রোববার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২

এশিয়ার ১২ দেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জোট

জাপান সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ছবি: সংগৃহীত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
প্রকাশিত : ২৩ মে, ২০২২ ১৬:৩৭

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ নিয়ে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করার পরিকল্পনা করেছেন। জাপান সফরের সময় সোমবার তিনি এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন।

ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) নামের এই চুক্তির আওতায় জোটের ১৩ সদস্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, সরবরাহ ব্যবস্থা্, ডিজিটাল বাণিজ্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করবে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জোট গঠনের পরিকল্পনা মূলত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব কমানোর চেষ্টার অংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই বাণিজ্য জোটে থাকছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড ও ব্রুনেই। এই দেশগুলোর মোট অর্থনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতির ৪০ শতাংশ।

টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে সাক্ষাতের পর এক অনুষ্ঠানে জোট গঠনের পরিকল্পনাটি প্রকাশ করেন বাইডেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘একুশ শতকের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ রচিত হবে আমাদের এই এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। আমরা নতুন নিয়মের প্রচলন ঘটাচ্ছি।’

চুক্তির আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো ডিজিটাল অর্থনীতি, সরবরাহ ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি অবকাঠামো ও দুর্নীতি দমনে কাজ করবে। তবে এই চুক্তির আওতায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের বাজারে শুল্কমুক্ত কিংবা অপেক্ষাকৃত কম শুল্কে প্রবেশাধিকার পাবে না।

এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র এমন অংশীদারত্বের উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০১৫ সালের খসড়া ওই চুক্তির নাম দেওয়া হয়েছিল ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি)। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে ওই চুক্তি থেকে নিজের দেশকে প্রত্যাহার করেন। সঙ্গে সঙ্গে জোট গড়ার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
এক যৌথ বিবৃতিতে নতুন জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলো বলেছে, এই চুক্তি করোনাভাইরাসের মহামারি ও ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রেক্ষাপটে সামগ্রিকভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনীতিকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করবে।

তাইওয়ানও এই জোটে যোগ দিতে চেয়েছিল। তবে বাইডেনের পাঁচদিনের এশিয়া সফর শুরুর আগেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, তাইওয়ান এই জোটে থাকছে না। তাইওয়ানকে জোটে নেওয়ার অর্থ চীনকে ক্ষুব্ধ করা।



কিছু না জানিয়েই ঝিলম নদীর পানি ছেড়ে দিল ভারত

আজাদ কাশ্মীরে সতর্কতা জারি
ঝিলম নদী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:৩৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কিছু না জানিয়েই হঠাৎ ঝিলম নদীর পানি ছেড়ে দিয়েছে ভারত। এ পরিস্থিতিতে আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর মুজাফফরাবাদে জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের সস্তা রাজনৈতিক কৌশল আবার প্রকাশ পাচ্ছে।

মুজাফফরাবাদের কাছে পানির প্রবাহ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন হাতিয়ান বালা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। মসজিদগুলোতে ঘোষণার মাধ্যমে স্থানীয়দের সতর্কও করা হয়েছে। এদিকে নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতশাসিত অনন্তনাগ থেকে পানি প্রবেশ করে চাকোঠি এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুই দেশের মধ্যে থাকা সিন্ধু নদের একটি উপনদী হলো ঝিলম নদী।

পাকিস্তানি গণমাধ্যম দুনিয়া নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং পানি চুক্তির সম্পূর্ণ লঙ্ঘন। পাকিস্তানের জনগণ এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ভারতীয় আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসারে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা সিন্ধু নদের পানি চুক্ত স্থগিত করার ঘোষণা দেয় ভারত। দেশটি হুমকি দিয়েছে পাকিস্তানকে সিন্ধু নদের এক ফোঁটা পানিও দেওয়া হবে না।

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) চেয়ারম্যান বিলওয়াল ভুট্টো-জারদারি সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার বিষয়ে ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে নয়াদিল্লিকে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সিন্ধু আমাদের এবং আমাদেরই থাকবে। সিন্দুতে হয় আমাদের পানি প্রবাহিত হবে, নয়তো তাদের (ভারত) রক্ত।

গত শুক্রবার এক জনসমাবেশে তিনি বলেন, পিপিপি যেমন ঐকমত্য ছাড়া বিতর্কিত খাল প্রকল্পের অনুমতি দেয়নি, তেমনি পাকিস্তানিরা ঐক্যবদ্ধ থাকবে এবং সিন্ধু নদীতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগ্রাসনের তীব্র জবাব দেবে।

তিনি আরও বলেন, আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমরা সিন্ধুকে রক্ষা করব এবং আজ, সিন্ধু এই হুমকি থেকে সুরক্ষিত হয়েছে। এটি তোমাদের বিজয়।

প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক এবং আলোচনার সময় সম্মত হওয়া বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করে বিলওয়াল ভুট্টো উল্লেখ করেন, সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ফেডারেল সরকার প্রকল্পটি সিসিআইর সামনে উপস্থাপন করবে। তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের প্রতি কৃতজ্ঞ, যিনি আপনাদের (জনগণের) উদ্বেগের কথা শুনেছেন এবং এখন কাউন্সিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো— পিএমএলএন এবং পিপিপি- একমত হয়েছে যে সম্মতি ছাড়া কোনো নতুন খাল নির্মাণ করা হবে না।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ফেডারেল সরকার কর্তৃক অনুমোদিত তার সঙ্গে করা চুক্তি আবারও স্পষ্টভাবে নিশ্চিত করেছে যে, সব প্রদেশের পানির ওপর ন্যায্য দাবি রয়েছে এবং ১৯৯১ সালের পানি চুক্তি ও ২০১৮ সালের পানি নীতি উভয়ই পারস্পরিক ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

নিজের ব্যর্থতা লুকানোর জন্য মোদি সরকার উঠেপড়ে লেগেছে। এমনটা উল্লেখ করে ভাষণে বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, সিন্ধু আবারও আক্রমণের মুখে পড়েছে- এবার ভারতের আক্রমণের মুখে পড়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের অবৈধভাবে অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে, যার জন্য নয়াদিল্লি পাকিস্তানের ওপর মিথ্যাভাবে দোষ চাপিয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের তীব্র নিন্দা করে, কারণ সন্ত্রাসবাদের কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


