে নিরস্ত্রীকরণের পথে ঠেলে দিতে চায়, সেখানে হিজবুল্লাহ বলছে- অস্ত্রই নিরাপত্তা।
তাদের বক্তব্যের প্রকারান্তরে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, যতদিন ইসরায়েল তার আগ্রাসন চালিয়ে যাবে, ততদিন প্রতিরোধও চলবে।
যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভিসা বাতিল হওয়াদের মধ্যে অর্ধেক শিক্ষার্থীই ভারতীয়। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিলের অভিযোগে সরব হয়েছে কংগ্রেস। আমেরিকান ইমিগ্রেশন ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইএলএ) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনার মধ্যে ৫০ শতাংশই ভারতীয়। এই পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ইস্যুটি কি মার্কিন প্রতিরূপের সঙ্গে আলোচনায় তোলা হবে?
এআইএলএর বক্তব্য অনুযায়ী, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর (ডিওএস) এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিবাসন আইনের কঠোর প্রয়োগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিশানা করছে। এতে করে ভিসা বাতিল, পড়াশোনার স্ট্যাটাস বাতিল এবং দেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। সংস্থাটি ৩২৭টি কেস সংগ্রহ করেছে, যার অর্ধেকই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এর পরই আছে চীন। দেশটির ১৪ শতাংশ ভিসা বাতিল করা হয়েছে। এরপর রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল ও বাংলাদেশ।
রমেশ এক্স (টুইটার) পোস্টে লিখেছেন, ভিসা বাতিলের কারণ অস্পষ্ট এবং এলোমেলো। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ও আশঙ্কা ছড়াচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন? এআইএলএর দাবি, বিক্ষোভে জড়িত নয়- এমন শিক্ষার্থীদেরও টার্গেট করা হচ্ছে। অনেকের এসইভিআইএস স্ট্যাটাস বাতিল করা হচ্ছে, যা পড়াশোনা ও থাকার অনুমতির মূল ভিত্তি।
৪০ সেকেন্ডের মধ্যে আবেদন বাতিল!
যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য বি১/বি২ ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করেছিলেন ভারতের এক নাগরিক। ভারতে তার স্থিতিশীল চাকরি এবং সুস্পষ্ট ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও সাক্ষাৎকারের মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে তার আবেদন বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই অভিজ্ঞতা সামাজিকমাধ্যম রেডিটে শেয়ার করেছেন তিনি, যা মার্কিন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সাধারণ সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ওই ব্যক্তি ফ্লোরিডায় দুই সপ্তাহের ছুটি কাটাতে চেয়েছিলেন, যেখানে তিনি ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ইউনিভার্সাল স্টুডিওর মতো জনপ্রিয় স্থান ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু মার্কিন দূতাবাসে তার সাক্ষাৎকার মাত্র তিনটি প্রশ্নের পরই শেষ হয়ে যায়।
দূতাবাস তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল, ‘আপনি কেন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে চান?’, ‘আপনি কি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করেছেন?’ এবং ‘যুক্তরাষ্ট্রে কি আপনার বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্যদের কেউ থাকে?’ এর পরই তাকে ২১৪(বি) ধারার অধীনে ভিসা প্রত্যাখ্যানের নোটিশ দেওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এর আগে কখনো ভারতের বাইরে সফর করিনি। তবে ফ্লোরিডায় আমার গার্লফ্রেন্ড থাকে এবং তার সঙ্গে দেখা করতে চাই।’ এই জবাবের পরপরই তার আবেদন বাতিল করা হয়।
রেডিটে একজন ব্যবহারকারী এই পরিস্থিতির সারাংশ তুলে ধরে বলেন, ‘আপনার আবেদন সঠিকভাবেই বাতিল হয়েছে, যদিও এটা দুর্ভাগ্যজনক। আপনার কোনো বিদেশ ভ্রমণের রেকর্ড নেই এবং আপনার প্রেমিকা যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক এবং ভারতে ফেরার কোনো শক্তিশালী কারণ না থাকার ইঙ্গিত দেয়।’
মার্কিন ভিসা প্রত্যাখ্যানের অন্যতম প্রধান কারণ হলো নিজ দেশের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক প্রমাণে ব্যর্থতা। এই সম্পর্কের মধ্যে থাকতে পারে স্থিতিশীল চাকরি, সম্পত্তি বা পারিবারিক দায়বদ্ধতা। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীর স্থিতিশীল চাকরি থাকা সত্ত্বেও বিদেশে ভ্রমণের রেকর্ড না থাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রেমিকার উপস্থিতি তার সেখানে অতিরিক্ত সময় থাকার ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
ভিসা আবেদনকারীদের উচিত তাদের ভ্রমণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করা। ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভুল বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেওয়া বা ভ্রমণের উদ্দেশ্য পর্যাপ্তভাবে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে এবং আবেদন বাতিল হতে পারে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ইসরায়েলি বিমান হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে গাজার সিভিল ডিফেন্স।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের বারাকা পরিবারের একটি আবাসিক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরায়েলি বিমান। এতে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া একটি নাপিতের দোকানে বিমান হামলার পর দুই শিশু ও এক নারীসহ আরও ৬জন নিহত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘খান ইউনিসে একাধিক হামলায় ৮ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে আরও দুজন নিহত হয়েছেন।’
