আপডেট : ২১ মার্চ, ২০২৫ ২০:৪৩
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিল সুদানের সেনাবাহিনী
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলে নিল সুদানের সেনাবাহিনী

সুদানে প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদের ভেতরে সেনা সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে সুদানের সেনাবাহিনী। দুই বছর ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে এটি সেনাবাহিনীর জন্য একটি বড় অর্জন। গতকাল শুক্রবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখলের মধ্য দিয়ে দেশটির বিভাজনের আশঙ্কা আরও গভীর হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে পিছু হটলেও সম্প্রতি তারা সুদানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) কাছ থেকে বেশ কিছু এলাকা পুনর্দখল করেছে। অন্যদিকে, আরএসএফ পশ্চিমাঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করেছে, যা দেশটিকে কার্যত বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আরএসএফ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় একটি সমান্তরাল সরকার গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তা স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

সেনাবাহিনীর বক্তব্য, তারা খার্তুমের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সামরিক সূত্রে জানা গেছে, আরএসএফ যোদ্ধারা প্রাসাদ থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে সরে গেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সংঘাত শুরুর পর আরএসএফ দ্রুত খার্তুম শহরের বেশির ভাগ অংশের পাশাপাশি প্রেসিডেনশিয়াল প্রাসাদ দখল করে নেয়।

সেনাবাহিনী প্রাসাদের ভেতরে সেনাদের জয়ধ্বনি করার ভিডিও শেয়ার করেছে, যেখানে দেখা গেছে প্রাসাদের কাচের জানালা ভাঙা এবং দেয়ালে গুলির চিহ্ন। আরএসএফ প্রাসাদ পুনর্দখল এবং খার্তুমে সেনাবাহিনীর অগ্রগতি সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বৃহস্পতিবার দলটি জানিয়েছিল, তারা উত্তর দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখল করেছে।

প্রাসাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার খবরে অনেক সুদানি নাগরিক আনন্দ প্রকাশ করেছেন। খার্তুমের বাসিন্দা ৫৫ বছর বয়সি মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে প্রাসাদ মুক্ত হওয়ার খবরটি সবচেয়ে ভালো খবর। এর মানে হলো, সেনাবাহিনী খার্তুমের বাকি অংশও নিয়ন্ত্রণে নিতে শুরু করেছে। আমরা আবার নিরাপদে থাকতে চাই এবং ভয় ও ক্ষুধা ছাড়া বাঁচতে চাই।

জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করেছে। ৫ কোটি মানুষের এই দেশটিতে বিভিন্ন অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ও রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সংঘাতের উভয়পক্ষকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, আরএসএফের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগও আনা হয়েছে। উভয়পক্ষই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

খার্তুমে গতকাল শুক্রবার মাঝেমধ্যে গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। সেনাবাহিনী আরএসএফকে কোণঠাসা করতে চাইছে বলে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আরএসএফ এখনো শহরে প্রাসাদের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা দখল করে আছে। সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আমরা সব যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ না এই মিলিশিয়া ও তাদের সহযোগীদের নোংরা উপস্থিতি থেকে আমাদের দেশের প্রতিটি ইঞ্চি পরিষ্কার করা হচ্ছে।

দেশটি দুই বছর আগে গণতান্ত্রিক শাসনে উত্তরণের পরিকল্পনা করছিল, তখনই এই যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ২০১৯ সালে ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর সেনাবাহিনী ও আরএসএফ একসঙ্গে কাজ করেছিল এবং পরে বেসামরিক নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করে; কিন্তু তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল, কারণ বশির আরএসএফকে সেনাবাহিনীর ভারসাম্য হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। আরএসএফের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি দারফুরের জাঞ্জাওয়িদ মিলিশিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন সেনা কর্মকর্তা আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।