ইরানে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ২৫, আহত সহস্রাধিক

কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে শহিদ রাজি বন্দর। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:৩৪
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরানের বৃহত্তম বাণিজ্যিক বন্দর শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে পৌঁছেছে। শনিবারের এ ঘটনায় সহস্রাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। খবর আল-জাজিরার।

প্রতিবেদন বলছে, বিস্ফোরণটি ইরানের দক্ষিণের বন্দর আব্বাস শহরের শহিদ রাজি বন্দরে ঘটে। এই বন্দরটি মূলত বহুল গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ হরমুজ প্রণালির কাছে অবস্থিত। বিশ্ব তেল সরবরাহের এক-পঞ্চমাংশ এই পথ দিয়েই পরিবাহিত হয়। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বন্দরটির কাস্টমস অফিস জানায়, বিস্ফোরণটি সম্ভবত বিপজ্জনক ও রাসায়নিক সামগ্রীর গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ফলে ঘটেছে।

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বিস্ফোরণের পর উদ্ধারকর্মী ও বেঁচে যাওয়া মানুষজন ধ্বংসস্তূপে ঢাকা প্রশস্ত সড়ক ধরে হাঁটছেন। একটি ট্রাকের ট্রেইলার আগুনে পুড়ছিল এবং একটি চূর্ণ-বিচূর্ণ গাড়ির পাশে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিল, যখন একটি হেলিকপ্টার ধোঁয়ার বিশাল মেঘের ওপর পানি ছিটিয়ে দিচ্ছিল।

স্থানীয় জরুরি পরিষেবাগুলোর বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় টিভি আইআরইবি জানিয়েছে, ‘শত শত মানুষকে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে প্রাদেশিক রক্ত স্থানান্তর কেন্দ্র রক্তদানের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

সর্বশেষ এই বিস্ফোরণটি এমন এক সময়ে ঘটল, যার কয়েক মাস আগে ইরানের পূর্বাঞ্চলীয় তাবাস শহরের একটি কয়লা খনিতে গ্যাস লিক থেকে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়।

অন্যদিকে এই বিস্ফোরণের সময় ওমানের রাজধানী মাসকাটে ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের পারমাণবিক আলোচনাও চলছিল। সেখানে উভয় পক্ষই আলোচনায় অগ্রগতির কথা জানিয়েছে। এর আগে, ২০২০ সালের মে মাসে একই বন্দরে একটি বড় ধরনের সাইবার হামলার জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। যার ফলে বন্দরটির কার্যক্রম কয়েক দিনের জন্য অচল হয়ে পড়ে।

ওই ঘটনার ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় একই বন্দরে আবার বিস্ফোরণ ঘটল। আর এটি এমন এক সময়ে ঘটল যখন ওমানে নতুন একটি পারমাণবিক চুক্তির লক্ষ্যে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছে। এর ফলে এই বিস্ফোরণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নতুন চাপ তৈরি করতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


ট্রাম্পকে খেলাচ্ছেন পুতিন!

ভ্যাটিকানের ব্যাসিলিকা প্রাসাদে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:২৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ভ্যাটিকানের ব্যাসিলিকা প্রাসাদে আলোচনা করেছেন। ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে এই আলোচনা হয়। আলোচনার পর ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, তার মনে হচ্ছে পুতিন ‘যুদ্ধ থামাতে চান না’ এবং পুতিন তাকে ‘খেলাচ্ছেন।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যের আগে ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকটি ‘খুবই ফলপ্রসূ’ ছিল। অন্যদিকে, জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনাটি ছিল ‘প্রতীকী।’ তিনি বলেন, ‘যদি আমরা যৌথ ফল অর্জন করতে পারি, তবে এটি ঐতিহাসিক হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।’

গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে সাক্ষাতের পর এটি ছিল ট্রাম্প ও জেলেনস্কির প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। সেই সাক্ষাতে ট্রাম্প ও মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউক্রেনীয় নেতাকে ব্যাপক তিরস্কার করেন। তারা ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তার প্রতি অকৃতজ্ঞতার অভিযোগও এনেছিলেন।

জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনার পর ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পুতিনের সমালোচনা করে একটি পোস্ট করেন। ট্রাম্প লেখেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে বেসামরিক এলাকা, শহর ও নগরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পুতিনের কোনো কারণ ছিল না। এটি আমাকে ভাবতে বাধ্য করছে, সম্ভবত তিনি যুদ্ধ থামাতে চান না, তিনি শুধু আমাকে খেলিয়ে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে ভিন্নভাবে মোকাবিলা করতে হবে, ব্যাংকিং বা দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে? অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে!’

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টায় ওয়াশিংটন দুই দেশের মধ্যে জোরালো মধ্যস্থতা করছে। রাশিয়া ২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর থেকে যুদ্ধ চলছে। গত শুক্রবার ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোয় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি তিন ঘণ্টা ধরে ওয়াশিংটনের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন।

এই বৈঠকের বিষয়ে ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যালে অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘বেশির ভাগ মৌলিক বিষয়ে একমত হওয়া গেছে।’ তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি কিয়েভ এবং মস্কোর নেতাদের মধ্যে একটি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন। এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করা হবে। তিনি বলেন, চুক্তিটি ‘খুব নিকটবর্তী।’

ট্রাম্প চুক্তি নিয়ে আগ্রহী হলেও, শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন পরিকল্পনা এবং ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের কাছে গ্রহণযোগ্য যুদ্ধবিরতির শর্তাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়ে গেছে। রয়টার্স শুক্রবার শান্তির দুটি ভিন্ন পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র মস্কোকে অধিকৃত অঞ্চল ধরে রাখার প্রস্তাব দিচ্ছে। এর মধ্যে কৌশলগত ক্রিমিয়া উপদ্বীপও রয়েছে, যা রাশিয়া ২০১৪ সালে নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করে নেয়।

ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে এটি শুরুতেই অগ্রহণযোগ্য বলে মনে হচ্ছে। জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেছেন, এই অঞ্চল ‘ইউক্রেনীয় জনগণের সম্পত্তি।’ ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট কিয়েভে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। ইউক্রেনের সংবিধান বলছে, সব সাময়িকভাবে দখলকৃত অঞ্চল...ইউক্রেনের অংশ।’

