বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫
২৬ চৈত্র ১৪৩১

রুশ যুদ্ধজাহাজে হামলাচেষ্টা নস্যাৎ

সংগৃহীত ছবি
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ১৮ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৩৯

কৃষ্ণ সাগরে দুটি রুশ যুদ্ধজাহাজে ইউক্রেনের নৌ-ড্রোন হামলা নস্যাৎ করার দাবি করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সামুদ্রিক ড্রোন দিয়ে রুশ যুদ্ধজাহাজে আক্রমণ চালানোর চেষ্টা চালায়। মন্ত্রণালয় বলছে, ড্রোনটি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই পাইটলিভি ও ভ্যাসিলি বাইকভ টহল জাহাজ এটিকে ধ্বংস করে দেয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রুশ যুদ্ধজাহাজগুলো ক্রিমিয়ার সেভাস্তোপলের ২৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে কৃষ্ণ সাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে নৌ-চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছিল।

এদিকে রাশিয়ার বিমান পরিবহন সংস্থা জানিয়েছে, সাতটি ফ্লাইট বিকল্প বিমানবন্দরগুলোতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


মার্কিন সাহায্য বন্ধে মারা যাচ্ছে দক্ষিণ সুদানের শিশুরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
বাসস

মার্কিন সাহায্য বন্ধের পর জীবন রক্ষাকারী ক্লিনিকগুলোয় সেবা নিতে পৌঁছাতে না পারায় দক্ষিণ সুদানের শিশুরা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বুধবার একটি আন্তর্জাতিক এনজিও সতর্ক করে একথা বলেছে।

নাইরোবি থেকে এএফপি জানায়, ২০১১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত দরিদ্র দেশটি নিরাপত্তার সাথে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো শান্তি চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।

দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ৪০ হাজার কলেরা আক্রান্তের খবর জানা গেছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, এটিকে দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বুধবার জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের কমপক্ষে পাঁচ তরুণের মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্যে জীবন রক্ষাকারী সেবা পেতে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে যান।

দাতব্য সংস্থাটি পূর্ব আকোবো কাউন্টির ২৭টি ক্লিনিককে সহায়তা করে, কিন্তু এটি জানিয়েছে, ইউএসএআইডি-এর কাটছাঁটের কারণে সাতটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি আংশিক খোলা রয়েছে।

এটি আরো জানায়, দেশব্যাপী প্রায় ৬শ’টি ক্লিনিকের প্রায় ২শ’ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।

ইউএসএআইডি-এর বার্ষিক বাজেট যার প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মানবিক সাহায্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বাজেটের কাটছাঁট করায় বিশ্বজুড়ে এর ওপর প্রভাব পড়েছে।

২৪ বছর বয়সী পুরোনো কলেরা রোগী সারাহ বলেন, ‘আমরা আগে খুশি ছিলাম। অনেক ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল। তাই আমরা খুব বেশি কষ্ট পাইনি। কিন্তু এখন আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’

স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী মাইকেল বলেছেন, সাহায্য কাটছাঁটের পর থেকে রোগীরা ওষুধের অভাবের সাথে লড়াই করছে।

‘আমরা রোগীদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তাদের সাহায্য করতে পারছি না।’

‘এখন একটি গুরুতর কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা শুধুমাত্র রোগীদের খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন।’

এরআগে ইউনিসেফ জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ জন কলেরায় মারা গেছে। যার অর্ধেকই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।

ইউনিসেফ জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের ১০টি রাজ্যের মধ্যে ৯টি রাজ্য আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্য।

দক্ষিণ সুদানের সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস নিয়ামান্ডি এএফপি’কে বলেন, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।

তিনি জোংলেইয়ের আকোবোর পূর্বাঞ্চলে একটি ভ্রমণের বর্ণনা দেন, যেখানে উপচে পড়া তাঁবুতে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখায় অসুস্থ শিশুদের বাইরে গাছের নীচে শুয়ে রাখা হয়।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া উচিত।’

