মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে একটি বিতর্কিত আদেশ জারির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভপাত করানোর অধিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। এটা ছিল নারী অধিকারকর্মীদের দৃষ্টিতে একটি পশ্চাৎমুখী পদক্ষেপ। সেই হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যা নারীর অধিকারের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের ওই রুলিংয়ের সারকথা হলো, বিবাহিত-অবিবাহিতনির্বিশেষে সব নারী গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সমান অধিকার ভোগ করবেন। ২৫ বছর বয়সী একজন একাকী মায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই সিদ্ধান্ত দেন। পারস্পরিক সম্মতির সম্পর্কের পরিণামে ২২ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কারণ ঘনিষ্ঠ অংশীদারের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। সেই পুরুষ শেষ মুহূর্তে বিয়েতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সন্তান ধারণের মানে ওই নারীকে সামাজিক কলঙ্ক ও হয়রানির বোঝা বয়ে বেড়াতে হবে।
ওই নারী আরও বলেন, সন্তান লালনের সামর্থ্য তার নেই। কারণ তিনি কর্মহীন এবং ধনী কোনো পরিবার থেকে আসেননি। তা ছাড়া একা একা একটা সন্তানকে বড় করে তুলতে তিনি মানসিকভাবেও প্রস্তুত নন। দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তিনি গর্ভপাতের অনুমতি পাননি। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়ে কাঙ্ক্ষিত অনুমতি পেয়েছেন।
ভারতে ১৯৭১ সাল থেকে গর্ভপাতের বৈধতা আছে। তবে বছরের পর বছর ধরে কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। একপর্যায়ে সরকার গত বছর মেডিকেল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) অ্যাক্ট নামে একটি আইন প্রণয়ন করে, যার আওতায় ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বিভিন্ন বিবেচনায় গর্ভপাতের অনুমতি পান। এ ক্ষেত্রে তাকে ধর্ষণের শিকার, নাবালিকা, মানসিক প্রতিবন্ধী নারী অথবা গর্ভাবস্থায় বিচ্ছেদপ্রাপ্ত বা বিধবা হওয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে।
গর্ভপাতের বিষয়টি নিজ শরীরের ওপর নারীর অধিকারের সঙ্গে যুক্ত। এ ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেয়া সাংবিধানিক অধিকারের লঙ্ঘন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কেবল অবিবাহিত হওয়ার কারণে একজন নারীকে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান ধারণের যাতনা থেকে মুক্তিলাভের লক্ষ্যে গর্ভপাতের অনুমতি না দেয়ার বিষয়টি এক ধরনের বৈষম্য। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, এ এস বোপানা ও জেবি পারদিওয়ালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেছেন।
ভারতের নারী অধিকারকর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, সর্বোচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের ফলে একজন নারী সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার পাবেন। আদালত এটাও বলেছেন যে একজন একাকী নারীরও যৌনতার অধিকার আছে। ভারতের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এটা অবশ্যই ব্যতিক্রমী ধারণা।
বৈবাহিক ধর্ষণের মতো বাস্তবতার স্বীকৃতিও রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ে। বিচারপতিরা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে একজন নারী যদি অনিচ্ছুক যৌনতার ফলে স্বামীর মাধ্যমেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকেন তার গর্ভপাতের অধিকার থাকা যুক্তিসংগত। তাকে ওই সন্তান জন্ম দিতে ও লালন-পালনে বাধ্য করা যাবে না। কারণ ওই সন্তান গ্রহণে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না, বরং জবরদস্তিমূলক আচরণের মাধ্যমে তার ওপর এটা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল।
মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে ছোট্ট একটি দেশ ইসরায়েল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন ছেড়ে যায় ব্রিটিশ সৈন্যরা। সে সময়ই ইহুদিরা ঘোষণা করে নিজস্ব রাষ্ট্র ইসরায়েলের। তখন থেকেই ইসরায়েল শুধু রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকেনি বরং তাদের পরিধি আরও বাড়িয়েছে। গত ৭৫ বছরে ইসরায়েল রাষ্ট্র হিসেবে একদিকে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, অন্যদিকে আরব রাষ্ট্রগুলোর মাথা ব্যথার কারণও হয়ে উঠেছে।
মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র পরমাণু শক্তিধর দেশ ইসরায়েল। তারাই একমাত্র দেশ যারা শুধুমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে সরাসরি নাগরিকত্ব দেয়, সেটা পৃথিবীর যে প্রান্তেরই ইহুদি হোক না কেন। ৭৫ বছরে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি বা সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বে একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে ইসরায়েল। এটা সম্ভব হওয়ার পেছনে কাজ করেছে বেশ কয়েকটি বিষয়।
পশ্চিমা সহায়তা
ইসরায়েলের এতটা শক্তির পেছনে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে আমেরিকার একটা বড় অবদান আছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় অংশ পেয়ে আসছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল জন্মলগ্ন থেকেই ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকার সমর্থন পেয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফিলিস্তিন অঞ্চলটিতে ৪০০ বছরের অটোমান শাসনের অবসান ঘটিয়ে উপনিবেশ গড়েছিল ব্রিটিশরা। ফ্রান্সও এর মাঝে ছিল যদিও এই অঞ্চলটি সমঝোতার ভিত্তিতে ব্রিটেন শাসন করেছে। ইহুদিদের নিজস্ব একটি ভূখণ্ড থাকার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে এসেছিল ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকেই।
তখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদিরা দলে দলে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে আসতে থাকে। এ নিয়ে আরব এবং ইহুদিদের মধ্যে দ্বন্দ্বও বাড়তে থাকে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে তখন মুসলিমরা ছাড়াও খ্রিস্টানদের বসবাস ছিল। ইহুদিদের বসতি গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটে আরবরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। এই বিক্ষোভ দমনে ব্রিটেন আরবদের ওপর নির্যাতনও চালায়। পরবর্তীতে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণার পরও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানাভাবে তাদের সঙ্গে ছিল ফ্রান্স এবং ব্রিটেন।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র ইসরায়েল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং সে গণতন্ত্রকে সমর্থন দেয় ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ছিল সেই দেশ যারা ইসরায়েলকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। ইসরায়েল রাষ্ট্র যেদিন প্রতিষ্ঠা হয়, ঠিক সেদিনই স্বীকৃতি দিয়েছিল আমেরিকা।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ‘অফিস অব দ্য হিসটোরিয়ানসে’ উল্লেখ রয়েছে হ্যারি এস ট্রুম্যান ১৯৪৬ সালেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ইহুদি রাষ্ট্রের ব্যাপারে তার সমর্থন ঘোষণা করেন।
আর ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষণা হলেও এ অঞ্চলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্রভাবটাই বেশি ছিল। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় ১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। ইসরায়েল পশ্চিমাদের মদদে যখন মিসরে হামলা চালায়, তখন মিসরের পক্ষে থাকা দেশগুলোকে সহায়তা করতে আগ্রহ দেখায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকাতে ব্রিটিশ সেনাদের হটিয়ে অবস্থান নেয় আমেরিকা।
মূলত ইসরায়েলের জন্মই হয়েছে পরাশক্তিদের বিশাল সমর্থনে যেটা ইসরায়েলের ক্ষমতায়নে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া এটাও মনে করা হয় যে ইহুদিদের সঙ্গে শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক এমন নানা দিক পশ্চিমা চিন্তাধারার সঙ্গে মিলে যায় যেটা আরবদের চেয়ে ভিন্ন।
সামরিক ও প্রযুক্তির বিকাশ
প্রতিবেশী মিসর, জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, ফিলিস্তিন সবগুলো দেশ শত্রু হওয়া সত্ত্বেও ঠেকানো যায়নি ইসরায়েলের উত্থান। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তিনটি পুরোদমের যুদ্ধ (১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩) এবং আরও বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যুদ্ধ করেছে ইসরায়েল।
এভাবেই টিকে থাকার লড়াই ইসরায়েলকে আরও শক্ত করেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন ইসরায়েলের সামরিক ও প্রযুক্তিগত আধিপত্য পশ্চিমাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইরানের প্রযুক্তিগত বিকাশ ঘটেছে প্রায় আমেরিকার বিপরীতে আর ইসরায়েলের বিকাশ হয়েছে আমেরিকার বন্ধু হিসেবে।
তবে ইসরায়েলের ক্ষেত্রে দক্ষতার মাত্রাটা ভিন্ন। আধুনিক অস্ত্র, সাইবার সিকিউরিটি, আকাশ প্রতিরক্ষা, মিসাইল ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা- এসব দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছে ইসরায়েল। আমেরিকার কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিসের রিপোর্ট বলছে, ইসরায়েলের প্রযুক্তিকে অত্যাধুনিক করতে প্রভাব রেখেছে আমেরিকা। ২০২৩ অর্থবছরে যৌথ সামরিক প্রকল্পে ৫২ কোটি মার্কিন ডলারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস যার মাঝে ৫০ কোটি শুধু মিসাইল তৈরির খাতের জন্য। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়েও ইসরায়েলকে কোটি কোটি ডলার সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকার সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক এবং বিনিয়োগ ইসরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে লাভবান করেছে। এভাবেই ইসরায়েল দিন দিন আরও খ্যাতি অর্জন করেছে। রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল শুরু থেকেই চেয়েছে সামরিকভাবে শক্তিশালী হতে। কারণ আরব রাষ্ট্রগুলোর মাঝখানে তাদের টিকে থাকার জন্য এটাই ছিল একমাত্র পথ। ইসরায়েল তাদের সামরিক শক্তির বিকাশও ঘটিয়েছে কৌশলে এবং দূরদৃষ্টি মাথায় রেখে।
দেশটিতে অসুস্থ এবং বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া সব নাগরিকের ১৮ বছর বয়সের পর বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হয়। তবে এটি শুধু ইহুদিদের জন্য বাধ্যতামূলক। সামরিক প্রশিক্ষণ পুরুষদের জন্য ৩২ মাস এবং নারীদের জন্য ২৪ মাস।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিকাশ
শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সমানভাবে দক্ষতার দিকে এগিয়েছে ইসরায়েল। তাদের চমক জাগানো সাফল্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তাদের কৃষিখাত। ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার মাধ্যমে ইসরায়েল রাষ্ট্রের যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন সেখানে পানি এবং উর্বর ভূমির সংকট ছিল।
কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে একটি হাই-টেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হয়েছে ইসরায়েল। অত্যাধুনিক সেচ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মরুভূমিতে নানা ধরণের শস্য ফলানোর সাফল্য দেখিয়েছে দেশটি। আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর মতে ইসরায়েলের ফুড প্রসেসিং শিল্প ক্রমাগত নতুন নতুন জিনিস উদ্ভাবন করছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স। স্থানীয় সময় বুধবার ফ্রান্স ফাইভ টেলিভিশনের সাংবাদিকের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানান, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আগামী জুনে জাতিসংঘে একটি সম্মেলন হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে ফ্রান্স এই সম্মেলনের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। ওই সম্মেলনেই ফ্রান্সের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করতে চান মাখোঁ। তিনি বলেন, ‘স্বীকৃতির বিষয়ে আমাদের অবশ্যই এগুতে হবে। কয়েক মাসের মধ্যে আমরা এটা করতে চাই।’