মস্কো মার্কিন শান্তিচুক্তিতে সম্মত হবে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়। এই চুক্তিকে রাশিয়ার জন্য যথেষ্ট ছাড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত শনিবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের সব সৈন্যকে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটি মস্কোর একটি প্রধান লক্ষ্য ছিল। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা এই দাবি অস্বীকার করেছেন।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির কারিগরি বিষয়গুলো এখনো ঠিক করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে- রাশিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কীভাবে প্রত্যাহার করা হবে এবং ইউক্রেনকে কী ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। ট্রাম্প শুক্রবার স্বীকার করেছেন, আলোচনা ‘খুবই ভঙ্গুর।’ তিনি সতর্ক করেছেন, দুই পক্ষ শিগগিরই একটি চুক্তিতে না পৌঁছালে যুক্তরাষ্ট্র তার মধ্যস্থতা প্রচেষ্টা বন্ধ করে দেবে।


তাইওয়ানে অবৈধভাবে বাস করা চীনাদের ওপর ধরপাকড়

আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
ইউএনবি

চীনা নাগরিকদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে তাইওয়ানে বসবাস করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ জন তাইওয়ানের নাগরিকত্ব বাতিলসহ চীনা বংশোদ্ভূত কয়েক হাজার তাইওয়ানবাসীর নথিপত্রের তদন্ত চলমান রয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে এমন বলা হয়েছে।

তাইওয়ানের আইন অনুযায়ী, দেশটির নাগরিকদের চীনের নাগরিকত্ব রাখার অনুমতি নেই। যেকারণে গত কয়েক দশকে চীনের নাগরিকত্ব থাকায় শত শত বাসিন্দার তাইওয়ানিজ নাগরিকত্ব কার্যত্ বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হওয়া এই অভিযান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। প্রকাশ্যে তিনজন নারীর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে তাইওয়ান সরকার। পাশাপাশি দেশটির ১০ হাজারের বেশি নাগরিক; যারা চীনে জন্মগ্রহণ করলেও তাইওয়ানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন, তাদের একটি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেওয়ায় এই অভিযানের সমালোচনা শুরু হয়েছে।

নাগরিকদের পরিচয়, আনুগত্য, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও দেশের নিরাপত্তার মধ্যে সরকার সামঞ্জস্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অনেক তাইওয়ানিজ।

এই অভিযান ও বিতর্কের সূত্রপাত হয় গত ডিসেম্বরে অনলাইনে প্রকাশিত একটি প্রামাণ্যচিত্রকে ঘিরে। চীন গোপনে তাইওয়ানের মানুষকে তাদের দেশের নাগরিকত্ব প্রদান করছে বলে দেখানো হয় সেখানে।

প্রামাণ্যচিত্রে তিনজন ব্যক্তির তথ্য উপস্থাপন করা হয়, যারা চীনের ফুজিয়ান প্রদেশে গিয়ে বাস করতে শুরু করেছিলেন এবং চীনের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন।

এই প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশের পর চীনের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় তাইওয়ান সরকার। তাইওয়ানের ওপর চীনা কর্তৃত্ব বজায় রাখার অপচেষ্টা থেকেই এই কাজ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে দেশটির মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (এমএসি)।

প্রামাণ্যচিত্রের সেই তিনজনের মধ্যে একজন সু শিহ। তার ভাষ্যে, ফুজিয়ান প্রদেশে অনেক তাইওয়ানিজ রয়েছে, পাশাপাশি সেখানকার সরকারও উদ্যোক্তাদের নানা রকম ভর্তুকি দিয়ে সহায়তা করেন— এমনটা শুনেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন।

সু জানান, সেখানে গিয়ে চীনের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন বলে জেনেছিলেন তিনি। এটি তার ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে ভেবে তিনি আবেদন করেছিলেন বলে দাবি করেন।

তবে তাইওয়ানের আইনে এই নাগরিকত্ব অবৈধ। যদিও সুয়ের দাবি, অনেক তাইওয়ানিজেরই ফুজিয়ানের নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা মূলত এখন রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের শিকার।

চীন-তাইওয়ান দ্বন্দ্ব কেন?

তাইওয়ানকে নিজেদের একটি প্রদেশ বলে দাবি করে বেইজিং। অন্যদিকে নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি তাইওয়ানের। এ নিয়ে এই অঞ্চলগুলোর বৈরিতা বহু পুরনো।

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বেড়েছে আরও কয়েকগুণে। তাইওয়ান শান্তিপূর্ণভাবে চীনের সঙ্গে একীভূত না হলে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সরকার। এমনকি তাইওয়ানের অভ্যন্তরেও সাধারণ নাগরিকসহ সরকার ও সামরিক বাহিনীতে সিসিপি সমর্থিত অনেকে গুপ্তচরবৃত্তি ও তৎপরতা চালান বলে তাইওয়ানের অভিযোগ।

তবে অঞ্চল দুটির মধ্যে উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও চীনের অনেক নাগরিকই তাইওয়ানে বসবাস করে আসছিলেন, আবার তাইওয়ানেরও প্রায় এক লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ চীনে বাস করেন।

তবে গত মার্চে দেশটির অভ্যন্তরে চীনের চলমান গোপন তৎপরতা বন্ধের দাবিতে দুই অঞ্চলের মধ্যে ভ্রমণ ও পুনর্বাসনে কড়াকড়ি আরোপ করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে।
সে সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চীনের কর্তৃত্ব নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে প্রচারণা চালানোর অভিযোগে তিন চীনা বংশোদ্ভূত নারীর ভিসা বাতিল করে তাইওয়ান সরকার। পরে ওই নারীর তাইওয়ানিজ স্বামী ও সন্তানকে ছেড়ে তাকে চীনে ফেরত পাঠানো হয়।

তাইওয়ানের এ পদক্ষেপের সমালোচনা করে দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, তাড়াহুড়ো করে নথিপত্র ঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করেই লোকজনকে নির্বাসিত করা হচ্ছে। স্থানীয় কিছু মানুষজন অভিযোগ করেন, প্রেসিডেন্ট লাই বাক স্বাধীনতা সীমিত করছেন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট লাই।

লাই জানান, নাগরিকত্ব বাতিল করার আগে দেশটির সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সেনা সদস্যদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে— তাদের কখনো চীনের নাগরিকত্ব ছিল না। তাছাড়া ১০ হাজারের বেশি সাধারণ জনগণকেও চীনের হুকু (স্থায়ীভাবে চীনের থাকার জন্য এটি দরকার) বাতিলের নথি দাখিল করতে বলা হয়। যারা দাখিল করেনি তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে হুকু বাতিলের প্রমাণ দাখিল না করার জন্য তদন্ত শুরু করেছে তাইওয়ানের জাতীয় অভিবাসন সংস্থা (এনআইএ)। এনআইএ জানায়, যারা হুকু বাতিল করার কাগজ জমা দিয়েছেন, তারা পুনরায় তাইওয়ানের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবে।

