আপডেট : ৪ নভেম্বর, ২০২২ ১০:৫৫
কিশোরদা ছিলেন লিকুইড গোল্ড
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

কিশোরদা ছিলেন লিকুইড গোল্ড

আজ নন্দিত গায়ক এন্ড্রু কিশোরের জন্মদিন। তার সঙ্গে প্রায় দুই হাজার গান করেছেন সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। জন্মদিনে প্রয়াত এন্ড্রু কিশোরকে স্মরণ করেছেন এই শিল্পী।

আমার সঙ্গে এন্ড্রু কিশোর দার অনেক স্মৃতি। কোনটা রেখে কোনটা বলব। আমরা প্রথম গান করেছিলাম ১৯৮৬ সালে। আমার স্বামী মইনুল ইসলাম খানের ‘নাফরমান’ সিনেমার একটা গান গাইতে গিয়ে প্রথম দেখা হয়। তার আগে থেকেই দাদাকে চিনতাম। মজার ব্যাপার হলো, ওই দিন একবারও মনে হয়নি যে আমাদের প্রথম দেখা। একদম বড় ভাইয়ের মতো কথা বলেছেন।

কিশোরদার সঙ্গে আমি প্রায় দুই হাজার গান করেছি। আমার জীবনে গাওয়া অর্ধেকেরও বেশি গান তার সঙ্গে গাওয়া। কিশোরদার কণ্ঠ আমার কাছে সবসময় মনে হয়েছে ওটা লিকুইড গোল্ড। মানে গলিত সোনার প্রবাহ। দুঃখ হলো, এত দামি কণ্ঠকে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দেইনি। বেঁচে থাকতে তাকে নিয়ে বড় কোনো আয়োজন কোথাও হয়নি। এমন তো হতে পারত তাকে নিয়ে স্টেডিয়ামে রাতভর গানের আয়োজন হচ্ছে। সেখানে মন খুলে হাজার হাজার মানুষের সামনে গান গাইছে আমাদের কিশোরদা।

মারা যাওয়ার পর আমরা সবাই বলছি, অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। এই বাক্যটাকে আমি খুব অপছন্দ করি। মারা যাওয়ার আগে কি এটা মনে হয় না আমাদের! অথচ তিনি বেঁচে থাকতে যে পরিমাণ কথার তীরে ওনাকে বিদ্ধ করেছি সেটা ভাবলেই প্রচণ্ড খারাপ লাগে।

দাদাকে নিয়ে একটা স্মৃতি এখন মনে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোতে একটা গানের অনুষ্ঠান শেষ করে দাদার এক বন্ধুর বাসায় গেলাম। সেখানে যাওয়ার পর দাদা বললেন, আজ আমি তোদের মুড়ি মাখিয়ে খাওয়াবো। সেই আয়োজন শুরু হলো। দাদা তার বন্ধুকে বাড়ির সবচেয়ে বড় গামলা বা পাত্র আনতে বললেন। তারপর দাদা তার ইচ্ছামতো পেঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতাসহ সবকিছু কেটে রাখলেন। মুড়ি দিলেন কয়েক প্যাকেট। তেল দিয়ে এমনভাবে মাখালেন মুড়ি যেন মুচমুচে থাকে। মুড়ি মাখানোর পর সেটা একসঙ্গে খেলাম। সেদিন গান হলো, আড্ডা হলো।

আমার মাঝেমধ্যে মনেই থাকে না যে উনি নেই। সত্যিকারের শিল্পীরা কখনো মরে না। দৈহিকভাবে তাদের প্রস্থান হয়। এটা পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু তাদের যে কর্ম, সেই কর্মে তারা ঠিকই বেঁচে থাকেন। বাংলাভাষীরা যেখানেই আছেন কিশোরদার গান সেখানেই বাজে। শুধু বাজে না, কেউ তার গান গাওয়ার চেষ্টা করে, কেউ হয়তো গুন গুন করে, কেউ হয়তো গবেষণা করে, কেউ হয়তো প্র্যাকটিস করে শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করে। এটাই একজন শিল্পীর বেঁচে থাকা।

কিশোরদাও আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। যেখানেই থাকুন তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।

অনুলিখিত