তিনি ‘দক্ষিণ সুদানে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি এমন একটি দেশ যেখানে পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন।’ নিয়ামান্ডি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তেজনা আর না বাড়ার এবং যাতে করে চিকিৎসা ব্যবস্থা আর জটিল না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

দেশের কিছু অংশে সম্প্রতি নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কি ও তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচার উভয়ের মিত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।


চীনা পণ্যে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ও ট্রাম্প শি চিনপিং
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    নতি স্বীকার না করার বার্তা চীনের

চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না। নতি স্বীকার করবে না চীন। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।

হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, সম্প্রতি তিনি যে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তা স্থগিত করার ব্যাপারে তিনি ভাবছেন না। এমনকি এ নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করতেও আপাতত ইচ্ছুক নন তিনি।

এর আগে এরকম কিছু আলাপ সামনে এসেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য নতুন আরোপিত শুল্ক স্থগিত করতে পারে। এই দাবিকে ‘ভুয়া খবর’ বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুল্ক স্থগিতের সম্ভাব্যতার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেটার কথা ভাবছি না। অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে, আর এগুলো হবে ন্যায্য চুক্তি।’

চীন যদি মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। এটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ।

নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর আগে, গত শুক্রবার চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ‘মুক্তির দিন’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্কের অংশ হিসাবেই চীনের ওপরও তখন ওই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে গত মার্চেও চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

এখন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবারও চীনের ওপর এই ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত এই মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি করা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে।’ এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, ‘চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে। পণ্যে রপ্তানিতে চীনের অন্যতম প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এই অতিরিক্ত শুল্ক চীনের উৎপাদকদের জন্য একটি বড় আঘাত।

নতি স্বীকার করবে না চীন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কাছে নতি স্বীকার করবে না। গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর জবাবে বেইজিং পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানায়। বেইজিংয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি থেকে মার্কিন আমদানির ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে মন্তব্য করেন। এরপর ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক আরোপের মন্তব্যকে এভাবে নিন্দা জানাল চীন।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়ানোর মার্কিন হুমকি ভুলের ওপরে আরেকটি ভুল। এ ধরনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিং স্বভাবকে উন্মোচিত করে। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সিদ্ধান্তে অটুট থাকে, তাহলে চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’


পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনায় বসছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র

ট্রাম্প ও খামেনি। ছবি : সংগৃহীত
আপডেটেড ৮ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৫৭
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে ইরান, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে মিল রয়েছে। কারণ ট্রাম্পও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে অবশ্য জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে ওমান। এর আগে ট্রাম্প সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদি ইরান আলোচনায় না আসে তাহলে হামলারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া তেহরানও এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল।

সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে বসে ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি। এটি শনিবার হবে। আমাদের একটি খুব বড় বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে। তিনি বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে বলেন, আমি মনে করি সবাই একমত যে একটি চুক্তি করাই ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে ইরান বড় বিপদে পড়বে বলেও হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কে?

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইরান। ইতোমধ্যে ভেন্যু ও তারিখ চূড়ান্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় বসার বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। এরপর ট্রাম্পের ঘোষণার সত্যতা নিশ্চিত করে ইরান।

ইরান জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে। তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। ওমানে এ বৈঠক হবে এবং দেশটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে।

আরাঘচি এক্স-এ লিখেন, ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ওমানে পরোক্ষ উচ্চস্তরের আলোচনায় বসবে। এটি যতটা সুযোগ, ততটাই পরীক্ষা। বল এখন আমেরিকার কোর্টে।’এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন। তবে তার বক্তব্যে হুমকিমূলক বাক্য ছিল।

সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি এবং তারা সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। শনিবার আমাদের খুব বড় একটি বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে।

তেহরান এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল- ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তা করলে তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে।

ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তেহরান। এর এক দিন পর ট্রাম্প আলোচনার ঘোষণা দেন এবং কয়েক ঘণ্টা পর তেহরান আলোচনার টেবিলে বসার তথ্যটি স্বীকার করে নেয়।


গাজা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এল ভয়াবহ তথ্য

আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গাজাবাসী। ছবি : সংগৃহীত
আপডেটেড ৮ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৪৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে। এবারের হামলার ভয়াবহতা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এ দফায় বিশ্ব এগিয়ে না এলে তাদের বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এর ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের মানবিক সহায়তার সহকর্মীরা আমাদের জানিয়েছেন-গাজাজুড়ে ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে নিয়মিতভাবে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গাজায় অনেক শিশু নিহত এবং আহত হচ্ছে। অনেকে জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, গাজাজুড়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বারবার বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। এমন এক সংকুচিত স্থানে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।

জাতিসংঘের হাতে আসা তথ্য উপস্থাপন করে ডুজারিক বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা অনুমান করি যে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি গাজার মোট ফিলিস্তিনির ১৮%। ডুজারিক আরও জোর দিয়ে বলেন, বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এর দায়িত্ব দখলদার শক্তি হিসাবে ইসরায়েলের ওপর বর্তায়।

জাতিসংঘ প্রায়ই ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন এসবের কোনো তোয়াক্কাই করেন না। শুধু তাই নয়, গাজায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থাপনা। যেমন- গত ২ এপ্রিল উত্তর গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হামলাটি করা হয়। এতে অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা এই হামলাকে সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েলের ওপর কার্যত কোনো বিশ্বচাপ দৃশ্যমান হয়নি।

ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। এতে গত এক দিনে ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

সর্বশেষ নিহতের ঘটনায় গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। অপরদিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম রাফায় আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শহরের পশ্চিম অংশ রাফায় আবাসিক ভবন ভেঙে ফেলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে তেল আল-সুলতান পাড়ায় সব নিঃশেষ করে ফেলছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তারা গত ২৩ মার্চ থেকে এলাকাটিতে ভয়াবহ সামরিক আক্রমণ চালিয়ে আসছে।

সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ এবং বাফার নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে এলাকাটি অবরুদ্ধ করে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জন জিম্মি হয়েছিল। জিম্মিদের উদ্ধার এবং হামাস নির্মূলে হামলা আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল।

গাজায় ২১১ সাংবাদিক নিহত

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২১১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম ডন এ তথ্য জানিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি গণমাধ্যম তাঁবুতে গত সোমবার ভোরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় পর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি জারি করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।

মিডিয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, ওই হামলায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আহমেদ মনসুর গাজায় ইসরায়েলের নিহত ২১১তম গণমাধ্যমকর্মী। এতে বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন, আরব সাংবাদিক ফেডারেশন এবং বিশ্বের সব দেশের সব সাংবাদিক সংগঠনের প্রতি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিগত অপরাধের নিন্দা জানাতে আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাতভর ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে উপত্যকাজুড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং কয়েক বহু মানুষ। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, এদিন রাতে পশ্চিম তীরজুড়ে অভিযান অব্যাহত রাখে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে গ্রেপ্তার এবং উচ্ছেদ করা হয়।

বিষয়:

ইরান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ ইরান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি একটি নথি প্রকাশ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের প্রতি ইরানের যে সমর্থন এটি সেই যোগাযোগের একটি প্রতিলিপি। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও জেরুজালেম পোস্টের।

ওই নথিতে দাবি করা হয়েছে, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মুহাম্মদ দেইফের সঙ্গে ইরানের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, এই দুই নেতা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডারের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিলেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর আগে বা এর থেকেও কিছু সময় আগে ইরানের কাছে এই অর্থ দাবি করেছিল হামাসের নেতারা। তবে এরইমধ্যে হামাসের এসব নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।