তবে তাইওয়ানের সাম্প্রতিক এই পদক্ষেপ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক লিও মেই জুন বলেন, এই নির্বাসন অভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষোভ কাজে লাগিয়ে চীনা সরকারকে তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে পারে। এতে বেইজিংয়ের প্রপাগান্ডারই বিজয় হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


গুরুত্বপূর্ণ ফিলিপাইন সামরিক পোস্টের কাছে বিতর্কিত প্রবালপ্রাচীর দখল করল চীন

আপডেটেড ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ ১৩:০৬
বাসস

চীনের উপকূলরক্ষী বাহিনী দক্ষিণ চীন সাগরে ফিলিপাইনের একটি প্রধান সামরিক ঘাঁটির কাছে বিতর্কিত একটি প্রবালপ্রাচীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। বেইজিংয়ের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম শনিবার এ তথ্য জানিয়েছে। এ ঘটনা ম্যানিলার সঙ্গে চীনের দীর্ঘদিনের সীমান্ত উত্তেজনা আরও বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বেইজিং থেকে এএফপি জানায়, চীন প্রায় পুরো দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর সার্বভৌমত্ব দাবি করে আসছে এবং এই দাবির বিরুদ্ধে আঞ্চলিক অন্যান্য দেশের আপত্তি ও আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে আমলে নেয়নি।

চীন ও ফিলিপাইন গত কয়েক মাস ধরে ওই বিতর্কিত জলসীমায় একাধিকবার মুখোমুখি হয়েছে। এদিকে ফিলিপাইন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় পরিসরের যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিচ্ছে, যাকে চীন ‘অস্থিতিশীলতাকে উসকে দেওয়া’ বলছে।

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি শনিবার জানিয়েছে, এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে চীনের উপকূলরক্ষী বাহিনী ‘টাইশিয়ান রিফ’ বা ‘স্যান্ডি কেই’-তে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করে।

ছোট্ট এই বালুচর স্প্রাটলি দ্বীপপুঞ্জের অংশ এবং থিতু দ্বীপের (ফিলিপাইন ভাষায় ‘পাগ-আসা’) কাছাকাছি, যেখানে একটি ফিলিপাইন সামরিক স্থাপনা রয়েছে।

সিসিটিভি জানায়, উপকূলরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা স্যান্ডি কেই-তে নেমে ‘সার্বভৌমত্ব ও অধিক্ষেত্র প্রয়োগ’, ‘পরিদর্শন’ এবং ‘ফিলিপাইনের বেআইনি কার্যকলাপের ভিডিও প্রমাণ সংগ্রহ’ করেছে।

প্রতিবেদনে একটি ছবি প্রকাশ করা হয় যেখানে দেখা যায়, পাঁচজন কালো পোশাকধারী ব্যক্তি নির্জন ওই প্রবালপ্রাচীরে দাঁড়িয়ে আছেন এবং পাশে একটি কালো রঙের রাবার নৌকা ভাসছে।
আরেকটি ছবিতে চারজন উপকূলরক্ষী সদস্যকে জাতীয় পতাকার সাথে প্রবালপ্রাচীরের ওপর পোজ দিতে দেখা যায়, যেটিকে সিসিটিভি ‘সার্বভৌমত্বের শপথ’ বলে উল্লেখ করে।

সিসিটিভি আরও জানায়, তারা প্রবালপ্রাচীর থেকে ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের বোতল, কাঠের টুকরো এবং অন্যান্য আবর্জনা পরিষ্কার করেছে।

দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এক অজ্ঞাতনামা ফিলিপাইন সামুদ্রিক কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে, পতাকা উত্তোলনের পর চীনা উপকূলরক্ষীরা ওই এলাকা ছেড়ে গেছে।

এখনও পর্যন্ত চীন প্রবালপ্রাচীরে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন বা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

গত কয়েক মাসে দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির জন্য চীন ও ফিলিপাইন পরস্পরকে দায়ী করে আসছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া শুক্রবার জানায়, দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে, বেইজিংয়ের ভূমি পুনরুদ্ধার কর্মকাণ্ডে স্থানীয় পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি, ম্যানিলার অভিযোগ মিথ্যা।

থিতু দ্বীপে ফিলিপাইনের সেনা উপস্থিত রয়েছে এবং ২০২৩ সালে সেখানে একটি উপকূলরক্ষী পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু করে ম্যানিলা, চীনের ‘আক্রমণাত্মক মনোভাব’ মোকাবিলার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে।

সোমবার থেকে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী তিন সপ্তাহব্যাপী বার্ষিক যৌথ মহড়া ‘বালিকাতান’ (অর্থাৎ ‘কাঁধে কাঁধে’) শুরু করেছে। এবারের মহড়ায় প্রথমবারের মতো সমন্বিত আকাশ ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা অনুশীলন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ম্যানিলায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউএস মেরিন কর্পসের লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেমস গ্লিন বলেন, দুই পক্ষ কেবল ১৯৫১ সালের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি রক্ষার সংকল্পই প্রদর্শন করবে না, বরং তা বাস্তবায়নের ‘অতুলনীয় সক্ষমতাও’ দেখাবে।

তিনি বলেন, ‘‘কোনো কিছুর চেয়ে দ্রুত বন্ধন গড়ে তোলে যৌথ প্রতিকূলতার অভিজ্ঞতা।’’ তবে কোনো নির্দিষ্ট হুমকির নাম তিনি উল্লেখ করেননি।

চীন এ মহড়াকে ‘আঞ্চলিক কৌশলগত স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে এবং ম্যানিলাকে ‘বহিঃআঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে’ জড়িত থাকার অভিযোগ করেছে।


ইরানের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত ৪, আহত কয়েক শ

শহিদ রাজি বন্দরে বিস্ফোরণের পর ধোঁয়ার ঘন কুণ্ডলী বের হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

ইরানের দক্ষিণাঞ্চলে শহিদ রাজি বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে আশপাশের এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ ঘটেছে এবং বন্দর আব্বাসের কিছু শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য মিলেছে। এতে আহত হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিস্ফোরণে বন্দরটি কেঁপে ওঠে। জরুরি উদ্ধারকারী দল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। খবর তেহরান টাইমস, বিবিসি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিস্ফোরণ এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী বের হচ্ছে। অন্যান্য ভিডিওতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবন এবং গাড়ি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জরুরি দপ্তর জানিয়েছে, একটি ফুয়েল ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে ৫৬১ জন আহত হয়েছেন। কী কারণে ট্যাঙ্কারটি বিস্ফোরিত হয়েছে তার কারণ জানা যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে হরমোজান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হরমোজান সংকট ব্যবস্থাপনা দপ্তরের প্রধান পরিচালক বলেন, বিস্ফোরণটি ব্যাপক শক্তিশালী ছিল। তবে এর কারণ এখনো অজানা।

প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, বন্দরের একটি প্রশাসনিক ভবন থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়। বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং এতে আরও একাধিক গাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপত্তা এবং জরুরি উদ্ধারকারী দল বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। আহতদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বন্দর আব্বাসসহ স্থানীয় হাসপাতালগুলোত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। ফারসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, কাশেম থেকেও শোনা গেছে। যা বন্দর আব্বাস থেকে ২৬ কিলোমিটার (১৬ মাইল) দূর অবস্থিত।

২০২০ সালে ইরানের এই বন্দরের কম্পিউটারগুলো একটি সাইবার হামলার শিকার হয়, যার ফলে পানিপথ ও সড়কপথে বন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। ওই সময়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছিল, ইরানের চিরশত্রু ইসরায়েল এর পেছনে দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ ইরানের আগের একটি সাইবার হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে ওই হামলা চালানো হয়েছিল।

তবে শহিদ রাজি বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল সেনাবাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর।

সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ অনুসারে, রাজধানী তেহরানের ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত শহিদ রাজাই ইরানের সবচেয়ে উন্নত কন্টেইনার বন্দর। এটি বন্দর আব্বাস থেকে ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে এবং হরমুজ প্রণালির উত্তরে অবস্থিত। এখান দিয়ে বিশ্বের তেল উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশ যায়।

এদিকে, ইরনা জানিয়েছে, অনলাইনে প্রচারিত ভিডিওতে ঘটনাস্থলে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে। সম্ভাব্য হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান বলেছেন, ‘প্রতিক্রিয়া দলগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি, তদন্ত চলছে। আমরা বর্তমানে আহতদের সরিয়ে নিয়ে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছি।’


ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা, পরমাণু অস্ত্র ও সার্বিক সক্ষমতায় কে এগিয়ে?

পাকিস্তান এবং ভারতের সমরাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:২২
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

পেহেলগামে জঙ্গি হামলার ঘটনায় আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক। কাশ্মীরের এই ইস্যুতে পাকিস্তানের ঘাড়েই দোষ চাপাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে দুদেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদের পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দিল্লি। দিল্লির এমন মারমুখী প্রতিক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ইসলামাবাদও।

রীতিমতো যুদ্ধের আশঙ্কা চিরশত্রু এই দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের। প্রশ্ন উঠছে, পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় সেক্ষেত্রে জয়ের সম্ভাবনা কার? যদি যুদ্ধ বেঁধেই যায়, কার জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। আলোচনা চলছে কার কত সামরিক ক্ষমতা, তা নিয়েও।

এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।

ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া জানিয়েছে, ১২৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৭৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে ১৯ কোটি মানুষের দেশ পাকিস্তানের সামরিক বাজেট ১০ থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার।

সামগ্রিক সামরিক র‍্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক

‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

পারমাণবিক সক্ষমতা

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট।

পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

সেনা সংখ্যা

ভারতের সক্রিয় সেনা সংখ্যা ২১ লাখ ৪০ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ১১ লাখ ৫৫ হাজার সৈন্য। এছাড়াও, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মিলবে ৩১ কোটি সেনা। অপরদিকে, পাকিস্তানে সক্রিয় সেনা রয়েছে ৬ লাখ ৫৩ হাজার। রিজার্ভে রয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার সেনা। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে দেশটিতে মিলবে চার কোটি সেনা।

স্থলবাহিনী

ভারতের স্থলবাহিনীর হাতে রয়েছে চার হাজার ৬১৪টি ট্যাংক। সামরিক যান রয়েছে পাঁচ হাজার ৬৮১টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ২৯২টি। পাকিস্তানের স্থলবাহিনীর রয়েছে দুই হাজার ৭৩৫টি ট্যাংক। সামরিকযান রয়েছে তিন হাজার ৬৬টি। রকেট আর্টিলারি রয়েছে ১৩৪টি।

বিমান বাহিনী

ভারতের যুদ্ধবিমান রয়েছে দুই হাজার ২১৬টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়ায় তৈরি মিগ-২১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, সুখোই-৩০এমকেআই, ব্রিটেন-ফ্রান্সের তৈরি জাগুয়ার এবং ফ্রান্সের তৈরি মিরেজ ২০০০। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান রয়েছে এক হাজার ১৪৩টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি এফ-৭পিজি এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-১৬ ফেলকন।

নৌবাহিনী

আমর্ডফোর্সেসের হিসাবে ভারতের নৌবাহিনীর রয়েছে ১৫টি সাবমেরিন, ১৫টি ফ্রিগেট, ১১টি ডেস্ট্রয়ার এবং বিমানবহনকারী জাহাজ দুটি। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে পাঁচটি সাবমেরিন এবং ৯টি ফ্রিগেট।

প্রতিরক্ষা বাজেট

ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।


ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব নিরসন হবে?

