আপডেট : ১৩ অক্টোবর, ২০২৩ ১৪:২৩
ঝোপ-জঙ্গলে জয়পুরহাট চিনিকলের নষ্ট যন্ত্রাংশ
রাব্বিউল হাসান, জয়পুরহাট

ঝোপ-জঙ্গলে জয়পুরহাট চিনিকলের নষ্ট যন্ত্রাংশ

খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান যন্ত্রাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার জয়পুরহাট চিনিকল এলাকায়। ছবি: দৈনিক বাংলা 

জয়পুরহাট চিনিকলের কোটি টাকার লোহা-অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশগুলো বছরের পর বছর চিনিকলের অভ্যন্তরের দীর্ঘদিন ধরে ঝোপ-জঙ্গলে পড়ে আছে। অযত্ন আর অবহেলায় এ সব অকেজো যন্ত্রাংশ আরও নষ্ট হচ্ছে। পরিত্যক্ত এ সব যন্ত্রাংশের ওজন ৩০০ থেকে ৪০০ টন ওজন হবে। কর্তৃপক্ষ পরিত্যক্ত এ সব যন্ত্রাংশ দরপত্র নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করলে চিনিকল কোটি টাকার রাজস্ব পেত বলে জানিয়েছেন চিনিকলের শ্রমিকরা। এতে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলছে, কয়েক বছর আগে নিলাম ব্যবস্থা করে নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি। এ কারণে নিলাম বাতিল করা হয়েছিল। আবার নিলামের উদ্যোগ নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬০ সালে জয়পুরহাট চিনিকল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬২-৬৩ সালে পরীক্ষামূলকভাবে চিনি উৎপাদন শুরু হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। বাৎসরিক চিনি উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৩২০ মেট্রিক টন। এখানে ৯ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মৌসুমী শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। নানান কারণে প্রতিবছরই চিনিকলে লোকসান হচ্ছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা রয়েছে। প্রায় ২৫ থেকে ৩০ বছর আগের চিনিকলের ব্যবহৃত অকেজো বিপুল পরিমাণ যন্ত্রাংশ। জায়গা না থাকায় চিনিকলের অভ্যন্তরে এ সব পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। কয়েক বছর আগে নিলাম দরপত্র আহ্বান করে বিক্রি হয়নি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চিনিকলে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল জায়গাজুড়ে খোলা আকাশের নিচে চিনিকলের পরিত্যক্ত লোহার যন্ত্রাংশগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। কিছু যন্ত্রাংশ ঝোপ-জঙ্গলে ঢেকে রয়েছে।

চিনিকলের কর্মকর্তা-কমর্চারীরা জানান, চিনিকলের পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশগুলো রাখার জন্য আলাদা জায়গা নেই। এ কারণে পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশগুলো চিনিকল চত্বরের গ্যারেজ অংশের ফাঁকা জায়গায় রাখা হয়েছে। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। পরিত্যক্ত এ সব যন্ত্রাংশের মধ্যে লোহা-অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত রয়েছে। পরিত্যক্ত এ সব যন্ত্রাংশের ওজন কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ টন হবে। পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশের দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। যন্ত্রাংশগুলোর বেশির ভাগ ২৫-৩০ বছর আগের। কয়েক বছর আগে কিছু যন্ত্রাংশ নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। স্থানীয়ভাবে ঝামেলা ও কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি। পরবর্তীতে নিলাম দরপত্রটি বাতিল করা হয়। পরিত্যক্ত এ সব যন্ত্রাংশ নিলামে বিক্রি করে চিনিকলের অভ্যন্তরীণ দায়-দেনা কমিয়ে আনা সম্ভব।

চিনিকল গ্যারেজের চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আমি ২০০৫ সাল থেকে জয়পুরহাট চিনিকলে চাকরি করছি। তখনই গ্যারেজ এলাকায় যন্ত্রাংশগুলো পড়ে থাকা দেখছি। এ সব যন্ত্রাংশের মধ্যে এসএস লোহা, এমএস স্টিল, তামা ও ইস্পাত রয়েছে। যন্ত্রাংশগুলোর ওজন সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টন হতে পারে বলে ধারণা করছি। কখনো নিলামে বিক্রি হতে দেখিনি। চিনিকল চালুর সময়কালও অকেজো যন্ত্রাংশ রয়েছে।’

কৃষি বিভাগের পরিবহন শাখার ওয়েলডার হেলপার শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘আমি ২০০০ সাল থেকে এখানে যোগদান করেছি। তখন থেকে লোহাগুলো পড়ে থাকা দেখছি। যন্ত্রাংশগুলো ভালো জায়গায় রাখলেও কয়েকদিন পর গাছ-গাছালিতে ভরে যায়। লোহার অকেজো যন্ত্রাংশগুলো অনেক দিনের হলেও এখনো ভালো রয়েছে।’

জয়পুরহাট চিনিকল শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বলেন, চিনিকলের পরিত্যক্ত জিনিসগুলো মরিচা পড়ে নষ্ট হচ্ছে। আমরা পরিত্যক্ত জিনিসগুলো নিলামে বিক্রির জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছি। এ সব পরিত্যক্ত জিনিস বিক্রি করে রাজস্ব আসবে। আবার সেই রাজস্ব থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া পাওয়ানাদি দেয়া সম্ভব।

জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আখলাছুর রহমান দৈনিক বাংলাকে বলেন, ‘ইতোপূর্বে চিনিকলের লোহার অকেজো যন্ত্রাংশগুলো নিলামে বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম পাওয়া যায়নি। এ কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়েছিল। আবার দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যন্ত্রাংশ নিলামের জন্য কমিটি করা হয়েছে। এ কমিটি যন্ত্রাংশের পরিমাপ করছে।’