রোববার কাতজ বলেছেন, ইরান হলো শয়তানের প্রধান এবং সকল প্রকার অস্বীকার সত্ত্বেও, আজকাল তারা গাজা থেকে শুরু করে লেবানন, সিরিয়া এবং সামেরিয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন এবং প্রচার করে। এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা হলো ইসরায়েলকে ধ্বংস করা।

তিনি আরও বলেছেন, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক না হতে পারে- তার জন্য ইসরায়েল সবকিছু করবে এবং তার প্রক্সিদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকবে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের ভূখণ্ড ভেদ করে দেশটিতে তাণ্ডব চালায়। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ২০০ জন। সেইসঙ্গে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে হামাস জিম্মি করে।

সেইদিনেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে আহত হয়েছে লক্ষাধিক।


ইসরায়েলি হামলায় গাজায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোর থেকে চালানো হামলায় তারা নিহত হন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মোহাম্মদ বাশালের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদ মাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এর আগে নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের তাবুতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হন।
চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা নগরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের কড়াকড়ি আরোপের ফলে ৬ লাখ ২ হাজার শিশু পোলিও টিকা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত রবিবার তুরমাস আইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোর ওমর মোহাম্মদ রাবেয়াকে গুলি করে হত্যা করেছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে। শুধু তাই নয় ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি


গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ৭ এপ্রিল, ২০২৫ ২০:৪৩
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা-গণহত্যা চলছেই। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সির।

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে ৩০০-র বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।

মরক্কো

গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় গতকাল। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।

বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।

বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো একে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নেরও নিন্দা জানিয়েছেন।

তুরস্ক

রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখায় আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এ সময় তারা ‘জর্ডান নদীর তীর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’ ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, ইসরায়েলের দখলদারী নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগানও দিয়েছেন। রোববার রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিন

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।

ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।

এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্যদিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

বিষয়:

গাজা উপত্যকার ৫০ শতাংশের বেশি অঞ্চল ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে

গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গত মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েল নাটকীয়ভাবে গাজা উপত্যকায় সীমানা প্রসারিত করেছে। তারা এখন উপত্যকাটির ৫০ শতাংশেরও বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ভূমি ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা। ইসরায়েলি মানবাধিকার গোষ্ঠী ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের বরাতে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

আল-জাজিরা জানায়, গাজা সীমান্তের আশপাশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকা, যেখানে সামরিক বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে যেখানে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এই সামরিক বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।

ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বিতাড়নের পরিকল্পনা

পাঁচ ইসরায়েলি সেনা বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই চলমান।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনোই না। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপিকে একই ধরনের কথা বলেন।

গতকাল সোমবার বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারত্ব বিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিত ভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন। গোষ্ঠীটি বলেছে, ব্যাপক পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।

সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এ ছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।

বিভক্ত গাজা

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে।

ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের হামলা শুরু করে, তখন থেকে তারা বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত দখল করেছে তারা।

বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।

বাফার জোনে ঢুকলেই গুলি

ইসরায়েলি সেনারা বলেছেন, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে। ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে তাকে গুলি করা হয়, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

তার দাবি, অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে। ইসরায়েলের এ সেনা আরও বলেন, আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের লোকদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকেও হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

বিষয়:

ভয়ংকর যুদ্ধের পরিকল্পনা করছেন পুতিন

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিতে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনী যদি অভিযান শুরু করে, তাহলে কে কার পক্ষে দাঁড়াবে, এখন চলছে সেই সমীকরণও। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর এক গোয়েন্দা তথ্য। জার্মান সামরিক গোয়েন্দাদের ওই তথ্য বলছে, ভয়ংকর যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রাশিয়াকে দুর্বল করতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু পুতিনের নেতৃত্বে আমেরিকাকে বারবার ব্যর্থ করে দিয়েছে রাশিয়া। এমনকি মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকায় নিজের বন্ধু বাড়িয়েছেন পুতিন। ইরানের সঙ্গেও সম্প্রতি রাশিয়া প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী, ইরান অত্যাধুনিক সব যুদ্ধ-সরঞ্জামও পাচ্ছে। তাই সম্ভাব্য মার্কিন হামলার আগে তেহরানকে সাহস জোগাচ্ছে মস্কো।