বাসাল বলেন, উত্তরে, তাল আল-জাতার এলাকায় মাকদাদ পরিবারের বাড়িতে বিমান হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজা শহরের দুটি বাস্তুচ্যুত তাঁবুতে বিমান হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
সংবাদ বিবৃতিতে সিভিল ডিফেন্স সতর্ক করে দিয়েছে, জ্বালানি সংকটের কারণে আগামী দিনে তাদের জরুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতির জন্য তারা সাহায্য এবং জ্বালানি প্রবেশের উপর ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আইডিএফ সৈন্যরা গাজায় সশস্ত্র সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবকাঠামো ধ্বংস করছে এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা করছে।
আইডিএফ আরও জানায়, ‘ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজা জুড়ে প্রায় ৪০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। এরমধ্যে সন্ত্রাসী, সামরিক কাঠামো এবং অস্ত্র সংরক্ষণাগার রয়েছে।’
ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এতে এক দিনে ৩২ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের বরাতে এ তথ্য জানা গেছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজা আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে খারাপ মানবিক ব্যর্থতাগুলোর মধ্যে একটি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত মোট ৫১ হাজার ৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক লাখ ১৬ হাজার ৫০৫ জন। যদিও গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে যারা চাপা পড়েছে তাদেরও নিহতের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে ইয়েমেনের হোদেইদাহ প্রদেশের রাস ইসা বন্দরকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে আরও প্রায় পাঁচ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে দখলদার ইসরায়েল।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১৮ মার্চ হামাসের সঙ্গে স্বাক্ষরিত হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ গাজাবাসী নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
একসঙ্গে নিহত হলেন পরিবারের ১০ সদস্য
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলের আলাদা দুই হামলায় এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। গতকাল শুক্রবার গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এ তথ্য জানিয়েছে।
সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা ১০ জনের মরদেহ এবং অনেক মানুষকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের পূর্ব দিকের বানি সুহাইলা এলাকায় ইসরায়েলি দখলদারি বাহিনীর হামলার শিকার হওয়া বারাকা পরিবারের বাড়ি ও আশপাশের বাড়িগুলো থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে।’
বাসাল পরে ঘোষণা দিয়েছেন, উত্তরাঞ্চলীয় গাজার তাল আল-জাতার এলাকায় আলাদা আরেকটি হামলা হয়েছে। দুটি বাড়িতে এ হামলার ঘটনায় সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করেছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করেনি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন বাসিন্দা নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল সিভিল ডিফেন্স। নিহতদের বেশির ভাগই বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা ছিলেন। ১৮ মার্চ থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। তখন থেকে তারা গাজায় বিমান হামলা জোরদার এবং স্থল অভিযান বিস্তৃত করেছে।
গাজায় ত্রাণ সংকট চরমে
দেইর আল-বালাহ থেকে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদক মোআথ আল-কালহুত জানান, সারা দিন ধরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চল ও গাজা শহরের পূর্বাংশে ঘরবাড়ি ধ্বংসের অভিযান চালিয়েছে। শুজাইয়া পাড়ায় অসংখ্য আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আটকে পড়া বাসিন্দাদের কাছে প্রয়োজনীয় খাবার, পানি ও ওষুধ পৌঁছানো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা তাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
