আপডেট : ২ ডিসেম্বর, ২০২২ ০৩:১১
স্পেনের হারে জার্মানির বিদায়
নিশাত আহমেদ

স্পেনের হারে জার্মানির বিদায়

আবারও প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিল জার্মানি

ডেভিড ফিঞ্চার? না অ্যালফ্রেড হিচকক? না 'সিংহাসনের খেলা' ভুলে ফুটবলে মজেছেন জর্জ আর আর মার্টিন? কে লিখেছেন এই চিত্রনাট্য? পরতে পরতে এমন উত্তেজনা, উন্মাদনা আর রোমাঞ্চ - এ যে যেকোনো থ্রিলার সিনেমা বা সিরিজকেও হার মানায়!

কয়েক ঘন্টা আগেই বিদায় নিয়েছে বেলজিয়াম। সাপ্তাহিক ছুটির প্রাক্কালে যদি এটাকেই সবচেয়ে বড় বিনোদন ভেবে থাকেন, ভুল! বিনোদনের আরও বড় পসরা সাজিয়ে যে বসেছিল গ্রুপ 'ই'! যেখানে নিজেরা জিতে উলটো স্পেনকে পরের রাউন্ডের দরজা দেখিয়ে দিল জার্মানি, যে স্পেন নব্বই মিনিট ধরে জাপানের বিপক্ষে আরেকটা গোলের জন্য মাথা কুটে মরল। স্পেনকে ২-১ গোলে হারানো জাপানই শেষমেশ এ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠছে পরের রাউন্ডে, অম্লানবদনে স্পেন যাচ্ছে পিছু পিছু। কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে হারালেও সেটা জার্মানিকে ২০১৮ বিশ্বকাপের চেয়ে বেশি কিছু এনে দিল না।

গ্রুপের শেষ দুটি ম্যাচ শুরুর আগে চার দলের মধ্যে ১ পয়েন্ট নিয়ে জার্মানিই ছিল সবার নিচে। অন্তত দ্বিতীয় স্থানে উঠে পরের রাউন্ডে যেতে চাইলে কোস্টারিকার বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচটা তো তাদের জিততে হতোই, প্রার্থনা করতে হতোপ জাপান যেন স্পেনের বিপক্ষে পয়েন্ট হারায়। ১০ মিনিটে গোল করে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করার ইঙ্গিওত শুরুতেই দিয়ে রাখেন জার্মান উইঙ্গার সার্জ গেরনাব্রি। এক মিনিট পর তাদের হাসি আরেকটু চওড়া হয় স্পেনের আলভারো মোরাতার গোলের খবরে। এভাবেই যদি দুটি ম্যাচ শেষ হয়, হোক না! জার্মানির আপত্তি থাকবে না তাতে!

কিন্তু যে বিশ্বকাপ একের পর এক চমক দেখিয়েই যাচ্ছে, সে বিশ্বকাপ এই গ্রুপের এত ম্যাড়মেড়ে পরিসমাপ্তি হতে দেবে কেন? দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে উইঙ্গার কাওরু মিতোমা আর রিৎসু দোয়ানকে মাঠে নামান কোচ হাজিমে মোরিয়াসু। নেমেই বাজিমাত! পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে জার্মানির মুখের হাসি আর স্পেনের বুকের ধুকপুকানি বাড়িয়ে দেন দোয়ান আর আও তানাকা। তানাকার গোলটা আবার মিতোমার বানিয়ে দেওয়া। ব্যস, জার্মানির মুখের হাসি ততক্ষণে স্পেনের অগ্রগামিতার মতোই উধাও। স্পেন জাপানকে অন্তত ড্রয়ের জালে আটকাতে না পারলে যে টানা দুই বিশ্বকাপের নকআউট রাউন্ডে দর্শক হয়ে থাকতে হবে!

স্পেনের চিন্তা করতে গিয়েই কি না, নিজেদের খেলার কথা ভুলে গেল জার্মানরা। ৫৮ মিনিটে দুম করে গোল করে বসলেন ইয়েলৎসিন তেহেদা। ৭০ মিনিটে মানুয়েল নয়্যারের আত্মঘাতী গোল ততক্ষণে কোস্টারিকাকেও স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছে। দুই ম্যাচে জার্মানি-স্পেন হেরে গেলে যে দুই দলই বিদায় নেবে প্রথম রাউন্ড থেকে!

৬৭ মিনিটে মাঠে নামানো হল কাই হাভার্টজকে। তিনি ভাবলেন, স্পেন-জাপান ম্যাচে যা হওয়ার হোক, আমরা অন্তত আমাদের নিজেদের কাজটা করে রাখি! সে ভাবনা থেকেই হয়তো নিজে করলেন দুটি গোল। তার দেখাদেখি সতীর্থ নিকোলাস ফুলক্রুগও করলেন একটি। জার্মানি ৪-২ গোলে জিতলও। তাতে কি? ওদিকে স্পেন যে জাপানের জালে আর একটা গোলও দিতে পারেনি!

৪-২ গোলে জেতা দলের খেলোয়াড়দের মুখ এর চেয়ে বেশি পাংশু আর কখনও হয়েছিল কি না, গবেষণার বিষয় হতে পারে!