জার্মান সামরিক গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের এমন বিশ্বাস জন্মেছে, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। জার্মানির তিনটি গণমাধ্যম এ নিয়ে যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন করে, তার ভিত্তিতে সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পশ্চিমের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে, এমনটাই ভাবছে রাশিয়া। একই সঙ্গে সেই অনুযায়ী আগাম প্রস্তুতিও নিচ্ছেন পুতিন।

নিজের সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য অর্জনে সামরিক শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা করছেন পুতিন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে শুরু করা ইউক্রেন যুদ্ধ সেই লক্ষ্য অর্জনের প্রথম পদক্ষেপ। শেষ পর্যন্ত পুরো ইউরোপের বিরুদ্ধেই যুদ্ধে নামবেন পুতিন। এই দশকের শেষ দিকে একটি বড় ধরনের প্রচলিত যুদ্ধের ভিত্তি দাঁড় করে ফেলবে রাশিয়া।

এই মুহূর্তে ন্যাটোর একটি বা একাধিক দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা নেই রাশিয়ার। যদিও লিথুয়ানিয়ার স্পেশাল সার্ভিস-ভিএসডি বলছে, এই মুহূর্তে ন্যাটোর এক বা একাধিক দেশের বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে সামরিক অ্যাকশন নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে মস্কোর। জার্মানির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সার্ভিস-বিএনডির অভিযোগ- জোটের অন্য দেশকে সহযোগিতার ব্যাপারে ন্যাটোর সদস্যরা কতখানি দায়বদ্ধ, তা পরীক্ষা করে দেখতে চান পুতিন।

বিএনডি বলছে, দ্রুতগতিতে নিজেদের সামরিক ব্যয় বাড়াচ্ছে ক্রেমলিন। আগামী বছরের মধ্যে নিজেদের সেনা সংখ্যা ১৫ লাখে উন্নীত করতে চায় রাশিয়া। ২০২৫ সালে রাশিয়ার সামরিক বাজেট ১২০ বিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছেছে। চার বছর আগের তুলনায় এটা প্রায় চার গুণ বেশি। গত সপ্তাহে মার্ক রুট্টে হুঁশিয়ার করে বলেন, রাশিয়া যদি পোল্যান্ড বা জোটের অন্য দেশে হামলা করে তাহলে যথোপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।


নরেন্দ্র মোদিকে সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে ভূষিত করল শ্রীলঙ্কা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘মিত্র বিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করল শ্রীলঙ্কা সরকার। দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও গভীর করা, আর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তার প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মান দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে এটি নরেন্দ্র মোদির ২২তম সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান। বিশ্বমঞ্চে বিশেষ বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে এই ‘মিত্র বিভূষণ’ পদক চালু করেছে শ্রীলঙ্কা।

এই পদক ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের উষ্ণতা ও গভীরতাকে প্রতিফলিত করে। পদক পাওয়ার পর নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই সম্মান দুই দেশের জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও ঐতিহাসিক বন্ধনের পরিচয় দেয়।

এক্স-এ পোস্ট করে মোদি বলেন, ‘‘আজ রাষ্ট্রপতি অনুরা কুমার দিশানায়েক আমাকে ‘শ্রীলঙ্কা মিত্র বিভূষণে’ সম্মানিত করেছে। এটি আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এই সম্মান শুধু আমার একার নয়, এটা ভারতের ১৪০ কোটি মানুষের প্রতি সম্মান। এটা ভারত ও শ্রীলঙ্কার জনগণের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ও ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতীক। এই সম্মানের জন্য আমি রাষ্ট্রপতি, সরকার ও শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।’’