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ফিলিস্তিন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ফ্রান্সের স্বীকৃতির বিষয়টি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার রক্ষা ও দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটা সঠিক পথে এগোনোর একটি পদক্ষেপ হবে।
তবে এমানুয়েল মাখোঁর এই মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সার বলেছেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে যেকোনো ‘একতরফা স্বীকৃতি’ হামাসের হয়ে ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪৬টিই ফিলিস্তিনকে সার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর মধ্যে গত বছর স্বীকৃতি দিয়েছে আর্মেনিয়া, স্লোভেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, বাহামাস, জ্যামাইকা, বার্বাডোস ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো বলেছেন, গাজায় যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের সাময়িকভাবে আশ্রয় দিতে তার দেশ প্রস্তুত।
বুধবার মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্ক সফরে রওনা হওয়ার আগে তিনি জানান, প্রথম পর্যায়ে গাজার প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেওয়া হতে পারে। আহত, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং অনাথদের অস্থায়ীভাবে ইন্দোনেশিয়ায় এনে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রাবোও বলেন, ‘আমরা আহতদের, মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের এবং অনাথদের সরিয়ে আনতে প্রস্তুত। তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলে এবং গাজায় ফেরার মতো নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি হলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে।’
তিনি জানান, কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফিলিস্তিনিদের ইন্দোনেশিয়ায় সরিয়ে নেওয়া যায় তা নিয়ে ফিলিস্তিনি ও অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করার জন্য তিনি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সহজ নয়, তবে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান থেকেই ইন্দোনেশিয়া সংঘাত নিরসনে তার ভূমিকা বাড়াতে চায়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আর ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী, ওই বছরের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১,২০০ জন নিহত হন এবং আরও ২৫০ জনকে জিম্মি করা হয়।
এদিকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থায়ীভাবে ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পর ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করার দুই মাস পর প্রাবোও এ প্রস্তাব দিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এর আগেও বলেছিলেন, প্রয়োজনে গাজায় শান্তিরক্ষী সেনা পাঠাতে প্রস্তুত তার দেশ।
চীনকে পানামা খালের কার্যক্রম হুমকির মুখে ফেলতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা সফরকালে এ সতর্কবার্তা দেন।
জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হেগসেথ হলেন দ্বিতীয় কোনো শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা, যিনি পানামা সফর করছেন। তিনি জলপথে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের খনন করা খালটি ‘ফেরত নেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রবেশপথে অবস্থিত একটি পুলিশ স্টেশনে বক্তৃতাকালে হেগসেথ বলেন, ‘আজ পানামা খাল ক্রমাগত হুমকির সম্মুখীন। কমিউনিস্ট চীন কিংবা অন্য কোনো দেশকে এই খালের অখণ্ডতা বা কার্যক্রমকে হুমকির মুখে ফেলতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।’
যুক্তরাষ্ট্র শতাব্দীরও বেশি পুরোনো এই খালটি খনন করে এবং ১৯৯৯ সালে এটি পানামার কাছে হস্তান্তর করে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। নিরাপত্তা সম্পর্ক নিশ্চিত করে উভয় পক্ষ একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। যদিও খালের ওপর পানামার সার্বভৌমত্বের বিষয়ে উভয় পক্ষের প্রকাশিত ঘোষণায় একটি উল্লেখযোগ্য অসংগতি ছিল।
মুলিনোর কার্যালয় থেকে স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত বিবৃতিতে ‘হেগসেথ পানামা খাল এবং এর আশপাশের এলাকার ওপর পানামার নেতৃত্ব এবং অবিচ্ছেদ্য সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।’
কিন্তু মার্কিন সরকার প্রকাশিত ইংরেজি ভাষার বিবৃতিতে এই বাক্যটি উল্লেখ করা হয়নি।
হংকংয়ের একটি কোম্পানি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্তকারী পানামা খালের উভয় প্রান্তে দুটি বন্দর পরিচালনা করে। বিশ্বব্যাপী মোট জাহাজ চলাচলের ৫ শতাংশ হয় এই জলপথ দিয়ে।
ট্রাম্প প্রশাসন পানামার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে, যাতে দেশটি খালের ওপর চীনা প্রভাব কমাতে পারে। ওয়াশিংটন এই প্রভাবকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
তবে এই জলপথের ওপর চীনের ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের দাবি অস্বীকার করেছে পানামা। যদিও এ বিষয়ে দেশটির প্রতিবাদ দুর্বল হয়ে পড়েছে। হেগসেথের সফরের প্রাক্কালে পানামা হংকংয়ের কোম্পানিটির বিরুদ্ধে চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা পূরণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে।
হেগসেথ বলেন, ‘আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, চীন এই খালটি তৈরি করেনি। চীন এই খালটি পরিচালনা করে না। আর চীন এই খালটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে না।’