এদিকে, দেড় মাস ধরে ত্রাণবাহী গাড়ি প্রবেশে ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার ফলে উপত্যকায় খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি ও ওষুধের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনাহারে ও অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দা, বিশেষ করে শিশুরা ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার হচ্ছে। বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তাদের অসহনীয় কষ্টের কথা জানিয়েছেন। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের খাওয়াতে পারছেন না।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে, ইসরায়েলের এই অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন বিপন্ন করা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ স্পষ্ট জানিয়েছেন, হামাসের ওপর চাপ বজায় রাখতে এই অবরোধ চলবে এবং তা সরানোর কোনো পরিকল্পনা আপাতত নেই।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহ না পৌঁছানোয় গাজায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমশ বাড়ছে। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুরা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত মার্চ মাসেই অপুষ্টিতে ভোগা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় অনেক বেশি। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে উপত্যকায়।
এ পরিস্থিতিতে গাজা দখলের বিষয়ে ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি। উত্তর কোরিয়াও ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ইসরায়েল। এরপর থেকে উপত্যকার পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
‘গাজা সফরকারীদের’ স্যোশাল মিডিয়া খতিয়ে দেখার নির্দেশ
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা আবেদনকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যারা ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা এরপর গাজায় গিয়েছিলেন, তাদের স্যোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।
অভিবাসী কিংবা অভিবাসী নয় এমন সব ভিসাধারীরাই এ সোশ্যাল মিডিয়া যাচাই-বাছাইয়ে পড়বেন; এতে বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা যেমন থাকবেন তেমনি থাকবেন সেই ব্যক্তিরাও যারা সরকারি বা কূটনীতিক কাজে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে গিয়েছিলেন, তা তারা যত অল্প সময় বা ক্ষণই সেখানে থাকেন না কেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সব কূটনৈতিক ও কনস্যুলার মিশনে এ সংক্রান্ত যে তারবার্তা পাঠিয়েছে, বার্তা সংস্থা রয়টার্স তা দেখেছে।
বার্তায় বলা হয়, ’সোশ্যাল মিডিয়া পর্যালোচনায় যদি নিরাপত্তা-সম্পর্কিত কোনো সন্দেহজনক বা ক্ষতিকর তথ্য উঠে আসে, তাহলে ওই আবেদনকারীর একটি সিকিউরিটি অ্যাডভাইজরি ওপিনিয়ন (এসএও) দাখিল করতে হবে।’ এসএও হচ্ছে এক ধরনের আন্তঃসংস্থাগত তদন্ত, যার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়-ভিসা আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি কি না।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছা ভারত সরকারের। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।
গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দেয় ভারত। এর এক সপ্তাহ পর অন্তর্বর্তী সরকার নির্দেশনা জারি করে ভারত থেকে স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে সুতা আমদানি করা যাবে না। আর স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের বিষয়টির পরই টাইমস অব ইন্ডিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার জানাল, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না। এছাড়া ঢাকা বাণিজ্য বিষয়ক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটির বদলে কোনো পাল্টা ব্যবস্থা দিল্লি হয়ত নেবে না বলে সংবাদমাধ্যমটির শিরোনামে দাবি করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ভারত সরকারি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, নিজেদের বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরের জট কমাতে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। যদিও দেশটির একাধিক সংবাদমাধ্যমে বেশ ফলাও করে বলা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করার পর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে তাদের সরকার।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কোনো প্রভাব পড়বে না বলে ভারত সরকার আশ্বস্ত করেছে।
তারা আরও দাবি করেছে, ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের আগেই গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ তিনটি বন্দর বন্ধ ও স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানির বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে সুতা আমদানি সংক্রান্ত নির্দেশনা গত সপ্তাহে জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
এছাড়া গত জানুয়ারিতে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে বাংলাদেশ সতর্কতা বাড়ানোর যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটিও দুই দেশের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে তারা।
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত করতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্য শুরু করেছে। এতে ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ট্রেডিং কর্পোরেশনে মাধ্যমে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া