কাশ্মীরে টহল দিচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ২১:১৮
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

গত মঙ্গলবার ভারতশাসিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীরা হামলা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে পৌঁছেছে। এই দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে সৌদি আরব ও ইরান। দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে সৌদি আরব ও ইরান। পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেন সৌদি ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।

ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারা পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয়পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।

এ পরিস্থিতিতে দেশ দুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি আরব। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেন। ফোনালাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেন তিনি।

পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।

এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পেহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনে আলাপ করেছেন। এ সময় হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

উত্তেজনা প্রশমনে ইরানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। আলোচনায় তিনি ‘উত্তেজনা কমাতে ইরানের শুভেচ্ছাপূর্ণ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার’ প্রস্তাব দেন।

আরাঘচি পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ (পূর্বের টুইটার) এক পোস্টে লেখেন, তার দেশ ‘সংঘাত নিরসনে নিজের সদিচ্ছার মাধ্যমে সহায়তা করতে প্রস্তুত’ রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীর অঞ্চলের ওপর সম্পূর্ণ মালিকানা দাবি করে থাকে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ভারত বিভক্তির পর থেকেই এ অঞ্চল নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একাধিকবার যুদ্ধ হয়েছে।

সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ানো হয়েছে এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব পড়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এমন একসময়ে এই মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিল যখন পশ্চিম এশিয়ায় ইরানের কূটনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ করা যাচ্ছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সঙ্গেই ইরানের ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা তাকে একটি গ্রহণযোগ্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিতে পারে। তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস এবং উভয় দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রবল উপস্থিতি ইরানের প্রচেষ্টাকে সফল করতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে কাজ করতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।

পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত ৬

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পরিচালিত অভিযানে অন্তত ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। দেশটির আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ (আইএসপিআর) এক বিবৃতি জানিয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী বান্নু জেলায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করেছে।

এতে দাবি করা হয়, অভিযান পরিচালনার সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে ছয় সন্ত্রাসী নিহত হন। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানদের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে পাকিস্তানে হামলার সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। যার বেশির ভাগই কেপি ও বেলুচিস্তানে। ইসলামাবাদের দাবি, শত্রু গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করে হামলা পরিচালনা করছে।

পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ নামের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সন্ত্রাসী হামলা আগের মাসের তুলনায় ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এদিকে কাশ্মীরে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে দেশ দুটি একে অন্যের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। থেমে নেই কথার লড়াইও। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পর এবার এসব বিষয়ে স্পষ্টভাবে বার্তা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও।

বিষয়:

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: মধ্যস্থতায় এগিয়ে এলো সৌদি-ইরান

ভিসা বাতিলের পর নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন ভারত-পাকিস্তানের নাগরিকরা। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
unb

অধিকৃত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা নিরসনে দুই দেশকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে মিত্র দেশ সৌদি আরব ও ইরান। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দেশ দুটির মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা।

পাকিস্তানের গণমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) ভারতের ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন সৌদি ও ইরানের সমকক্ষ কর্মকর্তারা।

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন। এ ঘটনায় পাকিস্তান জড়িত বলে অভিযোগ করেছে চিরবৈরী ভারত। যদিও হামলার সঙ্গে কোনোরকম সংশ্লিষ্টতার দায় অস্বীকার করেছে পাকিস্তান।

এতে দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দিবাগত রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর দুই দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হয়।

ভারতের দাবি, পাকিস্তানের সেনারা প্রথমে গুলি ছুড়েছে, তারাও পাল্টা জবাব দিয়েছে। তবে বেসামরিক জনগণের ওপর কোনো গোলাগুলি করা হয়নি বলে উভয় পক্ষ থেকেই নিশ্চিত করা হয়েছে।

এর আগে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ফিরে ভিসা বাতিল করে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকেরা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে শুরু করেন।

এ পরিস্থিতিতে দেশদুটির মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসনে এগিয়ে এসেছে দুই দেশের মিত্র ইরান ও সৌদি। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান পাকিস্তানের তার সমকক্ষ ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

এ সময় আলাপে ভারতের অভিযোগগুলো প্রত্যাখান করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার বিষয়েও সতর্ক করেছেন তিনি।

পাশাপাশি ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের কড়া জবাব দিতে পাকিস্তান দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলেও উল্লেখ করেন ইসহাক দার। তবে সৌদির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতেও সম্মত হয়েছেন তিনি।

এদিকে সামাজিকমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, তিনি পহেলগামে হামলার বিষয়ে প্রিন্স ফয়সালের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। এ সময়ে হামলার সঙ্গে সীমান্ত-যোগসূত্র (ক্রস-বর্ডার লিঙ্কেজ) নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

অন্যদিকে দিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা নিরসনে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান।

এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তান উভয় দেশই ইরানের মিত্র। চলমান এই কঠিন পরিস্থিতিতে ইরান দেশদুটিতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমঝোতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন পাকিস্তানের ইসহাক দার। শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ‘কোনো দেশ যদি ভারতের সঙ্গে তাদের মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়, তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

এদিকে দুই প্রতিবেশীর মধ্যকার এই উত্তেজনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনে তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।


পাকিস্তানে নদীর পানিপ্রবাহ আসলেই বন্ধ করতে পারবে ভারত!

বিবিসির বিশ্লেষণ
ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ ১৪:৩৫
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কাশ্মীরে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ইন্দাস নদীর পানিবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ঐতিহাসিক চুক্তি ‘ইন্দাস ওয়াটারস ট্রিটি’ কার্যত স্থগিত করেছে ভারত। ১৯৬০ সালে সই হওয়া এ চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে সংঘটিত দুটি যুদ্ধের মধ্যেও গত মঙ্গলবারের ওই হামলার আগে পর্যন্ত বহাল ছিল। এ ছাড়াও এটি আন্তর্জাতিক সীমান্তের পানি ব্যবস্থাপনার এক সফল উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবার ভারত এই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে কার্যক্রম স্থগিত করায় দুই দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন উত্তেজনা।

ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদদ দিচ্ছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি ভারত পানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেটি ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ হবে।

চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের পর থেকে প্রশ্ন উঠেছে, ভারত কি সত্যিই পাকিস্তানের পানিপ্রবাহ বন্ধ করতে পারবে? বিশেষ করে ইন্দাস অববাহিকার সেই তিনটি নদীর প্রবাহ, যেগুলো পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ। চুক্তি অনুযায়ী ইন্দাস অববাহিকার রাভি, বিয়াস এবং শতদ্রু ভারতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও ইন্দাস, ঝেলম এবং চেনাব নদীর পানির ৮০ শতাংশ পাকিস্তান পায়। পাকিস্তানের কৃষি এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় একটি অংশ এই পানির ওপর নির্ভরশীল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের বিদ্যমান অবকাঠামো দিয়ে এ বিশাল পরিমাণ পানি আটকে রাখা বা অন্যদিকে প্রবাহিত করা বাস্তবে খুব একটা সম্ভব নয়। ভারতের অধিকাংশ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পই ‘রান-অব-দ্য-রিভার’ বা পানির প্রবাহকে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তিনির্ভর, যেখানে বড় আকারে পানি জমিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। ফলে বর্ষার সময় বিশাল এই জলপ্রবাহ আটকে বা ঠেকিয়ে রাখা কঠিন।

তবে ভারত যদি চুক্তির বাধ্যবাধকতা ছাড়া নতুন বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণে যায়, তাহলে শুকনো মৌসুমে এর প্রভাব পাকিস্তানের ওপর ভয়াবহ হতে পারে। কারণ, তখন নদীতে স্বাভাবিকভাবে পানির প্রবাহ কম থাকে এবং ভারত যদি সেই পানি ধরে রাখে, তবে পাকিস্তানের কৃষি ও জনজীবন বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চুক্তি অনুযায়ী ভারতকে পানিপ্রবাহ ও বন্যা সম্পর্কিত তথ্য পাকিস্তানের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হয়। এখন চুক্তি স্থগিতের ফলে ভারত চাইলে এ তথ্য পাকিস্তানকে জানানো বন্ধ করে দিতে পারে। পাকিস্তানের সাবেক কর্মকর্তাদের অভিযোগ, আগেও ভারত এ-সংক্রান্ত মাত্র ৪০ শতাংশ তথ্য পাকিস্তানকে দিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একে ‘ওয়াটার বম্ব’ হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। অর্থাৎ উজানের দেশ হিসেবে ভারত যদি হঠাৎ পানি আটকে রাখে এবং পরে আকস্মিক তা ছেড়ে দেয়, তাহলে ভাটিতে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এতে ভারতের নিজস্ব এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এ প্রসঙ্গে আরও একটি কৌশলগত দিকও সামনে এসেছে। ইন্দাস নদীর উৎস চীনের তিব্বতে। ২০১৬ সালে ভারতের হুঁশিয়ারির পর চীন একবার ব্রহ্মপুত্র নদের একটি উপনদী আটকে দিয়েছিল। এখন চীন তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ করছে, যা ভারতের জন্যও উদ্বেগের বিষয়।

সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপে নেওয়া ভারতের এই পানিচুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তের বাস্তব রূপায়ণ সহজ নয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে এর কৌশলগত প্রভাব পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।


কাশ্মীরে হামলা ভারতের ‘সাজানো নাটক’

পাকিস্তানের দাবি
পাকিস্তানের সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে ভারতবিরোধী বিল পাস। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে

সম্প্রতি ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এ হামলাকে ভারত সরকারের ‘সাজানো নাটক’ বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যেন এ ধরনের ‘নিন্দনীয় কর্মকাণ্ড’ থেকে সরে আসে। বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির (এনএসসি) বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভারত যেন পেহেলগাম হামলার মতো ঘটনা ‘পরিকল্পিতভাবে সাজিয়ে, পরিচালনা করে এবং রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কাজে লাগানোর’ পথ পরিহার করে। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৫ জন ভারতের ও একজন নেপালের নাগরিক। এ সময় আহত হন আরও ১৭ জন। এ ঘটনায় ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হচ্ছে।

পেহেলগাম হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করার ভারতের এই প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার পাকিস্তানি সিনেট সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। এতে বলা হয়, পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় সম্পূর্ণ সক্ষম ও প্রস্তুত রয়েছে-হোক তা পানিসন্ত্রাস কিংবা সামরিক উসকানি।

প্রস্তাবে বলা হয়, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়ানোর ভারতের যে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চেষ্টা’, তা সিনেট স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ‘পরিকল্পিত ও অসৎ প্রচারাভিযান’-এরও তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

প্রস্তাবে ভারত কর্তৃক ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিচুক্তিকে একতরফাভাবে স্থগিত করাকে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলে উল্লেখ করা হয়। এ চুক্তি বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং দশকের পর দশক ধরে যুদ্ধ ও বৈরিতার মধ্যেও টিকে ছিল। পেহেলগাম হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে, কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে দেয় এবং ইসলামাবাদকে ‘সীমান্তপাড়ে সন্ত্রাসে মদদদাতা’ হিসেবে অভিযুক্ত করে পদক্ষেপ নেয়।

সিনেটের প্রস্তাবে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান যেভাবে ভারতের আগ্রাসনের জবাব দিয়েছে, ভবিষ্যতেও যেকোনো ভুল পদক্ষেপের মুখে কঠোর ও সঠিক জবাব দেওয়া হবে। প্রস্তাব পেশকালে ইসহাক দার বলেন, কেউ যদি পাকিস্তানে আগ্রাসনের চিন্তা করে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত। অতীতে যেমন জবাব দিয়েছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারতের এমন কোনো পদক্ষেপ পুরো অঞ্চলজুড়ে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।


পেহেলগামে সেনা অনুপস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নে অস্বস্তিতে মোদি সরকার

পেহেলগামে সশস্ত্র হামলার বিষয়ে ভারতে সব দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক। ছবি- সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক
    # ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান সিনেটে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাস #ভারত, পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর আহ্বান জাতিসংঘের

ভারতশাসিত কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি ও পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ গ্রহণের পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেছিল ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এসময় ঘটনাস্থল পেহেলগামে সে সময় সেনা অনুপস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কড়া প্রশ্নের মুখে ফেলে বিরোধীরা। এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। অন্যদিকে, পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত বলে ভারতের তোলা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তান। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পানি–সন্ত্রাসবাদ বা সামরিক উসকানিসহ যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নেতৃত্বে আয়োজিত এই বৈঠকে বিরোধীদের মূল প্রশ্ন ছিল-পেহেলগামের কাছে বৈসারনে হামলার সময় কেন কোনো নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন ছিল না? কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রথম এই প্রশ্ন তোলেন। পরে রাজ্যসভার বিরোধীদলীয় নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও আম আদমি পার্টির সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংহসহ আরও অনেকে তা সমর্থন করেন।

জবাবে সরকার জানায়, বৈসারন এলাকা সাধারণত জুন মাসে শুরু হওয়া বার্ষিক অমরনাথ যাত্রার আগে থেকেই নিরাপত্তার আওতায় আসে। তখন ওই পথ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয় এবং তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সেনা মোতায়েন করা হয়; কিন্তু এ বছর স্থানীয় পর্যটন সংস্থাগুলো ২০ এপ্রিল থেকেই সেখানে পর্যটক নিয়ে যাওয়া শুরু করে দেয়। প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে আগাম কোনো তথ্য ছিল না। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পর্যটন শুরু হলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি।

