মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটিতে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়, ভোগান্তি কমেনি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের যাত্রীদের। এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
রেকর্ড ভাঙা ভারী বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মরুভূমির দেশটিতে এক বছরের গড় বৃষ্টিপাত হয় ৯৪ মিলিমিটার। সেখানে দুই দিনে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৫৯ দশমিক ৫ মিলিমিটার। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যায় তলিয়ে যায় বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম দুবাই বিমানবন্দর। ব্যাহত হয়েছে কয়েক শ ফ্লাইট।
বন্যায় প্লাবিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবিতে প্রবেশের সব সড়ক। এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে অনেকে। পানির কারণে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, থমকে আছে বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকা। এমন অবস্থায় বিমানবন্দরে পৌঁছাতে পারছে না অনেক যাত্রী। আটকে থাকা যাত্রীদের খাবার দিতে পারছে না বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পানি জমে থাকায়, অনেক সড়কে এখনো স্বাভাবিক হয়নি যান চলাচল। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে যাত্রী ও কর্তৃপক্ষের।
তবে বন্যা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরইমধ্যে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল। তবে এখনো বিলম্বিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। বুকিং নিশ্চিত যাত্রীদের চেক-ইন করার নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমিরাটস এয়ারলাইন দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩নং টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান।
দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা
ভারী বৃষ্টি ও তীব্র জলাবদ্ধতার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলোর অন্যতম দুবাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহরটির বহু বাড়ি ও শপিং মল হাঁটু পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। দুবাইয়ের মতো শহরে এ ধরনের চিত্র অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরের পরে দুবাই বিমানবন্দরই হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। গত বছর এই বিমানবন্দরটি ব্যবহার করেছে আট কোটি যাত্রী। দুবাই বিমানবন্দর তলিয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছে শতশত ফ্লাইট। বিমানবন্দরের ভেতরে চরম এক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। দুবাই বিমানবন্দর যেভাবে তলিয়ে গেছে সেটি দেখে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বিমানবন্দরটি প্লাবিত হওয়ায় দুবাইগামী ও দুবাই ছেড়ে আসা ফ্লাইট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রসূন রায় নামের এক ব্যক্তি জানান, গত তিন দিন ধরে দুবাই বিমানবন্দরে আটকে আছেন তিনি। দুবাই থেকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ফ্লাইট ছিল প্রসূন রায়ের। মঙ্গলবার দুপুরে বিমানবন্দরে যাওয়ার পর তিনি ১৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন; কিন্তু তিনি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফ্লাইটে উঠতে পারেননি।
তিনি বলেন, আটবার তার ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট কখন ছেড়ে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ফ্লাইটের কোনো নিশ্চয়তা না পেয়ে এন্ট্রি ভিসা নিয়ে শহরের ভেতরে এসেছি। কারণ, এয়ারপোর্টের ভেতরে কোনো হোটেলে কক্ষ খালি নেই।
তার বর্ণনা অনুযায়ী, হাজার হাজার যাত্রী দুবাই এয়ারপোর্টের ভেতরে আটকা পড়ে আছে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত-দিন কাজ করেও কূলকিনারা করতে পারছে না। পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। গাড়িগুলোতে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেগুলোর ব্রেক কাজ করছিল না। ফলে একটি গাড়ি গিয়ে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা মেরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। অনেক গাড়ি রাস্তায় পানির মধ্যে ডুবে ছিল।
ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে যারা বুধবার দুবাইতে অবতরণ করেছেন তাদের অভিজ্ঞতা ছিল দুর্বিষহ। অবতরণ করার জন্য বিমানগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে চক্কর দিলেও অবতরণের অনুমতি পাচ্ছিল না। বিমানবন্দরের বাইরে শতশত গাড়ি বিকল অবস্থায় পড়ে ছিল।
রেজাউল করিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অনেকবার ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত তিনি ঢাকা থেকে দুবাই পৌঁছেছেন। ঢাকায় তিনি ৩৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর দুবাইয়ের উদ্দেশে প্লেন ছেড়ে যায়। দুবাইতে সিনেমার মতো যাত্রা। এক ঘণ্টা পঞ্চাশ মিনিট প্লেনের ভেতরে বসে আছি। কারণ, কোনো গ্রাউন্ড সার্ভিস নেই।
তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী আকিব ইরফানের। তার স্ত্রী দুবাই থেকে ঢাকা আসার কথা ছিল। এক দিন অপেক্ষা করার পর শেষপর্যন্ত তিনি ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে উঠতে পেরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফ্লাইট কনফার্ম না হলে কাউকে বিমানবন্দরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ, ভেতরে যাত্রীদের এত বেশি চাপ তৈরি হয়েছে যে আর যাত্রী ভেতরে নেওয়া সম্ভব ছিল না।
দুবাই বিমানবন্দরে আটকা পড়েছেন ব্রিটিশ ট্যুরিস্ট অ্যান উইং, তার স্বামী ও তিন সন্তান। তারা লন্ডনের হিথ্রোতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। অ্যান উইং বলেন, এটা খুব ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমাদের পশুর মতো করে রাখা হয়েছে। এটা খুবই অমানবিক। আমার পরিবারের সদস্যদের কাছে কোনো খাবার নেই।
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা