আপডেট : ২০ মার্চ, ২০২৪ ১৪:১৮
রমজানেও খাবার পাচ্ছে না লাখো ফিলিস্তিনি
প্রাণহানি বেড়ে ৩১ হাজার ৮১৯
দৈনিক বাংলা ডেস্ক

রমজানেও খাবার পাচ্ছে না লাখো ফিলিস্তিনি

 ইসরায়েলের হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির বাইরে ইফতার করছে একটি পরিবার। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পবিত্র রমজান মাসেও খাবার পাচ্ছে না লাখ লাখ ফিলিস্তিনি। এদিকে ইসরায়েলের নির্বিচার হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ৮১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১৩ হাজারের বেশি শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত ইসরায়েলের হামলায় গাজায় মোট নিহত ৩১ হাজার ৮১৯ জন। আহত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৯৩৪ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উপত্যকাজুড়ে ৯টি গণহত্যা সংঘটিত করেছে। এতে নিহত হয়েছে অন্তত ৯৩ জন। আহত হয়েছে ১৪২ জন। গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছে। উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না।’

সম্প্রতি সিবিএসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, হাজারও শিশু এ যুদ্ধে হতাহত হয়েছে। তাদের অনেককেই এখনো শনাক্ত করে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যায়নি। কেননা তারা কোথায় আছে, আমরা তা জানি না।

তিনি বলেন, আমি শিশুদের একটি ওয়ার্ডে ছিলাম। তারা ভয়াবহ অপুষ্টিতে ভুগছে। ওয়ার্ডের পরিবেশ ছিল খুবই শান্ত। কারণ, শিশুদের কান্না করার মতো শক্তি ছিল না। রাসেল বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনির দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া ঠেকাতে সাহায্য ও সহায়তার জন্য গাজায় সহায়তাবাহী ট্রাকগুলো নিয়ে যাওয়া ছিল ‘বিশাল আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ’।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েল আগ্রাসনে গাজার প্রায় ২৩ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। এই অবস্থায় খাবার প্রবেশ করতে না পারায় অনাহার সংকট প্রকট থেকে প্রকটতর আকার ধারণ করছে। আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সামান্য পরিমাণ আটা সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করছে গাজাবাসী। এটি এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি জাতিসংঘ সমর্থিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর গাজার ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ভয়ানক খাদ্য সংকটে রয়েছে। কিছু মানুষ পশুর খাবার ও আগাছা খেয়ে জীবনধারণ করছে।

রাফাহতে হামলা চালাল ইসরায়েল

যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহ শহরে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে রাফাহতে চালানো বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত ও অনেকে আহত হন।

বার্তাসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনা ও সৈন্যদের অনুমতি দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল নেতানিয়াহু প্রশাসন। তবে ইসরায়েলের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন বাইডেন। তখন থেকেই গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন ও বর্বতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। এমনকি, বাইডেন এ পর্যন্ত দাবি করেছেন যে বর্তমানে গাজার নিরাপদ স্থানগুলোতে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু ইসরায়েলেরই ক্ষতি করছেন।

এর আগে শুক্রবার (১৫ মার্চ) ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার অনুমোদন দেয় দখলদার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই অনুমোদনের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছিলেন, ইসরায়েল যদি রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে চায়, তাহলে সেটির একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আমাদের দেখাতে হবে।

এদিকে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বলেছে, রাফাহতে হামলা চালালে তার পরিণতি খুব একটা ভালো হবে না। কারণ, ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা উপ্যতকার একমাত্র নিরাপদ স্থান এখন রাফাহ শহর। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৩ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নেন।