আপডেট : ৮ নভেম্বর, ২০২২ ২০:৫১
ঘুষ এখন টাকায় নয়, ডলারে লেনদেন হচ্ছে: হাইকোর্ট

ঘুষ এখন টাকায় নয়, ডলারে লেনদেন হচ্ছে: হাইকোর্ট

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

ঘুষ এখন টাকায় নয়, ডলারে লেনদেন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি রিট আবেদনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন।

‘চাকরি ফিরে পেতে চান কুলাউড়ার জহিরুল: জালিয়াতি করে কারারক্ষী পদে চাকরি ১৮ বছর পর তদন্তে প্রমাণিত!’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে গত ৩১ জুলাই প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন জহিরুল ইসলাম এশু নামের এক ব্যক্তি।

গণমাধ্যমের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন কুলাউড়ার জহিরুল ইসলাম এশু। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয়। কিন্তু পরে নিয়োগপত্র না পেয়ে চাকরির আশা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন।

দীর্ঘ ১৮ বছর পর তিনি জানতে পারেন, তার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে ওই পদে চাকরি করছেন আরেকজন। আর জালিয়াতির বিষয়টি কারা অধিদপ্তরের তদন্তেও প্রমাণ হয়েছে।

বিষয়টি জেনে এশু চাকরি ফিরে পেতে এ বছরের জানুয়ারিতে সিলেটের কারা উপমহাপরিদর্শক বরাবর আবেদন করেন। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন।

এ রিটের শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, একটি স্পর্শকাতর জায়গায় যদি এ রকম অনিয়ম হয়, তাহলে কিন্তু এটি একটি অশনিসংকেত। এটি বেশ বড় ধরনের অভিযোগ।

শুনানির একপর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, গণমাধ্যমে দেখা যায়, বস্তায় বস্তায় টাকা দিয়ে ঘুষ লেনদেন হয়।

তখন আদালত বলেন, এখানে দুদকের আইনজীবী আছেন, তার সামনেই বলি, এখন আর টাকায় নয়, ঘুষ লেনদেন হয় ডলারে। এসব বিষয়ে দুদক তো দেখে না।

শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য আগামীকাল বুধবার দিন ঠিক করেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ২০০ জন কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের জাল-জালিয়াতি বা একজনের স্থলে আরেকজন শারীরিকভাবে কাজ করছেন বলে গণমাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন আসে। কর্তৃপক্ষ এটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে বিষয়গুলো তদন্ত করে। তদন্তে ২০০ জনের মধ্যে ৮৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তিন জন পাওয়া গেছে, তারা প্রকৃত ব্যক্তির পরিবর্তে কর্মরত। আবার অনেকে আছেন যারা ঠিকানা পরিবর্তন করেছেন। অনেকে বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্রে জাল-জালিয়াতি করেছেন। এগুলো ধরা পড়ার পর তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

রিটকারীর আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, একজনের পরিবর্তে আরেকজন চাকরি করছেন। আমি বললাম, এটি আরেকটি জাহালম কাণ্ড। তখন রাষ্ট্রপক্ষ বলল, আপনি কাগজপত্র নিয়ে এসে আমাদের এগুলো বলেন। আজকে রাষ্ট্রপক্ষ বিশাল একটি প্রতিবেদন নিয়ে এসেছে। আমরা যে সন্দেহ করেছি তার সত্যতা পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত বলেছেন, কী ধরনের ‘ম্যাসিভ করাপশন’ হচ্ছে। আদালত এখন এটিও মনে করছেন, ঘুষ এখন টাকায় না, ডলারে দিচ্ছে।

অর্থ পাচারকারীদের শুটআউট করা উচিত
এদিকে অর্থ পাচারকারীদের জাতির শত্রু আখ্যায়িত করে হাইকোর্ট বলেছেন, তাদের শুটআউট করা উচিত।

বেসিক ব্যাংকের অর্থ পাচার মামলার আসামি মোহাম্মদ আলীর জামিন শুনানিকালে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এ সময় আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, যারা বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে, পাচার করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত গুলি করে মৃত্যুদণ্ড।

শুনানির সময় আইনজীবী আবুল হোসেন বলেন, পাঁচ বছর পার হয়ে গেলেও দুদক এ মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে না। বিচারও শেষ হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জেলে আছেন।

এ সময় আদালত বলেন, অর্থ পাচারকারীরা জাতির শত্রু। কেন এসব মামলার ট্রায়াল হবে না? দুদককে উদ্দেশ করে বিচারক প্রশ্ন করেন, ‘চার্জশিট কেন দিচ্ছেন না?’

আদালত বলেন, যারা জনগণের টাকা আত্মসাৎ করে তাদের শুটআউট করা উচিত। এটাই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত।

এ সময় আদালত বেসিক ব্যাংকের চার হাজার কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় হওয়া সব মামলার সর্বশেষ তথ্য ২১ নভেম্বরের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেন। দুদককে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।