বৈঠকে বিরোধীরা আরও প্রশ্ন তোলে-ভারতের যদি পানি সংরক্ষণক্ষমতা না থাকে, তাহলে সরকার কেন সিন্ধু পানিচুক্তি স্থগিত করল? জবাবে সরকারি প্রতিনিধি জানান, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবিক লাভের জন্য নয়, বরং প্রতীকী ও কৌশলগত বার্তা দেওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, সেটাই এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকার কোন পথে এগোবে, তার ইঙ্গিতও এতে রয়েছে।

বৈঠকে কংগ্রেস, বিজেপি, এনসিপি-এসপি, শিব সেনা, আরজেডি, ডিএমকে ও সমাজবাদী পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন জেপি নাড্ডা, সুপ্রিয়া সুলে, প্রফুল্ল প্যাটেল, সস্মিত পাত্র, শ্রীকান্ত শিন্ডে, প্রেমচাঁদ গুপ্ত, তিরুচি শিবা ও রাম গোপাল যাদব।

‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় দুই ডজনের বেশি পর্যটক নিহতের ঘটনায় নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদের মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এ সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতি ‘খুবই নিবিড়ভাবে ও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে’ পর্যবেক্ষণ করছেন। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

এখনকার পরিস্থিতির যেন আর অবনমন না হয় তা নিশ্চিতে উভয় দেশের সরকারকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ মহাসচিবের এ মুখপাত্র বলেছেন, ‘পারস্পরিক ও অর্থবহ আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে থাকা যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব এবং সেটাই হওয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

এমন এক সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের দিক থেকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ প্রদর্শনের এ আহ্বান এলো, যখন কাশ্মীরে জঙ্গি হামলাকে ঘিরে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ একে অপরের প্রতি প্রবল যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখাচ্ছে।

পেহেলগামে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে ভারত এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক একটি পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এর পাল্টায় পাকিস্তানও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে এবং ভারতীয় বিমানের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন কাশ্মীরি তরুণ আদিল

ভারতশাসিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত মঙ্গলবার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক কাশ্মীরি তরুণ। তার নাম সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। এক বন্দুকধারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে নিহত হন আদিল। ৩০ বছর বয়সি এই তরুণ একজন ঘোড়াচালক। তিনি বৈসারনের তৃণভূমিতে আগত পর্যটকদের তার ঘোড়ায় চড়ানোর কাজ করতেন। আদিলের বাবা হায়দার শাহ বলেছেন, তার ছেলে পর্যটকদের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে নিয়ে তিনি গর্বিত।

গত বুধবার জানাজা শেষে তাকে পেহেলগামের হাপাতনার্ড গ্রামে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে। জানাজায় অংশ নেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী নিহত আদিল হুসেনের বাবা হায়দার শাহকে জড়িয়ে ধরে সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি শোকাহত ও নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ ছাড়া শত শত শোকাহত মানুষের সঙ্গে প্রার্থনায় যোগ দেন। এরপরই নিহত আদিল হুসেনের বীরত্বপূর্ণ কাজটি জাতীয় মনোযোগ আকর্ষণ করে।

নিহত আদিলের ভাই সৈয়দ নওশাদ বলেন, আদিল হুসেন কাজ করতে পেহেলগামে গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্দুকধারী তার বুকে তিনবার গুলি করে। তিনি পর্যটকদের ঘোড়ায় চড়িয়ে বৈসারনে নিয়ে যেতেন। মঙ্গলবার বন্দুকধারীরা যখন পর্যটকদের ওপর হামলা চালায়, তখন আমার ভাই ওদের থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যটক, যার বাবা ওই হামলায় নিহত হন, তিনি এসএমএইচএস হাসপাতালে আমাকে আদিলের বীরত্বের কথা জানান।

মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ আদিলের সাহসিকতার প্রশংসা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘তিনি যে পর্যটকদের ঘোড়ায় করে পার্কিং এলাকা থেকে বৈসারন ময়দানে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের রক্ষা করতে তিনি নিজের প্রাণ দিয়েছেন। তার শোকাহত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি এবং তাদের পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি।’

এদিকে, ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার সঙ্গে পাকিস্তান জড়িত বলে ভারতের অভিযোগ অস্বীকার করে গতকাল শুক্রবার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করেছে পাকিস্তান।

উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার প্রস্তাবটি সিনেটে উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি বলেন, পানি–সন্ত্রাসবাদ বা সামরিক উসকানিসহ যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে পাকিস্তান পুরোপুরি প্রস্তুত।

প্রস্তাবে ‘ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল সংগঠিত পেহেলগাম হামলার সঙ্গে পাকিস্তানকে জড়িত করার সব অসার ও ভিত্তিহীন প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা পাকিস্তান–সমর্থিত মূল্যবোধের পরিপন্থী।


সৌদির কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মোহাম্মদ বিন সালমান। ছবি: সংগৃহীত
আপডেটেড ১ জানুয়ারি, ১৯৭০ ০৬:০০
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই চুক্তির অধীনে সৌদির কাছে ১০ হাজার কোটি ডলারের (১০০ বিলিয়ন) বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের আগেই এ চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।

রয়টার্স জানায়, লকহিড মার্টিন, আরটিএক্স করপোরেশন, বোয়িং, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল অ্যাটমিকসের মতো শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো এ চুক্তির আওতায় থাকছে। ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহীর যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

সূত্রগুলো জানায়, চুক্তির আওতায় সৌদি আরবকে সি-১৩০ পরিবহন প্লেন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার সিস্টেমসহ নানা রকম উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করা হতে পারে।

তবে সৌদি আরব লকহিড মার্টিনের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কেবল ন্যাটোর মিত্র দেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকে এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে।

রয়টার্স জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। সেই প্রস্তাবিত চুক্তিতে চীনা বিনিয়োগ সীমিত করা এবং বেইজিং থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধের বিষয়টিও ছিল। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত চুক্তিতে এসব শর্ত থাকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

হোয়াইট হাউস কিংবা সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। চুক্তিতে যুক্ত কোনো অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিও রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।

উল্লেখ্য, সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে দেশটির ভূমিকার প্রেক্ষাপটে।

তবে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সৌদি আরবের প্রতি কঠোর অবস্থান শিথিল করে। সবশেষ, ২০২৪ সালে গাজা পুনর্গঠনে সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যা


banner close