মুলিনোর সঙ্গে কথা বলার সময় হেগসেথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা একসঙ্গে ‘চীনের প্রভাব থেকে পানামা খালকে পুনরুদ্ধার করবে। পাশাপাশি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী, সবচেয়ে কার্যকর এবং সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ বাহিনীর প্রতিরোধক্ষমতা ব্যবহার করে এটিকে সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রাখবে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, খাল এলাকার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ বেইজিংকে পানামাজুড়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এর ফলে পানামা এবং যুক্তরাষ্ট্র ‘কম নিরাপদ, কম সমৃদ্ধ এবং কম সার্বভৌম’ হয়ে পড়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ‘ত্রাণ ফুরিয়ে গেছে ও ভয়াবহতার দুয়ার আবার খুলেছে’ বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। উপত্যকাটিতে ত্রাণ ও সব ধরনের পণ্য সরবরাহের প্রবেশ আটকে দিয়েছে ও সম্প্রতি সেখানে নতুন করে বেপরোয়া হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার বলেন, ‘গাজা মানুষ হত্যার একটা ক্ষেত্র (হয়ে উঠেছে) ও সেখানকার বেসামরিক লোকজন এক অন্তহীন মৃত্যুফাঁদে আটকে পড়েছেন।’
গুতেরেসের এ মন্তব্যের আগে জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থার প্রধান ফিলিস্তিনিদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাবার ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, গাজায় যথেষ্ট খাবার রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুতেরেস কুৎসা রটাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ গত ২ মার্চ শেষ হয়। এর পর থেকে দেশটি আবারও গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে এবং সেখানে নতুন করে নির্বিচার হামলা ও বোমাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরায়েল তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে।
১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলের নতুন করে শুরু করা বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সেখানকার হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইসরায়েল জোর দিয়ে বলছে, তারা কোনো বেসামরিক লোকজনকে নিশানা করে না।
আন্তোনিও গুতেরেস গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের অধীন গাজার জনগণের কাছে খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছানো নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা দখলদার শক্তির (ইসরায়েল) রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সে পথ বন্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও ইতিহাসের চোখে এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
এসব মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় কোনো খাবারের সংকট নেই। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরিন মারমোরস্টেইন বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় মানবিক ত্রাণের কোনো ঘাটতি নেই। ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ত্রাণবাহী ২৫ হাজারের বেশি ট্রাক ঢুকেছে।’
গুতেরেসের মন্তব্যের আগে গত সোমবার এক যৌথ বিবৃতি দেয় জাতিসংঘের ছয়টি সংস্থা। বিবৃতিতে তারা ফিলিস্তিনিদের কাছে খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিশ্বনেতাদের অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার বাসিন্দারা আবার ফাঁদে আটকে পড়েছেন এবং বোমা হামলা ও ক্ষুধার শিকার হচ্ছেন। গাজার সব বাসিন্দাকে খাওয়ানোর মতো এখন যথেষ্ট খাদ্য নেই এবং অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ফুরিয়ে আসছে।’
বিবৃতিতে যেসব সংস্থার প্রধানেরা সই করেছেন, সেসব হলো ওসিএইচএ, ইউনিসেফ, ডব্লিউএফপি, ডব্লিউএইচও, ইউএনআরডব্লিউএ, ইউএনওপিএস।
ইতোমধ্যে গতকাল গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এ উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫৮ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত ফিলিস্তিনির মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার ৮১০–এর বেশি। সূত্র: বিবিসি
চীন বাদে যেসব দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল সেগুলো ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার (৯ এপ্রিল) তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্য দেশগুলোকে ছাড় দিলেও চীনা পণ্যের ওপর মোট শুল্কের পরিমাণ ১০৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশের ওপর গত সপ্তাহে পারস্পরিক শুল্ক হিসেবে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম ট্রুথে এ ব্যাপারে ট্রাম্প লিখেছেন, 'বিশ্ববাজারের প্রতি চীন যে অসম্মান দেখিয়েছে, সেটির ভিত্তিতে আমি চীনের ওপর শুল্কের পরিমাণ ১২৫ শতাংশে উন্নীত করছি। যা এ মুহূর্ত থেকে কার্যকর হবে।'
'একটা সময়ে, আশা করি দ্রুত চীন বুঝতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশকে ‘শোষন’ করার সময় বিষয়টি আর মানা হবে না।'
অন্যান্য দেশগুলোর ওপর আরোপ করা পারস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার বিষয়টি জানিয়ে ট্রাম্প লিখেছেন, 'বিপরীতভাবে, ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের বাণিজ্য, বাণিজ্য বাধা, শুল্ক, মুদ্রা জালিয়াতি, অ-আর্থিক শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য ডেকেছে এবং এই দেশগুলো আমার শক্তিশালী পরামর্শের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেয়নি। তাদের জন্য আমি শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছি এবং পারস্পরিক শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। বিষয়টিতে মনযোগ দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।'
মার্কিন সাহায্য বন্ধের পর জীবন রক্ষাকারী ক্লিনিকগুলোয় সেবা নিতে পৌঁছাতে না পারায় দক্ষিণ সুদানের শিশুরা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বুধবার একটি আন্তর্জাতিক এনজিও সতর্ক করে একথা বলেছে।
নাইরোবি থেকে এএফপি জানায়, ২০১১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত দরিদ্র দেশটি নিরাপত্তার সাথে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো শান্তি চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ৪০ হাজার কলেরা আক্রান্তের খবর জানা গেছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, এটিকে দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বুধবার জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের কমপক্ষে পাঁচ তরুণের মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্যে জীবন রক্ষাকারী সেবা পেতে তারা ঘন্টার পর ঘন্টা হেঁটে যান।
দাতব্য সংস্থাটি পূর্ব আকোবো কাউন্টির ২৭টি ক্লিনিককে সহায়তা করে, কিন্তু এটি জানিয়েছে, ইউএসএআইডি-এর কাটছাঁটের কারণে সাতটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি আংশিক খোলা রয়েছে।
এটি আরো জানায়, দেশব্যাপী প্রায় ৬শ’টি ক্লিনিকের প্রায় ২শ’ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।
ইউএসএআইডি-এর বার্ষিক বাজেট যার প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মানবিক সাহায্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বাজেটের কাটছাঁট করায় বিশ্বজুড়ে এর ওপর প্রভাব পড়েছে।
২৪ বছর বয়সী পুরোনো কলেরা রোগী সারাহ বলেন, ‘আমরা আগে খুশি ছিলাম। অনেক ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল। তাই আমরা খুব বেশি কষ্ট পাইনি। কিন্তু এখন আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’
স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী মাইকেল বলেছেন, সাহায্য কাটছাঁটের পর থেকে রোগীরা ওষুধের অভাবের সাথে লড়াই করছে।
‘আমরা রোগীদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তাদের সাহায্য করতে পারছি না।’
‘এখন একটি গুরুতর কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা শুধুমাত্র রোগীদের খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন।’
এরআগে ইউনিসেফ জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ জন কলেরায় মারা গেছে। যার অর্ধেকই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
ইউনিসেফ জানিয়েছে, দক্ষিণ সুদানের ১০টি রাজ্যের মধ্যে ৯টি রাজ্য আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্য।
দক্ষিণ সুদানের সেভ দ্য চিল্ড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস নিয়ামান্ডি এএফপি’কে বলেন, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক।
তিনি জোংলেইয়ের আকোবোর পূর্বাঞ্চলে একটি ভ্রমণের বর্ণনা দেন, যেখানে উপচে পড়া তাঁবুতে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখায় অসুস্থ শিশুদের বাইরে গাছের নীচে শুয়ে রাখা হয়।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া উচিত।’
তিনি ‘দক্ষিণ সুদানে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি এমন একটি দেশ যেখানে পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন।’ নিয়ামান্ডি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তেজনা আর না বাড়ার এবং যাতে করে চিকিৎসা ব্যবস্থা আর জটিল না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দেশের কিছু অংশে সম্প্রতি নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কি ও তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচার উভয়ের মিত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে দেশটির ওপর আরও ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে তারা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘ব্ল্যাকমেইলিং আচরণ’ তারা কখনোই মেনে নেবে না। নতি স্বীকার করবে না চীন। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, সম্প্রতি তিনি যে নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তা স্থগিত করার ব্যাপারে তিনি ভাবছেন না। এমনকি এ নিয়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করতেও আপাতত ইচ্ছুক নন তিনি।
এর আগে এরকম কিছু আলাপ সামনে এসেছে যে যুক্তরাষ্ট্র ৯০ দিনের জন্য নতুন আরোপিত শুল্ক স্থগিত করতে পারে। এই দাবিকে ‘ভুয়া খবর’ বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুল্ক স্থগিতের সম্ভাব্যতার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সেটার কথা ভাবছি না। অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে আসছে, আর এগুলো হবে ন্যায্য চুক্তি।’
চীন যদি মঙ্গলবারের মধ্যে তাদের পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন ট্রাম্প। এটি কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে মোট শুল্কহার দাঁড়াবে ১০৪ শতাংশ।
নিজের সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এর আগে, গত শুক্রবার চীন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ‘মুক্তির দিন’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্কের অংশ হিসাবেই চীনের ওপরও তখন ওই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে গত মার্চেও চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
এখন, যুক্তরাষ্ট্র যদি আবারও চীনের ওপর এই ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে, তাহলে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত এই মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি করা মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে।’ এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলেছে, ‘চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।’
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকা এই উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে। পণ্যে রপ্তানিতে চীনের অন্যতম প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এই অতিরিক্ত শুল্ক চীনের উৎপাদকদের জন্য একটি বড় আঘাত।
নতি স্বীকার করবে না চীন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ অভিহিত করে এর নিন্দা জানিয়েছে। দেশটি বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের কাছে নতি স্বীকার করবে না। গতকাল মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত সপ্তাহে ট্রাম্প বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর জবাবে বেইজিং পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানায়। বেইজিংয়ের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি থেকে মার্কিন আমদানির ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে বলে মন্তব্য করেন। এরপর ট্রাম্পের বাড়তি শুল্ক আরোপের মন্তব্যকে এভাবে নিন্দা জানাল চীন।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়ানোর মার্কিন হুমকি ভুলের ওপরে আরেকটি ভুল। এ ধরনের মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকমেইলিং স্বভাবকে উন্মোচিত করে। যুক্তরাষ্ট্র যদি এই সিদ্ধান্তে অটুট থাকে, তাহলে চীন শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছে ইরান, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে মিল রয়েছে। কারণ ট্রাম্পও বলেছেন, ইরানের সঙ্গে আলোচনা হতে যাচ্ছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষভাবে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে অবশ্য জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে ওমান। এর আগে ট্রাম্প সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদি ইরান আলোচনায় না আসে তাহলে হামলারও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। তাছাড়া তেহরানও এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে বসে ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি। এটি শনিবার হবে। আমাদের একটি খুব বড় বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে। তিনি বিস্তারিত তথ্য না দিয়ে বলেন, আমি মনে করি সবাই একমত যে একটি চুক্তি করাই ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে না। যদি কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় তাহলে ইরান বড় বিপদে পড়বে বলেও হুমকি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী কে?
পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ইরান। ইতোমধ্যে ভেন্যু ও তারিখ চূড়ান্ত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আলোচনায় বসার বিষয়টি ঘোষণা করেছেন। এরপর ট্রাম্পের ঘোষণার সত্যতা নিশ্চিত করে ইরান।
ইরান জানিয়েছে, তারা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করবে। তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সোমবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আগামী শনিবার পরোক্ষ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম পরে জানিয়েছে, আরাঘচি মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দেখা করবেন। ওমানে এ বৈঠক হবে এবং দেশটি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করবে।
আরাঘচি এক্স-এ লিখেন, ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র শনিবার ওমানে পরোক্ষ উচ্চস্তরের আলোচনায় বসবে। এটি যতটা সুযোগ, ততটাই পরীক্ষা। বল এখন আমেরিকার কোর্টে।’এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরুর ঘোষণা দেন। তবে তার বক্তব্যে হুমকিমূলক বাক্য ছিল।
সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, আমরা ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছি এবং তারা সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে। শনিবার আমাদের খুব বড় একটি বৈঠক আছে এবং আমরা দেখব কী হতে পারে।
তেহরান এর আগে ওয়াশিংটনের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল- ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় সহায়তা করলে তাদেরও পরিণতি ভোগ করতে হবে।
ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, ইরানের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন- পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি সংলাপের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে তেহরান। এর এক দিন পর ট্রাম্প আলোচনার ঘোষণা দেন এবং কয়েক ঘণ্টা পর তেহরান আলোচনার টেবিলে বসার তথ্যটি স্বীকার করে নেয়।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নতুন করে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বর্বরতা অব্যাহত রেখেছে। এবারের হামলার ভয়াবহতা আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এ দফায় বিশ্ব এগিয়ে না এলে তাদের বাঁচার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এর ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। সেখানে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের মানবিক সহায়তার সহকর্মীরা আমাদের জানিয়েছেন-গাজাজুড়ে ইসরায়েলি আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে নিয়মিতভাবে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। গাজায় অনেক শিশু নিহত এবং আহত হচ্ছে। অনেকে জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, গাজাজুড়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বারবার বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে। এমন এক সংকুচিত স্থানে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।
জাতিসংঘের হাতে আসা তথ্য উপস্থাপন করে ডুজারিক বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা অনুমান করি যে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি গাজার মোট ফিলিস্তিনির ১৮%। ডুজারিক আরও জোর দিয়ে বলেন, বাস্তুচ্যুতদের নিরাপত্তা এবং বেঁচে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এর দায়িত্ব দখলদার শক্তি হিসাবে ইসরায়েলের ওপর বর্তায়।
জাতিসংঘ প্রায়ই ইসরায়েলি হামলার সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অথচ বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রশাসন এসবের কোনো তোয়াক্কাই করেন না। শুধু তাই নয়, গাজায় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাও হামলার শিকার হচ্ছেন। ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন স্থাপনা। যেমন- গত ২ এপ্রিল উত্তর গাজায় জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালায়। কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই হামলাটি করা হয়। এতে অন্তত ২২ ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী, শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তারা এই হামলাকে সম্পূর্ণ যুদ্ধাপরাধ বলে উল্লেখ করে বিশ্ব সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করে। তবে ঘটনার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েলের ওপর কার্যত কোনো বিশ্বচাপ দৃশ্যমান হয়নি।
ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত
ফিলিস্তিনের গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী মুহুর্মুহু হামলা চালিয়েছে। এতে গত এক দিনে ৬০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন শতাধিক। তাদের অনেককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা সম্ভব হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আনাদোলু এবং কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সর্বশেষ নিহতের ঘটনায় গাজায় নিহতের মোট সংখ্যা ৫০ হাজার ৭৫০ ছাড়িয়ে গেছে। অপরদিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পশ্চিম রাফায় আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলার পাশাপাশি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শহরের পশ্চিম অংশ রাফায় আবাসিক ভবন ভেঙে ফেলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে তেল আল-সুলতান পাড়ায় সব নিঃশেষ করে ফেলছে নেতানিয়াহুর বাহিনী। তারা গত ২৩ মার্চ থেকে এলাকাটিতে ভয়াবহ সামরিক আক্রমণ চালিয়ে আসছে।
সেনাবাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ এবং বাফার নিরাপত্তা অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে এলাকাটি অবরুদ্ধ করে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১,২০০ ইসরায়েলি নিহত ও ২৫০ জন জিম্মি হয়েছিল। জিম্মিদের উদ্ধার এবং হামাস নির্মূলে হামলা আরও তীব্র করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইসরায়েল।
গাজায় ২১১ সাংবাদিক নিহত
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ২১১ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস। গতকাল মঙ্গলবার আল জাজিরার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম ডন এ তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি গণমাধ্যম তাঁবুতে গত সোমবার ভোরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় পর ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের প্রতি বিশ্বব্যাপী সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি জারি করেছে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস।
মিডিয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী, ওই হামলায় গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া আহমেদ মনসুর গাজায় ইসরায়েলের নিহত ২১১তম গণমাধ্যমকর্মী। এতে বলা হয়, আমরা আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ফেডারেশন, আরব সাংবাদিক ফেডারেশন এবং বিশ্বের সব দেশের সব সাংবাদিক সংগঠনের প্রতি গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে এই পদ্ধতিগত অপরাধের নিন্দা জানাতে আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, রাতভর ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে উপত্যকাজুড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছেন এবং কয়েক বহু মানুষ। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশুও রয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, এদিন রাতে পশ্চিম তীরজুড়ে অভিযান অব্যাহত রাখে দখলদার বাহিনী। ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে গ্রেপ্তার এবং উচ্ছেদ করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাতজ ইরান নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি একটি নথি প্রকাশ করে বলেছেন, ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের প্রতি ইরানের যে সমর্থন এটি সেই যোগাযোগের একটি প্রতিলিপি। খবর ইরান ইন্টারন্যাশনাল ও জেরুজালেম পোস্টের।
ওই নথিতে দাবি করা হয়েছে, হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার ও মুহাম্মদ দেইফের সঙ্গে ইরানের সরাসরি যোগাযোগ ছিল। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, এই দুই নেতা ইসরায়েলকে ধ্বংস করার জন্য ইরানের কুদস ফোর্স কমান্ডারের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দাবি করেছিলেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর আগে বা এর থেকেও কিছু সময় আগে ইরানের কাছে এই অর্থ দাবি করেছিল হামাসের নেতারা। তবে এরইমধ্যে হামাসের এসব নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।
রোববার কাতজ বলেছেন, ইরান হলো শয়তানের প্রধান এবং সকল প্রকার অস্বীকার সত্ত্বেও, আজকাল তারা গাজা থেকে শুরু করে লেবানন, সিরিয়া এবং সামেরিয়া পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই সন্ত্রাসবাদকে অর্থায়ন এবং প্রচার করে। এবং তাদের আকাঙ্ক্ষা হলো ইসরায়েলকে ধ্বংস করা।
তিনি আরও বলেছেন, ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক না হতে পারে- তার জন্য ইসরায়েল সবকিছু করবে এবং তার প্রক্সিদের ওপর হামলা অব্যাহত থাকবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাসের যোদ্ধারা। সেইসঙ্গে ইসরায়েলের ভূখণ্ড ভেদ করে দেশটিতে তাণ্ডব চালায়। এতে ইসরায়েলে নিহত হয়েছে অন্তত এক হাজার ২০০ জন। সেইসঙ্গে দুই শতাধিক ব্যক্তিকে হামাস জিম্মি করে।
সেইদিনেই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে গাজায় হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধ চলছে। এতে এখন পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে আহত হয়েছে লক্ষাধিক।
গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরও ৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোর থেকে চালানো হামলায় তারা নিহত হন।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মোহাম্মদ বাশালের বরাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানায় সংবাদ মাধ্যম মিডল ইস্ট আই।
এর আগে নাসের হাসপাতালের কাছে সাংবাদিকদের তাবুতে ইসরায়েলি বোমা হামলায় তিন সাংবাদিক নিহত হন।
চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা নগরী ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলের কড়াকড়ি আরোপের ফলে ৬ লাখ ২ হাজার শিশু পোলিও টিকা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় স্থায়ী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