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মোদিকে সর্বোচ্চ সম্মান ‘মিত্র বিভূষণ’ প্রদান করেন। দিশানায়েকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি এই সম্মানের যোগ্য।

প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দিশানায়েকে বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে শ্রীলঙ্কা সরকার তাকে (নরেন্দ্র মোদি) বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান/সরকারপ্রধান হিসেবে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ সম্মান ‘শ্রীলঙ্কা মিত্র বিভূষণ’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা

ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

গত মার্চ মাসে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় হামলা শুরুর পর ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন ফিলিস্তিনিরা।

ইসরায়েলি সেনা ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর মতে, গাজা সীমান্তের আশপাশে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে বড় এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর, কৃষিজমি এবং অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এসব এলাকা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই সামরিক বাফার জোনের পরিধি দ্বিগুণ করা হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতের মাধ্যমে বেশ কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে চাপ দেওয়ার সাময়িক প্রয়োজনের অজুহাতে হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি গাজার ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করে ইসরায়েল।

তবে মানবাধিকার গোষ্ঠী ও গাজা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলের দখলে থাকা অঞ্চলটির উত্তর-দক্ষিণের ভূমিকে বিভক্ত করা করিডোরটি দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পরও ইসরায়েল গাজায় নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ফিলিস্তিনিদের সেখান থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।

পাঁচ ইসরায়েলি সেনা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ধ্বংসযজ্ঞ এবং বাফার জোনের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ১৮ মাস আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে চলমান।

গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর যে দলটি ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তাদের সুরক্ষায় মোতায়েন করা ট্যাংক স্কোয়াডের এক সদস্য বলেন, ‘তারা যা কিছু পেয়েছে, তাই ধ্বংস করেছে। তাদের সামনে যা কিছু কার্যকর মনে করছে, তারা সেখানেও তারা গুলি করেছে ...যাতে (ফিলিস্তিনিদের) ফিরে আসার কিছুই না থাকে। তারা আর ফিরতে পারবে না, কখনই না।’ নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি এবং আরও চার সেনা এপিকে এসব কথা বলেন।

সোমবার (৭ এপ্রিল) বাফার জোনে থাকা সেনাদের বিবরণ নথিভুক্ত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দখলদারবিরোধী ভেটেরান্স গ্রুপ ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স। হাতেগোনা কয়েকজন সেনাদের মধ্যে কয়েকজন এপির সঙ্গে আলাপও করেছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই অঞ্চলটিকে একটি বিশাল পতিতভূমিতে পরিণত করছে বলে জানিয়েছেন।

গোষ্ঠীটি বলেছে, ‘ব্যাপক, পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ভবিষ্যতে ওই এলাকায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি তৈরি করেছে।’

সৈন্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা তার দেশকে রক্ষার জন্য এবং বিশেষত ৭ অক্টোবরের হামলায় বিধ্বস্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা উন্নত করতে কাজ করছে। ওই হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন। এছাড়া ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস।

বিভক্ত গাজা

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের মতে, যুদ্ধের প্রথমদিকে ইসরায়েলি সেনারা সীমান্তের নিকটবর্তী গাজার এক কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বাস করা ফিলিস্তিনিদের জোর করে সরিয়ে একটি বাফার জোন তৈরি করতে সেখানে থাকা সব স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে।

ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘নেতজারিম করিডোর’ নামে পরিচিত গাজার একটি বিশাল ভূমিও দখল করেছে। এই করিডোরটি গাজা সিটিসহ উত্তরাঞ্চলকে সংকীর্ণ ও উপকূলীয় উপত্যকাটির বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। গোটা গাজা উপত্যকাটিতে ২০ লাখের বেশি মানুষের আবাসস্থল।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রকাশ করা একটি মানচিত্রে দেখা যায়, গত মাসে ইসরায়েল যখন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পুনরায় হামলা শুরু করে, তখন এটি বাফার জোনের আকার দ্বিগুণ করেছে। কিছু জায়গায় এটি গাজার অভ্যন্তরে তিন কিলোমিটার (১.৮ মাইল) পর্যন্ত দখলে নেয়।

বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত গবেষণার অধ্যাপক ইয়াকভ গার্ব বলেন, বাফার জোন এবং নেতজারিম করিডোর উপত্যকাটির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ এলাকা নিয়ে গঠিত। এই অধ্যাপক কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূমি ব্যবহারের ধরন পরীক্ষা করে আসছেন।

গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় আরেকটি করিডোর তৈরি করতে চায়—যা রাফাহ শহরকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। গাজায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়বে। গাজার ওই অঞ্চলে সম্প্রতি পরিকল্পিত হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা।

বাফার জোন ‘কিল জোন’, দাবি সেনাদের

সৈন্যরা বলেছে, বাফার জোনের কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই। তবে এসব এলাকায় যে ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ করেছিলেন, তাদের গুলি করা হয়েছে।

ট্যাংক স্কোয়াডে থাকা ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, একটি সাঁজোয়া বুলডোজার ভূমি সম্প্রসারণ করে একটি ‘কিল জোন’ তৈরি করেছে। ট্যাংকের ৫০০ মিটারের মধ্যে কেউ এলে, তাকে গুলি করা হয়। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

কম্পিত ও ভীত অবস্থায় তিনি বলেন, ‘অনেক সেনা ৭ অক্টোবরের হামলার প্রতিশোধ নিতে এ কাজ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ তারা আমাদের হত্যা করেছে। এখন আমরা তাদের হত্যা করতে এসেছি। আমি বুঝতে পারছি যে, আমরা কেবল তাদের হত্যা করছি না, আমরা তাদের স্ত্রী, শিশু, বিড়াল, কুকুরকে হত্যা করছি। ধ্বংস করছি তাদের বাড়িঘর।’

সেনাবাহিনী বলেছে, ‘যতটা সম্ভব বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি এড়াতে’ গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে তারা আক্রমণগুলো চালাচ্ছেন।

এদিকে, ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।


ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালো হামাস, আহত ৩

ইসরায়েলে রকেট হামলা চালালে সতর্ক অবস্থানে দেশটির সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। দক্ষিণ ইসরায়েলের আশদোদ শহরে চালানো এ হামলায় আহত হয়েছেন তিনজন। স্থানীয় সময় রবিবার (৬ এপ্রিল) এই রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেড। ফিলিস্তিনের বেসামরিক জনগণের উপর ইসরায়েলের চালানো গণহত্যার জবাবেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচয় আদ্রে জানায়, গাজা থেকে ইসরায়েলের শহর লক্ষ্য করে ছোড়া ১০টি রকেট শনাক্ত করেছে তারা। এর বেশিরভাগই ইসরায়েলি সেনারা প্রতিহত করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, আশকেলন শহরে একটি রকেট পড়ায় সেখানে তিনজন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলার সময় আশদোদ, আশকেলন ও ইয়াভনি শহরে সর্তকতামূলক সাইরেন বেজে ওঠে।
এ হামলার কড়া জবাব দিতে মধ্য গাজায় চলমান অভিযান আরও জোরদার করতে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এরপর রবিবার রাত থেকেই মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ শহরে বিমান হামলা শুরু করে আইডিএফ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতভর লাগাতার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো উড়তে দেখা গেছে গাজার আকাশে।এতে আজ (সোমবার) গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৪৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর আগে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।
নতুন করে চালানো এসব হামলায় অন্তত ১ হাজার ৩৩৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩ হাজার ২৯৭ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে হামাস শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে, ২০২৩ সালের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। আর পোলিও টিকার অভাবে গাজার ৬ লাখ ২ হাজার শিশু স্থায়ীভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।


গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচির ডাক

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজায় গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই গণহত্যা বন্ধের দাবিতে আজ (সোমবার) বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানিয়েছে নিপীড়িত গাজাবাসী। গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সব দেশে একযোগে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। এ ধর্মঘটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি।

ফিলিস্তিনভিত্তিক ওয়াফা নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গাজায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সমর্থক এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সমগ্র ফিলিস্তিনে সাধারণ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ’দ্য ন্যাশনাল অ্যান্ড ইসলামিক ফোর্স অব প্যালেস্টাইন’ বা প্যালেস্টাইন জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী। আজ সোমবার এই ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটের আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফিলিস্তিনি জাতীয় ও ইসলামিক বাহিনী হলো দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সূত্রপাতের পরপরই ইয়াসির আরাফাতের অনুমোদনে এবং মারওয়ান বারগুতির নেতৃত্বে গঠিত একটি জোট। এই জোট তার সদস্যদের এজেন্ডা সমন্বয় করে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যৌথ রাজনৈতিক পদক্ষেপের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তা করে।

এক বিবৃতিতে জোটটি প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর উত্থাপন এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যা ও অপরাধ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। বিবৃতিতে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে একত্রিত করার এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ও ফিলিস্তিনিদের অধিকারের জন্য জবাবদিহিতার দাবি অব্যাহত রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, গাজাবাসীর এই আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ। গাজাবাসীর এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। ইংরেজি অক্ষরে ছবিতে লেখা রয়েছে, ‘নো ওয়ার্ক নো স্কুল আনটিল জেনোসাইড স্টপ’ অর্থাৎ গণহত্যা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত কাজ ও স্কুল বন্ধ। ’ ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, সংহতি জানাই। আগামীকাল ৭ এপ্রিল ইসরায়েলি দখলদারত্ব এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ধর্মঘটে যোগ দিন। ’

আজ বিশ্বব্যাপী ধর্মঘট পালনে আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। এক ফেসবুক পোস্টে এ তরুণ নেতা লিখেছেন, মানুষ ও মুসলিম হিসেবে এসব (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস-আদালত) বন্ধ রাখাতেই আমাদের দায়িত্ব সীমাবদ্ধ হওয়া উচিত নয় বরং দলমত নির্বিশেষে সারা দেশের ছাত্র-জনতা একসঙ্গে রাজপথে নেমে ইসরায়েলি খুনিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা হয়তো এই মুহূর্তে আমাদের গাজার ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে পারবো না। কিন্তু তাদের লড়াইয়ের সঙ্গে একত্বতা ঘোষণা করতে নিজ ভূমির রাজপথে অন্তত নামতে পারবে।

তিনি বলেন, এনসিপি, বিএনপি জামায়াত বা কোনো (রাজনৈতিক) দলের ব্যানারে নয় বরং দল-মত নির্বিশেষে ‘বাংলাদেশ’ ব্যানারে আমরা রাজপথে নেমে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি। খুনি, রক্তপিপাসু নেতানিয়াহুর বিপক্ষে স্লোগান দিতে পারি। প্রত্যেক জেলায় ছাত্রজনতার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েকজন মিলে দায়িত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচি পালিত হোক। ৭ এপ্রিল কোনো দল, মত, পক্ষের হয়ে নয় বরং বাংলাদেশের পক্ষ হতে গাজার মজলুম মানুষের পক্ষে হোক।

একই আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির শাখার সাবেক সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। নিজের ফেসবুকে পেজে তিনি লিখেছেন, ’গাজার প্রতি বৈশ্বিক সংহতির অংশ হোন। সোমবার, ৭ এপ্রিল ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’- এই কর্মসূচি সফল করুন।’

প্রসঙ্গত, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় দক্ষিণের খান ইউনিসে এক সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তরের গাজা সিটিতে দুই শিশুও নিহত হয়েছে। গাজার খান ইউনিসে এক ভবনে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো বোমা হামলায় কমপক্ষে আটজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিন গড়ে ১০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা বা আহত করছে। এ সংখ্যা বিশ্বব্যাপী গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।


banner close