দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাল হাওয়া বইছে বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে। এ আসনে জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের লড়াই এখন তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোটারদের মন জয় করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে। ফলে লাঙ্গলের ঘুম হারাম করে দিয়েছে কাঁচি আর ট্রাক মার্কা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আসনটিতে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এ আসনে ১৪ দলের সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় পাওয়া এই আসনে তীব্র চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার। আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজুকে প্রত্যাহার করা হলেও এ আসনে জোরেশোরে ভোটের লড়াইয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নেমেছেন তার ছেলে খান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদী বাঁধনসহ অন্যরা। এর মধ্যে ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী দুর্বল হওয়ায় আসনটি জাপার হাত ছাড়া হতে পারে বলে ধারণা করছেন ভোটাররা।
স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, বর্তমানে এই আসনে আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অজয় কুমার সরকারকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন প্রার্থীরা। তিনি (অজয়) কাঁচি আর বাঁধন ট্রাক প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন। এ ছাড়া এই আসনে মোট ১১ জন প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ (ঈগল), স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন (ফুলকপি), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আফরিনা পারভীন (একতারা), তৃণমূল বিএনপির আব্দুল মোত্তালেব (সোনালী আঁশ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আব্দুল মালেক সরকার (মশাল), বাংলাদেশ কংগ্রেসের তাজউদ্দীন মণ্ডল (ডাব), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম সরদার (নোঙর) ও স্বতন্ত্র নজরুল ইসলাম (কেটলি)। এতগুলো প্রার্থীর মধ্যে শেষ পর্যন্ত দুইবারের এমপি জাপার প্রার্থী নুরুল ইসলামের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করছেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা।
এদিকে বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় আদমদীঘি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনতা ব্যাংকের সামনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় কুমার সরকারের কাঁচি মার্কার নির্বাচনী প্রচারণার সময় তার সমর্থক উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক রশিদুল ইসলাম রশিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১০ হাজার হ্যান্ড পোস্টার ছিনিয়ে নেওয়া এবং শার্টের কলার ধরে কিল-ঘুষি মারার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে আব্দুর রশিদ বাদী হয়ে ট্রাক প্রতীকের সমর্থক আব্দুল হক আবু, সুমিনুল ইসলাম সুমন, নয়ন, সাগরসহ অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের নামে আদমদীঘি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে খান মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ আল মেহেদীকে মোবাইল ফোনে কল করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
কাঁচি মার্কার স্বতন্ত্র প্রার্থী অজয় কুমার সরকার বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাক সমর্থকরা আমার নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায়। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলায় সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। আমার কর্মীদের একের পর এক ভয় দেখানো হচ্ছে। ফলে প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।’
বর্তমান সংসদ সদস্য ও লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, ‘গতবারের মতো দুই উপজেলার আওয়ামী লীগ এবার আমাকে কোনো সহযোগিতা করছেন না। বিশেষ করে আদমদীঘির নেতারা বিপক্ষে গেছেন। আমি চেষ্টা করছি কিন্তু তারা কেউ যোগাযোগ করছে না।’
আদমদীঘি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা সব অভিযোগ তদন্ত করছি। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
১৯৮/সি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮
©দৈনিক বাংলা