আরও পড়ুন: গাজার ৫০ শতাংশ ইসরায়েলের দখলে, নিজ ভূমিতে পরবাসী ফিলিস্তিনিরা
অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত রবিবার তুরমাস আইয়ায় ইসরায়েলি বাহিনী ১৪ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি-আমেরিকান কিশোর ওমর মোহাম্মদ রাবেয়াকে গুলি করে হত্যা করেছে।
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় বড় আকারের বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করেছে। শুধু তাই নয় ক্রমাগতভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ সম্প্রসারণ করে চলেছে দখলদার ইসরায়েল। এখন পর্যন্ত উপত্যকাটির ৫০ শতাংশ অংশ দখলে নিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ)। এতে নিজ ভূমিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন অধিকাংশ ফিলিস্তিনি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
সূত্র: বিভিন্ন এজেন্সি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতা-গণহত্যা চলছেই। এই গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাস্তায় নেমেছে হাজার হাজার মানুষ। গাজায় বর্বর হামলা এবং ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষ। খবর বিবিসি, আল-জাজিরা ও আনাদোলু এজেন্সির।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার মানুষ। ওই সমাবেশে ৩০০-র বেশি সংগঠন সমর্থন জানায়। উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা ৩ নম্বর স্ট্রিট এনডব্লিউ ও পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ এনডব্লিউয়ের চৌরাস্তায় সমবেত হয়। পরে তারা ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদর দপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মিছিল করে। এ সময় ফিলিস্তিনি কর্মী মাহমুদ খলিল ও তুর্কি শিক্ষার্থী রুমেইসা ওজতুর্কসহ আটক ফিলিস্তিনপন্থি শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়। প্যালেস্টাইন ইয়ুথ মুভমেন্ট, দ্য পিপলস ফোরাম, ইহুদি ভয়েস ফর পিস এবং অ্যানসার কোয়ালিশনসহ বেশ কয়েকটি অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এই বিক্ষোভের সহপৃষ্ঠপোষকতা করে। বিক্ষোভকারীরা গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি শিশুদের প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার প্রদর্শন করে। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার বা নির্বাসিত করার নিন্দা জানায়।
মরক্কো
গাজায় ইসরায়েলের চলমান বর্বরতার বিরুদ্ধে মরক্কোয় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। হাজারো বিক্ষোভকারী মরক্কোর রাস্তায় নেমে আসেন। গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিগত কয়েক মাসের মধ্যে মরক্কোয় সবচেয়ে বড় বিক্ষোভগুলোর একটি হয় গতকাল। এদিন দেশটির রাজধানী রাবাতের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে।
বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলি পতাকা পদদলিত করেন। তারা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হামাস নেতাদের ব্যানার বহন করেন। এ ছাড়া তারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ছবির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি যুক্ত করে বানানো ক্ষোভের পোস্টারও বহন করেন।
বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কারণ, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তা ছাড়া গাজা পুনর্গঠনের জন্য উপত্যকাটি থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আরব দেশগুলো এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে। অধিকার গোষ্ঠীগুলো একে জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনা বলে অভিহিত করেছে। বিক্ষোভকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনের ওপর দেশটির কর্তৃপক্ষের দমন-পীড়নেরও নিন্দা জানিয়েছেন।
তুরস্ক
রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখায় আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এ সময় তারা ‘জর্ডান নদীর তীর থেকে ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন চাই’ ‘মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, ইসরায়েলের দখলদারী নিপাত যাক’ ইত্যাদি স্লোগানও দিয়েছেন। রোববার রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন অসংখ্য মানুষ। ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিন
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার ফিলিস্তিনজুড়ে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে। ফিলিস্তিনের জাতীয় ও ইসলামি শক্তিগুলো রোববার এক বিবৃতিতে এ ধর্মঘট কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধর্মঘট যেন একটি বৈশ্বিক প্রতিবাদে পরিণত হয়, যেখানে ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়াবহ অপরাধ, বেসামরিক মানুষ হত্যাসহ চলমান দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া যায়। বিশেষ করে নারী ও শিশুসহ নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যাকাণ্ড এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস করে বাস্তুচ্যুত করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সামনে আনতে হবে।
ইসরায়েলের আগ্রাসন থামাতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা জরুরি।
এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাজুড়ে একই রকম বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি ও ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত মাসে ইসরায়েলের তীব্র বিমান ও স্থল হামলার মধ্যদিয়ে গাজায় যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন মরক্কোর বিক্ষোভকারীরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এ যুদ্ধে ৫০ হাজার ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ১ লাখ ১৫ হাজার জনের বেশি ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।